তুমি আমার প্রাণ পর্ব -০৭+৮

#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ০৭
#Mitu-মিতু

“শুন সেলিনা! আমার আম্মার গায়ে আর যদি ভুলেও কখনো হাত তুলিশ তাহলে তোকে আমি জ্যান্ত পুতে ফেলবো কিন্তু.. মনে রাখিস”রিশার ঘর থেকে বের হয়ে মজিদ মিঞা সেলিনাকে বলে উঠলো কথাটা।

“শুধু মেয়ের কথা ভাবলেই হবে না মনে রাখবেন আপনার একটা ছেলে আছে….ঐ আপদ আমি বাড়িতে রাখবো না….আপনি ওর মায়ের কাছে ওকে রেখে আসেন”

“তোর সাহস খুব বেড়ে গেছে দেখছি…আমার আম্মা আমার খায়…আমি কি করবো না করবো তা আমি ঠিক করবো তুই না…”

“যত্তসব আদিখ্যেতা। ” রাগে গজ গজ করতে করতে সেলিনা বেগম নিজের ঘরে চলে গেলো।

মজিদ মিঞা আরো কিছুক্ষণ রিশার ঘরে থেকে তিনিও ঘরে গেলেন ঘুমাতে। শুনশান গভীর রাত,,চারিদিকে ঝি ঝি পোকার ডাক।রাতে প্রকৃতিতে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা।

_____________

সেদিনের পর কেটে গেছে কয়েকমাস।তাসরিফ S.S.C. পরিক্ষার পর ইন্টার লেভেলে পড়া শুরু করেছে। মাঝে মাঝে রসুলপুর গ্রামে আসলে দেখে যায় আনন্দপুর গ্রাম। রিশার সাথে তার আর দেখা হয়নি সেদিনের পর। বাবার মাধ্যমে জানতে পেরেছে রিশা এখন ভালোই আছে। মজিদ মিঞা তাকে বাবার স্নেহ ভালোবাসায় আগলে রেখেছে। তবুও তাসরিফ ভাবে পুতুল সত্যি ভালো আছে তো।মজিদ মিঞা রিশাকে আগলে রাখলেও সেলিনা বেগমের ক্ষোভ থেকে সবসময় রিশাকে বাঁচাতে পারেনা।পুরুষ মানুষ ঘরের কোণে বসে থাকলে তো আর সংসার চলবে না।যখন সে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে সেই সময়টা রিশার ভালো যায় না। সেদিনের পর থেকে রিশার খাবারের কষ্ট না হলেও সেলিনা বেগমের হাতের মার সহ্য করতে হয়েছে অনেক। ছোট মায়ের ভয়ে রিশা কাউকে বলে না মারের কথা। সেলিনা বেগম যখন রিশাকে মারে তখন তাকে শাসিয়ে বলে

“যদি তোর বাপেক বলিস আমি তোকে মেরেছি তাহলে কিন্তু তোর কপালে আরো দুঃখ আছে মনে রাখিস ”

ছোট শরীরে মারের ব্যথা যখন অসহ্য হয়ে ওঠে তখন ঘরের কোণে বসে কাঁদে অসহায় মানুষের মতো।তার মনে প্রশ্ন উঠে সত্যি কি তার মা ভালো না। সবার মায়ের মতো তার ভালো মা নেই কেনো? রিশা এবার ক্লাস টু তে উঠেছে। শীত পেরিয়ে প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মের খরা।রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় দেখা যায় কত মানুষ এই কড়া রোদে কাজ করছে মাঠে জীবিকার তাগিদে। গ্রীষ্মের দুপুরে রিশা আর জুই রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর গল্প করছে।স্কুল ছুটির পর এখন তারা বাড়ি যাচ্ছে। দুজনের হাতে দুটো ছোট সাইজের ছাতা।মেয়ের রোদে কষ্ট হবে দেখে মজিদ মিঞা ছাতা এনে দিয়েছে।

“ছোট মা বাবা আসেনি শহর থেকে?”

ভয়ার্ত কন্ঠে সেলিনা বেগমকে জিজ্ঞেস করলো রিশা। বাবা না থাকলে যে খাবারের কথা বলতে পারে না।সেলিনা বেগম রিয়াদকে নিয়ে ঘরে শুয়ে আছে। রিশার কথা শুনেও না শুনার ভান করে থাকলো সেলিনা বেগম। প্রচন্ড ক্ষিধে থাকা সত্যেও রিশা তার ছোট মাকে খাবারের কথা বললো না। গ্রাম আর শহরের বাচ্চাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। শহরের বাচ্চারা ঘরকুণো হলেও গ্রামের বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায় সীমাহীন চঞ্চলতা। গ্রামের মেঠো পথে ধ্বনিত হতে থাকে তাদের আনন্দপূর্ণ কন্ঠস্বর।যে বয়সে সবাই দলবদ্ধ হয়ে খেলা ধুলা করে সে বয়সে রিশা ভয়ে চুপসে তাকে। রিশা আর দাঁড়ালো না ওখানে। রান্নাঘরে চলে গেলো।সকালে ছোট মা রান্না করেছে তবে সেগুলো এখন রিশা খুজে পাচ্ছে না। একটা তাকের ওপর ঢেকে রাখা বাটি দেখে সেখানে গেলো।ঢাকনা সরিয়ে দেখলো সেখানে পান্তা ভাত।আর কোনো খাবার খুজে না পাওয়ায় আর প্রচন্ড ক্ষুধা থাকায় রিশা পান্তা ভাতই খেয়ে নিলো।অথচ সকালে বাবার সাথে খাওয়ার সময় মাংস ভাত খেয়েছে। রিশা ভাবলো ছোট মা তাহলে লুকিয়ে রেখেছে খাবার। রিশা ভাত খেয়ে রান্নাঘরে রাখা অপরিষ্কার বাসন গুলো ধুতে লাগলো।এখন না ধুলেও শেষে ওকেই এটা করতে হবে তাই এখনই করে রাখলো।বাড়ির উঠান ঝাড় দিয়ে গোসল করে ঘরে আসলো।ছোট ভাই রিয়াদ ঘুম থেকে উঠলে রাতে না ঘুমানো পর্যন্ত সকল কাজ রিশার জন্য বরাদ্দ।
পরিস্থিতির কাছে বয়সও হার মানে। কেউ ৭ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সাথে আহ্লাদ করে তো কারো আবার এই বয়সেই সমস্ত শখ-আহ্লাহ চাপা পড়ে যায়।

“রিশা বাইরে আয়,,,দ্যাখ আমের কুড়ি এনেছি।”

জুইয়ের ডাকে রিশা ঘর থেকে বের হলো।ছোট ছোট আমের কুড়ি দেখে জিভে পানি আসলো।ঝাল দিয়ে মাখালে মন্দ হয় না ভেবে জুইকে বললো

“থাম জুই!রান্নাঘর থেকে লবন মরিচ আনি।ঝাল ঝাল খেতে সেই লাগবে”

“আচ্ছা ”

রিশা রান্নাঘরের সামনে বসে আম কাটছে আর জুইয়ের সাথে গল্প করছে। কাটা শেষে দুজন মিলে আনাড়ি হাতে আম মাখিয়ে খেতে লাগলো।

“রিশা আমার মায়ের জন্য একটু নিয়ে যাই।দাদি বলেছে আমার ভাই আছে মায়ের পেটে। মায়ের এখন টক,,ঝাল খেতে মন চায়।সেদিন দেখেছি তেতুল খেতে।আম মাখানো ভালো লাগতে পারে আমার ভাইয়ের। ”

“আচ্ছা তুই বস।আমি একটা বাটি আনি।”

রিশা উঠে রান্নাঘরে গেলো বাটি আনতে। বাটি আনার সময় অসাবধানতার ফলে চৌকাঠে পা বেধে উঠানে উপুড় হয়ে পড়ে গেলো।হাতে থাকা বাটির ঝন ঝন শব্দে ঘুমন্ত রিয়াদ জেগে উঠে কাঁদতে শুরু করলো। ঝনঝন শব্দে সেলিনা বেগমেরও ঘুম ভেঙে যায়।কোথায় কি হলো দেখার জন্য বাইরে এসে দেখে রিশা উঠানে পরে আছে। উপুড় হয়ে পড়ে যাওয়ার ফলে দাঁতের সাথে ঠোঁট লেগে ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু রিশার জন্য সেলিনা বেগমের ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় সে রেগে গেলো।

“হা*জাদি*।শুয়ে বসে খেয়ে কোনো কাজ নাই।এই দুপুরে তুই আমার ঘুমের সাথে শত্রুতা করিস।” বলেই সেলিনা বেগম রিশাকে তুলে জোরে একটা চড় মারলো।

“ভাবি রিশার দোষ নাই। ও তো দরজার সাথে লেগে পড়ে গেছে। ”

জুইয়ের কথায় সেলিনা বেগম জুইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।

“তুই এখন বাড়ি যা জুই”

“এই তুই রান্নাঘরে কি করছিলি।এখন কি কাজ এই ঘরে। ”

“ছোট মা আম মেখে খাওয়ার জন্য এসেছি।”কান্নাস্বরে বললো রিশা।

” আজকে তোকে আমি জন্মের মতো আম খাওয়াবো”

উঠানে ছোট বাটির মধ্যে মরিচ গুড়া দেখে তা হাতে নিলো সেলিনা। রিশার দুগাল চেপে ধরে সবটুকু গুড়া মুখের মধ্যে ঢেলে দিলো। যতক্ষণ না মুখের মধ্যে গেলো ততক্ষণ পর্যন্ত মুখ চেপে ধরে রাখলো।মরিচ গুড়া চোখে পড়ায় রিশার চোখ জ্বলে যাচ্ছে। মুখ ধরে রাখায় চিৎকার করে কাঁদতে না পারায় গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে লাগলো।যখন সেলিনা রিশাকে ছেড়ে দিলো তখন রিশা বাবা বলে চিৎকার করে উঠে উঠানে গড়াগড়ি শুরু করেছে।রিশার চিৎকারে আর জুইয়ের বলা কথায় কামালের বউ দৌড়ে মজিদ মিঞার বাড়ি আসলো।ছোট রিশাকে ছটফট করতে দেখে তার প্রান পাখি উরে যাওয়ার মতো অবস্থা।

“এই ছোট পরীর সাথে এমন অমানুষের মতো ব্যবহার আপনি কি করে করতে পারেন খালা? একটু মায়া লাগে না?”

কামালের বউ রিশাকে তুলে নিয়ে কলের পাড়ে গেলো।এক বালতি পানি তুলে নিয়ে রিশার মুখে ঢালতে লাগলো।জুইকে বাড়ি থেকে চিনি আনার কথা বলেছে।জুই চিনি আনলে তা রিশার মুখে ঢেলে দেয় জুইয়ের মা। রিশার অবস্থা এমন ছিলো এই বুঝি সে মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে আসলো।

“আমার মুখ জ্বলে যাচ্ছে ভাবি।চোখ জ্বলছে।” বলে রিশা কাঁদতে লাগলো।

রিশার এমন হৃদয় কাপানো কান্না দেখে জুইয়ের মায়ের চোখেও পানি চলে এসেছে।

“আপনি এমন কি করে করতে পারলেন খালা।একটুও মায়া লাগে না এমন নিস্পাপ একটা বাচ্চা দেখে। ”

“ওতো মায়া লাগা লাগবে না আমার। তুমি এখানে কি জন্যে। তুমি তোমার বাড়ি যাও।এটা আমার বাড়ির বিষয়। ”

“বাড়ি যার হয় হোক।আমি এখন রিশাকে নিয়ে গেলাম।খালু আসলে আজ সব বলবো আমি।এ কেমন অমানুষ মহিলা এনেছে। ”

“খবরদার উনাকে এই কথা বলবে না কালামের বউ।তুমি এখন বাড়ি যাও।আর ও কারো বাড়ি যাবে না।”রিশাকে দেখিয়ে সেলিনা বেগম বললো।

জুইয়ের মা অনেকক্ষণ রিশাকে নিয়ে বসে থাকলো।জ্বলা-পোড়া কমানোর জন্য মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ালো,মুখে পানি ঢাললো।রিশার চোখ-মুখ জ্বলা কমলেও কাটা ঠোঁটে গুড়া লাগায় সেখানে আগুন ধরে গেছে। দুকান দিয়ে গরম ঝাঝ বের হচ্ছে। এতক্ষণ চিৎকার করলেও এখন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। দুনিয়া সবার কাছে সুখকর হয় না।এটা বুঝে গেছে রিশা। এ কেমন জীবন তার। তার ভালো মা থাকলে কি তাঁর সাথে এমন করতো? নিশ্চয়ই জুইয়ের মা যেমন জুইকে ভালোবাসে তেমনই ভালোবাসতো।মজিদ মিঞা জমির জন্য কীটনাশক আনতে গেছে শহরে।যাওয়ার সময় সাথে করে জমিতে ফলানো ধান নিয়ে গেছে বিক্রি করার জন্য। সকল কাজ শেষ করে মজিদের বাড়ি ফিরতে বিকেল গড়িয়ে গেছে। জুইয়ের মা অনেকক্ষণ রিশাকে নিয়ে বসে ছিলো।মজিদ মিঞা আসতে দেরি করায় সে বাড়ি চলে গেছে।যাওয়ার সময় রিশাকে সাথে নিতে চাইলেও সেলিনা বেগমের জন্য পারেনি।জুইয়ের মায়ের প্রার্থনা এটাই এমন মহিলা যেনো আর দ্বিতীয়টা না আসে পৃথিবীতে।

রিশা তার ঘরে শুয়ে আছে।শব্দহীন কান্না চলমান। সেলিনা বেগম বড় মুখ করে কথা বললেও সে ভয়ে আছে মজিদ মিঞা দেখলে কি হবে তার।কি করা যায় ভাবতে ভাবতে একটা ফন্দি এটে বসলো।পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শয়তানি বুদ্ধিতে সবার থেকে এগিয়ে থাকে।রিয়াদকে নিয়ে বাড়ির সামনে সেলিনা বেগম মজিদ মিঞার আসার অপেক্ষা করছে। মজিদ মিঞাকে দেখার সাথে সাথে রিয়াদকে তার কোলে দিয়ে সেলিনা বেগম বললো

“আমার বড়ভাই আপনাকে আমারে বাড়ি যেতে বলেছে। ”

চলবে……#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ০৮
#Mitu-মিতু

“আমার বড়ভাই আপনাকে আমারে বাড়ি যেতে বলেছে। ”

“হঠাৎ এই সময়ে আমাকে কোন দরকারে ডাকলো তোর ভাই? ”

সেলিনা বেগম বললো

“আমাকে কিছু বলেনি।আপনি গিয়ে দেখে আসুন কেনো ডাকছে। এখনই যান।”

“আমার আম্মা কোথায়? স্কুল থেকে এসে খেয়েছে…?”

“হ্যা হ্যা খেয়েছে। আমি দিয়েছিলাম। এবার আপনি তাড়াতাড়ি যান”

মজিদ মিঞা বাড়ির ভেতরে ঢুকে হাত-মুখ ধুয়ে নিলো।রিশার ঘরের দিকে যাওয়া দেখে সেলিনা বেগমের গলা শুকিয়ে গেলো।

“রিশা ঘুমিয়েছে। আমি দেখেছি।আপনি আর দেরি করেন না তো।না জানি কেনো ডেকেছে আমার ভাই। ”

মজিদ মিঞাকে বাঁধা দিয়ে সেলিনা বললো কথাটা।মজিদ মিঞা রিশার ঘরে আর না গিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলো।সেলিনা বেগম হাফ ছেড়ে বাচলো।রিয়াদকে নিয়ে নিজের ঘরে গেলো চলে।

_______________

ভোরের সময় পাখির কিচিরমিচির ডাকের সাথে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের আগমন হলো। আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে জেগে উঠলো রিশা।কাটা ঠোঁটে মরিচের গুঁড়োর ঝাঝ না থাকলেও ঠোঁট ফুলে আছে। বিছানা থেকে উঠে রিশা ঘরের বাইরে আসলো। সকালে একটু বাড়ির আশেপাশে দিয়ে হাঁটতে লাগলো।

______________

সাভার নানির বাসায় গুরু-গম্ভীর তাসরিফ নিজের পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত। নিজের স্বপ্ন পূরনের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে সে। বাবা-মা,, ফুপির ভালোবাসার অভাব নেই তার জন্য। সাথে আছে নানা-নানি। তাসরিফ কে নিয়ে যখন সবাই আনন্দিত হয়,,ভালোবাসে তখন তার পুতুলের কথা মনে হয় খুব।পুতুল থাকলে তাকেও তো সবাই আদর ভালোবাসা দিতো ওর মতোই। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তাসরিফ একটু দৌড়াদৌড়ি করে এসে ফ্রেশ হয়ে কোচিং-এর জন্য রেডি হয়ে নিলো। ঘর থেকে বের হতে দেখে নানুমনি তাসরিফ কে বললো

“নানুভাই নাস্তা করে যাও!”

“তাড়াতাড়ি দাও নানুমনি।আজকে একটু তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। টেষ্ট এক্সাম আছে। ”

তাসরিফ সকালের নাস্তা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলো। বয়ঃসন্ধির বয়স পেরিয়ে এখন সে ৫ ফিট ৭ ইঞ্চির এক সুদর্শন যুবক। কোচিং শেষে তাসরিফ ক্লাসে গেলো।ছাত্র হিসেবে সে ব্রিলিয়ান্ট। বন্ধু সমাবেশে আছে সে সহ আরো পাঁচজন।

“চল তাসরিফ আজ একটু ঘুরে আসি।”

ক্লাস শেষে তাসরিফ বন্ধুদের সাথে কলেজ থেকে বের হয়েছে।বন্ধু নীলের কথায় তাসরিফ বাঁধা দিলো না।অনেক দিন হলো পড়াশোনার প্যারায় পরে কোথাও যাওয়া হয়নি। মেয়ে ফ্রেন্ড তাসরিফের পছন্দ না হলেও ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলে দুজন মেয়ে আছে। নীল,,রাজ আর রনির সাথে সুমি আর নুপুরের আগে থেকে পরিচয় থাকায় তাসরিফ কিছু বলেনি। সবাই মিলে অনেকক্ষণ ঘুরে ফিরে একটা থ্রী স্টারে বসলো ওরা।সবাই হৈ-হুল্লোড় করলেও তাসরিফ চুপচাপ। বড়লোকের একমাত্র মেয়ে নুপুর মনে মনে তাসরিফ কে পছন্দ করে,, ভালোওবাসে। কিন্তু তাসরিফ চুপচাপ,, গুরু গম্ভীর হওয়ায় তাকে মনের কথা বলতে সাহস পায় না।পাছে যদি ওর সাথে কথা না বলে। খেতে খেতে নুপুর তাসরিফ কে বললো

“আচ্ছা তাসরিফ তোর কাউকে পছন্দ হয় না? আই মিন ভালো লাগে না? ”

তাসরিফ নিজের খাওয়ায় ব্যস্ত ছিলো।সবাই গল্প করলেও তার এগুলো নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। নুপুরের প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো।

“ভালো লাগবে না কেনো,,সবাইকেই ভালো লাগে। ”

“আমি ওমন ভালো লাগার কথা বলিনি।আমি বললাম যে কাউকে ভালোবাসতে মন চায় না”

“না আমার মন চায় না!আর কখনো এমন কথা তুলবে না নুপুর এগুলো আমার পছন্দ না। আমি এখন শুধুমাত্র আমার স্বপ্ন নিয়ে ভাবি।”

“আরে তাসরিফ তুই ওর কথা বাদ দে!”

“শোন তোরা এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে থাক!আমি গেলাম। সামনে বোর্ড এক্সাম পড়া আছে। ”

বলে তাসরিফ নিজের ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তাসরিফ কে চলে যেতে দেখে নুপুরের মন খারাপ হয়ে গেলো। রাজ বললো

“দ্যাখ নুপুর আর কখনো এমন প্রশ্ন ওকে করবি না! জানিসই তো ও এগুলো পছন্দ করে না। দিলি তো ওকে রাগিয়ে। ”

নুপুরের মুখ কালো করা দেখে আর কেউ কিছু বলেনি।ওরা আর কিছুক্ষণ ওখানে থেকে তারপর নিজ নিজ বাড়ি চলে গেলো।ভালো ছাত্র হিসেবে ওদের সবারই নিজের পড়া নিয়ে এক আলাদা টেনশন আছে।

_____________

মজিদ মিঞা রাতটা শ্বশুর বাড়ি কাটিয়ে পরেরদিন দুপুরে নিজ বাড়ি এসেছে। রিশাকে স্কুল থেকে আসতে দেখে তাকে ডাকলো মজিদ।

“আম্মা আমার কাছে আসো তো।”

বাবার ডাকে রিশা সেখানে গেলো।রিশার ফোলা,,লাল ঠোঁট দেখে জিজ্ঞেস করলো

“তোমার ঠোঁটে কি হয়েছে আম্মা? ”

“বিষ পিপড়া কামর দিয়েছে বাবা।”

“আম্মা যাও,,গোসল করে খেয়ে নেও।আজকে তোমাকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে যাবো।”

বাবার কথায় রিশা খুশি হয়ে গেলো।তাড়াতাড়ি গোসল,,খাওয়া দাওয়া শেষ করে মজিদ মিঞার হাত ধরে ঘুরতে বের হলো অনেকদিন পর।সাথে রিয়াদও আছে। এই যাত্রায় সেলিনা বেগম বাঁধা দিলো না,, তেমন কিছু বললোও না।

“বাবা!আমায় চুড়ি কিনে দাও।লাল আর কালো।”

“আর কি নিবে আম্মা? ”

“আর কিছু নিবো না বাবা।চুড়ি আমার ভালো লাগে। সেদিন জুইয়ের অনেক চুড়ি দেখেছি। ”

রিশার কথাশুনে মজিদ মিঞা লাল,,কালো সাথে আরো কয়েক ডজন চুড়ি কিনে দিলো।এতগুলো চুড়ি দেখে রিশা খুশিতে আত্মহারা। মেলা থেকে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অনেকক্ষণ ঘুরে কিছু ভাজাপোড়া কিনে বাড়ি আসলো মজিদ মিঞা। রিশার হাতে এতগুলো চুড়ি দেখে ছোট মেয়ের সাথেই হিঃসায় গা জ্বলে উঠলো সেলিনা বেগমের।

“বলি টাকা কি গাছের পাতা নাকি হ্যা? এতো টাকা খরচা না করলে হচ্ছিলো না?” ত্যাড়া চোখে তাকিয়ে বললো সেলিনা বেগম।

“আমার আম্মার পছন্দের জিনিস কিনেছি আমি।তুই চুপ থাক। টাকা থাকলো না শেষ হলো সেগুলো আমার ভাবনা।”

চলবে……

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here