প্রেমময় আসক্তি ২ পর্ব ১২+১৩+শেষ

#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_১২
#নন্দিনী_চৌধুরী

১২.
চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে রোদেলা আদ্রিতাকে। তাদের সামনে বসে আছে আশরাফ। রোদেলা আর আদ্রিতার জ্ঞান নেই তাই আশরাফ সামনের টেবিলে রাখা পানির গ্লাস নিয়ে পানি ছুঁড়ে মারলো ওদের মুখে।
পানি ছুঁড়ে মারতেই দুজনের জ্ঞান ফিরে আসে। রোদেলা আর আদ্রিতা আসতে আসতে চোখ খুলে তাকালো। চোখ খুলে ভালো ভাবে তাকিয়ে আসে পাশে দেখতে লাগলো। রোদেলা আর আদ্রিতা সামনে তাকিয়ে আশরাফকে দেখে অবাক হলো। বিশেষ করে আদ্রিতা আশরাফকে দেখে অবাক হলো। আদ্রিতা অবাক কন্ঠে বললো,

আদৃতা:বাবা!
রোদেলা আদ্রিতার কথা শুনে চমকে গিয়ে বললো,
রোদেলা:বাবা মানে?
আদ্রিতা:উনি আমার আর ভাইয়ার বাবা।

আদ্রিতার কথায় শুনে রোদেলা অবাকের চরম সিমানায় চলে গেলো। আশরাফ আদ্রিতার কথায় হেঁসে বললো,

আশরাফ:হ্যা আমি।
আদ্রিতা:আমাদের এভাবে এখানে ধরে আনার মানে কি?
আশরাফ:মানে তো অনেক আছে। আসতে আসতে সব জানতে পারবে।
রোদেলা:আপনি আমাদের এখানে কেন নিয়ে এসেছেন। কি চাই আপনার?
আশরাফ:তোমার কাছে আমার কিছু নেই আবার আছে। তোমার সাথেই আমার চাওয়া জরিতো আছে।
রোদেলা:মানে?
আশরাফ:মানে খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে।

রোদেলা আর আদ্রিতা বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে। আশরাফ তার পাশে থাকা ল্যাপ্টপটা অন করলো তারপর সেই ল্যাপ্টপের স্ক্রিনে একটা ছবি আনলো। রোদেলা আর আদ্রিতা সেই ছবি দেখে অবাক হলো। কারন ছবিটা আদ্রিয়ানের ফ্যামিলির ছবি। যেখানে আদ্রিয়ানের মা আর একটা লোক যার কোলে আদ্রিয়ান। আশরাফ ছবিটা দেখিয়ে বলতে লাগলো,

এই যে ছবিটা তোমরা দেখছো সেটা হলো আদ্রিয়ানের পরিবারের ছবি। আদ্রিয়ানের মায়ের ২য় স্বামী আমি। আদ্রিয়ানের আসল বাবা আর আমি ছিলাম দুই বন্ধু। আদ্রিয়ানের বাবা ছিলো অনেক বড়লোক আর আমি একজন মধ্যবিত্ত। আদ্রিয়ানের বাবা আর মায়ের প্রেমের বিয়ে ছিলো। ওদের বিয়ের ২বছর পর আদ্রিয়ান হয়। আদ্রিয়ানের বাবার তখন বিজনেসে আরো লাভ হচ্ছিলো আর আমি সেই ছোট ছোটই থেকে যাচ্ছিলাম। দেখতে দেখতে আদ্রিয়ানের ১বছর হলো। একদিন আদ্রিয়ানের বাবা একটা এক্সসিডেন্ট করলো আর সেই এক্সসিডেন্টে স্পোট ড্যাথ হয়ে যায় তার। আদ্রিয়ানের বাবা তার সব সম্পত্তি আদ্রিয়ানের মায়ের নামে করে দিয়েগেছিলো। আদ্রিয়ানের বাবা মারা যাওয়ায় আদ্রিয়ানের মা অনেক ভেংগে পরেছিলো আমি তাদের সামলাচ্ছিলাম। একটা সময় আদ্রিয়ানের মাকে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিলাম আর এটাও বললাম আদ্রিয়ানকে একদম নিজের ছেলের মতো আগলে রাখবো। এরপর আদ্রিয়ানের মা আমার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায়। বিয়ে করে নেই আমি আদ্রিয়ানের মাকে। তার তার সাথে শুরু করি সংসার। আদ্রিয়ানের ৪বছর বয়সের সময় আদ্রিতা হয়। আমি কৌশলে আদ্রিয়ানের মায়ের থেকে সব সম্পত্তি লেখে নেই নিজের নামে তারপর শুরু করি তাদের প্রতি অবহেলা। কারন সম্পত্তি ছিলো আমার আসল চাওয়া। তাই আদ্রিয়ানের মাকে বিয়ে করেছিলাম আমি। আদ্রিয়ানের মা আমার এই পালটে যাওয়া মানতে পারতোনা। আমাকে কারণ জিজ্ঞেশ করলে আমি কিছু বলতাম না। এরপর আসতে আসতে তার প্রতি আমার আরো বিরক্তি আসতে লাগলো। তাদের রেখে আমি চলে আসলাম অন্য জায়গায়। ওদের কোনো খোঁজ খবর নিতাম না। এমনকি আমার ছেলেমেয়েদেরও দেখতে যেতাম না।আদ্রিয়ানের মা আমাকে ফোন দিলেও আমি ধরতাম না। এভাবেই যেতে লাগলো সময়। একদিন আদ্রিয়ানের মা আমাকে কল করে বললো আমি যদি তাদের সাথে এমন করতে থাকি তবে সে পুলিশের কাছে গিয়ে আমার নামে মামলা করে দেবে। আমি ভয় পেয়ে যাই যে যদি সত্যি ও আমার নামে মামলা করে দেয় তাহলে। তাই আমি সেদিনের পরেরদিনই ওদের কাছে যাই। সেদিন আদ্রিয়ান স্কুলে ছিলো বাসায় ছিলো আদ্রিয়ানের মা আর আদ্রিতা। আমি বাসায় গিয়ে আদ্রিয়ানের মাকে বুঝাই কিন্তু সে মানতে নারাজ। এক পর্যায় সে আমার সাথে চিল্লা চিল্লি শুরু করে দেয় আর আমিও রাগের মাথায় হাতের কাছে থাকা ছুড়ি দিয়ে ওকে একের পর এক আঘাত করতে থাকি। একটা সময় বুঝি যে আদ্রিয়ানের মা মারা গেছে। আমি ভয় পেয়ে যাই বুঝতে পারছিলামনা কি করবো। ছোট আদ্রিতা আমাকে দেখে ফেলে খুন করতে। আমি তাড়াতাড়ি ওকে সেখান থেকে নিয়ে পালিয়ে আসি। আদ্রিয়ানের ব্যাপারে আমি কোনো চিন্তা করিনি। কারন সে আমার নিজের সন্তান ছিলোনা বলেই আমার কোনো চিন্তা ছিলোনা ওকে নিয়ে। আদ্রিতাকে নিয়ে সোজা চলে যাই অস্ট্রেলিয়া। সেখানেই বড় হতে লাগে আদ্রিতা। আর আমার সব কালো ব্যাবসাও সেখানে বসে করতে থাকি। একটা সময় আদ্রিতাকে সেখানে রেখে আমি চলে আসি বাংলাদেশে। খবর নিয়ে জানতে পারি আমার ভাই আদ্রিয়ানকে সিডনিতে কোনো এক ওর্ফানে রেখে এসছিলো সেখানেই আদ্রিয়ান বড় হচ্ছে। এভাবেই সব যেতে লাগলো। আদ্রিতা বুঝার বয়সের থেকেই আমার সয্য করতে পারতোনা কারন আমি তার মাকে মেরেছি এই কারণে। আমিও সেদিকে পাত্তা দিতামনা। রোজ এক এক নারীতে মজে থাকতাম। এভাবে চলতে লাগে সময়। একটা সময় আদ্রিয়ান নিজের মাফিয়া জগৎ তৈরী করে। আদ্রিয়ান জানতোনা যে ওর মায়ের খুনি আমি আর না জানতো এটা যে আদ্রিতা বেঁচে আছে।আদ্রিয়ান বুঝার বয়স থেকে আমাকেই ওর বাবা জানতো। ওর আসলে বাবার কথা কোনোদিন ওকে জানানো হয়নি। একটা সময় আদ্রিয়ান আমার পিছনে এসে লাগে কারন আমার সব ইল্লিগ্যাল কাজের বাঁধা হয়ে দাঁড়াতো আদ্রিয়ান। আমার সকল কাজে ও কালো ছাঁয়ার মতো ছিলো। আমি যদিও আগে জানতাম না যে এই মাফিয়া লিডার ও পরে জানতে পারি আমার ছেলেই আমার শত্রু। দিন দিন ও আমার কাছে বিষের মতো হয়ে যাচ্ছিলো। তাই ওকে মারার চেষ্টা করলাম কিন্তু লাভ হয়নি। এক সময় জানলাম আদ্রিয়ানের সব থেকে দুর্বলতা তুমি। তাই তোমাকে মারার পরিকল্পনা করলাম। কিন্তু তার আগেই আদ্রিয়ান চলে আসে দেশে। তাও তোমাকে মারার চেষ্টা চালিয়ে যাই। কিন্তু ফলাফল শুন্য। এক সময় জানলাম আদ্রিয়ান জেনে গেছে ওর মায়ের খুনি আমি। এখন মনের ভিতর ভয় ঢুকলো কারন আদ্রিয়ান আমাকে ছাড়বেনা তাই নিজেকে আন্ডারগ্রাউন্ড করে দিলাম। আর শেষ একটা চেষ্টা করলাম আদ্রিয়ানকে মারার। মেরেই দিয়েছিলাম তবুও আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছিলো। তারপর নিজেদের আত্মগোপন করে দিলাম কিছু সময়ের জন্য।

এতুটুকু বলে থামলো আশরাফ। আশরাফের কথা শুনে রোদেলা আর আদ্রিতা চুপ হয়ে যায়। আদ্রিতা তো জেনো কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সে তার ভাইয়ের আপন বোন না। মানে তার পরিচয় সে এই নোংরা লোকটার মেয়ে আদ্রিয়ানের বাবার মেয়ে নয়।

রোদেলা আশরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,

রোদেলা:আপনি বাবা নাকি অন্য কিছু। আপনার নিজের ছেলে না বলে তার সাথে এসব করলেন। আপনি তো মানুষ না।
আশরাফ:আমার হিসাব পরে করো আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো। কি ভালোবাসলে স্বামীকে একটা ভিডিও দেখেই মেরে ফেললে।
রোদেলা:আপনি!
আশরাফ:হ্যা এইসবের পিছনেও আমিই ছিলাম। তোমার বাবা মাকে আদ্রিয়াননা আমি মেরেছি। আমার লোকেরা মেরেছে তোমার বাবা মাকে। তোমার বাবা মাকে যেদিন মারলাম সেদিন যে ভিডিও তোমাকে দিয়েছিলাম আর তাতে আদ্রিয়ান রুপে যাকে দেখেছিলে সে ছিলো আমার লোক। আমিই ওকে আদ্রিয়ানের মতো করে সাজিয়েছিলাম। যাতে করে তুমি বিশ্বাস করো আদ্রিয়ানই তোমার বাবা মাকে মেরেছে। লিজাকে দিয়েও মিথ্যা বলিয়েছিলাম। লিজার তো পেটে কোনো বাচ্চা ছিলোনা সব ছিলো সাজানো নাটক। আর তুমি সেই নাটক বিশ্বাস করে আদ্রিয়ানকে মেরে ফেললে। কি ভালোবাসা তোমার।

আশরাফের কথা শুনে রোদেলা যেনো এবার সাত আসমান থেকে পরলো। এই একটা কথাই তার সব এলোমেলো করে দিলো। একি ভুল করলো সে। কি করলো এটা সে। না জেনে না বুঝে কত বড় অন্যায় করলো সে আদ্রিয়ানের সাথে। আশরাফের কথা শুনে আদ্রিতা অবাক নয়নে রোদেলার দিকে তাকালো। রোদেলা তখন পাথর হয়ে বসে ছিলো।

_________________________
এদিকে মুন,রুবা,কাশু সবাই বসে আছে সোফায়। রাফসান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সেই সকাল থেকে রোদেলা নিখোঁজ।
সকালে রোদেলা আদ্রিতাকে নিয়ে গেছে ডাক্তারের কাছে চেকাপ করানোর জন্য কিন্তু সেই সকালের পর থেকে আর কোনো খবর নেই ওদের। কারো ফোনও লাগছেনা আর না দুজনের মধ্য কারো কোনো হদিস আছে। রাত এর মধ্যেই আদ্রিয়ানকে কল করে জানিয়েছে রোদেলার নিখোঁজ এর কথাটা। আদ্রিয়ান জানিয়েছে সে দেখে নিচ্ছে।

মুন:এভাবে বসে না থেকে পুলিশকে জানালে ভালো হতোনা।
রাফসান:আমিও তাই ভাবছি পুলিশের কাছে গিয়ে মিসিং রিপোর্ট করি।
রাত:আমার মনে হয় আরো কিছু সময় অপেক্ষা করা উচিত। হতে পারে তারা ফিরেও আসলো।
রাফসান:হ্যা আজকের দিনটা দেখি।

~এদিকে~

সায়মন:স্যার খবর একদম পাক্কা আপনার বাবা ভাবি আর আদ্রিতা কে তুলে নিয়ে গেছে।
আদ্রিয়ান:রোদেলাকে আমার জন্য তুলে নিয়ে গেছে বুঝলাম। কিন্তু সাথে ওই মেয়েটাকে কেন নিলো?
সায়মন:হয়তো কোনো কারনেই নিয়েছে।
আদ্রিয়ান:গাড়ি বের কর। আমার বাচ্চা গুলাকেও নে। আজ অনেকদিন পর ওদের নৈশভোজ হবে।
সায়মন:একদম😎।

আদ্রিয়ানরা বেরিয়ে পরলো রোদেলাদের বাঁচানোর জন্য।

__________________________
রোদেলা:আপনি, আপনি একজন বাবা নামের নরপশু। আপনি বাবা নামের কলঙ্ক। আপনি আমার হাত দিয়েই আমার সন্তানদের বাবাকে মারালেন। আমার সন্তানরা জন্মের আগেই তাদের বাবাকে হারিয়েছে। আমার করা অন্যায়ের কোনো মাফ নেই তেমন আপনার করা অন্যায়েরও কোনো মাফ নেই। মনে করবেননা আপনি বেঁচে যাবেন। কোনো না কোনো ভাবে ঠিক আপনাত পতন হবেই।

আশরাফ:হ্যা সেই পতন কে এখানে আনার অপেক্ষাই করছি। মেরে তুমি আদ্রিয়ানকে দিয়েছিলে ঠিকই কিন্তু সে আসলে মরে গেছে নাকি এখনো জীবিত আছে তাই এখন দেখা বাকি আমার। তোমাদের এখানে আনার কারন এটাই ওই পতনকে এখানে আনার।
রোদেলা মনে মনে ভাবে,,
রোদেলা:উনি কি আরিয়ানের কথা বলছেন! আরিয়ানকি আদ্রিয়ান হতে পারে। আর আরিয়ান আদ্রিয়ান হবেই বা কি করে। আদ্রিয়ানের সাথে সে যা করেছে তারপর আদ্রিয়ান কি আসবে তার কাছে। কিন্তু ওই যে তার কাছে রাতে আসতো সে?
আশরাফ:এখন শুধু অপেখা।

___________________________

মিস্টার হাসান আর মিস্টার খান বসে কথা বলছেন,,

মিস্টার খান:আচ্ছা ভাইয়া তুমি আরিয়ানকে পেলে কিভাবে। মানে আরিয়ানের তো তার আগের কোনো কিছু মনে নেই। তার কি মনে পরেনা আগের কিছু?
মিস্টার হাসান:ওর অপারেশনের পর ডাক্তার বলেছিলো আগের কথা মনে হয়তো পরতেও পারে নাও পরতে পারে। তবে এতো মাসেও আমি ওর মুখে ওর আগের কিছুই শুনিনি। আর ওকে পেয়েছিলাম একটা খাদে রক্তাক্ত অবস্থায়। তুইতো জানিস আমার ছেলে আরিয়ান মারা গেছে অনেক আগেই এভাবে খাদের থেকে পরে গিয়ে। সেই জন্য তোর ভাবি সব সময় আপসেট থাকতো। ৮মাস আগে আমি আর তোর ভাবি পাহাড়ে গেছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে আরিয়ানকে আমরা পাই আহত অবস্থায়। তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে যাই হাসপাতালে। বাংলাদেশে ওর চিকিৎসা ভালো হচ্ছিলোনা। তাই নিয়ে যাই অস্ট্রেলিয়া। সেখানে ট্রিটমেন্টে করে আল্লাহর রহমতে আরিয়ান একদম সুস্থ হয়ে যায় কিন্তু সব আগের সৃতি হারিয়ে ফেলে। তাই আমি আর তোর ভাবি ওকে আমাদের সন্তানের পরিচয় দিলাম। আর এখন পর্যন্ত আরিয়ানের আগের কিছুই মনে পরেনি। আর মনে যেনো না পরে তাই চাই।
মিস্টার খান:হ্যা যত তাড়াতাড়ি পারো রুহির সাথে ওর বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো।
মিস্টার খান:হ্যা তাই করবো।

~অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আদ্রিয়ান চলে আসে আশরাফের ঠিকানায়।~

আশরাফ দূর থেকে আরিয়ান ওরফে আদ্রিয়ানকে দেখে উঠে দাঁড়ালো চেয়ার থেকে তারপর সামনে এগোতে এগোতে বললো,

“অবশেষে আমার অপেক্ষার অবসান হলো।”
#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_১৩
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৩.

আশরাফের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। আর হাজার বছর যুগ পরে বাবা ছেলে মুখামুখি দাঁড়ানো। দুজনের চোখেই বিক্ষভের আগুন জ্বলছে। আশরাফ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে হাঁসছে আর আদ্রিয়ান শুধু তাকিয়ে আছে। আশরাফ আদ্রিয়ানকে দেখে বললো,

আশরাফ:ওয়েলকাম মাই সান ওয়েলকাম। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম আমি। এখন তো আমার আর কোনো সন্দেহ নেই যে তুমিই আদ্রিয়ান।

আদ্রিয়ান আশরাফের কথায় হালকা হাঁসলো। আদ্রিয়ান আশরাফকে বললো,

আদ্রিয়ান:হ্যা আমিই আদ্রিয়ান। আমিই আদ্রিয়ান খান আমান। যাকে আপনি মারতে চেয়েছিলেন তারই ভালোবাসার মানুষের হাতে। কিন্তু কথায় আছেনা রাখে আল্লাহ মারে কে। আমাকেও আল্লাহ বাঁচিয়েছে আপনাকে আমার হাতে মারবার জন্য।
আশরাফ:আমাকে মারবে তুমি! বাহ বেশ ভালো বলেছো। আসলে ঠিকই বলেছে আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়েছে আবার আমার হাতে মরার জন্য।
আদ্রিয়ান: হা! তো মারুন আমায়। দেখুন একদম অস্ত্র বীহিন আছি। নিন মারুন।

আশরাফ ওর লোকেদের ইশারা করতেই তারা আদ্রিয়ানের উপর হামলা করার জন্য ঝাপিয়ে পরে কিন্তু তার আগেই আদ্রিয়ানের গার্ডসরা সবাইকে মেরে দেয়। কিছু সময়ের মাঝেই আশরাফের লোকেদের লাশ বিছিয়ে পরে সব মাটিতে। আশরাফের সব লোকেদের একে একে মাটিতে ফেলে দেওয়া হলো মেরে।আদ্রিয়ান এবার একটা চেয়ার টেনে বসলো আশরাফের সামনে। আশরাফ তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে বললো,

আদ্রিয়ান:তো এবার বলুন আর আছে কি কেউ বাকি?
আশরাফ কিছু বলছেনা। আদ্রিয়ান আবার বলতে লাগলো,,,

আদ্রিয়ান: আপনাকে ঠিক কোন কারনের জন্য মারবো বুঝতেছিনা। আমার মায়ের খুনের কারনে,আমার বোনকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার কারনে,আমাকে মারার চেষ্টা করার জন্য,আমার স্ত্রীকে কিডনাপ করার জন্য ঠিক কোনটার জন্য মারবো বলেন আপনি।
আশরাফ চুপ হয়ে আছে গা দিয়ে কপাল দিয়ে ঘাম ঝরছে তার। আদ্রিয়ান সায়মনদের ইশারা করতেই ওরা রোদেলার আদ্রিতার বাঁধন খুলে দেয়।
আদ্রিয়ান: আদ্রিতাকে ধরে আনার কারন কি? ওকেও কি মেরে ফেলতে চাইছিলেন নাকি? আচ্ছা কেমন বাবা আপনি। মানলাম আমি আপনার নিজের ছেলে না কিন্তু আদ্রিতা! ওতো আপনার সন্তান আপনার নিজ সন্তান। তার সাথে এমন কিভাবে করতে পারলেন আপনি। ছোট থেকে মা হারা করে দিলেন তাকে। নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে বড় করলেন। না সঠিক যত্ন নিয়েছেন না দিয়েছেন ভালোবাসা। কি অবাক হচ্ছেন আমি কিভাবে জানি ও আমার বোন। আমি জানি সেই আরিয়ান হয়ে ফিরে আসার পরেই। যে আদ্রিতা আমার সেই হারিয়ে যাওয়া ছোট পাখিটা। জেনেও আমি ওর কাছে ধরা দেইনি।

আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়ায় আর রোদেলার কাছে গিয়ে বলে,,,

আদ্রিয়ান:যার কারনে তুমি আমাকে মারতে চেয়েছিলে আজ জানতে পারলেতো আসল কথা আসল সত্যি। যে আমি তোমার বাবা মাকে মারিনি। আর না লিজার সাথে আমার কিছু ছিলো।

আশরাফ আদ্রিয়ানকে রোদেলার সাথে কথা বলতে দেখে পালাতে নিলে সায়মন জন ওকে ধরে ফেলে।

সায়মন:স্যার পাখি দেখি পালাচ্ছে।
আদ্রিয়ান:একেও আরেক পাখির কাছে নিয়ে যা।
সায়মন:আচ্ছা।
সায়মন আশরাফকে বেধে নিয়ে এলো বড় ফা্ঁকা মাঠে। এখানে একটা নদীও আছে। আদ্রিয়ান আদ্রিতা রোদেলাকে নিয়ে আসে এখানে। এখানে আগে থেকেই লিজাকেও এনে রাখা হয়েছে। আশরাফকে এনে লিজার পাশে রাখা হমো।

আদ্রিয়ান এসে দুজনের সামনে দাঁড়ালো। আদ্রিয়ান সায়মনকে বললো,

আদ্রিয়ান:সায়মন এলেক্স রেইনের খাচা খুলে দে।

সায়মজ এলেক্স রেইনের খাচা খুলে দিলো। আদ্রিয়ান লিজার কাছে এগিয়ে এসে ওর চুলের মুঠি ধরে বললো,

আদ্রিয়ান:কি বলেছিলি তুই আমি তোকে ব্যবহার করেছি। তোকে আমার বিছানায় নিয়েছি। তোর পেটে আমার সন্তান। শোন আদ্রিয়ানের চয়েজ এতো বিশ্রি না। তোর মতো পতিতা আদ্রিয়ান হাত দিয়ে ধরেনা। বাবার বয়সি লোককে বিয়ে করে সংসার পেতেছিস আমার রোদেলাকে আমার বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে। ভালো করে তাকিয়ে দেখ। আদ্রিয়ান তার পুরো জন্মে একজনকেই ভালোবেসেছে একজনকেই ছুঁয়েছে আর সেই আমার বাচ্চাদের মা হতে চলেছে। তোকে আগেও বলেছিলাম রোদেলার থেকে দূরে থাক। কিন্তু তুইতো সিমাই ছাড়িয়ে গেলি। আজ তোকে দেখাবো মৃত্যু কি।

আদ্রিয়ান লিজাকে ধাক্কা মেরে এলেক্স রেইনের খাচায় ছুড়ে মারে। এলেক্স রেইন ঝাপিয়ে পরে লিজার উপর। লিজার মরণ চিৎকার শুনে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে যেনো আদ্রিয়ান। রোদেলা আদ্রিতা দেখেই যাচ্ছে। ভয়ে কিছুই বলতে পারছেনা।

আদ্রিয়ান এবার আশরাফের কাছে যায়।
আশরাফের কাছে এসে দাঁড়িয়ে জনকে বলে,

আদ্রিয়ান:জন টুইংকেল টাইগারকে নিয়ে আসো।
জন ওদের দুজনকে এনে পানিতে ছাড়ে। আদ্রিয়ান পাশে রাখা বড় তোলয়ারিটা হাতে নেয়। আশরাফ তা দেখে বলে,

আশরাফ:আদ্রিয়ান আমি তোমার বাবা। তুমি এমন করতে পারোনা।

আদ্রিয়ান এটা শুনে এক কোপ মারে আশরাফের ডান হাতে আর বলে,

“সে আমার জন্মদাত্রী মা ছিলো।”

আশরাফ এক কোপ খেয়ে ছটফটাতে লাগে। আদ্রিয়ান আরেকটা কোপ দেয় আশরাফের হাতে আর বলে,
“সে আমার স্ত্রী ছিলো।”
আশরাফ এবার মাটিতে বসে পরলো আর ধরফাতে লাগলো। আশরাফের চিৎকারে আসমান ভাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান আবার কোপ মারে আশরাফের পা দুটোতে আর বলে,

“আমার থেকে সব কেড়ে নেওয়ার শাস্তি এগুলা।”

আশরাফ এবার নিস্তেজ হয়ে গেছে। আদ্রিয়ানের চোখে পানি আদ্রিয়ান বিড়বিড় করে বলছে,

“আমি পেরেছি মা তোমার খুনিকে শাস্তি দিতে পেরেছি মা।’

আদ্রিয়ান নিজের হাতে টাইগার টুইংকেল কে আশরাফের শরীলের টুকরা গুলা ওদের খেতে দিলো। আদ্রিয়ান খুব মজা করে ওর ৪বাচ্চার খাওয়া দেখছে। আজ ওরাও তৃপ্ত আদ্রিয়ানও তৃপ্ত। আদ্রিয়ান উঠে রোদেলা আদ্রিতার কাছে গেলো। আদ্রিয়ান বোনের দিকে দুই হাত ছড়িয়ে দিতেই আদ্রিতা ভাইয়ের বুকে হামলে পরে কেঁদে দিলো। এ যে সুখের কান্না। কত বছরের মিলনের কান্না।

আদ্রিতা:ভাইয়া আমি তোমার আপন না। আমি ওই উচ্ছন্ন লোকটার মেয়ে।
আদ্রিয়ান:চুপ! তুই আমার বোন আর এটাই তোর সব থেকে বড় পরিচয়। এর থেকে বেশি কোনো পরিচয় আর নেই। আর কোনোদিন এসব বলবিনা।

রোদেলা আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতে পারছেনা। অপরাধবোধ, লজ্জা সব মিলে আজ সে অপরাধি। চরম অপরাধি সে আজ।
রোদেলা আদ্রিয়ানকে কিছু বলতে যাবে তার আগে আদ্রিয়ান বলে,

আদ্রিয়ান:গাড়িতে গিয়ে বস তোরা। আমি আসছি।

কথাটা বলে আদ্রিয়ান হাঁটা দিলো। আদ্রিতা রোদেলা গিয়ে গাড়িতে বসলো। তার একটু পর আদ্রিয়ান এসে বসলো আর গাড়ি সটার্ট দিলো।

আদ্রিয়ান রোদেলাকে নিয়ে ওদের বাসায় আসলো। এখন রাত হয়ে গেছে অনেক। আদ্রিয়ান রোদেলা আদ্রিতাকে নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে বেল দিলো।

~এদিকে~

বেলের আওয়াজ পেয়ে রুবা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আদ্রিতা রোদেলা আদ্রিয়ানকে দেখে অবাক হলো রুবা। রুবা অবাক হয়ে বললো,

রুবা:আদ্রিতা, রোদেলা তোরা আসছিস!

আদ্রিয়ান:ওদের ভেতরে নিয়ে যাও।

রুবা রোদেলাকে ধরে ভিতরে নেয়। আদ্রিয়ান আদ্রিতা ভিতরে আসে। সোফায় বসে থাকা সবাই আদ্রিতা রোদেলাকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

রাফসান রোদেলার কাছে এগিয়ে এসে বলে,

রাফসান:রোদ তুই ঠিক আছিসতো। কই ছিলি তোরা। জানিস আমরা কত ভয় পেয়েগেছিলাম। কোথায় ছিলি তোরা?
রাফসানের প্রশ্নের উত্তর আদ্রিতা দেয়। যে ওদের সাথে কি কি হয়েছে এমনকি আদ্রিয়ানর পরিচয়ও দেয়।

সব শুনে সবাই অবাক। সবাই যেনো তব্দা খেয়েগেছে শুনে।

মুন:তার মানে আপনিই আদ্রিয়ান। কিন্তু আপনি বেঁচে ছিলেন তাহলে কেন ফেরত আসেননি। কেন এই ছদ্মবেস?
আদ্রিয়ান:আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেবে রোদেলা। কি রোদেলা তাইতো?
রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা শুনে কিছু বলেনা।

রাফসান:বল রোদেলা আদ্রিয়ান কি বলছে?
রোদেলা একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলে,,

রোদেলা: উনি মারা যাননি। ওনাকে মেরে মেরা ফেলা হয়েছিলো।

রোদেলার কথা শুনে সবাই আরো অবাক।
মুন:মেরে ফেলা হয়েছিলো। কে মেরেছিলো?

রোদেলা:আমি! হ্যা আমি,, আমিই সেই যে ওনাকে বান্দরবনের পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি ইচ্ছে করে করিনি। আশরাফ লিজা আমাকে মিথ্যা বলেছিলো। বাবা মাকে আশরাফ মেরেছিলো কিন্তু মিথ্যা ভিডিও করে আদ্রিয়ানকে ফাঁসিয়েছিলো। আমি জানি আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি। লিজা আশরাফের কথা বিশ্বাস করে আমি আদ্রিয়ানকে অবিশ্বাস করেছি।

রোদেলার কথা ষেষ হতেই কারো পাঁচ আঙ্গুল এসে পরলো রোদেলার গালে। রোদেলা সামনে তাকিয়ে দেখে রাফসান তাকিয়ে আছে অগ্নিচোখ নিয়ে। রাফসান চিৎকার দিয়ে বলে,

রাফসান:ছিহ! ছিহ! ছিহ! আমি ভাবতেও পারছিনা তুই এমন কিছু করতে পারিস। যে তোকে তার সব দিয়ে ভালোবাসলো তুই তাকে অবিশ্বাস করে একটা ভিডিওর ভিত্তিতে ওকে মারলি।
মুন:যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসলো। তোর জন্য মরতে পর্যন্ত বসলো তুই ভাবলি কেমন করে সে তোকে ধোকা দিবে। সে মা বাবাকে মেরেছে। কি ভালোবাসা তোর এটা?
রুবা:আমি ভাবতেও পারছিনা তুই এসব করেছিস। কিভাবে পারলি রোদু তুই এটা করতে।

রোদেলা সবার কথা শুনে চুপ করে অশ্রু ফেলছে। আজ যে তার বলার কিছু নেই।
#প্রেমময়_আসক্তি_২
#সমাপ্তি_পর্ব
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৪.
আদ্রিয়ান বসে আছে মিস্টার হাসান, মিস্টার খানের সামনে। বাকি সবাইও এখানে উপস্থিত। আদ্রিয়ান অনেকটা সময় ধরে চুপ করে আছে তাই মিস্টার হাসান নিজেই বললেন,

মিস্টার হাসানঃআরিয়ান তুমি কি কিছু বলতে চাও?
আদ্রিয়ানঃজ্বি।
মিস্টার হাসানঃবলো তাহলে।
আদ্রিয়ানঃ আমি জানি আপনারা এটা কিভাবে নেবেন। বা কিভাবে আপনারা বুঝবেন কিন্তু আমি আরিয়ান নই এটা আপনারা জানেন। আমি আদ্রিয়ান। আমাকে আপনারা সেদিন বাচিঁয়েছিলেন। আপনারা আমায় না বাঁচালে আমি আজকে এখানে আরিয়ান হয়ে আসতে পারতাম না। আমাকে বাঁচিয়েছেন নতুন জীবন দিয়েছেন এর জন্য আমি আপনাদের কাছে চিরো রীণি থাকবো। কিন্তু সত্যি এটাই আমি আমার আসল পরিচয় অনেক আগেই আমার মনে চলে এসেছিলো। কিন্তু আমি চুপচাপ আরিয়ান হয়েই ছিলাম। আমি বাংলাদেশে আসার অপেক্ষায় ছিলাম। আমার স্ত্রীকে কে ষড়যন্ত্র করে আমাকে মারিয়েছে তাকে ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আজ আমি তাকে শাস্তি দিতে পেরেছি। রোদেলা আমার স্ত্রী। রোদেলার বাচ্চার বাবা আমি। আমাকে এভার ফিরতে হবে আমার পরিবারের কাছে আমার স্ত্রীর কাছে।

আদ্রিয়ানের কথা শুনে চুপ করে রইলেন মিস্টার হাসান। মিস্টার হাসান কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বললেন,

মিস্টার হাসানঃআমার ছেলে আরিয়ান মারা যাওয়ার পর আমি তোমাকে পেয়েছিলাম। ভুলে গেছিলাম আরিয়ান যে নেই। তোমাকেই আরিয়ান মনে করে নিয়েছিলাম। আরিয়ান ভেবে অনেক শাষন করেছি হয়তো কোনো কিছু জোরও করেছি। তার জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি তোমার কাছে। তবে তোমার জন্য আমার এই বুক সব সময় খোলা। তুমি যখন চাও এসো আমাদের কাছে। কোনো সমস্যা হলে তোমার এই বাবাকে বলো। আর হ্যা বেটা বউমাকে নিয়ে আর আমার নাতী নাতনীদের নিয়ে কিন্তু আসবে একদিন।

আদ্রিয়ান মিস্টার হাসানের কথা শুনে অবাক হয়। মিস্টার হাসান হেঁসে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে। আদ্রিয়ান ও জরিয়ে ধরে মিস্টার হাসানকে।
সম্পর্ক শুধু রক্তের হলেই হয়না সম্পর্ক হতে হয় মনের। তাইতো মিস্টার হাসান আদ্রিয়ানকে নিজ সন্তানই ভাবেন। হয়তো প্রথমে তিনি ভুল করতে যাচ্ছিলেন রুহিকে আদ্রিয়ানের সাথে বিয়ে দিতে চেয়ে। কিন্তু এখন তিনি সেই ভুলটা বুঝতে পারছেন।

~এদিকে~

রোদেলা বসে আছে রুমে। বাড়ির কেউ তার সাথে কথা বলছেনা। মুন একবার এসে রাতের কাছে ওর খাবার দিয়ে গেছে। রাত বাদে কেউ ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা। সবাই সব শোনার পর স্তব্ধ হয়ে গেছে। রোদেলা এমন করবে কেউ ভাবেনি এটা। আদ্রিয়ানের ভালোবাসার ফল যে এভাবে দেবে তা ভাবনার বাহিরে ছিলো। আদ্রিয়ান রোদেলাকে যাওয়ার আগে বলেগেছে,,

“আমি তোমাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসতাম এখনো ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আমাকে এই বুকে যে আঘাত দিয়েছো তা কোনোদিন ভুলার নয়। আমিতো মরেই গিয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহ ফিরিয়ে নিয়ে আসছে। তবে আগের আদ্রিয়ানের মৃত্যু সেদিন ওই পাহাড় থেকে পরে হয়েগেছে। আজ যে তোমার সামনে আছে সে তোমাকে চরম ঘৃণা করে। তোমার মুখ ও আমি আর দেখতে চাইনা। আমার সন্তান এই দুনিয়ায় আসার পর তাকে আমি নিয়ে যাবো। তার বাবাই তার জন্য যথেস্ট হবে। কোনোদিন তোমাকে আমি আমার আর আমার সন্তানের কাছে আসতে দেবোনা। তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনি। আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছো তুমি। তোমাকে আমি চাইনা আর রোদেলা আর চাইনা।”

আদ্রিয়ান এই কথাগুলো বলেই বেরিয়ে চলে গেছিলো। রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুধু চুপ করে চোখের পানি ফেলেছে।

রোদেলা এসব ভাবছে আর এখনো কান্না করছে। রাত এসে ওকে শান্ত করছে কিন্তু লাভ হচ্ছেনা। খুব কষ্টে রাত রোদেলাকে শান্ত করে ঘুম পাড়ালো। আদ্রিয়ান কল করে রাতের থেকে খবর নিলো রোদেলার। রাত সব বললো ওকে। আদ্রিয়ান সবটা শুনে মনে মনে এটাই বললো,

“একটু কষ্ট পাও রোদেলা। দেখো ভালোবাসার থেকে দুরে থাকা কত যন্ত্রনার। ”

______________________________

এভাবেই যেতে লাগে দিন। রোদেলা একদম একা হয়ে যায়। একই ছাদের নিচে থাকলেও কেউ ওর সাথে কথা বলেনা। ও কথা বলতে চাইলে সবাই ওকে এড়িয়ে যায়। রোদেলা নীরবে কষ্ট পাচ্ছে।
আদ্রিয়ানের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলো কিন্তু সেটাও পারেনি।

একদিনে রাতের বেলার,,,,

রোদেলার ঘুম হয়না এখন ভালো। বাবু গুলার নড়াচড়া ইদানিং বেড়ে গেছে। ৯মাসে পা দিয়েছে রোদেলা। পেট অনেক বড় হয়েছে। দুটো বাবু বলে কথা। রোদেলা বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলো। ওয়াশরুমের দরজা খুলে পা দিতেই পানিতে স্লিপ কেটে পরে গেলো রোদেলা। একদক সোজা উপুর হয়ে পরেছে আঘাত পায় পেটে। রোদেলা সাথে সাথে চিৎকার দেয়৷ রোদেলার চিৎকারে ঘুম ভেংগে যায় রাতের। রাত জলদি উঠে গিয়ে দেখে রোদেলা পেট ধরে চিৎকার করে কান্না করছে আর পুরো ফ্লোর রক্তে মাখামাখি। রাত তাড়াতাড়ি চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাকলো। এতো রাতে চিৎকার শুনে রাফসানরা সবাই রুমে এসে এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায়। রাফসান তাড়াতাড়ি বোনের মাথাটা কোলে নেয়,, রোদেলা চিৎকার করে বলছে,

রোদেলাঃভাইয়া আমার বাচ্চা! ভাইয়া আমার বাচ্চাদের বাঁচাও।
রাত তাড়াতাড়ি আদ্রিয়ানকে কল দেয়। আদ্রিয়ান খবর শোনা মাত্র থমকে যায়। হাওয়ার গতিতে চলে আসে সে রোদেলাদের বাসায়। আদ্রিয়ান এসে রোদেলার এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। তবুও নিজেকে সামলে রোদেলাকে কোলে করে বেরিয়ে পরলো হাসপাতালের জন্য। রাফসান গাড়ি ড্রাইভ করছে সামনে মুন বসা। আদ্রিয়ান আরাভকে কল করে দিয়েছি আরাভ জেনেগেছে আদ্রিয়ান জীবিত আছে আর আরিয়ান আদ্রিয়ান। রোদেলা চিৎকার করে কান্না করছে। আদ্রিয়ানের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ভয়ে। রোদেলা আদ্রিয়ানের হাত চেপে ধরে বলে,,,
রোদেলাঃজানি আমি অপরাধী আমাকে মাফ করতে পারবেননা। কিন্তু যদি আমি মরে যাই আমার বাবুদের আমার কথা একটু হলেও বলিয়েন। আর হ্যা যদি এমন পরিস্থিতি হয় মা বা বাচ্চা দুজনের মধ্য একজন বাঁচবে তবে আপনি আমাদের বাচ্চাকেই বেছে নিবেন। আমার জন্য কষ্ট পাবেননা একদম। আর একবার শেষ বারের মতো বলবেন প্লিজ ভালোবাসেন।
আদ্রিয়ান রোদেলার কথা শুনে চোখ ভিজে গেছে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে ধমক দিয়ে বলে,
আদ্রিয়ানঃচুপ একদম চুপ। কিছু হবেনা তোমার আর আমাদের বাবুদের। সব ঠিক হয়ে যাবে।

রোদেলা হালকা হাঁসলো। রোদেলা ব্যাথা আর সয্য করতে পারছেনা। চোখে সব ঝাপসা হয়ে আসছে। চোখের সামনে আদ্রিয়ানের সাথে কাটানো দিন গুলো ভাসছে।

আদ্রিয়ান রোদেলাকে চোখ বন্ধ করতে দেখে বার বার ওকে চোখ বন্ধ না করার জন্য বলছে।

২০মিনিটের মাঝে হাসপাতালে এসে পৌছালো আদ্রিয়ানরা। আরাভ অলরেডি বিশেষ গাইনি ডাক্তার বেস্ট সিজারিয়ান ডাক্তারকে নিয়ে আসছে। ডাক্তার রিমির আন্ডারে যাবে রোদেলা। রোদেলাকে স্টেচারে করে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো। আদ্রিয়ান,রাফসান,মুন,রুবা, কাশু,আরাভ দাঁড়ানো বাহিরে। এর মাঝে আদ্রিতাও চলে আসছে।
একটু সময় পর ডাক্তার রিমি বেরিয়ে আসলো।

আদ্রিয়ান এগিয়ে গেলো তার দিকে।
আদ্রিয়ানঃকি অবস্থা ডাক্তার?
রিমিঃ ইমার্জেন্সি সিজার করতে হবে। বাচ্চাদের পজিশন ঠিক নাই। বাচ্চারা উল্টিয়ে গেছে। আর রোদেলার বিলিডিং বন্ধ হচ্ছেনা। তার ওপর সেন্স নেই ওর। আপনারা রক্তের ব্যবস্থা করে রাখুন। আর পেসেন্টের হাজবেন্ড কে?
আদ্রিয়ানঃআমি!
রিমিঃ আপনাকে একটা বন্ড সাইন করতে হবে। যেহিতু এটা খুব ক্রিটিকাল সিজার। মা বা বাচ্চার মাঝে যেকোনো একজন বাঁচবে। হয় আপনার স্ত্রী। নয়তো আপনার বাচ্চারা। ৯মাসে ডেলিভারি হচ্ছে রিস্ক অনেক৷

আদ্রিয়ান সব চুপ হয়ে যায়। নার্স এসে ওকে একটা পেপার দেয়। আদ্রিয়ান পেপারটার দিকে তাকালো। বার বার রোদেলার বলার কথাটা মনে পরছে,,,
“আমার আর বাবুর মাঝে বাবুকে বেছে নিবেন।”
না আদ্রিয়ান পারবেনা রোদেলাকে ছাড়া থাকতে। আল্লাহ চাইলে তারা আবার বাবা মা হতে পারবে। আদ্রিয়ান এক শ্বাসে মা তে সই করে দেয়।

অপারেশন শুরু হলো। মিস্টার হাসানরাও আসছে সবাই। আদ্রিয়ান তাদের জানিয়েছে। সবাই অনেক টেনশন করছে। মুন,রুবা, কাশু নামাজে বসে দোয়া করছে রোদেলার জন্য।

২ঘন্টা পর ডাক্তার রিমি বেরিয়ে আসলো। অপারেশন থিয়েটারের লাইট বন্ধ হতেই আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে গেলো। ডাক্তার রিমি আদ্রিয়ানের কাছে এগিয়ে গেলো আর মিষ্টি হেঁসে বললো,

রিমিঃকংগ্রেচুলেশন মিস্টার আদ্রিয়ান। আল্লাহ আপনার ঘরে এক রাজকন্যা আর রাজপুত্র দিয়েছে। বাচ্চাদের আপাদত অবজারভেশনে রাখা হয়েছে আগামীকাল সকালে আপনাদের কোলে দেওয়া হবে।

কথাটা শুনে সবাই একটু সস্তি পেলো। আদ্রিয়ান রিমিকে জিজ্ঞেশ করলো,

আদ্রিয়ানঃআমার ওয়াইফ?
রিমি মুখটা মলিন করে বললো,
রিমিঃঅনেক বিলিডিং হয়েছে। আর লাস্ট মোমেন্টে মনে হয়েছিলো সে আর পারবেনা কিন্তু মিরাক্কেল করে আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে সেও ভালো আছে। তবে জ্ঞান যদি ২৪ ঘন্টার মাঝে না দেরে তবে সে কোমায় চলে যাবে।

কথাটা বলে রিমি চলে গেলো। আদ্রিয়ান ওখানেই দাঁড়িয়ে পরলো।

রোদেলাকে কেবিনে দেওয়া হলো। আদ্রিয়ান বাবুদের দেখেনি এখনো। রোদেলার পাশে বসে আছে আদ্রিয়ান।

আদ্রিয়ানঃআর কত জ্বালাবে আমাকে। দুই বাচ্চার মা হয়ে গেছো তাও আমাকে জ্বালানো বন্ধ করবানা। কোথায় বাচ্চারা আসছে আমরা এখন হ্যাপি ফ্যামিলি হবো তা না উনি ঘুমিয়ে আছেন। উঠো তাড়াতাড়ি আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে অনেক। ভালোবাসিতো রোদেলা। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।

আদ্রিয়ান কথাটা বলে কান্না করে দেয়।

__________________________________________________

আল্লাহর অনেক রহমতে আদ্রিয়ানের ভালোবাসার জোরে রোদেলার জ্ঞান ফিরেছে। আদ্রিয়ান সারা রাত জেগেছিলো। রোদেলার জ্ঞান ফিরেছে দেখে খুশিতে আত্মহারা আদ্রিয়ান। রোদেলা আদ্রিয়ানকে এভাবে দেখে আসতে করে বলে,,
রোদেলাঃআমাদের বাচ্চারা?
আদ্রিয়ানঃআছে আমাদের বাচ্চারা। আমাদের একটা রাজকন্যা আর রাজপুত্র এসেছে।
রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হাঁসলো।
রোদেলাঃআমি দেখবো বাবুদের।
আদ্রিয়ানঃবাবুরা এখন অন্য কেবিনে আছে। আগে তুমি উঠো কিছু খাও তারপর বাবুদের দেবে।

আদ্রিয়ান একটা নার্সকে ডাকলো। নার্স এসে রোদেলাকে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দিলো৷

এরপর নার্স বাবুদের নিয়ে আসলো রোদেলার কাছে। আদ্রিয়ান একটু দুড়ে দাড়িয়ে আছে। নার্স রোদেলার কোলে বাচ্চাদের দিলো। রোদেলা বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ওদের কপালে চুমু দিলো। রোদেলার চোখে আজ সুখের পানি। রোদেলা বাচ্চাদের আদর করতে লাগলো। নার্স রুম থেকে চলে গেলো। রোদেলা বাবুদের আদর করে এবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো তারপর ইশারা করে ডাকলো। আদ্রিয়ান রোদেলার কাছে আসতেই রোদেলার বাবুদের আদ্রিয়ানের কোলে দিয়ে বললো,

রোদেলাঃনিন আপনার প্রিন্স আর প্রিন্সেস কে। জানি আপনিও ওদের এখনো দেখেননি।
আদ্রিয়ান বাবুদের দিকে তাকালো। একদম আদ্রিয়ানের কপি দুজনে। আদ্রিয়ান দুজনের কপালে চুমু দিলো।
রোদেলাঃনাম কি হবে ওদের?
আদ্রিয়ানঃ আদ্রিশ খান রৌদ্র, আদ্রিফা খান রৌদ্রশী।
রোদেলাঃবাহ!

বাবুরা এর মাঝে কান্না করে দিলো। আদ্রিয়ান ওদের রোদেলার কোলে দিলো আর রোদেলা ওদের খাওয়াতে লাগলো।

৪দিন পর রিলিস দেওয়া হলো রোদেলাকে।
আদ্রিয়ানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে রোদেলা আর বাবুদের।

আজ প্রায় ১০ মাস পর রোদেলা সেই চেনা বাড়িতে আসলো। তার সংসারে আসলো। আদ্রিয়ান এখন বাবুদের নিয়ে অনেক বিজি থাকে। রোদেলার খেয়াল রাখলেও সেভাবে রোদেলার দিকে ফিরে তাকায় না। অফিস থেকে এসে বাবুদের নিয়ে খেলা করে খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। রোদেলা আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলতে চাইলেও আদ্রিয়ান এড়িয়ে যায়।

একদিন সকালে,,,,,

আদ্রিয়ান ঘুম থেকে উঠে দেখে রোদেলা বাসায় নেই। বাবুরা দোলনায় ঘুমাচ্ছে কিন্তু রোদেলা বাসায় নেই। পুরো বাড়ির কোথাও নেই রোদেলা।
আদ্রিয়ান রুমে এসে দেখে টেবিলে একটা চিঠি,,

আদ্রিয়ান চিঠিটা খুলে পরে,,,

প্রিয় আদ্রিয়ান,,
জানিনা আপনি আমাকে প্রিয় ভাবেন কিনা। তবে আপনি আমার অনেক প্রিয়। আপনাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারিনা আমি। সেই আপনাকে আমি একটা ভুলের জন্য হারিয়ে ফেলেছি। জানি ভুলটা অনেক বড়। আপনাকে বিশ্বাস করা উচিত ছিলো আমার কিন্তু আমি করিনি। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি প্রতিনিয়ত মরেছি আপনাকে মেরে। যখন নিজের মাঝে রৌদ্র,আদ্রিফার অস্তিত্ব জানলাম সেদিন কত কষ্ট লাগছিলো আপনি কাছে নেই বলে। আজ আপনি ফিরেছেন। কিন্তু সত্যি আমাকে নিজের মন থেকে মুছে দিয়েছেন। দোষ আপনাকে দেবোনা। দোষ আমার ভাগ্যের। আমি চলে যাচ্ছি বাবুদের নিয়ে আপনি ভালো থাকবেন। আর ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবেন সই করে দেবো

ইতি
রোদেলা।

আদ্রিয়ান চিঠিটা পরে বাবুদের নিয়ে চলে গেলো রাফসানদের বাসায়। রাফসান জানায় যে রোদেলা এখানে আসেনি। আদ্রিয়ান বাবুদের ওদের কাছে রেখে রোদেলাকে খুঁজতে গেলো।

আদ্রিয়ান রোদেলাকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে তার খোঁজ পেলো। রোদেলা একটা এতিম খানায় আছে। আদ্রিয়ান ওখান থেকে রোদেলাকে নিয়ে আসতে গেলে রোদেলা আসতে চায়না। তাই এক প্রকাস উঠিয়ে নিয়ে আসে রোদেলাকে সে।

বর্তমানে আদ্রিয়ান রোদেলা দাঁড়ানো একটা ব্রিজের ওপর। একদম ফাকা ব্রিজ৷ ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলছে।

আদ্রিয়ানঃ আমাকে ছেড়ে আমার বাবুদের ছেড়ে যাওয়ার সাহস হয় কিভাবে তোর?
আদ্রিয়ানের হুংকারে ভয় পেয়ে যায় রোদেলা। নিজেকে তাও সামলে বলে,

রোদেলাঃআপনার মনের ইচ্ছাটাই তো পূরণ করলাম। আপনি এটাই চেয়েছেন আমি সেটাই করেছি।

আদ্রিয়ান রোদেলার দুই বাহু চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,

আদ্রিয়ানঃকোনটা আমার ইচ্ছে কোনটা আমার ইচ্ছে নয় সেটা কি তুমি বুঝোনা? তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকবো। তোমাকে ভালোবাসি আমি। আমার সব তুমি। হ্যা রাগ আছে আমার তোমার প্রতি। কিন্তু তার মানে এইনা আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো।
রোদেলাঃতবে আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন কেন। আমি স্বিকার করছি আমি অপরাধী কিন্তু আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি কোনোদিন আর এমন করবোনা। আমি মরে যাচ্ছি আদ্রিয়ান আপনার অবহেলায়।
বলেই রোদেলা আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুঁজে কেঁদে দেয়। আদ্রিয়ান জরিয়ে ধরে রোদেলাকে।

আদ্রিয়ানঃ কেঁদে নেও। আজকের পর আর কান্না করবেনা। এখন থেকে আমরা সুখি একটা পরিবার হবো।

__________________________________

দেখতে দেখতে ২বছর চলে গেলো। আরাভ রুবার বিয়ে হয়ে গেছে। মুন রাফসানের একটা ছেলে হয়েছে। কাশু কাউসারেরও বিয়ে হয়ে গেছে। আদ্রিতাও বিয়ে হয়ে গেছে আহানের সাথে। রাতকে আদ্রিয়ান বিয়ে দিয়েছে সায়মনের সাথে। রাত ও এখন রোদেলাদের সাথে থাকে।

রোদেলা সেই কখন থেকে তার দুই বিচ্ছুবাহীনিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তারা খাচ্ছেনা। রোদেলা ওদের নিয়ে চলে আসে এলেক্স রেইনের কাছে। রৌদ্র,রৌদ্রশী এলেক্স রেইনের সাথে খেলছে আর রোদেলা ওদের খাওয়াচ্ছে।

এলেক্স রেইনকে রৌদ্র রৌদ্রশী একটুও ভয় পায়না। এলেক্স রেইনের সাথে কত মজা করে খেলে ওদের ঘাড়ে পিঠে উঠে বসে থাকে। আর এলেক্স রেইন ও কিছু বলেনা ওরাও যেনো এটাতে অনেক মজা পায়। আদ্রিয়ানের মতো ওর ছেলে মেয়েও এদের ভয় পায়না। আদ্রিয়ান ওদের নিয়ে এলেক্স রেইনের কাছে এসে কত বসে থেকেছে তাইতো ভয় পায়না ওরা। রোদেলাও অবশ্য ভয় পায়না এখন আর।

মিস্টার হাসানদের সাথে আদ্রিয়ানের সম্পর্ক এখনো অনেক ভালো। আদ্রিয়ান যাওয়া আশা করে তাদের বাসায়। তারাও আসে নাতী নাতনিদের দেখতে। নীলাদ্র নন্দিনীর একটা মেয়ে হয়েছে। রুহি চলে গেছে বাহিরে দেশের। সব মিলিয়ে অনেক সুখি আছে আদ্রিয়ানরা।

রাতে,,,,,
আদ্রিয়ান বাসায় আসার পর বাচ্চারা ঘিরে ধরলো ওকে। আদ্রিয়ান বাচ্চাদের সাথে খেলে ওদের খাওয়ালো। তারপর ওদের সাথে করে নিয়ে এলেক্স,রেইন,টাইগার, টুইংকেলকে খাবার দিয়ে আসলো। তারপর বাচ্চাদের ঘুম পারালো আদ্রিয়ান। রোদেলা রুমে আসলে আদ্রিয়ান ওকে জরিয়ে ধরে।

আদ্রিয়ানঃসো।
রোদেলাঃকি সো?
আদ্রিয়ানঃতুমিতো দেখি আরো সুন্দর হয়ে গেছো আগের থেকেও[শয়তানি হাসি দিয়ে]
রোদেলাঃতাই নাকি ভালোতো।
আদ্রিয়ানঃহ্যা। চলো বাবুদের জন্য আরেকটা ভাই / বোন নিয়ে আসি।
রোদেলাঃ নায়ায়ায়ায়া। আর না। এদের জ্বালায় আমি শেষ। আর না মাফ চাই।
আদ্রিয়ানঃকিন্তু আমার চাই আমি ক্রিকেট টিম বানাতে চাই।

আদ্রিয়ান রোদেলাকে আর কিছু বলার সময় দিলোনা। ডুব দিলো রোদেলার মাঝে। রোদেলাও ডুব দিলো তার আদ্রিয়ানের মাঝে।

ভালোবাসার আসক্তি থেকে কেউ কি আসক্ত না হয়ে পারে। আদ্রিয়ানের প্রেমময় আসক্তি যে তার রোদেলাময়। তার নেশা রোদেলা।

“মানুষের জীবনের ভয়ংকর আসক্তি প্রেমের আসক্তি”
“মাদকের নেশার থেকেও ভয়াবহ এটা”

তাইতাও আদ্রিয়ানের রোদেলাই তার এক মাত্র…..

❣️প্রেমময় আসক্তি❣️

#সমাপ্তি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here