#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১৫.
#WriterঃMousumi_Akter
নড়াইল জেলার এক ঐতিহ্যবাহী মেলার নাম “সুলতান মেলা”চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান কে কেন্দ্র করেই এ মেলার আয়োজন করা হয়।এইদিনে সব কাজিনরা মিলে আমরা নৌকা ভাড়া করে নৌকা বাইচ দেখতে যায়।শহর জুড়ে মানুষের ছড়াছড়ি থাকে।সকাল সকাল বিহান ভাই এর দেওয়া শাড়ি,চুড়ি গুলা পরে সুন্দর ভাবে সাজগোজ করলাম। উদ্দেশ্য বিহান ভাই কে তাক লাগিয়ে দিবো ভীষণ ভাবে।কপালে কালো ব্লু টিপ,পরনে ব্লু শাড়ি,দু হাত ভর্তি কাচের চুড়ি মাথায় গাজরা ঠোটে লিপিস্টিক দিয়ে পরিপূর্ণ সাজ দিলাম।সুন্দর করে কয়েক টা ছবি তুলে বিহান ভাই এর হোয়াটস এপ এ পাঠিয়ে দিলাম।অনেকক্ষণ রিপ্লের অপেক্ষা করে ব্যার্থ হলাম।মেসেজ তো সিন ই করেন না।এক ঘন্টা ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিন্তু সে মেসেজ ই সিন করে না কিন্তু কেনো?অবশেষে মেসেজ দিলাম তোমার দেওয়া শাড়িতে শুভ্র রঙে রাঙিয়েছি নিজেকে।বিহান-দিয়া থেকে দিহান হয়েছি। ভাবতে ভাবতে দেখি আকাশের কোনায় কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছে।আকাশ পানিতে ভরপুর এক্ষুণি বৃষ্টিকন্যারা মাটিতে এসে লুটিয়ে পড়বে।
আধভেজা হয়ে তোহা আপু,রিয়া আর মেহু আপু আমার রুমে এসে প্রবেশ করলো।আমরা অনলাইনে লালশাড়ির অর্ডার দিয়েছিলাম।সবাই এক কালারের শাড়ি পরবো সেই প্লান ই ছিলো।
“রিয়া,মেহুপু,তোহাপু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।তিনজনে কি ভূত দেখছে নাকি।রিয়া বলে উঠলো,কিরে দিয়া যে শাড়ি নিয়ে এত কাহিনী সেই শাড়ি পরেছিস।”
“হ্যাঁ পরেছি।উনার দেওয়া গিফট বলে কথা।তোদের বিচারক বিহান ভাই কে ডেকে নিয়ে আয়।আমি ভয় পায় নাকি হুহ।”
“মেহুপু বলে উঠলো,দেখ দিয়া কথা ছিলো তিনজনে এক কালার শাড়ি পরবো আর তুই প্রিয়জনের দেওয়া শাড়ি তাতো হবে না।”
“আমার পক্ষে একটুও শাড়ি খোলা সম্ভব নয়।আমার উনি আসবে আজ মেলায়।আমাকে এ শাড়িতে না পেলে কষ্ট পাবে সে।”
“দিয়া প্রেম করলে কিন্তু প্রিয়জন কে যত্ন করতে হয়।তার দেওয়া গিফট সারাজীবন যত্ন করে রাখতে হয়।বাইরে এই বৃষ্টি কাঁদায় এই শাড়ি পরে গেলে শারীটার বারোটা বাজবে।এটা দেখে তোর প্রিয়জন আরো কষ্ট পাবে।ভাববে তার জিনিসের কোনো গুরুত্ব নেই তোর কাছে।এই শাড়ি টা যত্ন করে তুলে রাখ।বিশেষ কোনো দিনে তার সামনে পরে যাস।”
বাইরে আসলেই অনেক বৃষ্টি কাঁদা বিহান ভাই এর শাড়ি টা নষ্ট হয়ে যাবে। শাড়িটার গুরুত্বের কথা ভেবে অন লাইন থেকে আনা লাল শাড়ি টা পরে নিলাম।তিনজনে সেইম সাজে বেরোলাম।
গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কাজিন গুষ্টি।সবার চোখ এড়িয়ে আমার চক্ষুযুগলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পড়লো বিহান ভাই দিকে।কালো জিন্স পরা গায়ে কালো হুডি টাইপ গেঞ্জি যার সামনে পকেট।বিহান ভাই হুডির পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন।বাতাসে চুল গুলো সামনে থেকে উড়ছে।ফর্সা শরীরে কালো জিন্স আর গেঞ্জি আহা দেখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে।।হাতে থাকা কালো হেলমেট টা মাথায় পরে নিলেন।
বিহান ভাই আড়চোখে বার বার চাইছেন আমার দিকে।
“তিয়াস ভাইয়া বললো, আটা ময়দা যা ছিলো সব মেখেছিস তো তোরা।মনে হচ্ছে একটু কম হয়ে গিয়েছে।”
“মেহু আপু বললো,ভদ্র ভাবে কথা বল মহিলা কোথাকার।”
“তিয়াস ভাইয়া ভড়কে গেলেন আপুর কথা শুনে ‘মহিলা কে মহিলা'”
“মহিলা ছাড়া কি মহিলাদের প্রতি আসক্ত পুরুষ তুই।এই নিয়ে কয় হালি স্যাকা খাইলি বল তো মহিলাদের দ্বারা।”
“বিহান ভাই আপনি কিছু বলেন, আজকালকার মহিলাদের চেনার উপায় আছে বলেন বিবাহিত অবিবাহিত সব নাক ফুল পরে সব শাড়ি পরে।এই যে তিন মহিলা যাচ্ছে কে বুঝবে বিবাহিত নাকি অবিবাহিত।”
“বিহান ভাই বললেন,মেহু,তোহা,রিয়া ঠিক আছে বাট সাংঘাতিক হলো দিয়া।শুধুই সাংঘাতিক হলে ভুল হতো সাংঘাতিক মহিলা একটা।কাল রাতে পড়াতে গেছিলাম যা করেছে আমার সাথে।”
“আমি চট করে বলে উঠলাম,একদম বাজে কথা বললেন মিথ্যাবাদী একটা।যা করার আপনি করেছেন।এখন বলছেন আমি করেছি।”
“তুই এমন ভাবে চিল্লায়ে বলছিস আমি করেছি এটার মিনিং কি হয় বুঝিস। আশে পাশে এত মানুষ তারা কি ভাববে আমাকে নিয়ে।দেখ সাইডের এই কিউট মেয়ে গুলো তাকিয়ে আছে।ওরা কি ভাবছে আমাকে নিয়ে আমি ঠিক কি করেছি। ছিঃহেট ইওর মাইন্ড দিয়া।”
“আমার মাইন্ড হেট করবেন কি জন্য শুনি।আমি বলেছি একটা আপনি ভেবেছেন অন্যর টা হেট করে নিজের মাইন্ড করুন না।”
আমাদের সাইড দিয়ে হেটে যাওয়া মেয়ে গুলো খলখল করে হেসে উঠলো।আর বিহান ভাই এর দিকে লাজুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।আচ্ছা রস্তা ভরা ছেলে তা রেখে উনার দিকেই বা তাকিয়ে আছে ক্যানো?মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হচ্ছে।আমাদের ঝগড়া দেখে বিভোর ভাই রা আমাদের থেকে হাত দূরে সামনে চলে গিয়েছে। ওদের পিছ পিছ আমরা।
“বিহান ভাই কে বললাম,আপনার দিকে তারা তাকিয়ে আছে কেনো?”
“আই থিংক ক্রাশড তারা।”
“নিজেকে কি ভাবেন কি? আপনার দিকে মেয়েরা তাকালেই সেটা ক্রাশ হয়ে যায় অদ্ভুত ব্যাপার।”
মেয়ে গুলো আমার কথা শুনে আমাদের দিকে তাকিয়ে আরো হাসছিলো।তাদের কি খেয়ে কাজ নেই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
“বিহান ভাই বলে উঠলেন,আচ্ছা মহিলা মানুষ এত জোরে কথা বলিস ক্যানো?শহরের সব মানুষ এর এটেনশন তোর দিকে।”
“মেয়ে গুলা বিহান ভাই কে বললো আপনার ওয়াইফ নাকি।”
“না”
“তাহলে ”
“আমি বলে উঠলাম বোন।আমি উনার একমাত্র বোন।”
“বিহান ভাই বললেন না আপু তিনি আমার বোন না এটা তার রাগ হলেই বলে।”
“আচ্ছা তাহলে গফ বুঝছি।”
“আমি রেগে মেগে বলে উঠলাম,এই আপু আপনাদের প্রব্লেম কি?কি দেখে মনে হচ্ছে আমি উনার গফ। ”
“এই যে উনি উনি করছো।মেয়েরা উনি কাকে বলে সেটা সবাই জানে।”
কি আজব উনিতে কি সমস্যা বুঝলাম না।
“এমন সময় আলিপ পেছন থেকে এসে আমার আর বিহান ভাই এর সাথে হাঁটতে শুরু করলো।”
“বিহান ভাই কেমন আছেন?”
“ভাল।তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।আজ দিয়াকে ভীষণ সুন্দর লাগছে তাইনা ভাইয়া।”
“বিহান ভাই ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আর ব্যাকা হাসি দিলেন।যে হাসির মানে আলিপের এই প্রশংসা তার পছন্দ নয়”
“আলিপ আবার বলে উঠলো,দিয়া তোমার দিক থেকে চোখ সরানো যাচ্ছে না।আজ তো খুব সুন্দর সেজেছো চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।”
“বিহান ভাই একবার রাগি মুডে তাকিয়ে দ্রুত হেঁটে বিভোর ভাই দের সাথে হাঁটতে শুরু করলো।এটার মানে আলিপের এইসব প্রশংসায় সে বিরক্র তাই আমাকে আলিপের কাছে রেখেই নিজে দ্রুত হেঁটে চলে গেলেন।”
“আমিও দ্রুত হেঁটে ওদের সাথে হাঁটা শুরু করলাম।কারণ এই আলিপের সাথে হাঁটলে আজ নৌকার নিচে ডুবিয়ে মারবেন উনি।”
“বিভোর ভাই বললেন, ঝগড়া শেষ।”
বিহান ভাই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে এটা বুঝালেন টপিক্স টা চেঞ্জ করতে।
“বিভোর ভাই আবার ও বলে উঠলেন, এইজন্য আটার এত দাম বেড়েছে।দেখ মাইয়া গুলা মুখের শ্রি কি করেছে।”
“রিয়া বললো,এইজন্য আপনাদের প্রেম জীবনেও হবে না বলে দিলাম।এত দামি মেকাপ কে ত্রিশ টাকার ময়দার সাথে তুলনা করছেন।একটা ব্রান্ডের মেকাপ কিনে তারপর বইলেন।”
“বউ কে মেকাপ এর পরিবর্তে খাটি সয়াবিল তেল কিনে দিবো মুখে মাখতে।”
বিভোর ভাই এর কথা শুনে এক গাল হেসে দিলাম।
“তিয়াস ভাই বলে উঠলেন,কি ব্যাপার আলিপ শুধু মেয়েদের শাড়ি গিফট করছিস ব্যাপার কি?আমরা কি ফাউ নাকি।”
“বিভোর ভাই বলে উঠলেন,আলিপ কি আর সাধে দিছে সিওর দিয়াকে পটানোর জন্য বাকি গুলারেও দিছে।ঘুষ দিছে সবাইকে”
বিহান ভাই স্হির চোখে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।আলিপের দিকে তাকিয়ে বলেন,আলিপ শাড়ি গিফট করেছো।
আলিপ ভাইয়া লজ্জা ভাব নিয়ে বললেন ইয়ে ভাইয়া।
বিহান ভাই আলিপ কে থামিয়ে দিয়ে বলেন বুঝেছি।
বিহান ভাই এর চোখে মুখে অগ্নিরুপ।এই শাড়ির টাকা আলিপ দিছে আগে জানতাম না।এটা আবার বিহান ভাই এর সামনে ফাঁশ হলো।এখন কি হবে।বিহান ভাই মাথা থেকে হেলমেট টা জাস্ট খুললেন চোখে মুখে কি প্রচন্ড রাগ।হেলমেত খুলে খুল গুলো হাত দিয়ে উজিয়ে দিচ্ছেন।বিহান ভাই এর চোখ মুখ সবার সাথে হাসি খাশি থাকলেও আমার দিকে তাকানোর সময় অগ্নিরুপ তার।কেউ না বুঝলেও আমি বুঝছি বিহান ভাই এর ব্যাপার টা।
এরই মাঝে শুভ ভাইয়া হাজির হলো।শুভ ভাইয়াকে মেহু আপু ধরলো ফুচকা খাবে।তাদের মাঝে যে একটা ভাব চলে আমরা বুঝি।সবাই ইনজয় করলেও বিহান ভাই এর মুড ভীষণ অফ।এইযে উনার মুড অফ হয়েছে আর ঠিক ই হবে না।শুভ ভাইয়া ফুচকার অর্ডার দিলেন সবাই খেলেও বিহান ভাই খাবেন না।আমি ইচ্ছা করে প্রচুর ঝাল দিলাম বিহান ভাই এর ফুচকাতে।ঝাল লাগলে যদি একটু কথা বলেন।নাহ তাও কথা বলেন না।প্রচন্ড ঝাল দেওয়া ফুচকা দস পিছ খেয়ে উনার এক ফ্রেন্ড কে ফোন দিলেন।সে বাইক নিয়ে এলে বিহান ভাই তার বাইকে উঠে চলে গেলেন।মনের মাঝে খুব খারাপ লাগছে।উনার রাগ কে তো কোনোভাবে কনভাইস করা যাবে না।তাহলে কি করবো আমি।
বাড়িতে অনেক মন খারাপ নিয়ে ফিরলাম।বাড়ি ফেরার সাথে বিভোর ভাই এর আম্মু ফোন দিলো আমাকে।
আমি হ্যালো বলতেও মামি বললো দিয়া আজ কি কিছু হয়েছে?
কেনো মামি?
বিহান বাড়িতে ঢুকেই ফুলদানি লাথি মেরে ফেলে দিছে।বক্সিন রুমে প্রচন্ড রাগি মুডে বক্সিন করেই যাচ্ছে।বিহানের চোখ মুখ রাগে যেনো বেরিয়ে যাচ্ছে।ফর্সা মানুষ রাগে চোখ মুখের বেহাল অবস্থা। রাগে ওয়ালে নিজের হাত নিজেই ঘুষি দিচ্ছে।ছেলের টোটাল মুড অফ।কারো সাথে কোনো কথা নেই।সকালেই নাকি ঢাকা ফিরে যাবে।দিয়া তুই কি কিছুই জানিস।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম না মামি কিছুই জানিনা আমি।
ঘুম আসছে না রাত বারোটা বাজে।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি বিহান ভাই অফ লাইনে আছেন।
উনার ফোন নাম্বারে ফোন দিলাম।
“ফোন টা কয়েক বার কেটে দেওয়ার পর রিসিভ করেই বলে উঠলেন, ফোন দিয়েছিস ক্যানো?”
“কি করছেন?”
“মাঝ রাতে এটা বলতে কল দিয়েছিস।”
“রেগে আছেন?”
“যা বলার এক মিনিটের মাঝে বলবি জাস্ট এক মিনিট।”
“না তখন ওভাবে চলে আসলেন যে।”
“তোর সাহস হয় কিভাবে মধ্য রাতে কল দিয়ে আজাইরা প্রশ্ন করার।তোর এসব ফাউ বক বক শোনার মতো টাইম আমার হাতে নেই।নেক্সট যদি এভাবে কল দিস ব্লক দিয়ে রাখবো।”
“এত বাজে বিহ্যাভ করছেন কেনো বিহান ভাই?সব সময় কিছু না শুনেই বকাবকি করেন শুধু।আপনি কি আলিপ এর ব্যাপারে রেগে আছেন”
“জাস্ট সাট আপ।মধ্য রাতে প্রেম কাহিনী শোনার মতো ইচ্ছা আমার নেই।তোর প্রেম কাহিনী শুনে আমি কি করবো।আমি একটুও ইন্টারেস্টেড নয় দিয়া।তুই কি আমার গফ না বউ কোনটায় তো না।তাহলে আমার জেলাসি আসবে কেনো?আমার সময়ের অনেক মূল্য। তোর মতো একবার আলিপ,একবার আহিন,একবার বিভা আপুর ফ্রেন্ড এইগুলা করার টাইম নেই আমার।জাস্ট ফোন রাখ। “#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১৬.১৭
#WriterঃMousumi_Akter
সারারাত না ঘুমিয়ে খুব ভোরে এসে টার্মিনাল দাঁড়িয়ে রইলাম কারণ বিহান ভাই এখান থেকেই বাসে উঠবেন।বিভোর ভাই এর কাছে খবর নিয়েছি কাল থেকে সে কিছুই খায় নি।মামা মামি সবাই চিন্তিত কি নিয়ে রাগ করেছে তাদের ছেলে।তার রাগের কারণ কারো জানা নেই।সে তার ব্যাক্তিগত কিছু কাউকেই বলে না।সেদিন উনার দেওয়া চিঠিটা পাওয়ার পর থেকেই আমার মন আরো বেশী উনার দিকে ছুটে চলেছে।সেই যে ছুটছে আর আটকাতে পারি নি।নিজের রাস্তায় আর ফেরাতে পারি নি আমার মন।উনি যেদিকে ছুটছে আমার মন সেদিকেই ছুটছে।ব্রাশ না করেই খুব ভোরে খাবারের টিফিনবক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।এখনো ভোরের আলো ঠিক ভাবে ফোটে নি।কিছু মানুষ রাস্তায় জগিং করতে বের হয়েছে।কিছু মানুষ পাশের মসজিদ থেকে বের হয়েছে।
ভোরের আবসা অন্ধকারে আরেকবার মন হারালাম তাকে দেখে।কি নিখুত সৃষ্টি সে সৃষ্টিকর্তার।ঘাড়ে ব্যাগ ঝুলানো,পরনে কালো বুট, গায়ে ছাই রঙা শার্ট,ব্লু জিন্স, শার্টের হাতা গোটানো।ধীরে গতিত্র হেঁটে আসছে।এক নয়নে তাকিয়ে আছি আমি তার দিকে মন হারিয়ে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।আমি জানি অনেক বাজে কিছু অপেক্ষা করছে আমার জন্য।রোডের পশ্চিম সাইডে আমি দাঁড়িয়ে আমার উলটা পূর্ব সাইডে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।উনি এসে আমাকেই দেখেই থমকে গেলেন।হয়তো ভাবতেই পারে নি আমি এই টাইমে এখানে থাকবো।আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে রাস্তার ওই পাশেই দাঁড়িয়ে রইলেন।উনার চোখে মুখে ভীষণ বিরক্তি।সে বিরক্তির শেষ নেই।স্পষ্ট রাগ আর মেজাজ খারাপের চিহ্ন। আমার মনে হচ্ছে কাল থেকে এক ই মুড অফ নিয়ে আছেন উনি।আমি বার বার উনার দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু উনি বিরক্তির সাথে অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন।কোনো কথা ই বলছেন না।যেনো দেখছেন ই না আমাকে।বুকে কয়েক৷ টা ফুউউ দিয়ে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।উনার দৃষ্টি অন্য দিকে।কিভাবে কথা শুরু করবো ভাবতে ভাবতে কয়েক মিনিট কেটে গেলো।
‘একটা শুকনো কাশি দিয়ে বললাম আমার উপর রাগ করে চলে যাচ্ছেন জানি।’
‘কোনো উত্তর দিলেন না।’
‘পুরা ঘটনা টা আগে শুনবেন তো।বিহান ভাই কথা বলুন প্লিজ।’
‘আমার এখন মেজাজ ঠিক নেই মানুষের মাঝে সিন সিনক্রিয়েট করতে চাই না।সো লিভ নাউ।’
‘সব সময় আপনি তাড়িয়ে দিলেই তো আমি যেতে পারবো না বিহান ভাই।আমার মনেও অনেক প্রশ্ন আছে যার উত্তর আপনার কাছেই আছে।’
‘একবার বলেছি মুড অফ মাথা এর থেকে বেশী গরম করাস না।আর তুই আমার বউ ও না গফ ও না তাই তোকে এত গুরুত্ব দিয়ে রাগ করে চলে যেতে হবে।’
‘আমি জানি রেগে আছেন তাই এভাবে বলছেন।’
‘আপনি আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন ওটা জানার জন্য অস্হির আমি।এখনো বললেন না তো।’
‘হাত চেপে ধরে বললেন,কিসের চিঠি।কি শুনতে চাস আমি তোকে ভালবাসি,আমি প্রেম করতে চাই। আমি তোর জন্য পাগল, তোর জন্য ছুটে ছুটে ঢাকা ছুটে আসি।আমি তোকে ছাড়া মরে যাবো কি এগুলায় তো শুনতে চাস তাইনা।এটা শোনার জন্য সামান্য একটা চিঠির জন্য সাজ সকালে এসে দাঁড়িয়ে আমার যাত্রাপথে বিরক্ত করছিস।হাত চেপে ধরে একটা দোকানের সাটারে নিয়ে চেপে ধরলেন।উনার চোখ রক্তজবার ন্যায় হয়ে আছে।’
‘কাঁদো কাঁদো চোখ নিয়ে বললাম এই টিফিন বক্স এ খাবার এনেছি খেয়ে নিন প্লিজ।আপনি কাল থেকে খান নি আমি জানি।আপনি খান বি বলে আমিও খায় নি।’
‘বিহান ভাই খাবারের বক্স হাত থেকে নিয়ে দূরে ফেলে দিয়ে বলেন আমার জন্য খাস নি নাকি আলিপের জন্য খাস নি নাকি আহিনের জন্য আমি কি জানতে ছেয়েছি।খাস নি যা গিয়ে আলিপ কে বল, আলিপ এই ন্যাকামি গুলা খুব ভাল পারবে, তোকে আদর করে গালে তুলে খাইয়ে দিবে।’
আই সে গেট আউট বলেই জোরে ধাক্কা দিলেন।সাটারের সাথে ধাক্কা লেগে কিছুটা ব্যাথা ও পেলাম।এমন সময় বাস চলে এলো।বিহান ভাই বাসে উঠবেন এমন সময় হাত টা টেনে ধরে চোখ ভরা পানি নিয়ে বললাম,যেওনা বিহান ভাই প্লিজ যেওনা।আমার কথাটা তো শোনো বিহান ভাই।তোমাকে আমার অনেক কিছুই বলার ছিলো।গাড়িটা নিমিষেই ছেড়ে চলে গেলো।গাড়ির পিছ পিছ কিছুটা গিয়ে পিজ ঢালা রোডে বসে পড়ে হাউমাউ করে কাঁন্নায় ভেঙে পড়লাম।”তোমার প্রতিটি যাওয়ায় আমার কাছে বেদনাদায়ক এবারের যাওয়া বেশী বেদনাদায়ক।কেনো আমার পুরো কথাটা শুনলে না বিহান ভাই।এটা কি তোমার মনের কথা ছিলো আমি তোমার বউ না গফ না কিছুই না।আমি কি তাহলে মরিচীকার পিছে ছুটছি বিহান ভাই।কেনো এই কিশোরী মনে ভালবাসার আগুন জ্বালালে।আমি যে চাইলেও আর নেভাতে পারবো না।মন যে তোমার গাড়ির পেছনে ছুটছে।প্লিজ ফিরে এসো বিহান ভাই।”
বিহান ভাই সেই যে গেলেন আর এলেন না।উনার বলা ওই কঠিন কথা গুলো আমি ভুলতে পারছি না।আমি উনার বউ ও না গফ ও না।সাত দিন কেটে গিয়েছে না খেয়ে খেয়ে প্রচন্ড জ্বর বাঁধিয়েছি।
এই জ্বর বোধ হয় তাকে দেখতে চাওয়ার জন্য শরীরে আগমন করেছে।নইলে এ অসময়ে আমার এর গা পোড়া জ্বর হবে ক্যানো?
জ্বরে অচেতন আমি অচেতনতার গভীরে আমি।আমার স্বপ্নে প্রবেশ করলেন বিহান ভাই।আগুনের উত্তাপ কপালে কারো দু’ফোটা চোখের পানি পড়লো।মনে হচ্ছে সে কাঁদছে আমার পাশে বসে।তার চোখের কয়েক ফোঁটা পানি তে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখি ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে তার মুখ।যেনো বহুকাল দেখি না তাকে।একভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার চোখ এটে এলো আমার।এরপর ই উনার ওই মিষ্টি ঠোঁট আমার কপালে ছুইয়ে দিলেন।।এই প্রথম বার উনি আমাকে আদরের স্পর্শ দিলেন।ক্লান্তি তে শুধু অনুভব করলাম কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না।এর পর উনি আমাকে আমার বিছানা থেকে উনার কোলে তুলে নিলেন।উনার গলা জড়িয়ে ধরে উনার কোলে নেতিয়ে পড়লাম।গায়ের সব ভার উনার উপর ই ছেড়ে দিলাম।খুব ক্লান্ত আর দূর্বল কন্ঠে বললাম এটা আপনি নাকি কল্পনা।বিহান ভাই আবার ও কপালে চুমু দিয়ে বললেন এটাই আমি।আবার ও দূর্বল কন্ঠে বললাম আমি জানি এটা আপনি না আমার কল্পনা।এই সাত দিনে প্রতিরাতে আপনি এসেছেন প্রতিবার ই আমার মনে হয়েছে সত্যি আপনি ছিলেন।কিন্তু ঘুম ভাঙার পরে দেখেছি আপনি নেই।
”তুমি কি সব সময় আমাকেই ভাবো দিয়া।”
“এটা আপনি না এবার সিওর হলাম।”
“কিভাবে? ”
“এইযে তুমি বলছেন।আমাকে তো তুমি বলেন না।”
“তুমি টা সব সময় মনের মাঝে থাকে তুমি বোঝো না তাই।তুমি টা খুব যত্নের মাঝে রাখি আমি।আমি তোমার ছবির সাথে যখন কথা বলি তখন তুমি করেই বলি।আমার কল্পনাতে তুমি হয়েও আছো।হুট হাট তুমি বললে এই তুমিটার কোনো গুরুত্ব থাকবে না।তোমাকে তুমি ডাকলে তুমি অনেক ইমোশনাল হয়ে যাবে।প্রেম পোকা মাথায় কিলবিল করবে।আমার স্বপ্ন আমার বউ বড় ডাক্তার হবে।আমার উপর বার বার রেগে গিয়ে লেখাপড়ায় মন দিবে।আমি কোনো এক ঘেয়েমি মেয়ে চাই না।যে সারাক্ষণ আই লাভ ইউ বলে পাগল থাকবে।হুম সে পাগল থাকবে আমার প্রতি।কিন্তু কারণে কারনে পাগলামিতে মেতে থাকবে।কখনো অগ্নিরুপে ঝগড়া করবে,কখনো আমার ধমকে ভয় পাবে, কখনো বকুনি দিলে কেঁদে ফেলবে আবার কখনো পাগলির মতো জড়িয়ে ধরবে এসে,আবার আমার প্রতি ভীষণ বিরক্ত হয়ে মুখ দেখা বন্ধ করে দিবে আবার দূরে থাকলে ছটফট করবে।”
“বিহান ভাই।”
“বলো পিচ্চি”
“তুমি কেনো আমায় ভালবাসলে না বিহান ভাই।তুমি তো হার্ট নিয়ে গবেষনা করো।তাহলে কেনো আমার হার্টে কি আছে বুঝো না।”
“আমি সব বুঝি কিন্তু তুমি পুচকি বলে অনেক কিছুই বোঝো না।”
“আই লাভ ইউ বিহান ভাই।আমি আপনাকে ভীষণ ভালবাসি বিহান ভাই।”
এই কথাটা বলতে বলতে সেন্স লেস হয়ে গেছিলাম আমি।আজ দশ দিন পরে সুস্থ হয়েছি আমি।আম্মু, বাবা,শুভ ভাইয়া, আর বিহান ভাই আমার পাশে বসে আছে।আম্মু বলছে আমার জীবনে দিয়ার এত ভয়ানক জ্বর দেখি নি আমি।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া দিয়া এখন সুস্থ। মেয়ে আমার এক ভাবে সাত দিন বেঁহুশ ছিলো।বিহান এসে চিকিৎসা করার পর কিছুটা সুস্থ। বাড়িটা এত দিন মন মরা হয়ে ছিলো।আমাদের ফ্যামিলির সব থেকে ছটফটে মেয়েটি হলাম আমি।
সবাই রুম থেকে চলে যাওয়ার পর মাথা নিচু হয়ে বসে রইলাম আমি।বিহান ভাই চেয়ার টেনে এনে আমার কাছে এসে বললেন, নে বৃষ্টিতে বেশী করে ভিজতে থাক আর জ্বর বাঁধা তোর বাবা তো আমাকে বিনা পয়সার ডাক্তার পেয়েছে তার মেয়েকে চিকিৎসা করানোর জন্য ঢাকা থেকে ডেকে এনেছে।বিহান ভাই এর দিকে করূন নয়নে তাকিয়ে থেকে ভাবছি উনি কি সব ভুলে গিয়েছেন কি বলে গিয়েছিলেন আমাকে।
বিহান ভাই নাকি তিন দিন নড়াইলে এসছেন।তার মানে আমি যেটা দেখেছিলাম ওটা কি স্বপ্ন না সত্যি ছিলো।
বিহান ভাই কে বললাম,আপনাকে ডাকলেই কি আপনার আসতে হবে নাকি।শহরে কি আর ডাক্তার ছিলো না।
হ্যাঁ তোর বাবাকে এটাই বোঝা আর ডাক্তার থাকতে আমি কেনো?আর কোনো ডাক্তার এলেও ডাক্তার কে রুগি বানিয়ে দিতাম।আমার শ্বশুর জানেন তার মেয়েকে সুস্থ করার জন্য তার জামাই নামক মেডিসিন লাগবে।তাই সঠিক মেডিসিন এর ই ব্যবস্থা করেছেন।
এনি ওয়ে তিনদিন ধরে তোর সেবাযত্ন করতে করতে ক্লান্ত আমি।বাসায় যাচ্ছি ঘুমোবো।তোর পাশে তো আর ঘুমোতে দিবি না বলেই বাকা হাসি দিলেন।
যাওয়ার সময় একটা বাকা হাসি দিয়ে বললেন হোয়াটস এপ্স টা চেক দিস ক্ষেপি।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১৭.
#WriterঃMousumi_Akter
শ্যামাপাখি জানো,
আমি দিন দিন কত দুষ্টু হয়ে যাচ্ছি।তোমার দেওয়া ছবি আমি কতশত বার জুম করে দেখেছি।তোমার ওই গাড়ো লিপিস্টিক এর দিকে তাকিয়ে নেশাক্ত হয়ে গেছিলাম। এই পিচ্চি শুনছো তোমাকে শাড়িতে নীল রঙে রাঙানো নীলাভ সৌন্দর্যের অধিকারী লাগছে।আচ্ছা তুমি কি চাও বলোতো তোমার এই মিষ্টি হাসি তে আমাকে খুন করতে।আমার অজান্তে আমার মন চুরি করে নিয়ে গেলে আমি বুঝতেও পারলাম না।হঠাত বৈশাখের লন্ড ভন্ড ঝড়ের মতো মনের ভেতরে প্রবেশ করলে একজন হার্ট এর ফিউচার ডাক্তার এর হার্ট নিজের আয়ত্ত্বে করে নিলে।হঠাত হোয়াটস এপ্স এ এলাম কি ভেবে। এই দিন টায় আমার জীবনের কাল হয়ে গেলো।এর আগে বহুবার মন হারিয়েছি তোমাতে কিন্তু এইবারের মতো এমন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে নি কখনো।এই বদ রাগি ছেলেটার জন্য তার শ্যামাপাখি সেজেছিলো এটা আমার সৌভাগ্য।দুদিন যাবত তুমি অন লাইনে আসছো না। ভেবেছি ভীষণ অভিমান করে হয়তো ফোন অফ রেখেছো।কিন্তু এভাবে জ্বর বাঁধাবে ভাবতে পারিনি।হঠাত ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে তোমায় ভেবে। তোমার অসুস্থতা আমাকে এক বিন্দু ঢাকায় দাঁড়াতে দেয় নি।সারারাত রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম বাস এলেই উঠে পড়েছি।এই তোমাকে বার বার তুই থেকে তুমি বলা হয়ে যায়।আচ্ছা বলোতো কেনো বার বার এমন হচ্ছে।আমার তুই বলাটা তুমি কিভাবে তুমিতে পরিণত করলে বলোতো।
~~~~বিহান~~~~
এত কষ্ট দিয়ে এখন আবার হোয়াটস এপ এ ঢং করা হয়েছে।আর জীবনেও কথা বলবো না ওই হৃদয়হীন এর সাথে।যাওয়ার সময় নিজের ইচ্ছাতে গিয়েছে আমি তো আর আসতে বলিনি।আসুক তাতে আমার কি যায় আসে ঢং যত্তসব।
–রিয়াকে নিয়ে ছাদে বেত লাফাচ্ছি। গোলাপি স্কার্ট আর সাদা টি-শার্ট পরে বেত লাফিয়েই যাচ্ছি।বেত লাফাতে লাফাতে হাঁপিয়ে গিয়েছি।
–রিয়া আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলে,আচ্ছা দিয়া এত ডাক্তার দেখানো হলো সুস্থ হলি না।বিহান ভাই এসে জলপট্টি দিতেই সুস্থ হয়ে গেলি।বিহান ভাই এর কাহিনী কিরে দিয়া।আমার তো মাঝে মধ্য সন্দেহ হয় বিহান ভাই বাই এনি চান্স মনে মনে তোকে লাইক করে নাতো।বেত লাফানো স্টপ করে দিয়ে খানিক সময় হাঁপিয়ে একটু স্বাভাবিক অবস্হায় এসে বললাম রিয়া বুঝিস না উনি এতটাই বদমেজাজী আর খারাপ মানুষ জ্বর রিতীমত ভয় পেয়েছে।না হলে জ্বরকে উনার রাগের আগুনে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দিতেন।এইজন্য জ্বর বেচারা ভয়ে পালিয়েছে।
–দিয়া তোহা আপু কোন সাহসে বিহান ভাই এর জন্য পাগল হয়েছে বল তো।উনার কি প্রাণের ভয় নেই।বিহান ভাই ডিরেক্ট রিজেক্ট করে দিবেন জেনেও কোন আশায় প্রপোজ করবে বল তো।
–আরে রাখ তোর তোহা আপু।আলিপ যে শাড়ির টাকা দিয়েছে এটা আমাকে জানাস নি কেনো?তোরা জানিস না আলিপ একটু অন্য নজরে দেখে আমাকে।ব্যাপার টা আমার মোটেও ভাল লাগে না।
–আরে তোহা আপু আমাদের টাকা মেরে দিয়ে আলিপ ভাই কে দিয়ে পে করাইছে।
–তোহা আপুকে বলবো আমার নগদ সাতশ টাকা যেনো ফেরত দেয়।আমার ও টাকা গেলো আবার নাম ক্রেডিট নিলো অন্য কেউ।জানিস সাতশ টাকা গোছাতে কত সময় লেগেছে আমার।আমার কাছে সাতশ টাকা মানে বিশাল ব্যাপার এই বয়সে।
–আরে দিয়া আমার ও তো কষ্ট করে ম্যানেজ করতে হইছে টাকা।তোহা আপু এই টাকা গুলো মেরে দিলো।ছেড়ে দেওয়া যবে না। চল তোহা আপুর কাছে।
–এমন সময় আলিপ ভাইয়া ছাদে প্রবেশ করলো।মেঘ না চাইতে জল উনাকেই খুজছিলাম।আমরা কিছু বলার আগেই আলিপ ভাইয়া গড় গড় করে বলতে শুরু করলো আচ্ছা দিয়া সামান্য একটা শাড়ি কি আমি তোমাকে গিফট করতে পারিনা।তুমি বিহান ভাই এর কাছে টাকা দিয়েছো ক্যানো?বিহান ভাই খালাম্মার সামনে গিয়ে টাকা টা ফেরত দিয়েছে।শুধু ফেরতে দিয়েছে সেটা নয় খালাম্মার হাতে টাকা টা দিয়ে বলেছে আন্টি আলিপ কে দিয়ে দিবেন।আসলে দিয়া অন লাইনে টাকা পে করতে পারে না তাই আলিপ করে দিয়েছিলো। আচ্ছা দিয়া এইভাবে বিহান ভাই কে দিয়ে টাকা টা ফেরতে দেওয়ানোর কি খুব প্রয়োজন ছিলো।
–আলিপ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,,আপনি বেকার মানুষ আপনি শাড়ি দিতে যাবেন কেনো শুনি?তাছাড়া আপনি দিলেই বা নিবো ক্যানো?এভাবে কারো থেকে কিছু নেওয়াটা ঠিক না আলিপ ভাইয়া।
–দিয়া বাইরের মানুষ আর আমাকে এক নজরে দেখছো তুমি।আমি কি অন্য কেউ আমি কি দিতে পারি না।
–না আলিপ ভাইয়া প্লিজ।চাকরি বাকরি করেন তখন না হয় একদিন কিছু একটা নিবো সমস্যা নেই।
–আলিপ ভাইয়া যাওয়ার পরে আম্মু আমার হাত চেপে ধরে ঘরের মধ্য নিয়ে দাঁত খিচে বকা দিচ্ছেন।বুঝলাম না আম্মুর হঠাত এই রূপ বদল এর কারণ কি?আম্মু বলে উঠলো,দুধের দাঁত পড়ি নি তোর প্রেম শুরু হয়েছে।আজ তোর বাবা আসুক বলবো ছেলে দেখে বিদেই করতে।আমার বাড়িতে থেকে বাইরে লেখাপড়ার নামে প্রেম করে বেড়াবি সেটা তো হবে না।আমি কিন্তু মানুষের মায়ের মতো না দিয়া।আম্মুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললাম আম্মু আমি কার সাথে প্রেম করলাম। আন্দাজে বকাবকি করছো কেনো আম্মু।আম্মু এবার বলে উঠলো আলিপ কি জন্য এসছিলো শুনি।আমি কি বুঝি না কিছু।আমি তোর কাকিকে সোজা বলে দিবো তার ভাগনে যেনো আমার বাড়িতে পা না রাখে।আচ্ছা তোর কাকি বা কেমন বাড়িতে বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে থাকতে প্রাপ্ত বয়স্ক এক ছেলে বাড়িতে রেখেছে।কোনো কমনসেন্স নেই তার।আমার ভাতিজা দের দেখেছিস এসে রাত থাকতে।তাদের ইনভাইট করেও আনানো যায় না। তাছাড়া আমার ভাগনে রা তোকে বোনের মতো দেখে।আর বিহান থাকতে তো আমার কোনো চিন্তায় নেই।আম্মুর কথা শুনে রিতীমত অবাক আমি।আম্মুকে বললাম প্লিজ আম্মু আস্তে বলো যা বলার মেজ কাকি শুনলে কি ভাববে বলো তো।একটা অশান্তি হবে। তাছাড়া আলিপ সহ আমরা ভাই বোনের মতো করেই থাকি।তুমি যা ভাবছো সেগুলা গুলা ভুল আম্মু।আম্মুর এবারের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম আমি।আম্মু বললো শোন দিয়া বিহান আমাকে সব বলেছে আলিপ এর কি উদ্দেশ্য সব বলেছে।
–আম্মু চলে গেলে রাগ ফুঁশছি আমি।এই অসভ্য বিহান আম্মুকে দিয়ে বেশী কথা শুনিয়ে ছাড়লো।আয়রা কে নিয়ে মামাদের বাড়িতে গেলাম।আমি উঠানে দাঁড়িয়ে আয়রার হাতে সাতশ টাকা দিয়ে বললাম বিহান ভাই কে দিয়ে আয়।কিছুক্ষণ পরে আয়রা সাতশোর সাথে আরো এক হাজার টাকা এক্সট্রা নিয়ে এলো।বুঝলাম আয়রাকে দিয়ে হবে না তাই নিজেই গেলাম।ল্যাপটপ এ কি কাজ করছেন সেটা জানিনা পিসি রাখা টেবিলে বসে আছেন উনি।
–আমি বললাম,কি ব্যাপার টাকা ফেরত পাঠিয়েছি সাথে এক হাজার বেশী দিয়েছেন কেনো?
–বিহান ভাই কোনো কথা না বলে ল্যাপটপ এ মনোযোগ দিয়ে রইলেন।আমার সাথে কোনো কথা না বলে আরেক হাজার টাকা ধরিয়ে দিলেন।এবার আমি রাগান্বিত হয়ে উনার ল্যাপটপ এর সাটার অফ করে দিয়ে বললাম কি সমস্যা কি আপনার।
‘উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন কি সমস্যা ‘
‘টাকা দিচ্ছেন ক্যানো?’
‘তুই না ধার চাইছিস।আয়রা বললো।’
“আমার খেয়ে কাজ নেই তাইনা আমি কি ফকির নাকি ধার চাইবো ”
“ভুলে গেছিলাম বড়লোক ম্যাম”
“আলিপ ভাই এর ব্যাপারে আম্মুকে মিথ্যা বলেছেন ক্যানো?”
“এখন কি ক্ষেপিদের মতো আমাকে মারবি নাকি।”
“আপনি বলেছেন ক্যানো?”
“শ্বশুরের মেয়ে তার জামাই এর শাড়ি রেখে অন্যর শাড়ি পরবে সেটা দেওয়া যায় না।”
“এই আয়রা কে নিয়ে আর পারা যায় না।টাকা ধার চাইলাম কখন আমি।বিহান ভাই এর সামনেই বললাম আজ আয়রার খবর আছে বলেই বেরোতে গেলাম।”
“বিহান ভাই হাত ধরে একটানে কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন খবর তো আজ তোর হবে পিচ্চি। ”
চলবে,,