#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৮
মিরপুর ১১ তে পৌঁছে আবরন গাড়ি রাস্তার এক কিনারে পার্ক করে পূর্ণতা আর প্রেনা কে নামতে বলে নিজে গাড়ি লক করে নেমে দাঁড়ালো । পূর্ণতা আর প্রেনা বেনারসি পট্টির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলো সেখানে আয়মান , তাসিন আর ফাহিম ও দাঁড়িয়ে আছে ।
আয়মান , তাসিন আর ফাহিম ওদের খেয়াল করতেই পেছনে ওদের সাথে আবরনকেও লক্ষ্য করলো । তারপর ভ্রু কুচকে ঘটনা বুঝতে চেষ্টা করলো । পূর্ণতা ওদের দিকে এক নজর দেখে প্রেনার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে লাগল । আবরন ফাহিম , আয়মান আর তাসিন কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল ,
– কতক্ষন যাবত এসেছিস ?
ফাহিম বলল ,
– ১৫ মিনিটের মতো । বাই দ্য ওয়ে , ওরা দুইজন এখানে তোর সাথে কেন ?
আবরন বলল ,
– হাঁটতে হাঁটতে বলি ।
তারপর প্রেনা আর পূর্ণতার ৬-৭ হাত পেছনে ওরা হাঁটতে লাগল । আবরন বলল ,
– ওদের নিয়েই তো আসলাম ।
আয়মান বলল ,
– প্রশ্ন তো এটাই যে , ওদের নিয়েই তোর কেন আসতে হলো ?
তাসিন বলল ,
– ওয়েট ওয়েট !! ডু ইউ লাইক হার ?? প্লিজ বি অনেষ্ট আবরন !!
আবরন শুধু ঠোঁট বাকা করে হাসল ।
আর ওদের বুঝতে বাকি রইল না ।
আয়মান বলল ,
– তাহলে তো আমাদের সন্দেহ বিন্দুমাত্র ভুল না !!
আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,
– তোরা আবার কবে সন্দেহ করলি ?
ফাহিম বলল ,
– যেদিন তুই রোমিও হয়ে জুলিয়েটের জন্য গান গেয়েছিলি ।
ফাহিমের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো ।
পূর্ণতা আর প্রেনা ওদের হাসির শব্দে পেছনে ঘুরে তাকাতেই আবরন বিষয়টা লক্ষ্য করে হাসি থামিয়ে বাকিদেরও ইশারা করে হাসতে নিষেধ করল । সবাই হাসি থামিয়ে ওদের আরেকটু কাছাকাছি এগিয়ে গেল ।
পূর্ণতা একটা বড় দোকানে গিয়ে ঢুকতেই স্টাফদের দুইজন হুড়মুড় করে বিয়ের বেনারসি দেখানো শুরু করলো । পূর্ণতা বলল ,
– আরে ভাই , বেনারসি কেন দেখাচ্ছেন ??
আমাকে লাল পাড়ের কালো শাড়ি দেখান । জর্জেট ছাড়া দেখাবেন ।
– আচ্ছা আপু । সবাই মিলে এসেছেন তাই ভাবলাম বিয়ের শাড়ি কিনবেন ??
আবরন দুষ্টুমি করে পূর্ণতার কানের কাছে এগিয়ে বলল ,
– বিয়ের শাড়িটা নাহয় কিনেই ফেলো !! কয়দিন বাদে তো বিয়ে এমনিতেই করতে হবে ।
পূর্ণতা রক্ত চক্ষু করে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– দলবল নিয়ে বাহিরে গিয়ে দাঁড়ালে আল্লাহর ওয়াস্তে চিরকৃতজ্ঞ থাকতাম !!
আবরন হেসে বলল ,
– ওদের পাঠাচ্ছি , কিন্তু আমি তো যাবো না ।
পূর্ণতা ভেংচি কেটে শাড়ি দেখায় মনোযোগ দিল । আবরন ওদের বাহিরে পাঠিয়ে পূর্ণতার পেছনে এসে দাঁড়ালো ।
প্রেনা স্টাফকে বলল,
– ভাই , এত ভারি শাড়ি না । আপনি বরং টাঙ্গাইল শাড়ি দেখান ।
স্টাফ দুজন লাল পাড়ের কালো টাঙ্গাইল শাড়ি দেখাতে শুরু করলো ।
পূর্ণতা প্রতিটা শাড়ি ই দেখছে কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না।
প্রেনার ও পছন্দ হচ্ছে না ।
আবরন ব্যপারটা বুঝতে পেরে বলল ,
– ভাই , এই শাড়ি ই একটু ইউনিক ডিজাইন নেই ??
– হ্যা আছে ।
– ঐগুলো দেখান না তাহলে !
স্টাফরা টাঙ্গাইল শাড়ির ইউনিক ডিজাইন বের করতেই প্রেনা আর পূর্ণতার মাথা খারাপ হয়ে গেল । কারন প্রতিটা শাড়ি এত সুন্দর যে মন চাইবে সব গুলোই নিয়ে নিতে ।
পূর্ণতা বলল ,
– এতক্ষন এই শাড়ি কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন ভাই ?
স্টাফরা হাসল । এখন পূর্ণতা ডিসাইড করতে পারছে না কোন শাড়িটা নেবে ?? কারন প্রতিটা শাড়ি ই অসম্ভব সুন্দর । সব গুলোই লাল পাড়ের কালো শাড়ি তবে ডিজাইন ভিন্ন ।
আবরন একটা শাড়ি হাতে নিল যেটার জমিন কালো তার উপর সোনালি জড়ি সুতোর ছিটে কাজ করা আর টকটকে সিদুর লাল রং এর পাড় , তাতেও সোনালি সুতোর কাজ করা , আর আঁচল সম্পূর্ণ লাল এবং সোনালি সুতোর মিশ্রনে কাজ করা । সব মিলে শাড়ি দেখতে সিম্পলের ভিতর গর্জিয়াস ।
তারপর পূর্ণতা কে বলল ,
– এটা দেখো তো !!
পূর্ণতা দেখে বলল ,
– ওয়াও !!
তারপর আবরনের হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে আয়নাতে নিজের কাধে শাড়িটা ধরে দেখলো ওকে আসলেই শাড়িটাতে বেশ মানিয়েছে । পূর্ণতা যখন শাড়িটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তখন আবরন ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল ,
– চাইলে এটাই নিয়ে নিতে পারো । কিন্তু প্লিজ তুমি একা নিও । প্রেনার জন্য অন্য একটা শাড়ি পছন্দ করো ।
পূর্ণতার আবরনের কথা গুলো কেন যেন ফেলতে ইচ্ছা হলো না । ওর কেন যেন মনে হচ্ছে এই শাড়িটা হয়তো আবরন শুধু ওর জন্যই বাছাই করেছে । তাই পূর্ণতা মনের কথা শুনে রাজি হয়ে গেল । প্রেনা বলল ,
– এই শাড়িটাই আরেক পিস হবে ভাই ?
পূর্ণতা বলল ,
– শোন না , তুই অন্য আরেকটা নে । তাহলে ভালো হবে । কারন দুইজন দুই রকম ইউনিক শাড়ি পড়লে সবাই তাকিয়ে থাকবে বুঝলি !!
প্রেনা বলল ,
– তা অবশ্য ঠিক । আচ্ছা , তাহলে অন্য একটা পছন্দ করে দে ।
পূর্ণতা ওর জন্য অন্য একটা শাড়ি পছন্দ করে দিল ।
সব শাড়ি গুলোর একই দাম । ফিক্সড প্রাইস ২৬৫০/- , তবে ওদের কাছে কিছু কমিয়ে ২৫০০/- করে দিল । শাড়ি নিয়ে দোকান থেকে বের হওয়ার সময় আবরন পূর্ণতাকে বলল ,
– থ্যাংকস ।
পূর্ণতা কিছু বলল না । প্রেনার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো ।
আবরন ফাহিম , আয়মান আর তাসিন কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– তোদের গার্লফ্রেন্ড কে তোরা কি কি কিনে দেস রে গিফট হিসেবে ?
আয়মান বলল ,
– আমার তো গার্লফ্রেন্ড ই নেই । এসব ফাহিম আর তাসিন ই ভালো বলতে পারবে ।
তাসিন বলল ,
– আমার এত টাকায় ছিনিমিনি করে না , যেদিন ইনকাম করবো সেদিন কিনে দিব ।
ফাহিম বলল ,
– আমার জিএফ অনেক লক্ষী । যখন মিট করি তখন ই ৫০ টাকা দিয়ে একটা আইসক্রিম খাওয়ালেই আইসক্রিমের মতো গলে যায় ।
ওদের উত্তর শুনে আবরন বলল ,
– ধুর !! তোদের প্রশ্ন করাটাই ভুল হয়েছে ।
এই বলে আবরন আবারো পূর্ণতা আর প্রেনার পেছন পেছন এগিয়ে গেল । আয়মান , ফাহিম আর তাসিন ও পেছন পেছন গেল ।
পূর্ণতা আর প্রেনা বেনারসি পট্টি থেকে বের হয়ে পাশের গলির মার্কেটে গেল । এই দিকটায় সব জুয়েলারি আর অর্নামেন্টস এর দোকান । ওরা একটা দোকানে প্রবেশ করলো শাড়ির সাথে ম্যাচিং কিছু অর্নামেন্টস নেবে বলে ।
প্রেনা ভেতরে ঢুকেই পছন্দ মতো কানের দুল , গলার সেট , চুড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি নিতে লাগল । পূর্ণতা এত ভারি জিনিস পড়তে পারে না , তাই দাঁড়িয়ে ভাবছে কি নিবে ?
আবরন প্রেনাকে বলল ,
– প্রেনা , পুরো মার্কেটই তো কিনে নিচ্ছো , বান্ধবী কে ও পছন্দ করে দাও কিছু !
প্রেনা বলল ,
– ভাইয়া , ও এসব পড়ে না আমি জানি । তাই আমি আগে নিচ্ছি ।
আবরন পূর্ণতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল ,
– তুমি কি আমার সাথে একটু যাবে ?
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কোথায় ?
– চলোই না ।
– কিন্তু প্রেনা !!
– প্রেনা আছে এখানে । ওর সাথে আয়মান , ফাহিম , তাসিন আছে । চিন্তা করো না ।
পূর্ণতা আবরনের সাথে যেতে রাজি হতেই আবরন ওর হাত ধরে এই দোকান থেকে বের হয়ে অন্য দিকে যেতে লাগল ।
পূর্ণতার কেমন যেন ফিল হচ্ছে । এই প্রথম ওর হাত কোনো ছেলে নিজের হাতের ভেতর মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিয়েছে । যেন সেই মুষ্ঠিতে অন্য কেউ আঘাত করলেও তা ওর নিজের হাতে লাগবে না । পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চলেছে আর ভাবছে ,
– এমন কেন এই লোকটা ? মাঝে মাঝে ঠান্ডা বরফের মতো আবার মাঝে মাঝে আগুনের লাভার মতো । এত কেন কেয়ার করছে আমার ? কেন এত জড়িয়ে যেতে চাচ্ছে আমার সাথে ? কেন ?
মনে এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পূর্ণতার । এরই মধ্যে আবরন ওকে নিয়ে একটা সবচেয়ে বড় দোকানে হাজির হলো । দোকানটি তিন তলা পর্যন্ত । আবরন ওকে নিয়ে সরাসরি তিন তলায় এসেছে । আবরন ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল ,
– নাও , এবার নিজের পছন্দের জিনিস নিয়ে নাও ।
পূর্ণতা আবরনের কথায় নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে চার পাশটা তাকিয়ে দেখলো । এখানো শত শত ডিজাইনের চুড়ি । রেশমি চুড়ি থেকে শুরু করে গর্জিয়াস মোটা ভারি চুড়ি সবই আছে । পূর্ণতা কালো আর লাল রেশমি চুড়ি নিল দু মুঠো । আর এক জোড়া বালা নিল আরেক হাতে পড়তে । এরপর গলার সেট পছন্দ করতে অন্য দিকটায় গেল । পূর্ণতা অনেক গুলো গলার সেট দেখলো কিন্তু সবই একটু গর্জিয়াস । আবরন দোকানের স্টাফকে বলল ,
– ব্রো , কাইন্ডলি চিকনের ভেতর সুন্দর ইউনিক ডিজাইনের কিছু দেখান । শুধু সোনালি হতে হবে ।
লোকটা ভেতর থেকে বের করে দিল । সেখান থেকে পূর্ণতা কে চয়েস করতে বলল আবরন ।
পূর্ণতা কিছু একটা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে আবরনকে বলেই ফেলল ,
– শাড়িটা যেহেতু আপনি পছন্দ করে দিলেন , এটাও আপনি ই একটা পছন্দ করে দিন না । আমাকে সবসময় আম্মুই পছন্দ করে দেয় । আমি নিজে কখনো পছন্দ করে কিছু কিনি নি ।
আবরন বিনয়ের সাথে হেসে অনেক গুলো সেট ঘেটে একটা সেট পছন্দ করলো যেটাতে গলার হাড়ের সাথে এক জোড়া এডজাস্ট কানের দুলও আছে ।
কানের দুলটা মিডিয়াম সাইজের ঝুমকার মধ্যে, আর গলার হাড়টা চিকনের মধ্যে , কিছুটা সিতার হাড়ের মতো । পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– বাহ , চয়েস তো দেখছি সবই মাশাআল্লাহ । তাহলে উনি ঐ শাকচুন্নি কে নিজের হবু হিসেবে কি করে চুজ করলেন !! আশ্চর্য !!
ওর ভাবনার মাঝেই হঠাৎ আবরন ওর পেটের দিকে ছুঁতেই পূর্ণতা কেপে উঠে দেখল আবরন ওকে একটা বিছা পড়াচ্ছে । আবরন বিছাটা কোমড়ে পড়িয়ে দিয়েই পূর্ণতা কে জিজ্ঞেস করল ,
– সুন্দর না ? এটাও নিয়ে নাও । আর কিছু নিতে হবে না ।
পূর্ণতা মাথা নাড়ল । আবরন ওর কোমড় থেকে আবার বিছাটা খুলে নিয়ে স্টাফের হাতে দিয়ে বলল ,
– এগুলো সব প্যাক করে দিন ।
সব প্যাক করে দিতেই পূর্ণতা বিল পরিশোধ করে প্যাকেট গুলো হাতে নিল । আবরন ওর থেকে প্যাকেট গুলো নিয়ে নিজের বাম হাতে নিল আর ডান হাত দিয়ে আবারো পূর্ণতার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ বদ্ধ করে হাঁটতে লাগল ।
প্রেনা ও বিল পরিশোধ করে বেরিয়ে দেখল বাহিরে আয়মান দাঁড়িয়ে । প্রেনা এগিয়ে গিয়ে বলল ,
– বাকিরা কোথায় ?
– ওরা গাড়ির সামনে । চলো ।
প্রেনা আর আয়মান গেল গাড়ির কাছে ।
সবাই একসাথে হতেই আবরন বলল ,
– লেডিস ফার্স্ট বলে তোমাদেরটা আগে
শেষ করলাম । এখন আমরা কিনবো ।
পূর্ণতা বলল ,
– কি কিনবেন ?
– পাঞ্জাবি । কাল আমাদেরও পাঞ্জাবি পড়তে হবে কালো রং এর ভেতর লাল কাজ করা ।
প্রেনা বলল ,
– সবাইকে কি একই রং দেওয়া হয়েছে ?
আয়মান বলল ,
– না । ভার্সিটির সিনিয়র এবং জুনিয়রদের সেইম রং দেওয়া হয়েছে আর ২য় বর্ষ আর ইন্টার্নির নতুন স্টুডেন্টস দের এক কালার দেওয়া হয়েছে । আর ৩য় এবং ৪র্থ বর্ষ দের অন্য আরেক কালার ।
– ও আচ্ছা । এই জিনিস গুলো খুব ভালো লেগেছে । দেখতে সুন্দর লাগবে কাল সবাইকে ।
তাসিন বলল ,
– শুধু তাই নয় ! কালকে সিট প্ল্যানিং ও করা হয়েছে । যে যার যার মতো বসতে পারবে না । সেখানে ভাগ আছে । সৌন্দর্যের জন্য এমনটা করা ।
ফাহিম বলল ,
– কালকের দিনটার জন্য আর সহ্য হচ্ছে না !!
কিন্তু আমি আগেই বলে দিচ্ছি , ডেকোরেশনের কোনো কাজে কিন্তু আমি যাবো না । আমার বেলাতেই শুধু কুফা লাগে আর আকাম হয় ।
ওর কথা শুনে সবাই হাসতে লাগল ।
আবরন বলল ,
-এখন গাড়িতে উঠ । ১০ নাম্বারে যাবো পাঞ্জাবি কিনতে ।
ফাহিম , আয়মান আর তাসিন একদম পিছনের সিটটায় বসল । মাঝে প্রেনা আগে আগে বসল । পূর্ণতা আবরনকে উদ্দেশ্য করে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটেই আবার বসতে বসতে বলল ,
– আপনি তো আবার উবারের ড্রাইভার নন । আমাকেই তো সামনে বসতে হবে ।
আবরন হেসে গাড়িতে বসতে বসতে বলল ,
– যাক , ঘিলুতে তাহলে একটু হলেও বুদ্ধি হয়েছে । কিন্তু একটা জিনিস কিন্তু তুমি ভুলেই গিয়েছো ।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি জিনিস ?
আবরন ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে ওর কাছে আসতে লাগল ।
পূর্ণতা চোখ বড় বড় করে তাকালো ।
আবরন হঠাৎ করে ওর কাধের ওপর থেকে সিট বেল্ট টা টেনে নিয়ে লাগিয়ে দিয়ে বলল ,
– এটা ভুলে গিয়েছিলে ।
ওদের দুজনের কাহিনী দেখে ফাহিম গান গাইতে শুরু করলো ,
– কথা হবে , দেখা হবে , প্রেমে প্রেমে মেলা হবে , কাছে আসা-আসি আর হবে না !!
চোখে চোখে কথা হবে ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে ভালো বাসা-বাসি আর হবে না !!
শত রাত জাগা হবে , থালে ভাত জমা রবে , খাওয়া-দাওয়া কিছু মজা হবে না ।।
হুট করে ফিরে এসে লুট করে নিয়ে যাবে , এই মন ভেঙ্গে যাবে জানো না ??
আমার এই বাজে স্বভাব , কোনোদিন যাবে না ।।
আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না !!
এই টুক গাইতেই প্রেনা সহ আয়মান , তাসিন হুহা করে হেসে উঠলো ।
পূর্ণতা ব্যাপারটা বুঝেও না বুঝার ভান করে বসে রইল ।
আবরন মুচকি হেসে গাড়ি টান দিল । গন্তব্য মিরপুর ১০ ।
১০ মিনিটেই ওরা পৌছে যেতেই একটা বড় শপিং মলে প্রবেশ করলো ।
আবরন একটা একটা করে ডিসপ্লে করা পাঞ্জাবি দেখছে । তারপর সেখান থেকে একটা কালো রং এর মধ্যে বুকের কাছে লাল এবং সোনালি সুতোর কাজ করা পাঞ্জাবি পছন্দ করে ট্রায়াল রুমে গিয়ে সেটা পড়ে বাহিরে বেরিয়ে এলো । বাহিরে বের হতেই ওকে দেখে যেন পূর্ণতা আরেক দফা ক্রাশ খেল ওর উপর ।
আবরন বিষয়টা খেয়াল করে সকালের মতো আবারো ওর কাছে আসতে আসতে বলল ,
– আমার মত “কাউয়ার” উপর আবারো ক্রাশ খেলে বুঝি !!
পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলল ,
– আমি কাউয়ার উপর কেন ক্রাশ খেতে যাবো ?? হুহ !!
– কারন তুমি কাউয়ার বউ ।
এই বলে দাঁত কেলিয়ে হেসে নিজেকে আয়নায় দেখে বলল ,
– দেখো তো কেমন লাগছে ??
পূর্ণতা বলল ,
– সুন্দর ।
– তারমানে ক্রাশ তুমি খেয়েছো কিন্তু বলছো না । থাক , সেটা নাহয় সময় হলেই জেনে নেব ।
এই বলে সেখান থেকে চলে গেল আবার চেঞ্জ করতে ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– এই লোকটা পাগল করে দিচ্ছে । ছেলেদের এতো সুন্দর হওয়ার কি কোনো দরকার ছিল !! আর উনার এমন ভাব সাব দেখে তো দিনে ১০০ বার ক্রাশ খাবে সবাই , এটাই স্বাভাবিক । না পারছি বলতে আর না পারছি সইতে !! ধুর !!
অবশেষে সবাই পছন্দ মতো পাঞ্জাবি নিয়ে টাকা পে করে যার যার গন্তব্যে চলে গেল । বাকি রইল প্রেনা , পূর্ণতা আর আবরন ।
আবরন প্রেনা আর পূর্ণতা কে নিয়ে রওনা হলো প্রেনাদের বাসার উদ্দেশ্যে । পূর্ণতা প্রেনাদের বাসায় থাকবে , তাই ওদের ঠিক বাসার সামনে নামালো । প্রেনা আর পূর্ণতা চলে যাচ্ছিল কিন্তু তখন আবরন গাড়ির গ্লাস নামিয়েই পূর্ণতা কে পেছন থেকে ডাক দিল । প্রেনা ইচ্ছা করেই ওদের রেখে ভেতরে চলে গেল । পূর্ণতা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতেই আবরন বলল ,
– কাল বেশি সেজো না । যা কিনেছো শুধু সেগুলোই পড়ে নিও ।
পূর্ণতা বলল ,
– কেন ?
আবরন কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলল ,
– কারন বেশি সাজলে তোমাকে কাউয়ার বউ বলে মনে হবে ।
পূর্ণতা গাল ফুলিয়ে বলল ,
– ধুর !!
আবরন বলল ,
– আচ্ছা যাও এখন ।
পূর্ণতা চলেই যাচ্ছিল । তখন আবরন আবার ওকে ডাক দিল ।
পূর্ণতা বলল ,
– উফফফ , আবার কি ?
– ভুলেই গিয়েছিলাম । তোমার ফোন নাম্বারটা দাও তো !!
– ফোনই তো নেই , ফোন নাম্বার কি করে দেব ?
– মিথ্যা বলে লাভ নেই । আন্টিই বলেছে তোমার ফোন নাম্বার নিয়ে রাখতে । জলদি দাও ।
পূর্ণতা রেগে বলেই দিল ,
– ফোন কি করে থাকবে ? সেটা তো আপনার হবু ফিওন্সে নিয়ে নিয়েছে ।
আবরন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলল ,
– মানে ??
পূর্ণতা বলল ,
– মানে ঐ সিনিয়র আপু লম্বা করে দেখতে , পেত্মীর মতো , ও নিয়েছে ।
– জলের কথা বলছো ??
– আমি নাম জানি না । এখন গেলাম !!
আবরনের চোখ মুখ লাল হয়ে গেল এই কথা শুনে , ও রেগে আগুন হয়ে বাসার উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হলো ।
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৯
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে প্রেনা আর পূর্ণতা প্রেনার রুমের খাটে বসে যা যা কিনেছে সব দেখছে । পূর্ণতা ওর শাড়ির প্যাকেট খুলে শাড়ি টা বের করতেই ওর আবরনের কথা মনে পড়ল । পূর্ণতা শাড়িটা একবার ভালো করে ছুঁয়ে দেখল , প্রেনা বিষয়টা লক্ষ্য করে পূর্ণতা কে ধাক্কা মেরে বলল ,
– কিরে পূর্ণ !! ভাইয়াকে মিস করছিস ??
পূর্ণতা বিষয়টা ধামাচাপা দিতে কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল ,
– আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে আমি উনার কথা ভাববো !! আমি তো ভাবছিলাম এত সুন্দর করে কি করে শাড়ি গুলো বোনা হয়েছে !!
প্রেনা ভেংচি কেটে বলল ,
– হয়েছে , আমাকে আর ১৯/২০ বোঝাতে আসিস না । ভাইয়া তোর কতটা কেয়ার করছে নিজের চোখেই তো দেখলাম !!
আচ্ছা বলতো ভাইয়ার সাথে আন্টি আমাদের পাঠালো কেন ??
– তা আমি নিজেও জানি না । উনি গতকাল আমাদের বাসায় গিয়েছিল ।
প্রেনা চোখ গোল গোল করে বলল ,
– বাহ , ভাইয়া তার মানে সবাইকে নিজের মতো ম্যানেজ ও করে নিয়েছে । পূর্ণ , আমার কি মনে হয় জানিস ?
– কি ??
– ভাইয়া তোকে পছন্দ করে ।
– ধুর !! আমি কি করবো ?? একজন আরেকজনকে পছন্দ করতেই পারে এর মানে তো এই না যে সে আমাকে ভালোবাসে !!
– ভালোবাসবে যখন তখন আর মনে হয় না তুই ভাইয়ার হাত থেকে রেহাই পাবি !!
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি বোঝাতে চাইছিস ?
– এটাই যে ভাইয়া চাইলেই তোকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতে পারে !!
– ইমপসিবল !! তুই ভুলে যাস না , উনার হবু ফিওন্সে আছে ।
– তা ভুলি নি । আচ্ছা বাদ দে । আমি আম্মুকে ডেকে আনি । কি কি কিনলাম তা দেখাই ।
– আচ্ছা ।
প্রেনা গেল ঈশিতা আলমকে ডাকতে ।
………………………………………………..
বাসায় ফিরে আবরন ফ্রেশ হয়ে ডায়নিং টেবিলে এসে বসতেই আধিরা আনজুম বললেন ,
– তোর বাবা এসেছে !
আবরন আধিরা আনজুমকে বলল ,
– আচ্ছা , তুমি খাবার বাড়ো , আমার বাবার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে , সেটা সেড়ে আসি ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– ঠিক আছে ।
শাদমান চৌধুরী নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন । আবরন রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দিয়ে বলল ,
– বাবা , আসবো ?
শাদমান চৌধুরী ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে তাকালেন আবরনের দিকে , তারপর বললেন ,
– হ্যা , এসো ।
আবরন ভেতরে ঢুকে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,
– তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে ! যদি ব্যস্ত না থাকো তাহলে এখনই বলতে চাই ।
শাদমান চৌধুরী ল্যাপটপ টা বন্ধ করে পাশের টেবিলে রেখে আবরনকে বসতে বলল । তারপর বলল ,
– কি জরুরি কথা বলো ?
আবরন বিছানায় বসে বিনয়ের সাথে বলল ,
– বাবা , আমি কি অতোটা বড় হই নি যে নিজের ভালো মন্দ বুঝতে শিখি নি ?
– অবশ্যই বড় হয়েছো । তুমি এখন এডাল্ট একজন ছেলে । তোমার কিসে ভালো আর কিসে খারাপ সেটা বুঝার জ্ঞান তুমি রাখো । এখন বলো যে এই প্রশ্নের পেছনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ টপিকটা কি ?
– বাবা , আমার জল এর আচার-ব্যবহার একদম পছন্দ না ।
– দেখো , জল কেমন তা আমি জানি ! ও কি করেছে সেটা বল ।
– বাবা , জল যখন তখন ক্যাম্পাসে আমাকে জড়িয়ে ধরে , আমার সাথে লেগেই থাকে । ওর মধ্যে এই ম্যানারস টুকু নেই যে আমি ভার্সিটির একজন সিনিয়র ভিপি , আমাকে সবাই রেস্পেক্ট করে , সবার মতো ওরও তাই করা উচিত । আমার এসব একদম পছন্দ না । আশা করি , তুমি ওকে এসব বিষয়ে সাবধান করে দিবে । নেক্সট টাইম ও এরকম কিছু করলে আমি কিন্তু ওকে আর ফুপির মেয়ে হিসেবে দাম দেব না , বাইরের আর চারটা মেয়ে এমন বিহেইভ করলে যা করতাম ঠিক তেমনি করবো !
– তুমি কি ওকে Threats দিচ্ছ ??
– ধরে নাও সতর্ক করছি ।
– ঠিক আছে , যাও । আমি ব্যাপারটা দেখছি ।
– লাঞ্চ করবে না ?
– হ্যা , গিয়ে বসো । আমি আসছি ।
– ঠিক আছে ।
আবরন রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে ভাবছে ,
– বাবা , এই প্রথম এক কথায় কি করে রাজি হয়ে গেল ? বিষয়টা ভাবনার !!
আবরন টেবিলে খেতে বসে আধিরা আনজুমকে বলল ,
– আম্মু , লাঞ্চ করে আমার রুমে একটু এসো তো । কথা আছে ।
– আচ্ছা ।
……………………………………………….
লাঞ্চের পর আবরন আধিরা আনজুমকে নিজের রুমে ডেকেছে । আধিরা আনজুম রুমে গিয়ে দেখল তার ছেলে ভীষন চিন্তিত । সে বিছানায় বসে ছেলের কাধে হাত রেখে বলল ,
– কি হয়েছে তোর ? তোর বাবাকে কি বললি তখন ?
আবরন উঠে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে আধিরা আনজুমের দিকে চিন্তিত ফেস করে তাকিয়ে বলল ,
– আম্মু বাবাকে জলের বিষয়টা বললাম । ববা ঠান্ডা মাথায় বলল বিষয়টা দেখবে । তোমার কি মনে হয় , বাবার এমন কথার পেছনে কোনো কারন লুকিয়ে নেই তো ??
– অতি নীরবতা কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাস ।
আবরন বলল ,
– তুমি জানো ? জল পূর্ণতার ফোনটা নাকি নিয়ে নিয়েছে ।
আধিরা আনজুম ভ্রু নাচিয়ে বললেন ,
– পূর্ণতা ?? এটাই কি তোর সিক্রেট ড্রিম গার্ল নাকি ?
আবরন বলল ,
– সেটা জানি না , তবে আমার ওকে ভালো লাগে ।
আধিরা আনজুম সিরিয়াস হয়ে বললেন ,
– আবরন , ভালো লাগা আর ভালোবাসা কিন্তু এক জিনিস না । সো বি কেয়ার ফুল । এই ভালো লাগা ভালোবাসায় বদলাতে বদলাতে যেন আবার কেউ রাস্তায় বিপদ নিয়ে এসে না যায় !!
– আম্মু জানো , তুমি ঐদিন ভালোবাসার যা যা লক্ষন বলেছো ঐ সব ই মিলে গিয়েছে । বাট আমি নিজেই খুব কনফিউজড !!
– ওকে একদিন নিয়ে আয় বাসায় আমি দেখি ।
– সত্যি বলছো ?
– হ্যা , সত্যি বলছি ।
– ওকে , কপি দ্যাট ।
আধিরা আনজুম হাসলেন ।
আবরনও হেসে বলল ,
– আম্মু জানো ওর সব কিছু আমি আজ নিজের পছন্দে কিনে দিয়েছি ।
– তাই নাকি ? কিভাবে হলো ?
আবরন সব খুলে বলল যে ও পূর্ণতাদের বাসায় গিয়ে কিভাবে ওর মা আর ভাইকে ইমপ্রেস করেছে । আধিরা আনজুম হেসে বলল ,
– আমার ছেলে দেখি ভালোই বড় হয়েছে । তা দেখতে কেমন সে ?
আবরন মায়ের কথা শুনে চোখ বন্ধ করে পূর্ণতা কে ফিল করতে করতে বলল ,
– খুব একটা স্মার্ট না কিন্তু বাচ্চাদের মতো স্বভাব । ধবধবে ফর্সা না তবে সুন্দর লাল টুকটুকে গায়ের বর্ণ। বড় বড় টানা টানা চোখ , চোখা নাক , আর ঠোঁট বাচ্চাদের মতো পাতলা আর সুন্দর । চুল মাশাআল্লাহ কোমড় ছাড়িয়ে । সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মন মানসিকতা পুরাই বাচ্চা । আমাকে একটু ভয় পায় আবার মাঝেমাঝে রাগ ও দেখায় । কিন্তু ওকে কে বোঝাবে যে রাগলে ওকে একদম কিউট বাচ্চাদের মতো লাগে । এই জন্যই তো আমি বেশি বেশি রাগাই ।
এই বলে আবরন হাসতে লাগল ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– তুই যেভাবে বলছিস আমার তো এক্ষুনি একবার ওকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে ।
– তোমাকে তো আন্টি যেতে বলেছে ঐ বাসায় । আমি তো তোমাকে বলি নি ।
– আমি একেবারে যাবো । তুই আগে ওকে নিয়ে আয় একদিন ।
আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,
– একেবারে যাবে বলতে ??
– কিছু না । কাল তোদের অনুষ্ঠান আছে না ? অনুষ্ঠান শেষেই নিয়ে আয় !
– তা ঠিক আছে । কিন্তু বাবা ?
– তোর বাবা কাল বাসায় থাকবে না । তার নাকি মিটিং আছে । রাতে ফিরবে ।
– ওও , তাহলে তো হয়েই গেল ..
আধিরা আনজুম বললেন ,
– তুই ঘুমা । আমি গেলাম ।
– ওকে , বিকেলের দিকে ডেকে দিও । কাজ আছে ।
– আচ্ছা ।
………………………………………………..
বিকেল ৫ টা ,
পূর্ণতা আর প্রেনা ছাদে উঠেছে । প্রেনা বলল ,
– চল আজকে ইচ্ছেমতো নাচবো ।
– গান বাজাতে ব্লুটুথ দরকার ।
– ব্লুটুথে চার্জ নেই । তুই ওয়েট কর , PC
থেকে সাউন্ড বক্সটা খুলে আনি ।
– ওকে যা ।
প্রেনা নিচে গেল সাউন্ড বক্স আনতে ।
প্রেনাদের বাসাটা বুয়েট ক্যাম্পাসের কাছাকাছি একটা রোডে । এই এলাকাটা কিছুটা শান্তি পূর্ণ । চারপাশটায় বড় গাছ গাছালিতে ঘেরা । রোডের দুই পাশেই বড় বড় গাছ । হঠাৎ শো শো করে কয়েকটা গাড়ি চলে যাচ্ছে , আবার মাঝে মাঝে কিছু রিকশা টুংটাং বেল বাজিয়ে চলে যাচ্ছে ।
পূর্ণতা ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে এসব দেখায় মনোনিবেশ করলো ।
প্রেনা স্পিকার নিয়ে হাজির হলো । তারপর ছাদে থাকা সার্কিটে প্লাগ ঢুকিয়ে ‘Paani Paani ‘ গানটা অন করতেই পূর্ণতা বলল ,
– ইয়াক , এই গান ছাড়া অন্য ভালো গান দে ।
প্রেনা দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– এখন তো এটাই ভালো গান । সবাইরে দেখি খালি এটাই শুনে ।
পূর্ণতা বলল ,
– ” Aankh mare ” গান টা ছাড় । ঐটা শুনলেই ডান্স করতে মন চায় ।
এরপর দুইজনে এই গানে একাধারে উড়াধুরা নেচে হয়রান হয়ে গিয়ে হাসতে হাসতে সেখানেই বসে গেল ।
………………………………………………
আবরন বিকেলে মেডিক্যালের গার্লস হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে জলকে কল দিল ।
জল আবরনের কল দেখে এক্সাইটেড হয়ে কল রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে আবরন বলল ,
– এই মূহুর্তে পূর্ণতার ফোন নিয়ে নিচে এসো । আমি কোনো কথা শুনতে চাই না । ৫ মিনিটে নিচে এসো । আমাকে যেন উপরে যেতে না হয় । নাহলে কিন্তু আজ একদম খবর করে দেব ।
এই বলে আবরন ফোনটা কেটে দিল ।
জল রাগে ফুসতে ফুসতে পূর্ণতার ফোনটা অন করে দেখলো ফোনটাতে কোনো লক দেয়া নেই । তারপর মনে মনে কিছু একটা ভেবে ডেভিল হাসি দিয়ে তাড়াতাড়ি চিন্তা করা কাজ টা করে ফোনটা আবার অফ করে নিচে নিয়ে গেল ।
জল নিচে নামতেই গেইটের দাড়োয়ান
গেইট খুলে দিল ।
জল আবরনের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– মেয়েটা অনেক বেয়াদব । আমার সাথে নবীন বরণ অনুষ্ঠানের দিন মিসবিহেইভ করেছে , তাই শাস্তি স্বরূপ ওর ফোনটা নিয়ে নিয়েছিলাম ।
আবরন রেগে বলল ,
– জাষ্ট শাট আপ । ওর ব্যাপারে একটাও বাজে কথা শুনতে চাই না ।
ওর থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবে । নাহলে এর ফল ভালো হবে না ।
এই বলে আবরন সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে গেল । জল রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডেভিল হাসি দিয়ে বলল ,
ভার্সিটি অন হোক শুধু । তারপর দেখবে ঐ মেয়েটাকে সব সিনিয়ররা কেমন সুরসুর করে তাড়িয়ে দেবে । এসব ভেবে আবার হোস্টেলের ভেতরে চলে গেল ।
……………………………………………….
আবরন ফোনটা নিয়ে সরাসরি প্রেনাদের বাসার সামনে গেল । বাসার নিচে গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার ফোনটা অন করল । দেখল যে ওর ফোনটায় কোনো লক নেই । তারপর মনে মনে ভাবল ,
– এত বোকা কেন এই মেয়েটা ? মোবাইলে কত পার্সোনাল জিনিস থাকে , সিক্রেট থাকে , এখানে একটা লক দেয় নি । তারপর নিজেই একটা পাসওয়ার্ড সেট করলো , পাসওয়ার্ড টা হলো ‘ Kauwa ‘ …
পাসওয়ার্ড সেট করে আবরন মুচকি হেসে ফোনের টাইম লাইনে গিয়ে দেখল প্রথমেই প্রেনার নাম্বার । তাই প্রেনার নাম্বারে ডায়াল করলো ।
প্রেনা আর পূর্ণতা ছাদেই ছিল । ফোন বাজতে দেখে প্রেনা উঠে সাউন্ড বক্স থেকে ফোনটা ডিসকানেক্ট করে দেখল স্ক্রিনে লেখা “পূর্ণ” ।
প্রেনা অবাক হয়ে পূর্ণতা কে বলল ,
– পূর্ণ , দেখ তোর ফোন থেকে কল আসছে ।
পূর্ণতা জলদি উঠে দাঁড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে একটা পরিচিত গলা শোনা গেল , কিন্তু পূর্ণতা বুঝে উঠতে পারছে না গলাটা কার ।
– হ্যালো । আমি এখন নিচে আছি । তোমার ফোনটা আমার কাছে । দয়া করে নিচে এসে নিয়ে যাও ।
পূর্ণতা কিছু না ভেবে এক দৌঁড়ে নিচে গেল । নিচে গেইটের সামনে যেতেই দেখল আবরন কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
পূর্ণতা এগিয়ে গিয়ে বলল ,
– আপনি এখানে ?
– কেন , অন্য কাউকে expect করছিলে বুঝি ??
– হ্যা , কেউ একজন ফোন করে বলল আমার ফোনটা নাকি তার কাছে আছে !
আবরন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল ,
– লাইক সিরিয়াসলি ??
– কেন ? কি হয়েছে ?
– হায়রে বোকা মেয়ে !! আমি ই তো কল দিলাম , আমার কন্ঠ কি নতুন শুনেছো ?
পূর্ণতা পুরোই বোকা বনে গেল ।
আবরন বলল ,
– ফোনে একটা লকও তো দাও নি । হারিয়ে গেলে যেকেউ এটার মিসইউজ করতে পারে , সেটা কি বোঝো না ??
এখন আমি লক লাগিয়ে দিয়েছি । “Kauwa” লিখলে খুলে যাবে ।
পূর্ণতা আরো একবার বোকা বনে গেল ।
আবরন ফোনটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– বাই দ্য ওয়ে , তুমি তখন যে বলছিলে জল আমার হবু ফিওন্সে সেটা কি তোমায় জল ই বলেছিল ?
পূর্ণতা ফোনটা হাতে নিয়ে বলল ,
– হ্যা , আর কে বলবে ?
আবরন বলল ,
– শোনো , ও আমাকে পছন্দ করে , কিন্তু আমি করি না । ও সবসবময় আমার আশে পাশে ঘুর ঘুর করে । তার উপর ও আমার একমাত্র ফুপির একমাত্র মেয়ে , তাই কিছু বলতেও পারি না । কিন্তু আজকে অনেক বকা দিয়েছি । ও নিজেকে সবার কাছেই আমার ফিওন্সে হিসেবে দাবি করে , কিন্তু বিশ্বাস করো আমার ওর প্রতি কোনো ইনটারেষ্ট নেই ।
পূর্ণতা বলল ,
– ওও , আমাকে এসব কেন বলছেন ??
পূর্ণতার প্রশ্ন শুনে আবরনের রাগে নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে মন চাইছে । তখন প্রেনা এসে হাজির হলো ।
আবরনকে দেখে বলল ,
– আরে ভাইয়া , আপনি ?
– হ্যা , তোর বান্ধবীর ফোন দিতে এসেছিলাম । ফোনটা এনে দিলাম , সেইজন্য একটা থ্যাংকস তো দিলই না , উল্টো আমাকে আবল তাবল বলছে ।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– মিঃ সিনিয়র !! আমি কখন আবল তাবল বললাম । আপনিই তো ইতিহাস বলছেন ।
আবরন বলল ,
– তোমার বিয়ে যেন একটা কাউয়্যার সাথেই হয় !!
এই বলে গাড়ি তে উঠে বসল ।
প্রেনা বলল ,
– ভাইয়া , এভাবে খালি মুখে চলে যাবেন ? বাসায় আসবেন না ?
– খালি মুখে কোথায় যাচ্ছি? তোমার বিশিষ্ট বান্ধবীর কাছ থেকে এতগুলো কথা খেয়ে যাচ্ছি ।
পূর্ণতা বলল ,
– হ্যা , এখন যান । এত খেতে হবে না ।
এই বলে পূর্ণতা চলে যাচ্ছিল , তখন আবরন পেছন থেকে বলল ,
– মিস. জুনিয়র , আপনি তো নাম্বার দেন নি । আমি ই নিয়ে নিয়েছি । আর আপনার ফোনে আমার নাম্বারটাও সেইভ করে দিয়েছি ।
পূর্ণতা কিছু না বলে ভেতরে চলে গেল । প্রেনা আবরনকে বিদায় জানিয়ে পূর্ণতার পেছন পেছন ভেতরে গেল ।
……………………………………………….
রাত ৩ টা ৩০ মিনিট ,
পূর্ণতার হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যেতেই দেখল পাশে প্রেনা নেই । ও চোখ মুখ ডলে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই শুনতে পেল বারান্দা থেকে প্রেনার কন্ঠ ভেসে আসছে । পূর্ণতা বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুনতে চেষ্টা করলো ,
প্রেনা এত রাতে কার সাথে কথা বলছে !!
– আরে আমি বললাম তো আমার সাথে পূর্ণতা থাকবে , আমি দেখা করতে পারবো না ।
-……………..
– না , প্লিজ । গেলে তো এমনিতেই দেখা হবে । কাল আলাদা ভাবে মিট করতে পারবো না । পরশু দিন দেখা করবো , আই প্রমিজ ।
– ……………….
– হুম , এখন রাখছি । পূর্ণ জেগে যাবে ।
-…………………
– মিস ইউ ঠু …..উম্মাহহহহহহ ।
– ……………….
প্রেনা ফোন রেখে পেছনে ঘুরতেই দেখল পূর্ণতা টেবিলের উপরে থাকা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ঢক ঢক করে খাচ্ছে ।
প্রেনা চোখ বড় বড় করে বলল ,
– পূর্ণ !! কি হয়েছে ??
পূর্ণতা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর বলল ,
– কিছু না ।
এই বলে আবার বিছানায় শুয়ে পড়ল ।
প্রেনা বুঝতে না পেরে নিজেও শুয়ে পড়ল ।
………………………………………………
সকাল ১০ টা ,
পূর্ণতা গোসল করে বেরিয়ে ঈশিতা আলমের কাছে গিয়ে বলল ,
– আন্টি , তুমি ব্যস্ত ?
– না রে মা । কেন ?
– আমাকে একটু শাড়িটা পড়িয়ে দাও না । আমি তো শাড়ি পড়তে জানি না ।
– আয় দিচ্ছি ।
ঈশিতা আলম সুন্দর করে পূর্ণতা কে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– একটু সাজলি না ?
– না , এই গরমে সাজবো না । আমাকে এই অর্নামেন্টস গুলো ও একটু পড়িয়ে দাও ।
ঈশিতা আলম ওকে একে একে কানের দুল , গলার সিতা হাড় আর কোমড়ে বিছা পড়িয়ে দিল । তারপর এক হাতে বালা আর আরেক হাতে লাল , কালো রেশমি চুড়ি গুলো পড়িয়ে দিল ।
পূর্ণতা বলল ,
– একটু সুন্দর করে খোপা করে দাও ।
– ফুল তো আনিস নি , খালি খোপা করবি ?
– আরে কিছু হবে না করে দাও ।
– আচ্ছা , দিচ্ছি ।
খোপা করে দিয়ে ঈশিতা আলম বলল ,
– প্রেনা রেডি হচ্ছে ?
– হ্যা , এই জন্যই তো তোমার কাছে এলাম ।
– আচ্ছা , প্রেনাকে গিয়ে বল মুখে একটু ক্রিম দিয়ে পাউডার দিয়ে দিতে । আর একটু কাজল পড়ে , লিপস্টিক লাগিয়ে নে ।
– আচ্ছা
পূর্ণতা ঈশিতা আলমের রুম থেকে বেরিয়ে প্রেনার রুমে গেল ।
প্রেনা ওকে দেখে বলল ,
– পূর্ণ , তুই কি কোনো কারনে আমার উপর রেগে আছিস ? সকাল থেকে একবারো কথা বলিস নি । আমি কি কিছু করেছি ?
পূর্ণতা কোনো কথার জবাব না দিয়ে চোখে কাজল পড়ে , খয়েরী লাল লিপস্টিক লাগিয়ে নিল । আর আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিল । তারপর মনে মনে ভাবলো ,
– না সব ই ঠিক আছে ।
প্রেনা বলল ,
– একটা লাল টিপ লাগা ।
পূর্ণতা না শুনার ভান করে সেখান থেকে চলে গেল ।
তারপর ছাদে গিয়ে ভাবছে একা একা কি করে যাবে ?
তারপর কিছু একটা ভেবে মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবরনকে কল দিল ।
আবরন পাঞ্জাবি পড়ে রেডি হয়ে পারফিউম লাগাচ্ছিল । তখন ফোন বেজে উঠতেই ফোনে তাকিয়ে দেখল
“কাউয়্যার বউ” লেখাটা স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে । আবরন ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে দিয়ে বলল ,
– আজ সূর্য টা কোন দিকে উঠলো যে নিজ থেকে স্মরন করলে ??
পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে মনে মনে বলল ,
-( জানতাম , attitude দেখাবে । কিন্তু না কিছু বলা যাবে না । নরম করেই বলতে হবে )
তারপর বিনয়ের সাথে বলল ,
– মি. সিনিয়র । আমাকে একটু নিয়ে যাবেন ভার্সিটিতে আপনার সাথে !
আবরন বলল ,
– কেন ? প্রেনার সাথে রিকশা নিয়ে চলে যাও ।
– প্লিজ , প্লিজ , প্লিইইইইজ , মিঃ সিনিয়র । আমাকে একটু নিয়ে যান । আমি প্রেনার সাথে যাবো না ।
– আচ্ছা , অপেক্ষা করো । আমি বের হচ্ছি ।
– ওকে , থ্যাংকস ।
আবরন ফোন কেটে দিল । তারপর জলদি জলদি শালটা হাতে নিয়ে আধিরা আনজুমকে বলে বেরিয়ে গেল ।
পূর্ণতা প্রেনাদের বাসার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আবরনের জন্য অপেক্ষা করছে । এরই মধ্যে আবরন গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে । তারপর গাড়ি থেকে নেমে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে এসে বলল ,
– সরি , একটু দেড়ি হয়ে গেল ।
– ইটস ওকে ।
তারপর আবরন গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে পূর্ণতা কে উঠে বসতে বলে নিজেও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে সিট বেল্ট বেঁধে পূর্ণতার দিকে তাকাতেই দেখল ও আজ নিজেই বেল্ট বাঁধছে ।
তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ড্রাইভিং শুরু করে বলল ,
– কি যেন একটা মিসিং মিসিং লাগছে ।
পূর্ণতা ব্যাগ থেকে টিপের পাতা টা বের করে একটা লাল টিপ দিয়ে বলল ,
– এটাই মিসিং ছিল না ?
আবরন ওর দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– হ্যা , এটা ও ছিল তবে আরেকটা জিনিস মিসিং আছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– টিপটার কথা প্রেনা মনে করে দিয়েছিল , কিন্তু আমি ইচ্ছে করে তখন ওর কথায় টিপ লগাইনি ।
– কেন বলোতো ? কিছু হয়েছে ?
– প্রেনা সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমাকে সব শেয়ার করে আসছে , আর কাল রাতে আমার ঘুম ভেঙে যেতেই হঠাৎ টের পাই প্রেনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে । ওর কথা বার্তায় বুঝেছি যে ও প্রেম করে বেড়াচ্ছে , কিন্তু আমি ওর এত কাছের ও আমাকে সেই বিষয়টা শেয়ার করেনি । এমনকি আমি ওর সাথে থাকবো বলে নাকি ও ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিট করতে পারবে না ।
পূর্ণতা সব টুকু শেষ করার আগেই আবরন বলল ,
– তাই তুমি ওর সাথে না গিয়ে আমার সাথে যাচ্ছো যেন ও অন্তত ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিট করতে পারে ! তাই তো ??
পূর্ণতা মন খারাপ করে বলল ,
– হুম ।
আবরন ওর বাম হাতটা পূর্ণতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল ,
– হাতটা দাও তো !
– কেন ?
– দাও না ।
পূর্ণতা কাপা কাপা হাতটা আবরনের দিকে এগিয়ে দিতেই আবরন ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বলল ,
– তুমি আর আমি মিলে খুঁজে বের করবো যে ও কার সাথে তোমাকে না জানিয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে !!
পূর্ণতা ওর কথায় হাসল । আবরন পূর্ণতার হাত নিয়ে নিজের হাতটা ওর উপরে ধরে গাড়ির গিয়ার কন্ট্রোলারের উপর রেখে বলল ,
– কারাতির পাশাপাশি ড্রাইভিং টা ও শিখে ফেলো । ভবিষ্যতে কাজে দেবে ।
– কে শেখাবে ?
– কেন আমি !
– আচ্ছা , আপনি আর কতজন মেয়েকে এই পর্যন্ত আপনার এই গাড়িতে উঠিয়েছেন আর তাকে ড্রাইভিং শিখতে অফার করেছেন ??
আবরন হেসে বলল ,
– একজনকেও না ।
এই বলে গাড়ি একটা ফুলের দোকানের সামনে রেখে গাড়ির গ্লাস ফাঁকা করে বলল ,
– ভাই , ৫ টা গোলাপ ফুল দিয়েন তো ।
দোকনদার ৫ টা গোলাপ এনে আবরনের হাতে দিল ।
আবরন ফুলের দাম দিয়ে গাড়ির গ্লাস অফ করে পূর্ণতার দিকে ঘুরে বলল ,
– পেছনে ঘোরো তো !
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কেন ?
আবরন বলল ,
– উফফ , তুমি এত “কেন কেন” কেন করো বলোতো ! ঘোরো না ।
পূর্ণতা পেছনে ঘুরে বসলো । আবরন ওর ফাকা খোপায় ফুল গুলো গুঁজে দিতে দিতে বলল ,
– এটা মিসিং ছিল । নবীন বরনের দিন তো বেলি ফুলের মালা লাগিয়েছিলে । আজকের শাড়ির রং তো কালো লাল , তাই মনে হলো লাল গোলাপই আজ তোমার খোপায় মানাবে ।
আবরনের কথা গুলো শুনে পূর্ণতার গায়ে যেন কেমন শির শির অনুভব হতে লাগল । তারপর কাপাকাপা গলায় বলল ,
– আমি আপনার সাথে গেলে সবাই আমাকে খারাপ ভাবে দেখবে না তো !!
আবরন বলল ,
– উহু , যে যা ইচ্ছে বলুক । কারো কথায় কান দিবে না । মানুষ যখন কারো নামে বাজে মন্তব্য করে বা হিংসে করে তখন বুঝবে যে তুমি ধীরে ধীরে উপরে উঠছো আর সবাই হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে ।
এই বলে বলল ,
– শেষ । এখন একদম পারফেক্ট কাউয়্যার বউ বলে মনে হচ্ছে ।
পূর্ণতা আবরনের কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিল , কিন্তু হঠাৎ আবরন এই কথা বলে উঠায় পূর্ণতা রাগ হয়ে বলল ,
– ধুর !! আপনি একটা দুষ্ট লোক ।
আবরন কার টান দিয়ে বলল ,
– তাই ? দুষ্টুমির কি দেখলে ?? সবে তো শুরু !! হা হা হা ।
#চলবে ♥️
। ধন্যবাদ । ♥️