খেয়া ঘাটের প্রেম পর্ব ৭+৮+৯

#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_৭

“” আয়ান বলে আচ্ছা শুনি কি সাহায্য করতে হবে তোমায়। আয়ানের কথা শুনে তাসনুর মুখে হাসি ফুটে তারপর খুশিতে গদগদ হয়ে বলে। আপনি মইটা ধরবেন আমি নেমে যাব। আয়ান বলে আমি কেনো তোমার মই ধরতে যাবো 😏। তাসনুর মুখের হাসি উবে যায় এবার

— আপনি এই না বললেন আমাকে সাহায্য করবেন আর এখনই পাল্টি খাচ্ছেন 😒 তাসনু বলে। আয়ান অবাক হওয়ার ভান করে বলে কখন বললাম তোমায় সাহায্য করব। আমি বললাম শুনি কি করতে হবে। শুনে রাখল আর কি 😁।

“” তাসনু বলে প্লিজ মইটা ধরুন যদি গাছ মালিক আমাকে দেখে সোজা গিয়ে দাদিমা কে নালিশ করবে। আয়ান বিড়বিড় করে বলে আমি এটাই তো চাই। তাসনু এবার ভ্রু কুচকে বলে কি বিড়বিড় করছেন মইটা ধরুন। আয়ান বলে যাই বলি না কেন তোমার কি। তোমাকে বলব নাকি। তাসনু মুখ বেকা করে বলে ওইসব শোনার ইচ্ছেও নেই আমার হু৷ আমাকে নিচে নামান।

— তখন আয়ান দাত কেলিয়ে বলে কোলে করে। তাসনু আয়ানের কথায় বেকুব বনে যায়। তারপর মনে মনে বলে ব্যাটা লুচ্চা একটা। আসল রুপ ঠিক বের হয়ে আসছে শয়তান হনুমান টিকটিকি একটা । আয়ান বলে ওই সব গালি দিয়ে লাভ নেই। তুমি আজ নিচে আসছো না। তাসনু চমকে উঠে ভাবে জানলো কেমনে মনে মনে গালি দিচ্ছি। তাসনু এবার মুখে একটু হাসি এনে বলে জিনা৷ মই ধরলে চলবে।

“‘”” আয়ান একটা ভাবার ভান করে বলে আচ্ছা আমি তোমাকে নিচে আসতে সাহায্য করতে পারি একটা শর্তে। শর্তের কথা শুনে তাসনুর মুখের হাসি তো চলে যায় সাথে মুখ ছোট করে তাকায় আয়ানের দিকে। আয়ান এবার ভ্রু নাচিয়ে বলে কি রাজি। তাসনু বলে আমি কোনো শর্ত তর্ত শুনব না। আমাকে নামান। আয়ান বলে আমার বয়ে গেছে তোমাকে নামাতে। ওইখানে বসে থাকো একটু পর গাছ মালিক এসে তোমাকে কোলে করে নামিয়ে বাড়ি দিয়ে আসবেনি ব্যাজ্ঞ করে বলে আয়ান.।

— তাসনু এবার চিল্লাই উঠে বলে না৷ আয়ান এবার চলে যেতে নেয় তখনই তাসনু বলে আমি রাজি বলুন কি শর্ত। আয়ান এবার একটা দুস্টু হাসি দিয়ে বলে বেশি কিছু না। গাছ থেকে নামার পর তুমি গুনে গুনে ২০ বার কান ধরে উঠবস করবে। আয়ানের কথা শুনে তাসনু অবাক সাথে চমকে বলে আমি পারব না। আয়ান বলে ঠিক আছে এইখানেই বসে থাকো। এই যে গাছ মালিক আসছে তোমাকে শুধু দেখার অপেক্ষা। তাসনু এবার সত্যি তাকায় দেখে গাছ মালিক এদিকেই আসছে। তাসনু এবার বলে আমি রাজি আমি রাজি আমাকে তাড়াতাড়ি নামান প্লিজ। আয়ান বলে এইতো লাইনে আসছো।

—- আয়ান মই ধরে তাসনু তারপর গাছ থেকে নেমে যায়। তারপর তাসনু লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলে যাক বাবা এবারের মতো বেঁচে গেছি।। আয়ান বলে এখনো বাঁচো নাই। আগে শর্ত পুরন করো। তাসনু বলে আপনি শোধ নিচ্ছেন আমার থেকে তাই না। আয়ান বলে কিসের শোধ। তখনই তাসনু বলে ওই যে কাল আপনারা খাবারে জামাল ঘোটা মিশাই এইটুক বলে তাসনু মুখ চেপে ধরে।৷ আয়ান আগেই জানতো এটা তাসনুদের কাজ ছিল। আয়ান বলে এখন মুখ চেপে লাভ নেই। আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম। তাড়াতাড়ি কান ধরে উঠবস করো।

— তাসনু বলে আমি পারব না। আয়ান বলে আমি আগেই জানতাম তুমি এক কথার মেয়ে না। তারপর আয়ান ফোন বের করে তাসনুর মুখে গোফ আঁকা পিক বের করে দেখাই। তাসনু তো অবাক এই পিক কখন তুলল। আয়ান বলে এতো ভেবে লাভ নেই। আমি গোফ করার পর তুলে রেখেছি কখনো যদি কাজে দেয়। এই যে এখন কাজে লেগে গেলো। তুমি যদি আমার কথা না শুনো তাহলে এই পিক আমি সোস্যাল মিডিয়াতে দেব সবাই দেখবে আমাদের দ্যা গ্রেট ফাজিল রানীর গোফ বের হয়েছে 😇।

— তাসনু বলে আপনি.. আপনি.. একটা । আয়ান বলে কি আপনি আপনি করছো কান ধরো। তাসনু এবার উপায় না পেয়ে কান ধরে উঠবস করতে শুরু করে। আয়ান এই সুযোগে ভিডিও করে নেয়। আর তাসনু কান ধরে উঠবস করছে আর আয়ানের গুস্টি উদ্ধার করছে মনে মনে।

— কান ধরে উঠবস শেষ করে তাসনু আয়ানের দিকে তাকায় দেখে আয়ান ফোন ধরে আছে তার দিকে। তাসনু কান থেকে হাত সরিয়ে বলে এই এই কি করছেন আপনি। আয়ান এবার বিখ্যাত একটা জয়ের হাসি দিয়ে বলে গ্রামের ডন কান ধরে উঠবস করছে বলে কথা স্মৃতি রাখতে হবে না।।তাই ওইটা স্মৃতি হিসেবে রেখে দিলাম৷ নেক্সট যদি আমার সাথে লাগতে আসো তাহলে পিক সহ ভিডিও সোজা হাত দিয়ে ইশারা করে চলে আয়ান। আর তাসনু এইখানেই বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে।

— কি হলো সব তাসনুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তখনই অনু আর নুসরাত আসে বলে সরি সরি তোমাকে একা রেখে চলে যাওয়ার জন্য। ওই বুইড়া বেটা যদি আমারে দেখত তাহলে এদের বলতে না দিয়ে তাসনু বলে তাহলে কি মরে যেতিস তুরা। তোদের জন্য আজ আমি বিপদে পড়ে গেলাম। এই শহরে বিড়াল আমার মান ইজ্জত সব শেষ করে দিল।। অনু অবাক হয়ে বলে মানে।। তাসনু সব খুলে বলে তখন অনু আর নুসরাতকে। ওরা তো শুনে অবাক। এর মধ্যে এত কিছু হয়ে গেলো 😒।

—————————-

— সামিরা ক্লাসে বসে আছে। তখনই তানু আসে লাফাতে লাফাতে তারপর ধপ করে বসে পড়ে সামুর পাশে। সামিরা চমকে উঠে বুকে ফু দেয়। তারপর তানুর পিঠে একটা গুড়ুম করে কিল দিয়ে বলে সাকচুন্নি একটা আসতে ধিরে চলতে পারিস না। এতো লাফানোর কি আছে।

— তানু পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে একটা দাত কেলানি হাসি দিয়ে বলে দোস্ত দারুন একটা ঘটনা ঘটেছে। সামিরা এবার মানে কি করছিস৷ কোনো অকাম করে আসিস নি তো৷। এই আমি তোর সাথে নাই আগেই বলে দিচ্ছি। তানু এবার বলে তুই যে এতো ভিতু আগে জানতাম না। আরে শুননা কি হয়ছে তারপর তানু সামিরাকে সব খুলে বলে তুহিনের সাথে ঘটে যাওয়া সব। সামিরা তো শুনে অবাক সাথে হাসতে হাসতে শেষ। তানু বলে কেমন দিলাম বল।

“”” সামিরা বলে ভাই শুন বেশি লাগতে যাস না পরে বুঝবি।। যদি প্রিন্সিপালকে কমপ্লেন করে তখন বুঝবি । আমি বাবা এই সবের মধ্যে নাই। তানু বলে আরে কিছু হবে না। ওই বেটা এতটাও বাচ্চা না যে স্যার এ কমপ্লেন করবে।। তারপর ক্লাসে আসে তুহিন তাদের প্রজেক্ট নিয়ে আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তাই আগেই চলে এসেছে। সবাই এবার নিজ নিজ স্থানে ঠিকঠাক হয়ে বসে। তুহিনের তানুর দিকে চোখ যেতেই তানু একটা হাসি উপহার দেয় আর তুহিন সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়। মনে মনে ঠিক করে এই মেয়ের ধারে কাছে থাকবে না আর সে৷ তারপর ক্লাস শুরু করে।

———————

“”” এইদিকে আয়ান রিক তুর্য ঘুরাঘুরি করে এবার জমিদার বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছে। তাসনু অনু নুসরাত সবাই এক সাথে ভাবতে ছিল কি করে ওই ফোন টা নেওয়া যায় আয়ানের থেকে। তারপর তাসনুর চোখ যায় আয়ানের দিকে। তাসনু কিছু একটা ভেবে মুখে হাসি এনে সামনে কিছু বাচ্চারা খেলতে ছিল তাদের ডাকে। তারপর ওদের কানে কানে কি একটা বলে মুখে শয়তানি একটা হাসি নিয়ে আসে।

— বাচ্চারা চলে যায় তাদের মিশন শেষ করতে। এই সব বাচ্চারা তাসনুর খুব বড় ভক্ত। তাসনু এদের মাঝে মাঝে চকলেট এটা সেটা সাথে খেলাও করে।।

— আয়ানরা একটা ধান খেতের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ধান খেতে প্রচুর পানি সাথে কাদা হয়ে আছে। তারা ধান খেতের আলের উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছে তখনই কিছুই বাচ্চা দৌড়ে তাদের দিকে যায়। তারপর ওদের ধাক্কা দিয়ে ধান খেতে ফেলে দিয়ে দে দৌড়। আয়ান আর তুর্য এক সাথে ছিল রিক একটু দূরে কিন্তু তাও রিক বেচারার শেষ রক্ষা হলো না। আয়ানদের ধরতে গিয়ে সেও পড়ল কাদার মধ্যে।

— আয়ান রিক তুর্য কাদায় মাখামাখি অবস্থা। এতো কাদা মাখছে তাদের শরীরে তাদের চেনার উপায় নেই এমন। দূর থেকে তাসনু ওদের কান্ড দেখে জোরে হেসে দেয় সাথে অনু নুসরাতও। তাসনু বলে আমার সাথে পাংগা নেওয়ার শাস্তি এটা 😏�…. ………..

চলবে… #খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_৮

“””” আয়ানেরা কাদায় পড়ে আবার মাখামাখি অবস্থা। রিক বলে শালা তোদের জন্য আবার কাদায় পড়তে হলো। এই গ্রামের কাদা মনে হয় আমাদের পিছ ছাড়বে না। আয়ান বলে আমার কি দোষ এই বাচ্চা গুলোই তো ধাক্কা দিয়ে গেলো আর তাল সামলাতে না পেরে কাদায় পড়লাম।। তুর্য বলে আমাকে আগে উঠা ভাই। এর মধ্যে আর কতখন।

— আয়ান উঠে রিককে টেনে তুলে তারপর তুর্যকে। ওরে মুখ চোখের অবস্থা এমন যে শুধু চোখ দুটি দেখা যাচ্ছে। ওই দিকে তাসনু অনু নুসরাত তো হাসতে হাসতে শেষ ওদের দেখে। তাসনুর মনে এবার শান্তি লাগছে। তাসনু মনে মনে ভাবছে এতখনে হয়ত ওদের ফোন শেষ পানি আর কাদা গিয়ে ফোনে। একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দেয় তাসনু। তারপর ওদের সামনে দিয়ে হাসতে হাসতে যায়।

— তাসনু বলে আহারে বেচারারা। এই তুরা দেখ শহরে বিড়াল গুলো আমাদের গ্রামের কাদাকে কত ভালবেসে ফেলেছে। তাই যখন তখন কাদায় সাথে ভাব করছে তাই বলে চলে যায় হাসতে হাসতে। আর আয়ানরা রাগে ফুসছে। তারপর জমিদার বাড়ি মুখী হাটা দেয় তারা।

—- নুরজাহান বিবি বাইরে বসে ছিলেন পান খাচ্ছিলেন আর গ্রামের কিছু মহিলা এসেছে তাদের সাথে বসে গল্প করতে ছিল। এমন সময় আয়ান রিক তুর্য এসে হাজির হয়। সবার নজর যায় তাদের দিকে। নুরজাহান বিবি বলে এই কারা তোমরা আর এই ভাবে বাড়ির মধ্যে এসেছো কেনো। এটা কি ময়লা রাখার জায়গা মনে হয় তোমাদের। বাইরে যাও। আয়ানরা বেকুম বনে গেছে নুরজাহান বিবির কথায়। তখনই আসে তাসনু বলে দাদিমা এটা নোংরা রাখার জায়গা না হলেও এই আবর্জনা গুলো কিন্তু তোমারই 😁।

— রিক বলে দেখেছিস সুযোগ পেয়ে কেমন কথা শুনাচ্ছে। আয়ান বলে চেপে যা পরে দেখছি আমি। তারপর আয়ান বলে নানু আমি আয়ান। এবার নুরজাহান সহ সবাই চমকে উঠে কারণ গ্রামের মহিলা গুলো মুলত আয়ানকে দেখতেই এসেছিল। শুনেছে জমিদার বাড়ির মেয়ের ছেলে এসেছে শহর থেকে তাই তাকে দেখতে আসা। কিন্তু এমন ভাবে যে তার দেখা পাবে ভাবেনি।

— নুরজাহান বিবি বলে তোর এমন অবস্থা কেন নানুভাই৷ আয়ান বলে আর বলো না গ্রামের কিছু ফাজিল পুলাপানের জন্য এমন তারপর সব বলে কি ঘটেছে৷ নুরজাহান বিবি তো শুনে সেই হাসি সাথে বাকিরাও। তখন তাসনু বলে আসলে কি বলো তো দাদিমা। তোমার নাতি তো এর আগে কখনো কাদা দেখে নাই৷ তাই গ্রামে আসার পর কাদা দেখে খুব ভালো লাগছে তাই তো যখন তখন কাদায় পড়ে তাত সাথে ভাব করে৷ তাই বলে মুখ চেপে হাসে তাসনু আর আয়ান কটমটে চোখে তাকায় তাসনুর দিকে।। তায়ে তাসনুর কোনো যায় আসে না।

— নুরজাহান বিবি বলে যাও যাও তোমরা ফ্রেস হয়ে আসো৷ এমন করে বেশিখন থাকলে শরীর খারাপ করবে। আয়ানরা এবার চলে যায়। যাওয়ার সময় তাসনুর দিকে একবার তাকাই আয়ান আর তাসনু একটা জম্পেস হাসি দেয় দাত বের করে যার মানে আয়ান বুঝতে পারে না।

—————————-

“”” তুহিন প্রজেক্টের সকল কিছু দেখাই দিচ্ছে কারণ এই প্রজেক্টটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে তাদের। সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে আর বুঝছে কিন্তু তানু এক পলকে তুহিনের দিকে তাকিয়ে। যা তুহিনের দৃষ্টি অগোচর হয়নি। তুহিনের এতে ভীষণ বিরক্ত লাগছে আবার লেকচার দিতেও সমস্যা হচ্ছে। হওয়াটা স্বাভাবিক কেউ যদি এমন কঠোর দৃষ্টি রাখে কারো দিকে তার আনইজি লাগা স্বাভাবিক।

— তুহিন এবার তানুর দিকে দৃষ্টি দেয় আর তখনই তানু তুহিনকে চোখ মেরে দেয় আর তুহিন কাশতে শুরু করে। তানুর মুখে লেগে আছে দুস্টামির হাসি। তুহিন মনে মনে খুব করে বকা দিতে থাকে তানুকে। কার পাল্লাই যে পড়লো সে ভেবেই শেষ চিন্তায়। তারপর আবার ক্লাসে মন দেয়৷ কিন্তু আর তানুর দিকে তাকায় না সে।

— সন্ধ্যার সময় তাসনু নাচতে নাচতে তার ঘর থেকে অনুর ঘরে দিকে যাচ্ছিল উদ্দেশ্য গল্প করবে সবাই একসাথে। আজ তাসনুর মনটা ভীষণ ভালো। আয়ানকে নাকানিচুবানি খাওয়াতে পেরে। তখন পিছন থেকে কারো কন্ঠস্বর কানে আসে তাসনুর ঘুরে দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে। তাসনু ভ্রু কুচকে তাকাই আয়ানের দিকে

— আয়ান দরজার পাশে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের নখ দেখতে দেখতে বলে কেউ যদি মনে করে আয়ান চৌধুরীকে কাদায় ফেলে তার ফোন নষ্ট করতে পারবে। তাহলে বলব সে ভীষণ বোকা আর বোকামি তার চিন্তা ভাবনা। তাসনু এবার প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তাকায়।
— আয়ান এবার তাসনুর দিকে তাকিয়ে বলে। আয়ান চৌধুরী এতো কম দামের ফোন রাখে না যে সামান্য কাদায় পড়ার জন্য তার ফোন অক্কা পাবে। যদি ৭ দিন ফোন আমার পানির মধ্যে রাখি তাও কিছু হবে না বুঝেছো। আর তোমার এই লো ক্লাস কাজে আমার ফোনের কিছুই হয়নি। তাই বলে ফোনটা বের করে সামনে ঘোরাতে থাকে আয়ান।

— তাসনু বলে তার মানে আপনার ফোনের কিছুই হয়নি। আয়ান এবার গা ছাড়া ভাব নিয়ে ঠোঁট এলিয়ে না বলে। তাসনু আবার বলে তার মানে ছবি ভিডিও সব এখনো ঠিক আছে। আয়ান সাথে সাথে বলে অবশ্যই। দেখবে তুমি। তাসনু এবার জোরের সাথে চিল্লাই বলে না। আয়ানের মুখে আসে হাসি। তাসনু এবার বলে আচ্ছা আমি তো আপনার সব কথা শুনেছি তাহলে এই গুলো রেখে কি হবে একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে তাসনু।

— আয়ান বলে আমার খুব ভালো লেগেছে তাই যত্ন করে রেখে দিছি। যদি কখনো আমার জুকার দেখার ইচ্ছে তাহলে এটা দিয়ে কাজ চালিয়ে নেবো এই আর কি। তাসনু এবার কঠিন রেগে যায় কিন্তু প্রকাশ করে না। আয়ান তাসনুর মুখভঙ্গি দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসলে চলবে না তাই খুব কষ্টে হাসি চেপে রেখেছে। তাসনু এবার বড় বড় ধাপ ফেলে চলে যায় কিছু না বলে আর আয়ান জোরের সাথে হেসে দেয় এবার। তারপর ঘরে চলে যায়।।

— অনু নুসরাত বসে ছিল একসাথে তাসনু গিয়ে না বসে ঘরের এপাশ থেকে ওপাশ হাটাহাটি করছে আর কিছু একটা চিন্তা করছে। অনু নুসরাত দু’জন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে নিজেদের তারপর তাসনুর দিকের তাকায়। অনু বলে আপু কোনো সমস্যা এমন ছটফট করছো কেনো। তাসনু এবার বসে বিসানার এক পাশে তারপর বলে সমস্যা কি বলে সমস্যা বিরাট সমস্যা। কি করব কিছু মাথায় আসছে।৷ ওই শহরে বিড়ালকে যদি আমি মজা না দেখিয়েছি কিন্তু ওই ছবি ভিডিও থাকা পর্যন্ত আমি তো কিছুই করতে পারব না।

— সবাই এবার গভীর ভাবে ভাবছে কি করা যায় আর তাসনু আবার ঘরের মধ্যে পায়চারি শুরু করে দেয়। তারপর লাফ দিয়ে উঠে বলে পেয়েছি। তাসনুর হাসি দেখে অনু নুসরাতের মুখেও হাসি আসে৷ কারণ ওরা জানে তাসনু যেটা করবে সফল আসবেই এতে কোনো সন্দেহ নাই। নুসরাত বলে কি আইডিয়া বলো আমাদের। তাসনু এবার হাসতে হাসতে বলে তোদের তো বলা লাগবেই নাহলে হবে কি করে। তারপর একটা দারুণ হাসি দেয়।

—- আঁখি আয়ানের সাথে কথা বলছে৷ সবার খোজ খবর নিচ্ছে। সবাই কেমন ব্যবহার করছে তাদের সাথে। এবার আঁখি বলে আচ্ছা আয়ান বাবাকি এখনো ভীষণ রেগে আছে আমার উপর। আগের মতো ঘৃণা করে এখনো আমাকে তাই না আয়ান৷ আয়ান এবার চুপ হয়ে যায় কিছু বলে না। কি বলবে সত্যি তো তার নানাভাই তার মাকে ভীষণ ঘৃণা করে। কিন্তু সেই কথা কি করে বলবে তার মাকে। আঁখি আবার ও বলে কি হলো কিছু বল চুপ কেনো। আয়ান এবার আমতাআমতা করে মা ওইসব নিয়ে ভেবো না তো সব ঠিক হয়ে যাবে৷ নানাভাই একটু রেগে আছে তোমার উপর এই যা। তবে বেশি দিন থাকবে না দেখো।

“” একটু রাগে ২৬ বছর কেটে গেলো আয়ান তাও তোর নানাভাইয়ের একটু মন নরম হয়নি আমার জন্য এতো দূরে থেকেও আর কখনো হবেও না আমি জানি। তাই মিথ্যা শান্তনা মাকে দিস না। কষ্ট হলেও এটাই সত্যি আমি জানি। আয়ান কি বলবে এত পরিপেক্ষিতে তার জানা নেই। তাই প্রসঙ্গ পালটাতে বলে বাবা কেমন আছে আর সামু ভালো আছে তো আঁখি চোখ মুছে বলে সবাই ভালো আছে। তোর জন্য চিন্তা করছিল তোর বাবা। কথা বলে নিস। আয়ান বলে আমি বাবার সাথে কথা বলে নিব মা চিন্তা করতে বারন করো এখানে অনেক নেট সমস্যা। তাই বাবার সাথে কন্টাক্ট করা হয়নি৷

— এর মধ্যে সামু এসে হাজির হয় আর আঁখিকে বলে কে ভাইয়া লাইনে মা। আঁখি হেসে হ্যাঁ বলে তখনই আঁখির হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয় সামু। তারপর এক নাগাড়ে বলতে শুরু করে কেমন আছিস ভাইয়া। ওইখান সব ঠিকঠাক তো। আচ্ছা কে কে আছে ওইখানে তুই নিশ্চয় খুব মজা করছিস তাই। আয়ান সামুর কথায় হেসে দেয় তারপর বলে আস্তে আস্তে সামু একসাথে এতো প্রশ্ন করলে জবাব দেয় কি করে আমি। তুই আর ঠিক হলি না ছাগলী থেকে গেলি৷ সামু এভার বলে ভাইয়া তুমি ওই খান থেকেও আমাকে ছাগলী বলছো। যাও কথায় নেই তোমার সাথে৷

— আয়ান বলে ঠিক আছে আমি ও বলব না নানুবাড়ির গল্প। সামু এবার উল্লাসের সাথে বলে এই না না ভাইয়া বলো না। আমি তো কখনো যায়নি আর জানিও না নানুবাড়ি কেমন হয়। আয়ানের মন খারাপ হয় এবার৷ তারপর বলে এবার তোকে নিয়ে আসব বোন মন খারাপ করিস না। শুধু তুই না মা বাবা সবাই মিলে আমরা আসব এখানে৷ সামু বলে সত্যি৷ আয়ান হ্যাঁ বলে। তারপর সব বলতে শুরু করে প্রথম দিন থেকে কি কি হয়েছে।

— তানু পড়তে বসেছে কিন্তু তার মনটা পড়ে আছে তুহিনের দিকে। বারবার চোখের সামনে ভেসে আসছে তুহিনের হাত নাড়িয়ে কথা বলা হাসি মুখ এই সব ভাবছে আর আনমনে হাসছে তানু৷ তখনই তানুর মা তানুর ঘরে আসে । তানুকে এই ভাবে একা একা হাসতে দেখে বলে কি রে এমন পাগলের মতো একা একা হাসছিস কেনো ব্যাপার কি। তানু মায়ের গলা পেয়ে চমকে উঠে নড়েচড়ে বসে৷ বলে কই হাসছি কিছু না তো ওই এমনি । তানুর মা তানুর দিকে কিছুখন সন্দেহ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলে তোর বাবা এসেছে ডাকছে তোকে। তানু এবার লাফ দিয়ে উঠে বলে বাবা এসেছে। আর তুমি এখন বলছো আমাকে। তাই বলে ছুটে চলে যায় বাবার কাছে। তানু তার বাবাকে ভীষণ ভালবাসে সাথে মাকেও। একটা মাত্র সন্তান সে। তানুর বাবা একজন বড় নামকরা ব্যবসায়ী। কাজের জন্য বেশির ভাগ বাইরে থাকতে হয়।

রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর তাসনু অনু নুসরাত পা টিপে টিপে ঘর থেকে বের হয় উদ্দেশ্য আয়ানের ঘরে যাবে আর ফোনটা হাতানো………
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_৯

— তাসনু অনু নুসরাত অনেক সাবধানে আয়ানের ঘরে প্রবেশ করে। কিন্তু অবাক করার বিষয় আয়ানের রুমের দরজা শুধু ভেজানো ছিল। এতে তাসনু মহাখুশি বেশি কষ্ট তাদের করা লাগলো না এই ভাবে।

“” আয়ানের ঘরে ঢুকে তাসনু আর অনু নুসরাত ঘরের বাইরে দাড়িয়ে আছে। তাসনু ঘরে ঢুকে দেখে আয়ান পা থেকে মাথা পর্যন্ত চাদর টেনে ঘুমিয়ে আছে। তাসনু একটু ভ্রু কুচকে ভাবে এই গরমে কেউ এই ভাবে ঘুমাতে পারে আগে জানতাম না।

—- তাসনু এবার আস্তে আস্তে আয়ানের দিকে যায়। তারপর চারিদিকে চোখ বুলিয়ে ফোনটা দেখার চেষ্টা করে কিন্তু কোথাও ফোন আছে বলে মনে হচ্ছে না। তাসনু এবার আয়ানকে মনে মনে ১০১ গালি দিয়ে ভাবনায় পড়ে যায়। কোথায় রাখতে পারে ফোনটা। তারপর তাসনু আয়ানের বালিশের নিচে আস্তে আস্তে হাত দিয়ে দেখে এখানেও নাই।

— তাসনু এবার চিন্তাতে আয়ানের পাশেই বিসানায় বসে পড়ে। কোথায় রাখছে এই শহরে বিড়ালটা ফোন। বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমাইছে এমন ভাব৷ যে আবার অমুল্য জিনিস তো আবার হু তাই বলে মুখ বাকাই তাসনু। তারপর তাসনু খেয়াল করে আয়ানের জানালার পাশে ধোঁয়া উড়ছে। আস্তে আস্তে ধোঁয়া বাড়তে আছে। তাসনু চোখ কপালে উঠে যায়।

— এতো রাতে ধোঁয়া কোথায় থেকে আসলো। এবার তাসনুর মনে একটু ভয় আসতে শুরু করে। তারপর তাসনু দেখে ধোঁয়ার মধ্যে একটা ছায়া সাদা পোশাক পড়ে দেখা যাচ্ছে। তাসনুর এবার জান যায় যায় অবস্থা। তাসনু চোখ বন্ধ করে ফেলে আবার খুলে এবার দেখে এক সাথে দুইটা ছায়া দাঁড়িয়ে জানালার পাশে। তাসনু এবার জোরে চিৎকার করে উঠে অনু নুসরাত চমকে উঠে হুড়মুড় করে ঘরে প্রবেশ করে।

— অনু বলে কি হয়ছে আপু চিৎকার করছো কেনো জেগে যাবে তো সবাই।।তাসনুর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। হাত দিয়ে ইশারা করে দেখাই জানালার বাইরে। নুসরাত বলে কি ওইদিকে তাই বলে যেই না তাকিয়েছে জানালার বাইরে ওদের চোখও কপালে।

–অনু আর নুসরাত দুজন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে। তারপর ওরা ওরে মারে বলে এক দৌড়ে তাদের রুমে চলে যায় গিয়ে দরজা লক করে দেয় আর তাসনু এবার পড়ে গেছে একা ওইখানেই। তাসনু এমনি ভুতে ভীষণ ভয় পাই তার উপর নিজ চোখে যা দেখেছে তাতে নড়াচড়া করার শক্তি যেন আর নাই। তাসনু এবার চোখ মুখ খিচে দৌড় দেয় আয়ানের ঘর থেকে। আয়ানের ঘর থেকে বের হতেই সামনে ধাক্ক খায় কারো সাথে। তাসনু চোখ তুলে যা দেখে তাতে অবস্থা শেষ সাথে সাথে জ্ঞ্যান হারায় সেখানে।

— আয়ান সাথে সাথে তাসনুকে ধরে ফেলে। তারপর ভুতের মুখোশ পড়াছিল ওইটা খুলে ফেলে। রিক তুর্য দোড়ায় আসে ওদের কাছে। রিক বলে একটু বেশি হয়ে গেছে মনে হয় আমাদের। আয়ানও মন খারাপ করে ফেলে বলে সত্যি আমারও তাই মনে হচ্ছে। তাসনু এতো ভয় পেয়ে যাবে ভাবিনি। তুর্য বলে কথা রাখ আগে ওকে ঘরে রেখে আসি চল কেউ দেখলে সমস্যা হয়ে যাবে। আয়ান এবার তাসনুকে কোলে করে নিয়ে ঘরে যায় তাসনুর।

— আসুন আয়ানরা কেনো এমন করলো জেনে নিই।

“”” তাসনুকে ফোনের কথাটা বলার পর তাসনুর চিন্তিত মুখ দেখে আয়ান বুঝে গিয়েছিল তাসনু দমে যাওয়ার মেয়ে না। কিছু একটা করবে আর আজ রাতেই করবে। তাই আয়ান রিক তুর্যকে বলে প্লান করে ভুত সেজে তাসনুদের ভয় দেখাবে। যা ভাবা তাই কাজ। আয়ানের বিসানার কোল বালিশ রেখে তারা বাইরে অপেক্ষা করে তাসনুদের আসার। যখন তাসনু আয়ানের ঘরে আসে আয়ানরা জানালা দিয়ে সব দেখছিল। তারপর ওই দুইটা ছায়া ছিল রিক আর তুর্যর।

— আয়ান তার ঘরের বাইরে এসে অপেক্ষা করতে ছিল তাসনু বের হলে ভয় দেখাবে তাই। আর তাসনু বের হয়ে আয়ানকে দেখে ওইভাবে ভুতের সাজে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায় দেখে।

“”আয়ান তাসনুকে ঘরে দিয়ে এসে চিন্তায় পড়ে যায়। রিক বুঝতে পেরে বলে চিন্তা করিস না ঠিক হয়ে যাবে। একটু ভয় পেয়ে জ্ঞ্যান হারিয়েছে এই যা। আয়ান বলে না রে ভাই আমার খুব চিন্তা হচ্ছে রাতে যদি ওর ঘুম ভেঙে যায় আর আবার ভয় পাই তখন। তুর্য বলে তো কি করবি এখন ওর সাথে জেগে পাহাড়া দে গিয়ে।

— রিক বলে আচ্ছা অনুদের বললে কি হয় আজ রাত টা না হয় তাসনুর পাশে থাকবে ওরা। আমরা না হয় সব বলব ওদের। আয়ান একটু কি ভেবে ঘর থেকে বের হয়ে যায় রিক তুর্য ও যায় সাথে। অনুরা ঘরে গিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে তাদের হাত পা এখনো কাপছে ভয়ে। আয়ান গিয়ে ওদের ঘপ্রের দরজা টুকা দিতেই ভুত ভুত বলে চিল্লাই উঠে ওরা আবার দুজন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে। আয়ান এবার জোরে বলে অনু আমি আয়ান দরজাটা খুলো দরকার আছে তোমাদের সাথে।

— নুসরাত বলে আয়ান ভাইয়ার গলা না এটা। অনু বলে না ভুত এটা আয়ান ভাইয়ার রুপ নিয়ে এসেছে। গ্রামে এমন কত কাহিনী হয় শুনিস নি কত জনের রুপ নিয়ে আসে৷ নুসরাত বলে ঠিক বলেছিস তুই। এখন কি করব কি বিপদে পড়লাম আমরা। অনু বলে আচ্ছা তাসনু আপু কই ওর কি অবস্থা। নুসরাত বলে সত্যি তো ভুলেই গিয়ছিলাম আপুর কথা। আল্লাহ জানে কি করছে এখন৷ এমনি আপু ভুতে ভীষণ ভয় পাই।

— আয়ান আবার ডাকে অনুদের৷ ওরা এবার চুপ মেরে যায়। রিক বলে কিরে দাঁড়িয়ে কেন। আয়ান বলে দরজা খুলছে না ওরা৷ কি করব এখন৷ রিক বলে সর আমি দেখছি। তারপর অনুকে ডাকে রিক অনু এবার চমকে উঠে নুসরাত বলে এবার রিক ভাইয়ার রুপ নিয়ে আসছে ভুতটা। জোরে বলে নুসরাত যা রিক আর আয়ানের কর্ণপাত হয়। রিক হেসে উঠে ওদের কথায়। আয়ান বলে শালা আমার চিন্তা হচ্ছে আর তোর হাসি পাচ্ছে। সর দেখি তারপর দরজা ধাক্কা দিতে থাকে। আয়ান বলে অনু আমি আয়ান দরজা খুলো খু৷ দরকার আছে তাসনু জ্ঞ্যান হারিয়েছে ভয়ে। নুসরাত অনু এবার সাথে সাথে এসে দরজা খুলে দেয়।

— আয়ান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আয়ান বলে তাসনু অজ্ঞান হয়ে গেছে অনু। তোমরা আজ রাতটা ওর কাছে থাকবে। সরি আসলে আমরা বুঝতে পারিনি তোমরা এতোটা ভয় পেয়ে যাবা। নুসরাত বলে তার মানে আপনারা ছিলেন ওই ভাবে। রিক বলে হ্যাঁ আমরা ছিলাম তোমাদের একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা যে এতো ভিতু জানতাম না।

— অনু বলে ওই রকমের ভুতের মতো ঘুরলে কে না ভয় অয়াবে সেখানে আমরা তো বাচ্চা মেয়ে। রিক ভ্রু কুচকে বলে সিরিয়াসলি তোমরা বাচ্চা। কিন্তু কাজ তো একবারে পাকা বুড়িদের চেয়ে উত্তম। আয়ান বলে থামবি তুরা। এখন ঝামেলা করার সময় না। অনু নুসরাত এবার দৌড়ে তাসনুর ঘরে যায়।। গিয়ে দেখে তাসনুর এখনো জ্ঞ্যান আসেনি৷ নুসরাত তাসনুর গায়ে হাত দিয়ে চমকে উঠে কারণ তাসনুর শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। নুসরাত আয়ানকে বলে ভাইয়া আপুর তো ভীষণ জ্বর গায়ে। আয়ান দেয়ালে একটা পাঞ্চ মেরে বলে সিট আমি এই ভয়টা পাচ্ছিলাম তাই হলো।

— রিক তুর্যর এবার খুব খারাপ লাগছে। তুর্য বলে নুসরাত একটা কিছুতে পানি আর একটা কাপড় নিয়ে আসো ফ্রেস যাও। তারপর জলপট্টি দাও। সকালে না হয় ডাক্তার ডাকা হবে। অনু দৌড়ে চলে যায় জোগাড় করতে সব। আয়ান মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে। রিক আয়ানের কাধে হাত রেখে বলে মন খারাপ করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে৷

— অনু একটা পাত্রে পানি আর একটা সাদা কাপড়ের অংশ নিয়ে আসে৷ তারপর ভিজায় তাসনুর কপালে দিতে থাকে। অনু বলে ভাইয়া মন খারাপ করবেন আপু আসলে ভুতে খুব ভয় পাই তাই আর কি এটা নিতে পারেনি। সামনে থেকে দেখেছে তো তাই অনেক ভয় পেয়ে গেছে। সকালে দেখবেন ঠিক হয়ে গেছে। আপনারা ঘরে যান আমরা আছি। রিক বলে চল ভাই ওরা দেখে নিবেনি চিন্তা করিস না। আয়ান একবার তাসনুর দিকে তাকায় কতটা মায়াবী লাগছে দেখতে এই ভাবে তাসনুকে। তারপর তারা ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

—————————

— সকালে…….

“”তানু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হচ্ছে কলেজে যাওয়ার জন্য। এর মধ্যে একবার সামিরাকে ফোন করে নেয় সে৷ সামিরা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি তানুর ফোন পেয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় তারপর ঘুম ঘুম চোখে দেখে তানুর ফোন। ফোনটা কানে ধরে চোখ বুজে হ্যালো বলে। তানু বলে সাকচুন্নি তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাইছিস ক’টা বাজে খেয়াল আছে তোর কলেজ যেতে হবে সে খেয়াল আছে আপনার মহারানী। সামিরা বলে আজ এত কলেজ যাওয়ার তাড়া যে তোর। সব সময় তো আমি তোকে টেনে তুলি ঘুম থেকে আর আজ সুর্য কোন দিকে উঠেছে দেখে আয় যা।৷

— তানু বলে আমার দেখা লাগবে না তুই উঠে দেখে আয় বজ্জায় ছেড়ি একটা। নয়টা অলরেডি বাজে সাড়ে ন,টা ক্লাস আছে একটা সামিরা এবার লাফ দিয়ে উঠে বলে কিইইই তানু ফোন টা কান থেকে দূরে সরিয়ে বলে কানটা আমার শেষ করবি নাকি। ষাড়ের মতো চিৎকার না করে তাড়াতাড়ি রেডি হ যাওয়ার পথে তুলে নিচ্ছি আমি। সামিরা ফোনটা রেখে এবার চলে যায় ওয়াসরুমে।

— তাসনুর রাত থেকে ধুপ জ্বর। বাড়ির সবাই জেনে গেছে এতখনে তাসনুর জ্বরের কথা। কিন্তু কেনো হঠাৎ করে জ্বর আসা তা কেউ জানে না। ডাক্তার এসে দেখছে তাসনুকে। তাসনুর ভোর রাতে জ্ঞ্যান ফিরে তারপর ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠে আবার অনি নুসরাত সামলায় তাসনুকে৷ তারপর নাহিদা বেগমও আসে তাসনুর ঘরে চিৎকার শুনে। এসে দেখে তাসনুর অনেক জ্বর।

— ডাক্তার তাসনুকে দেখে ওষুধ দিয়ে যায়। আয়ানরাও ছিল ওইখানে৷ কিন্তু আয়ানের কাল রাত থেকে মুখে হাসি নেই। খুব অনুশোচনায় ভুগছে সে। তার জন্য তাসনুর আজ এমন অবস্থা। হাসি খুশি থাকা একটা মেয়ে তার জন্য আজ বিসানায় শুয়ে আছে ভাবতেই খারাপ লাগছে। রিক তুর্যর একি অবস্থা।

— তাসনু এবার পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। জ্বরে চোখ জ্বালা করছে তাই চোখ খুলে রাখতে পারছে না সে। আবছা চোখে দেখে সামনে আয়ান দাঁড়িয়ে মন খারাপ করে। তাসনু আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে আর আয়ান ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।

চলবে………….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here