তোমার স্মৃতি পর্ব -০৭

#তোমার_স্মৃতি
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

নিবিড় ধপ করে চোখ খুলে ফেলল। সে এই দুইদিনে সানজিদার পুরো ডায়রিটা পড়ে দেখেছে। রোহানকে নিয়ে অনেক আবেগ মিশিয়ে কথা লিখে রেখেছে সে। নিবিড় ভেবে অবাক একটা মেয়ে একটা ছেলেকে এতোটা ভালোবাসতে পারে কিভাবে। প্রথম ভালোবাসা আসলেই অন‍্যরকম হয়। ছেলেটা এতো কষ্ট দিয়েছে তারপরও মেয়েটি এতোটা ভালোবাসে। নিবিড়ের খুব দেখতে মন চায় সেই ভাগ‍্যমানকে। যে এতোটা ভালোবাসা পেয়েও ছেড়ে চলে গিয়েছে। নিবিড় নিজের হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে এক পলক তাকিয়ে উঠে পরলো। শশীর বাবা মারা যাওয়ায় শশীও একলা হয়ে গিয়েছে। শশীর বাবার সম্পত্তি সব কেড়ে নিয়েছে ওর চাচা। শশী এখন নিজেই রোজগার করে চলে। ও যেই বাসায় সেটাও অনেক ছোট।

নিবিড় একজনকে কল করে কিছু কথা বলে রওনা দেয় হাসপাতালের উদ্দেশ্য। শশীকে ডেকেছে ও ওর কেবিনে। কিছুক্ষণের মধ্যে শশী চলে আসে। শশী নিবিড়ের সামনে থাকা চেয়ারটা টেনে বসে পরলো। আর গম্ভীর কন্ঠে বলল

“তা ডাক্তার সাহেব আপনি কি কিছু বলবেন।”

নিবিড় গলা পরিষ্কার করে বলল “আসলে আমার বাসায় আমার বয়স্ক মা থাকে। আমি সারাদিন বাসার বাহিরে থাকি। কোনো কোনো দিন আমি তো রাতেও বাসায় ফিরতে পারি না। আমার মা একাই বাসায় থাকে।”

শশী চোখ ছোট ছোট করে সন্দেহের দৃষ্টিতে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলল “তো এগুলো আমাকে বলছেন কেন। আমি কি করতে পারি এগুলো শুনে।”

নিবিড় এবার চোখের চশমাটা একটুকু ঠিক করে শার্টের কলার টেনে আমতা আমতা করতে বলল “না মানে সানজিদাকে যদি আমার বাসায় রাখি তাহলে কি কোনো সমস্যা হবে।”

শশী বসা থেকে দাড়িয়ে পরলো আর বলল “কিহ আপনি কি বলছেন এগুলো। আপনার মাথা কি ঠিক আছে। সানজিদা জীবনেও রাজি হবে না। আর এমনিতেই সমাজের মানুষ ওকে কথা শুনাতে ছাড়ে না। সে ডিভোর্সী এই কথা শুনতে শুনতে ওর কান পচে গেছে। এরপর আপনাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলবে। এগুলো আর মানতে পারবে না ওহ। দয়া করে ওকে একটু শান্তি দিন।

নিবিড় শশীকে পানি এগিয়ে দিয়ে খেতে বলল। শশীও পানি খেয়ে নিলো। নিবিড় এবার বলল “আমি তোমাদের সেইরকম করে আমার বাসায় নিয়ে যাবো না। তোমাদের ভাড়াটিয়া সাজিয়ে নিয়ে যাবো।”

শশী বলল “তোমাদের মানে”

নিবিড় বলল “তুমি আর সানজিদা”

শশী বলল “কিন্তু”

নিবিড় হাত জোর করে বলল “আর না করোনা প্লিজ আমি ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দেও। তুমি রাজি হলেই হবে।”

শশী চুপ করে রইলো। সে বুঝতে পারছেনা কি বলবে। কোনটা ঠিক হবে বা না হবে। শশী আরও কিছুক্ষণ ভেবে হ‍্যাঁবোধক জবাব দিলো।

নিবিড়ের মুখে চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। শশী চিন্তিত হয়ে পরেছে। নিবিড় এবার বলল

“চিন্তা করো না। আমি আর কষ্ট পেতে দিবো না সানজিদাকে। আর সানজিদার কিছু হবেনা। আমি ওর কিছু হতে দিবো না প্রমিস।”

——————

শশী একটা বড় বাড়ির সামনে রিক্স থামালো। সানজিদা অবাক হয়ে বলল “কিরে এতো বড় বাড়িতে ভাড়া নিয়েছিস কেন। আর ভাড়া…..

শশী বলল “বয়স্ক মহিলা থাকে এই বাসায়। ওনি একা থাকে বেশিরভাগ সময়। আর ওনার একটা ছেলে আছে ওনি সময় দিতে পারেনা। তাই ওনি কম ভাড়ায় রাজি হয়ে গিয়েছেন।”

সানজিদা চুপ করে রইলো। শশী ডাক্তার নিবিড়ের কথাটা লুকিয়ে রাখলো। সে বুঝতে দিলো না ওকে যে এটা যে নিবিড় বাসা সেটা ও জানে। সানজিদা ধীরপায়ে এগোতে লাগলো। বাসার সামনে বাগান করা। বাগান থেকে অনেক ফুলের সুভাষ ভেসে আসছে। সানজিদা নিজের হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বাজে। রোদ তেমনটা না থাকলেও আছে। সানজিদা চারপাশে চোখ বুলিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। বাড়িতে ঢুকতেই একটা মহিলা এগিয়ে আসলো। মহিলাটার মুখে একটা চওড়া মুচকি হাসি। সানজিদা আর শশী ওনাকে সালাম দিলো। ওনিও হাসি মুখে সালামের জবাব দিয়ে সানজিদার কাছে এগিয়ে আসলো। সানজিদার থুতনিতে হাত রেখে বলল

“তুমিই সেই সানজিদা”

সানজিদা আলতো হেসে বলল “জি আন্টি”

মহিলাটা মুচকি হেসে বলল “সত্যিই তুমি তো অনেক কিউট”

সানজিদা লজ্জা পেল। মহিলাটা ওদের একটা রুম দেখিয়ে দিলো। রুমটা বাড়ির দোতালায়। পাশাপাশি দুটো রুম। সানজিদা খেয়াল করলো উপরের তালায় আর কোনো রুম নেই। অপর পাশে জিমের জিনিসপত্র দিয়ে ভরা একটা রুম। পুরো রুমটা কাচ দিয়ে ঘেরা থাকায় সানজিদা বাহির থেকে বুঝতে পারলো। আর তারপাশে রুম লক করা। সানজিদা আর কিছু না দেখে রুমে চলে গেল। শশীও ওর রুমে চলে গেল।

সানজিদা রুমে এসে চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। সাদা আর নীল রঙ দিয়ে আবৃত রুমটা। বেডসিট সাদা আর নীলের সংমিশ্রণে। বেড সাইটে একটা ছোট টেবিল। যার উপর একগুচ্ছ কাঠগোলাপ রাখা। সানজিদা অবাক হয়ে কাঠগোলাপ গুলো তুলে নিলো। অপরপাশের বেড সাইট টেবিলে ফুলদানীতে সাদা গোলাপ রাখা। সানজিদা এবার অপর সাইটে গিয়ে গোলাপের সুভাষ নিলো। সানজিদা মুখে একটা মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। সানজিদা এবার বারান্দায় চলে গেল। বারান্দাটাও অনেক সুন্দর আগের বাসার মতো বারান্দায় অনেক গাছ। এগুলো তো ওর যত্ন করা গাছগুলোই। বারান্দায় একটা দোলনাও রয়েছে। দোলনার পাশে একটা বুক সেলফ ও রাখা ঠিক আগের মতো। সানজিদার চোখ মুখ চকচক করে উঠলো খুশিতে।

হঠাৎ শশীর ডাকে ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল “তুই কখন সাজালি এমন করে।”

শশী বলল “সাজিয়েছি এক সময় এখন চল তো আন্টি ডাকছে। কিছু খেয়ে নে। তাছাড়া আবার শরীর খারাপ করবে।”

সানজিদা মুচকি হেসে শশীকে জরিয়ে ধরে ওর গালে টুক করে একটা চুমু খেয়ে বলল “থ‍্যাংকু দোস্ত ঠিক আগের মতো বারান্দাটা সাজানোর জন‍্য আর গোলাপ আর কাঠগোলাপ রাখার জন‍্য।” বলেই নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

শশী মুচকি হাসলো সানজিদার কাজে। সেও নিচে গিয়ে কিছু খাবার খেয়ে নিলো। আজ আর ভার্সিটি যাওয়া হলো না শশীর। সানজিদা শশী আর রেহেলা বেগম মানে নিবিড়ের মা আড্ডা দিতে বসেছে। তিনজন গল্পের আসর জমিয়ে ফেলেছে। এই অল্প সময়েই ওরা একদম বন্ধুর মতো হয়ে গিয়েছে। রেহেলা বেগম অনেক মিশুক আর হাসিখুশি মানুষ। গল্প করতে করতে দুপুর হয়ে গিয়েছে। ওরা গোসল করে ফ্রেস হয়ে দুপুরের খাবারে খেয়ে নিলো।

সানজিদা উপরে রুমে গিয়ে ধপ করে শুয়ে পরলো। শরীরটা দুর্বল থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল সে।

নিবিড় শশীকে কল দিয়ে বলল “কি করছেন?”

শশী হেসে বলল “এতো ঘুরিয়ে না বলে বলতেই তো পারেন সানজু কি করে।”

নিবিড় ঠোঁট কামড়ে আলতো হাসলো।

শশী বলল সানজু অনেক পছন্দ করেছে ওর রুম প্লাস বারান্দাটা। ওর নাকি সাজানোটা ভালো লেগেছে।

নিবিড় বলল “সত্যি”

শশী বলল “হুম সত্যি আমি মিথ্যা বলতে যাবো কেন!”

নিবিড় বলল “আচ্ছা ঠিক আছে। তা বলো এখন সানজিদা কি করে।”

শশী বলল “সানজিদা খাবার খেয়ে ঔষধ খেয়ে এখন ঘুমাচ্ছে। আমি একটু আগেই দেখে এসেছি আমি।”

নিবিড় বলল “ধন‍্যবাদ শালীকা”

শশী অবাক হয়ে বলল “মানে”

নিবিড় আবার হেসে বলল “তুমি বুঝবে না। এখন রাখি তাহলে। তুমিও রেস্ট নেও।” বলেই কল কেটে দিলো নিবিড়।

শশী তবদা খেয়ে বসে রইলো।

চলবে……

( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here