#ফেমাস_বর🙈(বিবাহ পর্ব)
#পার্ট_১৯
#লেখিকা_রামিসা_মালিয়াত_তমা
আরেহ,আবরার ভাই!আমাকে এমন টানতেসিস কেন তুই?প্লিজ ছাড়,এভাবে টেনে-হিঁচড়ে আমাকে নিয়ে যাইতেসিস,আমার হাতে ব্যাথা লাগতেসে!
কথাটা অরিত্রি বলল।
আবরার কোনো কথা না বলে শুধু অরিত্রিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
আবরার অরিত্রিকে তমাদের বাসার গেস্ট রুমে নিয়ে আসলো।
অরিত্রি-কী হইসে টা কী?
আবরার অরিত্রির হাত দুটো ধরল।
অরিত্রি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
অরিত্রি-আববররার…..ভভভাাইই….
আবরার অরিত্রির হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো আর বলল,
আবরার-নে,ধর।এটা তুই তমা আর আবরার ভাইয়ের বিয়েতে পরবি।ওখান থেকেই একটা চুজ করে আনলাম তোর জন্য।আর ওখানে তো এটা দিতেও পারতাম না সবার সামনে তাই এখানে এনে দিলাম।
অরিত্রির যেন দম ফিরে এলো।সে যে এতক্ষনে কত কী ভেবে বসেছিল সেটা সে নিজেও জানেনা।
অরিত্রি-উফ,আল্লাহ।বাঁচছি!আমি আরো কত কী ভেবে বসেছিলাম।আল্লাহ!(মনে মনে বলল)
আবরার-এতো ভয়ের কিছু নাই।আমি তোকে কিছু করতে যাচ্ছিলাম না।আমার চয়েজ এত বাজে না,বুঝেছিস!হুহ!
এটা বলে আবরার চলে গেল সেখান থেকে।আর অরিত্রি বলদের মতো চেয়ে রইলো।
অন্যদিকে,
সবাই হলুদের আয়োজন নিয়ে আলোচনা করছে।হলুদে তমাকে শাড়ি নাকি লেহেঙ্গা দিবে,সেটা কেউই বুঝতে পারছেনা।
আফসানা হাসিব-উফ,তমা তুই হলুদে কী পড়বি রে মা!
মানিতা কাবির-আমিও তো বুঝতে পারছিনা।এই তমা,তুই কিছু বল?
তমা-আম্মু,মামিমনি!আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা,কী বলব বলো তো?
আফসানা-এদিকে আদিটাও তো অফিসে!নাহলে তমা কী পড়বে সেটা ও বলে দিতে পারতো!
আদনানের কথা শুনে তমা অনেক লজ্জ্বা পেল।তবে সেটা কেউ খেয়াল না করলেও তুরিন ঠিকই খেয়াল করেছে।
তুরিন-ওরেহ রেহ,এই যে আমাদের নতুন বউ!এতো লজ্জ্বা পেলে হবে নাকি?এখনো তো আরো কতকিছুই বাকি আছে লজ্জ্বা পাওয়ার!(চোখ মেরে বলল)
তমা এবার খুবই লজ্জ্বা পেলো।লজ্জ্বায় বেচারী দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
আর বাকিরা তমার কান্ড দেখে হাসতে লাগল।
এদিকে তমা দৌড়ে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে কারোর সাথে ধাক্কা খেল।আর সেটা হচ্ছে আদনান।
আদনান-কী ব্যাপার?আমার বাচ্চার মায়ের এতো তারাহুরা কীসের শুনি?
একে তো বাকিদের কথা শুনে তমার লজ্জ্বার শেষ নেই,আর এখন আদনানের কথা শুনে যেন তমার লজ্জ্বার সীমা রইলো না।
আদনান দেখলো যে তার তমু একদম লাল হয়ে গেছে।তমাকে এই অবস্হায় দেখতে আদনানের খুবই ভালো লাগে।ইচ্ছে করে তাকিয়েই থাকতে।
আদনান-কীরে?আমার বাচ্চার মা?কথা বলিস না কেন?নাকি মুখে কেও এপেল কম্পানির সুপার গ্লু লাগিয়ে দিয়েছে ?(মজা করে বলল)
তমা-কী তখন থেকে বাচ্চার মা,বাচ্চার মা লাগাইসেন?আমার নাম আছে,আমার নাম ধরে ডাকেন!
আদনান তমাকে এবার পিছন থেকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
আদনান-কেন রে আমার বাচ্চার মা?নাম ধরে ডাকলে কী হবে?
আদনানের এই ধরাতে তমার অস্বস্তিও লাগছে,আবার ভালোও লাগছে।হাজার হোক,নিজের পার্মানেন্ট ভালোবাসা,অর্থাৎ নিজের হাসবেন্ডের ভালোবাসা থেকে কে বঞ্চিত হতে চায়।
তাই তমা ঐ অবস্থাতেই আদনানকে বলল,
তমা-আবার বাচ্চার মা?এই আপনি কী কথা বুঝেন না?আপনাকে না করলাম এটা বলতে।আর কী হ্যাঁ?ছাড়েন,ছাড়েন বলতেসি!কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে আমার আর মান-সম্মান কিচ্ছু থাকবেনা।ছাড়েন!
আদনান তমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,তমার গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে নেশাভরা আভছা কন্ঠে বলতে লাগল,
আদনান-না ছাড়লে কী করবে কী আমার বাচ্চার মা টা?আর সম্মান না থাকলে না থাকুক।কিন্তু আমার বাচ্চার মা কে তো এখন আর ছাড়ছিনা।একবার যখন পেয়েছি,তখন আর ছাড়ি কী করে বল?
তমার এবার ভীষন অস্বস্তি লাগছে।ওদের দুজনকে কেউ একসাথে দেখে ফেললে তমার লজ্জ্বার শেষ থাকবেনা।
তমা তো আদনানকে সরানোর অনেক চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছুতেই কিছু করতে পারছেনা।উল্টে আদনান তমাকে আরো শক্ত করে ধরছে।
কিছুক্ষন এভাবে থেকে তমাকে ছেড়ে দিলো আদনান।
আদনান-জানিস এটা কেন করলাম?
তমা তো পারছেনা লজ্জ্বায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে।তাও কোনোভাবে নিজেকে সামলিয়ে বলল,
তমা-কেন?
আদনান-কারণ,গত দু’তিনদিন আমার তোর সাথে দেখা হবেনা।আমরা আজই চলে যাচ্ছি।তাই আমার তমুকে আমি আজ একটু বেশিই আদর করলাম।
তমার একটু খারাপ লাগলো আদনানের সাথে দু’তিনদিন দেখা হবেনা শুনে।
আদনান বুঝল যে তমা একটু মন খারাপ করেছে।তাই আদনান তমুর দু’হাত তার হাতের মাঝে নিয়ে বলল,
আদনান-আমাদের আবার খুব শীঘ্রই দেখা হবে জানপাখি।তুই কিচ্ছু ভাবিস না।
এই বলে তমার কপালে আদনান একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলো।আর তমা ওখান থেকে চলে গেল।
এরই মধ্যে হঠাৎ অরিত্রিকে ঘর থেকে বের হতে দেখে তমা একটু অবাক হলো।তারউপর হাতে আরেকটা প্যাকেট আছে দেখে তমা আরো অবাক হলো।
তমা-কীরে?হাতে প্যাকেট কীসের?
অরিত্রি-আবরার ভাই দিয়েছে!
তমা-ওহ হো!তা কী আছে এর মধ্যে?
অরিত্রি-জানিনা গো!আবরার ভাই বলল তোদের বিয়েতে পরার জন্য কস্টিউম!
তমা-ওহ,আচ্ছা!
এতোক্ষন অরিত্রি তমার গলার দিকটা খেয়াল না করলেও এখন করলো।আর সাথে সাথে বলল,
অরিত্রি-কীরে?তোর গলা এমন টুকটুকে লাল হয়ে আছে কেন রে?
তমা-হায় আল্লাহ রে!খাইসে!এই যে খাইলাম বাঁশ!(মনে মনে)
ইয়ে,আরেহ আমি গার্ডেনে বলে ছিলাম তো!আর ওখানে যে পরিমাণ মশা।(আদনান রে মশা বানায় দিলো)আমাকে কামড়িয়ে রাখেনি।তাই আমি ঐ গলা চুলকাতে চুলকাতে লাল বানিয়ে ফেলেছি!
অরিত্রি-ওহ,আচ্ছা!(অরিত্রি কিন্তু বুঝতেই পারেনি যে আসলে ব্যাপারটা কী)
এই বলে অরিত্রি ওখান থেকে চলে গেল।
আর তমা এক দৌড়ে ঘরে চলে গেল।ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গলা দেখতে লাগলো।নিজের গলা দেখে তমা নিজেই লজ্জ্বা পেল।লজ্জ্বায় বেচারি মুখ ঢুকে ফেলল আর বলল,
তমা-ইশশশশ!(লজ্জ্বা পেয়ে)
চলবে,,,,,,,,,