সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -১০+১১+১২

পর্বঃ১০
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(কার্টেসি ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)

ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে যদি সূর্যদয় দেখা যায় তাও আবার সমুদ্রের পাড়ে বসে এর থেকে সুন্দর মূহুর্ত আর হয় না। কুয়াকাটার মূল সৌন্দর্য এই সমুদ্র সৈকত। ভোর বেলা আর গভীর রাতে শান্ত সমুদ্রের গর্জন, চারিদিকের ঠান্ডা বাতাসে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সমুদ্র গর্জন দিয়ে বড় বড় ঢেউগুলো বেলা ভূমিতে আঁচড়ে পড়ছে প্রতিমুহূর্তে। এমন হৃদয় জুড়ানো দৃশ্য ছোট্ট এই জীবনে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়।

রাইদা সমুদ্রের পাড়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।বড় বড় ঢেউ এসে তার পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। নাক টেনে সমুদ্রের ঘ্রাণ নিচ্ছে সাথে ঠান্ডা বাতাস শরীরে শিহরণ তুলে দিচ্ছে। রাইদার মন চাচ্ছে এখানে এভাবে বসে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করে জীবন পাড় করে দিতে।

ক্যামেরার ক্লিকের শব্দে রাইদা চোখ খুলে বাম পাশে তাকায়।ঘাড় বেঁকিয়ে আরাফের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়।

‘এভাবে হাসলে তো লক্ষ কোটি যুবক প্রাণ হারাবে তখন এর দায়ভার কে নিবে?’,চোখ থেকে ক্যামেরা নামিয়ে নিজের বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলে আরাফ।

‘সব দায়ভার ক্যামেরা ম্যানের।নিশ্চয়ই ক্যামেরা ম্যান পঁচা ছবি তুলেছে যা দেখে যুবকদের প্রাণ যাবে।’,রাইদা হাসতে হাসতে বলে।

‘ক্যামেরা ম্যান যতদিন বেঁচে আছে এই ছবিগুলো কাউকে দিবে না।’,কথাগুলো বলে রাইদার দিকে আবারো ক্যামেরা তাক করে আরাফ।

‘অনেক ছবি তুলেছেন তো এদিকে আসেন একটা ম্যাজিক দেখাই।’,ডান হাত বাড়িয়ে আরাফকে ডাকে রাইদা।

‘বসলাম দেখাও ম্যাজিক।’,রাইদার বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে বসে বলে আরাফ।

‘ক্যামেরাটা দেন এদিকে।’

‘দিবো কিন্তু তুমি ছবিগুলো দেখতে পারবা না,রাজি?’

‘আচ্ছা রাজি।ক্যামেরা দিয়ে চোখ বন্ধ করেন।’,রাইদা বলে।

আরাফ রাইদার কাছে ক্যামেরা দিয়ে চোখ বন্ধ করে সূর্য বরাবর হাত পা মেলে বসে।

‘এবার চুপ করে থাকবেন কোনো কথা বলবেন না।কয়েক মিনিট পর লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে তারপর চোখ খুলবেন।’

রাইদার কথা মতো আরাফ চোখ বন্ধ করে শান্ত হয়ে বসে।ধীরে ধীরে সমুদ্রের গর্জন,আঁচড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ তাকে অন্য এক অনুভূতি দেয়।এ অনুভূতির নাম অজানা। লম্বা শ্বাস নিয়ে চোখ খুলে সরাসরি সামনে না তাকিয়ে পাশে বসা রাইদার দিকে তাকায়। রাইদা এক ধ্যানে সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত।রাইদার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ভোরের সূর্যের দিকে তাকায়। চোখ নামিয়ে রাইদার পায়ের দিকে তাকালে দেখে তার দেওয়া ঝিনুকের পায়েল বাম পায়ে পড়েছে রাইদা।

রাইদার কোল থেকে ক্যামেরা নিয়ে আরাফ ঝিনুকের পায়েল পরিহিত পায়ের কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।

‘আরে কি করতেছেন?পায়ের ছবি কেনো তুলতেছেন?’,অবাক হয়ে রাইদা জিজ্ঞেস করে আরাফকে।

‘ডোন্ট মুভ রাই।ঝিনুকের জীবনটা সার্থক হয়েছে সেই প্রমাণটাই রাখছি।’

‘কি ব্যপার আজকাল বড়ই কবিদের মতো কথা বার্তা বলছেন কাহিনী কি?’,ভ্রু উঁচিয়ে আরাফকে জিজ্ঞেস করে রাইদা।

‘সব দোষ এক রমণীর।সেই রমণীকে দেখলে কখনো কবি হতে ইচ্ছে করে আবার কখনো হতে ইচ্ছে করে ঝিনুক।’,আরাফ হেঁসে জবাব দেয়।

‘বাকি কথা জমিয়ে রাখুন বোকামশাই যাতে ভবিষ্যত রমণীর জন্য কথার ভান্ডার না ফুরায়।’,কথাগুলো আরাফকে বলে উঠে দাঁড়ায় রাইদা।

‘চলে যাচ্ছো?’,মায়া ভর্তি গলায় জিজ্ঞেস করে আরাফ।

‘হোটেলের রুমেই যাচ্ছি অন্য কারো হাত ধরে পালাচ্ছি না।গোসল সেরে রেডি হয়ে আসছি আর আপনি ও চলেন।’,রাইদা হাসতে হাসতে বলে আরাফকে।

‘তুমি যাও আমি একটু পরে যাবো।’,আরাফ বিদায় জানায় রাইদাকে।

আরাফকে গুলি করার ভঙ্গি করে রাইদা আর আরাফও বুকে হাত দিয়ে পড়ে যাওয়ার ভঙ্গি করে। হাসতে হাসতে হোটেলের দিকে যায় রাইদা।

গত রাতে দেরিতে ঘুমানোর কারণে আজকে প্লান করা হয় ভোরে না সকাল বেলা ঘুরতে বের হবে সকলে।ভোর বেলা হোটেলে সবাই ঘুমে বিভোর ছিলো যখন তখন আরাফ উঠে রাইদাকে ডেকে বীচে নিয়ে আসে। দু’জনে মিলে ভোরের সৌন্দর্য উপভোগ করে এতক্ষণ।

..
‘ইউ লাইক হিম?’,রুহি জিজ্ঞেস করে।

‘ছেলেটা এমন যে পছন্দ না করে উপায় নেই।ঠিক যেমন আমি চাইতাম একদম সেইরকম ও।’,রাইদা হেঁসে বলে।

‘ব্রো আর ইউ ইন লাভ উইথ আরাফ?’,বাপ্পি জিজ্ঞেস করে।

রাইদা কেশে উঠে।
‘আরে পছন্দ করি বলেছি। পছন্দ করি মানে ভালোবাসি এমন না।এত জলদি ভালোবাসা হয় নাকি।তাছাড়া উনি আমাকে পছন্দ করে কিনা সেটাও সন্দিহান।’,রাইদা উত্তর দেয় বাপ্পিকে।

‘ছেলেটা তোকে পুরোদমে লাইন মারছে আমি শিওর।’,পায়েল হাই তুলে বলে।

‘এই সকাল নয়টায় এসব বলতে কল দিয়েছিস?’,অর্ক ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে।

‘না তোর বিয়ের খবর দিতে কল দিয়েছি।ভাবলাম আরাফের বিষয়টা তোদের সাথে শেয়ার করি।’,রাইদা সরল ভঙ্গিতে বলে।

‘তোর কাছ থেকে শুনে আমার কাছে তো ছেলেটাকে ভালোই মনে হচ্ছে তারপরও ছেলে মানুষ উপরে থাকে এক আর ভিতরে আরেক।’,রুহি বলে।

‘কি বললি? আবার বল।ছেলেরা ভিতরে এক আর বাহিরে আরেক?’,রুহির কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে অর্ক।

‘তুই জ্বলছিস কেনো? তোরে কিছু বলছে নাকি?’,অর্ককে ঝারি দিয়ে বলে রাইদা।

‘শোন রাই আরাফ ভাইয়ের ঠিকানা নাম্বার দিস বাকি খোঁজ আমি নিবো।’,বাপ্পি সকলকে থামিয়ে বলে।

‘আরে তোরা বিষয়টা কোন দিকে নিচ্ছিস বল তো।’,রাইদা বাপ্পিকে জিজ্ঞেস করে।

‘তুই একটা ছেলের কথা বলেছিস তার মানে অবশ্যই ছেলেটা স্পেশাল না হলে তুই বলতি না। এই কথা বুঝতে শনি রবি লাগে নাকি।’,বাপ্পি বিরক্ত হয়ে বলে।

‘ওনাকে পছন্দ করি কথাটা সত্যি তবে এ বিষয়ে আমি আগাতে পারবো না বিশাল সমস্যা আছে।আমি যা ভাবছি তা যদি সঠিক হয় তাহলে আরাফের সাথে আমার না জড়ানোই ভালো।’,মুখ কালো করে কথাগুলো বলে রাইদা।

‘কি হয়েছে সমস্যা কোনো?’,রুহি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে।

‘রাই বল আমাদের কি হয়েছে।তুই তো ভীরু মেয়ে না কিন্তু আজ তোর কথায় আমি ভয়ের আভাস পাচ্ছি।কি নিয়ে ভয় পাচ্ছিস তুই?’,পায়েল জিজ্ঞেস করে।

‘আরাফকে হারানোর ভয়।’
রাইদার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে যামিনী কল দিয়েছে।গতকালকেই যামিনীর নাম্বার নিয়ে সেভ করে রেখেছিলো।

‘হ্যা আপু বলো।’,কল রিসিভ করে বলে রাইদা।

‘এক্ষুণি নামো আমরা বের হবো।’,যামিনী উত্তর দেয়।

‘আচ্ছা আসছি।’
কল কেটে রাইদা ল্যাপটপের স্কিনের দিকে তাকায়। বন্ধুরা বুঝে যায় এখন রাইদা বের হবে।বন্ধুদের বিদায় দিয়ে জামা পাল্টে নেয় রাইদা।

দরজা খুললেই দেখে সায়ন তার রুম থেকে বেরিয়ে দরজা লক করছে।রাইদা সায়নকে দেখে একদফা অবাক হয় কারণ কাকতালীয় ভাবে দুজনের জামার রঙ মিলে গেছে।
সায়ন রাইদার দিকে একবার তাকায় আবার নিজের দিকে তাকায়।রাইদা লং কুর্তি পড়েছে সাথে জিন্স আর আরাফ জিন্সের সাথে শার্ট পড়েছে।দু’জনেই কালো রঙ পড়েছে। রাইদা ভীষণ বিরক্ত হয় এই রকম কাকতালীয় ঘটনার কারণে।

‘মনে হচ্ছে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে ফলো করছো? এভাবে তো রঙ মিলে যাওয়ার কথা না।’,সায়ন গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলে।

‘আমার বয়েই গেছে আপনাকে ফলো করতে।’,ডান হাতের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলে রাইদা।

‘তাহলে চুপিচুপি আমার রুমে সকাল বেলা ঢুকেছিলে কেনো ? এই তুমি কি ঘুমন্ত সায়নের সুযোগ নিতে চাইছিলে নাকি? সত্যি করে বলো তো আমার কোনো সুযোগ টুযোগ নাওনি তো? ‘,রাইদার দিকে ঝুঁকে প্রশ্ন করতে থাকে সায়ন

‘ছি! আপনি সত্যিই এক নাম্বার অসভ্য লোক।’,মুখ ঘুরিয়ে বলে রাইদা।

‘এখনো তো অসভ্যতার কিছুই দেখাইনি। সাবধানে থেকো রাই কখন যে আগের সায়ন বেরিয়ে আসে সেটা টেরও পাবে না তুমি।’,হেঁসে বলে সায়ন।

সায়নের কথা শুনে সাথে সাথে পাশ থেকে মুখ ফিরিয়ে সায়নের দিকে তাকায় রাইদা।

‘এই নাও টাকাগুলো দিয়ে ইচ্ছে মতো শপিং করবা।পাকনামি করে ফেরত দিতে আসছো আমি কি টাকা ফেরত চেয়েছি? আমি তো একটু সেবা চেয়েছি সেটা তো দিলা না উল্টো টাকার গরম দেখালা।এবার ছোট বাচ্চা ভেবে মাফ করে দিলাম পরেরবার টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করবা না পরিণতি খুব খারাপ হবে।’,রাইদার ডান হাত টেনে টাকাগুলো রেখে বলে সায়ন।

রাইদা একবার সায়নের দিকে তাকায় আবার সায়নের ধরে রাখা হাতের দিকে তাকায়।সায়ন হাত ছেড়ে দেয় কিন্তু হুট করে এক কাজ করে বসে।রাইদার ডান গাল টেনে দিয়ে নিজের যেই হাতের আঙুল দিয়ে রাইদার গাল টেনেছে সেখানে চুমু খেয়ে ঠোঁট প্রসারিত করে বাশি বাজাতে বাজাতে স্থান ত্যাগ করে।

রাইদা সায়নের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।একে তো আরাফকে পছন্দ করে সে আবার সায়নের হাবভাব ও বলছে অন্য কিছু। সায়নের জায়গায় অন্য ছেলে হলে সে বিষয়টা পরোয়া করতো না কিন্তু সায়নকে সে যতটুকু চিনে তাতে সায়ন কি যে ভয়ংকর হতে পারে এটা কেউ না জানলেও সে অনেক ভালো করেই জানে।

গতরাতে সায়নের রুম থেকে এক প্রকার অপমানিত বোধ করে বের হয়েছিলো রাইদা। ঠিক করেছিলো সকাল হতেই পুরো টাকাটাই সায়নকে ফেরত দিবে তাতে সায়ন যা ই বলুক।
সকাল বেলা বীচ থেকে ফিরে এটিএম থেকে টাকা তুলে রাইদা।এরপর সায়নের রুমের দরজায় ধাক্কা দিতে দেখে দরজা খোলা।রুমে গুটিপায়ে হেঁটে সায়নের হাতের পাশে টাকা গুলো রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। ঘুম থেকে উঠে টাকাগুলো দেখে সায়নের মেজাজ বিগড়ে যায়।আগেই ভেবে রেখেছিলো রাইদা যখন বের হবে তখন দরজার সামনেই রাইদাকে শিক্ষা দিবে।একটু আগে তাই করে গেলো সে।

..

হোটেল থেকে বের হয়ে স্থানীয় এক রেস্তোরাঁয় সকলে নাশতা সারে।আজকে কুয়াকাটায় ঘুরার শেষ দিন।একটা বড় ইন্জিন নৌকা ভাড়া করে সকলে রওনা দেয় ফাতরার বনের দিকে।নৌকার মাঝির পাশে বসে গল্প করছে আরাফ আর ক্যামেরা দিয়ে প্রকৃতির ছবি তুলছে। নৌকার আরেক পাশে বসেছে রুবেল,যামিনী আর শ্রেয়া।যামিনী শ্রেয়ার ছবি তুলছে আর রুবেল ওদের বিরক্ত করছে। নৌকার মাঝে বসেছে রাইদা তারই বিপরীত পাশে বসেছে সায়ন। সে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে রাইদার দিকে তাকিয়ে আছে।

ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলারটি ধীরে ধীরে ফাতরার চরে প্রবেশ করে।রাইদা এক হাতে ক্যামেরা নিয়ে ভিডিও করছে।

‘রাই আমার কাছে ক্যামেরা দাও আমি তোমাকে সহো ভিডিও করে দিচ্ছি।এমনিতেও এই মেকআপ সুন্দরীদের ছবি তুলতে তুলতে আমি বিরক্ত। ‘,রুবেল রাইদাকে বলে।

‘এই তুই কি বললি?জানিস এক একটা মেকআপ প্রডাক্টের দাম কত?তোরে বিক্রি করলেও এত টাকা আসবে না।’,শ্রেয়া রুবেলের দিকে রাগী গলা বলে।

‘ওরে আমার বিল গেইটস! রাই ক্যামেরাটা দাও।’,শ্রেয়াকে ভেংচি দিয়ে রাইদার কাছে ক্যামেরা আনতে যায়।

রাইদা হাসিমুখে ক্যামেরাটা রুবেলকে দেয়।
ট্রলারটি ফাতরার চরে প্রবেশ করার পর দু’পাশের সবুজে ঘেরা অরণ্য স্বাগত জানায় সকলকে। রাইদা চারিদিকে তাকিয়ে অরণ্য দেখছে।ট্রলারের জেটি পেরিয়ে চরের আরো ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে শান-বাঁধানো একটি পুকুর ও বন বিভাগ নির্মিত একটি রেস্টহাউস। পুকুরপাড় দিয়ে এবার ট্রলারটি ঘন গহিন অরণ্যে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে।

মানুষের কোলাহল মুক্ত ঘন অরণ্যে ছোট বড় পাখির কিচির মিচির শব্দ সাথে পানির কলকল শব্দ মনোরম এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।রাইদা অবাক দৃষ্টিতে প্রকৃতি দেখছে,মনে হচ্ছে সে।আরেক জগতে হারিয়ে গেছে।

ট্রলার থামানো হয় বিশাল ঘন অরণের সামনে।আরাফ ট্রলার থেকে নেমেই রাইদার হাত ধরে নামায় চরে।বিষয়টা সায়নের বোধহয় ভালো লাগেনি।
সকলে নেমে হাঁটতে শুরু করে।প্রথমে রুবেল ক্যামেরা হাতে যাচ্ছে তারই পিছন পিছন যাচ্ছে শ্রেয়া আর যামিনী।

আরাফ ছবি তুলছে তারই পিছনে রাইদা হেঁটে আসছে ধীর পায়ে।সায়ন হাঁটা থামিয়ে সিগারেট ধরায়। নাক টেনে মাটির ঘ্রাণ নিচ্ছিলো রাইদা তখনই নাকে সিগারেটের গন্ধ আসে।হাঁটা থামিয়ে আশেপাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে পিছনে তাকায়।

‘যা ভেবেছিলাম তাই!এই লোক ছাড়া ঘন অরণ্যে আর কারো দুঃসাহস হবে না সিগারেট টানার।’,সায়নের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বলে রাইদা।

সামনে তাকিয়ে দেখে আরাফ তাকে খেয়াল না করে আপন মনে ছবি তুলতে তুলতে অনেকটা চলে গেছে।রাইদা পিছনে হাঁটা দেয় সায়নের দিকে।

সায়ন আপন মনে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াচ্ছে।যখন তার মন মেজাজ খারাপ হয় বা প্রচন্ড রেগে যায় সাথে সাথে সিগারেট ধরায়।এই মূহুর্তে কি কারণে তার মেজাজ খারাপ হয়েছে বিষয়টা এখনো বুঝতে পারছে না।

‘এক মাত্র আপনিই পারেন এতো মনোরম পরিবেশে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াতে।’,সায়নের সামনে দাঁড়িয়ে দু-হাত কোমড়ে দিয়ে বলে রাইদা।

সায়ন রাইদার কথার কোনো জবাবই দেয় না।সে তার মতো সিগারেট টানতে থাকে।রাইদা এবার বিরক্ত হয়ে সায়নের একদম কানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় কিছু বলার জন্য । সায়ন পাশ ফিরতে নিলে ধাক্কা লাগে রাইদার।টাল সামলাতে না পেরে রাইদা সায়নের বাম বাহু খামচে ধরে।সায়ন নিজের বাম হাত রাইদার কোমড়ে রেখে রাইদাকে পরা থেকে বাঁচায়।

চোখ তুলে সায়নের দিকে তাকায় রাইদা।সায়ন একধ্যানে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সায়নের ধূসর চোখের দিকে তাকিয়ে ঘোরে হারিয়ে যায় রাইদা।

রাইদার ঘোর ভাঙে কারো পায়ের শব্দে। তাড়াতাড়ি সায়নের বাহু ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। সায়ন আগের ন্যায় তার দিকে তাকিয়ে আছে।সায়নের হাতের দিকে রাইদার চোখ গেলে দেখে সিগারেট পুড়ে সায়নের আঙুলে লাগছে যেদিকে সায়নের নজর নেই।

‘আপনার আঙুল পুড়ছে।’,সায়নের আঙুলের দিকে ইশারা করে বলে রাইদা।

‘পুড়ুক তাতে তোমার কি?তুমি তোমার চিন্তা করো।’,সায়ন গম্ভীর গলায় বলে।

‘এই জন্য মানুষের ভালো করতে হয় না।ভালোর জন্য বললাম উল্টো আমাকেই কথা শোনাচ্ছে।’,রাইদা বিরক্ত হয়ে বলে।

‘রাই?এখানে কি করছো?’,আরাফ প্রশ্ন করে।

‘কিছু না চলেন।’,আরাফের কথার জবাব দিয়ে তার পিছন পিছন যায় রাইদা।

‘কিরে তোকে কি আলাদা করে বলতে হবে?’,সায়নকে বলে আরাফ।

সায়ন ইশারায় তাদের যেতে বলে। রাইদা আর আরাফ হাঁটতে শুরু করে।
যে হাত দিয়ে রাইদার কোমড় ধরেছিলো সে হাতে চুমু খায় সায়ন।ডান হাত সামনে এনে আঙুলের পোড়া অংশটার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়।

বনের সবুজ অরণ্য আর কয়েকটি ছোট খালের ওপরে তৈরি বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে চরের পূর্ব অংশে চলে আসে সকলে।যেখানে রয়েছে একটি ছোট সমুদ্রসৈকত। ভাটা থাকায় সবাই সৈকতটিতে নেমে যায়। সৈকতে নেমে সকলে অনন্দ করতে থাকে।সায়ন এক পাশে মাটির মধ্যে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাফ সৈকতের মধ্যে ও ছবি তুলে দিচ্ছে সবার। যার যার ব্যাগ প্যাকে এক্সট্রা জামা নিয়ে এসেছে। গোসল শেষ করে সকলে খিদে পেয়ে যায়।
এই চরে একটাই খাবারের দোকান আছে সেখানে গিয়ে মোটা চালের গরম ভাত আর মুরগীর মাংস দিয়ে দুপুরের ভোজন সেরে নেয় সবাই।

ফাতরার চর থেকে বের হয়ে চলে যায় পানি জাদুঘর, কেরানি পাড়া, আলীপুর ও মহিপুর মৎস বন্দরে।

সারাদিন ঘুরাঘুরি করে হোটেলে ফিরে সকলে ফ্রেশ হয়ে আবার বীচে চলে আসে।এটাই যেহেতু কুয়াকাটায় শেষ রাত তাই রাতটা স্মরণীয় করতে বীচে সবাই আসে।

রাত সাড়ে এগারোটা সমুদ্রের তীরে পাশাপাশি বসে আছে রুবেল,শ্রেয়া,যামিনী, রাইদা আর আরাফ।সকলের দৃষ্টি রাতের সমুদ্রের দিকে। রাতের বেলা শান্ত সমুদ্রে একটু পরপর ছোট ঢেউ তুলে গর্জন দিচ্ছে।মেঘলা আকাশ আর সমুদ্রকে দেখে মনে হচ্ছে জলে আকাশে মিলে গেছে।

‘তোদের অনেক মিস করবো।শেষ ট্যুরটা অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’,নিরবতা ভেঙে বলে যামিনী।

‘যত যাই বলি যোমিন অবশেষে তোর হাত থেকে আমরা মুক্তি পাবো এটা বড় আনন্দের।’,রুবেল যামিনীকে খোঁচা মেরে বলে।

‘তোরে সবথেকে বেশি মিস করবো।’,রুবেলের কাঁধে হাত রেখে বলে যামিনী।

‘ভার্সিটির লাইফে তুই একমাত্র বান্ধবী আমার যে আমাকে গভীরভাবে চিনে।তোর মতো মেয়েকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে আমি ধন্য।তোকে ছাড়া কীভাবে যে শপিং এ যাবো,কার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিবো সেটা ভেবে এখনই বুকের মধ্যে মোচড় দিচ্ছে।’, যামিনীর হাত ধরে বলে শ্রেয়া।

রাইদা অবাক হয়ে সব শুনছে।সাহস করে জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না কি হয়েছে।

‘যামিনী এমন একজন মেয়ে যে আমাদের সকলকে একত্রিত করে এই গ্রুপটা বানিয়েছে।সত্যি যামিনী তুই না থাকলে আমাদের পাঁচ জনের এই গ্রুপটার কখনো সৃষ্টি হতো না।’,সমুদ্রের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে আরাফ।

‘তোরা এভাবে বলছিস যেনো আমি হারিয়ে যাচ্ছি!আরে এখনো অনেকটা দিন বাকি তোদের জ্বালানো।’,যামিনী মন খারাপ করে বলে।

‘হ তুই তো এতো সহজে আমাদের ঘাড় থেকে নামার পাবলিক না সে তো জানিই আমি।হুদাই তোর জন্য একটু সিমপ্যাথি দেখাইলাম।’,রুবেল অলস ভঙ্গিতে বলে।

যামিনীর ফোন বেজে উঠে।ফোন হাতে বসা থেকে উঠে কথা বলতে চলে যায় যামিনী। যামিনীর সাথে শ্রেয়াও উঠে যায়।

‘যামিনী আপু কোথায়ও যাচ্ছে নাকি?’,আরাফকে প্রশ্ন করে রাইদা।

‘আরে তেমন কিছু না যোমিনের বিয়া ঠিক হইছে।’,রুবেল উত্তর দেয়।

‘যামিনী আপুর বিয়ে!’,অবাক হয়ে রাইদা বলে।

‘হ্যা সামনের মাসে।বিয়ের আগে এটাই আমাদের গ্রুপের শেষ ট্যুর সেইজন্য সকলের একটু মন খারাপ। ‘,আরাফ জবাব দেয়।

‘জানো রাই সময়টা কীভাবে যে চলে গেলো আমার তো এখনো মনে হয় আমি হাইস্কুলে পড়ি।ঢাকায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না একদম।খালি মনে হচ্ছে ফিরলেই এইসব আনন্দ ফেলে জীবন যুদ্ধে নামতে হবে।’,হতাশ হয়ে বলে রুবেল।

‘হতাশ হবেন না ভাইয়া।জীবন মানেই যুদ্ধ। ‘,রুবেলকে আশ্বাস দিয়ে বলে রাইদা।

রাইদার কথা শুনে রুবেল হেঁসে দেয়।
‘আমি গিয়ে যোমিন আর শ্রেয়ুকে জ্বালাই।নিশ্চয়ই যোমিনির হবু জামাই কল দিছে।এমনিতেও ঘুম পেয়েছে লম্বা একটা ঘুম দিবো।’,কথাগুলো বলে রুবেল হোটেলের দিকে যায়।

আরাফ রাইদার থেকে অনেকটা দূরে বসে ছিলো সকলে চলে যেতেই এগিয়ে এসে রাইদার ডান পাশে বসে।

দু’জনে কোনো কথা না বলে নিরবে বসে থাকে। চোখ বন্ধ করে রাইদা সমুদ্রের গর্জন শুনতে থাকে।মৃদু হাওয়ায় তার খোলা চুলগুলো উড়ছে। কখনো কখনো বড় ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে সাথে দক্ষিণা বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে রাইদার চোখ মুখে আঁচড়ে পড়ছে। রাইদা নিজের নয়ন জোড়া বন্ধ রেখেই এই শান্ত পরিবেশটা উপভোগ করছে।

পাশে বসে আরাফ রাইদার দিকে তাকিয়ে হাসছে।এ’কয় দিনে মেয়েটার মায়ায় সে জড়িয়ে গেছে।মেয়েটা এমন যে কেউ আকর্ষিত হতে বাধ্য।

আরাফ নিজের ফোন বের করে নিঃশব্দে রাইদার একটা ছবি তুলে নেয়। ফোনটা সামনে এনে ছবিটা মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে আরাফ।
কিছুক্ষণ পর আরাফের ফোনে মেসেজ আসে।

‘পিছনে তাকা।’সায়নের মেসেজটা পড়ে আরাফ পিছনে তাকায়।

প্যান্টের পকেটে দুই হাত দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে সায়ন। আরাফ ঢোক গিলে বোঝার চেষ্টা করে সায়ন তাকে দেখে নিয়েছে নাকি রাইদার ছবি তুলতে। এই মূহুর্তে আরাফ চাচ্ছে না রাইদাকে নিয়ে তার অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে।সময় নিয়ে আরাফ বুঝতে চায় রাইদার প্রতি কি তার শুধুই মায়া নাকি এর বেশি কিছু। ধীর পায়ে আরাফ উঠে সায়নের কাছে যায়।

‘কখন এলি তুই?’,সায়নকে প্রশ্ন করে আরাফ।

‘যখন তুই ফোনে কিছু একটা দেখায় ব্যস্ত ছিলি তখন।কি দেখছিলি এতো মনোযোগ দিয়ে?’,সায়ন গম্ভীর জিজ্ঞেস করে।

‘গেম খেলছিলাম।’,আরাফ জবাব দেয়।

‘যামিনী তোকে ডাকছে গিয়ে শোন কি বলতে চায়।’,সায়ন আরাফকে বলে।

‘আচ্ছা যাচ্ছি কিন্তু রাই তো একা বসে আছে ওকে ডেকে নিয়ে যাই?’,রাইদার দিকে তাকিয়ে বলে আরাফ।

‘তুই যা একটু পর আমি রাইকে ডেকে পাঠাচ্ছি।’,সায়ন আরাফকে বলে।

‘ততক্ষণ রাইয়ের খেয়াল রাখিস গেলাম আমি।’
আরাফের বলা কথাটা কেমন জানি লাগলো সায়নের কাছে।আরাফ হোটেলের দিকে চলে যায়। সায়ন রাইদার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায়। আস্তে করে রাইদার পাশে বসে। রাইদা ঘাড় বাকিয়ে আগের ন্যায় চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

‘আমার না ইচ্ছে হচ্ছে এখানেই থেকে যাই।এত সুন্দর সমুদ্র ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।এই যে বসে আছি মন চাচ্ছে সারারাত এভাবেই থাকি।’,রাইদা বলতে থাকে।

সায়ন কোনো জবাব না দিয়ে রাইদার পাশে আরো চেপে বসে।মাটিতে রাখা রাইদার হাতের উপর নিজের বাম হাতটা রাখে। চোখ বন্ধরত অবস্থায় হাতের উপর শীতর স্পর্শ পেয়ে রাইদা কেঁপে উঠে। রাইদার দিকে ফিরে ডান হাত দিয়ে এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে থাকে সায়ন। রাইদা চুপ করে স্পর্শগুলো অনুভব করছে। ধীরে ধীরে চোখ খুলে রাইদা কিন্তু আরাফের বদলে সায়নকে তার দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখে রেগে যায়।সাথে সাথে ধাক্কা দেয় সায়নকে। ধাক্কা খেয়ে সায়ন কিছুটা পিছনে ঝুঁকে যায়।

‘আপনি কখনো বদলাবেন না তাই না? আপনাকে কতবার বলবো আমাকে স্পর্শ করবেন না।আমি আপনাকে দু’চোখে সহ্য করতে পারি না।জাস্ট অসহ্য লাগে আপানাকে।’,বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে রাইদা।

সৈকতে কয়েকজন মানুষ বসে ছিলো রাইদার চিৎকার শুনে তার আঁড়চোখে তাকায়।

‘সমস্যা কি আপনার?কেনো বিরক্ত করছেন আমাকে?’,এগিয়ে গিয়ে সায়নের টিশার্ট টেনে বলে রাইদা।

‘আমার একমাত্র সমস্যা তুমি।’,সায়ন জবাব দেয়।

‘কি চাইছেন স্পষ্ট করে বলুন তো।এসব লুকোচুরি খেলা আমি আর নিতে পারছি না।’,আগের ন্যায় সায়নের টিশার্ট টেনে প্রশ্ন করে রাইদা।

‘তোমাকে চাইছি রি।’,ঠান্ডা গলায় উত্তর দেয় সায়ন।

সায়নের টিশার্ট ছেড়ে রাইদা পেছাতে থাকে।
‘কি নামে ডাকলে আমায়?তার মানে আপনার সব মনে আছে?’,আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে রাইদা।

‘তোমার প্রতি আমার অনুভূতি ঠুনকো না যে এতো সহজেই ভুলে যাবো।’,সায়ন রাইদার দিকে শীতল চাহনি দিয়ে কথাগুলো বলে।

‘আর আপনার প্রতি আমার তীব্র ঘৃণা যা কখনোই পাল্টাবে না।আই জাস্ট হেট ইউ মিস্টার সায়ন।’,রেগে কথাগুলো বলে রাইদা।

রাইদা পিছনে পেছাতে পেছাতে উল্টো ঘুরে দৌড় দেয়।কোথায় যাচ্ছে তার জানান নেই তবে সায়নের থেকে তার আবারো পালাতে হবে এটা সে বুঝে গেছে।

রাইদাকে হোটেলের উল্টোদিকে দৌড়াতে দেখে সায়ন ঘাবড়ে যায়।

‘রি থামো।কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমার কথাটা একবার শুনে যাও রি। রিহ…’,চিৎকার করে রাইদাকে ডেকে পিছন পিছন দৌড় দেয় সায়ন।
পর্বঃ১১
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(কার্টেসি ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)

দৌড়ে রাইদা কোথায় যাচ্ছে সে জানে না।তার মাথায় এখন একটা বাক্য ঘুরছে।

‘সায়নের থেকে পালাতে হবে।’

সমুদ্র ছেড়ে লোকাল মার্কেটে ঢুকে যায় রাইদা। পিছনে ফিরে দেখছিলো সায়ন আসছে কিনা তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পরে যায়। ইটের টুকরো লেগে পায়ে আঘাত পায় রাইদা।ছেলেটা ড্যাবড্যাব করে রাইদার দিকে তাকিয়ে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।

রাইদা দু’হাত দিয়ে বাম পা ধরে ব্যথা সংযত করার চেষ্টা করতে থাকে।ছেলেটা যখন বুঝে রাইদা ভালোই ব্যথা পেয়েছে তখন দাঁড়ানো থেকে বসে পরে রাইদার সামনে।

‘আপু দেখি মচকে গেছে কিনা।’,রাইদার পায়ে হাত দিয়ে বলে ছেলেটা।

‘না না ভাইয়া আমি ঠিক আছি।’,ব্যথায় কুঁকড়ে বলে রাইদা।

‘সরি আপু আমি খেয়াল করিনি আসলে…’,ছেলেটা নিজের কথা শেষ করতে পারে না এর মধ্যে গালে চড় পরে।

আকর্ষিক ঘটনায় ছেলেটা সহ উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। সায়ন ছেলেটাকে চড় মেরে শার্টের কলার ধরে দাঁড়া করায়। কাজ ফেলে ভীড় করে মানুষ তামাশা দেখার জন্য।

‘ওর পায়ে হাত দেওয়ার সাহস কে দিয়েছে?’,রেগে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে সায়ন।

‘আসলে ভাই..’,ছেলেটা আর কিছু বলার পূর্বেই আরেক গালে চড় পরে।

‘সায়ন!’,রাইদা নিজের ব্যথা,ভয় ভুলে সায়নকে চেঁচিয়ে ডাকে।

রাইদার ডাকে সায়ন নিচে তাকায়।

‘আমি ইটে ধাক্কা খেয়ে পরে গেছি তখন ভাইয়াটা সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে।উনি বলছিলো ডাক্তারি পড়ে তাই পা চেক করতে দিয়েছি, ছাড়ুন ভাইয়াকে।’,ছেলেটাকে বাঁচাতে বানিয়ে কথা গুলো বলে রাইদা।

নিজের ভুল বুঝতে পেরে ছেলেটার কলার ছেড়ে রাইদার সামনে সায়ন বসে পরে পা দেখতে।
ছেলেটা বোকার মতো নিজের দুই গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।মানুষজন উঁকি দিচ্ছে ঘটনা এরপর কি হয় সেটা দেখার জন্য।

‘বেশি লেগেছে?’,নরম স্বরে জিজ্ঞেস করে সায়ন।

‘না ব্যথা সব চলে গেছে আপনার কাহিনী দেখে।’,দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে রাইদা।

‘কে বলেছিলো ওভাবে দৌড় দিতে? তোমাকে কিছু বলছি আমি? নাকি তোমাকে খেয়ে ফেলবো? হোটেলে চলো বাকিটা বুঝাচ্ছি।’,ধমক দিয়ে রাইদাকে বলে সায়ন।

ব্যথার কারণে রাইদা দাঁড়াতে পারছে না।হাত ধরে রাইদাকে দাঁড় করায়। এরপর নিজের কাঁধে রাইদার হাত রেখে পুরো ভর নিয়ে সায়ন হাঁটতে শুরু করে।

‘ভাই আমি দুঃখিত কিছু মনে করবেন না।ও না বলেই এদিকে দৌড় দিয়েছিলো তাই মাথা গরম হয়ে গেছিলো।আশা করি আপনি আমার অবস্থা বুঝতে পারবেন।’,হাঁটা থামিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।

‘আরে না ভাই ঠিক আছে সমস্যা নেই।আপনি ভাবীকে নিয়ে যান।’,ছেলেটা জোর পূর্বক হেঁসে বলে।

‘আরে আমি কারো ভাবী না মানে এই লোক আমার বর না ভাই।আমি এখনো সিঙ্গেল। ‘,চেঁচিয়ে রাইদা বলে।

‘চুপ।আরেকটা কথা বললে সমুদ্রে ফেলে দিবো।’,সায়ন ধমক দিয়ে বলে।

‘আপনাকে আমি লঞ্চ থেকে পদ্মা নদীতে ফেলে দিবো। ‘,রাইদা উল্টো সায়নকে বলে।

‘আমি সাঁতার পারি আময় পদ্মা নদীতে ফেললে সমস্যা নেই।তুমি তো খালে,পুকুরে ডুবে যাও তোমায় সমুদ্রে ফেললে কি হবে বুঝতে পারছো?’,সায়ন ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করে।

রাইদা রাগী দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকায়।সায়ন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রাইদাকে ধরে হোটেলের দিকে নিয়ে যায়। হোটেলের সামনে চলে এলে ফোন বেজে উঠে সায়নের।

হোটেলে ঢুকে রিসিপশনের সামনের সোফায় রাইদাকে বসিয়ে দেয়। আবারো সায়নের ফোন বেজে উঠে। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে আরাফ কল দিয়েছে।

‘হ্যা বল।’,কল রিসিভ করে বলে সায়ন।

‘তোরা কই?বীচে তো তোদের দেখছিনা না।এতো রাত হলো রাই এখনো রুমে ফেরেনি ও কি তোর সাথে আছে?’,আরাফ চিন্তিত গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘তুই কি রাইয়ের রুমে গিয়েছিলি?’,সায়ন উল্টো প্রশ্নে করে আরাফকে।

‘আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করছিস কেনো?’,আরাফ বিরক্ত হয়ে বলে।

‘রাই পায়ে ব্যথা পেয়েছে এখন আমরা হোটেলের রিসিপশনের সামনে।’,কথাটা বলে কল কেটে দেয় সায়ন।

‘এখানে চুপ করে বসবা আমি দেখি ওষুধের ব্যবস্থা করা যায় কিনা।’,রাইদাকে কথাটা বলে সায়ন রিসিপশনের দিকে যায়।

‘কি হয়েছে রাই?’,হাঁপাতে হাঁপাতে রাইদার পাশে এসে বসে জিজ্ঞেস করে আরাফ।

‘তেমন কিছু না একটু ব্যথা পেয়েছি।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘কীভাবে? দেখি তো।’,আরাফ রাইদার পায়ের হাত দিয়ে দেখতে থাকে।

এতক্ষণে রাইদা খেয়াল করে বাম পায়ের গোড়ালি ছিলে গেছে সাথে পায়ের আঙুলেও বেশ ব্যথা পেয়েছে।

‘কিছু হয় নি।’,পা থেকে আরাফের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে রাইদা।

‘তুমি বললেই হলো নাকি এই যে আমি দেখতে পেয়েছি অনেকটা ব্যথা পেয়েছো।এতো ব্যথা কীভাবে পেলে?’,আরাফ রাইদাকে প্রশ্ন করে।

‘ব্যাঙের মতো লাফালাফি করছিলো তখন নিজের দোষেই ব্যথা পেয়েছে।’,সায়ন গম্ভীর গলায় জবাব দেয়।

‘কিন্তু বীচের বালুতে পরে এভাবে ব্যথা পেলে কি করে?’,আরাফ রাইকে আবারো প্রশ্ন করে।

‘চল তোকে বীচে ফেলে দিয়ে দেখাই কীভাবে পরেছিলো।’,সায়ন বিরক্ত হয়ে বলে।

‘আমি রুমে যাবো।’,রাইদা হুট করে বলে।

‘আমি দিয়ে আসি একা তো যেতে পারবা না।’,আরাফ রাইদাকে বলে।

সায়ন চুপ করে দাঁড়িয়ে রাইদার উত্তরের অপেক্ষা করছে।রাইদা একবার সায়নের দিকে তাকায় আবার আরাফের দিকে তাকায়।

‘বাকিরা কি ঘুমে?’, সায়ন আরাফকে প্রশ্ন করে।

‘হ্যা ওরা শুয়ে পড়েছে।উঠো রাই তোমাকে রুমে দিয়ে আসি।’,আরাফ রাইদাকে তাড়া দিয়ে বলে।

‘না আমি যেতে পারবো সমস্যা নেই।আপনি রুমে চলে যান।’, ইতস্তত করে বলে রাইদা।

‘এতো পাকামি তোমার করতে হবে না উঠো।’,আরাফ রাইদার হাত ধরে দাঁড়া করায়।

রাইদা আরাফের হাত ধরে লিফটের দিকে যায়।পিছন পিছন সায়ন আসে। রাইদা মাঝে দাঁড়ায়, বাম পাশে দাঁড়ায় আরাফ আর ডান পাশে সায়ন দাঁড়ায়। লিফটে উঠে আরাফের হাত ছেড়ে দেয় রাইদা।

তৃতীয় তলায় এসে লিফট থামলে তিনজনে লিফট থেকে বের হয়।রাইদা কারো সাহায্য ছাড়া একাই নিজের রুমের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে চায় কিন্তু আরাফ তাকে একা যেতে দিতে চায় না।হাত ধরে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে চায়।

‘তুই কি এতো রাতে রাইয়ের রুমে যেতে চাইছিস?গিয়ে শুয়ে পড় ও নিজেই যেতে পারবে।’,সায়ন পিছন থেকে বলে।

‘এই টুকু আমি যেতে পারবো সমস্যা নেই।’,রাইদা হেঁসে আরাফকে বলে।

‘কিন্তু.. ‘,আরাফকে কথার বলার সুযোগ দেয় না সায়ন।

‘কালকে ভোরে উঠে ফিরতে হবে সেই খেয়াল আছে তোর?’,আরাফের কথার মধ্যে সায়ন বলে উঠে।

রাইদা আরাফের দিকে তাকিয়ে চোখের পলক ফেলে তাকে আশ্বাস দেয়। অনেকটা দ্বিধা নিয়েই আরাফ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়।

অনেকটা সময় নিয়ে হেঁটে রুমের সামনে আসে রাইদা।দরজার লক খুলে ভেতরে ঢুকে যেই দরজা লাগাতে নেয় ঝড়ের বেগে এসে দরজায় হাত দিয়ে আঁটকে দেয় সায়ন।

‘ভেতরে যাও দরজা আমি লাগাচ্ছি।’,বিছানার দিকে ইশারা করে রাইদাকে বলে সায়ন।

‘এতক্ষণ কিছু বলিনি বলে ভাববেন না আমি প্রতিবাদ করতে পারি না।আপনি এক্ষুণি আমার রুম থেকে বের হন।’,রেগে রাইদা সায়নকে বলে।

ততক্ষণে সায়ন রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিয়েছে।

‘আশ্চর্য আপনি দেখি কোনো কথায় কান দেন না।আপনাকে কি বললাম আমি?’

রাইদাকে কোলে তুলে নেয় সায়ন।রাইদা আরো কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু সে বুঝতে পারে না সায়নকে এই মূহুর্তে কি বললে সে কানে নিবে।

‘তুমি যদি ভদ্র মেয়ের মতো চুপ করে বসে আমাকে তোমার পায়ে ঔষধ লাগাতে দাও তাহলে আমিও চুপচাপ নিজের রুমে চলে যাবো।’,রাইদার দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।

‘আমার হাত আছে আমি নিজেই লাগাতে পারবো।আপনি রুম থেকে বের হন।’,সায়নের থেকে মুখ ফিরিয়ে বলে রাইদা।

‘এখনো আগের মতোই ঝগড়ার স্বভাব যায়নি তোমার।’

সায়নের কথার কোনো জাবাব দেয়না রাইদা।বিছানায় নিয়ে রাইদাকে বসিয়ে দেয় সায়ন।
পকেট থেকে কিছু বের করে রাইদার বাম পায়ের গোড়ালিতে লাগানোর জন্য উদ্বত হয় সায়ন কিন্তু পায়ের পায়েলটার জন্য ঔষুধ লাগাতে পারবে না তাই সেটা খুলতে নেয়।

‘আরে এটা খুলছেন কেনো? একদম ধরবেন না এটা।’,উত্তেজিত হয়ে বলে রাইদা।

‘রি প্লিজ এবার তো একটু ঔষধ লাগাতে দাও।সেই কখন থেকে কৈ মাছের মতো ছটফট করছো আমার কোনো কথাই শুনছো না।’,হতাশ গলায় সায়ন বলে।

‘একদম আমাকে ঐ নামে ডাকবেন না।’

‘তাহলে কি বলে ডাকবো?’

‘কোনো কিছু ডাকতে হবে না।আপনি বড্ড কথা প্যাচাঁচ্ছেন।সরুন আমি পায়েল খুলছি।’

রাইদা সায়নের হাত সরাতে চায় পা থেকে কিন্তু ততক্ষণে সায়ন পায়েলটা খুলে ফেলেছে। পায়েলটা বিছানার উপর রাখে সায়ন।

‘আমি ঔষধ লাগাচ্ছি দিন আমার হাতে।’,রাইদা বলে।

সায়ন রাইদার দিকে শীতল চাহনিতে তাকায় তারপর নিজেই ঔষধ লাগিয়ে দেয়।

‘ব্যথার ঔষধ খেতে হবে কিন্তু তুমি তো রাতে খাওনি তাই না?’,সায়ন জিজ্ঞেস করে।

‘ঔষধ দিন আমি খেয়ে নিচ্ছি।’,হাত বাড়িয়ে রাইদা বলে।

সায়ন রাইদার কথায় পাত্তা না দিয়ে টেলিফোন থেকে রিসিপশনে কল দিয়ে রুমে খাবার দিয়ে যেতে বলে।

টিস্যু দিয়ে মুছে চশমাটা বিছানার সাইড ড্রয়ারের উপর রাখে সায়ন। বীচের ভেজা বালু আর পানিতে চশমাটার যা তা অবস্থা হয়ে গেছে। রাইদার জান এই চশমা।এই চশমা ছাড়া দূরের বস্তু গুলোকে অস্পষ্ট দেখে।সমুদ্রের পাড়ে মনোরম পরিবেশে চশমার কথা ভুলেই গেছিলো ভাগ্যিস সায়ন খেয়াল করে চশমাটা দেখে নিজের পকেটে ভরেছিলো না হলে রাইদাকে কানা হয়ে ঘুরতে হতো। রাইদা বিছানায় বসে চুপ করে সায়নের কান্ড দেখছে।

কিছুক্ষণ পর হোটেলের স্টাফ এসে রুমের টেবিলে খাবার রেখে চলে যায়।
টেবিলের উপর থেকে খাবারের প্লেটটা এনে রাইদার সামনে রাখে সায়ন।

‘না খেয়ে কত শুঁকিয়ে গেছো। ছোট বেলায় ও সেম ছিলা একদম খেতে চাইতা না।’,রাইদার সামনে প্লেটটা রেখে বলে সায়ন।

‘এতো ভণিতা না করে আসল কথা বলেন।’,রাগী কন্ঠে বলে রাইদা।

‘কি শুনতে চাও বলো।খাও আর প্রশ্ন করো উত্তর দিছি।’,নরম গলায় বলে সায়ন।

সায়নের এখনকার কথা বলার ধরণ আর আচরণে কেউই বুঝবে না কিছুক্ষণ আগে এই ছেলে আরেকটা ছেলেকে মেরেছে তাও বিনা কারণে।

‘আপনি চাচ্ছেন কি?’

‘এই মূহুর্তে চাচ্ছি তুমি লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে ঔষধ খাবে তারপর ঘুমাবে।’

‘সায়ন আপনি ভালো করেই জানেন আমি কি বলছি।’

‘যদি বলি আমার মায়ের ছেলের বউ করতে চাচ্ছি তাহলে?’

সায়নের থেকে এমন উত্তর পেয়ে থতমত খেয়ে যায় রাইদা।

‘দেখুন আমি মজা করছি না।যেটা জিজ্ঞেস করেছি ঠিকঠাক উত্তর দেন।’

‘তোমার মনে আছে রি সেবারও তোমাকে যখন বলেছিলাম মায়ের ছেলের বউ করবো তুমি ভয়ে কল কেটে দিয়েছিলে।আমি অবাক হয়েছিলাম ভেবে যেই মেয়ে এতে সাহস দেখায় তার তো উচিত ছিলো আমাকে কিছু কথা শুনিয়ে দেওয়া কিন্তু উল্টো ভয় পেয়ে আর কলই ধরোনি।’,হাসতে হাসতে বলে সায়ন।

‘আপনার ফালতু কথা শোনার ইচ্ছে একদম নেই।এসব অপ্রোয়জনীয় ঘটনা রাই মনে রাখে না।’,রাইদা বিরক্ত হয়ে বলে।

‘তাহলে রি কোনটা মনে আছে বলো।পুকুরের ঘটনা মনে আছে নিশ্চয়ই?’

‘আপনি বের হন রুম থেকে।আমি জাস্ট আপনাকে আর সহ্য করতে পারছি না।’

‘যেটা বলেছি করো।খাবার আর ঔষধ খাও আমি চলে যাবো।’

কোনো উপায় না পেয়ে রাইদা খেতে শুরু করে।সায়ন গালে হাত দিয়ে রাইদার খাওয়া দেখতে থাকে।
খাওয়া শেষ হলে ঔষধ খেয়ে নেয় রাইদা।

‘এবার বের হন রুম থেকে।’রুমের দরজার দিকে ইশারা করে বলে রাইদা।

‘দেখো রি আমি তোমাকে ভয় দেখাতে চাচ্ছি না কিংবা ভয় দেখাচ্ছি না।তুমি শুধু শুধু আমায় ভয় পাচ্ছো।পুরাতন ঘটনা গুলো ভুলে যাও প্লিজ। তখন বয়স কম ছিলো আর মাথাও গরম হয়ে যেতো একটু তে।এতো বছর আগের ঘটনা নিয়ে না ঘেটে তুমি এখনকার আমিকে একটু দেখো।রি আমি কি একটা সুযোগ ডিজার্ভ করি না?’,রাইদার ডান হাত নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে সায়ন।

‘এখন কি আপনার মাথা গরম হয় না?তখন যে বিনা কারণে ঐ ভাইয়াটাকে মারলেন সেটা কি আপনার মাথা গরমের অংশ না?’,সায়নের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় রাইদা।

‘শুনো রি আমি কথা দিচ্ছি এরপরে আর এমন কিছু করবো না।’

‘আপাতত আপনি আমার রুম থেকে বের হন।আমি ঘুমাতে চাই অনেক ক্লান্ত লাগছে।’,রাইদা মুখ ফিরিয়ে সায়নকে বলে।

সায়ন অসহায়ের মতো রাইদার দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘কি হলো যাচ্ছেন না কেনো?বের হন এক্ষুণি।আপনি এখন রুম থেকে বের না হলে আমি চেঁচামেচি করবো।’,রাইদা চেঁচিয়ে বলে।

কথাটা বলে রাইদা উল্টো দিকে ঘুরে বসে।

বিছানার দিকে তাকিয়ে বাম হাত বাড়িয়ে পায়েলটা তুলে নেয় সায়ন।পায়েলটার দিকে তাকিয়ে আবার রাইদার দিকে তাকায় সায়ন।হাত মুঠো করে পায়েলটা আঁকড়ে দ্রুত হেঁটে দরজা খুলে বের হয়ে যায় রুম থেকে।

দরজার শব্দে মাথা তুলে রাইদা সেদিকে তাকায়। সায়ন চলে গেছে সেই বিষয়টা বুঝতেই রাইদা বিছানা থেকে নেমে দাঁতে দাঁত চেপে গিয়ে জলদি দরজা লাগায়। দরজা লাগিয়ে ফোন হাতে নিয়ে বিছানায় বসে।

‘হ্যালো পায়েল সবাইকে জাগিয়ে বল কলে আসতে।’,রাইদা পায়লকে কল দিয়ে বলে।

‘কি হয়েছে রাই? ইমারজেন্সি কিছু?’,পায়েল বলে।

‘যা বলেছি জলদি কর।’
কথাটা বলে কল কেটে দেয় রাইদা।

দশ মিনিটের মধ্যে গ্রুপের ভিডিও কলে সবাই হাজির হয়।রুহি বাদে সবাই জেগে ছিলো।রুহি ঘুম ঘুম চোখে কলে জয়েন করে সবার শেষে।

‘রাই কি হয়েছে?রাত দেড়টার সময় এতো জরুরী তলব করলি?’,ফাহিম ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে।

‘আরাফ ভাই কিছু বলেছে?’,বাপ্পি জিজ্ঞেস করে।

‘এখানে আবার আরাফ ভাইয়ের কথা আসে কই থেকে? ‘,পায়েল বাপ্পিকে বলে।

‘তোরা চুপ কর রাইকে বলতে দে।’,অর্ক ধমক দিয়ে বলে।

‘রাই বল প্লিজ কি হয়েছে।’,রুহি প্রশ্ন করে।

একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে রাইদা বলতে শুরু করে।

‘আরাফের বন্ধু সায়ন আমাকে পছন্দ করে। সমস্যা হলো উনি আমার পূর্ব পরিচিত। ওনাকে আমি যখন থেকে চিনি তখন থেকেই অপছন্দ করি।সায়নকে আমার একদম সহ্য হয় না।ওনাকে দেখলেই মনে হয় আমি বিপদে পড়বো। বহু কষ্টে আমি ওনার দেওয়া ট্রমা থেকে উঠেছি সেই ট্রমায় আবার পড়তে চাইনা।আজকে আমি সায়নকে দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম সেই ভয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছি।একটু আগেও সে আমার রুমে ছিলো।আমি সায়নের হাত থেকে মুক্তি চাই।ওনাকে সরাসরি না বলছি বারবার তারপরও কথা কানে নিচ্ছে না।কি করবো এখন আমি?’,কথাগুলো বলে রাইদা কান্না করে দেয়।

‘রাই কান্না থামা প্লিজ। ‘,রুহি ব্যস্ত হয়ে বলে।

‘রাই আগে কথা শোন আমাদের। এভাবে কাঁদলে কিছু বদলাবে না।’,ফাহিম রাইদাকে থামাতে বলে।

‘সায়ন কি এমন করেছিলো যার জন্য তুই লোকটাকে দেখতে পারিস না?’,বাপ্পি প্রশ্ন করে।

‘এই প্রশ্নের জবাব আমি এখন দিতে পারবো না।তবে সায়ন যে বদলায়নি এ ব্যপারে আমি নিশ্চিত।’,কান্নারত অবস্থায় রাইদা জবাব দেয়।

‘তোকে বলতে হবে না এ বিষয়ে, কান্না থামা।’,অর্ক রাইদাকে বলে।

‘কান্না করিস না প্লিজ।তুই কালই ঢাকা ফিরে আয়।’,রুহি রাইদাকে বলে।

‘তোর কি মনে হয় ছেলেটা রাইদাকে ফিরতে দিবে?এতো সহজে ছেলেটা রাইদাকে ছাড়বে বলে মনে হয় না।’,ফাহিম চিন্তিত হয়ে বলে।

‘রাই আমার কথা শোন,তুই চুপ করে এখন ছেলেটার হ্যা তে হ্যা এবং না তে না মিলাবি।ফাহিমকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোকে গিয়ে ও নিয়ে আসবে।’,পায়েল রাইদাকে বলে।

‘না কাউকে আসতে হবে না।তোরা কেউ আসলে হিতে বিপরীত হতে পারে।আমাকেই কিছু করতে হবে।’,কান্না থামিয়ে বলে রাইদা।

‘কান্না করলে কিংবা ছেলেটাকে কিছু বললে সমস্যা কমবে না বাড়বে।তুই বুদ্ধি দিয়ে কাজ কর।’,রুহি রাইদাকে বলে।

‘তাই করতে হবে।’,পয়েল বলে।

‘আরাফ ভাইয়ের কি হবে?’,পায়েল রাইদাকে প্রশ্ন করে।

‘জানি না আমি।ছেলেটাকে দেখলে মনে হয় আমার সকল সুখের ভান্ডার কিন্তু সায়নের জন্য তাকে নিয়ে আমি বেশি ভাবতে চাইছি না।’,মন খারাপ করে জবাব দেয় রাইদা।

‘তুই ঢাকা ফিরলে এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।’,অর্ক বলে।

‘কালকে সকালে তো নানু বাড়িতে তোর ফেরার কথা?’,ফাহিম জিজ্ঞেস করে।

মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে রাইদা।

‘তাহলে নানুবাড়ি ফিরে কালকের দিনটা থেকে পরশু ঢাকা ফিরে আয়।যতটুকু ব্লগ হয়েছে এনাফ আর লাগবে না প্রয়োজন হলে কিছুদিন পর আমরা গিয়ে আবার শ্যুট করবো।’,অর্ক রাইদাকে বলে।

‘হ্যা অর্ক ঠিকই বলেছে।’,রুহি অর্কের সাথে একমত হয়ে বলে।

‘ঠিক আছে আমি পরশুই ফিরবো কিন্তু যতই শক্ত হই সায়ন সামনে এলে পুরাতন কথা মাথায় চলে আসে সেই সময় আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়।’,চোখ মুছে রাইদা সকলের দিকে তাকিয়ে বলে।

রাইদার বলা কথার জবাবে কি বলা উচিত কেউ ভেবে পায় না।

কল কেটে শুয়ে পরে রাইদা।মাথার উপর ঘূর্ণনমান ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো সে।জীবনটা তার ফ্যানের গতিতেই ঘুরছিলো সেই গতি থামাতেই বোধহয় সায়নের আগমন। নিজের স্মৃতি ঘেঁটে সায়নকে নিয়ে ভালো কোনো স্মৃতি খুঁজে পায় না।

‘সেদিন যদি আপনার সাথে দেখা না হতো তাহলে হয়তো জীবনটা অন্যরকম হতো।কেনো এসেছিলেন সেদিন? আমি যদি জানতাম এতো কিছুর পরও আপনি আবার আমার জীবনে ফিরে আসবেন তাহলে কখনোই এই গ্রামে ফিরতাম না।’,ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলে রাইদা।

এপাশ ওপাশ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে কিন্তু ঘুম পাখি আর রাইদাকে ধরা দেয় না।বিছানা থেকে উঠে হোটেলের জানালার পাশে দাঁড়ায় রাইদা। হোটেলের জানালা দিয়ে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে।সমুদ্রের পানে এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে জানালায় মাথা ঠেকেয়ে দাঁড়ায় রাইদা।
..

নিজের রুমে এসে গায়ের টিশার্টটা খুলে ফ্লোরে ছুঁড়ে দেয় সায়ন। বিছানার উপর থাকা সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে সেখান থেকে একটা সিগারেট বের করে আগুন ধরায় সে। রুমের মধ্যে পায়চারী করতে থাকে আর সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াতে থাকে।রাগে তার মাথা ব্যথা করছে।সায়ন যখন রাগ সামলাতে না পারে তখন মাথা ব্যথা করে তার। হাঁটতে হাঁটতে নিজের বাম হাতের মুঠো চোখের সামনে নিয়ে আসে। মুঠো খুলে রাইদার ঝিনুকের পায়েলটা দেখতে থাকে। সিগারেট টান দিয়ে সেই ধোঁয়া পায়েলটার উপর ছাড়ে সে। হুট করে সায়নের কি যেনো হয় সে একবার বাম হাতে থাকা রাইদার পায়েলের দিকে তাকায় আবার ডান হাতে থাকা আর্ধ সিগারেটের দিকে তাকায়। বাকি সিগারেটটা শেষ না করেই ট্রেটে রেখে দেয়।পায়েলটা হাতে নিয়ে বিছানার উপর বসে পরে।

‘জানো রি ছোট বেলা থেকে যা চেয়েছি সবই পেয়েছি।এই জীবনে আমার কোনো চাওয়া অপূর্ণ নেই তবে জীবনের সবথেকে বড় চাওয়া তুমি।তুমি আমার হয়ে গেলে আর কিছুই চাইবো না।’,পায়েলটার দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।

‘আমি বড্ড নিষ্ঠুর রি। আট বছরের অপেক্ষা এতো সহজে বিফলে যেতে দিবো না।এতগুলো বছর যে যন্ত্রণা তুমি আমায় দিয়েছো সেগুলোর ফল ভোগ না করেই আবারো পালাবে সেটা আমি হতে দিবো তুমি ভাবলে কি করে?তোমায় আমি এ জন্মে ছাড়ছি না। রি শুধুমাত্র সায়নের।’,পায়েলটাকে শক্ত করে মুঠোতে নিয়ে বলে সায়ন।

বসা থেকে উঠে পায়েলটা নিয়ে লাগেজে ভরে রাখে সায়ন।এরপর বাথরুমে গিয়ে গোসল করে।গোসল শেষ করে টাওয়াল পড়েই সিগারেট ধরায়। সিগারেট হাতে জানালার সামনে গিয়ে জানালা খুলে সেখানে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া ওড়াতে থাকে।

(চলবে…)

(কমেন্টে আজকের পর্ব নিয়ে মতামত দেওয়ার অনুরোধ রইলো।)পর্বঃ১২
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(কার্টেসি ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)

সূর্যদয়ের পূর্বে আকাশের রঙ বদলের যে খেলা চলে তা বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। সূর্যের আলোতে আধার কেটে ধীরে ধীরে আলো ছড়িয়ে পড়ে ধরণীতে। রাতের আধার কাটতেই সকালে সূর্যের দেখা পেয়ে উথাল-পাতাল সমুদ্র শান্ত হয়ে আছে। শান্ত সমুদ্র চুপ করে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছে এ যেনো ঝড় আসার পূর্বাভাস।

চশমা চোখে চার হাত পা এক করে মাথাটা হাতের উপর রেখে সমুদ্রের পাড়ে বসে আছে রাইদা। এক ধ্যানে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে সমুদ্র তাকে ডাকছে।

গতরাতে দু’ঘন্টা ঘুমানোর পর ভোরে ঘুম ভেঙে যায়।মনটা ভালো করতে চলে আসে সমুদ্রের পাড়ে।কতক্ষণ ধরে এখানে বসে আছে তা জানা নেই। আজ ফিরতে হবে ভেবেই রাইদার প্রচন্ড খারাপ লাগছে।তার ইচ্ছে করছে আরো দু’দিন ঘুরতে কিন্তু সায়নের কারণে সম্ভব না।রাইদা যদি থেকে যেতে চায় তাহলে সায়নও কোনো না কোনো ছুতায় থেকে যাবে। সায়নের কথা মাথায় আসতেই বিরক্ত হয় রাইদা। বাম পায়ের ক্ষতের স্থানটা টনটন করে উঠে। রাইদা বুঝে যায় হোটেল থেকে এতোখানি হেঁটে আসার কারণে এখনো ব্যথা করছে। সূর্যের আলো যখন সম্পূর্ণ ধরণীতে ছড়িয়ে পড়ে রাইদা হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

ধীর পায়ে সময় নিয়ে হোটেলের দিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করে রাইদা। প্রায় পনেরো মিনিট লাগিয়ে রুমে আসে রাইদা।
রুমে এসে ঘড়িতে দেখে সকাল ছয়টা বাজে।আটটায় তাদের এখান থেকে বের হওয়ার কথা।

জামা নিয়ে গোসলে চলে যায় সে।গোসল শেষ করে নিজের সকল জিনিস পত্র লাগেজে গোছাতে শুরু করে সে। সাইড ড্রয়ার খুলে নিজের জিনিস নিতে তখনই দু’টো প্যাকেট চোখে পড়ে।রাইদার যতদূর মনে পড়ে যখন এই রুমে সে উঠেছিলো ড্রয়ার খালি ছিলো।
ড্রয়ার থেকে প্যাকেট দু’টো বের করে হাতে নিয়ে গভীর ভাবনায় পড়ে যায় রাইদা।প্যাকেট দু’টো খুলবে কিনা চিন্তা করতে করতে বিছানায় বসে যায়।সকল ভাবনা বিসর্জন দিয়ে প্যাকেট দু’টোর একটি খুলতে শুরু করে। প্যাকেট খুলেই বেরিয়ে আসে নীল রঙের একটা শাড়ি।শাড়িটা দেখে রাইদার চোখ ছানাবড়া কারণ এই শাড়িটা সে রাখাইনপল্লির মার্কেটে দেখেছিলো,দাম অতিরিক্ত চাওয়ায় সে কিনেনি। শাড়িটা খুলে হাতে নিয়ে বসে থাকে রাইদা। দ্বিতীয় প্যাকেটে চোখ গেলে শাড়ি রেখে অপর প্যাকেটটি খুলতে শুরু করে।প্যাকেট খুলে দেখে অনেক রঙের চুড়ি সেখানে।

রাইদা বুঝতে পারে এগুলো তার জন্যই উপহার এসেছে।এবার রাইদা বিপদে পড়ে যায়।নাম ঠিকানা বিহীন এই উপহার গুলো সে গ্রহণ করতে চাইছে না আবার কে দিয়েছে না জেনে ফেরতও দিতে পারছে না।জিনিসগুলো মুড়িয়ে লাগেজে ভরে রাখে। লাগেজ গোছগাছ করে নিজেও রেডি হয়ে নেয়। অনেক ভেবে চিন্তে শর্ট কুর্তি আর ধুতি স্যালোয়ার পড়ে সে। ছোট একটা স্কার্ফ গলায় ঝুলিয়ে নেয়।চুলগুলো আঁচড়ে ঘড়ির সময় দেখে সকাল সাড়ে সাতটা বাজে।
এর মধ্যে দরজায় নক করে কেউ।

দরজা খুললে দেখে যামিনী, রুবেল আর আরাফ দাঁড়িয়ে আছে।

‘রাই পায়ে নাকি ব্যথা পেয়েছো?’,যামিনী রাইদার বাহুতে হাত রেখে বলে।

‘ঠ্যাং টা ভাঙছে নাকি?আহারে এখন তো রাইকে সবাই ঠ্যাং ভাঙা রাই ডাকবে।’,আফসোসের স্বরে বলে রুবেল।

‘চুপ বেয়াদপ।পা ভাঙলে কি ও এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো নাকি?’,যামিনী রুবেলকে ধমক দিয়ে বলে।

‘ওহ তাই তো! থুক্কু রাই,তোমায় ঠ্যাং ভাঙা রাই না ডেকে সবাই ডাকবে ঠ্যাং খোঁড়া রাই।’,রুবেল দাঁত কেলিয়ে বলে।

‘আরেকটা কথা বললে তোর ঠ্যাং আমি ভাঙবো।’,যামিনী রাগী স্বরে বলে রুবেলকে।

রুবেল মুখে এক আঙুল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।রুবেলের অবস্থা দেখে রাইদা শব্দ করে হেঁসে দেয়।

‘ব্যথার কি অবস্থা এখন?ঔষধ খেয়েছিলে ?’,আরাফ জিজ্ঞেস করে।

‘হাঁটলে একটু ব্যথা করে এমনি ব্যথা নেই।রাতে খেয়েছিলাম ঔষধ। ‘,আরাফের কথার জবাব দেয় রাইদা।

‘তুমি তো রেডি তাই না?চলো তাহলে তোমাকে ধরে নিয়ে যাই।’,যামিনী বলে রাইদাকে।

‘হ্যা আপু রেডি আমি।’,রাইদা বলে।

‘তারপরও একবার দেখে নাও কিছু বাকি আছে নাকি।আমি সায়নকে ডেকে আসছি তোমার লাগেজ আমিই নামিয়ে দিবো’,আরাফ কথাগুলো বলে পাশের রুমে সায়নকে ডাকতে যায়। রুবেলও আরাফের সাথে যায়।

রাইদা রুমের চারিপাশে তাকায় তারপর হুট করে নিজের পায়ের দিকে তাকায়।

‘আমার পায়েল!’,কথাটা বলে বিছানার দিকে এগিয়ে যায় রাইদা।বিছানার সব উল্টে পায়েল খুঁজতে থাকে।

‘কি হয়েছে রাই?কিছু খুঁজছো?’,যামিনী প্রশ্ন করে।

রাইদা কোনো জবাব না দিয়ে সাই ড্রয়ার,টেবিল,এমন কি বাথরুমের বেসিনেও খুঁজতে থাকে। পায়েলটা না পেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফ্লোরে বসে পড়ে।

‘কিছু হারিয়ে ফেলেছো?’,যামিনী রাইদার হাত ধরে বলে।

‘হ্যা আপু।খুঁজে পাচ্ছি না। ভালোবেসে কেউ উপহার দিয়েছিলো আমি হারিয়ে ফেললাম সেটা।’,রাইদা মন খারাপ করে বলে।

‘ইচ্ছে করে তো হারাওনি। মন খারাপ করে না।’,যামিনী রাইদাকে বলে।

রাইদা মুখ তুলে আবারো বিছানার দিকে তাকায়।তার যতদূর মনে আছে সায়ন পায়েলটা খুলে বিছানায় রেখেছিলো তাহলে সেটা গেলো কোথায়?

‘কি হয়েছে রাই আবার পড়ে গেছে নাকি?’,আরাফ দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে।

‘না পড়েনি আসলে…’,যামিনী কথাটা শেষ করার আগেই রাইদা বাঁধা দেয়।

‘আপু চলেন দেরি হচ্ছে। ‘,রাইদা বলে।

‘হ্যা চলো।’,রাইদার হাত ধরে যামিনী দাঁড়া করায়।

আরাফ রাইদার ব্যাগ আর লাগেজ নিয়ে আগে যায়।রাইদা যামিনীর হাত ধরে আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকে।

রিসিপশনের সামনে সকলে দাঁড়িয়ে আছে আর রাইদা সোফায় বসা। সায়ন,আরাফ হোটেলের বিল মিটিয়ে চেক আউট করার কাজ করছে। শ্রেয়া রাইদার পাশে বসেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে অডিও কলে গল্প করছে। যামিনী গিয়েছে বাথরুমে আর রুবেল হোটেলের স্টাফদের দিয়ে গাড়িতে লাগেজ গুলো তুলাচ্ছে।

সায়ন বিল মিট করতে থাকে তখন আরাফ রিসিপশন থেকে সরে রাইদার দিকে এগিয়ে যায়।

‘শ্রেয়া গাড়ির দিকে যা আমরা তো এখনই যাবো।’,আরাফ শ্রেয়াকে বলে।

‘যামিনী আসুক আগে।’,শ্রেয়া বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয়।

‘যামিনী আসলে তো রাইকে ধরে নিয়ে যাবে তখন তো আরো দেরি হবে তার থেকে ভালো আগে গিয়ে বস।’,আরাফ আবারো শ্রেয়াকে বলে।

‘যত্তসব কাহিনী। মনে হয় এ জীবনে আর কেউ পায়ে ব্যথা পায় না।’,কথাগুলো বলে শ্রেয়া উঠে যায়।

শ্রেয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হেঁসে দেয় রাইদা।

‘রাই এই ট্যুরটা আমার জীবনের সেরা ট্যুর। এমন ট্যুর বারবার দিতে চাই।’

আরাফের ডাকে মুখ তুলে তাকিয়ে কথাগুলো শুনে রাইদা।আরাফের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয় সে।আরাফের পিছনে নজর গেলে দেখে সায়ন তার দিকে তাকিয়ে এদিকে এগিয়ে আসছে।সায়নের চোখে চোখ পড়লে রাইদা মুখটা গম্ভীর করে ফেলে।

গাড়িতে মৃদু ভলিউমে শিরোনামহীনের ‘এই অবেলায়’ গানটা চলছে। সায়ন গানের ভলিউমটা আরেকটু বাড়িয়ে দেয়।

হোটেল থেকে চেক আউট করে লোকাল রেস্তোরাঁয় গিয়ে সকালের নাশতা খেয়েছে সকলে। ড্রাইভিং সিটে সায়ন তার পাশেই রুবেল বসে, মাঝের সিটে শ্রেয়া, আরাফ এবং শেষের সিটে রাইদা আর যামিনী বসে আছে।

ঘন্টা দুয়েক পর গাড়ি পৌঁছে যায় গ্রামে।এরমধ্যে রাইদা গাড়িতেই ঘুমিয়ে যায়।

‘সায়ন! রাইদা তো ঘুমে ওকে কি ডাকবো?’,যামিনী মৃদু স্বরে সায়নকে বলে।

‘তোরা আগে নাম গাড়ি থেকে।’,সায়ন যামিনীকে বলে।

সবাই গাড়ি থেকে নেমে দরজা লাগিয়ে রাস্তায় দাঁড়ায়। রাইদা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।

‘এই রাস্তা থেকে তো বাড়ির পথ পাঁচ মিনিটের,তোরা বাড়ির দিকে যা আমি এখানে আছি।ওর ঘুম ভাঙলে চলে আসবো।’,সায়ন সকলকে বলে।

‘রুমে গিয়ে ঘুমাক এভাবে গাড়িতে রাইয়ের কষ্ট হচ্ছে তো।’,আরাফ সায়নের কথার মধ্যে বলে।

‘তোর কি মনে হয় কাঁচা ঘুম ভাঙলে আর ঘুম আসবে ওর?’,সায়ন বিরক্ত হয়ে বলে।

‘সায়ন ঠিক বলেছে, চল যাই আমরা।’,যামিনী জবাব দেয়।

সকলের লাগেজ নামিয়ে দেয় সায়ন। আরাফ রাইদার লাগেজটাও নামিয়ে নেয়। রাইদা আর সায়ন বাদে সকলে চেয়ারম্যান বাড়ির দিকে যায়।

গাড়ির ভেতর ঘুমন্ত রাইদার দিকে একবার তাকিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে রাইদার ছবি তুলে নেয় সায়ন।

‘ঘুমন্ত পরী রি।’,রাইদার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।

ফোনের ভাইব্রেশনের শব্দে রাইদার ঘুম ভেঙে যায়।চোখ মুখ কুঁচকে আধ শোয়া থেকে উঠে বসে বোঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে সে। গাড়ির বাহিরে চোখ গেলে দেখে সায়ন ফোনে কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।আর কাউকে দেখতে না পেয়ে বেশ চিন্তিত হয় রাইদা। গাড়ির ডোর খুলে গাড়ি থেকে বের হয় সে।শব্দ পেয়ে সায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে রাইদার দিকে তাকায়। বাহিরেও কাউকে দেখতে না পেয়ে রাইদা কি করবে ভেবে পায় না।

সায়ন গাড়িটা লক করে নিজের লাগেজ নিয়ে হাঁটা দেয়।রাইদা চুপ করে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।

‘সবাই বাড়ি চলে গেছে যখন তুমি ঘুমে ছিলে।তোমার লাগেজও সাথে করে নিয়ে গেছে।চাইলে আমার সাথে আসতে পারো না হলে এখানেই দাঁড়িয়ে মশা মরো।’,কথাগুলো বলে সায়ন আবারো হাঁটতে শুরু করে।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রাইদা পা টেনে হাঁটতে শুরু করে।

..

চেয়ারম্যান বাড়িতে এসে রাইদা ভীষণ অস্বস্তিতে আছে।ছোট খালাকে কল দিয়ে জানানোর পর সে বলেছে বিকালে আসবে এ বাড়িতে।রাইদাকে আপাতত সানজিদার রুমেই থাকতে দেওয়া হয়েছে। মনিরা বেগম সানজিদাকে আদেশ দিয়েছে আরেকটা রুম পরিষ্কার করে দিতে যাতে রাইদা সেখানে আরামে থাকতে পারে। রাইদার অবশ্য রুম নিয়ে সমস্যা নেই।এই চেয়ারম্যান বাড়িতে থাকতেই তার সব সমস্যা।

সকালে সবাই ফিরে ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই ঘুম দিয়েছে। মনিরা বেগম দুপুরের রান্নাবান্না শেষ করে সব গুছিয়ে রাখছে।গোসল সেরে ঘুম থেকে ডাকবে সবাইকে খাওয়ার জন্য।
রাইদা আর ঘুমায়নি।গোসল করে রুমে গিয়ে শুয়েছিলো তারপর গ্রুপ কলে কিছুক্ষণ কথা বলেই পুকুরপাড়ে এসে বসেছে।
রাইদার ফোন বেজে উঠলে পুকুর থেকে মুখ সরিয়ে ফোন কানে নেয়।

‘কিরে পায়ের ব্যথা কমেছে?’,অর্ক জিজ্ঞেস করে।

‘হ্যা কমেছে তবে হাঁটতে গেলে কষ্ট হয়।কই ছিলি তুই?গ্রুপ কলে তোকে পেলাম না যে।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘বাহিরে ছিলাম একটা কাজে।তুই তো কালকে ফিরবি?’

‘চেয়ারম্যান বাড়ি এসে ফেঁসে গেছি।একাএকা নানু বাড়িতে কেউ ফিরতে দিবে না।’

‘তাহলে কি করবি?’

‘ছোট খালামনিকে কল দিয়েছিলাম বলেছে বিকালে এসে আমাকে নিয়ে যাবে।আজকে যেতে পারলে কালকেই বাসের টিকেট কাটবো।’

‘তুই আমাকে কনফার্ম করিস রাতে।আমি যদি তোকে রিসিভ না করতে পারি ফাহিমকে পাঠিয়ে দিবো।’

‘আগে এই বাড়ি থেকে বের হই।প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।কখন যে ঢাকা ফিরবো।’

‘ঢাকায় ফিরে আমাদের কিন্তু একটা প্রোগ্রাম আছে সে কথা মনে আছে তো? এই পা নিয়ে কীভাবে কি করবি?’,অর্ক চিন্তিত হয়ে বলে।

‘আরে সামান্য ব্যথা।ঢাকায় ফেরার আগেই দৌড়ানো শুরু করবো চিন্তা করিস না।রুহি কোথায়?ওকেও গ্রুপ কলে পাইনি। ‘,রাইদা বলে।

‘আমি কি জানি রুহি কই? আমাকে জিজ্ঞেস করিস কেনো?’,থতমত খেয়ে বলে অর্ক।

‘দেখ অর্ক আমি কানা না সব দেখি আর সব বুঝি।তুই রুহিকে পছন্দ করিস সেটা বলছিস না কেনো?’

‘রুহি আগেই বলেছে বন্ধুত্বের মধ্যে ভালোবাসা ও পছন্দ করে না।ভালোবাসা না পাই এটলিস্ট বন্ধুত্বটা থাকুক।’

‘তুই বললেই দেখনা একবার ‘

‘না রাই আমি পারবো না।তুই প্লিজ রুহিকে কিছু বলবি না।’

‘তুই তো আর আজকে থেকে রুহিকে পছন্দ করিস এমন না।সেই ভার্সিটির প্রথমদিন থেকে রুহিকে দেখে তোর পছন্দ। আর কেউ তোকে না চিনলেও আমি ভালো করেই তোকে চিনি।কলেজ জীবন আমরা এক সাথে পাড় করেছি কখনো কোনো মেয়ের প্রতি তোর এতো অনুভূতি দেখিনি।’

‘তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাই।তোকে কিছু বলতে হয় না বুঝে নিস সবকিছু তারপরও রুহি নিজে না বুঝতে পারলে বলে বোঝানোর কোনো মানে হয় না।’

‘তুই রুহিকে ভালোবাসিস কথাটা একবার বল ওকে।’

‘দেখ রাই ভালোবাসার থেকে বন্ধুত্ব বড় আমার কাছে।’

‘অর্ক এভাবে কষ্ট পাওয়ার থেকে রুহিকে বলা ভালো না?’

‘না আমার যদি কখনো মনে হয় তখন বলবো।’

অর্কের কথা শুনে রাইদা হতাশ হয়ে যায়।পাশ ঘুরে বসলে নজর যায় উঠানের পাশে।সেখানে দড়িতে ঝুলানো রয়েছে সকলের ভেজা জামা।সানজিদা কাপড় নাড়ছে নাকি কিছু করছে সেটা স্পষ্ট দেখতে পায় না সে।

‘আচ্ছা রাখছি আমি পরে কল দিবো।’,রাইদা সানজিদার দিকে চোখ রেখে বলে।

‘সাবধানে থাকিস। ‘,কথাটা বলে কল কেটে দেয় অর্ক।

রাইদা বসার জায়গাটা ধরে উঠে দাঁড়ায় তারপর ধীরে ধীরে সানজিদার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।

‘কি করছো সানজিদা?’
আচমকা কারো কন্ঠ পেয়ে সানজিদা ভয়ে কেঁপে উঠে।সানজিদার হাতে থাকা কাপড়টা মাটিতে পড়ে যায়। মটিতে পড়া কাপড়টার দিকে একবার তাকায় রাইদা আবার সানজিদার দিকে তাকায়।

‘কিছু না আপা।কাপড় মেলতাছিলাম।’,সানজিদা ভিতু স্বরে বলে।

‘ওটা কি?তুলো তো।’,মাটিতে পড়া কাপড়ের দিকে ইশারা করে বলে রাইদা।

সানজিদা কাপড়টা তুলে, রাইদা টান দিয়ে হাতে নেয় সেটা।

‘এটা তো দেখছি টিশার্ট। আরে আরাফের টিশার্ট এটা।তুমি আরাফের টিশার্ট নিয়ে কি করছিলে?’,রাইদা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে সানজিদাকে।

‘আমি কিছু করতাছিলাম না।এমনি দেখতাছিলাম।’,জোর পূর্বক হেঁসে বলে সানজিদা।

‘কি হইছে?’,উঠান থেকে মনিরা বেগম জিজ্ঞেস করে।

‘কিছু না মামি।’,রাইদা জবাব দেয়।

মনিরা বেগম কল পাড়ে চলে যায়।সানজিদাও দৌড় দিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায়। টিশার্টটা হাতে নিয়ে রাইদা ভাবতে শুরু করে।দড়িতে টিশার্ট মেলে দিয়ে বাড়ির ভেতরের দিকে পা বাড়ায়।

সাড়ে তিনটার দিকে সকলকে ঘুম থেকে ডাকা হয় খাওয়ার জন্য। শ্রেয়া,যামিনী, রুবেল এসে টেবিলে বসে।রাইদা আগে থেকেই বসে সকলের অপেক্ষায় ছিলো।খাবার বাড়তে শুরু করে সোনিয়া। আরাফ এসে রাইদার বাম পাশের চেয়ার টেনে বসে। রাইদা খেয়াল করে এতক্ষণ সানজিদা ওর ডান পাশে বসে ছিলো কিন্তু আরাফ এসে বাম পাশে বসার কারণে সানজিদা থেকে উঠে আরাফের বিপরীতে থাকা চেয়ারটা টেনে বসে। রাইদা মনে মনে কিছু আচঁ করতে পারে।
এই কয়জনই টেবিলে এখন খেতে বসেছে।মহি উদ্দিন আর তার বাবা আরো আগে খেয়েছে।

‘সায়ন কি ঘুমে?’,শ্রেয়া প্রশ্ন করে।

‘হ গেছিলাম ডাকতে আমারে কইছে সমুদ্রে চুবাইবো তাই জান বাঁচাইয়া পালাইছি।’,রুবেল দুঃখি স্বরে বলে।

‘তোরে যে কিল, ঘুষি দেয় নায় তোর ভাগ্য এইটা।’,যামিনী হেঁসে বলে।

‘রুবেলের অভ্যাস আছে সায়নের কিল ঘুষি খাওয়ার। ভার্সিটির প্রথম দিনের কথা তোদের মনে আছে নিশ্চয়ই? ‘,হাসতে হাসতে আরাফ বলে।

‘ঐদিন আমি ভুলবো না।সায়নের সাথে লাগতে গিয়ে রুবেলের যা অবস্থা হয়েছিলো।’,রুবেলকে খোঁচা মেরে শ্রেয়া বলে।

‘ঐদিন আমার মুড ভালো ছিলো তাই সায়নকে ছেড়ে দিছি না হলে ও আমার সাথে পারতো না।’,ভাব নিয়ে বলে রুবেল।

‘জানো রাই রুবেল গিয়েছিলো সায়নকে মারতে।তারপর উল্টো মার খেয়ে আসছে।’শেষের কথাটা বলেই আরাফ শব্দ করে হাসে।

‘আমি সবে ভার্সিটিতে ভর্তি হতে গিয়েছি সকাল বেলা গিয়ে দেখি ডিপার্টমেন্টের বাহিরে একটা ছেলেকে আরেকটা ছেলে কলার ধরে ঝারছে এটা দেখে ভয়ে আমি উল্টো দিকে দৌড় দিয়ে আরাফের সাথে ধাক্কা খাই।পরে আরাফ আমাকে জানায় এক ছেলে আরেক ছেলেকে ধমকাতে গিয়ে উল্টো ঘুষি খেয়েছে।আরাফ সেদিন আমার সাথে গিয়ে আমাকে ভর্তি হতে সাহায্য করে।আরাফের সাথে দেখা না হলে ঐ ভার্সিটির মুখ দর্শন ও আমি আর করতাম না।’,যামিনী খাওয়া রেখে বলতে থাকে।

‘মজার কথা কি জানো রাই যেই ছেলে মাস্তানি করতে গিয়ে ঘুষি খেয়েছে সে হলো রুবেল আর যে ঘুষি দিয়েছে সে হলো সায়ন।আমি আর যামিনী ক্লাস করতে গিয়ে দেখি দুই মাস্তান আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট। এরপরে দুইটারে শায়েস্তা করে যামিনী বন্ধুত্ব করে ফেলে।’,হাসতে হাসতে বলে আরাফ।

আরাফের কথা শুনে রুবেল শব্দ করে হাসতে হাসে বাকিরাও হাসতে থাকে।রাইদা হাসি দিয়ে সানজিদার দিকে তাকালে দেখে খাওয়া রেখে সানজিদা আরাফকে চোখ দিয়ে গিলছে।

‘সানজিদা আগে খাওয়া শেষ করো।’
রাইদার এমন কথায় ধরা পরা চোরের মতো সানজিদা মাথা নিচু করে খেতে শুরু করে।

খাওয়া শেষ করে শ্রেয়া আর যামিনী নিজেদের রুমে গিয়েছে।আরাফ আর রুবেল উঠানে বসে সায়ানের নানার সাথে গল্পে ব্যস্ত। রাইদা আরাফকে আলাদা করে খুঁজছে উপহারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করার জন্য কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে না।রাইদার ধারণা শাড়ি,চুড়ি আরাফই উপহার দিয়েছে তবে সে কনফার্ম হতে চায়।

রাইদা বসার ঘরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে যদি আরাফকে ইশারায় ডাকা যায় কিন্তু আরাফ উল্টো দিকে মুখ করে বসে আছে যায় কারণে রাইদাকে সে দেখতে পাচ্ছে না।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও আরাফকে ডাকতে না পেরে হতাশ হয়ে সিঁড়ির দিকে যায় সে।ভেবে নেয় বিকাল বেলা আরাফকে যে করেই হোক আলাদা ডেকে কথা বলবে।

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলো রাইদা তখনই সায়নের রুমের দরজার দিকে চোখ যায়।দেখে মনে হচ্ছে দরজা খোলা। রাইদার মাথায় আসে সায়ন রুম থেকে গতরাতে বের হয়েছে পরে আর রাইদা তার পায়েল খুঁজে পায়নি।তারমানে নিশ্চয়ই সায়ন চুরি করেছে। এ বিষয়ে সে নিশ্চিত না তবে মন খচখচ করছে তার।আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে সায়নের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। চোরের মতো শেষ বার দেখে নেয় কেউ আছে কিনা। আস্তে করে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে উঁকি দেয়।

বিছানায় উন্মুক্ত শরীরে উবুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে সায়ন। রাইদা রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় যাতে কেউ আসলে ধরা না খায়।পুরো রুমে তাকিয়ে বুঝতে পারে না কোথায় খুঁজবে।
টেবিলের পাশে রাখা লাগেজটায় নজর গেলে ভেবে নেয় সেটা আগে খুলবে। কিন্তু লাগেজে হাত দিয়ে দেখে তালা মারা যা চাবি ছাড়া খুলবে না। বিরক্ত হয়ে টেবিলের উপর চাবি খুঁজে কিন্তু পায় না। আলমারি খুলেও কাংখিত জিনিসটা না পেয়ে হতাশ হয়। এরমধ্যে সায়ন নড়েচড়ে সোজা হয়ে শোয়। রাইদা চুপ করে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকে যাতে সায়নের ঘুম না ভাঙে। কয়েক মিনিট পর দেখা যায় সায়ন গভীর ঘুমে।

সায়নের বিছানার দিকে এগিয়ে যায় রাইদা। এক হাত বিছানায় রেখে সায়নের উপর দিয়ে ঝুঁকে আরেক হাত দিয়ে পাশের বলিশটা সরিয়ে দেখে চাবি আছে কিনা। চাবি না পেয়ে যেই সরতে নেয় অমনি বিপত্তি বাঁধে। সায়ন রাইদার হাতের উপর হাত রেখে পাশ ফিরে শোয়।রাইদার উল্টো দিকে মুখ করে ঘুমাচ্ছে সায়ন। রাইদা ঢোক গিলে নিজের হাতের দিকে তাকায়।রাইদার ডান হাতের উপর সায়ন তার বাম হাত রেখেছে।
রাইদা নিজের বাম হাত দিয়ে কপাল চাপড়ায় এখানে কেনো এসেছিলো সেটা ভেবে।
সায়নের নড়াচড়ার কোনো লক্ষ্মণ দেখতে না পেয়ে আবারো ঝুঁকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে রাইদা।
একটু হাত মোচড়ামুচড়ি করতেই সায়নের আঙুল রাইদার হাতের উপর থেকে সরে যায়, আঙুল সরতেই সায়ন আরো শক্ত করে রাইদার হাত চেপে ধরে।উপায় না পেয়ে রাইদা আরেকটু ঝুঁকে বাম হাত দিয়ে সায়নের ডান হাতটা নিজের হাতের উপর থেকে একটু একটু করে সরায়।বেশি ঝুঁকার কারণে সায়নের চুল রাইদার গলায় লাগে। চুলের কারনে রাইদার গলায় সুরসুরি লাগতে থাকে।
দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে সায়নের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ায়।

সায়নের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে পায়ের ব্যথা ভুলে তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে সায়নের রুম থেকে বের হয় রাইদা।দরজা খোলার শব্দে চোখ খুলে সামনে থাকা বালিশটার দিকে তাকায় সায়ন। বালিশটাকে দু’হাত দিয়ে কাছে টেনে শব্দহীন ভাবে হাসতে থাকে সায়ন। যখন রাইদা আলমারি খুলে তখনই সায়নের ঘুম ভেঙে যায়। রাইদা আলমারি ঘাটাঘাটিতে ব্যস্ত থাকায় খেয়াল করেনি সায়ন জেগে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। সায়ন যখন বুঝতে পারে রাইদা তার রুমে সে চুপ করে ঘুমের ভান ধরে থাকে। পুরোটা সময় সায়ন চোখ বন্ধ করে রাইদার সব কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করে। তখন ইচ্ছে করেই রাইদার হাত ধরে রেখেছিলো।

দরজার বাহির থেকে রাইদার চিৎকার ভেসে আসে।সায়ন হাসি থামিয়ে শোয়া থেকে উঠে চেয়ারে রাখা টিশার্ট গায়ে জড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।

চলবে…

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here