আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -২৮

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(28)

শীতের কুয়াশার অবগুন্ঠন সরিয়ে প্রকৃতি হেসে উঠেছে ধীরে , অতি ধীরে । নির্ঝরের স্বপ্ন ভেঙে গাছে গাছে , পত্র-পল্লবে ছড়িয়ে গেছে সে হাসি রঙের রোশনাই মেলে । গাছেদের শীতকাতুরে ঘুমচোখে আলতো চুমুর পরশ দিয়ে দখিনা বাতাস বলে যাবে,
“খোলো খোলো দ্বার, রাখিওনা আর বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে ।”

সকালের কুসুমরঙা আদর গায়ে মেখে আড়মোড়া ভাঙলো অরুনিকা। পরনের আদাভানের শার্টের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে কলারের অংশে নাক ছুঁইয়ে দিলো। লম্বা এক শ্বাস টেনে তৃপ্তিতে দুচোখের পাতা বন্ধ করতেই কেঁপে ওঠে। কোমরের খালি অংশে কারোর আঙ্গুলের বিচরণের ছোঁয়ায় অবাক নয়নে তাকায় পাশে শুয়ে থাকা আদাভানের দিকে। একদম শান্ত বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে থাকা আদাভানকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার দুষ্টুমির কথা।

লাজুক হেঁসে বেলকনিতে দাড়িয়ে সকালের স্নিগ্ধ বাতাস অনুভব করতে ব্যাস্ত অরুনিকা কোমরে কারোর হাতের বন্ধন পেয়ে মাথা এলিয়ে দেয় পিছনে থাকা পুরুষালী বুকে। আদাভানও আরও গভীরভাবে জড়িয়ে নেয় প্রিয়তমাকে নিজের মাঝে।

“সকাল সকাল আমাকে পাগল করে দিচ্ছ তো জান। দূরেই যেতে দিচ্ছনা, ব্যাপার কি?”

আদাভানের প্রশ্নের জবাবে অরুনিকা মুচকি হেঁসে বললো,
“বহুবছর পর আপনাকে পেয়েছি। একটুও দূরে থাকতে ইচ্ছে করছেনা যে জান। কাম টু মী বেবী, কাম ক্লোজার”

অরুনিকার কথায় আর কাজে বেসম খেয়ে যায় আদাভান। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় অরুনিকার দিকে। মাথা চুলকে ভুল কিছু শুনেছে কিনা ভাবতে ভাবতে অরুনিকার হাসির শব্দে ধ্যানভঙ্গ হয় তার। এতক্ষন অরুনিকা তার সাথে মজা করছিলো বুঝতে পেরে ধাওয়া করে অরুনিকাকে। অরুনিকাও কম যায়না, সেও সারারুমে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে ব্যস্ত। হাসতে হাসতে সারারুমের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে দুজনে। অবশেষে আদাভান অরুনিকাকে পিছন থেকে কোলে তুলে বেডে ফেলে দেয়।

“এবার কোথায় পালাবে প্রাণপাখি।”

সারামুখে স্লাইড করতে করতে বলা কথা শুনে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায় অরুনিকার।

“শুধু আমার শার্টে তোমাকে সেই লাগছে জান। লুকিং সো হ…”

লজ্জায় যাচ্ছেতাই অবস্থা অরুনিকার। ডানহাতে আদাভানের মুখ চেপে ধরে বামহাতে চাদর টেনে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে। আদাভানের পরনের শার্ট অরুনিকার হাঁটুর কিছুটা উপর পর্যন্ত ঢেকেছে ভাবতেই আরও একদফা লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।

___________

সকালের নাস্তা করেই এই বাড়ী থেকে বিদায় নিয়েছে দুজনে। রুবিনা বেগম সকাল থেকেই উঠে নতুন জামাইয়ের আপ্যায়নে লেগে পড়েছিলেন। আদাভানকে অনেক আগেই মেনে নিয়েছিলেন তিনি। একমাত্র মেয়েকে এভাবে দিনের পর দিন কষ্ট পেতে দেখে কোনো বাবা মাই সহ্য করতে পারবেন না। শুধুমাত্র নিজের দম্ভের কাছে হেরে যাওয়ায় ভয়ে এতদিন মেয়ের সুখটা চোখে পড়েনি তাহসান সাহেবের। আজও তিনি সাদরে আদাভানকে গ্রহণ না করলেও, প্রতিবাদও জানাননি। আব্বু আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বেশ কান্নাকটির পর্ব শেষ করে বেরিয়েছে অরুনিকা।

রুমে ঢুকেই এক বিদঘুটে গন্ধ নাকে আসতেই চোখ পাকিয়ে তাকায় অরুনিকা। ভয়ে ভয়ে আদাভান বেলকনিতে চলে যায় নিজের কুকর্মগুলো চাপা দেওয়ার জন্য। বেলকনিতে পড়ে থাকা সিগারেটের প্যাকেটগুলোই বলে দিচ্ছে বিগত দিনগুলো এগুলো দিয়েই পেট ভরিয়েছে আদাভান।

দ্রুতবেগে বেলকনি থেকে অরুনিকাকে রুমে আসতে দেখে আদাভানের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়। অরুনিকার পিছনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে দাড়ায়।

“সরি। আসলে তখন এগুলোই শান্তি দিচ্ছিল আমা…..”

“আই অ্যাম সরি। সো সরি। অনেক অনেক অন্যায় করে ফেলেছি আপনার সাথে। প্লীজ আমাকে মাফ করে দিন। আমি ভাবতাম কষ্ট আমি বেশি পেয়েছি কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার থেকেও বেশি কষ্টের দিন আপনি পার করেছেন। আই অ্যাম রিয়েলি সরি। বিশ্বাস করুন যা দেখেছিলেন সব আপনার মনের ভুল ছিলো। দৃষ্টিভঙ্গির ভুলের জন্য দুজনের মাঝের অভিমানের পাহাড় ভেঙ্গে আসা হয়নি একে অপরের কাছে।”

আদাভানের কথার মাঝে পিছন ঘুরে গলা জড়িয়ে বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বলা কথাগুলো শুনে মুচকি হাসে আদাভান। অবশেষে যে অরুনিকাও তাকে ভালোবাসে ভেবেই প্রশান্তি ছেয়ে যায় সারা অঙ্গে।

“ তুমি আমাকে পূর্ন কর, তুমি ছাড়া আমি শূন্য।
সত্যি বলছি প্রিয়, তুমি ছাড়া আমি সত্যিই নগন্য।“

“ভালোবাসি”

“কাকে?”

“আপনাকে”

“বুঝিনি, ভালো করে বলো।”

“ভালোবাসি আপনাকে।”

“আমিও ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে প্রাণপাখি।”

________________

সময়ের গতির উপর কারোর হাত নেই। পৃথিবী থমকে গেলেও সময় তার আপন গতিতে চলতেই থাকবে। নদী আর সময়ের মাঝে এই বিষয়ে বেশ সাদৃশ্য, এদেরকে থামানো যায়না কোনোভাবেই। সেই স্রোতের মাঝে কেটে গেছে দুইটা বছর। আজকে আদাভান আর অরুনিকার দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী। বর্তমানে আদাভান একজন লেকচারার। অরুনিকার ফাইনাল ইয়ার চলছে।

রাত বারোটা বাজতে আর মাত্র দশ মিনিট বাকি। আদাভানকে গভীর ঘুমে থাকতে দেখে আস্তে আস্তে উঠে ব্যালকনিতে গিয়ে কাউকে ফোন করে অরুনিকা।

“ওদিকের কি খবর? সব কমপ্লিট তো? আমি আসছি ওয়েট।”

ওপাশের মানুষটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ধিমি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আস্তে করে দরজা আঁটকে দেয় অরুনিকা। এদিকে ঘুম থেকে উঠে অরুনিকাকে কারোর সাথে ফোনে কথা বলতে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় আদাভানের। বেশ ভালো করে অরুনিকার বলা কথাগুলো শুনে ভয় ছেয়ে যায় মনের মাঝে। অরুনিকা রুম থেকে বেরোতেই নিজেও বেরিয়ে পরে অরুনিকার পিছু নিয়ে। আলতো পায়ে ছাদের গেটের কাছে গিয়ে আশেপাশে অন্ধকার দেখে আরও একদফা অবাক হয়। এদিকেই এসেছিলো অরুনিকা, তবে অন্ধকারের মাঝে কোথায় গেলো? এসব ভাবতে ভাবতেই ছাদের মাঝে পৌঁছে যায় আদাভান।

চারিদিকের সবার আওয়াজে আরও একদফা অবাক নয়নে তাকায় চারিদিকে। প্রাপ্তি, আনিকা আহসান, রুবিনা বেগম, তাহসান সাহেব, কাব্য, সবার উপস্থিতি আর পুরো ছাদের সাজসজ্জা দেখে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় তার কাছে। পুরো ছাদের চারিদিকে লাল, সাদা আর কালো বেলুন দিয়ে সাজানো সাথে ফিয়ারি লাইট দিয়ে সুন্দর ডেকরেট, ছাদের মাঝবরাবর একটা টেবিলে হার্ট শেপের রেড ভেলভেট কেক, টেবিলের চারিদিকে ক্যান্ডেল আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো। মুগ্ধ হয়ে চারিদিকে দেখে অরুনিকাকে কোথাও না দেখে খোঁজাখুঁজি করলে কানের কাছে ভেসে আসে কোমল এক কণ্ঠস্বর,

“হ্যাপি সেকেন্ড ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি আদাভান।”

“হ্যাপি সেকেন্ড ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি টু ইউ অলসো প্রাণপাখি।”

দুজনে মিলে কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলে এক এক করে বড়রা কিছু বাহানা দিয়ে নীচে চলে যান। সবাই চলে গেলে আদাভান প্রাপ্তির দিকে তাকায়।

“কি হয়েছে? ওভাবে তাকাস কেনো?”

“ঘুম পাচ্ছেনা? যা নীচে গিয়ে ঘুমা।”

“হু চলো ভাবি নীচে যাই।”

প্রাপ্তি অরুনিকার হাত ধরে নীচে নিয়ে যেতে গেলে অরুনীকাকে নিজের দিকে টেনে ধরে আদাভান।

“তুই যা, ও পরে যাবে।”

“কেনো রে, পরে কেনো। কি কাজ তোদের এখন এখানে?”

“কাজ আছে। যা তুই”

“ভাবি সাবধানে থেকো, যখন তখন অ্যাটাক করতে পারে এই হনুমানটা তোমার উপর। হা হা হা।”

“যাবি তুই?”

“যাচ্ছি যাচ্ছি, হুহ ঢং।”

প্রাপ্তি আর কাব্য নীচে নেমে গেলে অরুনিকার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে নেয় আদাভান।

“ইচ্ছে করে করেছো তাইনা?”

“হুম। আমি জানি তো আপনার বুকের উপর থেকে সরে বেডে ঘুমালেও আপনি টের পেয়ে যান। ঠিক আবারো টেনে নেন নিজের বুকে। তাই ইচ্ছে করেই রুমের মধ্যেই জোরে জোরে প্রাপ্তিকে কল করে বললাম ওগুলো। আমি জানতাম আপনি জেগে গেছেন। আর আমার ধারণা ঠিক প্রমাণ করে ঠিকই চলে এলেন আমাকে ফলো করতে করতে। হা হা হা”

“খুব মজা লাগছে তাইনা? জানো আমি কতো ভয় পেয়ে গেছিলাম! এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো তুমি হয়তো আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছো আস্তে আস্তে।”

“পাগল”

“শুধু তোমার প্রেমে”

কাল তোমার জন্য দুটো সারপ্রাইজ ওয়েট করছে প্রাণপাখি। তৈরি থেকো। মনের মাঝে ভাবনা গুলো রেখে দুইহাতে প্রিয়তমার কোমর জড়িয়ে ধরে একজোড়া অধরের সাথে আরেক জোড়ার মেলবন্ধন ঘটিয়ে ফেলে। চাঁদনী রাতকে সাক্ষী রেখে দুজনে ডুব দিলো দুজনের ভালোবাসার গভীরে।

চলবে?
#Fiza_Siddique

আগের থেকে রেসপন্স কমে যাচ্ছে কিন্তু। রেসপন্স কম হলে তাড়াতাড়ি শেষ করে দেবো। আর বেশি হলে অনেক বড়ো করবো। কাহিনী এখনো প্রচুর বাকি 😌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here