ক্যাসিনো পর্ব -১৭

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)

#পর্ব_১৭

মেহমেতের বিদ্ধস্ত চেহারা দেখে মরিয়মের চোখ জোড়া নিমিষেই বড় বড় হয়ে যায়। মরিয়ম ছুটে যায় মেহমেতের কাছে। মেহমেতের দৃষ্টি ফ্লোরের দিকে। দেখে মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে তার মন মস্তিষ্কের বসবাস নয় এখন। মরিয়ম মেহমেতের কাছে হাঁটু গেড়ে বসতেই এক বিশ্রি ভ্যাবসা গন্ধ নাকে ভেসে আসে। মরিয়মের নাক মুখ খিঁচিয়ে উঠে। পাশেই মদের খালি বোতল পড়ে আছে। মরিয়ম মেহমেতের দিকে চোখ ফিরিয়ে অস্থির গলায় বলে,,মেহমেত কি হয়েছে আপনার?? আপনি ঠিক ঠিক আছেন?? মরিয়ম দুই হাত মেহমেতের গালে আলতো করে ধরে বলে,,মেহমেত আমার দিকে তাকান বলেন কি হয়েছে আপনার??.
মরিয়ম দিকে নিভু নিভু চোখে মরিয়মের দিকে এক বার তাকালো। তার পর আচমকা মরিয়ম কে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,মেহমেতের এমন কান্ডে মরিয়ম হচকচিয়ে যায়। তবুও মেহমেতর পিঠে হাত বুলিয়ে শান্তনা দিতে থাকে। নরম স্বরে বললেন,মেহমেত প্লিজ বলেন কি হয়েছে আপনার?? মেহমেতের উষ্ণ অশ্রু কোণা মরিয়মের কাঁধে পড়ছে। মরিয়ম ভয় পেয়ে যায়,মেহমেত কাঁদছেন কেন??
মেহমেত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,সব শেষ হয়ে গেল,,মা বাবার সাথে আমি বেঈমানী করেছি।

মেহমেত কি শেষ হয়ে গেছে?? আপনি এমন করছেন কেন?? মরিয়ম মেহমেত জোর করে দাঁড় করালো। সামনের একটা সোফায় বসিয়ে দিল । হঠাৎ মেহমেতের প্রচন্ড কাশি আরম্ভ হয়। সামনে থাকা টেবিল থেকে এক বোতল পানি এনে মেহমেত কে খাইয়ে দিল । ক্লান্ত শরীরে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে মেহমেত চোখ বন্ধ করে নিলো। মরিয়ম আশে পাশে তাকালো,ম্যানাজার কে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালো মরিয়ম। চোখে মুখের কাঠামো ভাব সরিয়ে স্থির কন্ঠে জানতে চাইলো গত কাল কি হয়েছে এখানে। ম্যানাজার মেহমেতের দিকে এক বার আড় চোখে তাকিয়ে গত কাল কি কি হয়েছে তা সম্পুর্ন খুলে বলল। ফাইলে সাইন করার বিষয়টি জানতে পেরে মরিয়ম বুঝে নিলো আসলে মেহমেত কি শেষ হয়ে যাবার কথা বলছে । মরিয়ম মুচকি একটা হাসি দিল শুধু।

ক্লান্ত চিন্তিত মুখে ঘুমিয়ে পড়েছে মেহমেত। মরিয়ম এক দৃষ্টিতে মেহমেতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বিগত ৪ঘন্টা ধরে মেহমেত ঘুমিয়ে আছে। উঠার কোন নাম গন্ধ নেই। মরিয়ম মেহমেত কে হালকা ভাবে ডাকে। মেহমেত চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। মরিয়ম মেহমেত কে আশ্বস্ত করে বললেন,, আপনি একটু উঠে বসুন, আমি আপনার জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসি। মরিয়ম দৌড়ে নিচে গিয়ে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দিয়ে লেবুর শরবত তৈরি করে নিয়ে আসলো। মেহমেত এক নিঃশ্বাসে শরবত টা খেয়ে নিল। মরিয়ম নরম কন্ঠে হাসি মুখে বললেন,, আপনি গোসল করে নিন। আমার আপনার সাথে বিশেষ জরুরী কথা আছে অনেক। মেহমেত চোখ ছোট ছোট করে বললেন,,কি বলবে?? এখনি বল!!

নাহ আপনি গিয়ে আগে গোসল করে নিন। ফ্রেশ লাগবে তাহলে। তার পর বসে কথা বলা যাবে। মেহমেত গোসল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে আসলো। মরিয়ম ডাইনিং টেবিল থেকে জোরে ডেকে বলে খাবার বেরেছি খেতে আসো।

মরিয়মের বাসায় ফিরতে ফিরতে ৮টা বেজে যায়। আল্লাহর রহমতে আরিফা এবং মিহি কারোই ঘুম ততক্ষণে ভাঙেনি। চট জলদি নাস্তা রেডি করতে মিহি আর আরিফা কে নাস্তা করিয়ে মিহি কে স্কুলে আর আরিফা কে ভার্সিটিতে পাঠিয়ে দেয়। এখন বাজে প্রায় ১২টার মত মেহমেত চুপচাপ মাথা নিচু করে খাচ্ছে। মরিয়ম মেহমেতের পাশের চেয়ার টেনে মেহমেতের গা ঘেঁষে বসলো। তার পর কি ভাবে কি শুরু করবে ভেবে পাচ্ছে না মরিয়ম। ঠিক তখনি সদর দরজায় কলিং বেল বাজার শব্দ আসলো। মরিয়ম মৃদু কুঁচকে বললেন,,এখন আবার কে আসলো??
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সদর দরজায় উপস্থিত হলেন। দরজা খুলেই একে বারে স্তব্ধ হয়ে গেলেন। পুলিশ এসেছে!! সাথে আর একটি যুবক।

পুলিশের সরল স্বীকারোক্তি মিস্টার মেহমেত খান কি বাসায় আছে। হ্যাঁ বাসায় আছে।
আমরা কি উনার সাথে দেখা করতে পারি?? জ্বি ভিতরে আসুন।

মেহমেত খাবারের অর্ধেক টা শেষ করেছে কেবল, নূর মোহাম্মদ আর পুলিশ কে দেখে
অবাক হয়ে গেলেন মেহমেত।
পুলিশ মেহমেতের দিকে তাকিয়ে সহজ ভাবেই বললেন, মিস্টার মেহমেত আপনাকে এরেস্ট করার লেটার এসেছে। আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে পুলিশ কাস্টেডি তে।

কথা টা পুলিশ অফিসার তমাল যতটা সহজ ভাবে বলল, ঠিক ততটাই বিনা মেঘে বজ্রপাতের ন্যায় মরিয়ম আর মেহমেতের কাছে লাগলো। মনে হচ্ছে এ কোন অকল্পনীয় শব্দ তারা শুনছেন।
মরিয়ম আতংক ভরা কন্ঠে বললেন,, কিসের জন্য?? মেহমেত কি করেছে??? মেহমেত হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,কি বলছেন কি আপনারা?? মাথা ঠিক আছে তো আপনাদের??

নূর মোহাম্মদ আরষ্ঠ গলায় জবাব দিলো। জ্বি আমাদের মাথা ঠিক আছে মিস্টার খান।
অনেক হয়েছে এই লুকোচুরি খেলা এখন আজম দপ্তরের খুনের দায় আপনাকে এখন এরেস্ট করা হবে। এখন হাতে হ্যান্ডকাপ না পড়তে চাইলে চলুন আমাদের সাথে। হোয়াট?? আর ইউ মেড??? মেহমেতের রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। আপনি কোন প্রমানে মেহমেত কে এরেস্ট করতে এসেছেন??
নূর মোহাম্মদ মুচকি হাসলো। তার পর একটা ব্লেজারের বুতাম দেখালো মরিয়ম কে??
এই বোতাম আমরা আজম খুনের জায়গায় পেয়েছি,আর এই বোতামে মেহমেতের হাতের ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট মেচ হয়েছে।

আর বাকি প্রমান মেহমেতের মুখ থেকেই পাওয়া যাবে। এখন আমরা আসছি মিসেস খান। মেহমেত ব্লেজারের বুতাম টা ভালো করে দেখে বলল। এই ব্লেজার তো আমার ১৫দিন আগেই চুরি হয়েছে। আর আজম খুন হয়েছে তো সেই রাতেই। দেখুন অফিসার আমি কোন খুন করিনি। আমি বুঝতে পারছি না। এই বোতাম কিভাবে… মেহমেত কে আর কোন কথা না বলতে দিয়ে অফিসার তমাল হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দিলেন‌ মেহমেতের । হতভম্বের মত শুধু চেয়ে রইল। অসহায় দৃষ্টিতে মরিয়মের দিকে চেয়ে রইল এক ধ্যানে। মরিয়ম কিছুই করতে পারলো না। গাড়িতে উঠে বসায় মেহমেত কে। মরিয়ম মেহমেতের একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে বুকের কাছে নিয়ে আশ্বস্ত করে বললেন,, আপনি এক দম চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে বের করিয়ে নিয়ে আসবো। এক দম চিন্তা করবেন না। ঘাবড়াবেন না। আমি আছি আপনার সাথে। আপনার উপর আমার পুরো বিশ্বাস আছে আপনি আর যায় করেন না কেন খুন করতে পারেন না। এটা আমি নিশ্চিত।

মরিয়মের ছল ছল চোখের দিকে মেহমেত এক বার দৃষ্টি দিয়ে বললেন। আমি কোন খুন করিনি মরিয়ম। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিলো। মরিয়ম মেহমেত কে শান্তনা দিলেও তার বুকের পাঁজর যেন ভেঙে যাচ্ছে। মরিয়ম কিছু ক্ষনের জন্য জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লো। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগলো মাটিতে। মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার। কীভাবে মেহমেত কে এই খুনের মামলা থেকে বের করে আনবে?? মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরলো সে।

কারো পায়ের শব্দে সামনে তাকালো মরিয়ম ,, উকিল আর অফিসের ম্যানাজার আসছে। মরিয়ম কে এমন ভাবে বসে থাকতে দেখে তরিঘরি ম্যানাজার কাছে আসলো। মেডাম কি হয়েছে আপনি এখানে বসে আছেন কেন?? মরিয়ম উকিলের দিকে চোখ ফিরালো, তার পর ম্যানাজারের উদ্দেশ্য বললেন, উকিল কেন?? মেডাম সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। উকিল মরিয়মের উদ্দেশ্য বললেন। বাসা এখনি খালি করতে হবে মেডাম। তার পর একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললেন। আপনাদের সকল সম্পত্তি নিশান আহমেদের নামে এখন।

চলবে ______????

ছোট হয়েছে বলে কেউ মন খারাপ করবেন না। সকলের অনুরোধে ছোট করে দিলাম। যদিও পোস্ট করার কথা ছিল না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here