আমি সেই তনু পর্ব -১১

#আমি_সেই_তনু
#১১_পর্ব
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস
আকাশ : মুচকি হেসে, আচ্ছা ঘুমিয়ে পড় । আমিও আসি….
তনু মাথা নিচু করে সায় দিল।
আকাশ চলে গেলো, তনু যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো আকাশ ভাইয়া থাকলে তনুর যেনো কেমন একটা ভয় লাগে কখন কি করে বসে আর তনু কিছু বলতে ও পরে না।

সকাল বেলা একশ উঠে লতিফার ঘরে গেলো, লতিফা কুরআন পড়ছে। কিরে বাবা এত সকালে?
আকাশ: মা আমি কি কোনো ভুল করছি?
লতিফা: আমি জানি আমার আকাশ কোনো ভুল করতে পারে না, অন্যের ঘরে গেলে তনু কেমন থাকবে জানি না তবে তোর কাছে যে আমার তনু সুরক্ষিত সেটা আমি জানি। তোর সাথে তনুর বিয়ে দিলে আমি মরে ও শান্তি পাবো।
আকাশ: আমি চাইনা মা, তনুর অবস্থা ছোটো খালামনির মত হোক!! আমি যে তনুর কষ্ট সহ্য করতে পারব না মা।
লতিফা: পাগল ছেলে, এইযে তুই তনুর কষ্ট সহ্য করতে পারিস না, তনু কষ্ট পেলে তুই কষ্ট পাস এটার মানে হলো ভালোবাসা তুই তনু কে ভালবাসিস আর এই ভালোবাসা ই তনুর জীবনে সুখ বয়ে আনবে।

আকাশ আর কিছু না বলে উঠে বেরিয়ে আসলো। তনুর ঘরে উকি দিতে ই দেখে তনু ঘুমাচ্ছে, মুখের ওপর বই ,ওড়না নিচে ফেলা ।আকাশ মনে মনে, এতো অগোছালো এই মেয়ে টা!!
তার পর ছাদে চলে গেলো। রোহিত ছাদে ফুল গাছে পানি দিচ্ছে।
আকাশ: good morning বাবা
রোহিত: good morning my son। প্রিয় গোলাপ ফুল টা তাহলে শীঘ্রই পেয়ে যাচ্ছো।
আকাশ মাথা চুলকাতে চুলকাতে, কিযে বলো বাবা।
রোহিত : নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছ, অনেক দাইত্ত কর্তব্য আর অনেক কিছু বুঝতে হবে তোমায় বাবা। মাঝে ঝড় আসবে আবার থেমে যাবে আবার কখনো মৃদু বৃষ্টি হবে সবই তোমাকে সামলাতে হবে।
আকাশ: আমি সব সময় তনুকে আগলে রাখবো বাবা তুমি শুধু দোয়া করো।
রোহিত: দোয়া তো করি বাবা সুখী হও, আজ সন্ধায় আমি কিছু গেষ্ট দের ইনভাইট করেছি তোর মামা দের কে ও বলেছি …. আমার তনুর হলুদ সন্ধ্যা বলে কথা।

আকাশ: তুমি যা ভালো বোঝো বাবা। আচ্ছা আসি
রোহিত: তনু কে নিয়ে যা অনেক কেনা কাটা করতে হবে তো সময় ও তো বেশি নেই। এই দুই দিন অফিস আমি সামলে নেব।
আকাশ: thanks বাবা!
রোহিত : ওয়েলকাম my son।
আকাশ হাসি বিনিময় করে বেরিয়ে আসলো।

তনুর ঘুম ভাঙছে না লতিফা 3বার ডেকে গেছে। এইদিকে বাসায় গেস্ট আসতে শুরু করে দিয়েছে….

মরিয়ম: ও তনু মেডাম ওঠেন, আপনার না কাল বিয়া। বলতে বলতে তনুর অগোছালো ঘর টা গুছিয়ে দিচ্ছে মরিয়ম।

আকাশ তনুর রুমে যাচ্ছে, তনুর মুখ টা না দেখলে কিছু ভালো লাগে না আকাশের।
মরিয়ম আকাশ কে দেখে হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো পরক্ষণে ই একছিল্টে রোদ তনুর মুখ স্পর্শ করলো…..
তার পর তনুর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল,
তনু: আকাশের হাত টা জড়িয়ে ধরে প্লীজ খালামনি আর একটু ঘুমাই না।
আকাশ মুচকি মুচকি হাসছে!! আচ্ছা ঘুমা কাল রাত থেকে তো আর ঘুমাতে পারবি না তাই এখন একটু ঘুমিয়ে নে।
আকাশের কথা শুনে তনু ধপ করে উঠে পড়ল। ভাইয়া আপনি!?
আকাশ বাকা হেসে, হ্যাঁ আমি। কেনো আসতে বরণ নাকি? আর বরণ হলেও শুনছে কে ।
তনু মুচকি হেসে মাথা নিচু করল, মৃদু সুরে না বারণ করিনি তো হটাৎ আপনি এইসময় আসবেন ভাবতে পারি নি তাই…
আচ্ছা কাল থেকে যে আমার ঘরে ই তোকে থাকতে হবে তখন?
তনু লজ্জা পাচ্ছে আর আকাশ তনু কে লজ্জা দেওয়ার জন্য একটা একটা কথা বলে ই যাচ্ছে।
আকাশ: আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আয় আজ বের হবো তোকে নিয়ে। বলে উঠে বের হলো আকাশ।
তনু ও ফ্রেশ হয়ে খেতে আসলো। আকাশ কাচ্ছে আর তনু কে লতিফা খাইয়ে দিচ্ছে, মাঝে মাঝে ই তনু কে খাইয়ে দেয় লতিফা।
খাওয়া শেষ করে দুজনে বের হলো , তনু শাড়ী দেখছে কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না কিছু ই , তনু মনে মনে চাচ্ছে আকাশ একটা শাড়ি সিলেক্ট করুক।
হঠাৎ আকাশের চোখ পড়ে একটা সোনালী রং এর লেহেঙ্গা তে আকাশ ওইটা তনু কে দেখিয়ে বলে এইটা বিয়েতে পরবি তনু?
তনু সাথে সাথে বলে এইটা দেন আকাশ বেশ খুশি হয়। তার পর অনেক কিছু কেনা কাটা করে ওরা আকাশের শেরওয়ানি ও তনু পছন্দ করে কিন্তু ভয়ে বলতে পারছিলো না কিন্তু বার বার শেরওয়ানি টা দেখছিল তাই আকাশ বুঝতে পেরে ওইটা ই নিলো। আকাশ বেশ সুন্দর কিছু সিক্রেট গিফট ও কিনে তনুর জন্য। এইদিকে লতিফা ও হলুদের অনেক কিছু সেদিনই কিনে রেখে ছিল তনুর জন্য।
শপিং করতে করতে বিকাল হয়ে গেছে । গাড়ি তে তনু বেশ চুপ চাপ…
আকাশ: একটা কথা বলবি তনু?
তনু: কি কথা ভাইয়া?
আকাশ: আমি জানি এইসময় দাড়িয়ে কথা টা তোকে জিজ্ঞাসা করা বোকামি তবুও বলছি…
তনু: কি এমন কথা ভাইয়া?
আকাশ: তুই কি আমাকে ভালবাসিস….?
তনু: কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না, সে কিভাবে সরাসরি আকাশ কে ভালোবাসার কথা বলবে….? তনু মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসছে।
আকাশ তার উত্তর পেয়ে গেছে । আকাশ ও এক চিলতে হাসি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে…. আচ্ছা আমাকে এত ভয় পাস কেনো রে? আমি কি তোকে কখনো মেরেছি বা বকা দিয়েছি?
তনু কি বলবে সে তো নিজে ই জানে না কেনো ভয় পায়। তনু আর এক দিকে তাকিয়ে আকাশের হাত ধরলো কারণ এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই মুখে কিছু তে ই বলতে পারবে না ভালোবাসার কথা।

তনু এই প্রথম আকাশের হাত ধরেছে , হাত ধরে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে লজ্জা ভয় জেকে ধরেছে তনু কে। আকাশ সাইড করে গাড়ি থামালো। তনুর দিকে তাকালো আকাশ… তনুর হাত ঘেমে যাচ্ছে তনু ও ঘামছে । আকাশ তনুর এমন কান্ড বেশ উপভোগ করছে…আকাশের হাত ও ভিজে যাচ্ছে, বাচ্চা মেয়েদের মত আকাশের হাত ধরে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
আকাশ মুচকি হেসে তনুর থুতনি ধরে, এত লজ্জা পাস কেনো? আমি কি বাঘ ভাল্লুক যে তোকে খেয়ে ফেলব? বলে হেসে ফেললো আকাশ। তনু আরো লজ্জা পেলো আকাশের হাসি তে।
পকেট থেকে রুমাল বের করে তনু কে দিল, এটা ধর ঘাম মুছে নে বোকা মেয়ে।
তনু হাত টা ছেড়ে রুমাল টা নিয়ে ঘাম মুছে আকাশ ও গাড়ি চালাচ্ছে আপন গতিতে এক পর্যায় বাসায় পৌঁছালো ….
তনু আকাশের মামাতো ভাই বোনরা সব এসেছে আকাশের ফুপাতো চাচাতো ভাই বোন চাচা চাচী সবাই এসে পড়েছে।।।।
তনু আর আকাশ কে দেখে ভাই বোন গুলো ইয়ার্কি মারছে ।
আকাশের অনেক কলিগ ও এসেছে…. বাড়িতে লালনিল আলোর ঝলকানি খুব সুন্দর পরিবেশ।
এতো মানুষ দেখে তনু অনেক টা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
আকাশ কে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় তনু কে ও নিয়ে যাওয়া হয়….
তনু কে শাড়ী পরাতে পরাতে তনুর মামাতো বোন তিন্নি বলে ওঠে….
তনু তোর ভাগ্য টা অনেক ভালো রে আকাশ ভাইয়া কে দেখে তো আমি ই ক্রাশ খেয়েছি।
ইসিকা: আরে আরে তনুর জায়গায় আমি হলে কিযে করতাম !! কি সুদর্শন ,কি লম্বা কি চাহনী আয়হায়য়…. বলে হা হা করে হেসে উঠলো মেয়েরা।
তনু সবার কোথায় খুব লজ্জিত হচ্ছে, তনু কে একটা কালো খয়েরী রং এর শাড়ী পড়ানো হলো আর হালকা লিপস্টিক সাথে হালকা সাজ।
আকাশ ও সুন্দর ভাবে পরিপাটি হয়ে নিল। একটা চকোলেট কালার এর শার্ট, কালো সুট, চোখে চশমা, হতে ঘড়ি ফেভারিট পারফিউম ব্যাস ।
আকাশ শিরি দিয়ে নিচে নামছে আর মেয়ে গুলোর প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। আকাশ আসার পর তনু কে ও ডাকা হলো..
মেয়েরা তনু কে নিয়ে আসলো… আকাশ যেনো তনুর থেকে চোখ ফিরাতে পারছে না!! শাড়ী পরে ঘনো কালো চুলে বেশ সুন্দর লাগছে তনু কে থুতনি তে কুচকুচে কালো তিল টা যেনো আকাশ কে চোখ ফেরাতে দিচ্ছে না তনুর থেকে….

তনুর হতে আকাশ একটা ডায়মন্ড এর অংকটি পরিয়ে দিলো… তনু কেও লতিফা একটা অংকটি দিলো পরিয়ে দেওয়ার জন্য , তনু ও পরিয়ে দিল সবাই হাত তালি দিচ্ছে ড্যান্স করছে তনু এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।
রীতিমত শাড়ি টা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তনু, আকাশ : তোর কি খারাপ লাগছে তনু?
তনু : একটু লাগছে।
আকাশ : আর কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠান শেষ হবে…
তনুর শাড়ী কোমর থেকে খুলে যাচ্ছে কেমন যেনো সব ঢিলে হয়ে যাচ্ছে, না আর পারছে না তনু, তনুর উচ্খুস করা দেখে আকাশ বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে….
আকাশ: কি হয়েছে তনু বল আমাকে?
তনু মাথা নিচু করে, আকাশ ভাইয়া আমার শাড়ি…
আকাশ: কি হয়েছে শাড়ী তে?
তনু: আমার শাড়ি খুলে যাচ্ছে।
আকাশে বুঝতে পারে তনু কে এক হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আসলো তনুর রুমে… আকাশের ফুপাতো ভাই বোন আড্ডা দিচ্ছিল সেখানে , আকাশ আর তনু কে দেখে মুহিব বলে উঠলো কি আকাশ ভাইয়া আর তো একটা দিন একটু তো ধর্যো ধরো বলে সবাই অট্ট হাসি দিল….
তনু খুব লজ্জিত হচ্ছে এমন অবস্থায়।
আকাশ: তোরা একটু ঘরটা ফাঁকা কর, তনুর অসুস্থ লাগছে….
মেহরাব: এইসময় অনেক অসুকি তো হয় তনুর কোনটা হয়েছে রে?
তিতলি: আরে বুঝলি না হৃদয় অসুখ করেছে আকাশ ভাইয়া ছাড়া করো সাধ্য নেই এই অসুখ সরানোর সবাই আবার অট্ট হাসি দিল…
আকাশ এবার ধমকের সুরে ই জাবি তোরা? নাকি ফুপ্পি দের ডাকবো?
মুহিব: আরে যাচ্ছি যাচ্ছি রেগে যাচ্ছো কেনো ভাইয়া (মুক বাকা করে) কাল থেকে ই তো পেয়ে যাবা। এই তোরা চল এখন বলে বেরিয়ে গেলো বিচ্ছু গুলা।
তনু যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
আকাশ: কোথায় সমস্যা হয়েছে আমাকে বল এবার?

আকাশের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকালো তনু!!…..

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here