#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#পঞ্চদশ_পর্ব
রাত আড়াইটার বেশি বাজে। চারপাশের মানুষজনের কোলাহল থেমে গিয়েছে অনেকটা সময় আগেই। কিন্তু এখনো স্নিগ্ধের ফেরার কোনো নাম গন্ধ নেই। এদিকে মিশরাত বসে বসে স্নিগ্ধের ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
– ” এতো রাতে লোকটা আমাকে এভাবে ডায়েরিটা ধরিয়ে দিয়ে কোথায় উধাও হয়ে গেল?
আড়াইটা বেজে গিয়েছে অথচ তার আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। কি করি এখন! কোথায় আছে সেটাও তো জানি না।”
দরজার পানে চেয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় ঘুমে চোখ দুটো আপনাআপনি বুজে আসে মিশরাতের।
এদিকে ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। দৃষ্টি তার আকাশের পানে। চাঁদের আলোয় চোখের কোণে জমে থাকা পানিটুকু চিকচিক করছে।
– ” আমি তো কখনোই চাইনি আমাদের গল্পটা এমন হোক!
আমি তো চেয়েছিলাম আর বাকি পাঁচটা সম্পর্কের মতো আমরা দুজন ও একসাথে থাকবো! কিন্তু ঐ একটা জিনিস, বিশ্বাসঘাতকতা পছন্দ করি না আমি।
তবুও আমি চেয়েছিলাম আবারো সবকিছু নতুন ভাবে শুরু হবে। কিন্তু দেখো নিয়তি সেটা হতে দিল না! কেড়ে নিল তোমাকে আমার কাছ থেকে!
কোথায় তুমি মায়াবতী!”
মনে মনে প্রলাপ বকে স্নিগ্ধ।
রাত প্রায় তিনটার দিকে রুমের দরজা খুলে প্রবেশ করে স্নিগ্ধ। রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে মিশরাতের দিকে চোখ পড়ে তার। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে, সোফায় মাথা হেলিয়ে দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে মিশরাত। স্নিগ্ধর দেয়া ডায়েরীটা এখনো হাতে গুটিয়ে নিয়ে রেখেছে। ডায়েরির ছেঁড়া পাতাটা দৃশ্যমান। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে মিশরাতের হাত থেকে ডায়েরিটা সাবধানে নিয়ে আসলো স্নিগ্ধ। ডায়েরিটা পাশের টেবিলে রেখে কয়েক পলক মিশরাতের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে তাকে কোলে তুলে নিল সে। ঘুমের মধ্যে কারো স্পর্শ পেয়ে হালকা নড়েচড়ে উঠলেও পরমুহূর্তেই আবারো ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় মিশরাত।
অতি সাবধানে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় এক পাশে মিশরাতকে শুইয়ে দেয় স্নিগ্ধ। একদম বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছে মিশরাত।
মিশরাতের ঘুমন্ত চেহারায় কয়েক পলক তাকিয়ে আলতো হেসে অপর পাশে নিজেও শুয়ে পড়ে স্নিগ্ধ।
কারো উত্তপ্ত ভারী নিঃশ্বাস চেহারার উপর আছড়ে পড়তেই নড়েচড়ে উঠে মিশরাত। পিটপিট করে চোখ খুলতেই খেয়াল করে কারো বুকের মধ্যে মাথা দিয়ে এতক্ষণ বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল সে। সেটা মস্তিষ্ক অবধি পৌঁছাতেই ধড়ফড়িয়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে মিশরাত। অস্থিরতায় কপাল বেয়ে ঘাম পরছে। যতদূর মনে পড়ছে সে তো কাল রাতে সোফায় ঘুমাচ্ছিল তাহলে এখন এভাবে স্নিগ্ধের বুকের উপর কিভাবে কি সম্ভব!
এদিকে মিশরাতকে এভাবে হঠাৎ ধড়ফড়িয়ে উঠতে দেখে স্নিগ্ধের ও চোখ থেকে ঘুম ছুটে যায়। মিশরাতের ওমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে স্নিগ্ধ।
– ” কি হয়েছে মিশরাত! এনিথিং রং?”
মিশরাত আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে উঠল,
– ” আমি এখানে কি করে? আমি তো কাল রাতে,,,”
পুরো বাক্য শেষ হওয়ার আগেই স্নিগ্ধ বলে উঠল,
– ” হ্যাঁ কাল রাতে তুমি সোফায় ঘুমোচ্ছিলে তাই তোমাকে খাটে এনে শুইয়ে দিয়েছি! আর কিছু?
এই ছোট্ট একটা বিষয়ের জন্য এভাবে সকাল সকাল ঘুম ভেঙে দেয়া নট ফেয়ার মিশরাত!”
– ” কাল রাতের স্নিগ্ধ আর সকালের স্নিগ্ধর মাঝে বিশাল পার্থক্য। কাল রাতেই তো স্নিগ্ধর সাথে কথা বলা যাচ্ছিল না। আর এখন এমন বিহেভ করছে যেন সব কিছুই স্বাভাবিক!
লোকটা আসলেই এলিয়েন!”
বিড়বিড় করে উঠে মিশরাত। এদিকে স্নিগ্ধ বিছানা ছেড়ে উঠে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে টাই বাঁধতে ব্যস্ত স্নিগ্ধ। তখনি রুমে মিশরাত প্রবেশ করতে করতে বলে উঠল,
– ” আপনি কিন্তু এখনো আমাকে সবটা বলেন নি স্নিগ্ধ।
যেটুকু জেনেছি তার বেশিরভাগই ধোঁয়াশা। ডায়েরির বাকি পাতাগুলো কোথায়? আর শুভ্রতাই বা কোথায়!!”
আড়চোখে একবার তাকাল স্নিগ্ধ। আয়নাতে মিশরাতের চেহারায় স্পষ্ট কৌতুহলের ছাপ ফুটে উঠেছে।
গলায় টাই বাঁধা শেষ হতেই পেছন ফিরে মিশরাতের দিকে হালকা ঝুঁকে বলে উঠল,
– ” সময় হলে সবটা জেনে যাবে!”
এমন গম্ভীর কণ্ঠ শুনে মিশরাতের শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়। এখনো সে সটান দাড়িয়ে রয়েছে। স্নিগ্ধ হালকা হেসে পাশ কাটিয়ে চলে গেল বাহিরে।
সেপ্টেম্বরের শেষের দিক। ঠান্ডা ও গরমের মাঝামাঝি সময়। ছাদে দাড়াতেই সূর্যের আলো আছড়ে পড়ে মিশরাতের মুখ বরাবর। কিন্তু তাপ তেমন বেশি নেই। ছাদের কর্ণার টায় দাঁড়িয়ে পায়রা দুটোকে দানা ছড়িয়ে দিচ্ছে সে। গতমাসে স্নিগ্ধ কে একবার বলার পর ই দুটো সাদা রঙের পায়রা এনে দেয়া হয়েছে তাকে। বিকেল বেলার কিছুটা সময় এখন তাদের সাথেই কাটানো হয়। পায়রা দুটোও হয়েছে তার মনের মতোন। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যে নেমে যাবে। নিচ থেকে মিসেস ইয়ামিন চৌধুরীর ডাক কানে পৌঁছাতেই দানার কৌটা পাশে রেখে ছুট লাগায় নিচের দিকে।
– ” জী মা, ডাকছিলেন?”
মিশরাতের কন্ঠস্বর শুনে মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী আলতো হেসে বলে উঠলেন,
– ” হ্যাঁ, মিশরাত! এসো ভিতরে এসো!”
মিশরাতও বাধ্য মেয়ের মতো মিসেস ইয়ামিনের সামনে গিয়ে বসে পড়লো।
– ” শুনেছি তোমার বড় ভাইয়ের বউ কি যেন নাম হ্যাঁ, মেহের! মেহের নাকি প্রেগন্যান্ট?”
মিশরাত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝাতেই মিসেস ইয়ামিন বলে উঠলেন,
– ” আলহামদুলিল্লাহ! যাক ভালোই হয়েছে।
আমি কি ভাবছিলাম মিশরাত, তোমার বিয়ের পর আর ও বাড়িতে যাওয়া হয় নি! তোমার শ্বশুর ও এখন অনেকটাই সুস্থ। আমি চিন্তা করছিলাম স্নিগ্ধ আর তুমি একবার ও বাড়ি থেকে ঘুরে এসো কয়েকদিনের জন্য।
এতে তোমার আর স্নিগ্ধের বন্ডিং টাও আরো স্ট্রং হবে!
মেহেরের সাথেও কয়েকদিন সময় কাটাতে পারবে তুমি!
এখন তোমার মতামত কি?”
মিশরাত মাথা নিচু করে বলল,
– ” মা আপনি যা বলবেন তাই হবে!
আর স্নিগ্ধ যদি রাজী থাকেন তাহলে!”
– ” ঠিক আছে! আমি স্নিগ্ধ কে বুঝিয়ে বলবো!
তুমি বরং গিয়ে রাত থেকে সবকিছু গোছানো শুরু করে দাও!”
মিশরাত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি বুঝিয়ে উঠতে নিলেই মিসেস ইয়ামিন আবারো বলে উঠলেন,
– ” আর হ্যাঁ! আমারো কিন্তু খুব শীঘ্রই ছোট্ট একটা মেহমান চাই!”
প্রথম প্রথম কথাটার মানে না বুঝলেও পরমুহূর্তে সেটা বোধগম্য হতে লজ্জায় কান গরম হয়ে আসলো মিশরাতের। হঠাৎ করে এমনটা হওয়ার কারণ ঠিক বুঝলো না সে। তাই দ্রুত পায়ে কোনোমতে সেখান থেকে চলে আসলো মিশরাত।
মিটিং শিডিউল শেষ হতেই অফিসের এক গাদা ফাইল নিয়ে কেবিনের দরজায় কড়া নাড়ে অরিন।
– ” ইয়েস কাম ইন!”
অনুমতি পেয়ে দরজা ঠেলে প্রবেশ করতেই স্নিগ্ধ দিকে নজর পড়ে অরিনের।
চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে স্নিগ্ধ।
– ” স্নিগ্ধ স্যার?
এইযে আপনার ফাইল গুলো!”
স্নিগ্ধ চোখ খুলে বলে উঠলো,
– ” ঠিক আছে, এখানে টেবিলে রেখে দাও সেগুলো!”
অরিন ফাইলগুলো পাশে রেখে কেবিনের দরজার সামনে গিয়েও থেমে গেল। পেছন ফিরে বললো,
– ” স্নিগ্ধ স্যার?”
আবারও অরিনের গলা শুনতে পেয়ে মাথা তুলে তাকালো স্নিগ্ধ।
– ” ইয়েস মিস অরিন! এনিথিং এল্স?”
– ” ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমরা কি একসাথে ডিনার অর কফিশপে বসতে পারি?”
হঠাৎ করে অরিনের মুখে এমন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললো স্নিগ্ধ! হঠাৎ এমন আবদারের কারণ??
ইফতেখার চৌধুরীর শরীরের কন্ডিশন এখন পূর্বের তুলনায় ৮৫ ভাগই ভালো। এখন অনেকটাই স্পষ্ট কথা বলতে পারেন তিনি। মিসেস ইয়ামিন আর মিস্টার ইফতেখার চৌধুরীকে ডিনার করিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করছে মিশরাত। রোজকার দিনের চেয়ে আজ অনেকটা সময় ই পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্নিগ্ধ এখনো বাসায় ফেরেনি। রাত প্রায় এগারোটা বেজে গিয়েছে ইতিমধ্যে।
কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় মিশরাত। দরজা খুলে দিতেই স্নিগ্ধের ক্লান্তিমাখা চেহারাটা দৃশ্যমান হয় মিশরাতের।
ভেতরে প্রবেশ করতেই মিশরাত বলে উঠে,
– ” আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন, আমি খাবার সার্ভ করে দিচ্ছি!”
স্নিগ্ধ সোজাসাপ্টা গলায় বলে দিল,
– ” আমি বাহির থেকে অরিনের সাথে ডিনার করে এসেছি!
অযথা খাবার নষ্ট করতে হবে না!
তুমি খেয়ে নাও!”
স্নিগ্ধর কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলো না মিশরাত। কেননা তার জানামতে স্নিগ্ধ কখনো বাহিরে কোনো অফিস কলিগদের সাথে ডিনারে যায় না? তাহলে আজ হঠাৎ অরিনের সাথে?
ছোট করে আচ্ছা বলে টেবিল থেকে খাবারের প্লেট গুলো সরিয়ে রেখে দিলো। আর স্নিগ্ধ ও গটগট করে উপরে উঠে চলে আসে।
– ” সো স্যাড তাইনা, মিশরাত?
কিন্তু কিছু যে করার নেই! এভাবেই আস্তে আস্তে স্নিগ্ধ কে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে আনবো আমি!
তোমাদের মাঝে কোনোদিনই আমি ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হতে দিবো না। আর না দিবো তোমাদের দুজনকে কাছে আসতে!
নেক্সট একটা ছোট্ট চাল, আর তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকা বাদবাকি সম্পর্কটুকুতেও আমি এমন ফাটল ধরাবো যে আর কখনোই তা জোড়া লাগানো যাবে না।”
বলেই দেয়ালে টাঙানো মিশরাতের ছবির উপর লাল রঙের কালি দিয়ে ক্রস চিহ্ন এঁকে দিল অরিন।
– ” আই এম ব্যাক, স্নিগ্ধ! বি রেডি!!”
ফোনের রিংটোন কানে পৌঁছাতেই পাশ ফিরে তাকায় অরিন। ফোনে আর অক্ষর জ্বলজ্বল করছে। ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে যা কানে আসে তাঁতে মুখের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল অরিনের। সাথে তো রয়েছেই কিছুটা রহস্য!!
– ” হোয়াট!!
তুমি আমাকে না জানিয়েই মাকে হ্যাঁ বলে দিলে?
আচ্ছা তোমার কী কমনসেন্স বলতে কিছু নেই নাকি আদৌ!”
অনেকটাই গর্জে বলে উঠলো স্নিগ্ধ!………
#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#ষোড়শ_পর্ব
– ” হোয়াট!
তুমি আমাকে না জানিয়েই মাকে হ্যাঁ বলে দিলে?
আচ্ছা তোমার কি কমনসেন্স বলতে কিছু নেই নাকি আদৌ!”
অনেকটা গর্জে বলে উঠে স্নিগ্ধ।
ভয়ে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল মিশরাত। স্নিগ্ধর এরূপ আচরণ তার সম্পূর্ণ অজানা।
– ” আসলে মা চাইছিলেন তাই আমি হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম!”
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো মিশরাত।
– ” মা বললো আর ওমনি তোমার হ্যাঁ বলতে হবে? আর কয়েকদিন বাদেই আমাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। এখন এসব করার মানে কি?”
– ” স্নিগ্ধ!!!
এসব কেমন ব্যবহার? তুমি অকারণে মিশরাতের সাথে এতো চিল্লিয়ে কথা বলছো কোন সাহসে?”
পেছন থেকে মিসেস ইয়ামিন বলে উঠলেন। মায়ের ডাক শুনে পেছন ফিরে তাকালো মিশরাত আর স্নিগ্ধ দুজনেই। স্নিগ্ধর গলা শুকিয়ে আসছে। মা তাকে আবার সন্দেহ করে বসবে না তো?
– ” কি হলো? কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?
তুই মিশরাতের সাথে এভাবে চিল্লাছিস কেন?
আমি মিশরাতকে বলেছি যে তুই ওর সাথে তোর শ্বশুরবাড়ি যাবি। এতে এতো রুড বিহেভ করার কি আছে!”
মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন । স্নিগ্ধ মাথা নিচু করে বললো,
– ” কিন্তু মা,,”
তার পূর্বেই মিসেস ইয়ামিন চৌধুরীর প্রত্যুত্তর,
– ” আর কোনো কথাই নয়। তুমি কাল সকালে মিশরাতের সাথে মিশরাতের বাড়ি যাবে এটাই ফাইনাল!”
মিসেস ইয়ামিন চৌধুরীর কথার উপর উল্টো প্রত্যুত্তর করার সাহস হয়ে উঠলো না স্নিগ্ধর।
গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে মিশরাত। সকাল সকালই রওনা দিয়ে দিয়েছে তারা। স্নিগ্ধ ও কিছুক্ষণ পর সিটে বসে পড়লে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিতে গাড়ি ছুটে চলে তার আপন গতিতে।
কলিং বেলের আওয়াজ কানে পৌঁছাতেই মিসেস ইবনাত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। এতো সকালে কে আসবে আবার। দরজা খুলতেই অপর পাশ থেকে মিশরাত এসে মিসেস ইবনাতকে জড়িয়ে ধরে।
– ” মিশরাত, তুই?”
অনেকটা অবাক হয়ে বললেন মিসেস ইবনাত।
– ” কেন মা, নিজের বাড়িতে আসা বারণ নাকি?”
মুখ গোমড়া করে বললো মিশরাত।
– ” না, না! সেটা কখন বললাম আমি? আমি বলতে চাইছি যে তুই একা কেন? জামাই কোথায়?”
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বললেন মিসেস ইবনাত।
– ” তোমাদের জামাই আসছে!
হঠাৎ করে উনার ফোন এসেছিল তাই হয়তো আসতে লেট হচ্ছে।”
মিসেস ইবনাত ছোট করে আচ্ছা বললেন। এর মাঝে স্নিগ্ধ এসে হাজির হয়।
– ” আসসালামুয়ালাইকুম মা! কেমন আছেন?”
– ” ওয়ালাইকুমুস সালাম! এইতো আলহামদুলিল্লাহ! তোমরা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে এসো!”
মিসেস ইবনাতের কথায় স্নিগ্ধ আর মিশরাত দুজনেই বাসায় প্রবেশ করে। ভেতরে যেতেই মেহেরকে চোখে পড়তেই মিশরাত ছুট লাগায় মেহেরের দিকে।
– ” বউমনি…..!”
মেহেরও মিশরাতকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর মিশরাত আর স্নিগ্ধ কে মিসেস ইবনাত উপরে রুমে পাঠিয়ে দিলেন।
অনেকদিন পর চেনা পরিচিত ঘরটায় প্রবেশ করার পর মনের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রশান্তি মেলে গেল মিশরাতের। পুরো রুমটাই ঠিক আগের মতো আছে কিন্তু রুমের মানুষটারই এখানে আর নিয়ম করে থাকা হয় না।
মিশরাতের ভাবনার সুতো কাটে স্নিগ্ধর গলার আওয়াজ পেয়ে।
– ” বাহ্ তোমার রুমটা তো বেশ সুন্দর! আর পুরো রুম স্ক্যান করে যা মনে হচ্ছে তুমি একজন বিরাট বইপ্রেমী।
এম আই রাইট?”
মিশরাত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়। তারপর লাগেজ থেকে তোয়ালে বের করে স্নিগ্ধর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– ” আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন!
তারপর না হয় রেস্ট নিবেন!”
স্নিগ্ধ ও বিনিময়ে একটা হাসি দিয়ে তোয়ালে টা নিয়ে পা বাড়ায় ওয়াশরুমের দিকে।
– ” ড্যাম ইট! এটা কিভাবে হলো!
নো নো মিশরাত আর স্নিগ্ধ একসাথে রয়েছে। তার মানে স্নিগ্ধ এ কদিন অফিসও জয়েন করবে না।
এ কদিনের মাঝে যাতে কোনো গড়মিল না হয়ে যায়। তোকে যা করার তাড়াতাড়ি ই করতে হবে অরিন!”
অফিসের কেবিনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাগে ক্ষোভে বিড়বিড় করতে থাকে অরিন।
– ” ডোন্ট ওয়ারি, স্নিগ্ধ! এবারের চালে গুটি হিসেবে মিশরাতকেই আমি ইউজ করবো। আর সেই চালে পা দিয়ে তুমি নিজেই মিশরাতকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিবে!
আর এটাই হবে তোমার ধ্বংস হওয়ার প্রথম স্টেপ!!”
এদিকে ফ্রেশ হয়ে রুমে প্রবেশ করতেই স্নিগ্ধর চোখ পড়ে মিশরাতের উপর। গাঢ় বেগুনি রঙের শাড়ি ফর্সা শরীরে ফুটে রয়েছে। আঁচলের অংশ টুকু কোমড়ে গুঁজে রুমের আনাচে কানাচে পরিষ্কার করার কাজে লেগে পড়েছে মিশরাত। যার ফলস্বরূপ ফর্সা কোমরের উন্মুক্ত অংশে থাকা কালো কুচকুচে রঙের তিল স্নিগ্ধর চোখে আটকে যায়। হাতে থাকা তোয়ালে পাশে রেখে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় মিশরাতের দিকে।
বুকশেলফ থেকে বইগুলো সাজানো শেষ করে মিশরাত। পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িৎ গতিতে পেছনে ঘুরে তাকায় সে। স্নিগ্ধ কে এতোটা কাছাকাছি দেখে হার্টবিট ক্রমশ বাড়তে থাকে মিশরাতের।
স্নিগ্ধর উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে মিশরাতের মুখে। স্নিগ্ধের ওমন গভীর ঘোর লাগা দৃষ্টি দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে তার।
– ” কি হচ্ছে এসব? উনি এভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেন? কি করি এখন? হুটহাট এমন উদ্ভট মার্কা আচরণ করে কিভাবে লোকটা বুঝি না।”
মনে মনে বিড়বিড় করে দোয়া দুরূদ পড়া শুরু করে দেয় মিশরাত।
– ” মিশরাত, জলদি নিচে খেতে,,,”
পুরোটা বাক্য পূর্ণ হওয়ার আগেই মিশরাত আর স্নিগ্ধকে এভাবে দেখে চিল্লিয়ে অপর পাশে ফিরে তাকায় মেহের।
– ” সরি, সরি! আমি মনে হয় ভুল টাইমে এসে পড়েছি!
আপনারা একটু পর নিচে খেতে আসবেন। আমি যাই!”
বলেই গটগট করে হাঁটা শুরু করলো মেহের।
আর এদিকে মেহেরের চিৎকার শুনে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে স্নিগ্ধ। এতক্ষণে যে কি বিরাট ভুল করতে যাচ্ছিলো তা মস্তিষ্কে বোধগম্য হতেই ছিটকে কয়েক পা পেছনে সরে আসে সে।
মিশরাত অসহায় দৃষ্টিতে একবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার স্নিগ্ধর দিকে তাকাচ্ছে। মেহের তাদের একসাথে এভাবে দেখে কি ভাববে তা নিয়ে মাথাব্যথা উঠে যাচ্ছে মিশরাতের। স্নিগ্ধর দিকে চোখ পাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
– ” কাল রাতে তো আমাকেই কমনসেন্সের লেকচার দিচ্ছিলেন। আজ আপনার কমনসেন্স কি বাড়িতে লকারে রেখে এসেছিলেন?
বউমনি আমাদের দুজনকে দেখে কি ভাববে মনে মনে!”
এদিকে স্নিগ্ধ মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে। আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিশরাত কটাক্ষের সুরে বলল,
– ” ওভাবে সটান দাঁড়িয়ে না থেকে নিচে চলুন! আমি একটু পর আসছি।
সবাই আমাদের জন্য ওয়েট করছে।”
বলেই মুখ বাঁকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল মিশরাত।
দুপুরের লাঞ্চের পর থেকে মিশরাত আর রুমে আসে নি। মেহেরের সাথে বসে গল্পের আসর মেলে বসেছে। আর স্নিগ্ধ এদিকে রুমে বসে বোরিং সময় কাটাচ্ছে।
– ” এজন্যই মাকে বলেছিলাম যে আমার আসার কোনো প্রয়োজন নেই।
ধ্যাত!”
মনে মনে বিড়বিড় করে ফোন স্ক্রলে মনোযোগ দিলো স্নিগ্ধ।
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে নেমে এসেছে। অনেকদিন পর বাড়ির মেয়ে বাড়িতে ফিরে আসায় বাড়ির পরিবেশ ই অন্য রকম। হলরুমে বসে বসে সবাই আড্ডা দিতে ব্যস্ত এসময় আজীজ সাহেব বলে উঠলেন,
– ” কি ব্যাপার, তোমরা সবাই এখানে আড্ডা দিচ্ছো কিন্তু স্নিগ্ধ? সে কোথায়?”
বাবার কথা শুনে মিশরাতের টনক নড়ে যে সে এ বাড়িতে একা আসেনি, তার সাথে আরো কেউ এসেছে।
– ” এইরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম স্নিগ্ধের কথা। নিশ্চয়ই রেগে বোম হয়ে রয়েছে। একবার কি উপরে গিয়ে দেখে আসবো?”
মনে মনে বিড়বিড় করে মিশরাত।
– ” মিশরাত, গিয়ে দেখে আসো স্নিগ্ধ উপরে কি করছে?”
আজীজ সাহেবের কথায় মিশরাত মাথা নাড়িয়ে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
রুমের দরজা আস্তে করে খুলতেই আতকে উঠে মিশরাত। পুরো রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার।
– ” কি ব্যাপার, এভাবে পুরো রুম এভাবে অন্ধকার করে রেখেছে কেন? স্নিগ্ধ কি ঘরে নেই!”
ভাবতে ভাবতে লাইটের সুইচ অন করতে যাবে এমন সময় কারো হ্যাঁচকা টানে ভয় পেয়ে যায় মিশরাত।
বাইরের শো শো বাতাসে জানালার পর্দা সরতেই কিছুটা আলো রুমে এসে পড়ে আর তাতে স্নিগ্ধর রাগান্বিত চেহারা স্পষ্ট মিশরাতের চোখে পড়ে।
– ” এই মেয়ে এই! সমস্যা কি হ্যাঁ!
আমাকে এতো দূর এনে এখন নিজে সারা বাড়ি টই টই করে ঘুরছো, অথচ আমাকে এভাবে ঘরে থাকতে হচ্ছে!”
ভ্রু কুঁচকে ফেলে মিশরাত। মানে কি? কি সব হাবিজাবি বকছে স্নিগ্ধ?
– ” তো কি করবো? আপনাকে সারাদিন কোলে করে নিয়ে ঘুরবো নাকি?
আপনি কি বাচ্চা যে কোথাও যেতে ভয় পান? নিজে হেঁটে কি নিচ পর্যন্ত যাওয়া যেত না!!”
মিশরাতের প্রত্যুত্তরে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় স্নিগ্ধ। আর তাই তো! সে তো নিজেই যেতে পারতো! আর মিশরাতের অনুপস্থিতিই বা তাকে এতো ভাবাচ্ছে কেন?
রাতে ডিনারের পর্ব চুকিয়ে রুমে আসে মিশরাত আর স্নিগ্ধ। মিশরাতের রুমের সাথে থাকা এডজাস্ট ব্যালকনি টা বড় হওয়ায় সেখানে বসার জন্য দুটো বেতের মোড়া আর একটা গোল টেবিল বসানো হয়েছে। স্নিগ্ধ ও গিয়ে সেখানে বসে পড়ে। মিশরাতও ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলের বিনুনি পাকানো শেষ হলে একবার গিয়ে ব্যালকনিতে উঁকি দিয়ে আসে।
পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশ ফিরে স্নিগ্ধ। মিশরাত মোড়ায় বসতে বসতে বলে উঠে,
– ” ঘুমোতে যাবেন না? অনেকটা রাত হয়েছে তো!”
– ” আজ কেন জানি ঘুম আসছে না! তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়!”
– ” ঠিক আছে। না ঘুমালেন! তাহলে আমাকে গল্পের পরবর্তী অংশ টুকু বলুন!”
ভ্রু কুঁচকে তাকায় স্নিগ্ধ।
– ” গল্প? কিসের গল্প? কি বলতে চাইছো তুমি!”
চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো স্নিগ্ধ।
এবার মিশরাতও সোজা হয়ে বসে একদৃষ্টে স্নিগ্ধের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল।
– ” শুভ্রতা কোথায়?”………..
#চলবে 🍂
( আসসালামুয়ালাইকুম। আজকে একটু লেট হয়েছে তাই সরি।
কেমন হয়েছে জানাবেন।
ভালোবাসা অবিরাম 🖤🖤)
#চলবে 🍂
( আসসালামুয়ালাইকুম। সবাই কেমন আছেন! অনেকেই নায়িকা কে সে বিষয় নিয়ে কনফিউজড!
সামনেই সবকিছু ইনশাআল্লাহ ক্লিয়ার করে দিবো।
হ্যাপি রিডিং।
ভালোবাসা অবিরাম 🖤🖤)