ভ্যাম্পায়ার_বর পর্ব ১৪

#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_১৪
#M_Sonali

গত 2 থেকে 3 ঘন্টা হয়ে গেল রুমে এসে শুয়ে আছে চাঁদনী। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘুমের যেন ছিটেফোঁটাও নেই তার চোখে। শুধু এদিক থেকে ওদিক ছটফট করছে আর ওর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো একে একে মিলানোর চেষ্টা করছে। কোনমতেই যেন কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না সে। তবে এতোটুকু ভালোভাবে বুঝতে পারছে সে, যে তার গলার লকেট টার সাথে ওই ভ্যাম্পায়ার টার নিশ্চয়ই কোন সম্পর্ক আছে। নইলে ওর লকেটের কারণে ওই ভ্যাম্পায়ার টা এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠত না। আর তার প্রতি এত মায়া ও কাজ করতো না চাঁদনীর মনে। কিন্তু কী সেই সম্পর্ক এটা যেন কোন মতেই মাথায় আসছে না চাঁদনীর। ছোটবেলা থেকে ওর সাথে ওর আব্বুর করা ব্যবহারগুলো ও যেন ভীষণ গোলমেলে লাগছে এখন নিজের কাছে। ছোট বেলা থেকেই সবসময় কেন ওর আব্বু রুমের মধ্যে বন্ধ করে রাখত ওকে? কেন বাইরে বের হতে দিত না। এমনকি সূর্যের আলো গায়ে লাগতে দিত না, রাতের চাঁদ তো দূরের কথা। কোনো কিছুই যেন মেলাতে পারছে না সে। এত কিছু ভাবতে গিয়ে মাথা যেন ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে তার। কিন্তু তবুও কোন সূত্র খুঁজে পাচ্ছে না সে।

হঠাৎ কি মনে করে গলার লকেট টা ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করে উঠে বসল চাঁদনী। তারপর লকেটে থাকা নীল রঙের পাথর এর দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল। কিন্তু কই পাথর টা দেখে তো তেমন অদ্ভুত কোন কিছুই মনে হচ্ছে না। একদম মনে হচ্ছে সাধারন একটি নীল রঙের পাথর বসানো আছে। যেমন ডায়মন্ড বসানো থাকে। কিন্তু কি আছে লকেটের মাঝে, যেটা থেকে এমন আলোক রশ্মি বের হয় একটি ভ্যাম্পায়ার কে সুস্থ করে দিতে সক্ষম হলো? আর হঠাৎ করে এটা জ্বলে’ই বা ওঠে কিভাবে?এত কিছু ভাবতে ভাবতে যেন মাথা ধরে যাচ্ছে তার।

হঠাৎ লকেটের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবলো চাঁদনী। সাথে সাথে লকেটটা হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,

— এই লকেট, তোমার মাঝে এমন কি অলৌকিক শক্তি আছে! যেটা থেকে এতো কিছু হয়ে গেল আজ আমার সামনে। আমি জানতে চাই। আচ্ছা তোমার সাথে কি ওই ভ্যাম্পায়ার টার কোনো সম্পর্ক আছে? যে আমাকে বাঁচিয়েছে! যদি সত্যিই এমন হয়ে থাকে তাহলে সেই ভ্যাম্পায়ার কে এখন আমি আমার সামনে চাই। তার সাথে কথা বলতে চাই আমি। প্লিজ তুমি যদি সত্যিই কোনো অলৌকিক লকেট হয়ে থাকো, আর তুমি যদি আমার উপকারের জন্য হয়ে থাকো! তাহলে সেই ভ্যাম্পায়ার কে আমার সামনে এনে দাও। আমি তার সাথে কথা বলতে চাই।

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করতে লাগল চাঁদনী। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে ওর কথামত সত্যিই ওর রুমে ঐ ভ্যাম্পায়ার টা চলে আসবে। কিন্তু না, বেশ কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পরেও কারো আসার কোনো রকম শব্দ পেল না চাঁদনী। মনটাই খারাপ হয়ে গেল তার। মনে মনে ভাবল হয়ত এতক্ষণ যেগুলো ঘটেছে সবকিছুই কাকতালীয় কোন ঘটনা। লকেটের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা ভেবে যখনই লকেট টা ছেড়ে দিয়ে চোখ খুলতে যাবে! তখনই ওর কানের কাছে ফিস ফিসিয়ে কেউ বলে উঠলো,

— কি হয়েছে চাঁদ পাখি! কেনো ডাকছো তুমি আমায়?

কথাটা শোনার সাথে সাথে যেন শরীর কেঁপে উঠল চাঁদনীর। ও ভয়ে শিউরে উঠলো। এতক্ষণ এত সাহস নিয়ে থাকলেও হঠাৎ করে সব সাহস যেন উবে গেল। অসম্ভব ভয় হতে লাগলো। ওর সারা শরীর একদম ভার হয়ে গেলো। ও বুঝতে পারল সেই ভ্যাম্পায়ার টা সত্যি সত্যি ওর কাছে চলে এসেছে। কিন্তু এখন কি বলবে ও তার সাথে? এতোটুকু সাহস যেন নেই আর ওর মাঝে। ভয়ের কারনে একদম কাপাকাপি অবস্থা শুরু হয়ে গেল ওর। তখনই কানের কাছে আবারও ফিসফিসিয়ে হালকা হেসে কেউ বলে উঠলো,

— কি হয়েছে এখন আমাকে দেখে এভাবে ভয় পাচ্ছ কেন? তোমার কি মনে হয় আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো? ক্ষতি করার হলে তো অনেক আগেই করে ফেলতাম। এখন বল আমায় কেন ডেকেছো?

চাঁদনী এবার গলার লকেট টা ছেড়ে দিয়ে মিটিমিটি করে চোখ খুলে তাকে দেখতে চাইল। কিন্তু তখনই ওকে থামিয়ে দিয়ে আবার ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

— এই খবরদার ভুল করেও চোখ খুলবেনা। চোখ খুললে কিন্তু আমি তোমার ক্ষতি করে দেবো। তখন কিন্তু নিজের দোষে নিজেই পস্তাবে। চোখ না খুলে চোখ বন্ধ রেখে বলো কেন ডেকেছো আমায়। আমি তোমার সামনে আসতে পারব না এখন। তাহলে তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে চাঁদপাখি। যেটা আমি চাইনা।

ওর কথায় চোখ মেলে আর তাকাল না চাঁদনী। কিছুক্ষণ চুপ করে নীরবে বসে রইল। তারপর মনের মাঝে কিছুটা সাহস যুগিয়ে বলে উঠলো,

— কে আপনি? আর কেন আমাকে বারবার বাঁচাচ্ছেন এভাবে? আমার লকেটের সাথেই বা আপনার কিসের সম্পর্ক? আর আমার এই সাধারন একটা লকেট হঠাৎ করে এভাবে জ্বলে ওঠে আপনাকে ভাল হয়ে উঠতে সাহায্য বা করল কিভাবে? আমি তো এসবের কোনো কিছুই বুঝতে পারছি না। আসলে কে আপনি?

ওর কথার উত্তরে বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকল পাশের লোকটা। তারপর আবার ওর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

— আমি কে সেটা তুমি ভালো করে জানো চাঁদ পাখি। কারন তুমি আমাকে আসল রূপে দেখে ফেলেছো। কিন্তু আমার পরিচয়টা আমি এখনই তোমাকে বলতে পারব না। তবে এটা মনে রেখো আমার থেকে তোমার কখনো কোন ক্ষতি হবেনা। বরং তোমাকে সব বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্যই আমি আছি তোমার কাছে, তোমার ছায়া হয়ে। তোমার যখনই কোনো দরকার পরবে শুধু এই লকেট টা স্পর্শ করে আমায় সরন করো। আমি চলে আসবো। তবে হ্যাঁ কখনো আমাকে দেখতে চেয়ো না। তাহলে তুমি নিজেই বিপদে পড়ে যাবে। আর সেই বিপদটাও আমার থেকেই হবে। সময় হলে আমি নিজেই দেখা দিবো তোমার কাছে।

— আচ্ছা ঠিক আছে সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আপনি আমাকে এটা বলুন, আমার এই সাধারণ লকেট টা থেকে এভাবে আলো বের হয় কি করে? আর সেটা থেকে আপনি সুস্থই বা হলেন কিভাবে? এই লকেট টাতো আমাকে আমার বাবা দিয়েছিল। তাহলে এটা এমন সাধারণ থেকে অসাধারণ হলো কিভাবে?

ওর কথা শুনে বিরক্তিকর কন্ঠে পাশ থেকে লোকটি বলে উঠল,

— আহ চাঁদ পাখি তুমি তো দেখছি অনেক প্রশ্ন করো! আমি বললাম না সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই একসময় জানতে পারবে তুমি। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করো। আর হ্যাঁ এত বেশি গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করো না তাহলে বিপদে পড়ে যাবে। মনে রেখ তোমার চারিপাশে বিপদ সব সময় উত পেতে রয়েছে। তোমার ক্ষতি করার জন্য। তাই নিজেকে সময় দাও নিজেকে নিয়ে ভাবো। এসব নিয়ে এত ভেবে মাথা ঘামাইও না। আমি এখন চলে যাচ্ছি। আমাকে সব সময় ডাকবে না। তাহলে তোমার বিপদ হতে পারে।

লোকটির কথা শুনে চাঁদনী কিছুক্ষণ চুপ থেকে আস্তে করে গোমরা মুখে বলল,

— আচ্ছা!

ওর কথার উত্তরে পাশ থেকে মুচকি হাসলো লোকটি। তারপর আচমকা চাঁদনীর গালে ছোট্ট করে একটি চুমু দিয়ে চোখের পলকে উধাও হয়ে গেল। লোকটির এমন কান্ডে যেন চাঁদনী আমাকে শীর্ষে পৌঁছে গেল। সে নিজের গালে হাত দিয়ে চট করে চোখ খুলে আশে পাশে লোকটিকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু রুমের মধ্যে ও একাই রয়েছে। আশেপাশে কারো চিহ্নমাত্র নেই। কেন জানিনা লোকটার স্পর্শে খারাপ লাগার বদলে একটি ভালো লাগা কাজ করে গেল চাঁদনীর মনে। সে নিজের গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ল। তারপর লোকটার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল নিজেই জানে না।

——————

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসতেই শ্রাবণী চাঁদনীর পাশে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— চাঁদনী তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তুমি তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করে নাও, তারপরে বলছি।

শ্রাবণীর কথায় ওর হাতের উপর হাত রেখে চাঁদনী বলল,

— কি হয়েছে আপু, এখনি বল, আমি শুনতে চাই কি বলতে চাও তুমি?

— আমি তোমাকে বলেছি ব্রেকফাস্ট করার পর বলবো। কথা বারিওনা চাঁদনী। তাড়াতাড়ি খাবারটা খেয়ে নাও, তারপর ধীরে সুস্থে বলবো।

চাঁদনী আর কথা বাড়ালো না। খাবারে মনোযোগ দিলো। দুটো পরোটা দিয়ে আলু ভাজি খেয়ে, পানি খেয়ে বলল,

— এখন বল কি বলতে চাও তুমি আমায়?

— চাঁদনী কাল রাতে এখানে যা হয়েছে তুমি তো সবই জানো। তাই তোমাকে এখানে রাখা আমি আর মোটেও সেভ মনে করছি না। ওই দু’জন ভ্যাম্পায়ার তোমার কথা জেনে গিয়েছে। তারা যখন তখন এসে তোমার উপর আক্রমণ করতে পারে। আর আমি চাইলেও তাদের হাত থেকে তোমাকে বাঁচাতে পারবো না। তাই আমি তোমার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিতে চাই। যদি তুমি সেই সিদ্ধান্তের রাজি থাকো তো!

কথাগুলো বলেই কপাল কুঁচকে চাঁদনীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শ্রাবণী। ওর কথা শুনে চাঁদনী কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত গলায় বলল,

— কি সিদ্ধান্ত আপু বলো, তুমি আমার বড় আপু। এখন দুনিয়ায় আপন বলতে তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। তাই আমার ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তুমি রাখো। বলো কি সিদ্ধান্ত নিয়েছো তুমি?

ওর কথার উত্তরে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইল শ্রাবণী। হয়তো কিছু একটা খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবছে সে। তারপর বলল,

— চাঁদনী অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে, তুমি এখন অফিসে চলে যাও। এ ব্যাপারে আমরা পরে কথা বলব।

কথাটি বলেই চাঁদনীকে আর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো শ্রাবণী। চাঁদনীও আর কিছু প্রশ্ন করল না। নিজের রুমে গিয়ে অফিসের জন্য রেডি হয়ে তারপর বের হয়ে পরলো। দরজার কাছে যেতেই শ্রাবণী ওকে ডেকে বললো,

— চাঁদনী আজ থেকে তুমি আর একা অফিসে যাবে না। আমি তোমাকে সাথে নিয়ে রেখে আসবো, আবার আমিই নিয়ে আসবো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here