#মেয়ে
লেখিকা : সৈয়দা রাইসা আবেদীন অহনা
সূচনাংশ
আরিয়ান খুবই রাগে অফিস থেকে সোজা বাসায় এসেই চিৎকার করে তার মেয়ে ফারিয়াকে ডাকতে থাকে। এদিকে আরিয়ানের চিৎকার শুনে ভিতর থেকে আরিয়ানের স্ত্রী যুনাইরাহ বেরিয়ে এসেই বলে,
– কি হলো? এভাবে চিৎকার করছো কেন? আর এই সময় এলে? তুমি না অফিসে ছিলে?
যুনাইরাহর কথা শুনেই আরিয়ার চিৎকার করে বলে,
– তোমার মেয়ে কোথায়? ডাক তাকে।
এদিকে যুনাইরাহ তার স্বামীর এমন রুপ দেখে ভয় পেয়ে যায়। যেই লোক কিনা বাসায় এসেই তার মেয়ে ফারিয়াকে আদর করে ” আমার মেয়ে কোথায়? ” বলে ডাকে আর ফারিয়াও তার বাবার সাথে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করে,,,, সেই লোক আজ ফারিয়াকে আমার মেয়ে না বলে উল্টো “তোমার মেয়ে” বলে সম্বোধন করলো তার উপর ফারিয়া তার বাবার বাসায় আসার আওয়াজ পেয়েও রুম বন্ধ করে বসে আছে বের হচ্ছে না। কেমন যেন একটা অঘটনের আভাশ পাচ্ছে যুনাইনাহ। সে চিন্তিত মুখ নিয়ে আরিয়ানকে বলে,
– কি হয়েছে আরিয়ান? সব ঠিক আছে তো নাকি?
– তোমার মেয়েকে এখানে আসতে বলো।
– কি আমার মেয়ে, আমার মেয়ে লাগিয়ে রেখেছো হ্যাঁ? প্রতিদিন এসেই যেখানে তোমার মেয়ে বলে ডেকে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখো সেখানে তোমাদের দুই বাপ বেটির আজ হটাৎ হলো কি শুনি?
– ফারিয়াকে এখানে ডাকো আগে।
– ফারিয়া তো আজ সকালে তোমার সাথে নাস্তা করে যে রুমে ডুকলো একটু পর দেখলাম ঠাস করে দড়জা লাগিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে আর বেরই হয় নি। কতো ডাকলাম একটুও বের হলো না।
-বের হবে কি করে? আমাদের সবার মুখ কালো করে দিয়ে এখন নিজে লুকিয়ে লাভ কি?
– এসব কি বলছো তুমি?
– ঠিকই বলছি।
– তুমি খুলে বলো কি করেছে ফারিয়া।
– আমার তো বলতে মুখেও বাধছে।
বলেই আরিয়ান তার ফোন বের করে তার স্ত্রী যুনাইরাহর সামনে তুললে যুনাইরাহ যেন তার বলার সব ভাষা হারিয়ে ফেলে। কারন ফারিয়ার একটি অপ্রিতিকর ছবি পুরো ইন্টারনেট জগতের সোশ্যাল মিড়িয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। আরিয়ান ফোনটি নামিয়ে বন্ধ করেই বলে,
– যখনই কাজের অবসরে একটু সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুকলাম এসব চোখে পড়ে। আমি আর এক সেকেন্ডও অফিসে থাকার পরিস্থিতিতে ছিলাম না। যেই একমাত্র মেয়ে আমার গর্ব ছিলো তার জন্যই আজ চোরের মতো আমাকে অফিস থেকে পালিয়ে আসতে হলো। আজ পালিয়ে এসেছি কাল কি হবে ভাবতে পারছো? আজ তো রাত হয়ে গেলো। কাল অফিস পর্যন্ত তো দূর বাসার বাহিরেও পা দিতে পারবো না। এতোদিন যারা সম্মানে মাথা নত করতো আজ তারা মুখে থু থু মারবে।
এদিকে যুনাইরাহ আরিয়ানের কথা শুনে রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের মেয়ের রুমের সামনে এসে সজোরে দরজা ধাক্কা দিতে থাকে। আর বলে,
– এই মেয়ে দড়জা খোল। আমাদের মুখে কালি মেখে এখন ভিতরে বসে কি করছিস? বাহিরে আয়।
যুনাইরাহ এসব বলতে থাকে আর দড়জা ধাক্কাতে থাকে। আর এদিকে ফারিয়া রুম অন্ধকার করে বসে বসে সেই সকাল থেকেই কেদে যাচ্ছে। চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে। অন্যদিক যুনাইরাহ দরজায় নক করা থামিয়ে দিয়ে আরিয়ানের কাছে এসে দেখে আরিয়ান সোফায় বসে সোফার হাতলে কুনুই রেখে হাত দিয়ে কপাল ঠেকিয়ে বসে আছে। যা দেখে যুনাইরাহ তার স্বামীর সামনে এসে বসতেই দেখে আরিয়ান তার চোখ দিয়ে পানি ফালাচ্ছে। যা দেখে যুনাইরাহও আরো কেদে দেয়। আর তার স্বামীকে সান্তনা দিতে থাকে। তখনই আরিয়ান বলে,
– আমাদের একমাত্র মেয়ে, যার লালন পালনে একটুও কমতি রাখি নি। আমাদের গর্ব ছিলো, সে এ কি করে ফেললো? তাহলে কি আজ আমরাই বাবা মা হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ ছিলাম?
আরিয়ান এতোটুকু বলেই পাশে তাকাতেই দেখে ফারিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যা দেখে আরিয়ান মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে উঠে। যুনাইরাহও দাঁড়িয়ে যায়। ফারিয়া কান্না মিশ্রিত কন্ঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিয়ান ঠাস করে ফারিয়ার গালে সজোরে এক চড় বসিয়ে দেয়। যেই বাবা আজ অবধি মেয়েকে মারা তো দূর এক ফোটা আচড়ও লাগতে দেয় নি আজ সে তার মেয়েকে চড় মারলো।
– আর একটা কথাও শুনতে চাই না। কথা তো দূর তোর মুখটাও দেখতে চাচ্ছি না আমি এখন।
বলেই আরিয়ান রাগে ফুসতে ফুসতে নিজের রুমে চলে যায়। আর ফারিয়া সেখানেই বসে পড়ে কাদতে থাকে। মেয়েকে এই প্রথম এমনভাবে কাদতে দেখছে সে। যেই মেয়ে একটু ব্যাথা পেলেই হৃদয় কেপে উঠতো আজ সেই মেয়ের এমন কষ্ট, কান্না দেখেও যুনাইরাহর খারাপ লাগছে কিন্তু কিচ্ছু করতে পারছে না। হাজার হোক সে মা, সন্তানের এমন কষ্টে মায়ের মন কাদাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কি করবে একদিকে মেয়ের এমন কষ্ট অন্যদিকে নিজের স্বামী আর পরিবারের এমন বদনাম। সব যেন যুনাইরাহকেও আরিয়ানের মতো পাথর করে দিয়েছে। ফারিয়া যুনাইরাহর পায়ের কাছে এসে কেদে কেদে মাফ চাইছে কিন্তু যুনাইরাহ পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে। একটা পর্যায়ে যুইনারাহও সেখান থেকে চলে আসে। কারন সে জানে আর এক সেকেন্ডও সেখানে থাকলে সে নিজেও কেদে দিবে। কিন্তু মেয়ের সামনে নিজেকে নরম করতে চাইছেন না তিনি। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে মেয়ে যেন নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলতে পারে তাই নিজের মনে পাথর রেখে সেখান থেকে চলে আসে৷ সেদিন রাতে কারো মুখেই খাবারের একটি দানাও যায় নি। যেন কোন কালো মেঘ দ্বারা পুরো পরিবারটি আচ্ছাদিত হয়ে গিয়েছে। এদিকে পরেরদিন সকাল থেকেই হাজারও ফোন এসে আরিয়ান আর যুনাইরাহর মাথা খেয়ে ফেলছে। আত্মীয় স্বজনদের একের পর এক ফোন যেন পাগল করে তুলছে। এক পর্যায়ে আরিয়ান বাধ্য হয়ে উঠে এসে যুনাইরাহকে বলে,
– কিছুদিনের জন্য আমরা দেশের বাহিরে যাচ্ছি।
– কেন?
– বুঝতে পারছো না কেন? দেখছো না কিছু? কয়জনের মুখ বন্ধ করাবে তুমি?
– তাই বলে এখম দেশ ছেড়ে পালাবো?
– আপাতত আমার মাথায় আর কোন কিছু কাজ করছে না। আগে যাই তারপর ঠান্ডা মাথায় ভাবা যাবে।
আরিয়ানের কথায় যুনাইরাহর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। সেদিন মাঝ রাতের ফ্লাইটেই সবাই জার্মানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ফ্লাইটে বসেই যুনাইরাহ আরিয়ানকে বলে,
– আমাদের এভাবে লুকিয়ে যাওটা কি ঠিক হচ্ছে?
– তাহলে কি করবো বলো?
– এভাবে হাতে হাত রেখে বসে থাকাটাও তো ঠিক হচ্ছে না।
– আমি নিজেও বুঝতে পারছি না এখন আমাদের আসলে কি করা উচিত। আমাকেও সময় দাও ভাবার। ওইখানে থাকলে আমি এক দুইদিনের মধ্যেই পাগল হয়ে যাবো। এই দুইদিনেই আমার সব চিন্তা ভাবনা করার শক্তি কমে গেছে। আর কতো! কিছুটাদিন সময় দাও, কিছু না কিছু তো করতেই হবে। তোমার কি মনে হয় বাপ হয়ে মেয়ের এমন পরিস্থিতি চুপচাপ বসে বসে দেখবো? কিছু একটা পদক্ষেপ তো নিবোই। একটু সময় লাগবে শুধু।
বলেই আরিয়ান আর যুনাইরাহ সামনে তাদের মেয়ের সিটের দিকে তাকিয়ে থাকে। এদিকে ফারিয়াও মলিন মুখে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।
.
বেলা ১২ টা বাজে,
জার্মানির হামবোল্ট ইউনিভার্সিটি অফ বার্লিনের সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের একজন সিনিয়র ফিমেল প্রফেসর ড. নাযাকাত দুপুরের ক্লাস শেষ করে বের হতেই তার সামনে সেই একই ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের অন্য আরেকজন সিনিয়র প্রফেসর ড. আরিশের সাথে দেখা হয়।
– নাযাকাত ক্লাস শেষ তোমার?
– হ্যাঁ।
– আজ আর নেই?
– না।
– তুমি সবসময় এমন হ্যাঁ আর নাতে উত্তর দাওয়াটা বন্ধ করবে!
– তুমিও এমন এক কথায় প্রশ্ন করা বন্ধ করে দিয়ে বর্ননামূলক প্রশ্ন করো তাহলেই করবো।
নাযাকাতের এমন কথা শুনে আরিশ হেসে দেয় আর দুজনেই লাঞ্চ করতে চল যায়।
নাযাকাত আর আরিশ দুজনেই বাংলাদেশি। আজ প্রায় উনিশ বছর ধরে দুজনেই জার্মানিতে থাকছে। আরিশ তার ফ্যামিলির সাথে থাকলেও নাযাকাত একাই থাকে৷ নাযাকাত আর আরিশ একই ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হওয়ার পাশাপাশি একটি হসপিটালেও বসে। জার্মানির নামকরা কয়েজন কাউন্সিলরদের মধ্যে নাযাকাত আর আরিশও রয়েছে। আরিশ আর নাযাকাতের পরিচয় ইউনিভার্সিটিতে একসাথে পড়াশুনার করার সময় হয়। এরপর তারা একসাথেই স্টাডি শেষ করে পি.এইচ.ডি কম্পলিট করে আর একই ইউনিভার্সিটিতে চাকরি নেয়। প্রতিদিন ক্লাস শেষে একসাথে লাঞ্চ করাটা যেন তাদের নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। তো আরিশ খাবার খেতে খেতে বলে,
– তো কি ডিসিশন নিলে?
– মানে! বুঝলাম না, কি বিষয়ে?
– তোমার আর আমার বিয়ের।
আরিশের এমন কথায় নাযাকাত এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– উফফ! আবার সেই একই কথা৷
– কি হলো এমন বললে কেন?
– আমি না আসলে বুঝি না আমার মতো ফোর্টি সিক্স এজের বুড়ো মহিলার পিছনে ঘুর ঘুর করে কি মজা পাও!
– আমি তো আমার সেই যৌবনকাল থেকেই তোমার পিছনে পড়ে আছি। আজ এক দুই বছর না,,, পুরো সতের আঠারো বছর ধরে তোমার পিছনে ঘুরছি। তাও কোন প্রেমিক প্রেমিকার মতো হারাম না হালাল রিলেশনে যাওয়ার জন্য। তুমি জানো আজ অবধি এই পৃথিবীতে আমার মনে হয় না কোন ছেলে কোন মেয়ের পিছনে বিয়ের জন্য এতোটা ঘুড়ঘুড় করেছে।
– তো করতে বলেছে কে?
– কেউ বলেনি।
– তো করছো কেন? ঠিক সময়ে বিয়ে করলে এতোদিনে দুই বাচ্চার বাপ হতে।
– তো করো নি কেন আমাকে বিয়ে।
– উফফ আল্লাহ! এই লোকের মাথা পুরোই গেছে।
– তো যাবে না? সাইকোলজির লেকচারার আমরা। ক্লাস ভর্তি স্টুডেন্টদের লেকচার দিতে গিয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি, তার উপর কাউন্সিলিং করি, মানুষ তো সাইকোলজি মানেই পাগলের ডাক্তার ভাবে, সেই হিসাবে একটু আধটু পাগল তো বটেই তাইনা।
– তোমার সাথে না কথা বলাই বেকার।
কিছুক্ষন চুপ থেকে নাযাকাত বলে,
– দেখো আরিশ এভাবে হয় না। আমার মতো বুড়ির পিছনে ঘুড়াঘুড়ি করা বন্ধ করো। আমরা ফ্রেন্ড এটাই আমাদের জন্য এনাফ এর বেশি কিছুই এক্সপেক্ট করো না৷ তোমার বয়স হচ্ছে। তোমার ফ্যামিলির মানুষজন তোমার চিন্তা করে, এট লিস্ট তাদের জন্য হলেও তো বিয়ে করে ফেল।
– সেটাই তো বলছি সেই সতের আঠারো বছর ধরে। আর নিজেকে কি বুড়ি বুড়ি বলছো?তোমাকে যারা না চিনে প্রথম দেখায় মানুষ ফোর্টি সিক্স না টুয়েন্টি ফাইভ ইয়ার্সের ইয়াং লেডি মনে করবে। আসছে নিজেকে বুড়ি বলতে। তোমার আর আমার এজ সেম। উই বোথ ফোর্টি সিক্স।
– বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “নারী কুড়িতেই বুড়ি”, সেখানে তো আমার দুই কুড়ি পার হয়ে গিয়েছে। আর ছেলেরা ফোর্টি হলেও ইয়াং দেখায় অনেক। তোমার পিছনে এখনো যেই হারে মেয়ে ঘুড়ে ওদের একটাকে বিয়ে করতে পারো না?
– না পারি না। আর আমার চোখে তুমি বুড়ি না। দরকার হলে মরার আগ পর্যন্ত বিয়ের জন্য তোমার পিছনে ঘুড়ঘুড় করবো।
– কেন? সালমান খানের মতো চিরকুমার সংগঠনে নাম লিখিয়েছো নাকি?
– দরকার হলে তাই করবো।
– উফফ আল্লাহ! তোমাকে বুঝানোর চেয়ে একটা পাগলকেও বুঝানো সহয।
নাযাকাতের এমন কথায় আরিশ হাল্কা করে মুচকি এক হাসি দিলে, আরিশের হাসি দেখে নাযাকাতও হেসে দেয়। এদিকে তারা লাঞ্চ শেষ করে আরিশ তার লেকচারের জন্য ক্লাসে চলে যায় আর নাযাকাত হসপিটালের জন্য রওনা দেয়।
এদিকে সবাই জার্মান এসেছে আজ এক সপ্তাহ তাও যেন আত্মীয় স্বজনদের ফোন থেকে রেহাই নেই। বাধ্য হয়েই যুনাইরা আর আরিয়ানকে নানা বাহানায় বুঝাতে হচ্ছে তাদের। এদিকে ফারিয়াও তার বাবা মায়ের এমন অবস্থা দেখে নিজেকেই দ্বায়ী করছে এসবের জন্য। ফারিয়া যেন এখন নিজেই নিজেকে সহ্য করতে পারছে না। এসব ভাবতে ভাবতেই ফারিয়া তার রুমের ফ্যানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এদিকে যুনাইরাহ তার মেয়েকে খাওয়ার জন্য ডাকতে যায়। কিন্তু তার মেয়ে যে সেই রুমে গিয়েছে আর বের হয় নি। যুনাইরাহ অনেকবার দড়জায় ধাক্কা দিয়েও ফারিয়ার কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তার মনে কু ডাকতে শুরু করে। এক পর্যায়ে যুনাইরাহ তার স্বামী আরিয়ানকে ডাকতে যায়,
– শুনো না ফারিয়া দরজা খুলছে না। আমার তো ভয় হচ্ছে, মেয়ে ডিপ্রেশনে এসে উলটা পালটা কিছু করে না বসে আবার।
যুনাইরাহর কথা শুনে আরিয়ানও বেশ চিন্তিত হয়ে যায়। কারন আরিয়ানও খেয়াল করে ফারিয়ার ব্যবহার আজকাল খুব বেশি উস্কখুস্ক। এতোদিন কান্না কাটি করলেও আজকাল সে যেন পাথরে মূর্তি হয়ে গিয়েছে। যা আরিয়ানের কাছেও অদ্ভুত লাগে আর সেও যুনাইরাহর সাথে ফারিয়ার রুমে চলে যায়। অনেক্ষন দড়জা ধাক্কানোর পরেও ফারিয়ার কোন জবাব পায় না। এদিকে ফারিয়ার রুমের ভেতর দিয়ে কোন কাঠের টুল বা টেবিল পড়ার শব্দ পেয়ে আরিয়ান আর অপেক্ষা না করেই দড়জা ভেঙেই দেখে ফারিয়া ফ্যানের সাথে ওরনা বেধে সুইসাইড করার চেস্টা করছে। যা দেখে আরিয়ান তারাতারি গিয়ে নিজের মেয়েকে উপরে তুলে ধরে আর যুনাইরাহ উপরে উঠেই ওরনা খুলে দিলে ফারিয়াকে নিচে নামিয়ে দেয়। এদিকে মেয়ের এমন কান্ড দেখে আরিয়ান আজ নিজেকে বড়ই অসহায় লাগতে শুরু করে। সে মলিন মুখ করে চলে আসে আর যুনাইরাহ এলোপাথারি ফারিয়াকে চড় থাপ্পড় মারতে শুরু করে। আর ফারিয়া চুপচাপ নিশব্দে চোখের পানি ফালাতে থাকে। কারন তারও মনে হয় এই চড়গুলো তার প্রাপ্য ছিলো। এক পর্যায়ে মেয়েকে মেরে ক্লান্ত হয়ে যুনাইরাহ বলে,
– ফাসি নিচ্ছিলি কেন? পাগল হয়ে গিয়েছিস?
এইবার ফারিয়া চিৎকার করে বলতে থাকে,
– হ্যাঁ, হয়েছি আমি পাগল। কি করবো বলো? কি করবো আমি? অনেক বিশ্বাস আর ভালোবাসার ফল যে এমন হবে আমি ভাবতেও পারি নি। জানো মা আমি আরশাদকে অনেক ভালবাসতাম, বিশ্বাস করতাম। ভেবেছিলাম দুই একদিনের মধ্যে তোমাদের কাছে আরশাদের কথা বলবো। কিন্তু আরশাদ যে এমন করবে আমি বুঝতেই পারি নি। বিশ্বাস করো। আরশাদকে আমি জিজ্ঞেসও করেছিলাম যে ও এতো বড় ক্ষতি আমার কেন করলো, জানো কি বলেছে? বলেছে আমার উপর বদলা নাওয়ার জন্য। আমি কলেজের প্রথম দিন ওর গালে চড় মেরেছিলাম এরজন্য। আর জানো সেদিন চড় কেন মেরেছিলাম? কারন ও আমার কোমড় বাজে ভাবে টাচ করে বলে। আমাকে ও বলেছিলো ভুলে হাত লেগেছে কিন্তু আমি বিশ্বাস করি নি। আর সেদিন চড় মারার পর থেকেই আরশাদের ব্যবহার একদমই পালটে যায়। আমি বুঝেছিলাম ও হয়তো সেদিন সত্য বলেছিলো হয়তো আমিই বুঝতে ভুল করেছি, তাই আমার গিলটি ফিল হতে থাকে আর আমি সরি বলি ওকে৷ এরপর থেকেই আমাদের ফ্রেন্ডশিপ আর পরে রিলেশনে জরাই আমরা। কিন্তু আমি ভাবি নি ও আসলেই খারাপ হবে। আজ মনে হচ্ছে সেদিন ওকে চড় মেরে ঠিক করেছিলাম আর আমি মাফ চেয়ে ভুল। যদি জানতাম ও এমন আমি এমন করাতো দূর ভালোবেসে রিলেশনে জরাতাম না মা। বিশ্বাস করো আমাকে। তোমার কি মনে হয় যেই বাবা আমাকে এতো আদর যত্ন দিয়ে বড় করে তুলেছে তাদের সম্মানহানির চেস্টা আমি করবো? কখনোই না। কিন্তু আমার ভুল ছিলো আরশাদকে বিশ্বাস করা। আর সেই বিশ্বাসই আজ আমার কাল হলো। আমার তো মরে যাওয়া উচিত। এমন কুলঙ্গার মেয়ে যে কিনা নিজের বাবা মায়ের কষ্টের কারন হয় তার এই দুনিয়াতে থাকারই কোন দরকার নেই৷
বলেই ফারিয়া আবারও পাগলের মতো ফাস নাওয়ার জন্য যেতে নিলে যুনাইরাহ কোনমতে মেয়েকে সামলায়। এদিকে রুমের বাহির হতে আরিয়ান সব শুনে চোখ মুছে নিজের রুমে চলে আসে। যুনাইরাহ তার মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের রুমে আসলে দেখে আরিয়ান অন্ধকার রুমে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যুনাইরাহ তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
– এইখানে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
– তো কি করবো? যেখানে আমাদের জীবনটাই এমন অন্ধকার হয়ে আছে সেখানে এমন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।
যুনাইরাহ এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– ফারিয়া আমাকে আজ কিছু বলেছে।
– আমি শুনেছি।
– এখন কি করবে? আজ সুইসাইড করা চেস্টা করেছে। কাল এমন আবার করবে না তার কি গ্যারান্টি? আজ মেয়েকে নাহয় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ালাম৷ কিন্তু কতোক্ষন চোখে চোখে রাখা যাবে বলো? আমার ভয় আবার না এমন কিছু করে বসে কে জানে?
– আমিও তাই ভাবছি। শুনো ফারিয়াকে জানিয়ো না আবার যে ওকে ঘুমের ওষুধ খায়িয়েছো। নাহলে আমাদের না জানিয়ে বেশি করে স্লিপিং পিল নিয়ে আবার সুইসাইড অ্যাটেম্পড করার চেস্টা করবে।
– চিন্তা করো না আমি বলি নি। আর বলবোও না। ওকে খাবারের সাথে মিশিয়ে খায়িয়েছি। বুঝবে না।
– হুম।
– আমার মনে হয় ওকে কোন ভালো কাউন্সিলরের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
– হুম আমিও তাই ভাবছি।
– আমি জার্মানির বেস্ট কাউন্সিলদের খোজ যতো দ্রুত সম্ভব নিচ্ছি। তুমি ফারিয়ার দিকে খেয়াল রেখো।
– হুম।
এদিকে আরিয়ান তার মেয়ের জন্য সর্বাত্মক চেস্টা করে যাচ্ছে, কিভাবে তার মেয়েকে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়া আনা যায়। আজ দুই তিন দিন ধরে আরিয়ান জার্মানের বেস্ট কাউন্সিলরদের খুজে বেরাচ্ছে। কিছুদিন পর নাস্তার টেবিলে বসে আরিয়ান যুনাইরাহকে বলে,
– আমি আজ আমার এক পরিচিত বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি। ও ডাক্তার।
– সোহেল ভাইয়ের কথা বলছেন?
– হ্যাঁ। ও পরিবার নিয়ে জার্মান থাকছে বিশ বছরের বেশি। বলতে গেলে জার্মানের নাগরিক। সে ভালো সাইকায়াট্রিসের খোজ দিতে পারবে আমাদের। আচ্ছা আমি উঠছি তাহলে। ফারিয়ার খেয়াল রেখো৷
– চিন্তা করো না।
আরিয়ান বাসা দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এদিকে যুনাইরাহ তার মেয়েকে বিজি রাখতে নিজের সাথে কিচেনে নিয়ে আসে৷ যে কাজের ফাকে কিছু চিটচ্যাট করা যাবে আর ফারিয়ার মনোযোগ আজেবাজে খেয়াল থেকে সরানো যাবে। কিছুটা হলেও৷ তাই যেই ভাবা সেই কাজ৷ যুনাইরাহ ফারিয়াকে সাথে নিয়ে কিচেনে যায়। মেয়ের সাথে হাজারও কথা বলার চেস্টা করছে। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। মেয়ে তার হু হা তেই জবাব দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে বাসার টেলিফোন বেজে উঠলে যুনাইরাহ তা রিসিভ করতে গেলে ফারিয়া কিচেনের চাকুর দিকে নজর পড়তেই তা নিয়ে নেয় আর অতশত না ভেবেই হাতের নার্ভ কেটে ফেলে। ফারিয়া চুপচাপ দেখতে থাকে তার হাত দিয়ে কালো রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে। যেখানে আগে একটু ব্যাথা পেলেই পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতো আজ সে নিজ চোখে দাঁড়িয়ে হাতের নার্ভ থেকে ফিনকি দিয়ে গাঢ় কালো রক্ত বেরিয়ে যেতে দেখছে অথচ একটু টু শব্দও করছে না। এক পর্যায়ে ফারিয়ার চোখের সামনে সব অন্ধকার ছেয়ে আসলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এদিকে যুনাইরাহ কিচেনে এসেই পুরো কিচেন রক্ত ভরা দেখতে পেয়ে তার রুহ কেপে উঠে। কাপা পায়ে সামনে গিয়েই ফারিয়াকে নিথর পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠে। সাথে সাথেই বাসার সব গার্ডস আর সার্ভেন্টদের বলে যুনাইরাহ তার মেয়েকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। এদিকে আরিয়ান এমন খবর শুনে সে ও হসপিটালে চলে আসে। আর এসব কিভাবে হয়ে জানতে চাইলে যুনাইরাহ সব বললে আরিয়ান হতাশায় ভেঙে পড়ে। এদিকে ডক্টর বেরিয়ে আসলে যুনাইরাহ আর আরিয়ান তার কাছে গেলে ডক্টর বলে,
– তাকে আনতে আর একটু দেড়ি করলেও বাচানো অসম্ভব হয়ে পড়তো। এখন ফারিয়া ঠিক আছে। কোন বিপদ নেই। কিন্তু বডি থেকে বেশি রক্ত ঝড়ায় দূর্বল হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন হসপিটালে থাকতে হবে তার।
বলেই ডাক্তার চলে যায় আর আরিয়ান আর যুনাইরাহ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। এদিকে যুনাইরাহ আরিয়ানের কাধে হাত রেখে বলে,
– সোহেল ভাই কি বললো?
– ভালো কাউন্সিলরের খোজ পেয়েছি। ড. আরিশ। বাংলাদেশি। কিন্তু সে বার্লিনে৷ ফারিয়া একটু সুস্থ হলেই আমরা হ্যামবার্গ থেকে বার্লিনে রওনা করবো৷
– ঠিক আছে।
এদিকে বিকেলের দিকে আরিশের ছোট বোন তাবীর নাযাকাতের সাথে দেখা করতে তার কেবিনে চলে আসে। নাযাকাত হটাৎ তাবীরকে দেখেই হাসিমুখে স্বাগত জানায়। তাবীর চেয়ারে বসতে বসতে বলে,
– ডিস্টার্ব করলাম না তো আপু! এই অসময়ে এসে?
– আরে না,,, কি যে বলো না তাবীর। তো হটাৎ এখানে? সব ঠিক আছে তো নাকি?
– হ্যাঁ হ্যাঁ সবই ঠিক। এদিকে দিয়েই যাচ্ছিলাম পরে ভাবলাম এখানেই যেহেতু তোমার হসপিটাল তোমার সাথে একটু দেখা করে যাই। তাছাড়া তুমিও এখন বাসায় যেহেতু যাবে তোমার সাথেই যাওয়া যাক না কেন।
নাযাকাত কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
– তুমি জানলে কিভাবে এখন বাসায় যাচ্ছিলাম?
– এটা না জানার কি আছে? তোমার মজনু বলেছে।
– ইউ মিন আরিশ!
– আর কে হতে পারে? যে কিনা তোমার জন্য চিরকুমার থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তাবীরের কথা শুনে নাযাকাত কিছুটা দম নিয়ে বলে,
– দেখো তাবীর, তোমার ভাইকে বুঝাও আমার পিছনে এভাবে অযথা ঘুড়ে সময় নষ্ট করতে নিষেধ করো। তুমি তো জানোই আমি অনেকবারই আরিশকে বুঝানোর চেস্টা করেছি, কিন্তু যেই লাউ সেই কদু।
– এখন তোমার কদু না বুঝলে আমরা কি করবো বলো আপু? আমরা কি বুঝাই না! বাসায় মা ভাই ভাবী সবাই বুঝায় কিন্তু না সেই একই কথা কপালে বিয়ে থাকলে নাযাকাত নাহলে একাই ভালো। আর কি বলবো বলো?
– তাবীর তুমিও জানো আবেগে দুনিয়া চলে না। আমার বয়স কম হয় নি। আর তোমার ভাইয়ের বয়সও কম না। তোমার ভাই চাইলেই এখনো নিজের লাইফটাকে আগাতে পারবে বাট আমি না। তুমিও জানো এখন যদি আমাকে তোমার ভাই বিয়ে করে ইন ফিউচার আই কান্ট গিভ হিম আ চাইল্ড এন্ড,,,, এন্ড আই ডোন্ট ইভেন নো আইল এভার বি অ্যাবেল টু কন্সিভ অর নট। কয তুমিও একজন ডাক্টর। তুমিও জানো যে, অ্যাট দ্যা এজ অফ টাইম ইটস ইম্পসিবল। তোমার ভাই যে বাচ্চাদের মতো বিয়ে বিয়ে যে করছে বিয়ে করলেও কয়েক বছর পর হি উইল ওয়ান্ট আ চাইল্ড। তখন?
– আমি বুঝি আপু। ভাই তো বুঝতেই চাচ্ছে না এসব।
– দেখো এসব প্রেম ভালোবাসা একটা এজ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এখন এই বয়সে তোমার ভাইয়ের এমন পিছন ঘুড় ঘুড় করাটা কি ভালো দেখায় বলো?
নাযাকাতের এমন কথায় তাবীর শুধু এক দীর্ঘ শ্বাসই ছাড়ে আর বলে,
– কি আর বলবো আপু? ভাই যেন এখন আরো বেশি বাচ্চা হয়ে গিয়েছে। যাই হোক যেতে যেতে কথা হবে, চল উঠি।
– হুম চলো।
বলেই নাযাকাত্ত আর তাবীর হসপিটাল দিয়ে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসে। এদিকে সন্ধ্যায় আরিশ বাসায় এসে ডুকতেই আরিশের মা আরিশকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– এই বাসায় এই বুড়ো মাটার চিন্তা সবারই আছে একমাত্র একজন ছাড়া। কতো বললাম এমনকি বলছি বিয়ে কর। কিন্তু না কে শুনে কার কথা।
আরিশ তার মায়ের কথাগুলো শুনেও না শুনার ভান করে চলে যেতে নেয়। কারন তার মায়ের এসব কথাগুলো যেন নিত্যদিনের কথা হয়ে গিয়েছে। আরিশ এসব উপেক্ষা করে চলে যেতে নিলেই তার মা বলে,
– জানি না এই মেয়ে এমন কি জাদু করেছে আমার ছেলে তো সেই মেয়ের মেয়ের পিছনেই পড়ে আছে। দিন দিন যার কিনা বয়স বাড়ছে। করলে বিয়ে কর। শুধু শুধু আমার ছেলেটাকে তার পিছনে ঘুরাচ্ছে। না জানি কি বাজে মতলব আছে কে জানে?
আরিশ তার মায়ের এমন কথা শুনে থেমে গিয়ে পিছনে ফিরে বলে,
– মা আর একটাও বাজে কথা বলো না প্লিজ। ওর বয়স বেশি হতে পারে কিন্তু মেয়ে খারাপ না। ওর বাজে নিয়ত থাকলে এতোদিনে দেখতে পেতে। আর যার সম্পর্কে জানো না তাকে নিয়ে উল্টো পাল্টা কিছু বলো না। ও যে ওর অতীতে কি সহ্য করে এসেছে তা তুমি জানো না। যেই অতীতের জন্য আজও বিয়ে করছে না। আর নাযাকাত আমাকে ওর পিছনে ঘুরাচ্ছে না বরং প্রতিদিন ও আমাকে বলে, যেন তোমাদের কথামতো বিয়ে করে নেই আমি। ওর পিছনে ঘুড়ে যেন আমার সময় নষ্ট না করি। সুতরাং নাযাকাত আমাকে ঘুরাচ্ছে না, বরং আমি ঘুড়ছি ওর পিছনে, কারন ওর মতো মেয়ে দুইটা এই পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ।
বলেই আরিশ তার রুমে চলে আসে। এদিকে তাবীর বাসায় এসেই তার ভাই আর মায়ের এমন কথা শুনে ফেলে তাই সে তার মায়ের পাশে এসে বসে বলে,
– মা ভাই হসপিটাল ইউনিভার্সিটি করে বাসায় আসে আর তুমিও এসব কথা শুরু করো কেন? একটা মানুষ ক্লান্ত হয়ে ফিরছে তার মাথা কোথায় ঠান্ডা করতে দিবে তা না করে আরো গরম করে দিচ্ছো৷
– তো তুই তোর ভাইকে বুঝাতে পারিস না।
– মা ভাগ্যে থাকলে সবই হবে। এসব নিয়ে রোজ রোজ প্যাচাল ভালো লাগে না। তাছাড়া আমি শুনেছি তুমি নাযাকাত আপুকে নিয়েও উলটা পালটা বলেছো, যেটা ভুল। আর জানোই তো ভাইয়া নাযাকাত আপুকে নিয়ে কতোটা পজেসিভ। তাহলে কেন বলো এসব? তাছাড়া নাযাকাত আপুও মানুষ তারও লাইফ আছে। সে কোন একটা রিজনেই আরিশ ভাইয়ে বিয়ে করে নি। থাকতে পারে না কারো পারসোনাল রিজন। কেন কাউকে না জেনে বুঝে উলটা পালটা বলো? আজও নাযাকাত আপুর সাথে দেখা হলো আমাকে অনেক বুঝালো তোমার ছেলে যেন এভাবে পিছনে ঘুর ঘুর না করে নিজের লাইফটাকে আগে বারায়। আর সেই আপুকে তুমি এমন উলটা পালটা কিছু বললে আরিশ ভাই কেন আমারও খারাপ লাগে।
– তো কি করবো বল? আমিও তো চেয়েছিলাম নাযাকাতকে আরিশের বউ বানাবো৷ কিন্তু মেয়েটা বিয়েই করতে চাচ্ছে না। আর এখন সে সময়ও নেই যে ওকে আরিশের বউ বানাবো। কিন্তু নাযাকাতের এমন ইগ্নোর আরিশের প্রতি আমি দেখতে পারছি না আর।
– তাই বলে না জেনে উলটা পালটা বলবে কেন মা?
– আচ্ছা রে মা আমার ভুল মানলাম,,, কিন্তু তোর ভাইকে বুঝা। মরার আগে যেন আরিশের বিয়েটা দেখে যেতে পারি।
তাবীর তার মায়ের এমন কথা শুনে ছোট এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আরিশের রুমের দিকে তাকায়।
এদিকে ফারিয়া দুই তিন দিন পরেই হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ পেয়ে যায়। আর তার পরদিনই তারা বার্লিনে চলে আসে। বার্লিনে তারা প্রায় সন্ধ্যায় পৌছায়। রাতের খাবার খেয়ে যুনাইরাহ তার মেয়ে ফারিয়াকে বলে,
– দেখ মা জানি একটা ভুল হয়েছে, তার মানে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া না। তুই যে সুইসাইড করতে চাচ্ছিলি একবারও আমাদের কথা মাথায় আসলো না তোর। তোর কিছু হলে তো তোর বাবা নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। আমাদের জান তুই, সেখানে তুই এমন করলে কিভাবে হবে রে মা?
– আমাকে মাফ করে দাও মা। আমি একটু শান্তি চাই। এই কষ্ট যেন পাথরের মতো বুকে চেপে বসে আছে। আমি আবার আগের মতো স্বাভাবিক হতে চাই। প্লিজ মা ডু সামথিং৷ নাহয় এই কষ্ট আমায় পাগল করে তুলছে।
ফারিয়া একপ্রকার ডুকরে কেদে উঠে। এদিকে যুনাইরাহ মেয়েকে বুকে জরিয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
– তোর বাবা অনেক ভালো একজন সাইকায়াট্রিসের খোজ পেয়েছে। একবার তার সাথে মন খুলে সব কথা বলে দেখ। তোর ভালো লাগবে।
– তোমরা যাই বলবে আমি তাই করবো। আমি শুধু একটু মানসিক শান্তি আর তোমাদের নিশ্চিন্ত দেখতে চাই বাস।
– সাবাস। এই না হলো আমাদের ফারিয়া মা। আর আমাদের নিশ্চিন্তে থাকা নিয়ে ভাবছিস? তুই ভালো থাকলেই আমরা নিশ্চিন্তে থাকি রে মা।
এসব বলেই যুনাইরাহ তার মেয়েকে বুঝাতে থাকে। এদিকে রাতে আরিয়ানের ফোনে একটি আননোন নাম্বার দিয়ে কল আসলে আরিয়ান তা রিসিভ করলে ফোনের অপর পাশ দিয়ে একজন পুরুষালী কন্ঠে বলে,
– আসসালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। সরি,,, হুজ দিস?
– আমি ড. আরিশ বলছি।
– ওহ ড. আরিশ! আমি চিনতে পারি নি সরি।
– ইটস ওকে, না চেনাটাই স্বাভাবিক।
– হটাৎ এতো রাতে কল করলেন। সব ঠিক আছে তো নাকি?
– জ্বি ঠিক আছে। আসলে যার জন্য আপনাকে কল করা, আই এম সরি টু সে আমি আপনাদের মেয়ের কাউন্সিলিং করতে পারবো না।
ড.আরিশের হটাৎ এমন কথা শুনে আরিয়ান কিছুটা চিন্তিত হয়ে যায়।
চলবে……..