তুমি_আমারই পর্ব ১৯+২০

#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৯_ধামাকা😎
#Sumaia_Jahan

পৃথিবীতে আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজের মধ্যে সাজতে আর সাজাতে। আর সেই আমাকেই দু দু ঘন্টা ধরে একই জায়গায় বসিয়ে খুব মনযোগ দিয়ে সাজাচ্ছে রুহি আর আমি বোর হয়ে বসে আছি।কি বা করবো শতো বারন করার পরও আমাকে এতক্ষণ সময় ধরে বসিয়ে বসিয়ে সাজাচ্ছে।মনে হচ্ছে আমি ওর পার্লারের একমাত্র ক্লাইড। আর আমাকে ঠিক ভাবে সাজাতে না পরলে ওর পার্লারটা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কোনো খুঁত থাকতে পারবে না। এতোটাই মনোযোগ দিয়ে সাজাচ্ছে ও আমায়।নিজেকে এখন মনে হচ্ছে কোনো আর্ট পেপার যাতে রুহি নামক আর্টিস্ট রং তুলি দিয়ে পেইন্টিং করছে।আর এই আর্টিস্ট এর মনে হয় কোনো ক্লান্তি নেই।কিন্তু আমি নামক আর্ট পেপার টা তো ভিষন ক্লান্ত হয়ে গেছে পেইন্ট হতে হতে এটা কি এই আর্টিস্ট বুঝতে পারছে না?

দুই ঘন্টা আগে রুহি হাতে একটা গাউন নিয়ে আমার ঘরে এসেছে। গাউন টা নাকি রোদ্দুর পাঠিয়েছে আমার জন্য। একটা শুভ্র সাদা রঙের ভিতর স্টোন বসানো আর মাঝে মাঝে আবার সাদা দিয়েই কিছু কাজ করা।বেশি ভারি কাজ না গাউন টাতে খুব হালকাই কাজ তবুও গাউন টা চোখধাঁধানো সুন্দর। আমি মুগ্ধতা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম গাউন টার দিকে। রুহি আমাকে হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে দুষ্টুমি করে বললো,

—- ওভাবে তাকিয়েও না নজর লেগে যাবে তো।আর এটা তোমার জন্যই স্পেশাল ভাবে তেমার বর বানিয়েছে।

রুহি কথায় আমার হুস আসলো।ছি কি নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে ছিলাম। রুহি কি ভাবলো।তারাতাড়ি প্রসঙ্গ উল্টাতে মুখে জোরপূর্বক হাসি আনার চেষ্টা করে বললাম,

—- আরে না আমি তো ভাবছিলাম আমার জন্য হঠাৎ ওনি গাউন কেন পাঠালেন?

—- সেটা আমি জানি না তুমি তোমার বরকেই জিজ্ঞেস করো।আর আজকে বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান আছে। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে তোমাকে এই গাইন টা পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে ছাদে পৌঁছে দেওয়ার।আর দেখতো আমাকে কেমন লাগছে?

আমি ওর কথায় ওর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখি ও একটা ব্লাক গাউন পরে আছে। আর খুব সুন্দর করে সেজেছে। এতে ওকে একদম একটা কালো পরীর মতো লাগছে। আমি ওর নাকটা একটু টেনে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম,

—- আজ তো রুহিপরীকে দেখে মনে হচ্ছে পরীলোক থেকে কোনো পরী নেমে এসেছে। আজ কোনো ছেলের সামনে কিন্তু যেও না তাহলে তোমাকে সত্যি কারে পরী ভেবে হার্ট অ্যাটাক করবে।

রুহি মুখ ফুলিয়ে দু হাত ভাজ করে বললো,

—- মোটেও না যদি সত্যি সুন্দর লাগতো তাহলে তো আগেই বলতা হুম।আমি বলার পরে বলতা না।

আমি ওকে দেখে হাসতে হাসতে বললাম ,

—- আমি এতোক্ষণ তোমাকে খেয়াল করিনি।অন্য কথা ভাবছিলাম তো তাই।আমি কিন্তু সত্যি বলছি তোমাকে আজকে একটা পরীর মতো লাগছে।

রুহি আমার কথা শুনে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে বললো,

—- সত্যি! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারতেছি না আমাকে পরীর মতো লাগছে।

ওর কান্ড দেখে আমার ভিষণ হাসি পাচ্ছে। মাঝে ওর কথা শুনে মনে হয় ও এই পৃথিবীর সবথেকে বয়স্কো মানুষ আর মাঝে মাঝে ও একদম ছোট্ট বাচ্চাদের মতো কান্ড করে।আল্লাই জানে ওর ভবিষ্যতে কি আছে।

তারপর থেকেই এই মহান সাজানোর কাজে আদাজল খেয়ে লেগেছে।আর আমি বোরিং হচ্ছি।দুই ঘন্টা পর আমার থেকে একটু দুরে গিয়ে হাত জেরে মুখে তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো,

—- কমপ্লিট!

ওর এই একটা কথা শুনেই আমার প্রানে পানি না না শুধু পানি না পুরো সমুদ্রের পানি এসে গেলো।খুশিতে আমার চোখ চিকচিক করে ওঠলো।রুহি আমাকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে আমার দুই কাদে হাত রেখে বললো,

—- ভাইয়াকে কিন্তু আমার ভিষণ হিংসে হচ্ছে। আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে ভাইয়ার আগে আমিই তোমাকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করে ফেলতাম।কিন্তু আফসোস তা তো আর হবে না।

আমি কিছু একটা ভেবে বললাম,

—- আচ্ছা রুহি আমাকে উনি ছাদে কেন যেতে বললনেন?অনুষ্ঠান তো বাড়িতে!

—- একটু পরেই সব জানতে পারবে।এখন চলো।

তারপর রুহি আমাকে নিয়ে ছাদে চলে আসলো।ছাদের দরজার সমনে এসে দাড়িয়ে বললো,

—- আমার দায়িত্ব এইটুকুই। বাকি পথটুকু তুমি একাই যাও।আমি চললাম।

কথাটা বলেই গাউনের দুপাশ দু হাত দিয়ে ধরে সিরি বেয়ে দ্রুত চলে গেলো। আর আমি ওর যাওয়ার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে ছিলাম। তার একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দারজা ঠেলে ছাদে প্রবেশ করলাম।ওমা ছাদে এসে দেখি পুরো ছাদ অন্ধকার। আমার ভিষন ভয় করতে লাগলো।আমি ভয়ার্ত কন্ঠে রোদ্দুর কে ডাকলাম,

—- রোদ্দুর রোদ্দুর আপনি কি এখানে আছেন? থাকলে প্লিজ সারাদিন আমার ভিষণ ভয় করছে!

সাথে সাথেই পুরো ছাদ আলোকিত হয়ে গেছে।চারিদিকে তাকিয়ে দেখি পুরো ছাদটা কেউ খুব যত্ন করে সাজিয়েছে। হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠলো,

—– আয়সু প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।আর কখনো এমন টা করবো না।

আমি চমকে উঠলাম।এই নামে তো আমাকে শুধু আদিই ডাকতো।ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে হাটু ঘেরে বসে রোদ্দুর ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

—- আপনি আমাকে এই নামে ডাকছেন কেন? এি নামে তো……..

—– আশপিয়ার আদি ডাকতো তাই তো!আর এখনো আশপিয়ার আদিই তাকে এই নামে ডাকছে।

—- কি বলতে চাইছেন আপনি?আমার আদি আমাকে ডাকছে মানে?

—- মানে আমি তোর সেই আদি যে তোকে খুব কষ্ট দিয়েছে।খুব অত্যতাচার করেছে।

—- কিন্তু আপনি তে রোদ্দুর!

—- হ্যা আমি রোদ্দুর খান কিন্তু আশপিয়ার সামনে সে আদি তার আসল পরিচয় আশপিয়ার সামনে দেয়নি সে!

আমি খুশি হবো দুঃখ পাবো বুঝতে পারছি না আমার এতোদিনের অপেক্ষা করা মানুষ টা আমার সামনে। আর এতোদিন আমারই চোখের সামনে ছিলো অথচ আমি বুঝতেই পারি নি।আমি এবার কেঁদেই ফেললাম।আবারও কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

—- স সত্যি!

রোদ্দুর ছলছল চোখে বললো,

—- হুম সত্যি সত্যি সত্যি তিন সত্যি আমিই তোর সেই খারাপ আদি যে তোকে খুব কষ্ট দিয়েছে।জানিস আমার সেই দিন খুব রাগ হয়েছিলো তুই যখন আমাকে চিনতে পারিসনি।আমি কিন্তু তোকে দেখেই চিনে ফেলেছিলাম।তোর গলায় থাকা আমার দেওয়া লকেট টা দেখে ওটাকে ছুঁতে গিয়ে ছিলাম আর তই তখনই আমাকে চড় মারলি।আমার খুব রাগ হয়েছিল যেখানে আমি তোকে এক দেখাতে চিনে ফেলেছিলাম আর সেখানে তুই আমাকে চিনা তো দূরের কথা আমার সাথে এমন ব্যবহার করলি।বিশেষ করে তুই আমাকে চিনতে পারিসনি এটার কারনে আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো।আমি কিন্তু সেদিই দেশে ফিরেছিলাম আর তুই আমাকে চিনতে পারলি না তাই আমার মনটা একদম ভেঙ্গে পরেছিলো।

এটুকুই বলেই রোদ্দুর একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলো,

—- ওই দিনই আমি প্লান করি তোকে এই ভাবে বিয়ে করবো আর তোকে একটা বছর আমার পরিচয় না দিয়ে তোকে আমার মতোই কষ্টের আগুনে জ্বালাবো।

আমি তীব্র অভিমানের কন্ঠে বললাম,

—- এখনো তো তেমার সেই একবছর শেষ হয়নি তাহলে আমাকে কষ্টের আগুন থেকে বের করলে কেন?

অপরাধী মুখ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে বললো,

—- তুই হয়তো ভুলে গেছিস আজ তোর জন্মদিন। কালকে তোর বাপি ইনভাইড করতে গিয়ে জানতে পারি আমি চলে যাওয়ার কিছুদিনের পর তোর একটা এক্সিডেন্ট হয় । আর সেই এক্সিডেন্টে সব কিছু মনে থাকলেও অতিথিের সবার চেহারা গুলো তুই ভুলে গেছিস।তাই হয়তো তুই সেই দিন আমাকে চিনতে পারিস নি।আর এতোদিনেও আমাকে চিনতে পারিসনি। আমি এসব কিছু না জেনেই তোর সাথে এতোটা খারাপ ব্যবহার করেছি।আর তোকে খুব কষ্ট দিয়েছি।আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দে।বিশ্বাস কর আমি আর কখনো না জেনে এমন করবো না।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে!

কথা গুলো খবই অপরাধী মুখ করে বললো।কিন্তু আমি কিছুতেই ওকে ক্ষমা করবো না। না জেনে ও কেন আমাকে এতো কষ্ট দিলো।এবার আমার পালা।আবার আমি ওকে ঠিক ওর মতোই করে ওকে ফিরিয়ে দিবো।আমি বললাম,

—- ক্ষমা করতে পারি তবে একটা শর্ত আছে!

ও খুশিতে লাফিয়ে ওঠে দাড়িয়ে বললো,

—- কি শর্ত বল না আয়সু! আমি তোর সব শর্ত মানতে রাজি।

আমি মুখে দুষ্ট হাসি দিয়ে বললাম,

—- তুমি তো আমাকে এক বছর জ্বালাতে চেয়েছো! তো এখন থেকে ঠিক একবছর আমি বাপির কাছে গিয়ে থাকবো। আর তুমি আমার থেকে একবছর দুরে থাকবা।এটাই তোমার শাস্তি।

আমার কথা শুনে রোদ্দুর আমাকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো,

—- তুমি আমারই ছিলে আমারই আছো আর আমারই থাকবে!আমার থেকে দুরে যাওয়ার চেষ্টাও করো না। তাহলে আদি থেকে রোদ্দুর খান হতে কিন্তু বেশি সময় লাগবে না।আর রোদ্দুর খানকে তো তুমি চিনোই সুইটহার্ট!

এতোক্ষণ কথাগুলো খুব সাহসের সাথে বললেও এখন ভয়ে ডোক গিললাম।রোদ্দুর থেকে আমার আদিই টের ভালো। দরকার নাই আমার এই রোদ্দুরের মতো হওয়ার।

ওই দিকে পার্টিতে হঠাৎ সব আলো নিভে গেলো।একজনের উপর লাইট পরলো সে হাসি মুখে বললো,

—- এটেনসোন প্লিজ! আজ আমি আপনাদের সামনে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এনাউন্সমেন্ট করবো।

লোকটার কথায় সবাই ওর দিকে গুরে তাকালো।রুহি লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাকের উপর অবাক।কেননা লোকটা ওর চিরচেনা।এই লোকটার জন্যই তো এতো গুলো দিন অপেক্ষা করছিলো।আর এই লোকটা ওর সামনে আজ এভাবে দেখতে পাবে ওর কল্পনার অতিত।আর লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে সবার অগচরে চোখ টিপ মারলো।……
#তুমি_আমারই
#পর্ব_২০
#Sumaia_Jahan

—- এটেনসোন প্লিজ! আজ আমি আপনাদের সামনে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এনাউন্সমেন্ট করবো।

লোকটার কথায় সবাই ওর দিকে গুরে তাকালো।রুহি লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাকের উপর অবাক।কেননা লোকটা ওর চিরচেনা।এই লোকটার জন্যই তো এতো গুলো দিন অপেক্ষা করছিলো।আর এই লোকটা ওর সামনে আজ এভাবে দেখতে পাবে ওর কল্পনার অতিত।আর লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে সবার অগচরে চোখ টিপ মারলো।রুহির মুখটা এবার অটোমেটিকলি হা হয়ে গেলো।ওর মনে হচ্ছে ও জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে। ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না ওর সামনে ভালোবাসার মানুষটি দাড়িয়ে আছে।সে তো এখন আসার কথা না!তার তো আরো দুইবছর পর আসার কথা।সে তো তাই বলেছিলো।

তিন বছর আগে রুহি আর আকাশের বিয়ে ঠিক করে রাখে ওদের বাবা মা।আকাশ রোদ্দুরের ছোট বেলার বন্ধু। আর আকাশের বাবা ও রোদ্দুরের বাবা একে অপরের বন্ধু ছিলো।সেখান থেকেই রোদ্দুরেের বাড়িতে আকাশের যাওয়া আসা ছিলো।রোদ্দুর বিদেশ চলে যাওয়ার পরও আকাশ রোদ্দুরের বাড়ি আসতো রুহিকে দেখার জন্য। তখন থেকেই আকাশ রুহিকে ভালোবাসতে শুরু করে।ওদের বাবারা যেহেতু আগে থেকেই বন্ধু ছিলো তাই আকাশ ওর বাবাকে রুহির কথা বললে উনি সাথে সাথেই রাজি হয়ে যান।আর ঠিক তখনই আকাশকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বিদেশ যেতে হয় পাঁচ বছরের জন্য। তাই যাওয়ার আগে আকাশের সাথে রুহির বিয়ে ঠিক করে রাখে ওদের বাবা-মারা।রুহিও তখন থেকে আকাশ কে ভালোবাসতে শুরু করে। কিন্তু আকাশের তো আরো দুইবছর পর আসার কথা। তবে আকাশ কেন দুইবছর আগে আসলো?আর কিভাবেই বা আসলো?হ্যাঁ রুহির সামনে যে লোকটা দাড়িয়ে আছে সে আর কেউ না রুহির ভালোবাসার মানুষ আকাশ।রুহি নিজে নিজেই বললো,

—– না না আমি মনে হয় আজ আকাশ ভাইয়ার কথা বেশি বেশি মনে করছিলাম তাই হয়তো আকাশ ভাইয়াকে দেখছি।এটা আকাশ ভাইয়া হতেই পারে না।আকাশ ভাইয়া তো দুবছর পর আসবে।

কথাটা বলেই রুহি পিছনের দিকে ঘুরে চলে যাচ্ছিলো।এমন সময় আকাশ আবার সবার উদ্দেশ্য বললো,

—- আপনারা তো সবাই জানেন আমার সাথে রুহির বিয়ে ঠিক করা আছে।আজ কিন্তু এখানে দুটো কারনে আপনাদের কে ডাকা হয়েছে। এক আশপিয়ার জন্মদিন আর দ্বিতীয় কারনটা হলো রুহি আর আমার এনগেজমেন্ট।

কথাটা শুনে রুহি থমকে যায়।সাথে সাথে রুহির উপর লাইট পরলো। আর চারিপাশে হাতে তালির শব্দ ভরে গেলো।

ওইদিকে রোদ্দুর আর আমি দোলনায় বসে বসে আকাশের চাঁদ দেখছে।অনেকক্ষণ পর্যন্ত নিরবে রোদ্দুর আমার কাঁদে মাথা রেখে চাদ দেখছিলো।আমার হঠাৎ বিকেলের কথা মনে হলো।

—- আচ্ছা আদি বিকেলে তোমাকে এমন উদাসীন দেখাছিলো কেন?দেখে মনে হচ্ছিলো তুমি কিছু হারিয়ে ফেলের ভয় পাচ্ছিলে!

রোদ্দুর আমার কথা মাথা তুলে৷ বললো,

—- আসলে আমি ভয় পাচ্ছিলাম তুমি যদি আমাকে ভুল বুঝো আর আমাকে ক্ষমা না করো তাই আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম।

আমি আবারও কিছু একটা ভেবে বললাম,

—- তা তো বুঝলাম কিন্তু তুমি কাকে যেন আনতে গিয়েছিলে?

রোদ্দুর আবার আমার কাঁদে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

—- তোমার আকাশ কে মনে আছে!

—- হুম আকাশ ভাইয়া কে তো মনে আছে কিন্তু ওনার চেহারা মনে নেই।উনি তো তোমার বন্ধু ছিলো।

—- হুম সেই আকাশ কে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে গিয়েছিলাম।
তারপর রোদ্দুর আমাকে সবকিছু খুলে বলে।

আমি সব শুনে অবাক হয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বললাম,

—- কিন্তু রুহি তো আমাকে কিছুই বলেনি! আজ যে ওর এনগেজমেন্ট!

রোদ্দুর ভাব শীল ভাবে বললো,

—- রুহি তো নিজেই জানে না আজ ওর এনগেজমেন্ট!

—- কিহহহ?

—- আকাশ রুহিকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো তাই ওকে না জানিয়েই আজ আকাশ এসেছে।আজ যে আসবে আকাশের সে কথা সবাই জানতো শুধু রুহি আর তুমি ছাড়া। এতোক্ষণে মনে হয় আকাশ এনগেজমেন্ট এর এনাউন্সমেন্ট করেও দিয়েছে।

আমি রোদ্দুর কে আমার কাঁধ থেকে সরিয়ে বললাম,

—- তো আমরা এখানে কি করছি? আমাদের তো এখন নিচে থাকার কথা উচিৎ!চলো আমরা এখনি নিচে যাই!

কথাগুলো বলেই রোদ্দুর আমি চলে যেতে নিলাম।কিন্তু রোদ্দুর মুখ ফুলিয়ে ওখানে বসে রইলো।আমি ওর এমন কান্ড দেখে ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—- তুমি এখনো বসে আছো কেন?

রোদ্দুর মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- এখুনি যেতে হবে?

আমি বুঝতে পারছি এই অলস সারারাত এখানেই বসে থাকার প্লান করে বসে আছে।তাই রোদ্দুরের দুই হাতে ধরে টেনে নিচে নামতে লগলাম।

এদিকে রুহির সামনে আংটি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।রুহি এখনো ঘোরের মধ্যে রয়েছে।ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওর সামনে আকাশ দাড়িয়ে আছে। আকাশ রুহির অবস্থা বুঝতে পেরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রুহির হাতটা টেনে আংটি টা পরিয়ে দিলো।আবারও চারিপাশে হাত তালিতে ভরে গেলো।

আমি আর রোদ্দুর নিচে নামতে নামতেই দেখি রুহির আংটি পরানো হয়ে গেলো।আমি রোদ্দুরের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

—- দেখেছো ওদের এনগেজমেন্ট তো শেষ হয়ে গেলো!সব হয়েছে তোমার জন্য। এই তুমি আদো বিদেশ গিয়েছিলে তো? আমার কিন্তু এখন সন্দেহ হচ্ছে!

রোদ্দুর চমকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

—- কেন?

আমি একটু ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

—- না মানে তুমি এতো বছর বিদেশে থেকেও এমন অলস কি করে?আমি তো জানি বিদেশের লোকেরা খুব টাইম মেনটেইন করে চলা চল করে।আর তুমি সেখানে এতো বছর থেকেও এতো অলস কি করে?

রোদ্দুর মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- আমি এতো বছর বিদেশে থাকলেও আমি কিন্তু একদম পিউর বাঙালি। আর বাঙালিরা একটু আগটু অলসতামি করবেই এটা স্বাভাবিক।এতে এতো ভাবার কিছু নাই।

শ্বাশুড়ি মা এসে বললো,

—- তোরা আবার ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস!আজ তো তোদের মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিয়েছিস।তারপরও তোদের ঝগড়া বন্ধ হলো না!তোদের নিয়ে যে আমি কি করবো আল্লাহই জানে!

কথাটা বলেই হাসতে হাসতে চলে গেলেন।আর আমি রোদ্দুর দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বললাম,

—- মা কি করে জানতো আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো আর সেটা এখন আর নেই?

রোদ্দুর আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে ডোন্ট ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সিরি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।আর আমি ভ্যবলার মতো ওখানেই দাড়িয়ে রইলাম।তারমানে সবাই সব কিছু জানতো। শুধু মাত্র আমি কিছু জানতাম না।আমার ভাবনার মাঝে দিয়া কোথা থেকে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,

—- ম্যাডামের রাগ কি এখনো কমেনি?

আমি ওর দিকে একবার তাকিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললাম,

—- রাগ করমো না তো কি আপনার গলায় মালা দিবো?কেমন বন্ধু তুই একটা বার আমাকে সব কিছু বলতে পারলি না!তাহলে তো আর এতো কিছু হতোই না।

দিয়া আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে করুন ভাবে বললো,

—- বিশ্বাস কর দোস্ত আমিও সব কিছু ভালোভাবে জানতাম না।রোদ্দুর ভাইয়া যেটুকু জানতো আমিও সেটুকুই জানতাম।আর আমি তোকে বলতাম কিন্তু রোদ্দুর ভাইয়া আমাকে বলতে দেয়নি তাই তোকে কিছু বলতে পারিনি।প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে।

আমিও আর রাগ করে থাকতে পারলাম না।কি করেই বা রাগ করবো ওকে যে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি। তাই ওকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।আর বললাম,

—- আমিও তোকে ভুল বুঝে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি আমাকেও ক্ষমা করে দে।

দিয়া আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,

—- আমি অনেক সৌভাগ্যবতী যে জীবনে তোর মতো একজন বন্ধু পেয়েছি।

চলবে,,,,,,

[আশা করি সবার সব কিছু ক্লিয়ার হয়েছে। আর যদি কিছু বাকি থাকে তাহলে আমাকে বলবেন নেক্সট পার্টে ক্লিয়ার করা চেষ্টা করবো।
আর আমি সময় মতো গল্প দিতে পারি না তার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমি গল্প লিখি লুকিয়ে লুকিয়ে।তাই গল্পটা আমি টাইম মতো দিতে পারি না।]
চলবে,,,,,,,,

[সবার কাছে আগেই হাত জোর করে ক্ষমা চাচ্ছি দেরিতে দেওয়ার জন্য। আসলে খুব সমস্যায় ছিলাম তাই দেরিতে দেওয়ার জন্য। আর সাবাই এবার খুশি তো রোদ্দুরই আদি 🙃]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here