প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব -৩৯+৪০+৪১

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৩৯
#ফাতেমা_জান্নাত

থানায় পুলিশ অফিসার আমান এর সামনে বসে আছে প্রণয়, রিফাত,সজীব,সুজন ।এর বাইরে ও আজ আরো দুই জন লোক যুক্ত হয়েছে তাদের সাথে।মেহেদি আর প্রদীপ। তারা দুই জনে ও প্রণয় দের সাথে থানায় বসে আছে।প্রণয় পুলিশ অফিসার আমান এর কাছে রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে এত দিনের জোগাড় করা সব প্রমাণ সাবমিট করেছে।সব প্রমাণ এর মাঝে জামিল এর মোবাইল এবং মোবাইলে করা সেই ভিডিও টা আছে।আর এই ভিডিও টা সংগ্রহ করেছে মেহেদি আর প্রদীপ রাফসান মির্জার বাসার সিক্রেট রুম থেকে।সেখানে রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ ছিলো। এত দিন যারা যারা রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে যা যা প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলো তার বিরুদ্ধে স্টেপ নেওয়ার জন্য।কোনো না কোনো ভাবে সেটা জেনে গেলে রাফসান মির্জা তাকে মে’রে ফেলে সকল প্রমাণ নিয়ে এসে নিজের এই বেড রুমের সাথে লাগোয়া সিক্রেট রুমে রাখে। কেন জানি তার কাছে এগুলো নষ্ট করে ফেলতে ইচ্ছে করে না।
যার দরুন এখন সব প্রমাণ পুলিশের হাতে।রাফসান মির্জার এই সিক্রেট রুমের কথা কেউ জানতো না।প্রণয় সেই দিন যখন প্রদীপ আর মেহেদি কে রাফসান মির্জার রুমে একটা পুরাতন মোবাইল আর তাতে একটা ভিডিও খুঁজতে বলেছে তখনি তারা দুই জন রাফসান মির্জার রুম সার্চ করতে শুরু করে।আর এক পর্যায়ে সিক্রেট রুমটা তাদের নজরে আসে।তারা রুমের তালা ভে’ঙে ভিতরে ঢুকে। টিপ টিপ করে হালকা আলোয় একটা লাল বাতি জ্ব’লছে। প্রদীপ মেহেদি সেই দিকে খেয়াল না করে প্রমাণ খুঁজতে থাকে।খুঁজতে খুঁজতে একটা বড় বক্স সামনে পড়ে।বক্স টা খুলতেই দুই জনে দেখে রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে অগণিত প্রমাণ এখানে।নারী পাচার করার সময় ছবি,কাউকে মে’রে ফেলার ছবি,নয়তো কোনো মেয়ে কে রেপ করছে এমন ও অনেক কিছু।সব প্রমাণ এর ভিতরে জামিল এর মোবাইল টা পায়।মেহেদি জামিল এর ফোনের থেকে মেমোরি কার্ড খুলে নিজের মোবাইলে লাগিয়ে গ্যালারি তে যায়।সব ছবি ভিডিও দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত ভিডিও টা পেয়ে যায়।প্রণয় এর মোবাইলে ভিডিও টা সেন্ড করে দেয়।আরো কিছু প্রমাণ নিয়ে বেরিয়ে যায় দুই জনে হাসি মুখে।

প্রদীপ আগে থেকেই প্রণয় এর লোক ছিলো। রাফসান মির্জার অত্যন্ত বিশ্বাসী একজন হওয়ার জন্য মাঝে মাঝে প্রণয় এর কিছু কথা রাফসান মির্জাকে বলে দিতো। আবার প্রণয় কে ফোন কে ফোন করে সাবধানে থাকতে বলতো। এভাবেই রাফসান মির্জার অগোচরে সে এত দিন প্রণয় এর হয়ে কাজ করে গিয়েছে।কিন্তু মেহেদি রাফসান মির্জার -ই লোক ছিলো।প্রদীপ মেহেদি কে নানা ভাবে বুঝিয়ে নিজেদের দলে নিয়ে আসে।মেহেদি কে রাফসান মির্জার খারাপ কাজ গুলোর কথা আরেকটু বিশ্লেষণ করা বুঝায়। এটা ও বলে ভবিষ্যৎ এ রাফসান মির্জা কে পুলিশে নিয়ে গেলে তাকে ও বিপদে পড়তে হবে।এভাবে হাজার বুঝানোর পর মেহেদি প্রদীপ এর কথা মেনে নিয়স রাফসান মির্জার দল ত্যাগ করে।তবে তা রাফসান মির্জা জানে না।

প্রণয় পুলিশ অফিসার আমান কে বলে,

—যা করার যত দ্রুত সম্ভব করবেন। রাফসান মির্জা যেন আরো কারো ক্ষতি করতে না পারে।আর রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে আপনারা কঠোর স্টেপ নিবেন বলে আমার ধারণা।

প্রণয় এর কথায় আমান হেসে দিয়ে বলে,

—চিন্তা করবেন না এমপি সাহেব। অতি শীঘ্রই আমরা রাফসান মির্জা কে ধরার চেষ্টা করবো।

অফিসার আমান এর কথার বিপরীতে প্রণয় হেসে দেয়।হ্যান্ড শেক করে সালাম দিয়ে বেরিয়ে আসে থানা থেকে।মেহেদি আর প্রদীপ কে জড়িয়ে ধরে।দুই জন কে রিফাত আর সজীব এর সাথে থাকতে বলে আজ থেকে আর রাফসান মির্জার কাজে যাওয়ার দরকার নেই।দুই জনে রাজি ও হয়ে যায়।

প্রণয় গাড়িতে বসে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে।অনেক দিন পর যেন রিলিফ ফিল হলো।রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে প্রমাণ যোগাড় করে সাবমিট করে দিয়েছে।এবার শুধু রাফসান মির্জা কে পুলিশ ধরে ফেললেই শান্তি।

কিন্তু আসলেই কি শান্তি পাবে?এত কিছুর পরে ও প্রণয় এর বুক এর ধুকপুকানি টা যেন বেড়ে যাচ্ছে।কমার নাম নিচ্ছে না যত সময় যাচ্ছে।কোথাও যেন কিছু একটা নিয়ে ভয় পাচ্ছে সে।খুব ভয় পাচ্ছে।

🌸🌸

হসপিটালে লাবণ্যের কেবিনে বসে আছে প্রণয়,জান্নাত, রিফাত,সজীব,সুজন।তাছাড়া ও আরো দুই জন লোক এখনে উপস্থিত আছে।একজন উকিল আরেকজন কাজী। লাবণ্য বেডে শুয়ে আছে।বাম হাতে ক্যানেলা লাগানো। তার কাছে সব কিছু এখনো স্বপ্নের মতো লাগছে।সে হয়তো ভাবতে পারে নি এত বড় সর্বনাশ হয়ে যাওয়ার পরে ও কেউ তাকে বিয়ে করতে বলবে।হ্যাঁ আজকে এই মুহূর্তে সুজন আর লাবণ্য এর বিয়ে।সুজন -ই প্রথমে এসে প্রণয় কে জানায় সে লাবণ্য কে বিয়ে করতে চাই।প্রণয় প্রথম এই রাজি হয় নি।সুজন কে বুঝিয়েছে নানা ভাবে।এখন আবেগ এর বশে বিয়ে করে যদি পরে তিক্ততা চলে আসে লাবণ্য এর প্রতি।এখন লাবণ্য এর সাথে ঘটে যাওয়া অঘটন নিয়ে কোনো আপত্তি না জানালে ও যদি ভবিষ্যৎ এ কোনো দিন লাবণ্য কে এসব নিয়ে কিছু বলে তাহলে লাবণ্য সেটা সহ্য করতে পারবে না।বেচেঁ থেকেও ম’রার মতো হয়ে থাকবে।তাই লাবণ্য কে ভবিষ্যৎ এ ও এসব নিয়ে কখনো কিছু বলা যাবে না।সব দিক চিন্তা ভাবনা করে তারপর লাবণ্য কে বিয়ে করতে বলেছে প্রণয় সুজন কে।সুজন সময় চেয়েছে প্রণয় এর কাছে।প্রণয় ও সময় দিয়েছে।তার দুই দিন পরে গত কাল- ই সুজন এসে তার সিদ্ধান্ত জানায়।সে বিয়ে করবে লাবণ্য কে।ভবিষ্যৎ সে কখনো লাবণ্য কে কষ্ট দিবে না ইনশাল্লাহ।

সুজন এর সিদ্ধান্ত শুনে প্রণয় আসে লাবণ্য এর কাছে।লাবণ্য কে সুজনের কথা বলে।সুজন তাকে বিয়ে করতে চায় কথা টা বলতেই লাবণ্য বারণ করে দেয়।লাবণ্য কোনো মতেই রাজি না।তার সাথে কি ঘটে ছিলো সে সব কিছু জানার পর সে কিভাবে বিয়ে করতে পারে।দরকার হলে একা জীবন কাটিয়ে দিবে তারপর ও কাউকে ঠকাতে সে রাজি নয়।প্রণয় শুধু লাবণ্য কে বিয়ের প্রস্তাব টা দিয়ে ছিলো। লাবণ্য রাজি নেই শুনে প্রণয় জান্নাত কে বলে।জান্নাত এসে লাবণ্য কে বুঝায়।সব দিকে মিলিয়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে।অনেক বুঝানোর পর লাবণ্য রাজি হয়।আর সেই সুবাধেই আজ তাদের বিয়ে।

সুজন এর চোখ মুখে উপছে পড়া আনন্দ এর রেশ।কেন জানি না লাবণ্য এর সাথে ঘটে যাওয়া সব জেনে ও লাবণ্য এর প্রতি তার ভালো লাগা কাজ করছে অধিক পরিমাণ এ।রিফাত সুজন এর দিকে তাকিয়ে দেখে সুজন মিটি মিটি হাসছে।রিফাত কনুই দিয়ে সুজন কে ধা’ক্কা দিয়ে বলে,

—“কি মামা!ছক্কা তো মে’রে দিলে আমাদের আগে বিয়ে করতে এসে।সেই জন্যই বুঝি এত হাসি পাচ্ছে?”

সুজন রিফাত এর কথা প্রতি উত্তরে হেসে দেয়।রিফাত আর সজীব ও হেসে দিয়ে দুই পাশ থেকে সুজন কে জড়িয়ে ধরে।
আনুমানিক ভাবে দশ মিনিট এর কাছাকাছি সময় পর উকিল এগিয়ে আসে একটা পেপারে সাইন করতে বলে সুজন কে।সুজন বিনা দ্বিধায় নির্লিপ্ত ভাবে সাইন টা করে দেয়।এর পরেই পেপার টা আবার লাবণ্য এর কাছে দেয়।লাবণ্য ডান হাত উঁচিয়ে কলম নেয় হাতে।সাইন করতে গিয়ে তার হাত কাঁপছে। চোখ জ্ব’লছে।চোখে পানি এসে উপস্থিত হয়েছে।এই বুঝি নেত্রকোনা থেকে দুই ফোঁটা পানি রেজিস্ট্রি পেপারে পড়বে।সাইন করতে হাত বার বার এগিয়ে নিয়ে আবার পিছিয়ে আনছে।জান্নাত এসে দাঁড়ায় লাবণ্য এর পাশে।লাবণ্য এর মাথায় হাত রাখে।লাবণ্য অশ্রু সিক্ত নয়নে জান্নাত এর দিকে তাকায়।জান্নাত লাবণ্য এর দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,

—“ভ’য় পেয়ো না আপু।সুজন ভাইয়া খুব ভালো। তোমাকে হ্যাপি রাখবে।তারপর ও কোনো দিন যদি সুজন ভাইয়া তোমাকে কিছু বলে সোজা তোমার ভাইয়া এর কাছে চলে আসবে।আমরা সুজন ভাইয়ার বিচার করবো। কেমন? তুমি ভ’য় পেয়ো না।নির্দ্বিধায় সাইন করতে পারো।”

জান্নাত এর কথা শুনে লাবণ্য হেসে দেয়।চোখের পানি মুছে সাইন করে দেয় পেপারে।এরপরে এই কাজি এসে ইসলামি শরীয়ত এর মাধ্যমে তাদের বিয়ে পড়ায়। আজ থেকে লাবণ্য সুজন আইনগত ভাবে ও ইসলামি ভাবে স্বামী স্ত্রী। আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুক তাদের দুই জনের হালাল সম্পর্ক এবং তাদের উপর।

জান্নাত, প্রণয় কিচ্ছুক্ষণ লাবণ্য এর সাথে কথা বলে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।রিফাত আর সজীব ও বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে।কেবিন এর ভিতরে শুধু লাবণ্য আর সজীব -ই আছে।লাবণ্য সজীব এর দিকে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে দৃষ্টি অন্যদিকে দেয়।সুজন কেবিন এর দরজা টা আটকে দিয়ে লাবণ্য এর সামনে এসে দাঁড়ায়। দুই হাতের আজালায় লাবণ্য এর মুখ টা নিয়ে
দীর্ঘ সময় নিয়ে লাবণ্য এর কপালে চুম্বন স্পর্শ দেয়।এই যে হালাল স্পর্শ। এই স্পর্শে নেই কোনো অপবিত্রতা। নেই কোনো গুনাহ।এটা পবিত্র সম্পর্ক এর পবিত্র স্পর্শ।

🌸🌸

নিকষিত রাতের কালো অন্ধকার চারদিকে। গাছের পাতা গুলো মাঝে মাঝে এসে নড়েচড়ে প্রকৃতির পরিবেশে হাওয়া দিয়ে শরীর শীতল করে যাচ্ছে।বেলি ফুল তার মন মাতানো খুশবু ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রণয় এর বেলকনি তে।দুই দিন আগেই এই বেলি ফুল গাছ টা এনে বেলকনি তে একটা টবে লাগিয়ে দিয়েছে প্রণয়। শুধু বেলি ফুল না।সাথে গোলাপ আর নয়নতারা ফুলের গাছ ও এনে লাগিয়েছে।মূলত জান্নাত এর কথা ভেবেই প্রণয় ফুল গাছ গুলো এনে এখানে রেখেছে। প্রেগন্যান্সি সময় কালে মুড সুইয়িং বেশি হয়।তাই মুড সুইয়িং হলে যাতে এসে বেলকনি তে ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে মন ভালো হয়ে যায় জান্নাত এর।

প্রণয় এসে জান্নাত এর পাশে একটা চেয়ারে বসে।এর কিছুক্ষণ পরেই জেনিথ আর পার্শিয়া এসে দুই জন দুইটা চেয়ারে বসে।মোট চারজন চারটা চেয়ার পেতে বসেছে।এই যেন চার সদস্যের পরিবার একসাথে বসেছে ফ্যামিলি মিটিং এ।

প্রণয় জান্নাত এর কাঁধে মাথা রাখে।জান্নাত এর এক হাত টেনে নিয়ে নিজের দুই হাতের মুঠোবন্দি করে।বাইরের আকাশ পানে তাকিয়ে জান্নাত কে স্বগতোক্তি করে বলে,

—জানেন জান্নাত মনে হচ্ছে আজকে অনেক বড় একটা বোঝা কাধঁ থেকে নামালাম।

জান্নাত হেসে দিয়ে বলে,

—পুলিশ রা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে তো?

—হ্যাঁ। তাছাড়া আমান আমার ফ্রেন্ড। তাই ওকে বলেছি বিশেষ ভাবে সব কিছু করতে।কিন্তু একটা কথা জান্নাত?

—কি?

—রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে স্টেপ নেওয়ার পর ও আমার মনে ভয় এখনো দানা বেধে আছে।জানি না কেনো ভয় পাচ্ছে মন।

—আপনি একটু বেশি ভাবছেন মি.ভালোবাসা।কিছু হবে না। তাছাড়া রাফসান মির্জা তো দেশে নেই।তাহলে এত কেন ভয় পাচ্ছেন আপনি।

—জানি না।আমার ভয় টা তো আপনাকে আর আমাদের অনাগত সন্তান কে নিয়ে হচ্ছে। নিজেকে নিয়ে তো না।

—কিচ্ছু হবে।এত বেশি ভাববেন না তো।আল্লাহ ভরসা।

প্রণয় নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে হেসে দেয়।জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আমার কপাল টা আজকে ও ঠান্ডা হয়ে আছে জান্নাত। আপনার ওষ্ঠদ্বয় এর উষ্ণতা দিয়ে উত্তাপ করে দিবেন না?

প্রণয় এর কথায় জান্নাত হেসে দেয়।মিনিট কয়েক যেতেই প্রণয় এর কপালে নিজের অধর ছোঁয়ার উষ্ণতার প্রলেপ দেয়।প্রণয় হেসে দেয়। জান্নাত এর দুই গালে, নাকে,কপালে,চোখে চুমু খায়।ঠোঁটের উপর আলতো ছোঁয়া রাখে নিজের অধর যুগোল এর।আকাশ এর চাঁদের বুড়ি ও যেন তাদের এরকম মিষ্টি ভালোবাসা দেখে লজ্জা পাচ্ছে।তাইতো লুকিয়ে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর মেঘের আড়ালে।আকাশ এর হাজার তারা ও যেন আজ একটু বেশিই আলোকিত হয়ে জ্ব’লছে।বেলি ফুলের ঘ্রাণ টা ও মুহূর্তে একটু বেশিই ছড়িয়ে দিচ্ছে।গাছের পাতা গুলে হেলে দুলে বাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছে।তাদের ভালোবাসায় যেন প্রকৃতি ও মাতোয়ারা হয়েছে।

🌸🌸

রাফসান মির্জার কাছে এখনো গিয়ে খবর পৌছেনি মেহেদি আর প্রদীপ যে তার বিরুদ্ধে গিয়ে সকল প্রমাণ পুলিশ এর হাতে তুলে দিয়েছে।

রাফসান মির্জা বিপ্লব কুমার এর নিয়োগ প্রাপ্ত নতুন গার্ড কে নিজের আয়ত্তে আনতে উঠে পড়ে লেগেছে। যদি কোনো ভাবে এই গার্ড কে নিজের কবলে এনে এখান থেকে বের হওয়া যায় তাতে তারই তো লাভ।তাই যখন থেকে গার্ড টা কে দেখেছে এবং জেনেছে সে নতুন। তখন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কি ভাবে কি করা যায়।
হয়তো সে সফল নয়তো বিফল। চেষ্টার কমতি রাখবে না এই তার পণ।

চলবে ইনশাল্লাহ ✨🖤

[ভুলত্রুটি মার্জনীয় ]#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৪০
#ফাতেমা_জান্নাত

আফজাল সাহেব এর সাথে সংসদ ভবন এর বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে প্রণয়। মাত্রই সংসদ ভবন থেকে বের হয়েছে সে। দূরেই সুজন,সজীব, রিফাত দাঁড়িয়ে কথা বলছে।আফজাল সাহেব কথার মাঝেই প্রণয় কে বলে,

—প্রণয় তুমি একটু বেশি সাবধানে থাকবে এখন।তোমাকে নিয়ে আমার এখন টেনশন টা বড্ড বেশি হয়ে যাচ্ছে বুঝলে? তারমধ্য রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে স্টেপ নিলে।এখন তো আরো সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

—আল্লাহ ভরসা চিন্তা করবেন না স্যার। আল্লাহ যতদিন হায়াত রাখে তত দিন -ই তো বেচেঁ থাকা।হায়াত শেষ হলে যে ভাবেই হোক রুহ বিদায় নিবে।

—তা ঠিক। তবুও সাবধানে থেকো।

—জি ইনশাল্লাহ।

বলেই দুইজনে গিয়ে গাড়িতে উঠে দুই জনের।প্রণয় গাড়িতে উঠেই সজীব কে অফিসে যেতে বলে সুজন এর দিকে তাকায়।সুজন কে স্বগতোক্তি করে বলে,

—আমার বোনটা কেমন আছে রে সুজন?

সুজন এক গাল হেসে দিয়ে বলে,

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাই এখন।তবে এখনো ও আমার সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না।সময় লাগবে।আমিও অপেক্ষা করি।

প্রণয় হাসে সুজন এর কথা শুনে।বিয়ে হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ছেলেটা যেন একটু বেশিই বুঝদার হয়ে উঠেছে।হোক! সমস্যা কি?দুই জন দুই জনকে বুঝতে পারলেই তো সংসার সুখের তাই না?

প্রণয় সিটে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে।চোখের সামনে ভেসে উঠে জান্নাত এর হাসি মাখা মুখ খানি। বুকে চিনেচিনে ব্য’থা শুরু হয়।ইচ্ছে করছে এখনি জান্নাত এর কাছে ফিরে যেতে।জান্নাত কে নিজের সামনে বসিয়ে কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে অবলোকন করে জিজ্ঞেস করতে,”জান্নাত আপনার থেকে এক মুহূর্ত ও দূরে থাকতে ইচ্ছে হয়না কেন আমার?মন চায় সারাক্ষণ আপনাতেই বিভোর হয়ে থাকি।এমন টা কেন হয় বলতে পারবেন”? না! প্রণয় এর প্রশ্ন ধারার কোনো উত্তর শুনা যায়নি প্রতিপক্ষ ব্যক্তি থেকে।শোনা যাবে কি ভাবে?কথা গুলো যে ছিলো প্রণয় এর ভাবনা তেই সীমাবদ্ধ। অপরপক্ষ এর মানুষ টার কর্ণকুহর পর্যন্ত কথা টা যায়নি।
প্রণয় ছট করে চোখ মেলে তাকায়। হেসে উঠে আনমনে নিজের ভাবনা গুলো নিয়ে।আজকে আর অবাধ্য মন টাকে স্থির করেনি।অস্থির মন টাকে নিয়েই সজীব কে আবার বলে,”বাসায় চল সজীব, জান্নাত এর কথা খুব মনে পড়ছে হঠাৎ করে”। সজীব গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার পথে যায়।আজ কাল তাদের প্রণয় ভাই এর অস্থির মনের ছটপটানি যে তারাও বুঝতে পারে।এসির মধ্যে হুটহাট ঘেমে সারা শরীর ভিজে যায় তাদের প্রণয় ভাই এর।হঠাৎ করে বাসায় ফিরে যায় সব কাজ রেখে।ইদানীং বড্ড বেশি হচ্ছে এমন।তাদের প্রণয় ভাই না বললেও তারা এগুলো বুঝতে পারে।তাদের মনে ও এসব দেখে সুপ্ত ভয় এসে দানা বাঁধে।
প্রণয় ভাই তারা শুধু মুখে বলে না।প্রণয় যে সত্যিই তাদের আপন ভাই সমতুল্য।মন থেকেই ভাই বলে ডাকে।

🌸🌸

ইশি প্রান্তিক এর আগামী পরশু বিয়ে।আহামরি আয়োজন না করলেও ছোট খাটো আয়োজন তো করাই হয়েছে।দুই পরিবার, আত্মীয় স্বজন আর পরিচিত কিছু মানুষ এই যা।এর বেশি ঢাক ঢোল পিটিয়ে বিয়ের বিপক্ষে প্রণয় প্রান্তিক দুই জনেই।তাই ইশি দের বাড়ি থেকে ও এ নিয়ে আর কেউ কিছু বলেনি।প্রান্তিক এর কথায় সবাই রাজি হয়েছে।যেহেতু বর প্রান্তিক সেহেতু তার কথা ফেলার কোনো মানে হয়না।

আগামী পরশু বিয়ে।কিন্তু এখন প্রান্তিক এর সাথে ফোনে কথা বলতে গিয়ে ইশি বাধঁ সাধছে বিয়ে করবে না বলে।এই নিয়ে প্রান্তিক এর মাথা খারাপ অবস্থা।আগামী পরশু বিয়ে আর আজ ইশি বলছে বিয়ে করবে না?দুই পরিবার এর মানসম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।তাছাড়া ইশির এখন এমন কথা বলার মানে কি?প্রান্তিক এর মাথায় আসছে না।

প্রান্তিক রুম থেকে বের হয়ে জান্নাত এর রুমে গিয়ে দরজায় নক করে।জান্নাত বসে বসে ইসলামি একটা বই পড়ছিলো।দরজার নক শুনে বলে,”দরজা খোলা আছে”।জান্নাত এর অনুমতি পেয়ে প্রান্তিক বিরসবদন চেহারা করে রুমে প্রবেশ করে।জান্নাত প্রান্তিক এর চেহারার দিকে একবার তাকায়।বইয়ের পৃষ্ঠা বাজ করে রেখে বই টা বন্ধ করে প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে সুধায়,

—কিরে কি হয়েছে?মুখটা এমন পেঁচার মতাও করে রেখেছিস কেন?

প্রান্তিক মুখ কুঁচকে তাকায় জান্নাত এর দিকে।যেন কেউ তার মুখে তিক্তফল এর তিক্তরস ঢুকিয়ে দিয়েছে।তবুও নিজেকে সামলিয়ে বলে,

—ইশির কি হয়েছে?ও হঠাৎ করে এখন বলতাছে বিয়ে করবে না।

জান্নাত অবাক হয় এমন কথা শুনে।চক্ষু কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম যেন।প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—মানে?এসব কেমন কথা এই সময়ে?

—আমি জানি কেমনে?তোর বান্ধুবীর মাথায় হা’গল উঠছে।পরশু বিয়ে আজ ও এমন কথা বলছে।

—আচ্ছা তুই রে’গে যাস না।আমি ওর সাথে কথা বলে দেখি।

বলেই জান্নাত ইশি কে ফোন করে।দুই বার রিং হতেই ইশি ফোন রিসিভ করে।জান্নাত কিছুক্ষণ খোঁজ খবর নিয়ে ইশি কে বলে,

—ইশি পরশু বিয়ে অথচ তুই নাকি এখন বলছিস বিয়ে করবি না?

প্রান্তিক জান্নাত এর দিকে উৎসুক দৃষ্টি তে কথা বলা দেখছে আর শুনছে ইশি কে বলছে।ফোন লাউড স্পিকার এ দেওয়া আছে।অপর পাশে ইশি চুপ করে আছে।কিছু বলছে না।
কিয়তক্ষণ নিরবতার পর ইশি স্বগতোক্তি করে বলে,

—তোর দেবর যে আমাকে ভালোবাসে।আজ পর্যন্ত বলেছে সে এটা?তাহলে আমি বিয়ে করবো কেন তাকে?

ইশির কথা শুনে জান্নাত তাজ্জব বনে গিয়ে প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে আছে।প্রান্তিক উঠে এসে জান্নাত এর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে বলে,

—ইশি তোর জ্ঞান বুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে?পরশু দিন আমাদের বিয়ে আর তুই এই কারণ টার জন্য বিয়ে করতে চাইছিস না?মানে আর ইউ ম্যাড?ভালোবাসার কথা কি মুখে বলে প্রকাশ করতে হয়?বুঝে নেওয়া যায় না?ঠিক আছে তুই যখন চাইছিস তোকে “ভালোবাসি ” কথাটা বলতে।আমি বলবো। আজকে সন্ধ্যায় পাশের রেস্টুরেন্ট অপেক্ষা করবো। আশা করি তাড়াতাড়ি চলে আসবি।

বলেই প্রান্তিক ফোন টা কেটে জান্নাত এর হাতে মোবাইল তুলে দিয়ে ঘট ঘট করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
জান্নাত দীর্ঘ করে তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করে।সে ভাবছে এই দুই পা’গল এর বিয়ে হলে জানি কি করে।সারাদিন তো দুই জনে ঝ’গড়া করতে থাকে।

🌸🌸

রাফসান মির্জার কানে চলে গিয়েছে মেহেদি আর প্রদীপ তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে।এই কথাটা শুনার পর থেকেই রাফসান মির্জার র’ক্ত যেন তেলে বেগুনে গরম হয়ে গেল।রা’গে যেন শরীর জ্বলে যাচ্ছে।রা’গে র’ক্ত লাভার নেই টগবগ করছে।অলরেডি পুলিশ তাকে খুঁজতে শুরু করেছে।বাংলাদেশ এর পুলিশ সেক্টর এর উপর মহল থেকে ভারত এর পুলিশ গুলো কে রাফসান মির্জার ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে।কঠোর ভাবে রাফসান মির্জার খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।কোথাও রাফসান মির্জা গা ঢাকা দিয়ে আছে সেটা যে ভাবেই হোক যাতে খুঁজে বের করা হয়।

রাফসান মির্জা কে পুলিশ খুঁজছে এটা জানার পর তার পা’গল প্রায় অবস্থা।কথাটা তার কানে দিয়েছে বিপ্লব কুমার এর নতুন গার্ড টা।রাফসান মির্জা বিপ্লব কুমার এর নিয়োগ প্রাপ্ত নতুন গার্ড কে পুরোপুরি ভাবে নিজের কথার জালে ফাঁসাতে না পারলে ও খানিকটা কাজ দিচ্ছে।যার দরুন গার্ড টা রাফসান মির্জা কে কিছু কিছু কথা তার কানে এনে পৌছিয়ে দেয়।

সব কিছু কে নিজের মধ্যে মিলিয়ে রাফসান মির্জা গিয়ে রুমে রাখা চেয়ারে বসে।সামনের টেবিল এর ড্রয়ার থেকে একটা খাতা আর একটা পেন নেয়।খাতার কভার পেইজ উল্টিয়ে একটা সাদা পেইজে কিছু একটা আঁকে দাগ টেনে।এর পর কিছু লিখতে থাকে।মুখে তার ভ’য়ের চাপ স্পষ্ট। ঘেমে যাচ্ছে খানিক বাদে বাদেই।কপাল ঘেমে কয়েক ফোঁটা ঘামের বিন্দু কণা খাতায় ও পড়ে।এতে ভেজায় বিরক্ত হন তিনি।তারপর ও নিজের কাজ করতে থাকে।

খাতা তে লেখা শেষ করতেই রাফসান মির্জা অট্টহাসি তে ফেটে পড়ে।নিজের বত্রিশ পার্টি দাঁত বের করে বিশ্রী হাসে।তার হাসির শব্দ চার দেয়াল এর মাঝে বারি খেয়ে আবার যেন ফিরে এসে কানে বা’রি খায়।কিন্তু তবুও তার হাসি থামার নাম গন্ধ নেই।অতি শোকে পা’গল হয়ে গেল নাকি?হয়তো। আর নয়তো নতুন কোনো ছক কষে হাসছে।

🌸🌸

নিয়ন বাতির আলোর মাঝে বসে আছে ইশি প্রান্তিক। ইশি প্রান্তিক দুই জনে দুইটা চেয়ারে বসে আছে।তাদের দুই জনের সামনে টেবিলের উপর একটা মোমবাতি জ্বলজ্বল করে নিবু নিবু আলো দিয়ে জ্বলছে।দুই ঘন্টার জন্য প্রান্তিক রেস্টুরেন্ট টা ভাড়া করেছে পুরোটা। এই সময় যাতে কেউ না আসে।তবে তারা ব্যতিত ও আরো এক যুগোল এই মুহূর্তে অন্য প্রান্তে উপস্থিত আছে রেস্টুরেন্ট। তাদের খেয়াল নেই প্রান্তিক ইশির দিকে।তারা তাদের মতো প্রান্তিক ইশির থেকে বেশ খানিক দূরত্ব নিয়ে একপাশে বসে আছে।সেই পর্যন্ত ইশি প্রান্তিক এর কথা যাবে না।আর সেই যুগোল হলো প্রণয় আর জান্নাত। প্রান্তিক আর ইশির কথা তেই জান্নাত,প্রণয় এসেছে।

প্রান্তিক চোখ মুখ কুঁচকে ইশির দিকে তাকিয়ে বলে,

—বল কি বলবে?

ইশি নির্লিপ্ত স্বরে বলে,

—প্রফোজ কর।না হলে বিয়ে করবো না।

প্রান্তিক ও কোনো রকম মশলাপাতি না মিশিয়ে সহজ ভাষায় বলে দেয়,

—আই লাভ ইউ।

বলেই প্রান্তিক হেসে দিয়ে চুপ করে যায়।কিন্তু প্রান্তিক এর এমন প্রফোজ ইশির পছন্দ হয়নি।”আই লাভ ইউ” এটা তো কমন ওয়ার্ড।সে তো ইউনিক ভাবে প্রফোজ পেতে চাইছে। তাই মনের কথা মুখে এনে প্রান্তিক কে বলে,

—এসব কমন ওয়ার্ডে হবে না।ইউনিক ভাবে কর।তবেই হবে।

প্রান্তিক এর রা’গ উঠে গেলো ইশির কথা শুনে।বিরক্তি তে চোখ মুখ সহ ভ্রু কুঁচকে প্রণয় আর জান্নাত কে ডাক দিয়ে বলে,

—“ভাইয়া, জান্নাত? এই দিকে আয় তো”।

প্রান্তিক এর কথায় ইশি ভ্রু কুঁচকায়। জান্নাত আর প্রণয় তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের চোখের ইশারা বলছে”কি হয়েছে এখানে “?
প্রান্তিক তেঁতে উঠে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ইশি কে ইঙ্গিত করে বলে,

—ও বলেছে ওকে ভালোবাসি বলতে।আমি বলেছি।আর এখন ও বলছে হবে না।ইউনিক ভাবে বলতে।ওকে জিজ্ঞেস করো কি চায় ও।নয়তো আমি এখান থেকে চলে যাবো।

বলেই প্রান্তিক অন্য দিকে মুখ ফেরায়।জান্নাত প্রণয় কি বলবে বুঝতে পারছে না।এরা দুই জন কি ছোট নাকি?যে এদের কে বাচ্চা দের মতো করে আধো আধো করে বুঝিয়ে বলবে আর বুঝে যাবে?আর দুই টাই আস্ত ঘাড়ত্যাড়া। কেউ নিজের সিদ্ধান্ত থেকে নড়তে অনড়।

কিচ্ছুক্ষণ ভাবার পর প্রণয় কিছু বলতে যাবে এর আগেই প্রান্তিক ছট করে উঠে দাঁড়িয়ে ইশির দিকে তাকিয়ে বলে,

—ঠিক আছে ইউনিক ভাবে বলছে।এর পরেও যদি কিছু বলিস তাহলে আমিই তোকে বিয়ে করবো না যা।

এরপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে গলা খাকাড়ি দিয়ে টেবিল এর উপর রাখা লাল গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল টা নিয়ে ইশির সামনে ধরে বলে,

—“তোদের বাড়ির গরু,আমাদের বাড়ির খাসি।
ইশি আমি তোকে ভালোবাসি”।।
“এবার যদি না হোস রাজি,দিবো এক থা’প্পড়।
ফে’টে যাবে তোর কানের বাঁশি,বলে ফেল প্রান্তিক আমিও ভালোবাসি”।

ইশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সত্যি সত্যি বলে দেয়”প্রান্তিক আমিও ভালোবাসি “।এই দিকে জান্নাত আর প্রণয় এদের এবনরমাল প্রফোজাল শুনে এখনো তব্দা খেয়ে আছে।এটা প্রফোজাল ছিলো নাকি থ্রেড ছিলো। কিছু সময় গড়াতেই প্রণয় আর জান্নাত হেসে দেয়।বেরিয়ে আসে রেস্টুরেন্ট থেকে।এই ঝগড়াটে যুগোল এর নাকি পরশু বিয়ে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তাদের। এদের বিয়ে হলে সংসার করবে নাকি ঝ’গড়া করবে এটা ভেবেই প্রণয় আর জান্নাত হাসছে।

🌸🌸

সকালের সূর্য চারদিকে তার কিরণরাশি ছড়িয়ে দিয়েছে।আলোকরশ্মি এর দ্বারা আলোকিত হয়েছে শহর।ব্যস্ত শহরের মানুষ গুলো ছুটে চলছে নিজে দের কর্মস্থলে অতি তাড়াতাড়ি যাওয়ার তাগিদে।গাছের ডালে ফাঁক ফোকরে বসে পাখিরা নিজেদের ভাষায় কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছে অন্য পাখি দের সাথে।নিস্তব্ধতার সময় তাদের এই কণ্ঠ বড্ড বেশি ভালো লাগে।

বেলকনির দরজা খুলতেই বাইরে থেকে বাতাস হুড়মুড়িয়ে এসে গায়ের সাথে মিশে গিয়ে স্নিগ্ধকর করে তুলে শরীর। জান্নাত খোলা কোঁকড়া চুল গুলো হাত খোঁপা করে বেলকনির রেলিং এর পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। তাকায় পাশের নিজের বাসার বেলকনির দিকে।মনে পড়ে যায় প্রণয় এর সাথে বিয়ের আগে বেলকনির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে কথা বলার মুহূর্ত গুলো। সেই দিকে তাকিয়ে প্রস্তুতি নেয় একবার অতীতের স্মৃতি চারণ এর জন্য।আঁখি দ্বয় বন্ধ করে।চোখের পাতা দিয়ে ঢেকে দেয় দৃষ্টি। কল্পনা করে ফিরে যায় অতীতে।নিজেকে নিয়ে যায় সেই বিয়ের আগের পাশের বেলকনির জান্নাত আজমী পরিচয়ে।মেয়েটা মিহি হেসে পাশের বেলকনির শাহরিয়ার প্রণয় নামের ছেলে টার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।ছেলে টা তার সাথে কথা বলছে হেসে হেসে।শুভ্র পাঞ্জাবী পরা,হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা,চোখে রিমলেস চশমা সেই বালক টির প্রেমে পড়েছিলো প্রথমে। এর কয়েক মাসের মাঝেই ছেলে টা কে বিয়ে করে নিজের স্বামী রূপে কাছে পাওয়া। আর এখন তার সন্তানের মা হতে চলছে।সব কিছু যেন কল্পনাতীত। হঠাৎ গু’লির শব্দে জান্নাত ভাবনা থেকে ফিরে আসে।পাশে তাকিয়ে দেখে প্রণয় এর হাতে গু’লি। জান্নাত কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।মুখে ভয়ের চাপ রেখেই প্রণয় কে বলে,

—গু’লি কেন আপনার হাতে?কে এসেছে?

প্রণয় জান্নাত কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বলে,

—কিছু হয়নি।কেউ আসেনি। গু’লি তে বুলেট ভরেছিলাম। তাই একটু চেক করলাম।

জান্নাত “ওহ্” বলে একটা চেয়ারে বসে।প্রণয় এসে আরেকটা চেয়ার জান্নাত এর সামনে রেখে সেখানে জান্নাত এর পা দুটো তুলে দেয়। জান্নাত এর প্রেগন্যান্সির এখন ছয় মাস চলছে।তাই বেশিক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসলে পা ব্য’থা করে।পেট টা আকৃতি নিয়েছে এখন বড়।এইখানেই তো তাদের একটা অংশ বেড়ে উঠছে ভাবতেই যেন খুশিতে বাকহারা হয় দুই জনে।

ইশি প্রান্তিক এর বিয়ে হয়ে গেছে আড়াই মাস আগেই।টম এন্ড জেরির মতো সারাদিন ঝ’গড়া খু’নশুটি করে তাদের সংসার চলছে।

প্রণয় জান্নাত এর সামনে হাটু মুড়ে বসে।জান্নাত এর পেটের উপর নিজের একটা হাত রেখে।অধর ছোঁয়া দেয় পেটের উপর।মুচকি হেসে পেটের দিকে তাকিয়ে বলে,

—বাবু কি ব্য’থা দিচ্ছে আপনাকে জান্নাত?

জান্নাত স্মিত হেসে দিয়ে বলে,

—মাঝে মাঝে।সমস্যা না এমন হয়।ওরা ওদের অস্তিত্ব এর জানান দেয় এমন করে আপনি এতো চিন্তা কেন করছেন?

—জানি না।বাট চিন্তা হচ্ছে।আল্লাহ আপনাদের কে হেফাজত করুক সব সময় জান্নাত এই দোয়া করি।রাফসান মির্জা ভারত এর কোথায় আছে এখনো সেটা পুলিশ বের করতে পারেনি।তাই আমার চিন্তা টা দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে।

—আল্লাহ ভরসা। চিন্তা করবেন না।দেখি চেয়ার বসুন উঠে।

বলেই জান্নাত প্রণয় এর হাত ধরে টানতেই প্রণয় উঠে চেয়ার বসে।জান্নাত এর মাথা টেনে এনে নিজের প্রশস্ত বুকে রেখে বলে,

—জানেন জান্নাত এখন আর ইচ্ছা করে না বাইরে যেতে।ইচ্ছে করে সারাক্ষণ আপনাকে এই প্রশস্ত বুকের ভিতর গুঁজে রাখি।আপনাকে চোখের আড়াল করতে এক মুহূর্ত ও ইচ্ছে করে না।

জান্নাত প্রণয় কে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,

—আমি তো আপনার মনেই আছি সর্বক্ষণ। তবে এত কেন ভ’য় পাচ্ছেন। আপনি যতক্ষণ আছেন আমিও ততক্ষণ আছি আপনারি মাঝে।

প্রণয় জান্নাত এর মাথায় চুমু দিয়ে নিজের থুতনি ঠেকায় জান্নাত এর মাথায়। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে দুই ফোঁটা লবণাক্ত নোনাজল।এই পানি কেন এলো চোখে প্রণয় এর জানা নেই।কিন্তু জান্নাত কে জড়িয়ে ধরতেই চোখ জ্বলে পানি উপস্থিত হয়েছে চোখে।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

[আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন? গল্পটার আর হয়তো আনুমানিক দুইটা পর্ব আসবে।কোনো কিছু জানাতে বা ক্লিয়ার করতে আমার বাদ পড়ে বলবেন।হয়তো আমি গল্প শেষ করে দিলাম কিন্তু কিছু বিষয় খোলাসা করার বাকি থেকে গেলো।এমন চাইনা আমি।তাই কিছু বাদ পড়লে বলবেন প্লিজ।ভুলত্রুটি মার্জনীয় ]#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৪১
#ফাতেমা_জান্নাত

সময় তো প্রবাহমান নদীর ন্যায়। চাইলে ও স্থির রাখা যায় না।সময় এর পালাবদলে বদলে যায় অনেক কিছু।বদলে যায় মানুষ, বদলে যায় পরিবেশ। বদলাতে শুরু করে আবহাওয়া।

জান্নাত এর প্রেগন্যান্সি এর এখন নয় মাস চলছে।এই তো আর এক সপ্তাহ পরেই ডেলিভারি ডেট দেওয়া হয়েছে।নয় মাস এর পেট নিয়ে হাটা চলা নড়াচড়া করতে আগের তুলনায় কষ্ট টা একটু বেশিই হয়।কিন্তু বাচ্চার কথা ভাবতেই পর মুহূর্তে সব কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করে নেয়।এটাই তো মাতৃত্ব এর সাদ।

জান্নাত কে প্রতিটা মুহূর্তে আগলে রাখে প্রণয়। আগের তুলনায় বাড়িতে এখন তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করে সে।জান্নাত এর কখন কি প্রয়োজন তা সুনিপুণ ভাবে নিজের নজরে রেখে কাজ করে যায়।একটা মেয়ের যে এই সময় টা তে নিজের হাজবেন্ড কে সব থেকে বেশি কাছে প্রয়োজন। তা প্রণয় জানে।তাই তো জান্নাত এর পাশে থাকার প্রয়াস চালিয়ে যায় সর্বক্ষণ।

জুনায়েদ আজমী আজকে শাহরিয়ার পাবেল এর পরিবার এর সবাই কে নিজের বাসায় দাওয়াত দিয়েছে।জান্নাত ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বসে বসে রেডি হচ্ছে।চুল আছড়ানোর জন্য চিরুনি হাতে নিতেই প্রণয় এসে জান্নাত এর হাত থেকে চিরুনি নিয়ে সে নিজে জান্নাত এর চুল আছড়ে দিতে থাকে।জান্নাত আয়নায় প্রণয় কে দেখে হেসে দেয়।প্রণয় চুল আছড়ে বেনি করে দিতে থাকে।সম্পূর্ণ ধ্যান জ্ঞান এখন তার বেনির মধ্যে। যাতে এলোমেলো না হয়ে যায়।গত কয়েক মাসে জান্নাত এর চুল আছড়ে দিয়ে বেনি করা শিখেছে প্রণয়। বেনি করা শেষ করতেই আয়নায় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।যেন সে বিশ্ব জয় করেছে।

জান্নাত কে ধরে এনে গায়ে বড় উড়না দিয়ে মাথা ঢেকে দেয় প্রণয়। আরেকটা ওড়না দিয়ে জান্নাত এর শরীর আর উঁচু পেট টা কে ও ঢেকে দেয়।জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলে,

—চলুন জান্নাত।

জান্নাত হাসি দিয়ে প্রণয় এর সাথে পা মিলিয়ে হাটতে থাকে।প্রণয় জান্নাত কে ধরে অতি সাবধানে হাটে।নিচে আসতেই দেখে ড্রয়িংরুমে প্রান্তিক আর ইশি দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।রোকসানা আর শাহরিয়ার পাবেল আগেই চলে গেছে জুনায়েদ আজমীর বাসায়।প্রণয় প্রান্তিক কে এগুতে বলে নিজেরা ও আস্তে আস্তে সেই দিকে যেতে থাকে।দুই জনের মাঝে চলছে কিছু কথা বার্তা। প্রণয় এর কিছু কথায় জান্নাত হেসে দেয়।

🌸🌸

দীর্ঘ প্রায় এক বছর পরে বাংলাদেশে ঢাকায় পা রেখেছে রাফসান মির্জা।অনেক কাঠ খড় পু’ড়িয়ে তাকে এই বাংলাদেশে আসতে হয়েছে।বিপ্লব কুমার এর সেই গার্ড কে বো’কা বানিয়ে -ই বাংলাদেশে এসেছে সে।পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। কিন্তু সে এত দিন সিলেট ছিলো। ভারত থেকে ফাস্টে সিলেট চলে গেছে।আজ কে সিলেট থেকে ঢাকা এসেছে।উদ্দেশ্য শাহরিয়ার প্রণয় আর জান্নাত আজমী কে মে’রে ফেলা।তাই তো নানান ছক কষে আজ ঢাকায় এসেছে।

কাউকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছে “শাহরিয়ার প্রণয় কই আছে”?অপর পাশের ফোনে থাকা ব্যক্তি টি বলেছে,” শাহরিয়ার প্রণয় পার্টি অফিস বা তার অফিসে নেই বাড়িতে আছে”।কথা টা শুনে রাফসান মির্জা ফোন কে’টে দেয়।মুখে একটা সার্জিকাল মাক্স লাগিয়ে চোখে সানগ্লাস এটে নেয়।রওনা দেয় প্রণয় এর বাসার উদ্দেশ্যে। ক্রুর হাসতে থাকে সে।তার আজকে বড়ই আনন্দ লাগছে।
_

এই দিকে পুলিশ অফিসার আমান এর কাছে খবর পৌছে গেছে রাফসান মির্জা এত দিন সিলেটে ছদ্মবেশ নিয়ে ছিলো। আর আজকে ঢাকায় এসেছে।কোথায় গেছে এখনো কেউ কিছু জানে না।তবে ধারণা করা যায় সে আজকে খারাপ কিছু ঘটাবে।

বিষয় টা জানার পরই আমান বের হয়ে যায় রাফসান মির্জা কে খোঁজার উদ্দেশ্যে।সব থানায় পুলিশ দের কে এলার্ট করে দিয়েছে রাফসান মির্জা ঢাকায় এসেছে।সে খারাপ কোনো কিছু ঘটার আগেই যাতে তাকে ধরা হয়।সবাই যাতে হুশিয়ার করা হয়েছে।

🌸🌸

সন্ধ্যায় প্রণয় জান্নাত কে নিয়ে নিজেদের বাসায় চলে আসে।বাকি সবাই এখনো জান্নাত এর বাসায় আছে।প্রণয় জান্নাত কে এনে রুমে বিছানায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়।জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে জান্নাত এর ওষুধ নিয়ে এনে জান্নাত এর হাতে দেয়।জান্নাত হেসে দিয়ে ওষুধ গুলো হাতে নিয়ে পানি দিয়ে খেয়ে নেয়।প্রণয় জান্নাত এর সামনে হাটু মুড়ে বসে।জান্নাত এর পেটে হাত দিয়ে হেসে দিয়ে পেটে অধর ছোঁয়া দেয়।পেটের দিকে তাকিয়ে বলে,

—আমার বাচ্চা টা কি করে?মা কে ব্য’থা দাও?মা কে ব্য’থা দিও না কেমন? তাড়াতাড়ি বাবার কাছে চলে এসো।আমরা এক সাথে খেলা করবো, গল্প করবো। কিন্তু মা কে ব্য’থা দেওয়া যাবে না।আমার বাচ্চা টা ভালো তো।বাবার কথা শুনবে তাই না?ভালো বাচ্চারা মাকে ব্য’থা দেয় না।তাই না?বাবা অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।

বলেই প্রণয় আবার জান্নাত এর পেটে হাত ভুলায়,চুমু দেয়।জান্নাত অশ্রু সিক্ত চক্ষু দ্বারা প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে আছে।এটা এই প্রথম না।ছয় মাসের পর থেকে যখনি বাচ্চা নড়াচড়া করতো আর জান্নাত একটু ব্য’থায় কুঁকিয়ে যেত তখনি প্রণয় এমন কথা বলতো।রাতের পর রাত প্রণয় জান্নাত এর পেটে অধর ছোঁয়া দিয়ে নিজের অংশ টার সাথে এভাবে গল্প করে ঘুটি কিছু রাত কাটিয়ে দিতো। অপর পাশের ব্যক্তি টি থেকে কথা না পেলেও সে কথা বলে যেতো। এতেই যেন তার শান্তি। আর জান্নাত তাকিয়ে দেখতো শুধু।ভাবতো এই মানুষ টাকে আ…

বাকিটা পড়ার আগেই জুরাইন এর ডাকে ডাইরি টা বন্ধ করে বালিশ এর নিচে লুকিয়ে রাখে আট বছরের “প্রাপ্তি”নামের ছোট্ট মেয়ে টা।জুরাইন রুমে এসে প্রাপ্তি কে বলে,

—চলো আজকে এক জায়গায় যাওয়ার কথা মনে আছে?

মেয়ে টা হেসে দেয়।বিছানা ছেড়ে উঠে এসে জুরাইন এর হাত ধরে রুমের বাহিরে চলে আসে।কিন্তু মন থাকে তার ডাইরির মধ্যে। জানতে চায় পরের অংশ।

প্রণয় এর বাসার পিছন দিকের দেয়াল টপকে বাসার ভিতরে ঢুকে রাফসান মির্জা।বাড়ির সামনের পাশ টাতে গার্ড থাকলে ও পিছন দিকে গার্ড ছিলো না।তাই রাফসান মির্জার আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি।চার দিকে নজর দিয়ে রাফসান মির্জা বাসার ভিতরে ঢুকে যায়।বাসায় শুধু মাত্র প্রণয় আর জান্নাত আর কেউ নেই।রাফসান মির্জা চার পাশে দেখতে দেখতে উপরে উঠে যায়।সব রুমের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে প্রণয় কোন রুমে আছে।খুঁজতে খুঁজতে এক পর্যায়ে প্রণয় এর রুমের সামনে চলে আসে।রুমের দরজা খোলা ছিলো।

রাফসান মির্জা দরজা টা হালকা খুলে দেখে প্রণয় জান্নাত এর সাথে কথা বলছে।দুই জনেই হেসে হেসে কথা বলছে।এটা দেখে যেন রাফসান মির্জার পায়ের র’ক্ত মাথায় উঠে গেছে।হুট করে ধা’ক্কা দিয়ে দরজা টা পুরো খুলেই প্রণয় এর পাঞ্জাবী এর কলার্ট ধরে দাড়াঁ করায় প্রণয় কে।আচমকা এমন হওয়ায় প্রণয় স্তম্ভিত হয়ে যায়।এই মুহূর্তে রাফসান মির্জা কে এখানে সে আশা করেনি।

রাফসান মির্জা প্রণয় এর নাকে ঘু’ষি দিয়ে পাঞ্জাবী এর কলার্ট ধরেই টেনে নিয়ে যেতে ধরে প্রণয় কে।জান্নাত এমন দেখে “মি. ভালোবাসা” বলে চি’ৎকার করে নামতে গিয়ে পড়ে যায়।মুহূর্তে -ই সাদা ফ্লোর টা র’ক্ত এর রঙ দ্বারা লালে পরিণত হয়।ব্য’থায় পেটে হাত চি’ৎকার করতে থাকে জান্নাত। প্রণয় এই টা দেখেই রাফসান মির্জা কে লা’থি মে’রে ফেলে দিয়ে ছুটে যায় জান্নাত এর কাছে।জান্নাত এর মাথা টা নিজের হাতের উপর ন্যায়। প্রণয় কেঁদে দেয় জান্নাত এর এই অবস্থা দেখে।জান্নাত এর কপালে আদর দিয়ে বলে,

—কিচ্ছু হবে না আপনার জান্নাত। এই তো আমি এখন আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাবো। কিচ্ছু হবে না আপনার জান….

প্রণয় কে কথাটা শেষ করতে দেয় নি রাফসান মির্জা। গু’লি দিয়ে প্রণয় মাথার পিছন থেকে বা’রি দেয়।মুহূর্তে -ই প্রণয় এর মাথা থেকে র’ক্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়ে সাদা পাঞ্জাবী টা লাল রঙ এর রঞ্জিত হয়।চোখের সামনে ঝাপসা দেখতে থাকে সব কিছু।রাফসান মির্জা প্রণয় কে জোর করে আগের ন্যায় কলার্ট ধরে টেনে হিছড়ে ছাদে নিয়ে আসে।প্রণয় ঝাপসা চোখেই হাটু মুড়ে বসে যায়।রাফসান মির্জার পা জড়িয়ে ধরে বলে,

—আমার জান্নাত কে হসপিটালে নিতে দিন।আমার জান্নাত এর কষ্ট হচ্ছে।

কিন্তু প্রণয় এর কথায় রাফসান মির্জার মন গলেনি।রাফসান মির্জা প্রণয় কে লা’থি মে’রে নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

—তোরা দুই জনে আমাকে অনেক অপমান করেছিস।তোর জন্য আমাকে আট টা মাস ভারতে বন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে।সিলেটে ছদ্মবেশ নিয়ে থাকতে হয়েছে।তোর জন্য আমি সংসদ সদস্য হতে পারেনি।তোর জন্য আমার ড্রা’গ এর ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে।তোর জন্য আমার দুটো অফিস বন্ধ হয়ে গেছে।অথচ তোকে আমি ছেড়ে দিবো?তোর বউ আমাকে রাস্তায় শান্ত স্বরে অপমান করেছে।তোর বউ কে আমি ছেড়ে দিবো? চিন্তা করিস না আগে তোকে মা’রি তারপর তোর বউ কে ও তোর সাথে পাঠাবো।সাথে তোদের বাচ্চা টাকে ও।

প্রণয় রাফসান মির্জার কথা শুনে আবার বলে,

—আমার জান্নাত আর বাচ্চা টা কে কিছু করিস না।শত্রু তা তো আমার সাথে।ওদের কিছু করিস না।ওদের কোনো দোষ নেই।ওদের মা’রিস না।

রাফসান মির্জা প্রণয় এর কথা শুনলে তো।নিচ থেকে প্রণয় কে টেনে তুলে ছাদের কিনারায় নিয়ে এসে প্রণয় এর বুকের দুই ইঞ্চি নিচে সেই যন্ত্রটা তে গু’লি করে।যেই যন্ত্রটা জান্নাত এর নামে হৃৎ স্পন্দন করতো।যেখানে মাথা রেখে কান পেতে জান্নাত প্রতিটা হার্ট বিট শুনতো।কিন্তু আজ কে সেই হার্ট এর বিট করা থেমে গেলো। জান্নাত এর নামে আর বিট করবে না।প্রণয় চোখ বন্ধ করেই ছাদ থেকে নিচে পরে যায়।

রাফসান মির্জা প্রণয় এর ঘরে এসে দেখে জান্নাত সেন্স লেস হয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে।রাফসান মির্জা জান্নাত এর পেটে লা’থি মা’রার জন্য পা তুলতেই তার পায়ে এসে একটা গু’লি লাগে। রাফসান মির্জা পা ধরে বসে যায়।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আমান হাতে গু’লি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমান দ্রুত এসেই রাফসান মির্জা কে টেনে তুলে নিয়ে বাইরে নিয়ে যায়।তার গু’লি টা ও হাতে নিয়ে নেয়।জুনায়েদ আজমী মেয়ের এই অবস্থা দেখে পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়।রাহেলার কন্দন রত আওয়াজ শুনে সম্বিৎ ফিরে আসে।ছুটে গিয়ে জান্নাত কে কোলে তুলে নেয়।জান্নাত কে কোলে নিয়েই হসপিটাল এর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

অন্যদিকে ছাদ থেকে গু’লির আওয়াজ শুনে শাহরিয়ার পাবেল আর প্রান্তিক ছাদে যায়।ছাদে কিছু দেখতে পায় না।প্রান্তিক ছাদের কিনারায় এসে নিচের দিকে তাকাতেই যেন পুরো শকড হয়ে যায়।চি’ৎকার করে উঠে “ভাইয়া ” বলে।ছুটে নিচে চলে যায়।প্রণয় এর মাথাটা তুলে নিজের হাতের উপর নিয়ে পা’গল এর মতো ভাইয়া বলে চি’ৎকার করে কান্না করতে থাকে। কয়েকজন গার্ড মিলে প্রান্তিক কে প্রণয় এর কাছ থেকে সরিয়ে জোর করে প্রণয় কে তুলে নেয় গাড়িতে। রওনা দেয় হসপিটাল এর দিকে।প্রণয় এর নিস্বাশ চলছে নিভু নিভু প্রদীপ এর ন্যায়।প্রাণ পাখি টা এখনো দেহ থেকে যায়নি।

একই হসপিটালে দুই দিকের অপারেশন থিয়েটার এ দুই জনের অপারেশন হচ্ছে।বাঁচার কোনো আশা দেখছে না ডাক্তার রা।বাকিটা আল্লাহর হাতে।হায়াত মউত এর মালিক তিনি।

দুই পরিবার এর আহাজারি চলছে হসপিটাল এর করিডোর এর মধ্যে। দুটো পরিবার এর মধ্য মণি ছিলো দুই জন।হসপিটাল এর অন্য পাশে দাঁড়িয়ে রিফাত,সজীব, সুজন,লাবণ্য কাঁদছে। কে কাকে সান্তনা দিবে?কি খবর আসে অপারেশন থিয়েটার এর ভিতর থেকে তা নিয়েই সবাই উদ্বিগ্ন চিত্তে পা’গল প্রায় অবস্থা।জান্নাত এর অপারেশন থিয়েটার এর দরজার সামনে জুরাইন এক নাগাড়ে কান্না করে চলছে।বোনের এমন অবস্থায় সাড়ে এগারো বছর ছেলেটা ও আজ যেন বড় হয়ে গেছে।এই কান্না করছে তো কিছুক্ষণ পর আবার মা কে গিয়ে বুঝায় “আপুর কিছু হবে না।কান্না করিও না”।কিন্তু নিজে কেই বুঝাতে পারে না।

প্রান্তিক স্তব্ধ হয়ে বসে আছে প্রণয় এর অপারেশন থিয়েটার এর সামনে। চোখের সামনে ভেসে উঠে প্রণয় এর সাথে হাজারো খু’নশুটির মুহূর্ত গুলো। দুই ভাই একসাথে এখানে সেখানে যাওয়া মজা করা।সব কিছুই আজকে মনে এসে বাধছে।


রিফাত ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।তার সামনের তরুণী টি উৎসুক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে তার কান্নারত মুখশ্রী এর দিকে।হ্যান্ড ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে রিফাত এর হাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

—মুখটা মুছে নাও রিফাত।

রিফাত রুমাল নিয়ে মুখ মুছে নেয়।মেয়ে টার দিকে তাকিয়ে অধর কোলে মেকি হাসির রেখা টানে।তরুণী রিফাত এর দিকে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করে বলে,

—তারপর?

রিফাত সামনের দিকে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আর তার পাশের তরুণী তার মুখ থেকে বাকিটা শুনার জন্য অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤
#স্যাড রিডিং 😥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here