ঘর বাধার স্বপ্ন পর্ব -১৬ ও শেষ

#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:১৬

অবনি চিন্তিত কন্ঠে বললো’ আমি বুঝতে পারছি না ফুপি চাচ্ছেটা কি?

ধ্রুব শ্বাস নিয়ে বললো’ এই বাড়ির সম্পত্তি।’

অবনি মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে বললো’ আমাদেরকে কিছু করতে হবে যাতে ফুপি আমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।’

ধ্রুব অবনির কাধে হাত রেখে বললো’ কি হয়েছে তোর? শরীর খারাপ?

অবনি বললো’ তেমন কিছু না।’

ধ্রুব বললো
‘তোর জন্য কফি নিয়ে আসি?

অবনি দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে বললো’ না লাগবে না।’ ধ্রুব অবনির কথা না শুনেই কফি বানিয়ে অবনিকে দিলো। অবনি অর্ধেক খেয়ে রেখে দিতেই ধ্রুব মুচকি হেসে আর অর্ধেক খেয়ে নিলো। ধ্রুবের কাজ দেখে অবনি অবাক হয়ে বললো’ আমার খাওয়া তা খেলে কেনো?

ধ্রুব অবনির ঘাড়ে মুখ নিয়ে বললো’ আমার বউয়ের তা খেয়েছি অন্যকারো তো না।’
ধ্রুবের কথায় অবনি মুচকি হাসলো।

——
রাত্রি বেলায়
অবনি রান্নাঘরে কাজ করতেছে নিলিমা অবনির কাছে এসে রহস্যময় হাসি দিয়ে মনে মনে বললো’ অবনি আজ তোর জীবনের শেষ দিন হতে চলেছে।’ বলেই মুচকি হেসে নিলিমা নিজের রুমে চলে গেলো। অবনি নিলিমার এইভাবে আসা আবার চলে যাওয়া দেখে অবাক হয়ে গেলো। অবনি রান্না শেষ করে সবাইকে খেতে দিলো। নিলিমা অবনিকে বললো’তুইও আমাদের সাথে খেয়ে নে।’ নিলিমার কথায় সবাই বললো হ‍্যা খেয়ে নে। সবার কথায় অবনি আচ্ছা বলে ধ্রুবের পাশে বসে খেতে লাগলো। খাওয়া শেষ হতেই হঠাৎ সবার চোখে ঘুম চলে আসলো। আর সবাই ড্রয়িং রুমেই ঘুমিয়ে গেলো।

——-

ঘুম ভাঙতেই অবনি তাকিয়ে দেখে একটা অন্ধকার রুমের মধ্যে ফ্লোরে পরে আছে। অবনি সামনে তাকিয়ে দেখে ধ্রুব, আর আফিহা ঘুমিয়ে আছে। অবনি অবাক হয়ে তাড়াতাড়ি করে দাঁড়িয়ে ধ্রুবের কাছে এসে বললো’ ধ্রুব এই ধ্রুব।’
অবনি ডাকে ধ্রুবের ঘুমের রেশ কেটে উঠলো। ধ্রুব চোখ খুলে দেখে অন্ধকার রুমে পরে আছে। ধ্রুব উঠে অবনিকে বললো’ আমরা এইখানে কেনো?

অবনি আফিহাকে ডেকে উঠিয়ে চিন্তিত কন্ঠে ধ্রুবকে বললো’ কাল খাবারে কেউ কিছু মিশিয়েছে। তারপর আমাদেরকে এইখানে কিডন্যাপ করে নিয়ে আশা হয়েছে।’

আফিহা অবনিকে বললো’ আম্মু,কাকি কোথায়?

অবনি বললো’ ওদেরকে অন্য কোনো রুমে রেখেছে। আমাদেরকে খুজতে হবে।’ অবনির কথায় ধ্রুব কিছু বলবে তার আগেই রুমের ভিতর থেকে কারো কন্ঠের আওয়াজ ভেসে উঠলো। ধ্রুব চিন্তিত কন্ঠে বললো দেখো তো কে?
ধ্রুবের কথায় অবনি হুম বলে এগোতে লাগলো দরজার দিকে। দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। অবনি তাকিয়ে দেখে কিছু লোক মুখে মাক্স পরা দাঁড়িয়ে আছে। অবনি চমকে গিয়ে বললো’ কে আপনারা?

অবনির কথার শব্দ পেয়ে একটা লোক অবনিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভিতরে চলে আসলো। ধাক্কা দেওয়ার ফলে অবনি ফ্লোরে পরে গেছে। অবনি উঠে রেগে বললো’ এইটা কোন ধরনের অসভ্যতামি?

কিছু লোকের ভিতর থেকে একটা লোক রিভলবার বের করে রেগে বললো’ একটাও নড়াচড়া করবেন না তাহলে সোজা গু’লি করে দিবো।’ লোকটার কথায় অবনি ভয় পেয়ে গেলো। ধ্রুব রেগে বললো’ আপনারা আমাদেরকে হুম’কি দেন সাহস পেলেন কোথায়?

একটা লোক আরেকটা লোককে ধ্রুবের দিকে ইশারা করে বললো’ একে একে সবাই কে বেধেঁ ফেল যাতে কেউ পালিয়ে যেতে না পারে।’

লোকটার কথায় সবাই আচ্ছা বলে ধ্রুবকে চেয়ারে বেধে রাখলো। একে একে অবনি আর আফিহাকেও বাধতে লাগলো। অবনিকে বাধতে এলে অবনি রেগে বললো’ তোমাদের সবাই কে দেখে নিবো।’ লোকটা হোহো করে হেসে বললো’ আগে তো নিজের জান বাঁচা তারপর।’ এই বলে লোকটা অবনিকে চেয়ারে বেধে রাখলো।

‘ ঘুম ভেঙেছে তাহলে?
কথাটা শুনে অবনি সামনে তাকিয়ে দেখে দেখে নিলিমা আর তার মা রিভলবার ঘুরাতে ঘুরাতে আসতেছে। ধ্রুব অবাক হয়ে বললো’ তুমি?

নিলিমার মা বললো’ হ‍্যাঁ আমিই তোদের শ’ত্রু।’
অবনি রেগে বললো ‘ ভিতুদের মতো পিছন থেকে আঘাত করতে যানো তোমরা।’

অবনির কথা শুনে রুমে প্রবেশ করে মুচকি হেসে আবিদ বললো’ কোনো কোনো সময় ভিতুও হতে হয়।’

অবনি আবিদকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।
নিলিমার মা হেসে আবিদকে বললো’ দেখলে শেষে আমাদের দলেই আসতে হলো তোকে।

আফিহা মুখ বাকা করে বললো’তোমাকে জেলে দেওয়ার পরেও শিক্ষা হলো না ছিহ্ ফুপি?

নিলিমার মা চোখ রাঙিয়ে আফিহার চুলের মুঠি ধরে বললো’ একদম কথা বলবি না তাহলে মাথায় গু’লি করে দিবো।’
নিলিমার মা আবিদের কাছে এসে বললো’ দলিলটা দে।’

আবিদ দলিল বের করে মুচকি হেসে বললো’ আগে মানি তারপর দলিল।’

আবিদের কথায় নিলিমার মা পৈশাচিক হাসি দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে বললো’নিয়ে আসো।’ নিলিমার মায়ের কথা শুনে দুইটা লোক ব‍্যাগে করে টাকা এনে আবিদের সামনে রাখলো। আবিদ টাকা দেখে খুশিতে টাকায় হাত দিতে গেলেই নিলিমা মা বললো’ আগে দলিল তারপর টাকা।’

অবনি আবিদকে বললো’ তুমি এই দলিল কোথায় পেলে? আর ওনার সাথে কেনো হাত মিলিয়েছো?

আবিদ অবনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো’ এই দলিল আমি আলমারি থেকে চু’রি করেছি।

ধ্রুব রেগে বললো’ তোকে আমার ভাই ভাবতেও লজ্জা করছে ছিহ্।’

নিলিমা তখন বললো ‘ আম্মু এদেরকে মে’রে দাও।’

নিলিমা মা শয়তানি হেসে অবনির কাছে এসে বললো’ তোর কোনো শেষ ইচ্ছা আছে?

নিলিমার মায়ের কথায় আফিহা কাদো কাদো মুখ করে বললো’ আমার একটা শেষ ইচ্ছা আছে। আপুইকে জড়িয়ে ধরার প্লিজ ইচ্ছাটা পূরণ করো।’

আফিহার কথা শুনে নিলিমা বিরক্ত হয়ে মাকে বললো’ কোনো দরকার নেই। চুপচাপ মে’রে দাও।’

নিলিমার মা বললো’ আরে দাড়া আগে তো একটু ড্রামা দেখি, এই বলে তিনি আফিহার বাধন খুলে দিতেই আফিহা অবনির কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। আফিহার হাতে একটা কাচ ছিলো যেটা ও ফ্লোর থেকে নিয়েছিলো। আফিহা সেই কাজটা নিয়ে অবনির হাতের বাধন কাটতে কাটতে কান্না করে বললো’ আপু তোকে হয়তো আর কখনোই দেখবো না। তোকে অনেক ভালোবাসি। ভালো থাকিস।’

অবনি কান্না করে বললো’ বোন।’

নিলিমা মা বললো’ সময় শেষ আফিহাকে বেধে দাও।’ নিলিমা আফিহাকে চেয়ারের কাছে নিয়ে আসলো। নিলিমা কাচটা ধ্রুবের দিকে ছুড়ে মারতেই ধ্রুবের পায়ের সামনে পরলো। ধ্রুব সবার চোখ ফাকি দিয়ে অনেক কষ্টে কাচটা উঠিয়ে হাতের বাধন কাটতে লাগলো। নিলিমা আফিহাকে আবার চেয়ারের সাথে বেধে রাখলো।

ধ্রুব রাগী কন্ঠে বললো’ তোমরা সবাই ভিতু। ছেড়ে দাও ওকে। সাহস থাকলে খোলে দাও ওকে। আমিও দেখি কত দম তোমাদের।’

নিলিমার মা পৈশাচিক হাসি দিলো। তারপর রিভলবার অবনির দিকে তাক করে বললো’ এইবার তোকে উপরে পাঠাবো।’
ধ্রুব রাগে চেচিয়ে বললো’ না না।

নিলিমার মা ধ্রুবের কথা না শুনেই অবনিকে গু’লি করতে যাবে তার আগেই পুলিশ এসে নিলিমার মায়ের হাতে গু’লি করলো। গু’লির শব্দে অবনি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে পুলিশ। পুলিশ অফিসার নিলিমার মাকে, আবিদকে, নিলিমাকে গ্রেফতার করলো। পুলিশ অফিসাররা অন্য রুম থেকে ধ্রুবের মা, দাদি, অবনির মাকে ছাড়িয়ে অবনিদের রাখা রুমে নিয়ে আসলো। অবনি হাতের বাধন খুলে সোজা আবিদের সামনে এসে থাপ্পড় দিয়ে বললো’ ছিহ্ তুই এতোটা খারাপ? নিজের মা,ভাইকে মে’রে ফেলতে ফুপির সাথে হাত মিলালি?
আবিদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব রেগে বললো’ পুলিশ অফিসার ওদেরকে কঠিন শাস্তি দিবেন।’

নিলিমার মা অবনিকে বললো’ তোকে আমি।’
পুলিশ অফিসার নিলিমার মাকে ধমক দিলো। তারপর তাড়া ওদেরকে ধরে নিয়ে গেলো। অবনির মা অবনিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। অবনিও কান্না করে দিলো।

কিছুক্ষন পর
অবনিরা সবাই ওইখান থেকে বাসাই এসেছে। অবনি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আজকের ঘটনা ভাবতেছে। ধ্রুব পিছন থেকে অবনির কোমর জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বললো’ আজকের কথা ভেবে আর মন খারাপ করে থাকিস না। দেখ আকাশটা কত সুন্দর।’

অবনি ধ্রুবের বুকে মাথা রেখে বললো’ আমাকে নতুন করে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখানোর জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনাকে স্বামী হিসেবে পেয়ে আমি অনেক লাকি। ভালোবাসি আপনাকে।’

ধ্রুব মুচকি হেসে অবনিকে কোলে নিয়ে বিছানায় এনে বললো’ ভালোবাসি তোকে। তারপর অবনি আর ধ্রুব ভালোবাসার মূহুর্ত অনুভব করতে লাগলো।

– সমাপ্তি।’

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here