তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩৯+৪০

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:39
#Suraiya_Aayat

” আয়াশের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে, প্রিয়ন্তি মোস্তাফার চোখ থেকেও ঝরছে জল , আজ কত বছর পর তার সাথে তার ছেলের দেখা হয়েছে তা উনি জানেন না, এই অন্ধকার কুঠুরিতে তিনি কতো দিন কি কত মাস কি কত বছর কাটিয়েছেন তা উনি বলতে পারেন না ৷
নূরের চোখের জল, শাড়ির আঁচল দিয়ূ জলটা মুছে খানিকটা ভাঙা কন্ঠে বলল
” আপনার আম্মু ৷”

আয়াশ চোখের জলটা মুছে ধীর পায়ে ওনার দিকে এগিয়ে গেল,প্রিয়ন্তির গলার আওয়াজ ক্রমশ ক্ষীন হয়ে আসছে ৷ নূর বউটার দিকে ইশারা করে বলল
” তোমার এই ঋন যে আমি বা আমরা
কি করে শোধ করবো জানি না, তবে এতদুর যখন দায়িত্ব নিয়ে এনেছো তখন ওনাকে মুক্তি করার দায়িত্বটাও সুন্দর করে পালন করেন ভাবী ৷”

উনি ওনার স্বামীর চোখের জল মুছে এবার চাবিটা হাতে নিয়ে ওনার গেটের তালা খুলতে যাবেন তখনই আয়াশ বলে উঠলো
” নাহ, চাবি খোলা হবে না ৷ যেমন আছে তেমনই থাকবে ৷”
আয়াশের কথা কানে যেতেই বাড়ির বড়ো ছেলে বলে উঠলো
” এটা তুমি কি বলছো ভাই ? তালা খুলবে না কেন, আর দিনটার জন্য আমরা যে কতো অপেক্ষা করেছি তা তুমি জানো না ৷”

নূর ও অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
” এটা আপনি কি বলছেন? আর তালা খুলবে না কেন?কারনটা কি?”

আয়াশ গম্ভীর স্বরে বলল
” নাহ,তালা খোলা হবে না, যে যেখানে আছে সে সেখানেই থাকবে ৷ তোমরা এখান থেকে চলো ৷ ওদেরকে থাকতে দাও এখানে ৷”
আয়াশের মা আয়াশের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসলেন, তারপর রড ধরে মেঝেতে বসে বললেন
” তোমরা এখান থেকে চলে যাও ৷”

আয়াশের কথা ওর মায়ের শুনে বলল
” হমম আমাকে একা ছেড়ে দাও ,এতো গুলো বছর যখন একা কাটাতে পেরেছি তখন আর বাকিটা জীবনও পারবো , আর আমি এখানে বেশ আছি ৷”
কথাটা শোনা মাত্রই নুর দাঁতে দাঁত চেপে আয়াশের কলার ধরে বলল
” আপনি কি পাগল হয়েছেন? আপনি কি মানুষ?নিজের মা কে এভাবে একা ফেলে রেখে যেতে কষ্ট লাগছে না ? আমার ই তো কষ্ট হচ্ছে দেখে আর সে তো আপনার মা ৷”

আয়াশ ওর জামার কলার থেকে হাতটা সরিয়ে বলল
” একদিন বলেছিলাম না আমার জামার কলার ধরে কথা বলবে না,,আই হেট ইট ৷”

কথাটা শুনেই নূর একটা থাপ্পড় মারলো আয়াশের গালে ৷ আয়াশের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কিন্তু নুরের ওর কাজের জন্য বিন্দুমাত্র অনুসূচনা নেই কারন ও জানে যে ও যা করেছে ঠিক করেছে ৷
আয়াশ এবার জোরে ধমক দিয়ে বউটার দিকে তাকিয়ে বলল
” এখান থেকে তুমি তাড়াতাড়ি যাও নাহলে আজকেই তোমার শেষ দিন ৷”

বউটাও আয়াশের এমন ব্যাবহারে রেগে গেল, রেগে গিয়ে বলল
” আমি আমার স্বামীকে আজ এখান থেকে নিয়েই যাবো ৷ আর আজ যদি না নিয়ে যাই তাহলে ওরা আমার স্বামীকে মেরেই দেবে আর আমি তা কখনো হতে দেবো না ৷”

কথাটা বলার সাথে সাথে আয়াশ পকেট থেকে একটা কাগজে মোড়ানো পাউডার জাতীয় কিছু বার করে বলল
” তোমার কোন ধারনা আছে আমি এখন কি করতে পারি ?”

বউটা না যতোটা রেগে গেল তার থেকে নূর বেশি রেগে গেল ৷ রেগে গিয়ে বলল
” কি করতে পারেন আপনি , কি পারেন হ্যাঁ? যে ছেলে নিজের মা কে দেখে রাখতে পারে না তার সব যোগ্যতাই তুচ্ছ ৷”

আয়াশ এবার দাঁত কিড়কিড় করে বলল
” এই পাউডার যদি এখন তোমার স্বামীর নাকে সামনে ধরি তো এক সেকেন্ড ও সময় লগবে না সে কোমায় চলে যাবে ৷”

কথাটা শুনেই বউটা ভয় পেয়ে গেল ৷ নূর রেগে গিয়ে বলল
” আপনার নামে তো আমি পুলিশে কমপ্লেইন করবো ৷ আপনি এসব নিয়ে ঘুরে বেড়ান ৷”

আয়াশ হো হো করে হেসে বলল
” হাহা, কাকে শেখাচ্ছে রাজার পাঠ ৷ আমি একজন সায়েন্টিস্ট আর আমার কাছে সব ধরনের পারমিশন থাকে তাই ডু হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট আফুসোনা ৷”

কথাটা শুনতেই নূর যেন আকাশ থেকে বলল
“কিহহহ !মজা করছেন আপনি ‌৷”

আয়াশ নুরের কাছে গিয়ে নুরের গালে স্লাইড করতে করতে বলল
” কেন জানো না আফুসোনা ?”

নূর আয়াশের কলার ধরে কাছে টেনে আনলো ,দাঁতে দাঁত চৈপে বলল
” আই হেট ইউ ৷”

কথাটা বলার সাথে সাথে নূর অঞ্জান হয়ে গেল ৷ আয়াশ তাড়াতাড়ি নূরকে ধরে নিয়ে নিলো , আর এই ঘটনা দেখে সেই বউটা ভয় পেয়ে গেল, সে ভাবলো আয়াশের সেই পাউডারের গন্ধে হয়তো নূর কোমায় চলে গেছে তাই ভয়ে ভয়ে বলল
” প্পিজ আমার স্বামীকে কিছু করবেন না, আমি যাচ্ছি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি কিন্তু একটা কথা ৷ আমার স্বামীর যদি কিছু হয় তো আমি বলে আমি আপনাকে ছাড়বো না ৷ মনে রাখবেন ৷”

কথাটা বলে উনি চলে যেতে নিলেই আয়াশ বলল
” উহু, ওই দিকে না, আমার পিছন পিছন আসুন ৷”

বউটা অবাক হলো, তারপর বলল
” মানে টা কি? কোথায় যাবো ?”

কথাটা বলতেই আয়াশ ওর মায়ের দিকে মুচকি হেসে তাকালো ৷ আয়াশ নূরকে নিয়ে অন্য একটা গলির দিকে যেতে লাগলো ,তখন বউটা অবাক হলো, এটা আবার কোন রাস্তা ৷”

উনি অয়াশের পিছন পিছন গেলেন ৷ প্রিয়ন্তি মুস্তফা দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলেন ৷ বড়ো ছেলে বলে উঠলো
” আমরা কি এখান থেকে কখনো বার হবো না? তোমার ছেলে তো চিরকালের মতো সব রাস্তা বন্ধ করে দিলো,এখন ওরা যদি আমাদেরকে মেরে ফেলে?”

উনি মুচকি হেসে বললেন
” আয়াশ আমার ছেলে কৌসর, আমি তাকে জানি ,সে কারন ছাড়া কখনো কিছু করে না ৷ বিগত 8 বছর ধরে সে আমাকে খুঁজছে আর তুমি কি ভাবলে যে সে এভাবে আমাকে হারাতে দেবে?”

কৌসর অবাক হয়ে বলল
” মানে ?”

” মানে টানে কি আমি জানি না তবে এটুকু বলবো যে অপেক্ষা করো ৷”

কৌসর কিছু বলতে যাবে উনি তখনই বললেন
” উহু ,শুধু অপেক্ষা করো ৷”

ওনারা বেশ কিছুখন নিরব রইলেন তারপর হঠাৎ ই বেশ কয়েকটা পায়ের আওয়াজ এলো ,আওয়াজ আসতেই কৌসর চমকে গেল ৷ভয় পেয়ে বলল
” কে আসছে? আয়াশ আসছে নাকি ?”

প্রিয়ন্তি মোস্তাফা বললেন
” নাহ,,,ওরা আসছে ৷ ভয় পেয়ো না, শুধু চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্বধীনতা লাভ করার স্বপ্ন দেখো ৷”

কৌসর ভয়ে কেঁদে ফেলল কারন এদেরকে বিশ্বাস করার মতো নেই এরা এদের কার্য সিদ্ধ হলেই সব রকম কাজ করতে পারে ৷ আওয়াজ ক্রমশ বাড়তেই একটা পুরুষালি কন্ঠে কানে এলো
” আজকে ওদের শেষ দিন ৷”

কথাটা শুনে প্রিয়ন্তি মোস্তফা খানিকটা কেঁপে উঠলেন তবুও নিজেকে ভাঙতে দিলেন না , আর এদিকে কৌসর কাঁদছে ৷হঠাৎ করে আয়াশের মামা এলেন আর তার সাথে দুজন লোক ,তাদের হাতে বন্দুক রয়েছে ৷ ওনাদেরকে আসতে দেখে প্রিয়ন্তি মোস্তফা উঠে দাঁড়ালেন তারপর ওনাদের দিকে তাকিয়ে বললেন
” কি ব্যাপার আজ এতো বছর পর নিজের বোনের কথা মনে পড়লো বুঝি?”

আয়াশের মামা রেগে গিয়ে বললেন
” তুই বোন নাকি কালসাপ আমি জানি, যে কারনে তোকে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছিলাম সেই কারনটাও আজ ফুরিয়েছে ‌৷”

উনি স্বাভাবিক কন্ঠেই বললেন
“তা কি কারন শুনি ?”

উনি রেগে বললেন
” সেটা এখন আর তোর জেনে লাভ নেই ৷”

উনি হাহা করে হেসে বললেন
” কাপুরুষ, বলার সাহস টুকু নেই ৷”

উনি রেগে গিয়ে বললেন
” আজ শুধু তোর তার তোর স্বামীর জন্য আমি আমার বউকে হরিয়েছি ৷ আমি ওকে অনেক ভালোবাসতাম কিন্তু ও, ও কি করলো? তোর স্বামীর সাথে পরকীয়া, সে নাকি তেহেরাত কে ছাড়া বাঁচবে না ৷ তাহলে এতো বছর বেঁচে ছিলো কীভাবে ৷”

” ওনার হায়াত ছিলো এত বছর তাই ৷”

” কিন্তু তোর স্বামী ওর সাথে এই সম্পর্কে না জড়ালে এতো গুলো বছর জীবিত অবস্থায় ও আমার কাছে থাকতো , না ওকে পাগল হতে হতো আর না ওকে ওর ছেলের বউকে একঘরে হয়ে থাকতে হতো আর না কৌসর আজ এখান থাকতো, মাথায় করে রখতাম ওদেরকে ৷”

প্রিয়ন্তি মুস্তফা এবার চেঁচিয়ে বলল
” আমিও আমার স্বামীকে সুযোগ দিয়েছিলাম, তুমিও ভাবীকে সুযোগ দিতে !”

” আমি ওকে সুযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু ওই যে কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয়ন তেমনি ওর মাথা থেকেও তেহেরাতের ভুত নামেনি ৷ তাই বাধ্য হয়ে এতোগুলো বিয়ে করি আমি ৷ তবে আজ অবধি কখনো কাউকে ওর মতো করে আমি ভালোবাসিনি আর শেষমেষ ও আমাকে এভাবে কষ্ট দিলো? কি ছিলোনা আমার ?”

প্রিয়ন্তি মোস্তফা থেমে বললেন
” তাই বলে তুমি আমাকে এভাবে আটকে রাখবে?
তুমি আর তোমার ছোট বোন মিলে আমার প্রতি ষড়যন্ত্র করেছো, তা কি আমি জানি না? শুধু তুমি একা না সে ও ৷”
কথাটা বলতেই ওনার চোখ থেকে জল গড়ালো ৷ আয়াশের মামা রেগে বললেন
” ও যা করেছে সম্পত্তির ভাগীদার হওয়ার জন্য করেছে যার অধিকার ও হারিয়েছিলো পালিয়ে বিয়ে করার সময়, বাবা ওকে ত্যাজ্য করেছিলো ৷ আর আমি করেছি তোর আর তোর স্বামীর প্রতি রগে আর সব সম্পত্তি পাওয়ার অধিকারে ৷ তেহেরাতকে দেখলে আজও আমার রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে , আমার সুখের সংসার নষ্ট করেছে ও ৷”

উনি মাথা নীচু করে বললেন
” তা আজ কি কাজে এলে হঠাৎ?”

” তোদেরকে আমি আর বাঁচতে দেবো না, কালকে সব সম্পত্তির ভাগ বাটোরা হবে আমি চাই না তোদের মতো জঞ্জাল রেখে আমার রাস্তা নোংরা হোক তাই সরিয়ে দেওয়াই ভালো ৷”

” নিজের ছেলেটাকে অন্তত রেহায় দাও ৷”

” নাহ, ও বেঁচে থাকলে সব ফাঁস করে দেবে আর আমি তা হতে দেবো না,,তাই ওর ও তাই হবে ৷”

কথাটা ফলে উনি হাতে বন্দুক নিয়ে প্রিয়ন্তি মোস্তফার দিকে তাক করতে গেলেই হঠাৎই পুলিশ এসে বলল
” হ্যান্ডস আপ ৷”
হঠাৎ হুড়হুড় করে ঝাঁকে ঝাঁকে পুলিশ এসে ঘিরে গেল, সহকারী দুটো লোক পালাতে গেলেই ওদেরকে ধরে ফেলা হলো ৷
আয়াশের মামা এদিক ওদিকে তাকিয়ে চমকে গেলেন,অপরদিকে প্রিয়ন্তি মুচকি হসছেন ৷ আয়াশ হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে আর ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে বউটা, নুর এখানে নেই নেই ৷ এতোগুলো পুলিশ দেখে উনি ঘাবড়ে গেলেন, কিন্তু ওনার শরীরে রাগের বন্যা তাই উনি এবার বন্দুক তাক করলেন প্রিয়ন্তির দিকে
” আমার কি হবে আমি জানি না কিন্তু আমি তোকে বাঁচতে দিবো না ৷ ”
কথাটা বলে উনি গুলি চালাতে গেলেই অয়াশ ওনার হাত বরাবর গুলি মারলো ৷ উনি আহহ করে শব্দ করে উঠলেন আর ওনার হাত থেকে বন্দুকটা পড়ে গেল ৷
আয়াশ বলে উঠলো
” সবই তো বুঝলাম মামু তাই বলে নিজের ভালোবাসাকে নিয়ে এতো বড়ো মিথ্যা অপবাদ দেবে?”

উনা মাটিতে বসে কাতরাচ্ছে ৷ হঠাৎ হুইল চেয়ারে করে আয়াশের খালামনি মানে ইফার মা আয়াশের বড়ো মামীকে সবার সামনে আনতেই সবাই চমকে গেলেন এক প্রকার ৷ প্রিয়ন্তি অবাক হয়ে বলল ” ভাবী তুমি ?”

কৌসর চেঁচিয়ে বলল
” আম্মু ৷”

আয়াশের বড়ো মামি মুচকি হেসে বললেন
” হ্যাঁ আমি ‌ ৷ আমি বেঁচে আছি কিছ্ছু হয়নি আমার, আল্লাহ হয়তো আমার হায়াত এই অবধি রাখেননি, আরও বেশি রেখেছেন তাই আমি জিবীত ৷”

ওনার স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন
” সত্যিই কি তুমি আমাকে কখনও ভালোবেসেছিলে? আমাকে পরকীয়ার দোষারোপ করো, কিন্তু দিনের পর দিন তুমি কতো রাত অন্য মেয়ের সাথে কাটিয়েছো তোমার ধারনা আছে? তোমার ছিলো কেবল লোভ যার কারনে তুমি আমাকে বিয়ে করেছিলে আর এরপর আরও চারটে,ভালোবাসাটা তো কেবল বাহানা ৷ মানুষ পরকীয়া করে তুমি জানো ? যখন সে ভালোবাসার মরূভুমিতে চলে আসে আর হাজার খুজলেশ ভালোবাসা পাই না তখন ৷”

কথাটা বলে উনি কেঁদে ফেললেন ‌৷ পুলিশ আয়াশের সাথে হ্যান্ডশেক করে বলল
“থ্য৷ংক ইউ, আপনি এতো কিছু করে প্ল্যান না সাজিয়ে আমাদেরকে না ডাকলে হয়তো আমরা বিশ্বাস ই করতাম না ৷ আসলে কারোর প্রতি প্রমান ছাড়া কিছু করা যাই না তাই এতো কিছু শোনা আমাদের জন্য দরকার ছিলো ৷”

আয়াশ মুচকি হাসলো ৷ দরজার তালা ভেঙে ওর আম্মুকে বার রে আনতেই জড়িয়ে ধরলেন উনি আয়াশকে, উনি অনবরণ কাদছেন আয়াশকে ধরে ৷ আয়াশের চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে ৷ পুলিশ আয়াশের মামাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলেন না, ওনাকে গ্রেফতার করা হলো ৷
#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:40
#Suraiya_Aayat

আয়াশের মামাকে জেলে নিয়ে যাওয়া হলো ৷ আয়াশের মামী হুইল চেয়ারে বসে আছেন তার মুখ দেখে মনের অবস্থা বোঝার উপায় নেয় ৷আয়াশের মা এবার হামলে পড়লো আয়াশের বুকে, ছেলেকে কাছে পেয়ে হাউহাউ করে কেঁদে উঠলেন ৷ আয়াশ ওর মা কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে ৷ কৌসরের বউ কৌসরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ,আজ কোন বাঁধা বিপত্তি নেই আর৷ আয়াশ প্রিয়ন্তির কপালে চুমু দিয়ে বলল
” Did u miss me?”

আয়াশের মা বেশ শব্দ করে কেঁদে উঠে আয়াশের দিকে তাকালো ৷ তারপর আবার আয়াশের বুকে হামলে পড়লো ৷ আয়াশ ওর মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ৷উনি আবেগে আত্মহারা ৷

____

” কোথায় পালাচ্ছেন আপনি?”

পিছন থেকে খানিকটা গম্ভীর স্বরে উঠলো প্রিয়ন্তি মোস্তাফা ৷ হঠাৎ কোন মেয়েলি কন্ঠ শুনেই থেমে গেলেন মেজ মামী ৷ ওনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এসেছে পিছন ঘুরে দেখার সাহস পাচ্ছেন না ৷ তারপর কোনক্রমে অনেক সাহসের সাথে ঘুরে বললেন
” কি হয়েছে?”
পিছনে তাকাতেই খানিকটা চমকে গেলেন উনি ৷ পিছনে আয়াশ সহ প্রিয়ন্তি মুস্তাফা,বড়ো বউ, কৌসর সবাই দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের পিছনে রয়েছে পুলিশ ৷ সবাইকে একসাথে থেকে উনি অনেক বেশি ঘাবড়ে গেলেন ,আমতা আমতা করে বললেন
” কি হয়েছে?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” কোথায় যাচ্ছো মামী এতো ব্যাস্ত হয়ে ৷”

উনি আয়াশের দিকে বেশ রুগ্ন কন্ঠে তাকিয়ে বললেন
” এটা কেমন কথা? আর আমি কোথায় ই বা যাবো?”

আয়াশ এবার ওনার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল
” না মানে তোমার যাওয়ার তো আবার অনেক জায়গা আছে তাই আরকি ৷”

উনি এবার রেগে বললেন
” আর কিছু বলবে তোমরা? নাকি আমি এখন যেতে পারি ? ”

হঠাৎ প্রিয়ন্তি মোস্তফা বললেন
” ভাইয়া ওরফে তোমার স্বামী এতো বড়ো একটা কাজ করেছে তা তুমি কিছু জানতে না?”

উনি থতমত খেয়ে বললেন
” আমি কি করে জানবো এসব তাড়া উনি আমাকে কখনো এমন কোন কথায় বলেননি ৷”

আয়াশ বলে উঠলো
” ওহহ,,,তাই ! যাই হোক তা কোথায় যাচ্ছো শুনি?”

উনি ওনার শাড়ির আঁচলটা শক্ত অরে ধরে বললেন
” কোথাও না ৷”

তা এই বড়িতে টহলদারি করছো বুঝি ?”

উনি আরোও রেগে বললেন
” বুঝেছি তোমরা অকারনে আমাকে আটকে রেখেছো , আমি আসছি ৷”
কথাটা বলে উনি পা বাড়াতে গেলেই পুলিশ বলে উঠলো
” ইউ আর আন্ডার এরেস্ট, আর এক পা ও নড়াবেন না আপনি ৷”
কথাটা শুনতেই ওনার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, পিছন ঘুরের বলল
” আমি আছু করিনি তাই আমাকে এরেস্ট করার কোন মানে হয় না ৷”

কথাটা বলে দ্রুত গতিতে পা বাড়াতে গেলেই দুজন মহিলা কনস্টেবল ওনাকে আটক করলেন ৷ উনি নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করছেন ৷ ছাড়াতে না পেরে বললেন
” এটা কেমন, আর আপনারা জানেন আপনারা কাকে আটক করেছেন আর এর শাস্তি হিসাবে আপনাদের কি কি হতে পারে ৷”

কৌসর বলে উঠলো
” চোরের বউয়ের বড়ো গলা ‌৷ তুমি কি অন্যায় করেছো তা কি তুমি বুঝতে পারছো না?’

উনি খানিকটা চেঁচিয়ে বললেন
” কৌসর,মুখ সামলে কথা বলো ,ভুলে যেওনা আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়ো ৷”
কৌসরকে উনি ওনার কথাতে দমিয়ে দিতে পারলেও আয়াশকে পারলেন না, আয়াশ বলে উঠলো
” আপনি যে এতোদিন ধরে বড়ো মামীকে ভুল ওষুধ খাবারের সাথে মিশিয়ে দিতেন , সেটা কি ঠিক? মুরব্বিদের কাছ থেকে আমরা এবার থেকে কি এগুলো শিখবো যে কি করে কাউকে মেরে ফেলতে হয় ৷”

কথাটা শুনতেই ওনার মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখা গেল তবুও উনি হার স্বীকার করলেন না, রেগে গিয়ে বললেন
” মিথ্যা দোষারোপ করা হচ্ছে অফিসার আমার প্রতি , বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি, সে নিজে ইচ্ছা করে মরার নাটক করে আমাকে ফাসাতে চেয়েছে ৷”

পুলিশ বলে উঠলো
” ওনার পেট থেকে পয়জন পাওয়া গেছে, এতদিন ধরে পয়জন পেটে জমতে জমতে উনি মারন রোগে আক্রান্ত ৷ আর আপনাকে সেই অপরাধে কারাদন্ড দেওয়া হবে ৷ ওনাকে নিয়ে যান ৷”

কথাটা বলার শেষ হতে না হতেই হঠাৎ সেঝ মামী হেসে উঠলেন উচ্চস্বরে তারপর বললেন
” বাহ, এটাই তো আমি চেয়েছিলাম যে সে মারা যাক, অবশেষে আমার ইচ্ছা পূরন হলো ৷ কেবল ওর জন্য আমি আমার সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম , সব ৷
ও না থাকলে সব আমার, সব আমার ৷

খানিকটা পাগলামো ভঙ্গিতে কথাগুলো বললেই পুলিশ আবার হুকুম দিলেন
” ওনাকে নিয়ে যান ৷”

ওনাকে নিয়ে যাওয়া হলো ৷ আয়াশ মুচকি হেসে বলল
“ধন্যবাদ অফিসার আমাদের সাথে কোঅপারেট করার জন্য ৷”

পুলিশটাও মুচকি হেসে বলল
” আপনি সত্যিই জিনিয়াস মিঃ আয়াশ,প্রাউড অফ ইউ ৷ আপনি এতো সুন্দর করে ছক না কষলে বোধহয় এতো কিছু পসিবল হতো না ৷ ধন্যবাদ ৷”

কথাটা বলে অফিসার চলে গেলেন ৷ আয়াশ ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল
” আম্মু খুশি তো তুমি ?”
আয়াশের মা আয়াশের বুকে মাথা রেখে কেঁদে দিলো ৷ আয়াশ ওর মায়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল
” বাবার সাথে দেখা করবে না তুমি ? বাবা বাইরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ৷”

উনি ওনার চোখের জলটা মুছে নিরব হয়ে রইলেন , কিছু বললেন না ৷ আয়াশ ও আর বেশি কথা বাড়ালো না, চুপ করে রইলো হয়তো ওনার মনের অবস্থাটা বুজছে ৷

___

নূর শুয়ে আছে, পাশে বসে আছে আয়াশ ৷ বেশ কিছুখন আগে নুরের একটু জ্ঞান ফিরেছিলো তারপর আবার ডক্টর ইনজেকশান দেওয়াই আবার কিছুখন ঘুমিয়ে ছিলো ৷ আয়াশের মা উনি নূরের জন্য খাবার আনতে গেছেন, আয়াশের বাবা আজকেও নিজেকে ঘর বন্দী করেছেন কিন্তু আজকের দিনে এমন ঘরবন্দির কারনটা সবার কাছেই অজানা ৷ হঠাৎ নূর খানিকটা নড়ে উঠতেই ইফা বলে উঠলো
“ভাইয়া ভাবীর জ্ঞান ফিরেছে ৷”
আয়াশ ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়লো , নূর উঠে বসতে গেলেই আয়াশ ধমক দিলো
“এই মেয়ে বসো , উঠতে বলেছি তোমাকে ?”

নূর চমকে উঠলো হঠাৎ কঠিন স্বরের ধমক শুনে ৷ইফা বলে উঠলো
” কি শুরু করলে ভাইয়া, ভাবীর সবে জ্ঞান ফিরলো আর এখনই বকা ঝকা শুরু করে দিলে !”

আয়াশ ও ইফার ঠান্ডা ধমক শুনে বেশ শান্ত কন্ঠে বলল
” উঠবে না তুমি , যেমন ভাবে শুয়ে আছো তেমনভাবেই থাকো ৷”

ইফা খানিকটা মুচকি হেসে বলল
” ভাবী তোমার এখন খালি রেস্ট নেওয়ার সময় আর তুমি একদম ব্যাতিব্যাস্ত হবে না ৷”

নূর অবাক হয়ে বলল
” কেন ?”

আয়াশের মুখভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে কি নূর জানে না তবে ইফা মুচকি মুচকি হাসছে ৷”

#চলবে,,,,

এতো ব্যাস্ত কেন আমি ?লেখার সময় পাচ্ছি,না🙂
#চলবে,,,, Suraiya Aayat Ariya Suraiya Aayat

আরো অনেক কিছু জানা বাকি সেগুলো পরের পর্বে বলবো ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here