হয়ত পর্ব ৩২

#হয়ত
পর্ব:- ৩২
.
নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে ।
হৃদয় তোমারে পায়না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে রয়েছ নয়নে নয়নে।
বাসনার বশে মন অবিরত
ধায় দশ-দিশে পাগলেরও মত
স্থির আঁখি তুমি
মরমে সতত-জাগিছ শয়নে স্বপনে
রয়েছ নয়নে নয়নে।… (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
.
-‘ ভাইয়া।’
-‘ কে? ওহ রৌদ..দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে আয়?’
-‘ কোথাও যাচ্ছ? ‘
-‘ হ্যাঁ। রেস্টুরেন্টের দিকে যাব। কিছু বলবি?’
-‘ তোমার কী একটু সময় হবে?’
-‘ কেন বলতো?’
-‘ কিছু কথা বলতাম।’
বর্ষণ পারফিউমের বোতলটা ঝাঁকিয়ে বারকয়েক গায়ে স্প্রে করলো। তারপর ক্যাপ লাগিয়ে বোতল যথাস্থানে রাখল।
-‘ বল শুনছি।’
-‘ কবিতা আবৃত্তি সুন্দর হয়েছে।’
-‘ ধন্যবাদ।’
-‘ কবিতাটা তাপৌষির উদ্দেশ্যে আবৃত্তি করেছ তাইনা?’
বর্ষণ রৌদের প্রশ্নের উত্তর দিল না। কারণ উত্তর তো হ্যাঁ হবে। তাপৌষি সশরীরে উপস্থিত না থেকেও উপস্থিত আছে বর্ষণের অন্তরে।
রৌদ বর্ষণের দিকে সরু চোখে চাইলো।
দম নিয়ে বলল,
-‘ তাপৌষির সাথে অন্যায় হচ্ছে না?’
-‘ কীসের অন্যায়?’
-‘ হেয়ালি করছো?’
-‘ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাকি কথা রাতে হবে।’
-‘ পালিয়ে যাচ্ছ? ‘
বর্ষণ রৌদের ডান কাঁধের উপর এক হাত রেখে ওর চোখের দিকে চেয়ে বলল,
-‘ তাপৌষিকে বেছে নিলে অথৈর সাথে অন্যায় করা হবে।’
-‘ তুমি তাপৌষিকে ভালোবেসে অথৈকে বিয়ে করলে তখন অথৈর সাথে অন্যায় করা হবে না?’
বর্ষণ রৌদের কথার কোন প্রতিউত্তর করে না। এই প্রশ্নের উত্তর বর্ষণের কাছে নেই।
———–
একটু আগেই তাপৌষি এশা নামের ওর এক বান্ধবীর বাসায় এসেছে। মধ্যবিত্ত পরিবার এশাদের। কত সুন্দর বাবা-মা, ভাইয়ের সাথে থাকে! তাপৌষিও এমন পরিবার কল্পনা করতো সব সময়। অতীতে তো এমন পরিবার ওর ও ছিল। এখন সে সবই কল্পনা।
-‘ নে চানাচুর খা। একবার বলে আসবি না? ঘরে কিছুই নেই।’
-‘ আমি কবেই বা বলে এসেছি? তুই এমন অপরিচিতের মতো ব্যবহার করছিস কেন?’
-‘ তাপৌষি তোদের আগের অবস্থা আর এখনকার অবস্থা এক না।’
-‘ তো? আমি তো সেই আগের তাপৌষি আছি।’
তাপৌষিরর নাকে টেনে কথা বলার ধরণে এশা হেসে দেয়।
.
-‘ ওই রকম একটা মহিলার সাথে তুই আছিস কীভাবে?’
-‘ থাকতে তো হবেই। করার কিছু নেই।’
-‘ তুই আমার বাসায় চলে আয়।’
-‘ পাগল হয়েছিস?’
.
এশা নিজের প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে দেখছে। অনেক শুকিয়ে গেছে। চুল গুলো রঙ করা। তবে চোখের নিচে কালি। তাপৌষির মা যখন মারা যায় তখন এশারা চট্টগ্রামে, নিজ দাদাবাড়িতে। ফোনে জানতে পারে তনিমা বেগমের মৃত্যুর কথা। কিন্তু ফিরতে পারছিল না। অনেক দিন পর যাওয়ায় আত্মীয়স্বজন সব চেপে ধরেছিল। যেদিন ফিরে, জানতে পারে তাপৌষি ঢাকায়। এরপর ফোনে অবশ্য দুই-তিনবার কথা হয়েছে ওদের।
-‘ বর্ষণ ভাই ফোন দেয়নি?’
-‘ ফোন নাম্বার দিয়ে আসি নি।’
-‘ আচ্ছা দায়িত্ব কী সবচেয়ে বড় হয়ে গেল?’
-‘ একই প্রশ্ন তো আমিও করেছি।’
-‘ একবারও যোগাযোগ করবি না?’
-‘ না। তবে তার যোগাযোগের অপেক্ষায় থাকবো।’
-‘ এতো ভালোবাসিস?’
তাপোষি মৃদু হাসলো। গালে টোল পড়ছে। চমৎকার লাগছে ওকে দেখতে।
-‘ তুই খুব সুন্দর তাপৌষি। ভাইয়া কিন্তু তোকে এখনও আগের মতো পছন্দ করে।’
এশার কথায় তাপৌষি অপ্রস্তুত বোধ করে। হালকা হেসে বলে,
-‘ এই এশা চুপ কর তো। কী সব কথা। আমি উঠি আজ। পরে দেখা হবে।’
-‘ এখনি চলে যাবি? ‘
-‘ হ্যাঁ রে। আসি।’
———-
-‘ কোথায় গেছিলে তুমি?’
-‘ বান্ধবীর বাসায়।’
-‘ ঘড়িতে বাজে কয়টা দেখেছ?’
-‘ জি দেখেছি। আমার চোখ আছে। ছয়টা বাজে।’
শুভ্রা তাপৌষির এই চ্যাটাং চ্যাটাং কথায় ক্ষেপে যাচ্ছে। ক্ষীপ্র গতিতে রাগ অন্তর থেকে বের হতে চাচ্ছে। তবে এখন রাগার সময় নয়। এই এক রতি মেয়েকে শুভ্রা নিজের দাবার গুটির মতো ব্যবহার করতে চায়।
-‘ যাও ঘরে যাও। ‘
তারপর ভেঙিয়ে আস্তে বলল
“পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।”
————-
ঘড়িতে এখন সময় রাত বারোটা বেজে বিশ মিনিট। তাপৌষি ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে হাতের বইটা টেবিলের উপর রাখল।
-‘ এই বেটি যা এই ঘর থেকে। আমি এখানে ঘুমাবো।’
নীলাভ্র আজ নেশা করেছে। একটু নেশা নয়। প্রায় আট বোতল সাবার করেছে। বন্ধুদের দেওয়া বিষ আজ রূপ দেখাবে। ফ্ল্যাটে ফিরেই ও তাপৌষির উপর চড়াও হয়েছে। ফরিদ সাহেব ও শুভ্রা এখনো বাড়ি ফিরেনি। আজ কোথায় একটা গেট টুগেদারের আয়োজন করেছে শুভ্রার ফ্রেন্ডরা। শুভ্রা সেখানে জোর করে ফরিদ সাহেবকেও নিয়ে গেছে।
-‘ আপনি নেশা করেছেন?’
-‘ ওই বেটি নেশা কী? আমি ড্রিংকস করসি। যা ভাগ।’
-‘ না যাব না। এটা আমার ঘর। বের হোন বলছি।’
-‘ খুব তেজ না তোর? আজ তোর তেজ আমি ছুটিয়ে দিব।’
.
“আহ!”
ধাক্কাটা খুব জোরেই লেগেছে। তবে তাপৌষি আজ পিছন ফিরে মাটিতে কুড়ানো নীলাভ্রকে সাহায্য করতে এগোয় নি। কোন রকমে জান বাঁচিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে যায়। গেট লাগিয়ে ‘ মা’ বলে মাটিতে বসে পড়ে । হাত অনেকখানি কেটে গেছে। রক্ত পড়ছে। চোখ তুলে চারপাশে তাকায়। বিছানার পিছের দেয়ালে বড় করে নীলাভ্রর ছবি টাঙানো। এটা নীলাভ্রর ঘর!
———
-‘ কেউ আছো দরজা খুলো। প্লিজ। বাবা, শুভ্রা আন্টি শুনিতে পাচ্ছেন কেউ। দরজা খুলেন।’
রাতের বেলা তাপৌষি নীলাভ্রর ঘরেই দরজা আটকে ছিল। তবে সকাল বেলা যখন দরজা খুলে বের হতে যায় তখন দেখে পিছন দিক দিয়ে কেউ দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।
“খট” শব্দে তাপৌষি দুই পা পেছোয়। কেউ দরজা খুলছে।
-‘ বাবা জানো কী হয়েছে? এই ছেলেটা…’
ঘরময় নিস্তব্ধতা। তাপৌষি ফ্লোরে পড়ে আছে। মাথা ঘুরাচ্ছে ওর। চড়টা খুব জোরেই লেগেছে। বাম পাশের কান দিয়ে চিঁইইই শব্দ শোনা যাচ্ছে।
-‘ বলেছিলাম না ড্যাড। দেখেছ মম। আমি তো জানপ্রাণ দিয়ে ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এই মেয়েটা এতোই ডেস্পারেট ছিল যে কী বলবো। ধাক্কা দিয়ে ওকে ফ্লোরে ফেলে গেট আটকিয়ে দিয়েছি। হাতের দিকে তাকাও। আমার দেওয়া ধাক্কার কারণে হাত ছিলে গেছে।’
তাপৌষি নিজের হাতের দিকে তাকাল। তারপর সাফাই গাওয়া নীলাভ্রর দিকে তাকাল। ছেলেটা কত সুন্দর অনর্গল মথ্যা বলে চলেছে!
-‘ ছি! তাপৌষি। সম্পর্কে তোমার ভাই হয় ও। ‘
ফরিদ সাহেবের কথায় স্পষ্ট ভেসে উঠছে ঘৃণা। তাপৌষির জন্য….. নিজের মেয়ের জন্য ঘৃণা। সতেরো বছর আট মাস ধরে বড় করে তোলা মেয়েটাকে ফরিদ সাহেব চিনতে পারলেন না। তাপৌষির আফসোস হচ্ছে। তবে নিজের জন্য না। ফরিদ সাহেবের জন্য।’
-‘ এই মেয়ে এখানে থাকলে আমি আর আমার ছেলে থাকবো না কিন্তু ফরিদ। এই আমি বলে দিলাম।’
তাপৌষি অনুনয়ের চোখে বাবার দিকে তাকাল। তবে ফরিদ সাহেব মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।
-‘ যাও তাপৌষি ব্যাগ গুছিয়ে এসো। তোমাকে হোস্টেলে রেখে আসবো।’
—————-
-‘ কাশেম তুমি ঠিক মতো খোঁজ খবর নিয়েছ তো। এটাই ভালো হোস্টেল?’
-‘ জি স্যার। সব ধরণের সুযোগ সুবিধা আছে। টুয়েন্টি ফোর আওয়ার বিদ্যুত, লিফট, ওয়াইফাই সব আছে।’
-‘ দেখো। তাহলে সীট রেডি করতে বলো একটা। আজ বিকালের মধ্যে যেন কাজ হয়। রাত থেকে তাপৌষি থাকবে।’
-‘ জি স্যার।’
.
-‘ বাবা।’
-‘ ব্যাগ গোছানো শেষ? ‘
তাপৌষি ডানে বামে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ এখনো শেষ হয়নি।
-‘ তাহলে এখানে কী করো? যাও গুছাতে যাও। ‘
-‘ কিছু কথা ছিল বলার।’
-‘ বলো।’
-‘ তুমি একটু বসবে?’
ফরিদ সাহেব বিছানা বসে বললেন,
-‘ এই নাও বসলাম। এবার বলো।’
তাপৌষি ফরিদ সাহেবের পায়ের কাছে ফ্লোরে বসলো। উনার হাঁটুতে মাথা রেখে বলল,
-‘ বাবা তোমার মনে আছে মা আর তুমি কত কষ্ট করে রাজশাহী এসেছিলে? এক রুমের একটা টিনের ঘরে কতই না কষ্ট হতো।’
ফরিদ সাহেবের মনে পড়ছে অতীতে ফেলে আসা সেই দিনগুলো।
রাজশাহীতে তনিমাকে নিয়ে কত কষ্ট করে সে ন নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা। কাজী অফিসে বিয়ে করে একটা ভাঙাচোরা টিনের ঘর ভাড়ায় নিয়েছিলেন। এক বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে চাকরি নিয়ে কোন রকমে চলছিল দিনগুলো। ভাড়া দিতে গেলে দেখা যেত খাবার নাই। বাধ্য হয়ে তনিমা বেগমও শ্রমিক হিসেবে যোগদান করে। দুই জনের টাকায় ভালোই চলছিল দিন। তবে তনিমা বেগমের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়েই ফরিদ সাহেব ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ভালো ছাত্র হওয়ায় এতো টানাটুনির মাঝে সেকেন্ড ক্লাস মিস হয়নি তার। তারপর রাজশাহী কলেজ থেকে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করেন। এই যে এতো কষ্ট করেও ওরা সুখী ছিল। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর সংসারের বোঝা তনিমা বেগম বলতে গেলে নিজ কাঁধে নিয়ে নিয়েছিলেন। স্বামীকে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সকাল থেকে বিকাল অবধি ফ্যাক্টরিতে একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করে রাতে বাসায় সেলাই এর কাজ করতেন। কখনো মনে হয়নি নিজেরা দুঃখে আছেন।
পরপর তিনবার তনিমা বেগমের গর্ভপাত হওয়ার দুই বছর পর তাপৌষির জন্ম। বড় আদরে মানুষ তাপৌষি। পুতুল বানিয়ে রাখতেন মেয়েকে ফরিদ সাহেব।
হুমায়ূন আহমেদ হয়ত ঠিকই বলেছেন,
” বাবা-মা’র প্রথম সন্তান হচ্ছে চমৎকার একটি জীবন্ত খেলনা। এই খেলনার সবই ভালো। খেলনা যখন হাসে, বাবা-মা হাসে। খেলনা যখন কাঁদে বাবা-মা’র মুখ অন্ধকার হয়ে যায়।”
সত্যিতো পুতুলের মতো মানুষ হয়েছে তাপৌষি। নিজেরা অভাবে থাকলেও মেয়েকে কখনো অভাবে রাখেননি।
-‘ জানো বাবা ছোট বেলায় তুমি যখন ঘাড়ে করে আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে, আমার বান্ধবীরা খুব হিংসা করতো। ওরা ওদের বাবার কাছে আবদার করতো এমন ঘাড়ে চড়ার। আমাদের ওতো টাকা ছিল না। বান্ধবীদের মতো রিকশায় করে স্কুল যাওয়ার মতো বিলাসিতা করতে পারতাম না বলে রোজ এক মাইল পথ আমাকে ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়ে যেতে। আমার সুপার হিরো তুমি, জানো তো। আমি কখনো টিফিনে কিছু খেতাম না। তোমার দেওয়া দুই টাকা জমিয়ে রাখতাম। মাস শেষে যখন ঐ টাকা দিয়ে বাসায় তুমি, আমি, মা মিলে পিকনিক করতাম কী যে ভালো লাগত!
তোমার মনে আছে একবার পিএসসি পরীক্ষার আগের দিন আমার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো। মা কাঁদছিল আমি পরীক্ষা দিতে পারবো না বলে। তুমি মা’কে ধমক দিয়ে বলেছিলে, ‘ পরীক্ষা আগে না কি আমার মেয়ে আগে?’
আমি কিন্তু পরের দিন ঠিকই পরীক্ষা দিতে যেতে পেরেছিলাম। তোমার জন্য সম্ভব হয়েছিল। তুমি সারা রাত আমার সেবা করেছিলে। মা তো কাঁদতে কাঁদতে শেষ। অথচ তুমি ঘড়ি ধরে ছয় ঘণ্টা অন্তর অন্তর আমাকে ঔষধ খাইয়েছিলে।
তারপর আমি যেদিন বৃত্তি পেলাম। মনে আছে স্কুলের সব স্যার ম্যাডামদের মুখে তুলে মিষ্টি খাইয়ে এসেছিলে। “আমার মেয়ে, আমার মেয়ে ” বলে সারা স্কুল মাতিয়ে রেখেছিলে। গর্বের সাথে নিজের প্রতিপালন নিয়ে বড়াই করেছিলে। এমনকি এইটের জেএসসি পরীক্ষার পরও তুমি একই ঘটনা ঘটিয়েছিলে।’
তাপৌষি হালকা হেসে চোখের পানি গুলো দুহাত দিয়ে মুছল। তারপর আবার নিজের বাবার হাটুঁর উপর মাথা রাখল।
-‘ জানো আমি ভেবেছিলাম এসএসসি পরীক্ষার বৃত্তি রেজাল্টের পরও তুমি একই কাজ করবে। যেদিন রেজাল্ট দেয় আমি কলেজ আঙিনায় পাক্কা দু ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তোমার ফোনে ট্রাই করছিলাম। কিন্তু তোমাকে বারবার ব্যস্ত পাচ্ছিলাম। পরে জানতে পারি তুমি কাজের জন্য রাজশাহীর বাইরে গেছো। আগে যতবার কোথাও যেতা আমাকে বলে যেতা। কী আনবো কী আনবো করে আমার মাথা ব্যথা করে দিতা। সেবার তাই একটু বেশি অবাক হয়েছিলাম না বলে চলে গেছিলা বলে।’
আচ্ছা বাবা যখন গর্ব করতে আমাকে নিয়ে তখনও আমি তোমার মেয়ে ছিলাম। এখনকি তোমার মেয়ে আমি নই? নিজের প্রতিপালনের উপর অবিশ্বাস করলে। আমি তো তোমার মেয়ে বাবা। তোমার রক্ত আমার গায়ে। একটি বারের জন্যও মনে হচ্ছে না তুমি ভুল বুঝতে পারো?’
তাপোষি উঠে দাঁড়াল।
-‘ আসি বাবা। হোস্টেলে সীট পেয়ে গেছি। তোমাকে ছেড়ে আসতে হবেনা। শুধু একটু দোয়া করো আমার জন্য। সেটা তো করতে পারবে?’
—————-
তাপৌষি হোস্টেলে সীট পায়নি। সীমা নামক এক বান্ধবীর কাছে উঠেছে। এমনিতেই ছোট একটা সিংগেল রুম। ছোট বিছানা। তাপোষি এখানে কীভাবে থাকবে তা নিয়ে সীমা খুব চিন্তিত।
-‘ তুই চিন্তা করছিস কেন? হয়ে যাবে।’
-‘ তুই তো কখনো এভাবে থাকিস নি।’
-‘ তাতে কী হয়েছে। তুই শুধু একটা রুমের ব্যবস্থা করতে পারিস কী না দেখ। যদি রুমমেটও থাকে তাও সমস্যা নেই।’
-‘ আচ্ছা আমি দেখছি। কিছু খেয়ে এসেছিস।’
-‘ না। পরে খাব। এখন খেতে ইচ্ছা করছে না। তুই একটু দেখ প্লিজ।’
.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here