#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_51
—শুভ বিবাহবার্ষিকী।তুমি কি আবারো আমায় বিয়ে করবে জিদ ভাইয়া।সারা জীবনের জন্য আমার পাগলামো সহ্য করার জন্য তোমার পাগলীটাকে আবারো বিয়ে করবে?
ইশরার কথা ও কাজে জিদান স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।জিদান ফ্যালফ্যাল নয়নে ইশরার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।জিদানের মনে হচ্ছে তার হেলুসিয়েসন হচ্ছে।কেননা যেই মেয়েকে কাল রাতে এনিভার্সিরির উইস করাতে জিদানকে হাজারটা প্রশ্ন করে জিদানের কান ঝালাপালা করে দিয়েছে সেই মেয়ে এখন তাকে উইস করছে।তাও আবার এভাবে?
জিদানকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইশরা পুনরায় বলল……
—কি হল কথা বলছো না কেন?করবে না আমায় আবার বিয়ে?দিবে না আমায় সারা জীবন তোমার জ্বালানোর অধিকার।
আমি জানি আমি একটু পাগলাটে সভাবের।খুব জ্বালাই তোমার।কি করবো বল?তোমার পাশে থাকতে,তোমাকে আমার কথা বেশি বেশি মনে করানোর জন্যই তো আমার এই পাগলামো।আমার পাগলামোর উৎস তোমাতেই শুরু হয় এবং তোমাতেই শেষ।জানিনা কিভাবে তোমাকে জ্বালাতে জ্বালাতে তোমার মায়ায় বাধা পরে গেছি।হয়তো আমার সকল পাগলামো সহ্য করে,আমাকে বোঝ বলেই।ইশরা একটু চুপ থেকে বলল…..
—বাদ দাও সে সব কথা।এখন বল,আমায় বিয়ে করবে আবার?মনে রেখো,তুমি আমায় দ্বিতীয় বার বিয়ে সরি তৃতীয় বার বিয়ে করে তোমাকে জ্বালানোর অধিকার না দিলেও কিন্তু আমি তোমার পিছু ছাড়ছি না।সারাজীবন আমি তোমাকে জ্বালাবো।
শেষের কথাটা ইশরা গাল ফুলিয়ে বলল।
জিদান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে কাপাকাপা গলায় বলল……
—ইশু তুই ঠিক আছি?
ইশরা মলিন একটা হাসি দিয়ে বলল…..
—ঠিক না হয়ে কোথায় যাব বল।আল্লাহ আমাকে তোমার জন্য পুরোপুরি ঠিক না করলেও অনেকটা ঠিক করে দিয়েছে।আমি এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ।এতোদিন কি হয়েছে না হয়েছে সবটাই ইফুর থেকে জেনেছি।তুমি তো এমন ছিলে না জিদ ভাইয়া?তাহলে কেন এমন হয়ে গেলে?আমি না হয় তোমার জন্য পাগলা ছিলাম।পাগলামো করতাম।আমার রোগ নতুন করে কবে তোমায় আক্রান্ত করল?কেন আমার মত পাগলি একটা মেয়েকে এতো ভালোবাসো তুমি?আমি তো তোমাকে কষ্ট ছাড়া কিছুই দেই নি বল।আমার জন্য কতটা দিন তুমি তিলে তিলে কষ্ট,যন্ত্রণা পেয়েছো।আর আমি নিজে মরার মত পরে পরে শান্তিতে ঘুমিয়েছি।কেন তখন ঐ অবস্থায় ছেড়ে চলে গেলে না।তাহলে তো এতোটা কষ্ট পেতে হতো না তোমার।কেনই বা আমার জন্য নিজের পরিবার ছাড়লে তুমি?তুমি তো কারো অবাধ্য হও না।কেন করলে এসব?কেন তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো?আমি কি তোমার এতো ভালোবাসা পাবার যোগ্য বল?
কথাগুলো বলার সময় বার বার ইশরার গলা জরিয়ে যাচ্ছিল।সাথে চোখ দিয়ে পরছে নোনা জল।জিদান ইশরার সামনে হাটু গেড়ে বসে ইশরার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে ইশরার চোখের পানি মুখে দিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল……..
—একটা গল্প শুনবি ইশু।এক দুষ্টু পাখির গল্প।যে কিনা তার দুষ্টুমি দিয়ে এক শান্ত-শিষ্ঠ ছেলেকে তার প্রতি দূর্বল করেছে।ছেলেটি পাখিটির থেকে দূরে থাকার শত চেষ্টার পরে আস্তে আস্তে মনের পিঞ্জরে পাখিটাকে বন্দি করেছে।হয়তো পাখিটি আগে থেকেই তার ছিলো বলেই সে পাখিটার প্রতি বেশি দূর্বল হয়ে পেরেছিলো।জানিস ছেলেটি সব সময় পাখিটাকে আগলে রাখতো।ছেলেটার একটাই ভয় ছিলো যে, যদি পাখিটি ঊড়ে চলে যায় আর ফিরে না আশে তার কাছে।তখন সে কি করবে?তাই ছেলেটি শত বাধা বিপত্তির পরেও পাখিটাকে পিঞ্জর থেকে বের হতে দেয়নি।জানিস সেই পাখিটা কে?সেই পাখিটা হলি তুই।তুই হলি আমার সেই দুষ্টু পাখি।কেন ভালোবাসি সেটার উওর আমার কাছে নেই।কতটুকু ভালোবাসি সেটাও হয়তো জানি না।কিন্তু এতটুকু জানি তোকে আমার লাগবে।জীবনের শেষ নিশ্বাস পযর্ন্ত তোকে আমার পাশে আমার লাগবে।পারবি না তুই আমার সেই দুষ্টু পাখি হয়ে বাকিটা জীবন আমার পাশে থাকতে।
ইশরা কিছু না বলে জিদানর উপর ঝাপিয়ে পরে জিদানের গলা জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কান্না করতে লাগলো।একটা মেয়ের আর কি চাই?জীবনে চলার পথে এমন একজন ভালোবাসার মানুষ সাথে থাকলে সকল দুঃখ কষ্ট হাসি মুখে পার করে সামনের পথে এগিয়ে যাওয়া যায়।যা ইশরা পেয়ে গেছে।জিদানের চোখেও আজ পানি। এতোদিনের জমানো চোখের জল গুলো প্রিয় মানুষটাকে কাছে পেরে আজ আর আড়াল করতে পরেনি জিদান।
💦💦💦💦💦💦
ইশান স্টাডি রুমে বসে বই পড়ছে।হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠতেই ফোনের স্কিনে তুশির নামটা দেখে মুখে হাসি ঝুলিয়ে ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলল…….
—কে বলছেন?
তুশি রাগি গলায় বলল…….
—দিনের মধ্যে ১৪বার এই নাম্বারে ফোন করার পর কোন মুখে জিগ্যেস করেন কে বলছেন?
ইশান তুশিকে রাগানোর জন্য বলল……
—সরি।কে চিনতে পারলাম না।
ইশানের কথায় তুশি তেলে বেগুনে জ্বলে বলল…….
—রাখেন আপনার চিনা জানা।আমি এখন পরিচয় করানোর মুডে নাই।আমার কথা শুনেন,বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
—ওহ্ ক্রংগেচুলেশন।ফাইনালি আপনি বিয়ে করছেন।তা বিয়ের দাওয়াত দিতেই কি ফোন করেছেন?
ইশানের এমন সাভাবিক কথায় তুশির চোখে পানি চলে এল।তুশি কাপাকাপা গলায় বলল…….
—আপনার কি তাই মনে হচ্ছে?
—আমার মনে হওয়া না হওয়াতে তো কিছু নেই।তা বিয়েটা করে? সপরিবার নিয়ে বিয়েতে আসবো নাকি একা?
তুশি এমনিই রেগে ছিলো।ইশান এর খাপছাড়া কথায় তার রাগটা আরো বেড়ে গেলো। তুশির চোখের জলটা মুছে রাগি গলায় বলল…..
—আইসা দেখিস আমার বিয়ার তোর ঠেং ভেঙে হাতে ধরাইয়া দিমু।শালা মেয়েবাজ।এতোদিন আমার পিছে মৌ মাছির মত ভ্যান ভ্যান কইরা এখন আমার বিয়া খাওনের জন্য উইঠা পইরা লাগছে।আসিস তুই আমার বিয়ায়।তোরে ডেকচিতে তেল মশলা দিয়া ফাই করে সেই ফাই আমি কুত্তারে খাওয়ামু।শালা জীবনে যদি তোরে আমার সামনে দেখি না তাহলে ভুলে যামু তুই আমার স্যার আছিলি।
কথাটা বলেই তুশি ফট করে কল কেটে দিয়ে ইশফার নাম্বারে কর করলো।ইশফাকে তার ভাইয়ের গুনগান শোনানোর জন্য।
এদিকে ইশান ফোন হাতে নিয়ে বোকার মত বসে থেকে বলল…..
—এটা কি হল?বিনা ডিটারজেন্টেই আমায় ধুয়ে দিল।মুখের কি ভাষা বাবা।দেখতে হবে না ফ্রেন্ডটা কার।
💦💦💦💦💦💦
তুশি ইশফার নাম্বারে একের পর এক কর করেই যাচ্ছে।বাব বাব নাম্বার ওয়েটিং দেখাচ্ছে।তার পরেও সে হাল ছাড়ছে না।ফোনের সাথে গুতাগুতি করেই চলেছে সে।আধা ঘন্টা পর ইশফার নাম্বারে কল ঢুকল।ইশফা কল রিসিভ করে কিছু বলার আগেই তুশি তেজি গলায় বলল……..
—কুত্তী কই মরতে গেছিলি?ফোন ধরোছ না কেন?কত বার কল দিছি দেখছোস?ফোন ওয়েটিং দেখায় ক্যান?এতো ফোনে কার লগে কথা।
ইশফা হাই তুলে বলল…….
—জামাই এর লগেই কথা কওনের সময় পাই না আবার অন্য কার লগে কমু।
তুশি ঝাড়ি মেরে বলল…….
—রাখ তোর জামাই।আমার কথা শোন, তোরে কইয়া দিলাম তোর ঐ মেয়েবাজ ভাইরে যদি আমার সামনে পাই তারে যে কি করুম আমি নিজেও কইতে পারি না।পরে কিন্তু আমারে কিছু কইতে পারবি না আগেই কইয়া রাখলাম।
—মিটার এমন গরম হইছে ক্যান?কি করছে আমার ভাই।
তুশি ইশফাকে কাদো কাদো গলায় সব বলতেই ইশফা জোরে জোরে হাসতে লাগলো।ইশফার হাসির শব্দ শুনে তুশি রগ করে ফোন কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে বসে রইল।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_52
উদাস মনে বেলকনিতে বসে রয়েছে তুশি।কাল রাতে ইশফার সাথে রাগ করে ফোন অফ করার পর এখন অব্দি ফোন অন করেনি।তুশি আজ সারাদিন নিজেকে রুমের মধ্যেই বন্দি করে রেখেছে।না ঠিক মত খাওয়া-দাওয়া করেছে নাই বা কারো সাথে ভালো মত দুটো কথা বলেছে।
—কিরে কুত্তী।তুই দেখি আমার ভাই এর বিরহে দেবদাসী হয়ে বইসা রইছোস।
কারো কথার আওয়াজ পেয়ে তুশি ঘাড় ঘুড়িয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখে ইশফা,ইশরা মুখে লম্বা একটা হাসি ঝুলিয়ে বেলকনির দরজার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে।তুশি ওদের দেখে মনে মনে খুশি হলেও কথাটা শুনে মুখের মধ্যে বিরক্ত ভাব এনে বলল……
—আমার এতো খারাপ সময় আহে নাই যে,ঐ মেয়েবাজটার লিগা দেবদাসী হইয়া যাম।
ইশরা হাসতে হাসতে বলল……
—তা তো দেখতেই পাইতাছি।
তুশি রাগি গলায় বলল……
—ইরু মাথা-মুথা এমনেই গরম আছে খি খি বন্ধ কর।নাইলে কিন্তু একেবারে তোর দাত ভাঙুম।
ইশফা অবার হওয়ার ভান করে বলল…..
—হায় আল্লাহ্!দেখ ইরু দেখ!আমরা আমাদের ভাই এর জন্য কেমন মেয়ে পছন্দ করেছি।যে কিনা বিয়ের আগেই ননদের দাত ভাঙার চিন্তা করছে।
তুশি ইশফার হাতে চাপড় মেরে বলল…..
—কুত্তী ঢং এর প্যাচার পারোনের লিগা আইছোস তুই।কান খুইলা শুইনা রাখ,তোর ঐ মেয়েবাজ ভাইরে আমি জীবনেও বিয়া করুম না।শালারে একবার হাতের কাছে পাইলে খবর আছে।কি ভাবছে কি? আমি তারে এমনে এমনেই ছাইড়া দিমু।
ইশফা কান চুলকিয়ে বলল…..
—পুরান ডায়লগ।নতুন কিছু ট্রাই কর।
তুশি,ইশফার দিকে তেড়ে যেতে নিলেই ইশফা লাফ দিয়ে অন্য দিকে সরে গিয়ে বলল…….
—পারো তো তুমি শুধু আমার লগেই।ভাইয়ার সামনে গেলেই তো তোমার সব হাওয়া ফুস হয়ে যায়।পরলে যা ভাইয়ার সাথে গিয়া লাগ।তখন দেখুমনে কত পারো।
তুশি দাতে দাত চেপে বলল……
—শয়তান মাইয়া বাইর হ আমার বাসা থিকা।ভাইয়ার চামচাগিরি করতে আইছে চামচি।
ইশফাঃভাই এর হইয়া চামচাগিরি করতে আসি নাই।ভাইরে সাথে কইরা নিয়াই আসছি এইটা দেখাইতে যে কোন বজ্জাত মাইয়ারে আমার মাছুম ভাইটা পছন্দ করছে।
তুশি চেচিয়ে বলল……
—কিহহহহ?তুই তোর ভাইরে আমার বাসায় আনছোস?
ইশফাঃহ বিশ্বাস না হইলে দেইখা আয় তোগো ড্রয়িং রুমে বইসা রইছে।
তুশিঃতুই ঢপ মারতাছোস আমার সাথে না?
ইশরাঃঢপ মারতে যাইবো ক্যান।সত্যিই ভাইয়া আসছে।আমাদের কথা বিশ্বাস না হইলে নিজে গিয়া দেইখা নে।
তুশি ইশফা,ইশরার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল…..
—যদি আমারে ঢপ দিছোত তাহলে তগো খবর আছে।
কথাটা বলেই তুশি বড় বড় কদম ফেলে রুমের বাহিরে চলে গেলো।
তুশিদের ড্রয়িং রুমের সোফার এক কোনে চুপচাপ বসে রয়েছে ইশান।ইশান,ইশফা আর ইশরা অনেকক্ষন আগেই তুশিদের বাসায় এসেছে।তুশি নিজের রুমে থাকায় বলতেও পারেনি বাসায় কেউ এসেছে কিনা।ইশফা,ইশরা তুশির মায়ের সাথে কুশন বিনয় করে চলে গেছে তুশির রুমে।ইশফারা যাওয়ার পর তুশির মা ইশানকে একা বসিয়ে রেখে নাস্তার ব্যবস্থা করতে গেছে।এদিকে বেচারা ইশান একা একা বসে বিরক্ত হচ্ছে।হুট করে তুশি ইশান এর সামনে তেড়ে এসে চেচিয়ে বলল……
—ঐ মিঞা আপনার সাহস হইলো কেমনে আমার বাসার আসনের।ভালোয় ভালোয় কইতাছি তাড়াতাড়ি বাসা থিকা বের হন নাইলে কিন্তু আপনার কপালে শনি আছে।
ইশানঃতুমি এতো রাগছো কেন?মাথা ঠান্ডা করো।আমরা বসে কথা বলি।
তুশি আরো রাগি গলায় চেচিয়ে বলল…..
—রাখ তোর কথা।তোর কথার গুষ্ঠি কিলাই।বহুত কথা কইয়া ফালাইছোস।আর কোন কথা কওনের চেষ্টা করলে এমন ব্যবস্থা করুম জীবনে কথাই বলতে পারবি না।
তুশির মা তুশির চেচামেচির শব্দ শুনে কিচেন থেকে তড়িঘড়ি ড্রয়িং রুমে এসে মেয়ের এমন ব্যবহার দেখে থ’হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।
ইশফা,ইশরা দূরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মিট মিট করে হাসছে।
তুশিঃবইসা রইছেন ক্যান?কথা কানে যায় না।বাইর হন আমার বাসা থেকে।(ইশফাকে উদ্দেশ্যে করে)ইফু তোর ভাইরে বের হতে বল নাইলে কিন্তু এরে উওম মধ্যম দিয়ে বাসা থেকে বের করবো।
তুশির মা তুশিকে ধমক দিয়ে বলল…..
—এসব কেমন ব্যবহার তুশি?তুই জামাই এর সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন?এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে?
তুশি এতোক্ষন রাগের বসে ভুলেই গিয়েছিলো তা মা জননী যে বাসায় আছে।তুশি তার মায়ের বকাটাকে সাইডে রেখে বলল……
—তুমি কেমন মা গো।যারে না তারেই জামাই জামাই করো।এইটা আবার তোমার কোন মেয়ের জামাই?
তুশির মা তুশিকে চোখ রাঙিয়ে ইশানকে উদ্দেশ্য করে বলল…..
—বাবা এর কথায় তুশি কিছু মনে করো না।জানোই তো এ কেমন।আসলে বিয়ে ঠিক হয়েছে শোনার পর থেকেই একটু অন্য রকম হয়ে গেছে।আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।বাকিটা তুমি সামলে নিও।
কথাটা বলে তুশির মা কিচেনে চলে গেলো।
তুশির বোকার মত তার মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল……
—হচ্ছে টা কি এখানে?আমার মায়ের মুখে এমন খৈ ফুটটাছে কেন?আবার এরে বলতাছে আমারে সামলাইয়া নিতে?
ইশফা তুশির মাথায় গাট্টা মেরে বলল…..
—গাধী,মাথামোটা ভাইয়ার সাথেই তোর বিয়ে ঠিক হইছে।ভাইয়া তোর কথা ফুপ্পিকে জানানোর পর তারা রাজি হয়ে গেছে।আমরা আজ তোর রিং এর মাপ নিতেই এখানে এসেছি।
ইশফার কথা শুনে মুহূর্তেই তুশির রাগি ভাবটা গায়েব হয়ে গেল।তুশি খুশি হয়ে বলল……
—সত্যি😍এই হনুমানের সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হইছে।আমি আরো কত কি ভাবতাছি বিয়ে ভাঙার জন্য।কথাটা বলেই তুশি জিভ কাটল।
ইশরা টিটকারি মেরে বলল……
—বাহ বাহ এই মাইয়া দেখি আমার ভাইরে বিয়া করার জন্য পাগল হইয়া রইছে।তা বলছি কি কালকে ভাইয়ারে কি বলছিলি মনে আছে তো?বিয়ের দিন আবার আমার ভাইয়ের ঠাৎ ভাঙার চিন্তা ভাবনা করবি না তো?
তুশি আড় চোখে ইশান দিকে তাকিয়ে দেখে ইশান তার দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসছে।তুশির নিজের করা কাজের কথা মনে পরতেই ডানে বামে না দেখে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।তুশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সবাই হাসতে লাগল।
💦💦💦💦💦💦
ইশরা সোফায় গাল ফুলিয়ে বসে রয়েছে।ইশফা এসে ইশরার গা ঘেসে বসে ইশরাকে কাধ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল…….
—কিরে এমন মুখের মধ্যে আপেল ঢুকিয়ে বসে রয়েছিস কেন?
ইশরা কড়া গলায় বলল……
—কেন আবার তোর ভাইয়ের জন্য।শুধু শুধু আমায় বকে।আমার বেলায় রাগ যেন নাকের আগাই থাকে।খচ্চর একটা।আইসা নেক বাসায় দেখিস তারে যদি ব্যাঙ এর মত না নাচাইছি তাহলে আমার নামও ইশরা খান না।হুহ…..
ইশফা,ইশরার দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল…..
—কি করেছিস তুই?ভাইয়া বকেছে কেন?
ইশরা হালকা চেচিয়ে বলল……
—কিছুই করিনাই আমি।এমনিতেই রাগতে পারে তার আবার কারন লাগে নাকি।
—তোর কথা বিশ্বাস করতে যামু কোন দুঃখে।তুই নিশ্চই কিছু করছোস।তা না হলে ভাইয়া কখনোই শুধু শুধু রাগ করে না।নিজে কি করছোস সেটা আগে বল।
ইশরা গাল ফুলিয়ে বলল…….
—দুপুরের ঔষধের কথা ভুলে গেছিলাম তাই আমার ইচ্ছে মত ফোন করে বকেছে।
ইশফা রাগ দেখিয়ে বলল……
—ঠিকই আছে।বাসায় আসলে বলবো কানের নিচে দুটো দিতে।কয়বার করে তোরে ঔষধের কথা মনে করাইয়া দিছি তারপরেও কেমনে ভুলোস তুই।
ইশরা,ইশফার দিকে কুশন ছুড়ে মেরে বলল……
—এখন আবার তুই শুরু হইস না।এমনিই সারাদিন ভাইয়ার বকা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যায়।পাইছো তো ভোলাভালা একজন।পুরাই মাটির মানুষ।আমারটার মত রাগি মানুষ পাইলে বুঝতা কত ধানে কত চাল।
ইশরার কথা শুনে ইশফা কাশতে কাশতে বলল……
—সে আর মাটির মানুষ।ও মাই আল্লাহ্।তুমি যাকে মাটির মানুষ বলছো না তার রাগটা যদি তুমি দেখতে তাহলে বুঝতে।
—কেন কেন ভাইয়া কি অনেক রাগি?
—রাগি মানে। তার যেই রাগি রুপ দেখেছি আল্লাহ্ ভাবতেই আমার ভয়ে হাত পা শিরশির করে।আল্লাহ্ যেন দ্বিতীয় বার তার ঐ রুপ না দেখায়।
ফ্লাসব্যাক……..
সেদিন ভার্সিটির ছাদে ইশফা সেন্সলেস হওয়াতে সবাই ইশফাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরায় এলি সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।ইশফা অসুস্থ থাকায় সেদিন সান দাতে দাত চেপে নিজের রাগটাকে কন্টল করলেও পরের দিন সান,ইশফা আর তার বন্ধুদের নিয়ে সোজা এলির বাসায় চলে যায়।এলি নিজের বাসায় সানদের কে দেখে প্রথমে ঘাবরে গেলেও পরে নিজের বাসায় আছে ভেবে জোর গলায় বলল……
—হাউ ডেয়ার ইউ।তোমাদের সাহস হল কি করে আমার বাসায় আসার।এখনি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাও।তা না হলে তোমাদের কে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের…..।
এলি পুরো কথা শেষ করার আগেই তার গালে এক থাপ্পড় পরল।এলি গালে হাত দিয়ে রেগে দ্বিতীয় বার কিছু বলার আগেই সান তার গালে আরেকটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়।সান এর কাজে এলি হকচকিয়ে যায়।কেননা এলি ভাবতেও পারেনি সান তার বাসায় এসে এমন কিছু করবে।এলির মা তেড়ে এসে রাগি গলায় বলল…….
—তোমার সাহস তো কম না।তুমি আমার বাসায় এসে আমারই সামনে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলছো।
সান এর চেহারায় রাগের আভা ফুটে উঠেছে।চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে রয়েছে।মনে হচ্ছে সান তার চোখ দিয়েই কাউকে ভস্ম করে দিবে।সান উচু আওয়াজে বলল…….
—আপনার মেয়ের ভাগ্য ভালো আমি এখনো ওকে জিন্দা রেখেছি।ও যদি মেয়ে না হত তাহলে আমি ওকে জ্যান্ত পুতে দিতাম।ওর সাহস হয় কি করে আমার কলিজায় হাত দেওয়ার।ইচ্ছে তো করছে ওকে……।
সান এলির দিকে রাগি চোখে তাকাতেই এলি ভয়ে সড়সড় হয়ে তার মা এর পিছনে গিয়ে দাড়ায়।
এলির মাঃকি করেছে ও।
হেনা এগিয়ে এসে এলির মাকে সব বলতেই এলি মরা কান্না জুরে দিয়ে বলল…..
—মম এসব মিথ্যে।এরা সবাই আমার নামে মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে।আমি এসব কিছুই করিনি।
এলির কথায় যেন সান এর রাগটা আরো বেড়ে গেলো।সান পাশের সোফায় লাঠি মেরে চেচিয়ে বলল……..
—মিথ্যে বলার চেষ্টা করবি তো খুন করে ফেলবো।তুই মেয়ে দেখে বার বার আমি তোকে সুধরে যাওয়ার চান্স দিয়েছি।আসলে তুই সুধরানোর মেয়েই না।তুই ভালো কথায় ভালো হবি না।তাই তোর জন্য অন্য ব্যবস্থা করেছি।
সান এর গর্জনে সবাই ভয়ে জড়সড় হয়ে গিয়েছিলো।সেদিন সবাই যেন নতুন এক সানকে দেখেছে।যার চোখে মুখে ছিলো ক্রধের আগুন।সেদিন সান এলির মায়ের শত রিকুয়েস্ট উপেক্ষা করে এলিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।হেনা,ইশফা, এলিকে পুলিশে দিতে নিষেধ করতেই তাদের কে সান রাম ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখে।সান যেন সেদিন ধরা ছোয়ার বাহিরে চলে গিয়েছিলো।সান,এলিকে পুলিশে দিয়েও ক্ষান্ত হয়নি।জেল থেকে যেন সহজে ছাড়া না পায় তার ব্যবস্থাও করে।সাথে সুন্দর করে এলিকে খাতির দারি করার ব্যবস্থা তো আছেই।
ইশফার আজও সান এর সেই রাগের কথা মনে পরতেই গা শিউরে উঠে।মনে মনে প্রার্থনা করে যাতে দ্বিতীয় বার যেন সান এর সেই রাগের সাথে সাক্ষাত করতে না হয়।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_53
ঘুমের ঘরে দু’বোনের চেচামেচিতে ঘুম ছুটে গেলো মিসেস খান এর।বাসায় ডাকাত পরার চেচামেচি শুনে মাথায় শাড়ির আচল টেনে রুম থেকে বের হতেই তার চোখ ছানাবানা হয়ে গেলো।কেননা ইশফা আর ইশরা দুজনই একটা টেডিবিয়ারের জন্য গলায় পারা দিয়ে ঝগড়া করছে।দুজনই টেডিবিয়ার এর দু’ মাথা ধরে টানাটানি করছে।মিসেস খান ওদের ধমক দিয়ে বলল……..
—রাত বেরাতে কি শুরু করেছো তোমরা?এতো বড় হয়েও বাচ্চাদের মত সামান্য একটা টেডিবিয়ার নিয়ে ঝগড়া কেন করছো?
ইশফা নালিশের শুরে বলল……
—মা এটা আমার পুচকো ইরুকে ছেড়ে দিতে বল।
ইশরা টেডিবিয়ার টা ইশফার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে চেয়ে চেচিয়ে বলল……
—না মা!এটা আমার পুচকো।ওরটা ও ফেলে দিয়ে এখন আমারটায় ভাগ বসাচ্ছে।
ইশফাঃনা মা ও মিথ্যে বলছে।এটা আমার পুচকো।
ইশরাঃতুই মিথ্যাবাদী আমি না।এটা আমার পুচকো।
ইশফা টেডিবায়ারটা টান দিয়ে বলল….
—এটা আমার।
ইশরা নিজের দিকে টেডিবিয়ারটা টান দিয়ে বলল…….
—না এটা আমার।
দুবোনের বাচ্চাদের মত ঝগড়া দেখে মিসেস খান ধমক দিয়ে বলল……..
—চুপ একদম চুপ।একটা কথাও বলবে না।ফাজিল মেয়েরা দিনদিন বড় হচ্ছে আর বাদর হচ্ছে।বড় হয়ে গেছে বিয়ে হয়ে গেছে এখনো বাচ্চাদের মত সামান্য একটা পুতুল নিয়ে যদি ঝগড়া করতে লোকে শুনে তাহলে কি বলবে?
কথাটা বলে মিসেস খান নিজের রুমের চলে যেতে নিয়ে পুনরায় ফিরে এসে দুজনের হাত থেকে টেডিবিয়ারটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল……
—এটাকে এখন আমি চুলোয় দিব।না থাকবে তোদের পুতুল না থাকবে কোন ঝামেলা।
ইশফা,ইশরা চুল টান দিয়ে বলল……
—তোর জন্য আজ মা পুচকো কে মারতে চাচ্ছে।
ইশরা,ইশফার চুল টান দিয়ে বলল…….
—আমার জন্য না তোর জন্য।তুই তো ষাড়ের মত চেচাচ্ছিলি।তোকে আমি……
এই বলেই আবার শুরু হয়ে গেছো দু’জনের মারামারি।মিসেস খান ওদের রাম ধমক দিয়ে বলল…..
—চুপ।আবার শুরু করেছিস?আর একটা কথা বলবি তো দুজনকে এখন বাহিরে নিয়ে রেখে আসবো।সাথে তোদের সব পুতুল চুলায় দিব।
মিসেস খান ওদের বকতে বকতে কিচেনের দিকে পা বাড়ালেই ইশফা,ইশরা দুজন একসাথে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়ে বলল…….
—মা প্লিজ পুচকোকে মেরো না আমরা প্রমিস করছি আর ঝগড়া করবো না।
মিসেস খান ওদের দিকে ঘুড়ে রাগি গলায় বলল……
—ঐ তোদের কান্না বন্ধ কর।তোদের এই কান্নায়ও আজ কিছু হবে না।তোদের জন্য আমার সাধের ঘুম নষ্ট হয়েছে।
—মেয়েদের জন্য তোমার এক রাতের ঘুম নষ্ট হয়েছে আর তোমাকে বিয়ে করে যে আমার সারা জীবনের ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে।
পাশের রুম থেকে বের হয়ে মিঃ খান কথাটা বলল।মিঃ খান এর কথা শুনে মিসেস খান তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল…..
—তুমি!তুমি কখন এসেছো?এই মাত্র কি বললে?আবার বল তো।
মিঃখানঃযা শুনেছো তাই তো বলেছি।
মিসেস খান চোখ রাঙিয়ে বলল……
—তুমি আমাকে এই কথা বলতে পারলে?
মিঃখানঃপারলাম দেখেই তো বললাম।
মুহূর্তের মধ্যে মিসেস খানের চোখ জলে ভরে উঠল।ছলছল চোখে মিঃখান এর দিকে তাকিয়ে থেকে কোন কথা না বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতে নিলেই মিঃখান মিসেস খান এর সামনে গিয়ে পথ আটকিয়ে দাড়িয়ে একটা ছোট বক্স বাড়িয়ে দিয়ে বলল…….
—শুভ বিবাহ বার্ষিকী।এই দিনে কান্না করতে করতেই তো আমার ঘরে এসেছিলে।আমি কিন্তু তোমার ঐ কান্নারত চেহারা দেখেই ঘায়েল হয়ে গিয়েছিলাম।তাই তো আজও সেই কান্নারত চেহারা দেখার জন্য একটু বৃথা চেষ্টা করলাম।তুমি জানো তোমার ঐ……।
মিঃখান কে আর কিছু বলতে না দিয়ে মিসেস খান তার হাতে চাপড় মেরে নাক টেনে বলল……
—কি শুরু করেছো তুমি।বয়সের সাথে সাথে চোখও কি গেছে নাকি তোমার।মেয়েরা যে সামনে আছে দেখতে পাওনা?
মিঃখান কিছু না বলে হাসতে লাগলো।ইশফা ইশরা সামনে এসে দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলল…….
—শুভ বিবাহ বার্ষিকী।
মিসেস খান মুচকি হেসে মেয়েদের জড়িয়ে ধরে বলল…….
—পাগলগুলো।
—উহু উহু এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না মা।আমরাও কিন্তু এখানে আছি।আপনি আমাদের সামনে ওদের একা আদর করছেন এটা ঘোর অন্যায়।
কথাটা শুনে মিসেস খান ওদের ছেড়ে ঘুড়ে দাড়াতেই দেখে সান ফুলের তোড়া নিয়ে ইশফাদের রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে।মিসেস খান অবাক হয়ে বলল…….
—বাবা তুমি এখানে?
সান মিস্টি হেসে মিসেস খান এর সামনে এসে ফুলের তোড়া বাড়িয়ে দিয়ে বলল……
—শুভ বিবাহ বার্ষিকী।
মিসেস খান হাসি মুখে ফুলের তোড়াটা নিয়ে বলল……
—তুমি কখন এসেছো?
—মামী শুধু এ আসেনি।আমরাও এসেছি।
একে একে ইশান,তুশি,সিনথিয়া,জিদান বের হয়ে তাদের উইস করল।
মিসেস খান মিঃখান ও জিদানের দিকে দিকে তাকিয়ে বলল……..
—এই আপনাদের জরুরি কাজ।যার জন্য আপনারা রাতে বাসায় ফিরতে পারবেন না?
মিঃখান,জিদান কিছু না বলে মুচকি হাসলো।
মিসেস খান মিঃখান কে চোখ রাঙিয়ে ফিসফিস করে বলল…….
—তুমি কি গো হ্যা?সবাই যেমন তেমন মেয়েদের জামাই এর সামনে তুমি…..?
মিঃখানঃতাতে কি হয়েছে।মেয়ে আমাদের মেয়ের জামাইও আমাদের।মেয়ের জামাইরাও একটু কিছু শিখুক,জানুক।
মিসেস খান চোখ রাঙাতেই মিঃঅন্য দিকে তাকালো।জিদান সেটা দেখে মিটমিট করে হেসে বলল…….
—ছোট মা চাচ্চু আমাদের আইডল।এখানকার সবাই জানি চাচ্চু তোমাকে কত ভালোবাসে।তাই শুধু শুধু চাচ্চুকে আর কিছু বল না।
মিসেস খান জিদান কে হাত দেখিয়ে বলল….
—মাইর লাগাবো তোমায়।এগুলোর সাথে থাকতে থাকতে তুমিও দিন দিন বাদর হয়ে যাচ্ছ।
ইশরা ভেঙচি কেটে বলল…….
—এ আবার সাধু ছিলো কবে।এতো শুরু থেকেই বাদর।শুধু একটু বড়দের সামনে ভালো সাজার নাটক করত।
জিদানঃছোট মা তোমার মেয়েকে কিছু বলবে?দেখো ও আমায় একটু সম্মান দেয় না।
ইশরাঃআপনি কে ভাই?যে আপনাকে সম্মান দিবো?
ইশরার কথা শুনে সবাই মিটমিট করে হাসতে লাগলো।
জিদান ইশরাকে চোখ রাঙাতেই ইশরা ভেঙচি কেটে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল।
সিনথিয়াঃঝগড়া ঝাটি পরে।তোমরা কি একটা জিনিস লক্ষ করেছো?গত মাসে ইশরা আপুর এনিভার্সিরি ছিলো।তার কিছুদিন পরে আঙ্কেল আন্টির।আবার সামনের মাসে ভাইয়া আর ভাবিরটা আসছে।কিছু দিনের ব্যবধানে তিনজনের এনিভার্সিরি একসাথে।ওয়াও তিন তিনটা এনিভার্সিরির পার্টির দাওয়াত একসাথে😍
ইশান তুশির দিকে এক পলক তাকিয়ে মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলল……
—চিন্তা করো না আপু আরো একটা দাওয়াত ও পাবে।মামা আমার বিয়ের ডেটটাও এর মধ্যেই ঠিক।কথায় আছে না, মামা ভাগনে যেখানে আপদ নাই সেখানে।তাই তো তোমার পিছে পিছে থাকতে চাচ্ছি।
মিঃখান ইশান এর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাতেই ইশান আমতা আমতা করে বলল…..
— না মানে বলছিলাম কি, বিয়ে তো ঠিক হয়েই আছে ডেটটা একটু সামনে নিয়ে আসো তাহলেই তো হয়।
ইশান এর কথা শুনে সবাই মিটমিট করে হাসতে লাগলো।তুশি সবার অগোচরে ইশানকে চোখ রাঙিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।
মিঃখান হাসতে হাসতে বলল……
—সিনথিয়া মামুমি যদি তিন তিনতে এনিভার্সিরির দাওয়াত একসাথে পাও তাহলে কেমন হবে?
সিনথিয়াঃতাহলে তো আরো ভালো হবে আঙ্কেল।কিন্তু কিভাবে….?একেক জনের টা তো একেক দিন।
মিঃখানঃআমরা বড়রা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।সান,জিদান আর ইশান এর বিয়ে একসাথে ধুমধাম করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত।শুধু ওদের মতামত বাকি।কি বল তোমরা আমরা কি কথাবার্তা সামনে বাড়াবো…..?
মিঃখান এর কথা শুনে সবাই চুপ করে দাড়িয়ে রইল।কেউ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে তো কেউ মাথা চুলকাচ্ছে।তুশি তো সেই যে মাথা নিচু করেছে আর মাথাই তুলেনি।সিনথিয়া চেচিয়ে বলল……
—ইয়াহু বহুত মজা হবে।তিন তিনতে বিয়ে একসাথে।আমি তো অনেক একসাইটেড।আঙ্কেল নির্রবতাই সম্মতির লক্ষন।দুলহা-দুলহানরা রাজি।ডাকেন আঙ্কেল কাজি।
💦💦💦💦💦💦
ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে কথা বলছে সান,ইশফা।ইশফার মুখে যেন হাসির ঝিলিক লেগেই রয়েছে।সান বুকে হাত বেধে রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে ইশফার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তার বাঘিনীর হাসিখুশি মুখটার দিকে।
—আজ তোমায় খুব খুশি মনে হচ্ছে।
সান এর কথা শুনে ইশফা ঠোটের কোনে হাসির রেখা টেনে বলল…….
—আজ আমি খুব খুব খুশি।কতদিন পর আজ সবাই একসাথে খুশির কিছুটা সময় কাটালাম।এতোদিন পর সবাইকে প্রান খুলে হাসতে দেখে কি যে খুশি লাগছে আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না।পরিবারের সাথে হাসিখুশির কিছুটা সময় কাটানো যে কতটা আনন্দের সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না।
—বাবা,মাকে খুব ভালোবাসে তাই না।
ইশফা মুচকি হেসে বলল……
—খুব।জানেন আব্বু এখনো ইচ্ছে করে মা কে এটা সেটা বলে রাগিয়ে দেয়।আবার সরি টরি বলে মা এর রাগ ভাঙায়।যতক্ষন তারা একসাথে থাকে ততক্ষন তাদের ছোট ছোট খুনসুটি চলতেই থাকে। তাদের তো আমরা দু’বোন মিলে স্পেশাল নাম দিয়েছি টম এন্ড জেরি।
ইশফা রেলিং এর উপর হাত রেখে বলল…..
—আমার বাবার অতো টাকা নেই।তার পরেও সে টাকার পিছে কখনো ছুটেনি।সব সময় আমাদের সময় দিয়েছে।কখনো কোন সময় আমি দেখিনি বাবা মাকে অবহেলা করেছে।মা কেও দেখেছি সব সময় সব পরিস্থিতিতে বাবার পাশে থাকতে।আমার বাবা আমাদের দামি দামি সব কিছু দিতে না পারলেও মন-প্রান ভরে ভালোবাসা দিয়েছে।আর সেটাই আমাদের কাছে বেষ্ট পাওয়া।টাকা-পয়সা তো আসবে যাবে কিন্তু বাবা,মায়ের ভালোবাসা?সেটা কয়জন সন্তান এর ভাগ্যে জুটে।আপনার কাছে একটাই অনুরোধ কখনো টাকার পিছে ছুটতে গিয়ে আমাকে অবহেলা করবেন না।দামি খাবার,দামি কাপড় আমার না হলেও চলবে কিন্তু আপনার অবহেলা সেটা সহ্য হবে না।যেমন আছেন সব সময় এমনি থাকবেন প্লিজ।আমার ভদ্র,রাগি সূর্য হয়ে।
সান,ইশফার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল……
—তুমি যদি সব সময় আমার বাঘিনী হয়ে থাকো তাহলে আমিও তোমার সূর্য হয়ে থাকবো।কি থাকবে তো?
ইশফা,সান এর হাতে হাত রেখে মুচকি হেসে বলল…….
—ইনশাআল্লাহ।
সান মুচকি হেসে ইশফার হাতের উপর নিজের হাত রেখে বলল…….
—ইনশাআল্লাহ।আমি চেষ্টা কবরো যেন এমনই থাকি।আমার বাঘিনীর সূর্য হয়ে।
—আচ্ছা আপনি আমাকে বাঘিনী কেন বলেন?আমাকে আপনি কিভাবে চিনেন সেটা কিন্তু এখনো বললেন না।
—তা তোমার না জানলেও চলবে।এটা সিকরেট থাক।যখন বুড়ো বয়সে নানি,নাতনীদের নিয়ে গল্প করবো তখন তাদের সাথে তোমাকেও বলল।
ইশফা,সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল……
—তার মানে আপনি বলবেন না।
—বলবোনা কখন বললাম?বলবো তো সময় হলে?
—আপনার আর বলতে হবে না।
ইশফা রাগ দেখিয়ে চলে যেতে নিলেই সান ইশফার হাত ধরে মিটমিট করে হেসে বলল…….
—রাগিনী আমার,বাঘিনী আমার
রাগলে মানায় ভালো।
রাগের চেয়ে হাসলে তাকে
মানায় আরো ভালো।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Last_Part
৬ বছর পর…….
সময়ের সাথে সাথে মানুষ যেমন পরিবর্তন হয়।তেমনি মানুষের সাথে সাথে সম্পর্কও পরিবর্তন হয়।সময়ের সাথে সাথে কোন সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরে অথবা কোন সম্পর্কের রুপ আস্তে আস্তে গভীর হতে থাকে।
জিদান সোফায় বসে একমনে ল্যাপটবে কাজ করছে।এমন সময় একটা ৩বছরের মেয়ে গুটিগুটি পায়ে জিদানের সামনে এসে দাড়িয়ে বলল…..
—মামা… মামা… মা তোমালে ডাতছে।
জিদান ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে তার মেয়ে জিনিয়া দাড়িয়ে রয়েছে।নিজের মেয়ের মুখে নিজেকে মামা বলে সম্মধোন করতে শুনে জিদান হতাশ হল।এটা যে কার শেখানো কাজ তাও জিদানের অজানা নয়।ইশরা প্রায় দিনই তাদের মেয়ে জিনিয়াকে শিখিয়ে দেয় জিদান কে মামা বলে ডাকতে।মা ভক্ত মেয়ে মা যা বলে তাই করে।এই নিয়ে জিদান,ইশরার সাথে রাগ করলে ইশরা দাত কেলিয়ে হেসে বলে…….
—আমি ভাইয়া বলতে পারলে মেয়ে মামা ডাকলে সমস্যা কোথায়?তুমি আমার দশটা না পাচটা না একটা মাত্র আপন চাচাতো ভাই।তাই তো মাঝে মাঝে একটু আকটু জিদ ভাইয়া বলে ডাকি সাথে মেয়েকে দিয়েও মামা ডাকাই।ভালো করি না বল😁
এমন আরো উল্টাপাল্টা কথা বলে ইশরা,জিদানের মাথা উলট পালট করে দেয়।ইশরা এখনো সেই আগের দুষ্টুমি দিয়ে জিদানকে সব সময় রাগিয়ে রাখে।সবার কাছে ইশরা বড় হলেও জিদানের কাছে সে আগের মতই আছে।আগের মতই তার সকল পাগলামো জিদানকে ঘিরেই শুরু হয় আর জিদানের কাছেই শেষ।
জিদান ল্যাপটবটা পাশে রেখে মেয়েকে নিজের কোলে বসিয়ে বলল……
—আম্মু পাপাকে কেউ কি মামা বলে ডাকে বল?এটা তো পচা মেয়েদের কাজ।আমার আম্মু কি পচা?
জিনিয়া,জিদানের কথা শুনে জিদানের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল……
—না আমি পতা না।আমি অনেত ভালো।
জিদান মেয়ের মাথায় আদর দিয়ে বলল…..
—তাহলে পাপাকে মামা বলে ডাকো কেন?আর ডেকো না ঠিকাছে?
জিনিয়া গাল ফুলিয়ে বলল…..
—তাইলে মা তেন বললো তোমালে মামা বলে ডাততে।
—তোমার মা তো দুষ্টু তুমি কি দুষ্টু?
জিনিয়া মাথা নাড়িয়ে বলল…..
—না আমি অনেত ভালো।
জিদান মেয়ের গালে আদর দিয়ে বলল….
—আমার গুড আম্মু।
____
ইশরাকে হাফসা বেগম শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে।ইশরা মুখ ভাড় করে দাড়িয়ে রয়েছে।হাফসা বেগম শাড়ি পরাতে পরাতে ইশরার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল…..
—কিরে এমন মুখ ভাড় করে দাড়িয়ে রয়েছিস কেন?
ইশরা গাল ফুলিয়ে বলল……
—বড় মা আমি এমন কেন বলতো?এখন অব্দি শাড়ি পরতে পারি না।আমার দ্বারা বুঝি আর শাড়ি পরা শিখা হবে না।
ইশরার গাল ফুলানো কথা বলা দেখে হাফসা বেগম মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।ইশরা কাদো কাদো গলায় বলল…..
—বড় মা তুমি হাসছো।
হাসফা বেগম ইশরার কথায় কান না দিয়ে ইশরাকে আয়নার দিকে ঘুড়িয়ে বলল…..
—মাশাল্লাহ।আমার মেয়েটাকে কত সুন্দর লাগছে।কারো যেন নজর না লাগে।
—পেত্নীর উপর এমনিতেও কারো নজর লাগবে না।
কথাটা বলতে বলতে জিদান,জিনিয়াকে কোলে নিয়ে রুমে প্রবেশ করল।ইশরা,জিদানের দিকে তাকিয়ে বলল……
—বড় মা দেখো তোমার ছেলে আমাকে পেত্নী বলছে।কিছু বল।
হাফসা বেগম জিদানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল……
—জিদান তুই আমার মেয়েকে পেত্নী বলছিস কেন?কোন দিক দিয়ে ওকে পেত্নী
লাগছে।
জিনিয়াও তার দাদুর সাথে তাল মিলিয়ে বলল……
—পাপা তুমি মাতে পিতনি বলতো তেন?
জিনিয়া কিছু একটা ভেবে মাথা চুলকিয়ে বলল…..
—মা পিতনি কি?
জিনিয়ার কথা শুনে জিদান হাসতে হাসতে বলল……
—মা তোমার নাতনীকে এবার বল পেত্নী কি?আমি ওকে বুঝাতে গেলে কিন্তু এখানে ভূমিকম্প শুরু হয়ে যাবে।
ইশরা,জিদানের দিকে কয়েক সেকেন্ড রাগি চোখে তাকিয়ে থেকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল……
—আম্মু বল তো মাকে কেমন লাগছে?
জিনিয়া মায়ের দিকে গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থেকে বলল…….
—অনেত সুন্দর লাগছে।আমিও ছালি পরবো।
হাফসা বেগম জিনিয়াকে কোলে নিয়ে বলল…..
—চল দাদু আমি তোমায় শাড়ি পরিয়ে দেই।
হাফসা বেগম জিনিয়াকে নিয়ে চলে যেতেই জিদান ইশরার সামনে দাড়িয়ে ইশরার মাথায় গাট্টা মেরে বলল…..
—হঠাৎ শাড়ি পরলে যে?
ইশরা মাথা ডলতে ডলতে জিদানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল……
—মারলে কেন?
—মেয়েকে আবার মামা বলতে বলেছো কেন?
—যা করেছি বেশ করেছি আরো করবো।এবার মেয়েকে দিয়ে দিন রাত মামা ডাকাবো।দেখি তখন কি করিস?
জিদান,ইশরার মাথায় শাড়ির আচল টেনে দিয়ে বলল……
—এমনিতেই তোকে ভংকর সুন্দর লাগছে।এর মধ্যে আর রাগ করিস না।তাহলে কিন্তু তোর দিক থেকে চোখ সরাতে পারবো না ইশু।তখন কিন্তু সবার কথা শুনে তুইও লজ্জা পাবি।
ইশরা,জিদানের হাতে চাপর মেরে রাগি গলায় বলল…..
—মিথ্যাবাদী মিথ্যা বলার জায়গা পাওনা।একটু আগে বললা পেত্নী লাগছে।এখন আসছে তেল মাখতে।
জিদান মুচকি হেসে ইশরাকে জরিয়ে ধরে বলল……
—কোনটা মনের কথা কোনটা মুখের কথা সেটাও কি বুঝিস না।তুই শুধু আমার।পেত্নী হলেও আমার থাকবি পরি হলেও।
ইশরা জিদানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল……
—আমাকে না রাগালে হয় না?আরেক বার পেত্নী বললে সব সাজ নষ্ট করে দিবো কিন্তু বলে দিলাম।
জিদান,ইশরার নাক টেনে দিয়ে বলল…..
—পাগলী।
ইশরা কিছু না বলে জিদানকে ভেঙচি কাটলো।
💦💦💦💦💦💦
সান অফিস থেকে বাসায় আসতে না আসতেই একটা চার বছরের মেয়ে দৌড়ে এসে সান এর কোলে উঠে সান এর গলা জড়িয়ে ধরে কাদো কাদো গলায় বলল…..
—পাপা পাপা জানো মা না আমাকে আজ অনেক বকেছে।বলেছে আমি না পচা।একটুও ভালো না।বলেছে রিদান ভাইয়া ভালো।(রিধির ছেলে)বল পাপা আমি কি অনেক পচা?
মেয়েটা আর কেউ না সান আর ইশফার মেয়ে সাইফা।সাইফা তার বাবা ভক্ত।বাড়িতে সারাদিন কি হয় না হয় সান বাড়িতে আসতে না আসতেই টেপ রেকর্ড এর মত সব গড়গড় করে সানকে বলতে থাকে।
সান মেয়ের গালে আদর দিয়ে বলল…..
—না মা তুমি তো আমার পিন্সেস।আমার লিটল পরি।তুমি কি পচা হতে পারো।
সাইফা গাল ফুলিয়ে বলল…..
—তাহলে মা বললো কেন আমি পচা?আমি কিছু জানি না তুমি মাকে বকে দাও।
সান এর কথার আওয়াজ পেয়ে ইশফা কিচেন থেকে বের হয়ে ওড়নার এক কোনে হাত মুছতে মুছতে বলল……
—শুরু হয়ে গেছে পাপার আদরের দুলালীর পাপার কাছে নালিশ করা।
সান ইশফার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল……
—তুমি আমার মেয়েকে বকেছো কেন?
কোন সাহসে তুমি আমার মেয়েকে বকেছো?
ইশফা কাপাল ভাজ করে সান এর দিকে তাকিয়ে বলল……
—তোমার বিচ্ছু মেয়েকে যে দুটো লাগাইনি সেটাই তোমার মেয়ের ভাগ্য।ফাজিল মেয়ে সারাদিন আমাকে জ্বালিয়ে মারে।পুরো বাপের মত হয়েছে।রাগ যেন নাকের ডগাই থাকে।মন মত না হলেই ভাংচুর শুরু।আরো দেও মেয়েকে আল্লাদ।
ইশফা সানকে ইচ্ছে মত ঝেড়ে দিয়ে নিজের কাজ করতে চলে গেলো।সান বোকার মত ইশফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
সাইফা মাথায় হাত দিয়ে বলল…..
—উফ পাপা তোমায় বললাম মাকে বকে দিতে এখন দেখি মা তোমায় বকে গেলো।
সাইফার কথা শেষ হতে না হতেই পিছন থেকে সিনথিয়ার হাসির শব্দ পাওয়া গেলো।সিনথিয়া হাসতে হাসতে সামনে এসে বলল……
—ভাইয়া দেখলি তো আমার দোয়া অক্ষরে অক্ষরে আল্লাহ্ কবুল করেছে।তোর সব হিরোগিরি শেষ।ভাবি তোকে বাঘ থেকে বিড়াল বানিয়ে দিয়েছে।
সান সিনথিয়ার মাথায় গাট্টা মারতেই সিনথিয়া চেচিয়ে বলল……
—ভাবি দেখো ভাইয়া আমায় মারছে।
ইশফা কিচেন থেকে চেচিয়ে বলল……
—ভাই তোমাদের মধ্যে আমায় টেনো না।আম্মু এখানেই আছে আম্মুকে বল।
মিসেস শিকদার ইশফার পাশে দাড়িয়ে কাজ করছে।ইশফার কথা শুনে তিনি জোর গলায় বললেন…….
—এই একদম না।তোদের ঝামেলা তোরাই মিটা।আমাদের টানবি না।আমাদের মা,মেয়েকে শান্তিতে কাজ করতে দে।দরকার পরলে সামনে যে বড় জজ আছে তার কাছে নালিশ দে।
ইশফা কাজ করতে করতে বলল…….
—মেয়েটা দিন দিন পাজি হয়ে যাচ্ছে মা।একদম আপনার ছেলের মত হয়েছে।কারো কথাই শুনে না।সারাদিন শুধু দুষ্টুমো।
—ছেলে কেন আমার মেয়েটা কি কম পাজি নাকি।বাবা,মা দুজনই তো পাজি।শুধু শুধু আমার নাতনীর দোষ দিচ্ছো কেন?
ইশফা গাল ফুলিয়ে বলল……
—মা আমি পাজি?আপনি আমাকে এভাবে বলতে পারলেন?
মিসেস শিকদার মিষ্টি হেসে বলল…….
—তুমি তো আমার মিষ্টি পাজি মেয়ে।যে সব সময় তার মিষ্টি শাষন দিয়ে আমাদের আগলে রাখে।সাথে আমার পাজি ছেলেটাকে টাইট দিয়ে রাখে।যে নিজের সরলতা, কোমলতা দিয়ে আমাদের মনে নিজের জায়গা করে নিয়েছো।
ইশফা এক গাল হেসে বলল…….
—আম্মু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।এমনিতেই দিন দিন ফুলে যাচ্ছি।এতো প্রশংসা করলে আরো ফুলে যাব।
মিসেস খান মুচকি হেসে ইশফার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল……
—পাজি মেয়ে।সাধে কি আর পাজি বলি।
সান সিনথিয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলল…..
—পেত্নী তোকে বিয়ে দিয়েছি কি এখানে পরে থাকার জন্য।যা শশুর বাড়ি যা।
সাইফা সান এর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল…….
—পাপা তুমি জানো না আঙ্কেল বিদেশে গেছে।ফুপিমনি একা বাসায় ভয় পাবে না বল।আমার ফুপি মনির কিছু হয়ে গেলে আমি ফুপিমনি কোথায় পাবো?
সিনথিয়া সাইফাকে কোলে নিয়ে বলল……
—ওলে আমার ফুপি মনিটারে।আমার জন্য কত আদর।(সান এর দিকে তাকিয়ে)
মেয়ের থেকে কিছু শিখ।
সিনথিয়া সাইফার গালে আদর দিয়ে বলল…..
—চল ফুপিমনি আমরা আঙ্কেল কে ফোন করে বলি তোমার জন্য সুন্দর সুন্দর খেলনা পাঠাতে।
সাইফা খুশি হয়ে বলল……
—চল চল।
সান হতাশ হয়ে বলল…….
—কি দিন আসলোরে সান কেউ তোরে পাত্তাই দেয় না।
____
সান ফ্রেস হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে ইশফা হাতে জুস নিয়ে দাড়িয়ে আছে।সান গাল ফুলিয়ে ইশফার পাশ কেটে বেডে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে পরল।ইশফা মিষ্টি হেসে জুস এর গ্লাসটা সাইড টেবিলে রেখে সান এর সামনে বসে সান এর বাহু জরিয়ে ধরে সান এর কাধে মাথা রেখে বলল……
—রাগ করেছো?
সান কিছু না বলে চুপ করে রইল।ইশফা সান এর থেকে কোন উওর না পেয়ে আবার বলল…..
—কি হল কথা বলছো না কেন?
সান গম্ভীর গলায় বলল……
—ছাড়ো আমায়।ভালো লাগছে না।
সানের কথা শুনে ইশফা আরেকটুকু সানকে ঝেকে ধরে বলল…….
—বললেই হল।ছেড়ে দিব এতো সহজ ছাড় পাওয়া।কান খুলে শুনে রাখুন মিঃসূর্য আপনাকে ধরতে আমার আপনার পারমিশন লাগে না।বুঝেছেন মিঃ।
সান ইশফার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল……
—সারাজীবন এমনটাই থেকো আমার বাঘিনী হয়ে।
ইশফা নরম গলায় বলল……
—আছি তো তোমার পাশে তোমার বাঘিনী হয়ে।
দেখতে দেখতে চোখের পলকে ছয় ছয়টা বছর পার হয়ে গেছে।এই ছয় বছরে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে।ছয় বছর আগে ধুমধাম করে ইশফা,সান, ইশরা, জিদান,ইশান,তুশির একসাথে বিয়ে হয়।
এক বছরের ব্যবধানে দু’বোনের ঘর আলো করে কন্যা সন্তানের আগমন হয়।
শফার মেয়ের বয়স চার বছর আর ইশরার মেয়ের বছর তিন।ইশান আর তুশির সাড়ে চার বছরের একটা ছেলে আছে।হেনা,শিপন,লিপি,সিনথিয়া সবারই বিয়ে হয়ে গেছে।সবাই সবাই সাংসারিক জীবন নিয়ে ব্যাস্ত।নিরব,রিধি তাদের ছেলেকে নিয়ে এক বছর ধরে বাহিরে সেটেল হয়েছে।
মানুষকে একদিন না একদিন তার কর্মের ফল ভোগ করতে হয়।হোক সেটা মৃত্যুর পরে বা পূর্বে।দু’বছর হল আওলাদ খান মারা গেছেন।দীর্ঘ দিন তিনি বিছনায় পরা ছিলেন।দু’পা প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলো তার।গলায় ঘা হয়ে যাওয়াতে কোন মত একটু জুস, ফলের রস খেয়েই দিন কাটিয়েছে।ক্ষুধার জ্বালায় খাবার খাওয়ার জন্য ছটফট করলেও কিছু খেতে পারেনি।মৃত্যুর আগে শরীরের অনেক অনেক জায়গায় ঘা হয়ে পচন ধরে গিয়েছিলো তার।অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পরে থেকেও মনের মধ্যে একটু অনুসুচনা তৈরি হয়নি।নিজের রাগটাকে সে মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত ধরে রেখেছে।তার অসুস্থতার খবর পেয়ে জিদান আর ইশরার স’পরিবার তাকে দেখতে যাওয়াতে দূর দূর করে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে।জিদান আগেও তাকে নানান ভাবে মানানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি।সে তার কথাই অটুল ছিলেন।দীর্ঘ দিন প্রতি নিয়িত মরন যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে সে পরকালে গমন করেন।আওলাদ খানের মৃত্যুর পর জিদান হাফসা বেগমকে তার কাছে নিয়ে আসেন।আর আওলাদ খান যে সব টাকা পয়সা রেখে গিয়েছিলো তা মসজিদ, মাদরাসা আর গরিবদের মাঝে দান করে দেন।সেখান থেকে কানা করিও জিদান নিজের কাজে খরচ করেনি।
এলি খারাপ বন্ধুদের চক্রে পরে ড্রাগ এডিকট্রেড হয়ে এখন ট্রিটমেন্টের উপর আছে।এলি দীর্ঘদিন ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পর কিছুদিন ভালো থাকে তারপর আবার সেই আগের মত হয়ে যায়।
ছয় বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি সান,ইশফা,ইশরা,জিদান এর ভালোবাসা।সাময়ের সাথে সাথে তাদের ভালোবাসা গভীর থেকে গভীর হতেই চলেছে।এভাবেই যেন চলতে থাকে তাদের জীবন।একে অপরের ভালোবাসা, দুষ্টু,মিষ্টি খুনসুটি দিয়ে।
~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~
(
Just oshadaron hoyeche golpota😍😍😍💝💝👌👌👌👌i wish esra,eshfa er moto amio jeno arokom akta jibon shonggi pai …amin☺☺☺🤗🤗🤗