তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব -১০

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১০)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

নিজের রুমে ‘থ’ হয়ে বসে আছি আমি। আমার পাশেই পায়ের উপর পা তুলে আয়েশে বসে আছেন তীব্র। পিনপতন নীরবতার দেওয়াল ভে’ঙে তীব্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন..

“জামাই হিসেবে কি আমাকে তোমার পছন্দ না মিস!”

তীব্রের কন্ঠ কর্ণপাত হতেই আমি চোখ ছোট ছোট করে ওনার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি, কিছুসময় একদৃষ্টিতে ওনাকে দেখে নেই তারপর প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে বলি…

“হু’ট করেই আপনার মনে আমাকে বিয়ে করার শখ জাগলো কেন?”

তীব্রের স্ট্রেইট প্রতিত্তুর..
“আমি তো তোমাকে আগেই বলে দিয়েছিলাম, এসব ফ্লা’টিং আমার দ্বারা হবে না। তাই যখন বুঝতে সক্ষম হলাম তোমাকে নিয়ে আমার মনে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে তখন নিজেকে কিছুটা সময় দিলাম পুরোপুরি শিওর হতে যে তোমার প্রতি আমার কাজ করা অনুভূতি গুলো কি শুধুই ভালোলাগাতে সীমাবদ্ধ নাকি ভালোবাসা! সময় যতো পেরিয়ে যেতে লাগলো আমার অনুভূতি গুলোও ততো গাঢ় রূপ ধারণ করতে শুরু করলো। একটা সময় আমি বুঝতে সক্ষম হলাম তোমার প্রতি কাজ করা আমার সকল অনুভূতি গুলো ভালোবাসার একটা অংশ।”

“কিন্তু আমার মাঝে আপনার প্রতি এমন ভালোবাসার অনুভূতি বিরাজ করছে কিনা তা তো জানার চেষ্টা করলেন না!”

আমার প্রতিত্তুর শুনে তীব্র আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার কমোরে তার ডান হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন, ওনার হঠাৎ এমন স্প’র্শে আমার সর্বশরীর যেনো কা’টা দিয়ে উঠার মতো শিহরিত হলো। আমার ঠোটদ্বয় অনবরত কাঁপতে শুরু করেছে। তীব্রের গরম নিঃশ্বাস আমার সম্পূর্ণ মুখশ্রীকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে যা আমার হার্টবিট স্বাভাবিক এর তুলনায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তীব্রের শীতল দৃষ্টি আমার চোখের উপর স্থির, শীতল কন্ঠে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…

“তোমার চোখে অনেক পূর্বেই আমি আমার জন্য নি’খা’দ ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছিলাম, আমায় ঘিরে তোমার মনের আ’ও’ড়া’তে থাকা সকল ভাষা আমার পড়া শে’ষ হয়ে গিয়েছে মিস, শুধু তোমার মুখ থেকে শোনা বা’কি তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো”

ওনার বলা প্রতিটি শব্দ আমার মনের গহিনে লু’কি’য়ে রাখা অনুভূতিগুলোকে আবারও ছুঁয়ে দিলো যেনো। মাথা নিচু করে দু’চোখ বুঝে ঠোঁট প্রসারিত করে শীতল হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললাম, উনি আমার থু’ত’নি’তে ওনার একহাত রেখে হালকা উঁচু করে ধরলেন। তারপর আমার কপালের সাথে উনার কপাল ঠে’কি’য়ে মৃদুস্বরে বললেন….

“একবার ভালোবাসি বলো ভী’ত’পা’খি, তোমার মুখে ভালোবাসি শব্দটি শুনতে আমার মন যে ব্য’কু’ল হয়ে উঠেছে”

আমার কা’পা’ন্বি’ত ঠোঁটদ্বয়ের ভা’জ খুলে মৃদুস্বরে বেড়িয়ে এলো…

“ভালোবাসি”

তীব্র আমার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে আমাকে তার বুকের মাঝে মিশিয়ে নিলেন মূহূর্তেই। আমার মনের কোনে সৃষ্টি হওয়া সকল অ’শা’ন্তি, খা’রা’প লাগা যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। অদ্ভুত রকম প্রশান্তি কাজ করছে আমার সম্পূর্ণ মনজুড়ে। এই ভালোলাগা কাজ করছে হয়তো ভালোবাসার মানুষকে নিজের মনের অনুভূতিগুলোর বহিঃপ্রকাশ করার জন্য। পৃথিবীতে সবথেকে শান্তি হয়তো এখানে মিলে, যখন জানতে পারা যায় আমি যাকে ভালোবাসি সেই মানুষটিও আমাকে ভালোবাসে।
—————————
যতোদিন কাটতে থাকে ততো আমি দৃঢ় ভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হই আমার প্রতি তীব্রের ভালোবাসা কতোটা গভীর। কি সুন্দর তার অনুভূতি প্রকাশের প্রতিটি মাধ্যম। জীবনে তীব্রের মতো একজন ভালোবাসাময় প্রেমিক পুরুষ যে নারী পাবে সে তো সবথেকে ভাগ্যবতী নারী রূপে এই ধরনীতে জন্মগ্রহণ করেছে বলে নিজেকে ধ’ন্য মনে করবে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই, তীব্র নামক এই প্রেমিক পুরুষের থেকে নিজের জন্য ভালোবাসাময় সকল অনুভূতি গুলোকে অনুভব করতে পেরে নিজেই সেই ভাগ্যবতী নারী মনে করছি।

তীব্রের বাবা-মা না থাকলেও চাচা-চাচী ছিলোন, তাদের সাথেই আমার বাবা-মা আমাদের বিয়ে নিয়ে চূড়ান্ত তারিখ ঠিক করে ফেলেন। আর ৩দিন পর সেই দিনটি আসবে, যে দিনে আমার আর তীব্রের ভালোবাসা সামাজিক, ইসলামিক ও আই’ন’ত ভাবে স্বকৃিতী পাবে, স্বয়ং আল্লাহ ব্যতিত আর কারোর সা’ধ্য হবে না আমাদেরকে একে-অপরের থেকে আলাদা করার। সবকিছু কেমন যেনো স্বপ্নের মতো ঘ’ট’ছে এমন মনে হলো।

৩দিন কে’টে গেলো….
—————–
সব নিয়ম মেনে তীব্রের সাথে আমার বিবাহ কার্য ও সম্পন্ন হলো। অবশেষে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটি একান্ত নিজের স’ম্প’ত্তি বলে দা’বি করতে পারবো, হ্যা তীব্র শুধু আমার, একান্ত আমার প্রেমিক পুরুষ।

বাসর ঘর নিয়ে প্রতিটি নারীর ই আলাদা রকমের স্বপ্ন ও অনুভূতি সাজানো থাকে। আমারও ছিলো, কিন্তু সেই সব অনুভূতি, স্বপ্ন, ভালোবাসা মূহূর্তের মধ্যেই ভে’ঙে টু’ক’রো টু’ক’রো হয়ে গিয়েছিলো যখন তীব্র তার এতোগুলো দিন ধরে পরে থাকা মু’খো’শ খু’লে নিজের আসল রূপের বহিঃপ্রকাশ করছিলো আমার সামনে।
___________________________
বর্তমান~~~~
————–
আমার ন’র’কি’য় জীবনের আরো একটি সূর্য রাতের কালো আ’ধা’র’কে কা’টি’য়ে পূব আকাশে উদয় হয়েছে। ঝলমলে এই সকালকে নিজের কাছে বি’ষা’ক্ত মনে হচ্ছে। আ’র’মো’ড়া ভে’ঙে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসলাম। অতঃপর বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে নিজের ঘর পরিষ্কার করে নিচে নেমে আসলাম। তীব্র এখনও ঘুম থেকে উঠে দেখে হালকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম। অন্তত ঘুম থেকে উঠেই নিজের ভালোবাসার মানুষটির খা’রা’প রূপ দেখে নতুন দিনের সূচনা করতে তো হচ্ছে না। ঘোজ

ধীরপায়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করলাম, ডায়নিং টেবিলের উপর লক্ষ্য করতেই দেখলাম রাতে যেভাবে সব খাবার ঢেকে রেখে রুমে চলে গিয়েছিলাম ঠিক সেভাবেই ঢাকা অবস্থায় খাবার গুলো রাখা আছে। তারমানে কি তীব্র রাতে খায় নি! ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসলো। রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে ডায়নিং টেবিলের সামনে এসে দাড়ালাম, একে একে সবগুলো খাবার ঢাকনা খুলে গন্ধ নিলাম, নাহ সব খাবার ন’ষ্ট হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছেকৃত খাবার ন’ষ্ট করা আমার ভাড়ি অ’প’ছ’ন্দে’র বিষয়ের মাঝে একটি। মনে মনে ক্ষি’প্ত হলাম তীব্রের উপর। আমার উপর সৃষ্টি হওয়া রা’গ খাবারের উপর দেখানোর মানে কি! অ’স’হ্য….

বিরবির করতে করতে সবগুলো খাবার ময়লার ঝু’ড়ি’তে ফে’লে দিলাম৷ তারপর সব প্লেট বাটি পরিষ্কার করে হালকা নাস্তা তৈরি করে আবারও তা ডায়নিং টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখলাম। তীব্র এখনও নিচে নামলো না কেন! ঘুম ভা’ঙে নি নাকি! এতো বেলা পর্যন্ত তো কখনও ঘুমা না। শরীর ঠিক আছে তো! নানান ধরনের চি’ন্তা আমার মনে কাজ করতে শুরু করলো। আর অপেক্ষা না করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে তীব্রের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম।

তীব্রের রুমের দরজায় টো’কা দিলাম কয়েকবার কিন্তু সাড়াশব্দ পেলাম না, সব দ্বি’ধা’কে দূরে সরিয়ে দরজা ঠেলে খুলে ফেললাম। রুমের প্রবেশ করে দেখলাম তীব্র ঘরে নেই। তবে কি কাল রাতে আমার সাথে কথা শে’ষ করে বাড়ি থেকে বে’ড়ি’য়ে গিয়েছিলেন আর এখনও ফিরেন নি! নিশ্চয়ই তাই হবে, আর এটা নতুন বিষয় নাকি’ হাহ…। তীব্র একজন মা’ফি’য়া কিং সেটা তো ভুলে গেলে চলবে না, রাতের পর রাত বাহিরে কাটিয়ে দেওয়া ওর জন্য কোনো বিষয় না।

তীব্রের চিন্তা মাথা থেকে ঝে’ড়ে ফেললেই স্মরণ হলো আমার গতকাল রাতে ঐ রুমে তীব্রের লেখা আর যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখা ডায়েরিটার কথা। মনে মনে ভাবলাম..

” এখনি সুযোগ ঐ ডায়েরিতে কি র’হ’স্য লু’কি’য়ে রাখা আছে তা সম্পর্কে জানার, তীব্র ও তো বাড়িতে নেই তাই এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না। আমাকে এক্ষুনি ঐ রুমে যেতে হবে, তীব্র যদি আমার উপর স’ন্দে’হ না করে ডায়েরি টা অন্যত্র না স’রি’য়ে থাকে তাহলেই কে’ল্লা’ফ’তে ”

চি’ন্তা’র ঘো’র কাটিয়ে দ্রুত পায়ে তীব্রের রুম থেকে বেড় হয়ে হাঁটা ধরলাম ডায়েরি রাখা রুমটির উদ্দেশ্যে। মনের মাঝে কাজ করছে একরাশ জানার কৌতুহল, উৎসুকতা ভাব। না জানি কি থাকতে পারে ঐ ডায়েরির প্রতিটি পাতার ভা’জে ভা’জে লেখা। না জানি কোন সত্য আমার সামনে আসতে চলেছে! রুমটির সামনে এসে দরজা ঠেলে খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম। টেবিলের কাছে গিয়ে ড্রয়ারটি খুলতেই চাবিটা দেখতে পেলাম।

আমার ঠোঁটের কোনে এক অদ্ভুত হাসির রেখা ফুটে উঠলো। দ্রুত পায়ে আলমারির সামনে এসে দাঁড়িয়ে চাবিটি আলমারির ল’ক স্থানে ঢুকিয়ে দিলাম, সঙ্গে সঙ্গে ল’ক খুলে গেলো। বুকের ভিতর হৃৎপিণ্ডের গতি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক হা’রে বেড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। কাঁপা কাঁপা হাতে আলমারির দরজা খুলতেই ভিতরে দেখতে পেলাম ডায়েরিটি। জি’হ্বা’র অগ্র অংশ দ্বারা ঠোঁটদ্বয় ভিজিয়ে
বারকয়েক শুকনো ঢো’ক গি’লে ডায়েরিটা হাতে নিলাম।

আমার হাত ইতিমধ্যে আগের তুলনায় দ্বিগুণ দ্রুত কা’প’তে শুরু করেছে। নিজের মনকে আগে শান্ত করতে হবে, নয়তো এই ডায়েরি খুলে এর প্রতিটি পাতার ভা’জে লু’কি’য়ে রাখা র’হ’স্য গুলো আমার সামনে খোলাশা করতে পারবো না। তাই নিজমনে বিরবিরিয়ে বললাম…

” শান্ত হ তৃপ্তি, এতো উ’ত্তে’জ’না ভালো না ”

আগের থেকে অনেকটা স্বাভাবিক বো’ধ করতেই ডায়েরিটা খুললাম, প্রথম পাতায় বড় বড় অক্ষরে লেখা…

” আমার নি’খা’দ ভালোবাসার সাথে ছ’ল’না করে, আমার বুকে যখন ছু”রি দ্বারা আ’ঘা’ত হে’নে ক্ষ’ত-বি’ক্ষ’ত করে দিয়েছিলে, সেই মূহূর্ত থেকে সম্পূর্ণ নারী জাতির উপর আমার বিশ্বাস সারাজীবন এর জন্য উ’ঠে গিয়েছে নূর ”

#চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here