#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ০৫
“Are you prepare, Miss. Sheikh?”
ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়ে কথা টা বলে ওঠে আফিম।নাফিয়া ব্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে ওঠে,
-এই কাজটাও কি আমার দামী ধন্যবাদ এর মধ্যে পড়ে?
-হ্যাঁ।
-আমি যদি দামী ধন্যবাদ না দেই তাহলে?
-তাহলে তোমার আমাকে টাকা দিতে হবে।
-কেনো?
-Cause it was the deal. [কারণ এটা চুক্তি ছিলো]
-যেদিন বলেছিলাম আমি দামী ধন্যবাদ দিতে রাজি সেদিন রাতে একজন সার্ভেন্ট এসে যে একটা পেপারে আমার সাইন চেয়েছিলো সেটি এই ডিল এর ছিলো?
-না পড়েই সাইন করেছিলে?
-একটু পড়েছিলাম যে লেখা ছিলো ৬ মান্থ আপনার আন্ডারে আমি কাজ করতে ইচ্ছুক কিনা সেই ব্যাপারে লিখা ছিলো।
-হ্যাঁ।সাথে এটিও লেখা ছিলো যে ৬ মাসের আগে তুমি কাজ ছাড়লে ৬০০০০ টাকা দিতে হবে।
ষাট হাজার টাকা খুব বড় একটা এমাউন্ট না হলেও নাফিয়ার কাছে এ মুহুর্তে এটি বিশাল বড়সড় ব্যাপার তা অজানা নয় আফিমের।এজন্যেই সে এ ব্যবস্থা করে রেখেছে।
ছোটবেলা দিয়ে টাকার অভাব বুঝার মতো পরিস্থিতিতে কখনো পড়েনি নাফিয়া।তার চাহিদাগুলো পূরণ করার মতো আর্থিক স্বচ্ছলতা টা ছিলো তার অভিভাবকের।তার যখনই যত টাকার প্রয়োজন হতো তা সে পেয়ে যেতো কিন্তু আজ এমন এক পরিস্থিতির স্বীকার সে যে নিজের থাকা-খাওয়ার টাকা টাও তার কাছে নেই।এ মুহূর্তে আফিমের দেওয়া এই আশ্রয় টায় উপকৃত হচ্ছে সে নাহয় না জানি কত কাঠখড় পোড়াতে হতো শুধু কোনো রকম থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে!!
মাথা নিচু করে বেশ কিছু বিষয় ভেবে নিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-গোসলে দেরি হচ্ছে না আপনার?
নাফিয়ার এমন কথায় যা বুঝার তা বুঝে নিয়েছে আফিম।ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যায় সে।
আফিম স্থান ত্যাগ করতেই মনে মনে একশো একটা গালি দিয়ে নাফিয়াও তার পিছু পিছু ওয়াশরুমে প্রবেশ করে।
আফিমের কক্ষের মতো তার ওয়াশরুম টিও ভালোই বড়।একদিকে ঝর্ণা ও তার পাশেই বাথটাব এবং অন্য সাইডে কাপর পরিধান করার জন্য আলাদা জায়গা।টয়লেটের জায়গাটা আলাদা কাঁচ দিয়ে ঘেরা।হলদে আলোতে চারিপাশ দেখতে ভালোই লাগছে।এসব দেখতে দেখতেই হটাৎ আফিমের দিকে চোখ পড়ে নাফিয়ার।ছেলেটা নিজের টি-শার্ট খুলে ফেলেছে।খালি গায়ে দাঁড়িয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
জীবনে প্রথম কোনো পুরুষকে এভাবে খালি গায়ে দেখায় ভীষণ লজ্জা ও অস্বস্তি লাগছে নাফিয়ার।কি করবে বুঝতে না পেরে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয় সে আফিমের থেকে।আফিম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মৃদু হাসে।ঠোঁটের দুষ্টু হাসিটি নাফিয়ার থেকে লুকিয়ে বলে ওঠে,
-মিস.শেখ,এখানে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য তেমায় ডাকা হয়নি। Do your work fast![দ্রুত নিজের কাজ করো]
-কি করবো?
-সাওয়ার ওপেন করো।
কথাটি শুনে নাফিয়া আফিমের দিকে না তাকিয়েই সোজা এগিয়ে গিয়ে ঝরনা চালু করে দেয়।পানির ছিটা তারও গায়ে এসে লাগায় একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায় সে।
আফিম সাওয়ারের নিচে স্টিলের একটি টুল পেতে বসে পড়ে।নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-শ্যাম্পু করো চুলে।
আফিমের কথা কানে আসতেই দেওয়ালে লাগানো ছোট্ট ছোট্ট কাঠের বক্সের মধ্য থেকে শ্যাম্পু বের করে তার কাছে এগিয়ে যায় নাফিয়া।সাওয়ার বন্ধ করে আফিমের মাথায় শ্যাম্পু লাগিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে আরম্ভ করে সে।আরামে চোখ বুজে নিয়েছে আফিম।আর যাই হোক মেয়েটার হাতে জাদু আছে।মাথায় তার হাতের স্পর্শ লাগলেই ভীষণ আরাম অনুভব হয়।
মাথায় শ্যাম্পু ডলার মাঝেই নাফিয়ার চোখ যায় আফিমের উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের পিঠের দিকে।পিঠটা দেখতেই এতো মোলায়েম লাগছে যেনো কোনো মাখম।দেখতে ভালো লাগছে নাফিয়ার।ইচ্ছে করছে একটু ছুঁয়ে দিতে।এসব নিষিদ্ধ চিন্তা মাথায় আসতেই দ্রুত নিজেকে সামলে নেয় নাফিয়া।নিজেই নিজেকে কঠিন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলে ওঠে,
“খবরদার,এসব লুচুমিমার্কা চিন্তাভাবনা মাথায় আনবি না নাফিয়া।একটা মেয়ে হয়ে লুচুমি!ছিঃ ছিঃ”
প্রায় ৪-৫ মিনিট সময় পাড় হবার পরেও নাফিয়া শ্যাম্পু করেই চলছে।এর কারণ বোধগম্য হলো না আফিমের।সে ব্রু কুঁচকে বলে ওঠে,
-আমার চুলে এতোও ময়লা হয়নি মিস.শেখ যে তুমি আধঘন্টা লাগিয়ে শ্যাম্পু করবা!
নিজের চিন্তার মাঝেই হটাৎ আফিমের এমন উক্তি শুনে থতমত খেয়ে যায় নাফিয়া।দ্রুত গতিতে সাওয়ার অন করতেই যাবে তার আগেই স্লিপ খেয়ে ধুম করে মেঝেতে পড়ে যায় সে।হটাৎ এমন কিছু হবে তা আফিমেরও ভাবনাতিত ছিলো।সে দ্রুত নাফিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে অবাক দৃষ্টিতে এক পলক তাকিয়ে পর মূহুর্তেই হেসে ওঠে।
এতোক্ষণ নাফিয়ার চেহারায় ব্যাথা পাওয়ার ছাপ দৃশ্যমান থাকলেও আফিমের হাসি দেখে চেহারায় রাগী ভাব ফুটে উঠেছে তার।রাগী দৃষ্টিতে আফিমের দিকে তাকাতেই আফিম হাসি থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে নাফিয়ার দিকে নিজের এক হাত এগিয়ে দেয় যেনো নাফিয়া তার হাত ধরে উঠে দাঁড়াতে পারে।কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর বদলে নাফিয়া এক হেঁচকা টানে আফিমকেও মেঝেতে ফেলে দেয়।আচমকা নাফিয়ার এমন টানে বেসামাল হয়ে মেঝেতে পড়ে আফিমও ব্যথা পায়।হাসি উড়ে গিয়ে “আউচ” শব্দ করে ওঠে সে।
এবার নাফিয়া হেসে ওঠে।আফিমের ডান বাহুতে জোরে চিমটি দিয়ে বলে ওঠে,
“হাসেন হাসেন,আরো হাসেন।”
কথাটি বলছে আর হাসছে নাফিয়া।মেঝেতে বসে উভয়ই সাওয়ারের পানিতে ভিজে একাকার।কিন্তু এদিকে দুইজনের কারোই খেয়াল নেই।
আফিম নাফিয়ার হাসিমাখা মুখপানে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে,
“দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমায়!”
বলেই উঠে দাঁড়ায় আফিম।নাফিয়াকে কোলে উঠিয়ে এগিয়ে যায় বাথটাবের দিকে।নাফিয়া বুঝতে পারছে না আফিম আসলে কি করতে চাইছে।সে শুধু আফিমের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য হাত-পা ছুড়াছুঁড়ি করছে।
আচমকা পানি ভর্তি বাথটবে পড়ে কোমরে বেশ ভালোই ব্যথা পায় নাফিয়া।চেহারায় ব্যথা পাওয়ার ছাপ ফেলে আফিমের দিকে তাকায় সে।আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে তাকিয়ে আছে তার দিকে।এতে নাফিয়ার রাগ আরো কয়েকশত গুণ বেড়ে যায়। কোনো কিছু না ভেবেই বাথটবের কাছে থাকা সাবান-শ্যাম্পু ও অন্যান্য প্রসাধনী যা পাচ্ছে তাই ই আফিমের দিকে ছুড়ে মারতে আরম্ভ করে সে।আফিম বার বার সরে যাওয়ায় কোনোটি তার গায় লাগছে না। কিন্তু হুট করে একটি ভারী বোতল এসে আফিমের বাম বাহুতে লাগে।বেশ ভালোই ব্যাথা পায় ছেলেটি।ব্যাথায় “আউচ” শব্দ করে নাফিয়ার দিকে এগোতে এগোতে বলে ওঠে,
“তোমাকে তো আমি”
আফিমের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কোনোমতে বাথটাব হতে উঠে দাঁড়ায় নাফিয়া।হাতে সাবান নিয়ে আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
“কাছে আসবেন না,এটাও ছুঁড়ে মারবো কিন্তু!”
কে শোনে কার কথা।নাফিয়ার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আফিম এগিয়ে যায় তার দিকে।যেই আফিম নাফিয়াকে ধরতে যাবে নাফিয়া তখনই দৌড়ে সরে যেতে চায়।কিন্তু তাতে সে সফল হয় না।আফিম পেছন থেকে দু’হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলেছে তাকে।এ বন্ধন হতে মুক্ত হওয়া অসম্ভব।আফিম নাফিয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলে ওঠে,
-পালাতে পারবে না মিস.শেখ।আজ তোমাকে এই বাথটবের পানিতে চুবিয়েই ছাড়বো।
আফিমের কথা কানে আসতেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে নাফিয়া বলে ওঠে,
-স্যরি প্লিজ,ছেড়ে দিন।
নাফিয়া এভাবে স্যরি বলেই যাচ্ছে।নাফিয়ার এসব অনুনয় বিনয় দেখে হাসি পাচ্ছে আফিমের।মনে মনে তো সে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে যে ৩-৪ বার আজ নাফিয়াকে সে পানিতে চুবাবেই চুবাতেই।আজকাল একটুও ভয় পাচ্ছে না মেয়েটা তাকে।এভাবে তো চলবে না।
এসব ভাবতে ভাবতেই আফিমের চোখ যায় নাফিয়ার শরীরের দিকে।ঢিলেঢালা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আছে মেয়েটি।কিন্তু পানিতে ভিজে তা একদম গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।গায়ের ওড়না টাও পড়ে আছে বাথটবে।ভীষণ আবেদনময়ী লাগছে মেয়েটিকে।
এসব দিকে এতোক্ষণ খেয়াল করেনি আফিম।এতোক্ষণ চোখই যায়নি এসব দিকে।এখন চোখ যাওয়ায় সাথে সাথে নাফিয়াকে ছেড়ে দেয় আফিম।অন্য দিকে তাকিয়েই বলে ওঠে,
“যাও মাফ করে দিলাম”
হটাৎ আফিমের এতো দয়ার কারণ বোধগম্য হলো না নাফিয়ার।আর এখন এসব ভাব্বার ইচ্ছেও তার নেই।জানে বেঁচেছে এই তো অনেক।আফিমের থেকে ছাড়া পেতেই এক দৌড়ে বাথরুম হতে বেড়িয়ে যায় নাফিয়া।
চলবে।
[