সমাধি পর্ব-০২

#সমাধি♦️
#পর্ব-২
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_____________________________

“- রাতে খাবার টেবিলেও এলোনা রাসেদ। কাজের ছেলে গুলো অনেক বার ডেকে গেলো।

ও রাসেদ ভাই চলেন না খাইয়া লন..

নাহ রাসেদের কোন সারা শব্দ না পেয়ে তারা চলে গেলো।রাসেদের জন্য না খেয়ে বসে থাকবে এরা তো ওর পরিবার নয়।
ডাকলো আসেনি তা কি করার আছে??

“— কি পাকা ধানে মই দিলাম, অনু আমার সাথে এমন ব্যাবহার করতে পারলো??
মুখের সামনে থেকে দুধ টুকু কেড়ে নিলো।
না খেয়েই রাসেদ ঘুমিয়ে পড়েছে।ঘুমতো আসছেনা তবুও চেষ্টা চলছে।
—★

“— সেই কখন খাবার টা তর টেবিলে দিয়ে গেছি,এখনও খেলিনা কেন??
পরে খাবি বলে খাবার ঘরে আনালি তা এখনও কি খাওয়ার সময় হল না তর!!
আকলিমা বেগমের শাষনি গলায় শব্দ,মেয়ে এখনও খেলোনা, বই নিয়ে বসে কেন?
এত পড়ুয়া মেয়ে কবে থেকে হল?
–কিরে মুখে কথা নেই?
“- আহ মা,ভাললাগছেনা পরে খাবো যাও তো বিরক্ত করনা।

– মেয়ের বিরক্তি কর ভাব দেখে আকলিমা চলে এলো।মেয়ে না খাওয়া দেখে কষ্ট হল ঐদিকে আরেকজনের সন্তান ও না খেয়ে তা জানার দরকারই পরেনি।
অন্যের রক্তকে মায়া দেখিয়ে লাভ কি!!

–__
“- রাসেদ ভাই!এই রাসেদ ভাই।
রাসেদ কানের কাছে ফিস ফিসে শব্দ শুনতে পারছে।কেউ তাকে ডাকছে রাসেদ ভাই বলে!
চোখটা মেলে তাকাতেই চোখ মস্ত বড় বড় হয়ে উঠলো।

অনু তুই এখানে??

” অনুর খাবারটা নিয়ে রাসেদের ঘরে হাজির। সবার ঘুমনোর অপেক্ষায় ছিলো অনু।তাই দেরি হল। আর রাসেদের ঘরটায় দরজা খুলাই থাকে।ফ্যানের চাইতে খুলা হাওয়াই তার পছন্দ।

চাঁদের আলোয় মুখটা চিনতে ভুল করেনি রাসেদ।দৌড়ে গিয়ে রুমের লাইটটা অন করে নিলো।

তুই এত রাতে এই ঘরে কেন??
“শান্ত কন্ঠ তবে অভিমানে ভর পুর ফিস ফিসে আওয়াজ, তা বুঝা যায়।

— খাবারটা রাসেদের বিছানায় রেখে অনু চোখ দুটো নিচু করে বসে রয়েছে।
রাসেদ বুঝতে পারল অনুর আসার কারন..তা অনু রাসেদের এত কিছু লক্ষ করে??

” খাবার এনেছিস কার জন্যে??
– রাসেদ ভাই সরি,প্লিজ খেয়ে নাও।
“তোকে বলেছি আমার খিদে পেয়েছে??
কোমড়ে হাত দিয়ে একটু বিরক্ত কর কান্ঠ।বহু কষ্টে চোখের পাতা জোরা এক করেছিলো,এটাও হতে দিলো না অনুটা।

— রাসেদ ভাই সরি। খেয়ে নাও, আমি জানি তুমি খাওনি।
বিকেলের কাজটার জন্য সরি।প্লিজ এসোনা…
” এদিক সেদিকের চোখ ঘুরানো শেষ,এবার অনুর দিকে নজর দিয়েছে রাসেদ।
অনু খাবার আনলো কি করে? তাও মাছ/ মাংস। কাজের লোকেরা খাবার পর তো এসব রয় না।আন্টিরা খেয়ে থাকলে আমাদের খাওয়া।
তাহলেকি এগুলো অনুর খাবার?

অনুর শুকনো মুখটা রাসেদের চোখে পরল।অনুও খায়নি।কেঁদেছে??
কিন্তু কেন? তখন এমন টা করে এখন দরদ কেন??

— তুই খাসনি??
“মাথা নাড়িয়ে অনুর না জবাবে রাসেদ সিউর হল।তার ধারনাটাই ঠিক এগুলো অনুর খাবার।

“- হাত ধুয়ে প্লেটটা হাতে নিয়ে ভাত গুলো দুই ভাগ করেছে রাসেদ।
নে এই ভাগ তর এটা আমার।খাওয়া শুরু কর।

আসলে তাদের দুজনের সম্পর্কটা কেমন জেনো।তারাই বুঝতে পারেনা তো আমি কি বুঝবো?
আর কিবা বুঝাবো।
টিচার আর ছাত্রীর? নাকি তার চেয়ে অধিক বেশি নাকি কম???

“-এক প্লেটে দুজন চুপ চাপ খাবার খাচ্ছে।অনুর চোখের পানি ভাতে গরিয়ে পরছে.

তুইকি এই চোখের পানি মিস্রিত ভাত আমায় খাওয়াতে এলি??

“- হাত থেকে খাবারটা ঝেরে অনুর করুন গলার স্বর।

রাসেদ ভাই তুমি একটা চাকরির জোগার করে এখান থেকে চলে যাও।

— লোকমাটা রাসেদের গলায় আটকে গেছে।অনু আমায় চলে যেতে বলছে??
” তোকে আমি এত জ্বালাইরে অনু! তার জন্য আমায় বিদায় করতে চাইছিস।

— পেটে চেপে রাখা কথাটা আর অনু চাপিয়ে রাখতে পারল না।
কাঁন্না জরিত কন্ঠে রাসেদের কথার জবাব দিলো।

এখানে থাকলে মাঝে মধ্যে তোমায় বিড়ালের এটো দুধ খেতে হতে পারে।

“- অনুর এই ছোট্ট কথাটা রাসেদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব হয়ে উঠলো।
— রাসেদের চোখের পানিও এবার গরিয়ে পরছে।
খাবার গলা দিয়ে নামছে না।চোখে এতটাই পানি ভরেছে ভাত গুলো দেখা যাচ্ছেনা সব ঝাপসা লাগছে।

আন্টিকে মায়ের মত জানতাম।আর উনি উনার পোষা বিড়ালের এটো দুধ আমায় খাওয়াতে চাইলো? বিড়ালের থেকেও এতটা অধম।

” দুজনেই খাওয়া বন্ধ করেছে,নিরবতা বিরাজ মান তাদের মাঝে।
অনু লজ্জায় মাথাটা উচু করে রাসেদের দিকে তাকাতেই পারছে না।মায়ের এমন কাজে সে লজ্জিত।

অনু আর এখানে বসে থাকতে পারছে না তাই ছুটে চলে গেছে নিজের ঘরটায়।

রাসেদ এখনও ঐভাবেই বসে।

!——-২ দিন অনু রাসেদের কাছে পড়তে আসেনা।না রাসেদ ডাকছে। তপুকে চুপ চাপ পড়িয়ে চলছে।আকলিমা পড়তে না যাওয়ার কারন জানতে চাইলে অনুর নানান অজুহাত।
মাথা ব্যাথা এটা ওটা।

দীর্ঘ সময় ধরে রাসেদ তার আরামের সময় টুকু রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কাটায়। অনুর মুখ দুদিন ধরে দেখছেনা, এটাও একটা যন্ত্রনা রাসেদের জন্যে।

“- ___★

তিন দিনের মাথায় রাসেদ আর অনুকে না দেখে থাকতেই পারল না।তাই ছুটে গেলো অনুর কলেজে।
“- রাসেদকে দেখে অনু অবাক।রাসেদ ভাই এখানে!!
— অনু!!
গেটে ঢুকার আগেই অনুর দেখা মিলেছে।ক্লাস শুরু হতে এখনও সময় আছে, তাই হয়তো এদিক সেদিক বান্ধবীদের সাথে ঘুরছে।

একদম নরমাল ভাবে রাসেদ ব্যাবহার করছে,ঐ কথাটা জেনো মনেই নেই ওর।অনুর মা এমন কাজ করল এনিয়ে অনুর উপর কোন রাগ নয়।

নে.৷৷

“-কি এটা!!
– ঝালমুড়ি এনেছি তর জন্য।
” মাথাটা উপর করে রাসেদের হাত থেকে ঝাল মুড়িটা নিয়ে রাসেদের দিকে নজর গেলো।

ওমা এত সেজে গুজে কোথায় চলছে!আগে কখনোইতো শার্ট ইন করে পরত না।আজকে আবার কি হল??

“- কোথাও যাচ্ছো??
— রাসেদ হালকা মুচকি হাসছে অনুর কথায়।
তুই তো বললি চলে যেতে তাই চলে যাচ্ছি।

রাসেদের মুখে চলে যাবার কথা শুনে রাসেদের দেয়া মুড়ি গুলো রাস্তায় এক রকম ছিটকে পরল। চলে যাচ্ছো? আমি তোমায় কখন চলে যেতে বলেছি রাসেদ ভাই!! কথাটা মনেই চাপা রইলো।

“- অনুর বিচলিত চোখের দিকে তাকিয়ে রাসেদ।
তুইতো বললি চাকরি জোগার করতে।তা চাকরি হলেতো তোদের বাড়িতে আমার ঠাই হবে না,চলে যেতে হবে।আর তুই তো তাই চাস।

— অনুর মুখটা দেখার মত ছিলো সেদিন, রাসেদ তা আজীবন মনে রাখবে। অনুর চোখে তার রাসেদ ভাইকে না দেখতে পাওয়ার বেদনাটা স্পষ্টভাবে দেখতে পারছিলো।

না এটা অন্যায়,কোথায় অনু আর কোথায় আমি! তার উপরে বয়সে সে আমার বড্ড ছোট।কোন খান দিয়েই আমরা দুজন দুজনের জন্য নয়।

°°°”-[=২বছর পর–=]-★

রাসেদ তার মনের সব কথা ডায়রিতে তুলতে ব্যাস্ত, এটার সুন্দর প্রিন্ট করে বই বানাবে।নিজের কাছে রাখবে।তার আর অনুর সব কিছু তাজা রাখতেই এমনটা।
তবে ধিরে ধিরে লিখতে হবে, দুজনের মধ্যে তো দুইএকটা কথা হত না তাই।বা একটু মূহুর্ত কাটায়নি।

নাহ লেখায় বাধা,
এই রাসেদ খেতে এসো—–
আহ শান্তিতে লিখতেও পারিনা,।ডায়রিটা ভাজ করে চলে গেছে কেউ ওকে ডাকছে তাই যেতে তো হবেই।

________________♦

“—–★★ ২ বছর আগের ঘটনায় ফেরা হক আবার।★★

অনু একটু শক্ত গলায়ই রাসেদকে বলে দিলো।ঢাকাতে কি আমাদেরই বাড়ি রয়েছে?? চাকরি পেলে থাকার অভাব হবেনা।তবে এমন যায়গায় থাকার চেয়ে তো ভালো হবে।

অনু কেন বলছে রাসেদ তো জানে।রাসেদের জন্য হয়তো মায়া হয় তাই।
— হ্যা রে অনু,
হয়তো থাকার জায়গার অভাব হবে না।তবে সব জায়গায় শ্বাস নিতে পারিনা, কষ্ট হয়।
আমার অক্সিজেন তো সব জায়গায় রবেনা রে!!!

কথাটা কাকে বললো অনুকে!!
এই রাসেদ ভাইকি আমার কথা বললো???

-” যাইরে অনু,আজকে আমার একটা ইন্টারভিউ রয়েছে দোয়া করিস।
যদি চাকরিটা হয় না, প্রথম বেতন পেলেই,তর জন্য নীল রঙের একটা তাতের শাড়ি আনবো।

—- ঐ দেখো এখনও তো চাকরি পেলেনা, আর বেতন নিয়ে টানা হিচরা করছ!!
“মানুষ আশায় বেঁচে থাকেরে।আমার সেই আশা শেষ করিস না। হলে হল নয়তো এই আশা বেঁধেছি তার সুখটা তো উপভুগ করব।

— অনুর মুখে হালকা হাসি ফুটেছে।রাসেদ আজ কবি কবি ভাব ধরে অনুর সাথে মিষ্ট ভাষি হয়ে কথা বলছে।নয়তো আর সময় অনু… পড়তে বস.ঘোড়ার ডিম লিখিস এটা ওটা।

“- যাইরে ওহ একটা কথা। কয়েকদিন ফিরব না, বাবার ডাক পরেছে,৩/৪ দিন পর ফিরব।ইন্টারভিউ দিয়েই গ্রামে যাবো। রেজাল্ট জানতে পারলেই চলে আসবো।

লেহহহ হাসি মুখটা আবার ফ্যাকাশে হয়ে উঠলো।এতদিন রাসেদ ভাইকে না দেখে থাকবো!!

” যাবার বেলায় রাসেদ কোন শব্দ করল না।আর না অনু।
আজ বাড়ি গিয়ে কারো সাথে দেখা হবে না।। রাসেদ ভাইকে না দেখতে পেলে দম আটকে মরে না যাই।

ইচ্ছে তো করছে রাসেদ ভাইকে ডাক দিয়ে মানা করি যেনো এতদিন না থাকে।চলে আসে তার অনুর নিড়ে.৷
তবে না সেই কথাটা বলার অধিকার আছে আর না সাহস….

পিছন ফিরে বার বার দুজন দুজনের পানে এক পিপাসার্থ মানুষের মত চাহনি। মনে হয় বহু বছরের জন্য পারি দিচ্ছে..৷ না রাসেদের যাওয়ার ইচ্ছা করছে.

(চলবে)

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here