#তুমি_বললে_আজ_২
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ২৬ ( শেষাংশ)
.
“আমাকে কেন বলেন নি? কেন এতদিন কিছু জানতে দেন নি আমায়?”
আমায় কথায় হাসলেন তাসফি ভাই। দু’ হাতে গালে আগলে নিয়ে বললেন,
“কারণ একটাই রুপু, তোর বয়সটা অনেক কম। অনেক বেশিই পিচ্চি তুই।”
সামলাতে পারলাম না নিজেকে। কথা গুলো যেন দলা পাকিয়ে আসলো গলায়। চট করে ওনাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলাম। অনুভব করলাম ওনার জায়গায় নিজেকে। বিচ্ছেদের কথা ভেবেই ভেঙে গেল ভেতরটা। তখন তো বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্কে কোন ধারণায় ছিলো না আমার। কিন্তু এখন? এখন তো এই সম্পর্কে কিছুটা হলেও অবগত।
আমার কান্না থামাতে শান্ত করার প্রয়াস চালিয়ে গেলেন তাসফি ভাই। ওনার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ঝড়ে পড়া অশ্রুগুলো মুছে দিলেন। বললেন,
“রুপুসোনা একবার তাকা আমার দিকে, দেখ আমাকে।”
“আ..আপনি আমাকে এসব কথা আগে কেন জানান নি? কে বলেছে আমি ছোট, আমার বয়স কম? একটা বার কেন জানানোর চেষ্টা করেন নি আমাকে?”
“আরে পাগলী কাঁদছো কেন? কাঁদার মতো কি হয়েছে? হুম!”
“ফুপা… ফুপা ওই কথাটা কিভাবে বলতে পারলো আপনাকে? আর বড় বাবা? বড় বাবা আ….”
আমার কথায় হাসিটা অনেক চওড়া হলো ওনার। অন্য সময়টায় ওনার এই হাসিটা আমার বুকে বিঁধে প্রেমের জোয়ারে ভাসালেও এই মুহুর্তে একদম সহ্য করতে পারলাম না। একদমই সহ্য হলো না ওনার হাসিটা। কিছুটা রাগ, কিছুটা অভিমান নিয়ে ওনার হাতটা গাল থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তার আগেই ভেসে উঠলো ওনার কণ্ঠস্বর।
“তুমি আমার অনেক সাধনার ফুটন্ত ফুল রুপু‚ আমার একান্ত ব্যাক্তিগত জিনিস। আমার এই ব্যাক্তিগত জিনিসটাকে হারিয়ে ফেলার কথা ভাবনাতেও পারি না। তখনও পারি নি, এখনও পারবে না। আজকের পর তো কখনেই নয়।”
ওনার কথাটায় ঠিক কি ছিলো জানা নেই আমার। কিন্তু এক মুহুর্তের জন্য যেন থমকে গেলাম আমি। বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। কান্নাটা যে কখন থেমে গেছে সে খেয়ালই রইলো না আমার। মানুষটার এত আবেগী গলায় ভারী কণ্ঠস্বরের এই কথাগুলো খুব করে টানে আমায়, ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় ব্যাপকভাবে।
আমাকে চুপ হয়ে যেতে দেখে আবারও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে আনলেন, দু’ হাতে পুরো মুখটা মুছে দিয়ে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ ছুঁয়ে দিলেন কপালে। বললেন,
“পেরিয়ে যাওয়া সময়ের কথাগুলো নিয়ে একদম মাথা ঘামাতে হবে না। আমি আছি না? যেভাবে সামলে নিয়েছি সেভাবেই সবটা সামলে নিবো।”
“আপনি যাবার আগে কেন এসব লুকিয়ে গেছেন আমার থেকে? এতকিছু না বললেও একটাবার তো বলতেই পারতেন, ‘ভালো থাকিস রুপু, খুব তারাতাড়ি ফিরবো’। কেন বলেন নি? কেন বারবার আমাকে উপেক্ষা করে চলে গেছেন? যাবার পরও কেন একটি বার আমার সাথে যোগাযোগ করেন করেন নি?”
শ্বাস টেনে নিলাম জোরে করে। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বললাম,
“জানেন? চলে যাবার পর আপনার সাথে একটি বার কথা বলার বলার জন্য কতটা উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলাম, আপনাকে একটিবার দেখার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি। আপনার একটুখানি সঙ্গ পাবার জন্য প্রতিনিয়ত ছটফট করতাম। লুকিয়ে লুকিয়ে আব্বু, বড় বাবার ফোন দিয়ে কত যে ফোন করেছি আপনাকে। রিফাপুর ফোন থেকে প্রতিনিয়ত কত শত ফোন দিয়েছি একটাবার আপনার সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু আপনি? আপনি একটাবারের জন্যও আমার সাথে কথা বলেন নি।”
কথাগুলো বলার মাঝেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। কাঁদো কাঁদো গলায় অস্পষ্ট সুরে অভিযোগ করে গেলাম ওনাকে। একটু সময় নিশ্বাস টেনে নিলাম জোরে জোরে। হাজারো অভিযোগ নিয়ে অভিমানী গলায় আবারও বলে উঠলাম,
“কেন বলেন নি তাসফি ভাইয়া? একটি কেন কথা বলেন নি আমার সাথে? আপনার একটুখানি কণ্ঠ স্বরেই না হয় সান্ত্বনা দিতাম নিজেকে। আপনি খুব খারাপ তাসফি ভাইয়া, আপনি খুব খারাপ….”
এক মুহুর্ত সময় অতিক্রম করলেন না উনি, দু’ হাতে টেনে নিলেন নিজের বুকে। এক হাতে মাথায় বুলিয়ে শান্ত করার প্রয়াস চালিয়ে গেলেন। বললেন,
“এ্যাই পাগলী মেয়ে, আবারও কাঁদছো কেন? বললাম না শান্ত হতে।”
বলে একটু থামলেন উনি। আমার ফুঁপানো একটু কমে আসলে বললেন,
“তখন তো আমি নিজের মধ্যেই ছিলাম না রে পাগলী। বারবার মনে হচ্ছিলো তোমার দিকে একটিবার তাকালে, তোমার সাথে একটু কথা বললে নিজেকে সামলাতে পারবো না, যেতে পারবো না তোমাকে ফেলে রেখে। আর চলে যাবার পর? ওখানে যাবার পর তো নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম, তোমার শূন্যতা বারংবার কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো আমাকে। আমাকে নিয়ে তোমার করা পাগলামি গুলো বারবার ভেসে উঠছিলো। তোমার সাথে একটুখানি কথা বললে যে নিজেকে সামলাতে পারতাম না রুপু, কিছুতেই সামলাতে পারলাম না।”
একটু থামলেন উনি। কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলেন। বললেন,
“তখন তোমার করা এই পাগলামিতে সায় দিলে তোমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে থাকতে পারতাম না রুপু। দূরত্ব বজায় না রাখলে একেবারেই হয়তো হারিয়ে ফেলতাম তোমাকে। তোমাকে একটু ভুলে থাকার জন্য ব্যস্ত রাখতাম নিজেকে। সারাদিন ভার্সিটি, পড়াশোনা, ল্যাব নিয়ে পরে থাকতাম। তবুও তোমাকে এতটুকুও ভুলে থাকতে পারি নি, বরং নতুন ভাবে প্রতিনিয়ত অনুভব করেছি তোমাকে। ছায় সাত মাস পর নিজের কাছে নিজেই ব্যার্থ হয়ে পরেছি। কোন উপায় না পেয়ে তোমাতেই স্বস্তি পেতে চেয়েছি। কিন্তু তুমি? তুমি তো অভিমানের পাহাড় জমিয়ে অবহেলা করে গেছো আমাকে।”
ধুক করে উঠলো ওনার শেষ কথাটা শুনে। মানুষটা আমার কাছে একটু স্বস্তির প্রত্যাশা চেয়েছে, আর আমি কি না তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছি? রাগ, অভিমানের রেশ নিয়ে নিয়ে ইগনোর করে গেছি প্রতিনিয়ত?
কান্না থামিয়ে স্বাভাবিক করে নিলাম নিজেকে। ধরা গলায় বলে উঠলাম,
“আপনিই তো আমার আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চান নি, কথা বলতে চান নি আমার সাথে। তাই আমিও গুটিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে। ইগনোর করে গেছি প্রতিনিয়ত।”
“আর এখন? এখনো কি অভিমানী অভিযোগ জমা পরে আছে আমার নামে?”
“হুম! অনেক….”
আমার কথায় হাসলেন তাসফি ভাই। এতক্ষণে দুজনেই যেন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছি। হাসতে হাসতেই উনি বলে উঠলেন,
“ওও আচ্ছা…. তা কি করলে আমার এই গাধীর অভিমানী অভিযোগ গুলো ঝড়ে পড়বে?”
“জানি না আমি।”
“কি জানো তুমি, হ্যাঁ? আচ্ছা জানতে হবে না কিছু, তবে তুমি বললে কিন্তু গত রাতের করা আদর গুলো রিপিট করে অভিমানের উপসংহার করতে পারি।”
“অ*সভ্য লোক একটা। এসব কি বলছেন?”
“আচ্ছা… আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আবার ভালো মানুষ, তাই কিছু করলাম না এখন। কিন্তু চুমু? টপাটপ কয়েকটা চুমু খেতেই পারি।”
“ছিঃ! অ*সভ্য বজ্জাত লোক, ছাড়েন আমাকে…. ”
ছটফটিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলেও পারলাম। উনি ছাড়ার বদলে আরও আঁকড়ে নিলেন। আগের চেয়েও শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরতেই শরীররে ব্যাথা যেন জাগ্রত হয়ে উঠলো। অজান্তেই আত্মদান বেরিয়ে এলো মুখ ফুটে।
“আহ্! ব্যাথা লাগছে তো, ছাড়েন প্লিজ!”
সাথে সাথে হাত দু’টো আগলা হলে এলো ওনার। আলগোছে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
“খুব বেশি খারাপ লাগছে রুপু?”
“উহুম!”
বেশ কিছু সময় সময় অতিক্রম হতে লাগলো। বাইরে থেকে সূর্যের আলোর রেখা তীক্ষ্ণ হতে লাগলো, রাস্তায় চলা গাড়ি ও মানুষের আওয়াজও ভেসে ভেসে আসতে লাগলো। হুট করে বাসার কথা মনে পড়তেই উদ্বীগ্ন গলায় বললাম,
“বাস্…বাসায় যাবো কখন? সবাই হয়তো টেনশনে আছে, বাসায় তো বলাও হয় নি আমারা….”
“রিলাক্স রিলাক্স! এত হাইপার হতে হবে না রুপু। কাল রাতে বড় মামাকে মেসেজে জানিয়ে দিয়েছি। ফোনে কথা বলার মতো নেটওয়ার্ক তো আর ছিলো না।”
টেনশন হলেও এতক্ষণে যেন কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম। এর আগে কখনোই একা একা বাইরে থাকা হয় নি আমার। বাসার সবাই একটু হলেও টেনশনে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“এর আগে তো একা একা কোথায় থাকা হয় নি, বাসার সবাই টেনশনে থাকবে তো। প্লিজ তাড়াতাড়ি বাসায় চলেন।”
“বাসার সবাই জানে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়েই আছো। তাই এতটুকুও কেউ টেনশন করবে না তোমাকে নিয়ে। সো একদম রিলাক্সে থাকো, আর আমাকে নিয়ে একটু বেশি বেশি ভাবো।”
.
নতুন বউয়ের মতো হাজারো লজ্জা ও অস্তিত্ব নিয়ে শাড়ির আঁচলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে চুপচাপ বসে আছি মোড়ায়। দেখে চলেছি আন্টির করা কাজগুলো। সামনেই মাটির চুলোয় রান্না করছেন। তাসফি ভাইয়া আঙ্কেলের সাথে বাইরে গিয়েছেন। উদ্দেশ্য বাইকের তেল কেনা। ভান গাড়ি নিয়ে এখন থেকে পনের বিশ মিনিটের রাস্তা, তাহলেই নাকি উপজেলার মফস্বল শহর, সেখানেই তেলের পাম্প আছে।
ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আঙ্কেলকে সাথে নিয়ে তাসফি ভাই বেরিয়ে যেতেই আন্টির কথায় এখানে বসে পরি। দু’ একটা কথায় গল্প শুরু হয় আন্টির সাথে। বলতে থাকেন ওনাদের নিত্যদিনের টানাটানি নিয়ে সংসারের প্রতি দ্বায়িত্ব পালন করার কথা, অতি কষ্টে বড় করে ওনাদের মেয়েকে বিয়ে দেবার কথা। আমার থেকেও শুনতে থাকেন পরিবারের মানুষের কথাগুলো। কথার মাঝেই আমার মুখে দিকে তাকিয়ে হঠাৎ থেমে যান আন্টি, একটু সময় নিয়ে বলেন, আঙ্কেলের সামনে যেন ভালোভাবে মাথায় আঁচল দিয়ে রাখি, গলার লালচে দাগগুলো দেখা যাচ্ছে। ঘোমটা দিয়ে রাখলে আর দেখা যাবে না।
আন্টির হঠাৎ এহেন কথায় চমকে উঠি। বিস্মিত নয়নে আন্টির দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে শাড়ির আঁচল টেনে মাথায় ঘোমটা দেই। আমার কান্ড দেখে কিছুটা হেঁসে উঠেন আন্টি। তারপরই কিছুটা চুপচাপ হয়ে বসে আছি।
.
প্রায় এক ঘন্টা সময় নিয়ে তাসফি ভাই ফিরলেন আঙ্কেলের সাথে। সাথে টুকটাক বাজারও করে এনেছেন। আন্টিকে দিতেই কিছুটা রাগ দেখালেন, আঙ্কেলকে বকাঝকাও করলেন। তাসফি ভাই বুঝিয়ে সুজিয়ে সমলে নিলেন ব্যাপারটা। যতই হোক, ওনাদের এই টানাপোড়েনের সংসারেই ঝড়বৃষ্টির রাতে আমাদের সাহায্য করেছেন। ওনাদের এতটুকু সাহায্য করা যেতেই পারে। তাসফি ভাইয়া তখন চলে আসতে চাইলেন, কিন্তু আঙ্কেল আর আন্টি মিলে কিছুতেই আসতে দিলেন না। সকালের খাবার না খাইয়ে কিছুতেই আসতে দিবেন না এটাও বলে দিলেন। উপায় না পেয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলাম শাড়িটা পাল্টে নিতে। পিছন পিছন তাসফি ভাইও ঘরে ঢুকে গেলেন। ওনাকে আসতে দেখেই বলে উঠলাম,
“আপনি আসলেন কেন? শাড়ি পাল্টাবো তো।”
আমার কথায় কোন মনোভাব পরিবর্তন হলো না ওনার। অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইলেন শুধু। চোখ টিপটিপ করে ওনার দিকে তাকিয়ে আবারও বললাম বাইরে যেতে। তাতেও যেন কোন কথা কান পর্যন্ত পৌঁছলো না ওনার। চট করে এগিয়ে এলেন আমার কাছে। দু’হাতে আঁকড়ে নিলেন নিজের সাথে। বললেন,
“এভাবে বউ সেজে মাথায় ঘোমটা দিয়ে চোখের সামনে ঘুরঘুর করছিস কেন? বেয়াদব! জানিস না এভাবে দেখলে সামলাতে পারি না নিজেকে। রাতের মতো আবারও কি আদর খাবার শখ জাগছে? বল তাহলে আরও ঘন্টা খানিক পর বাসায় জন্য রওনা দেই।”
থতমত খেয়ে গেলাম ওনার কথায়। স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম। ইস্! এই বজ্জাত লোকটা এত বজ্জাত কেন? সারাক্ষণ এত উল্টা পাল্টা কথা কিভাবে বলতে পারেন? উফ্! অ*সহ্য লোক একটা।এখন ওনাকে কিভাবে বলবো ওনার দেওয়া গলার দাগগুলো লুকোতেই এভাবে ঘোমটা দেওয়া।
হাজারো লজ্জা ও অস্তিত্ব নিয়ে সাতপাঁচ বোঝালাম ওনাকে। বাসায় যেতে দেরি হবে বলে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে বললাম। আমার দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বেরিয়ে যান রুম ছেড়ে, তাতে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। চটপট জামাটা পড়ে শাড়ি পাল্টে নিলাম। মাথায় সুন্দর করে ওড়নাটা পেচিয়ে নিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলাম রুম ছেড়ে।
যাবার সময় আন্টি আঙ্কেলকে টাকা দিতে চাইলেও কিছুতেই নিতে রাজি হলেন না ওনারা। কিছুটা রাগ দেখিয়ে নানান কিছু বললেন তাসফি ভাইকে। শেষমেশ হার মেনে নিলেন উনি। বিদায় জানাতেই অনেক কিছু বললেন আমাদের। সংসার জীবন নিয়ে দোয়া করে একসাথে এভাবেই পাশে থাকার কথা বললেন। এদিকে আসলে আবারও আসতে বললেন। ওনাদের আন্তরিকতা দেখে গত রাতের সাথে যেন কিছুতেই মেলাতে পারলাম না। এতটুকু সময়ে এতটা আপন করে নিবেন সেটা ভেবেই যেন ভালোলাগায় ছেয়ে গেল মনটা।
ওনাদের বিদায় দিয়ে বাইকে বসতেই উনি বাইক ছেড়ে দিলেন। কিছুদূর যেতেই রাস্তা খারাপ হওয়ার ঝাঁকি হতে লাগলো। ভাঙা রাস্তার সাথে গত কালের বৃষ্টির পানি জমিয়ে কাঁদাময় হওয়া। বাইকের ঝাঁকুনিতে শরীররে ব্যাথাটা তিরতির করে বেড়ে গেল হঠাৎই, ব্যাথায় কাতর হয়ে উঠলো পুরো শরীর। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে দু’হাতে খামচে ধরলাম তাসফি ভাইয়ের পিঠ ও বুকের কাছটায়। উনি হয়তো বুঝতে পারলেন আমার অবস্থা। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বাইক থামালেন, আস্তে করে বললেন নেমে দাঁড়াতে। ততক্ষণে ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় এসে পরেছি। তবুও কিছু বললাম না ওনাকে। নেমে দাঁড়ালাম বাইক থেকে। উনিও সময় না নিয়ে নেমে দাঁড়ালেন। এক হাতে আমার হাত ধরে, অপর হাত গালে রাখলেন। বললেন,
“খারাপ লাগছে খুব?”
“উহুম!”
“গাধী কোথাকার, নিজের সমস্যার কথা বলতেও লজ্জা পেতে হয়।”
কিছুটা ধমকে উঠলেন উনি। কিছু না বলে চুপ করেই রইলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম ওনাকে। মিনিট দুয়েক পর সরে গেলেন একটু। গাল থেকে হাত সরিয়ে হাতের বাঁধনটা দৃঢ় করলেন। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে গভীর চোখে আমার দিকে তাকালেন। ঠোঁটের কোণের হাসিটা প্রসস্ত করে বলে উঠলেন,
”চলো একটু হাঁটি, পাশাপাশি হাতের ভাজে ভাজে না রেখে, শুনো বৃষ্টিস্নাত গোধুলির শেষে না ছুয়ে অনুভবের আদর মেখে।
এসো পাতায় মিশে থাকা সুখগুলোয় সাজি তোমাতে আমাতে প্রিয় অম্বরে।”
.
.
চলবে…..