অজানা তুমি পর্ব ১৩+১৪

#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব – ১৩

রিদ্রিশ ধীরেধীরে আমার কাছে আসছে।আমার ওরনা খুলে আমার উপর নরপশুর মতো ঝাপিয়ে পড়েছে নিজের এতোদিনের কামনা মেটানোর জন্য।আমি ছটফট করছি কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।কারণ আমার দুই হাত দড়ি দিয়ে খাটের দুই প্রান্তে বাধা।মুখ রুমাল দিয়ে আটকানো।কিন্তু অদ্ভুদ কারণে রিদ্রিশের মুখমণ্ডল আমি দেখতে পারছি না।গলা থেকে পুরো দেহ দেখা যাচ্ছে।মুখ দেখতে পারছি না।রিদ্রিশ আমার উপর নিজের পুরো ভর দিয়ে শুয়ে পড়লো।আমি আর কিছু দেখার আগেই আমার দুই চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেধে দেওয়া হলো।আতকে গেলাম আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।চারদিকে শুধু অন্ধকার।পরবর্তীতে কি হতে চলেছে সেটা ভেবেই গুমড়ে কেঁদে উঠলাম।দম আটকে আসছে।ছটফট করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।একটি পুরুষালি হাত আমার জামার ভিতরে বিচরণ করছে।রিদ্রিশ আমার গলায় নিজের মুখের দাঁত দিয়ে কামড়ে দড়েছে।হিংস্র কুকুরের মতো আচরণ করছে।আমার গাল চেপে ধরে নিজের ঠোঁট আমার ঠোঁটে আবদ্ধ করে নিলো।আমার চোখের জলে তার বিন্দুমাত্র অনুসূচনা নেই।সে নিজের কাজ করেই যাচ্ছে।হাতটি আমার জামার চেইন খোলার আগেই………



-“””আহহহহহহহহহ”””

ধাপ করে উঠে বসলাম।হাপাতে হাপাতে চারদিকে তাকালাম।না আমি আমার নিজের রুমে নিজের বিছানায় শুয়ে আছি।মুখে হাত দিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম।কি হচ্ছে আমার সাথে??এতোক্ষন স্বপ্ন দেখছিলাম??কিন্তু আমার গলা আর গাল ব্যাথা করছে।

-“”হেই নুরিপাথর তুমি ঠিক আছো??এই নাও পানি খাও!!শান্ত হও!””কিচ্ছু হয় নি!””

হঠাৎ পাশ থেকে কোনো পুরুষের গলার আওয়াজ পেয়ে ছিটকে সরে বসলাম।তাহলে রিদ্রিশ এসেছিলো।এটা রিদ্রিশ।চাদর মাথায় মুড়ি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বললাম

-“”চলে যান।দয়া করে আমার এই সর্বনাশ করবেন না।আমি আপনার পায়ে পড়ি।কেনো করছেন এমন আমার সাথে?আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি??ছেড়ে দিন।আমি মরে যাবো!””

বলে কাঁপতে লাগলাম।হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছি।এই মুহুূর্তে মা-বাবার কথা খুব করে মনে পড়ছে।তারা থাকলে কি এইসব হতো??হয়তো হতো না!!হঠাৎ চাদরের উপর কারো ছোঁয়া পেয়ে ভয়ে আম্মু বলে চিল্লিয়ে উঠলাম।

-“”হেই মেয়ে আমি আম্মু না আই এম দ্যা সুপার সাকসেসফুল বিজন্যাসম্যান আয়রান আজহার।তোমার এই বাজে বকা বন্ধ করো।নিজের দুই আখি দিয়ে একবার চাদরের উপরে তাকাও।না দেখে শুনে চিল্লা পাল্লা শুরু করেছে।ড্যাম ইট””

আমি কিছুটা চমকে গেলাম।শকের পরিমান এখনো কমে নি।কি শুনলাম এটা??মুহুূর্তেই একটু আগের স্বপ্ন আর যা যা ঘটলো সবকিছু ভুলে গেলাম।ধীরেধীরে চাদরটাকে মাথার উপর দিক দিয়ে উঠিয়ে চোখ দুটো বের করে সামনে তাকিয়ে দেখি খাটের সাইড ঘেঁষে আয়রান ডান হাতে পানির গ্লাস ধরে ভ্রু কুঁচকে খুবই সিরিয়াস ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি হালকা কেশে চাদর সরালাম।আয়রান আমার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে সাইডে টুলে বসে পড়লো।আমি ঢকঢক করে পানি খেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।নিজের দিকে তাকিয়ে বিষম খেলাম।গায়ের ওরনা নেই।জলদি নিজেকে চাদর দিয়ে ঢেকে আয়রানের দিকে তাকালাম।সে শান্ত চোখে আমার চাহনি দেখে বললো

-“”হেই ইউ!লিসেন!তোমার মতো মেয়ের উপর আমার এতো ইন্টারেস্ট নেই!ওকে??সো আমার সম্ম্যন্ধে এসব চিন্তা করা বন্ধ করো মেয়ে।””

শুনে অপমানিত বোধ করলেও কিছু বললাম না।দৃষ্টি নামিয়েই রাখলাম।আয়রান আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হালকা গলা ঝেড়ে বললো

-“”ক্ষুদা লেগেছে??””

আমি “হ্যা” বোধক মাথা নাড়লাম।হঠাৎ গাল জ্বলে উঠতেই আমার ওই স্বপ্নের কথা পুনরায় মনে পড়লো।আচ্ছা এটা কি আদেও স্বপ্ন ছিলো??চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে।আমি আয়রানের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই সে কোমড়ে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।চোখে কিছুটা রাগ দৃশ্যমান।আমি প্রশ্নসুচক চোখে তাকালাম।সে আমাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বললো

-“”হেই দেখতে পাচ্ছো আমাকে??””

এক রাশ বিষ্ময় নিয়ে ওনার দিকে তাকালাম।কি বলছে এইসব?দেখতে পাবো না কেন??আমাকে কি অন্ধ মনে হয়??আমি মুখ বাঁকিয়ে ভ্রু কুটিত করে বললাম

-“”হ্যা! দেখতে কেনো পাবো না?কিন্তু কিছুটা ঝাপসা।হঠাৎ এই প্রশ্নের কারণ বুঝলাম না!””

ওনি নাক মুখ কুঁচকে বললেন
-“”হ্যা দেখতে তো পাও ঝাপসা ঝাপসা।যেটুকু চোখের পাওয়ার আছে সেটুকুও শেষ করতে চাও তাই না??””

-“”কি বলছেন এইসব??””পাগল হয়ে গেছেন??””

-“”আমার দেওয়া গিফটটা কি তোমার পছন্দ হয় নি??””

-“”কিহ??পছন্দ কেনো হবে না??””

-“”তাহলে চোখে পড়ো না কেন??

-“”আব ভুলে গেছি!””

-“”ওয়াহ ওয়ান্ডারফুল,নাইস জব!!”তোমার রান্নাঘরটা কোথায়??””

-“”ওইতো ডাইনিং রুমের বা পাশে!””

আয়রান চলে গেলো।বুঝিনা সব সময় এই ওয়ান্ডারফুল, নাইস জব কেনো বলে??রাগ উঠলেই এইসব বলে চলে যায়।আচ্ছা উনি আমার রুমে কি করছে??আচ্ছা আমার সাথে আসলে হয়ে ছিলো টা কি??কলেজ থেকে বের হওয়ার পর রিদ্রিশের সাথে দেখা তারপর তার ওই অপিরিচিত জায়গায় নিয়ে গিয়ে খারাপ আচরণ দ্যান সেই স্বপ্ন??নাকি পুরোটাই স্বপ্ন ছিলো??আর আয়রানই বা আমার ঘড়ে কি করছে??কেনো এসেছে??আর আমি বিছানায় কেনো পড়েছিলাম??উফ এই জ্ঞান হারানোটাই যতো কুফা।এই অভ্যাসের জন্যই আর কিচ্ছু মনে থাকে না।যেখানে সেখানে একটু ঘাবড়ে গেলেই জ্ঞান হারাই।অসহ্য।আচ্ছা আয়রানকে জিগ্যেস করলেই তো হয়।সে নিশ্চই জানে কি হয়েছে?একটু পরই আয়রান হাতে সুপের বাটি নিয়ে এসে আমার পাশে বসলো।সে এখনো অফিসের ইউনিফর্মে আছে।চামচে সুপ নিয়ে আমার সামনে ধরে বললো

-“”নাও খাও!””ভালো লাগবে!””

বলে আমাকে আমাকে খাইয়ে দিলো।ওয়াক!!ভিতর থেকে এখনই সব উল্টে আসবে মনে হচ্ছে।আমি নিজে কিছুটা প্রশ্তুতি নিয়ে গলা ঝেড়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম

-“”আচ্ছা আমি আমার বাসায় কেন??আমি তো কলেজে ছিলাম?এখানে কিভাবে…..

আয়রান ফোস করে শ্বাস ছেড়ে বললো

-“”তুমি তো কলেজের ক্যাম্পাসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে।আমি তোমাকে নিতে গেছিলাম।গিয়ে দেখি তুমি এখনো বের হও নি।তাই ভিতরে খুঁজতে গিয়ে তোমাকে জ্ঞান হারানো অবস্তাই পেয়েছি।এর জন্য তোমাকে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছি।ক্লিয়ার???””

কি বললো??ক্যাম্পাসে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম??তাহলে এতোক্ষন শুয়ে শুয়ে তাহলে স্বপ্নই দেখছিলাম হয়তো।আচ্ছা আয়রান আবার আমাকে মিথ্যা বললো নয়তো??কিন্তু আমাকে মিথ্যা বলে ওনার কি লাভ??

আয়রান আমাকে খাইয়ে দাইয়ে ঔষুধ গিলিয়ে তারপর বিদেয় হলো।এদিকে আমি হিসাব মিলাতে মিলাতে অস্থির।বালিমের পাশ থেকে ওরনাটা নিয়ে গায়ে দিতেই হাতের কাছে কিছু একটা সুচের মতো বিধলো। তাকিয়ে দেখি ছোট্ট একটা এয়াররিং।আরে এটা আবার কার??আমি তো এইসব পড়ি না।এক মিনিট!এটার মতো একটা তো আমার ড্রয়ারেই আছে।দৌড়ে গিয়ে ড্রয়ার খুলে সেম একটা এয়াররিং পেলাম।দুইয়োটাই একদম একইরকম দেখতে।তাহলে এটা কি সেই নিশিচোরের??বেটাকে ওইদিন হাতে নাতে ধরতে পারতাম।তাহলেই সব হিসেব মিলে যেতো।ধুর!!

-#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -১৪

বন্ধ গ্লাসের সামনে দাড়িঁয়ে আছি।আর কতদিন??আর কতদিন এভাবে বন্দি থাকবো? মানুষের তো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার অধিকার আছে।তাহলে আমি কেনো এই অধিকার থেকে বন্ঞিত হবো??বাইরে কত সুন্দর আবহাওয়া।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টির পানিতে রাস্তার সাইডের গাছপালার পাতাগুলো সতেজ হয়ে উঠেছে।সামনের ওই আকাবাকা রাস্তা দিয়ে কয়েকটা রিকশা চলাচল করছে।মানুষের আনাগোনা একদম কম এই এলাকাজুড়ে।ঘড়বাড়ি ও বেশি একটা নেই।বড় ইট দালানের বাড়ি শুধু আমাদের বিল্ডিংটাই। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।এখন আবার কে এলো??বাড়িওয়ালা নয়তো??দীর্ঘ দুই মাস যাবত ভাড়া শুধু পিছিয়ে নিয়েছি।আজকে না দিলে হয়তো বাড়ি থেকে বেরও করে দিতে পারে।ভেবেই বুক কেপে উঠছে।বের করে দিলে কোথায় যাবো??কোথাও গিয়ে যে উঠবো সেই টাকাও নেই।টিউশনিও মাঝখান থেকে অনেকদিন গ্যাপ গেছে।হায় কপাল!!বাড়িওয়ালা যেন না হয়।এরকম আকাশ পাতাল অনেককিছু ভাবতে ভাবতে দরজা খুললাম।যেটা ভেবেছিলাম। ঠিক সেটাই হলো।দরজার বাইরে একটা বুড়ো মোটা লোক লুঙ্গি দুই হাত দিয়ে উপরে উঠিয়ে পান চিবোতে চিবোতে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।এই রে আজকে বোধহয় আর রক্ষা নেই।মতিগতি তো বেশি সুবিধার ঠেকছে না।দেখা যাক একটু চেষ্টা করলে কিই বা ক্ষতি হবে।আমি কেবলাহাসি দিয়ে বললাম

-“”হি হি কাকা ভালো আছেন??হঠাৎ আমার বাসায়??কিছু লাগবে??””

লোকটা মুখ থেকে পানের থু থু ফেলে হাতে ধরে থাকা পানের বোটা থেকে আরেকটু চুনা জিহ্বা দিয়ে চেটে বললো

-“”ভালো আছি।আর হ কামেই আইছি।ভাড়া নিতে আইছি।আগের দুই মাসের ভাড়া সহ এই মাসের ভাড়াডাও একলগে নিয়া যামু।তাড়াতাড়ি দিয়া দেও যাই গা।””

সর্বনাশ!! আগের দুই মাসের ভাড়ার কথাও দেখি স্বরণে রেখেছে ভালোই।কি বলি এখন??তখনই মস্তিষ্কে কিছু চাড়া দিয়ে উঠলো।দেখি এপ্লাই করে কাজ হয় কি না।আমি বিনয়ের হাসি দিয়ে বললাম

-“”ওও ভাড়া??ভাড়া!ভাড়া!কাকা ভাড়া কাকে বলে??””

লোকটা কপাল কুঁচকে ফেললো।চোখে গাঢ়তর ভাব আনার আগেই আমি বললাম
-“”আরে কাকা ভাড়া পরে।আগে আপনি ভিতরে আসেন।আপনাকে একটু চুইট খাওয়াই।জানেন??নিচ তলার বৌদি চুইট দিয়ে গেছে।কাকি নাকি আপনাকে সুইট সরি চুইট খেতে দেয় না??আসুন আমি খাওয়াবো।!””

বলে ওনার ভাবভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করছি।যা বুঝলাম তাতে মনে হলো কাজ হয়েছে।লোকটা সিড়ির জানালা দিয়ে মুখের পান ফেলে খুশিতে ঝাকানাকা দিতে দিতে ঢুকলেন।আমিও শান্তভাব নিয়ে প্রবেশ করলাম।বুড়াটা ইতিমধ্যে একবার বায়ু দূষনও করে ফেলেছে।গন্ধে আমার ছোটখাটো ডাইনিং রুমটার এক প্রকার ঝর্ঝরিত অবস্তা। আমি নাক ছিটকাতে ছিটকাতে রান্নাঘরে আসলাম।এই বুড়োটা যতবার আসে ততবার আমার রুমের অবস্তা কাহিল বানিয়ে তারপর ছাড়ে।নইলে তো ওনার ভাড়া হজম হয় না।আমি বিরক্তি নিয়ে ফ্রিজ থেকে পায়েস আর সেমাই বের করলাম।নিচের বৌদি সবকিছুতে এতোটাই চিনি দেয় যা হজম করা আমার সাধ্যের মধ্যে নেই।এই চিনির গোডাউন ওই বুড়ার জন্যই ঠিক আছে।বাড়িওয়ালার যেহেতু ডায়াবেটিস আছে সেহেতু এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছি।বাসায় তো বউ আর ছেলেপুলে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে দেয় না।দেখি এইগুলো দিয়ে যদি কোনো শুভ কাজ হয়।ট্রে তে সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে মুখে অনিচ্ছাকৃত হাসি ঝুলিয়ে হেলতে দুলতে গেলাম।বুড়োটা হয়তো আমার অপেক্ষাই করছিলো।আমি এগুলো ওনার সামনে রাখতেই দুই হাত দিয়ে হামলে পড়লেন।দেখে মনে হচ্ছে চাতক পাখির ন্যায় কতদিন তৃষ্ণার্ত ছিলেন।আমি ট্রে হাতে দাড়িয়ে আছি আর পরবর্তী কাজের জন্য নিজেকে প্রস্তত করছি।আমি গলা ঝেড়ে কিছুটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম

-“”কাকা এইবারের মানে এই মাসের ভাড়াটা যদি আপনি পরের মাসে নেন!তাহলে এই বৌদির চুইট আমি আপনাকে রেগুলার খাওয়াবো।ভেবে দেখুন এই সুযোগ কিন্তু বারবার আসবে না।একদম হাতছাড়া করা যাবে না।প্রতিদিন এই টাইমে আসবেন খেয়েদেয়ে চলে যাবেন! কাকি জানতেও পারবে না!কি বললাম কিছু বুঝলেন??টাটকা অফার কিন্তু!””

বলে নিষ্পাপ চেহারা নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম।আমি কিন্তু কিছুই বলি নি😏।বুড়োটাকে দেখে যা বুঝলাম সে মুখে একগাদা পায়েস পুড়ে অতল সাগরের ন্যায় চিন্তায় চিন্তিত।তিমিমাছও এনাকে খুজে পাবে না।আমি উত্তরের অপেক্ষা করছি।উনি আমার দিকে সিরিয়াস মুখ করে বললেন

-“”আচ্ছা।পিছায়ে নিলাম।কিন্তু ভুলেও আমার বউয়ের কানে যেন না যায়।তাইলে কলম খবর আছে।সামনের মাসো ভাড়া কিন্তু নিমুই।!””

বলে উনি সেমাই মুখে দিয়ে বললেন -“”আহা বৌদি কি চুইট!””

এদিকে আমার খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে।বিশ্ব জয় করে ফেলেছি আমি।অনেক বড় যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি।হাফ ছেড়ে বাচঁলাম। এই কয়েকদিনে রিদ্রিশ আর আয়রান নামক এই দুই ব্যাক্তি আমার নিত্যদিনের সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে।নিজেকে মুক্ত করার চিন্তা করতে করতে অন্যসব কিছু ভুলে গেছি।এই দুইজনের খপ্পরে পড়ে আমার প্রতিদিনের রুটিন মাফিক করা কাজগুলোতে বাধা পড়েছে।মি.আয়রান আজহারকে আমার কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেও এখন একদম উল্টোটা মনে হচ্ছে।উনিও রিদ্রিশের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত।
নাহলে ওইদিন এভাবে কথা বলতো না।কারণ আমি ওইদিন স্বপ্ন দেখিনি।তবেঁ জ্ঞান হারানোর আর ওই কালো গাড়ির আগমনের আগ পর্যন্ত সবকিছু সত্য ছিলো।এরপর হয়তো স্বপ্ন ছিলো।আদেও ছিলো তো?।এছাড়া আরেকটা প্রশ্ন থেকেই যায়।আমাকে ওইদিন ওই নরপশুর থেকে বাঁচিয়েছিল কে?কি জানি!!ওই আয়রানকে আর মাথায় উঠতে দেওয়া যাবে না।উনি যেভাবে আমার সাথে আঠার মতো লেগেছেন।তাতে কিছুটা আঁচ করতে পারছি।উনি যদি আমার কোনো ক্ষতিই করতে চান!তাহলে এতো কেনো যত্ন আর কেয়ার দেখালেন??এতে কি উনি বুঝতে পারেন না!যে ওনার এই ছোট ছোট কেয়ার আর শ্বাসনগুলো অপরজনের মনে দাগ কেটে নিতে পারে!হয়তো বোঝেনি।আজকে কলেজে যেতে হবে বিকেলে টিউশনিতেও যেতে হবে।এভাবে বসে থাকলে তো কেউ মুখের ভাত জোগার করে দেবে না।কিন্তু ভয় হচ্ছে যদি আবার রিদ্রিশের খপ্পরে পড়ি?আচ্ছা যাই হোক দেখা যাবে।বুড়াটা খেয়েদেয়ে চলে গেলো ঠিক তখনই আয়রান ঢুকলো।লোকটাকি আমাকে ঘড়ছাড়া করতে চাইছে?একটুর জন্য বাড়িওয়ালা দেখেনি।তবুও মেজাজটা বিগড়ে গেলো।আমার এখানে কেনো এসেছে?আমাকে কি ওই রিদ্রিশের জালে এলিয়ে বেলিয়ে ফাঁসিয়ে নিতে এসেছে?রিদ্রিশের সাথে কি সম্পর্ক জানতে হবে।কিন্তু এখন একে আমার দুচোখে সহ্য হচ্ছে না।উনি ঢোকার আগে দরজা লাগাতে নিলেই হাত দিয়ে চেপে ধরলেন।এতে আমার ভ্রু কুঁচকে গেলো।উনি দরজা খুলে ঢুকে দরজাটাকে ভিড়িয়ে দিয়ে বললো

-“”আমাকে দেখতে পাচ্ছো না??দেখেও দরজা লাগাচ্ছো?নাকি দেখেও না দেখার ভান করছো??””

ভ্রু কুঁচকে সিরিয়াস মুখ করে কথাগুলো বলে আমার হাত ছেড়ে দিলো।আমার গা জ্বলে যাচ্ছে ওনার কথা শুনে।আমাকে মিথ্যা কথা বলে ফাঁসানোর চেস্টা করছে আবার এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো কিছুই জানে না।কি মনে করে আমাকে?আমি বোঁকা?কিচ্ছু বুঝি না?আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম

-“”আমার ইচ্ছা তাই লাগিয়েছি।আপনি কেনো এসেছেন??কালকে রাতেও তো এসেছিলেন?এখন আবার কি??””

উনি এতে মনে হলো কিছুটা অবাক হয়েছেন।এতে আমার কিছুই আসে যায় না।আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে বললেন

-“”এরকম বিহেভ করছো কেন??””শরীর ঠিক আছে?””

বলে আমার গলায় গালে হাত ছোঁয়ালেন।আমি বিরক্ত নিয়ে হাত ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দিলাম।এহ এসেছেন আবার কেয়ার দেখাতে।কিন্তু এখন আর আমি এই আলগা পিরিত সহ্য করবো না।কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে বললাম

-“”চলে যান দয়া করে। ভালো লাগছে না কিছু।আমাকে কলেজে যেতে হবে। তাই প্লিজ যান আমার অনেক কাজ আছে।””

বলে নাক মুখ কুঁচকে ওনার যাওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম।ওনাকে যেতে না দেখে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখি চোখ কেমন লাল হয়ে গেছে।কপালের রগগুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।বুকে দুই হাত গুঁজে আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন

-“”তো যাও।তোমাকে আটকে রেখেছে কে?কিন্তু আমার সাথে যাবে!””

আমি খেয়াল করলাম উনি সিরিয়াস মুডে থাকার সময় “হেই হেই” করেন না।এছাড়া হঠাৎ ওনার এই রাগের মানে বুঝলাম না।কিছুটা দমে গিয়েও স্বাভাবিকভাবেই বললাম

-“”কেনো আপনার কথামতো চলবে নাকি?আমি যাবো না আপনার সাথে! নিজেই যেতে পারবো।লাগবে না আপনার ওই সিমপেথি!””

উনি বুক থেকে হাত নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমার সামনে দাড়িঁয়ে আমার চিবুক শক্ত করে চেপে ধরে শান্ত কন্ঠে বললেন

-“”হ্যা আমি যেটা বলবো সেটাই শুনবে তুমি।””

বুকের ভিতর ধুক করে উঠলো।ব্যাপার টা ভালো লাগছে না আমার।কেমন কেমন করছেন!যাই করুক আমি ওনার কথা কেনো শুনবো??আমি আমার মতো করে চলবো।রাগে চিৎকার করে ওনার বুকে ধাক্কা দিতে দিতে বললাম

-“”কেনো শুনবো আপনার কথা??হ্যা?কে হন আপনি আমার??কোথা থেকে উড়ে এসে আমার উপরে জোর খাটান!আর সেটা আমাকে মানতে হবে?আপনার কি উদ্যেশ আমি জানি না মনে করেছেন?সব জানি আমি।দূর হয়ে যান।দূর হন।আর কক্ষনো আমার সামনে আসবেন।তাহলে কিন্তু অবস্তা খারাপ হয়ে যাবে।!””

বলে ওনাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে দরজার বাইরে বের করে দিয়ে কোনোমতে ঠাস করে লাগিয়ে দিলাম।সারা গা জ্বলে যাচ্ছে।তঁবে অবাক হলাম ওনার এই শান্ত আর ছাড়াছাড়া ভাব দেখে।কিছুই বললেন না।তাতে আমার কোনো কিছু যায় আসে না।হুহ!””

_________________________

কলেজে পৌঁছে ক্যাম্পাসে বিল্ডিয়ের সিঁড়ির উপরে লাইন টু লাইন রিহা,উষা,তীব্র,সৌরভ আর রিজু ওদের বসে থাকতে দেখলাম।তাদের চেহারা দেখে এইটুকু উপলব্ধি করতে পারছি যে তারা খুব সিরিয়াস কোনো বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনায় মগ্ন। এর মধ্যে রিজুকে একটু বেশি চিন্তিত দেখাচ্ছে।আমি ব্যাপারটা বোঝার জন্য এগিয়ে গেলাম।গিয়ে প্রশ্ন করলাম

-“”কি করছিস রে তোরা??এতো গম্ভীর আর মনোযোগী হয়ে??তোদের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর থেকে এতো সিরিয়াস হওয়া ফেইস আমি এই পর্যন্ত দর্শন করি নি।ব্যাপার কি??””

সবাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো।যেন আমি বড় কোনো অপরাধ করেছি।কিছুটা কাচুমাচু হয়ে নিষ্পন্ন ভাব নিয়ে তাকালাম।রিহা বিরক্তি নিয়ে বললো

-“”ডিস্টার্ব করিস না তো।দিলি তো মনোযোগটা ভাঙিয়ে।ধুর তোর তো কাজই এইটা।””

সবাই আমাকে নিয়ে বেশ বিরক্ত বোধ করছে যা বুঝতে পারছি।যাহ তাদের এতো বিরক্ত করা বোধহয় ঠিক হয় নি।কিন্তু কৌতুহল টাও দমিয়ে রাখতে পারছি না।তাই বলেই দিলাম

-“”দেখ তোদের বিরক্ত করার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।কিন্তু হয়েছে টা কি??সেটা বলবি তো!””

তখনই রিজু আমার দিকে ছলছল চোখে তাকালো।তামাটে বর্ণের এই ছেলেটা যে আমার ছোটবেলার প্রিয় বন্ধুদের মধ্যেই একজন।তার এই চাহনি তে বুকটা কেঁপে উঠলো।যেন কত দুঃখ,কষ্ট আর বিষণ্ণতা জমে আছে সেই দৃষ্টিতে।সবসময় হাসিখুশি,লাফালাফি,ঝাপাঝাপি করতে থাকা সেই ছেলেটাকে আজ হঠাৎই অচেনা লাগছে।শুনেছি পুরুষেরা নাকি সহজে চোখেরজল ফেলে না।যখন ফেলে তখন সেটা সহ্য করা ভীষণ কষ্টকর হয়ে ওঠে।আমারও তাই হয়েছে।আমি রিজুর কাধে হাত রেখে তার পাশে বসে পড়লাম।চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করলাম

-“”কি হয়েছে??তোকে এরকম লাগছে কেন?তোর বড় ভাই আবার মেরেছে??””

এই প্রশ্নটা করার কারণ হলো সে মাঝে মাঝে একটু ধূমপান করে শখের বসে তো সেটা যখন তার ভাই বুঝতে পারে তখনই পিঠে অগনিত লাঠির বারি পড়ে।আজকেও হয়তো এমন কিছুই হয়েছে।তবুও রিজুর মুখ থেকে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুনতে চাইছি।রিজু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো

-“”না ভাইয়া কিছু করে নি।””

-“”তাহলে??””

পিছনে গোমড়া মুখো সবগুলোর দিকে তাকিয়ে আবার রিজুর দিকে তাকালাম।কেউ কিছুই বলছে না।-“”আরে হয়েছে টা কি??কেউ আমাকে কিচ্ছু বলছে না কেন??””

তখন সৌরভ মুখ খুললো -“”তোকে বলেছিলাম না!যে রিজু একটা মেয়েকে ভালোবাসে?সেই মেয়েটা রিজুকে ধোকা দিয়েছে।””

শুনে থমকে গেলাম।আজকাল চারপাশে এই ভালোবাসার খেলাই চলছে।কেউ মন থেকে ভালোবেসেও পূর্ণতা পায় না।পরিশেষে তাকে পেতে হয় প্রচন্ড কষ্ট,রাতে এক বিন্দু ঘুমানোর জন্য কিছু পিল,এক বুক হাহাকার আর বাঁচতে হয় সারাজীবন নিজের ভালোবাসার মানুষটার শূন্যতা এবং তার সাথে কাটানো কিছু মুহুূর্ত নিয়ে।আর অন্যদিকে যারা এই পবিত্র ভালোবাসার মিথ্যে আশা দেখিয়ে মাঝপথে সেই মানুষটার মন ভেঙে চুরমার করে দিয়ে চলে যায় তারা দিব্যি সুখে আছে।এটাই হয়তো এখন পৃথিবীর নিয়মে পরিণত হয়েছে।আমার দাদি বলতো :

“”জানোস?আগে কালে মানে আমাগো কালে মানুষ হেতোতা বুঝতো না।মাইনসের এতো লোভও ছিলো না।ওই সময় যে যারে একটু পছন্দ করতো এক্কেরে মন,কলিজা সবতা দিয়া।এট্টুও লোভ আছিলো না।মনের মানুষটারে এট্টু দেখার জন্য ছটফট করতো।স্কুল, কলেজ ফাঁকি দিয়া পলাইয়া পলাইয়া দেখতে যাইতো।কতো সুন্দর সুন্দর চিঠি লিখতো।মনের কবিতা দিয়া হৃদয়ের মানুষটার মন ভালা করতো।বিয়ার আগে এট্টু ছুয়াইয়াও দেখতো না।মাইয়ারা হের মনের পুরুষটার লইগ্গা কতো সুন্দর কইরা শাড়ি পইড়া,চুলের খোঁপায় মালা গুঁজতো,কপালে টিপ দিতো।তোগো মতো এতো আটা ময়দা লাগাইতো না।আর এহন বের হইলেই সব জায়গা খালি ঢলাঢলিই দেখা যায়।সব মাইয়ারা খালি মর্ডান মর্ডান করে।কি কি পোশাক পড়ে।একটু লজ্জা,শরম কিচ্ছু নাই।””

দাদি ঠিকই বলতো।এখন পৃথিবীটা খুব বেশিই আধুনিকতা খুজে বেড়ায়।আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রিজুর দিকে তাকালাম।সে মাথা নিচু করে দুই হাত দিয়ে চুল চেপে ধরে বসে রইলো।আমি তার
কাধ চেপে বললাম

-“”দেখ তোকে শান্তনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা আমার নেই।কিন্তু প্লিজ অন্তত ওই মেয়েটার বিরহে খাওয়া-দাওয়া,গোসল-পড়ালেখা এইসব ছেড়ে দেবদাস হয়ে বসে থাকিস না।””

রিজু আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।আমিও চোখেও তরলভাব অনুভব করছি।রিজু কাধ থেকে আমার হাত নামিয়ে নিজের হাতের মধ্যে আমার হাত নিয়ে বলতে লাগলো

-“”তুই বলতে পারিস রুহি!ও আমাকে এভাবে ধোকা কেনো দিলো??সবটুকু দিয়েই তো ওকে ভালোবেসেছিলাম।বিশ্বাস কর আমার ভালোবাসায় কোনো খাঁত ছিলো না।ও যখন আমাকে ভালোবাসেই না তখন কেনো আমাকে এই মিথ্যে আশা দেখালো বলতে পারিস??কেনো আমার হাতে হাত রেখে সারাজীবন একসাথে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলো??জানিস ও আমার কাছে একটা সোনার ব্রেসলেট আবদার করেছিলো। আমি সেটা পূরণ করার জন্য আমার ছোটবেলার ঘাম ঝাড়িয়ে কেনা প্রিয় সাইকেলটা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছিলাম।তখন ওর মনকাড়া হাসি দেখে বুকে এক অদ্ভুদ প্রশান্তি বয়ে গেছিলো।কিন্তু এখন প্রচন্ড জ্বালা করছে।জানিস রাতে ওকে সব জায়গায় খুঁজেছি।কিন্তু শেষে ওর ঘড়ে সেই চিঠিটা পড়ে সত্যি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।আমি আর পারছি না ওকে ছাড়া থাকতে।খুব কষ্ট হচ্ছে!””

রিজু থামলো।শ্বাস – প্রশ্বাস উচ্চ গতিতে উঠানামা করছে তার।কথা বলতে বলতে গলা ভেঙে এসেছে।চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু পানির কোণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।পিছনে রিহা কেঁদেই দিয়েছে।সবার সত্যিই খারাপ লাগছে কিন্তু কি করার।রিজুর কপালেই হয়তো এটা লিখা ছিলো।সৌরভ আমাকে চিঠিটা দিলো সেখানে লেখা আছে

____________________________________

অপ্রিয় রিজু,

দেখো তোমার সাথে আমার আর এই রিলেশনশিপ রাখার ইচ্ছা নেই।তোমাকে আমি কোনোদিন ভালোবাসি নি।শুধু টাইম পাস করার জন্য তোমার সাথে সময় কাটাতাম।আমার কাঙ্খিত জিনিসটা আমি পেয়ে গেছি।আমার মা-বাবা বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।আর আমি ওকেই বিয়ে করবো।ভালো থেকো রিজু।কপালে লেখা থাকলে হয়তো আবার দেখা হবে।এরপর হয়তো তুমি আমাকে ঘৃণা করবে।আমিও সেটাই চাই।হয়তো ভুলও বুঝবে।সারাজীবন এভাবেই হাসিখুশি থেকো।

ইতি
আরিয়া

_______________________________________

আরিয়া? মেয়েটার নামতো ক্লাসে শুনেছিলাম।কিন্তু দেখি নি।আর এই ভুল বোঝা কথাটার আগামাথা বুঝলাম না।ভুলই তো করেছে!আবার ভুল বোঝার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে??আমি নাক মুখ কুঁচকে রিজুর দিকে একবার তাকালাম।বেচারা সত্যিই ভালোবেসে ছ্যাঁকা খেয়েছে।আজকে হয়তো ক্লাসও করবে না।কিন্তু আমার ধারণা ভুল করে দিয়ে সবাই আমাকে ছাড়াই ক্লাসের উদ্যেশে পা বাড়ালো।সবাই আজকে রিজুকে একটু বেশিই গুরুত্ব দিচ্ছে।আমিও মুচকি হেসে ক্লাসে চলে গেলাম। কিন্তু আজকে সত্যি প্রচন্ড অবাক হলাম রিদ্রিশকে না দেখে।

_______________________________

বিকালের দিকটায় ছাদে দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে মনের সুখে হাতে পড়ে থাকা চুড়িতে ঝুনঝুন শব্দে তুলে নাচানাচি করছি।উদ্যেশ্য কেউকে দেখানোর জন্য নয়!নিজের মনের শান্তির জন্য।কয়েকদিন নিজের শরীরের উপর যা গেলো তারপর আর কি বলবো।কিন্তু আজকে আয়রানের সাথে ওইরকম বিহেভ করে একদিকে পৈশাচিক আনন্দও হচ্ছে অন্যদিকে কিছুটা মানে একটু একদম একটু খারাপ লাগছে।ব্যাপার না!ও আবার আসবে আমি নিশ্চিত।নাচতে নাচতে ক্লান্ত হয়ে রেলিং এর সাথে লাগানো অর্ধেক ওয়ালে বসে পড়লাম।এতোক্ষন যেভাবে নাচলাম এতে নির্ঘাত কেউ দেখলে আমাকে পাগল বলতো।ছোট বেলায় মায়ের সাথে পায়ের তালে তাল মিলিয়ে কত নাচ করেছি।নৃত্যশিল্প ছিলো যে আমার মা।কি সুন্দর পায়ে ঘুমুড় পড়ে নাচতো।মায়াবি সাজে তাকে এক অপরূপ রমণী দেখতে লাগতো।আমি লুকিয়ে দাড়িঁয়ে দেখতাম মা যখন একা একা নাচের প্র্যাকটিস করতো তখন বাবা পর্দার আড়ালে মাকে মুগ্ধ নয়নে দেখতো।তাদের মাঝে কত ভালোবাসা,বিশ্বাস আর একে অপরের প্রতি সম্মান ছিলো।আমি সেগুলো দেখে মুচকি মুচকি হাসতাম।মুহুর্তেই চোখে পানি চলে এলো।খুব কষ্ট হচ্ছে মা-বাবার জন্য।এই অনুভূতি কেউ বুঝবে না!বুঝবে শুধু তারা!যারা আমার মতো এতিম।আমি ফোস করে শ্বাস ফেলে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম।টিউশনির জন্য যেতে হবে।নয়তো আমার আর এ জীবনে ভাড়া দেওয়া হবে না।

টিউশনি করে ফেরার সময় ওই পুরোণ বাড়িটার দিকে চোখ পড়লো।দেখলেই কেমন গা ছমছম করে।রাস্তার সাথে লাগানো ওই কালো পুকুরটার উপর দিয়ে যে বিজ্র যেটা দিয়ে ওই বাড়িটাতো যাওয়া যায় সেটার উপর চোখ পড়তেই আত্না কেঁপে উঠলো।রক্ত??

Word no. – 2486

_______চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here