ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ৫২ ও শেষ পর্ব

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৫২/শেষ পর্ব

ভর দুপুরে জানালা দরজা আটকে রুমে একা বসে আছে, বারান্দার গ্রীলের সাথে ঝোলানো, একটা টব বাতাসের সাথে টব টা দুলছে এবং টবে রাখা ফুল গুলোও। আয়শা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। টবে সতেজ লাল টক টকে ফুল দুটোর নাম আয়শা জানে না। দু মাস আগেই বাবা টবে গাছটা বুনেছিলো।

দরজায় ঠক ঠক শব্দ হচ্ছে আয়শা উঠে গিয়ে, দরজা টা খুললো। নানা ভাই দাঁড়িয়ে আছে, আয়শা দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো। নানা ভাই ভেতরে এলেন সোফায় বসতে বসতে বললেন,
” কেমন আছো দিদি ভাই। ”

আয়শা ক্ষানিক ক্ষন তাকিয়ে, থেকে বললো “ভালো আছি। ”

” তুমি ভালো থাকলেই আমি খুশি। তোমাকে একটা সিদ্ধান্ত জানাতে এসেছি।”

আয়শা কালাম সাহেবের দিকে তাকালো। শুকনো গলায় ঢোক গিলে,বললো ” কি সিদ্ধান্ত নানা ভাই?”

” পনেরো দিন পর তুমি আমার সাথে ইউরোপ যাবে। সে খানে স্থায়ী নাগরিক হওয়ার ব্যাবস্থা করবো আমি। ও দেশেই তোমার ভবিষ্যতে বিয়ে হবে। ”

” কি বলছো তুমি? এই বাসায় কে থাকবে? বাবার এতো স্মৃতি রেখে আমি যেতে পারবো না। তাছাড়া…”

” থামলে কেনো? তাছাড়া কি?”

” কিছু না। আমি যাবো না। ”

” অনেক টাকা খাইয়ে, দ্রুত তোমার কাগজ পত্র রেডির ব্যাবস্থা করেছি। ”

আয়শা চুপ করে রইলো। নিজের জন্ম স্থান ছেড়ে কি ভাবে যাবে সে। বাবার এতো স্মৃতি, আর নাছিম কে ছাড়া কি ভাবে থাকবে। আয়শার ভেতর টা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। কালাম সাহেব আয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ” আশা করি তুমি আমার কথার অবাধ্য হবে না। যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দাও। ”

আয়াশা ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো ঘোলা হয়ে আসছে। আয়শা চেয়ারে থ হয়ে বসে রইলো, আয়শার ভীষণ কান্না পাচ্ছে, সব কিছু কেমন উল্টে পালটে যাচ্ছে। আয়শা চুল গুলের গোড়া শক্ত করে চেপে বসে রইলো। যে ভাবেই হোক নাছিমের সাথে তাকে দেখা করতে হবে, আয়শা ফোনটা হাতে নিলো। নাছিমের নম্বরে ডায়েল করলো, রিং হওয়ার পরও নাছিম কল টা তুললো না। আয়শা হতাশা হয়ে আরো কান্না কাটি করা শুরু করে দিলো।

আয়শা হেচকি তুলে কান্না করছে, ঠিক তখনি আয়শার কাধে কেউ একজন হাত রাখলো। আয়শা পেছন ঘুরে দেখলো ওরিন এসেছে। আয়শা চোখ দুটো মুছলো, নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো ” তুই এখানে?”

” হ্যাঁ। নানাভাই আসতে বললো, তুমি কান্না করছো কেনো?”

” কান্না করছি না। চোখে কিছু একটা পড়েছে জ্বলছে খুব। ”

ওরিন আয়শার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” এভাবে মিথ্যা কথা কেনো বলছো? তুমি যে সত্যি কান্না করছো তা আমি বুঝতে পারছি।”

আয়শা নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো, ঢুকরে কান্না করতে করতে বললো ” নানা ভাই বলেছে, পনেরো দিন পর আমাকে নিয়ে ইউরোপ চলে যাবে।”

” তাতে কি হয়েছে। তুমি সুন্দর একটা দেশে যাবে, আধুনিক লাইফস্টাইল হবে। তুমি কান্না করছো কেনো?”

” আমি কি ভাবে থাকবো, এই বাড়ি ছেড়ে তোকে ছেড়ে নাছ…”

” কি হলো থামলে কেনো? বলো?”

আয়শা চোখ মুছতে মুছতে বললো, ” কিছু না। তুই নানা ভাই কে বুঝা আমি যাবো না।”

” তোমার কাগজ পত্র আলরেডি রেডি হয়ে গেছে আপু। প্লিজ তুমি কেঁদো না। ”

আয়াশা ওরিনের কথা কানে, নিলো না। উঠে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো, আয়শা একটা রিক্সা নিয়ে ধানমন্ডি তার অফিসে গেলো নাছিমের খোঁজ নেয়ারর জন্য। আয়শা অফিসে পৌছানো মাত্রই আয়শা অফিসে ঢুকবে এমন সময়, ফরিদ বললো, “আয়শা আপু আপনি? ”

” হ্যাঁ ফরিদ। না না নাছিম স্যার কোথায়? ”

” ভাইয়া তো কিছুদিনের জন্য ঢাকার বাইরে গেছে মিটিংয়ে। আই ডোন্ট নো, কোথায় । উনি কবে আসবে, আমি সঠিক জানি না। সম্ভবত চোদ্দো পনেরো দিন পর। ”

” কিহ। আমি তো পনেরো দিন পর চলে যাবো। এক বার কি দেখতেও পারবো না লোকটাকে। ”

” কোথায় যাবেন আপু? ”

” এখন বলার সময় নেই তুমি ওরিনের কাছ থেকে জেনে নিও। আচ্ছা নাছিম স্যার আমার কল কেনো তুলছেন না?”

” সেটা ভাইয়া সঠিক জানে। আমার লেট হচ্ছে আমি যাচ্ছি আপু। ”

বলেই ফরিদ চলে গেলো। আয়শার ভীষণ অভিমান হচ্ছে তার নিজের ওপর নাছিমে ওপর। এই ভয়ংকর লোকটা কি ডিলের আর সময় পেলো না। এখনি কেনো ওনার যেতে হলো। আয়শা এখন কি করবে। ক্লান্ত শরীর টাকে নিয়ে আয়শা হাটতে শুরু করলো।

————————————
” আমার অভিনয় টা কেমন ছিলো?”

” দূর থেকে দেখে যা বুঝলাম, ভালোই ছিলো। আমার সাথে কথা বলার সময় ও আয়শা আপু নাছিম ভাইয়ার নাম নিতে গিয়ে থেমে গেছিলো। ”

” হ্যাঁ হ্যাঁ ওরিন ঠিক বলেছিস। আমাকেও কিছু একটা বলছিলো।”

” আপু ভাংবে তবুও মচকাবে না। দুজেন মধ্য কাউকে আমি কষ্টে দেখতে পারছি না। ”

বলেই ওরিন নিঃশ্বাস নিলো,ওরিনের ফোনে কল এলো ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ফরিদ বললো,
” হ্যালো ওরিন, আয়শা আপু অফিসে এসেছিলো।কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেলো। ”

” তুমি শিওর? ”

” ওয়ান হান্ড্রেড পার্সেন্ট। আমার সাথে কথাও হয়েছে।”

” নাছিম ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করেছে। ”

” হ্যাঁ। এবার প্লেন ‘বি’ অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। আই আম শিওর টা সাকসেসফুল হবে।”

” ইনশাআল্লাহ। ” বলেই ওরিন ফোনটা কেটে দিলো।

আয়শা বাড়ি ফিরতেই ওরিন কে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি। ওরিন আয়শার কান্নার কারণ টা জানলেও কিছু বলতে পারছে না। আয়শার ভেতর টা পুরে যাচ্ছে। কেনো এই লোকটা আয়শা কে এতো কষ্ট দেয়, একটি বার ফোন তুললে কি এমন ক্ষতি হতো?

—————- পনেরো দিন পর————-

দেখতে দেখতে কেটে গেলো পনেরোটা দিন। আজ রাতের ফ্লাইটে আয়শা এবং নানা ভাই ইউরোপ চলে,যাবে। বিকেলের কড়া রোদে আয়শা বারান্দায় বসে আছে, ওরিন রুমে আয়শার জামা কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে এবং আপন মনে কথা বলেই যাচ্ছে । রোদের আলোতে আয়শার চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে।

আয়শার কোন কথা উত্তর না পেয়ে ওরিন বারান্দায় এলো,” কি করছো আপু? আমি তো সেই কখন থেকে বক বক করেই যাচ্ছি। ”

” কিছু করছি না। এমনি বসে আছি। ”

ওরিন আয়শার পাশে বসলো, আয়শার কাধে ওরিন মাথা রাখলো,আয়শার চোখ দুটো ছল ছল করছে আয়শা জরানো কন্ঠে বললো,
” আমার কিছু ভালো লাগছে না। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ”

” কেঁদো না আপু। আচ্ছা চলো আমার একটু ঘুরতে যাই। ”

” এখন?”

” হুম। তোমার ব্যাগ প্যাকিং কমপ্লিট। আর যাবে তো রাতের ফ্লাইটে অনেক সময় আছে। ”

আয়শা আর কিছু বললো না, ছোট বোনের আবদার কি ভাবে অপূর্ণ রাখে। নাছিমের মুখ খানা আয়শার চোখের সামনে ভাসছে, পনেরো টা দিন এই লোকটা আয়শাকে একটি বার ফোন করে নি আয়শার খোঁজ নেয় নি, আয়শার এই অনূভুতির পরিনাম কি হবে?

ওরিন এবং আয়শা রমনা পার্কের দিকে রিক্সা দিয়ে যাচ্ছে , আয়শা হঠাৎ দেখলো নাছিম একটা মেয়ে কে নিয়ে হোটেলে ভেতরে ঢুকছে৷ আয়শা মাথায় আকাশ ভেংগে পড়লো। রাগে দুঃখে ক্ষোভে আয়শার গাঁ শির শির করছে। আয়শা রিক্সা থামাতে বললো,

” কি হলো আপু রিক্সা থামাতে বললে কেনো?”

” আমি এই মাত্র নাছিম স্যার কে হোটেলের ভেতরে যেতে দেখলাম।”

” তুমি ভুল দেখেছো আপু।”
বলেই ওরিন ঠোঁট টিপে হাসলো। আয়শা ওরিনের কথায় কান দিলো না। দ্রুত হোটেলের ভেতরে ঢুকলো। নাছিম মেয়েটা কে নিয়ে দশ তালায় উঠলো আয়শা অন্য লিফটে উঠলো, আয়শার সব কিছু এলোমেলো লাগছে। সব কিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে।

লিফটা থামলো দশ তলায় নাছিম একটা রুমে ঢুকে, দরজা বন্ধ করে দিলো। আয়শা দরজায় কলিং বেল বাজালো। মেয়েটা এসে দরজা খুলতেই আয়শা চুলের মুঠি চেপে বললো,
” কে তুই? আমার নাছিম স্যারের সাথে কি সম্পর্ক তোর। ”

মেয়েটা ব্যাথায় কাতরাচ্ছে, আয়শা আরো জোরে চুলে মুঠি চেপে ধরলো, নাছিম অবাক হওয়ার ভান ধরে বললো, ” আপনি ওকে মারছেন কেনো?”

” বেশ করেছি মেরেছি। আপনি পনেরো দিন ধরে এই মিটিং করছেন তাই না। ”

নাছিম পকেটে হাত দিয়ে বললো, “তাতে আপনার কি?”

আয়শা নাছিমের শার্টের কলার চেপে ধরে, কান্না করতে করতে বললো ” তুই সবচেয়ে বেশি খারাপ। লম্পট দুঃশ্চিত লোক ।”

বলেই আয়শা কান্নায় ভেংয়ে পড়লো। নাছিম আয়শা কে চেপে ধরলো। আয়শা নিজেকে ছুটানোর চেষ্টা করছে নাছিম আয়শার মাথা তার বুকের মাঝে চেপে ধরলো। আয়শা ছট ফট করছে, গলার কন্ঠে ভেংগে গেছে আয়শার।
” ছার আমাকে লম্পট দুঃশ্চিতা একটা। ”

নাছিম হাসতে হাসতে বললো, ” প্লিজ কেঁদো না। এটা প্লান ছিলো। তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না তার প্রমাণ করার জন্য। ”

” কিহহ! এই মেয়ের সাথে আপনার সম্পর্ক নেই?”

” আরে ও তো ফরিদের ফ্রেন্ড বাধনের বোন। তোমাকে পরিক্ষা করার জন্য এনেছি। বেঁচারি মার খেলো। ”

” আপনার সাথে যদি ভবিষ্যতে আর কোন মেয়েকে দেখি তাহলে আছড়ে আছড়ে মারবো। মাইন্ড ইট। ”

” ইশশ আমার রাগী বউ টা। ”

” আমি কারো বউ না। কিছুক্ষণ পর বিদেশ চলে যাচ্ছি।”

নাছিম আয়শা কে জরিয়ে ধরে বললো, “আমার থেকে দূরে সরলে ঠ্যাং ভেংগে দিবো। ” বলেই নাছিম আয়শার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।

কিছুক্ষণ পর………………

” একটা কান্ড ঘটেছে।”

নাছিম চোখ বড় বড় করে বললো ” কি?”

” আজ রাতে আমার ফ্লাইট। এখন কি হবে?”

” একটা উপায় আছে। আমরা এখনি কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নেই। ”

” এখনি?”

” হুম৷ ”

অতঃপর আয়শা এবং নাছিমের বিয়ে সম্পন্ন হলো। আয়শা নাছিম কাজি অফিস থেকে বের হলো, নাছিম এবং আয়শা হাত ধরে হাটছে আয়শার ঠোঁটের কোনে হাসি। নাছিম আয়শার হাতের পিঠে চুমু দিলো।

বাসায় যেতেই ঘটলো আরেক বিপত্তি, ওরিন ফরিদ চুপ করে বসে আছে ওরিন আয়শার হাতে একটা চিঠি দিলো। আয়শা জোড়ে পড়তে শুরু করলো,

‘ প্রিয় নাতী ও নাত বউয়েরা ‘

আজ আমার বেশ বিশ্বাস হচ্ছে ভালোবাসা সত্য হলে, মানুষটার সাথে মিল হবেই, আয়শা এবং নাছিমের মতো তাড়াতাড়ি আর না হয়, পাঞ্চাশ বছর পর আমার আর কালামের মতো। হ্যা, আমি তোমার নানার সাথে ইউরোপ চলে যাচ্ছি। নাছিম আয়শার মতো, আমার ভালোবাসা পূর্নতা পেয়েছে, শেষ বয়সে কটা দিন না হয়, তার হাত ধরে কাটাই৷
আয়শা নাছিম এবং ওরিন ফরিদ শুখে সংসার করো। আল্লাহ হাফিজ। “—

চিঠি পড়া শেষে সবাই সবার দিকে তাকিয়ে কয়েক মূহুর্ত পরে সবাই প্রান খুলে হাসলো।
পূর্নতা পাক সব ভালোবাসা। এখন না হয় পঞ্চাশ বছর পর। ভলো থাকুক ইঁচড়েপাকা গুলো ❤️

———–❤️শুভ সমাপ্তি❤️———

গল্পটা কেমন হয়েছে সবাই জানাবেন। আমাকে সাপোর্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ❤️। আবারো ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে❤️।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here