ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -১৬

#ভালোবাসি_প্রিয় (১৬)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-” ভদ্রমহিলা দোয়া কে তার রুমে নিয়ে যায়। দোয়া রুমের প্রত্যেক টা জিনিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। হঠাৎ বাতাসে টেবিলের উপর রাখা একটা ছবির উপর থেকে পর্দা সরে যেতেই দোয়া হতভম্ব হয়ে যায়। ছবিতে কিশোরী দুই টা মেয়ের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ফুটে উঠেছে।যার মধ্যে একটা ছবি স্বয়ং দোয়ার আম্মা শাহিনা বেগমের। দোয়া যেন নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। মাথায় শুধু একটা প্রশ্ন‌ ঘুরপাক খাচ্ছে।কে এই ভদ্রমহিলা? তৎক্ষণাৎ দোয়া দেখতে পাই দোয়ার কানে শাহিনা বেগমের দেওয়া যে দুল ছিল ঠিক একই রকম দুল তাদের দুজনের কানে রয়েছে। তখনই দোয়ায় মনে পড়ে যাই কিছু দিন আগে দোয়ার কানে দুল না দেখে শাহিনা বেগম জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোর কান খালি কেন দোয়া?দুল কি করেছিস? কিছুদিন থেকেই লক্ষ্য করছি তোর কানে দুল নেই।আমি জিজ্ঞেস করবো করবো করে ও জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি।”

-” দোয়া ভাবছে এই রে, আম্মা কিভাবে দেখলো আমার কানে দুল নেই। আমি তো সবসময় আম্মার থেকে আড়ালে আড়ালে থেকেছি।এখন আম্মা কে কি উত্তর দিবো আমি। মিথ্যা কথা ও বলতে পারবো না। দোয়া সাতপাঁচ ভেবে বললো,আসলে আম্মা দুল টা আমি হারিয়ে ফেলেছি। ভার্সিটি তে অনুষ্ঠানের দিন সকালে ও কানে ছিল। কিন্তু বাসায় ফিরে দেখি আর নেই। কোথাও হয়তো পরে গিয়েছে।”

-” তোকে কতোবার বলেছিলাম দুল টা আগলে রাখবি।এতে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু তুই দুল টা হারিয়ে ফেলে দিলি।”

-” আপনি চিন্তা করবেন না আম্মা।আমার জমানো কিছু টাকা আছে।ঐ টাকা দিয়ে ঠিক একই রকম একটা দুল বানিয়ে নিবো আম্মা।”

-” দুল তো হাজার টা ও বানিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু দুলের সাথে জরিয়ে থাকা ভালোবাসা, স্মৃতি কি ফিরে পাওয়া যাবে?”

-” দোয়া বরাবরের মতো আবার ও জিজ্ঞেস করলো এই দুল টার বিশেষত্ব কি আম্মা?দেখে তো বেশি দামী ও মনে হচ্ছে না। তবুও আপনাকে দেখেছি কোন বিশেষ দিনে শুধু মাত্র ঐ একটা দুল পরতে।”

-” হ্যাঁ।দুল টা হয়তো কম দামী।তবে এর মূল্য আমার কাছে কোটি টাকার সমান।দুল টা আমার খুবই কাছের একজনের।যার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক ছিল। আমার আঠারো তম জন্মদিনে আমাকে এই দুল টা দিয়ে বলেছিলো ,এই দুল টা আমি তোকে দিয়েছি ঠিকই তবে এই দুল তোর না।এটা তোর নিকট আমানত স্বরুপ।তোর যদি কখনো মেয়ে হয় তার নাম রাখবি মাইশাতুল দোয়া। আর দোয়ার আঠারো তম জন্মদিনে দুল টা দোয়া কে দিবি।বলবি তোর ঝর্না খালাআম্মু ভালোবেসে তোকে দিয়েছিল। পুরোনো কথা মনে পড়তেই দোয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো। দোয়া ভাবতে লাগলো তাহলে কি এই ভদ্রমহিলা ই ঝর্ণা খালাআম্মু। দোয়া শিওর হ‌ওয়ার জন্য ভদ্রমহিলা কে জিজ্ঞেস করলো, আন্টি ছবিতে আপনার পাশের মেয়েটা কে?”

-” মেয়েটা আমার বাল্যকালের বান্ধবী শাহিনা।যদি ও পরিচয় টা বান্ধবী থেকে শুরু হয়েছিল,তবে তার সাথে আমার বান্ধবীর সম্পর্ক ছিল‌ না।ছিলো বোনের সম্পর্ক।সে আমার র”ক্তে মিশে ছিলো।এক কথায় যাকে মানিকজোড় বলা হয়। মেয়েটার সাথে কতো শত স্মৃতি জড়িয়ে আছে।শাহিনার সাথে যেদিন আমার প্রথম পরিচয় হয়, সেদিন থেকেই মেয়েটা আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। এরপর আস্তে আস্তে তার সাথে সম্পর্ক গাড়ো হতে থাকে।এক পর্যায়ে আমাদের সম্পর্ক তুমি থেকে তুই তে চলে আসে। এভাবেই বেশ চলছিল আমাদের। কিন্তু হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া এসে আমাদের সম্পর্ক টা নষ্ট করে দেয়। ভার্সিটি লাইফে এসে তোমার আঙ্কেলের সাথে আমার পরিচয় হয়।তিনি আমার সিনিয়র ছিলেন।এক পর্যায়ে তার সাথে আমি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি।যা শাহিনার পছন্দ ছিল না।বলে রাখা ভালো শাহিনা ছিল ইসলামীক মাইন্ডের।সে আমাকে বারবার নিষেধ করেছিল হারাম সম্পর্কে না জড়াতে। কিন্তু আবেগের বশে আমি হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পরি।এতে শাহিনার সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু যখন নিজের ভুল বুঝতে পারি তখন শাহিনা আমার অনেক দূরে চলে যায়।”

-” এরপর আর আপনাদের যোগাযোগ হয় নি?”

-“না।তোমার আঙ্কেলের বাবা একজন মন্ত্রী ছিলেন। আমি ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তবু ও আমার শ্বশুর মশাই যখন আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারে,তখন তিনি জানিয়ে দেন , কোনো সাধারণ পরিবারের মেয়েকে তার পুত্র বধূ করবেন না। শ্বশুর মশাইয়ের সিদ্ধান্ত তোমার আঙ্কেল মানতে পারেননি।তিনি আমাকে বিয়ে করে লন্ডনে পাড়ি জমান। লন্ডনে থাকাকালীন প্রতিটা মূহুর্তে শাহিনার কথা মনে পড়েছে। ওর স্মৃতি আমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। ‌এরপর যখন আমরা দেশে ফিরি তখন শাহিনা কে অনেক খুঁজেছি। কিন্তু পাই নি।সব‌ই আমার কর্মফল।জানি ও না মেয়েটা কখন কোথায় আছে? কিভাবে আছে? আদৌ দোয়া এই পৃথিবীতে এসেছে কি না?”

-” দোয়া তার মায়ের মুখে ঝর্না খালাআম্মুর কথা অনেক শুনেছে।তার আম্মাকে খালাআম্মুর জন্য চোখের পানি ফেলতে দেখেছে।আর আজ সেই মানুষ টাকে চোখের সামনে দেখে দোয়া নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। দোয়া তৎক্ষণাৎ ঝর্না আবরার কে জরিয়ে ধরে দোয়ার হিজাব খুলে বললো,দেখ তো খালাআম্মু আমাকে চিনতে পারো কি না?”

-” ঝর্না আবরার কিছুক্ষণ দোয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে দোয়ার মুখে অজস্র চুমু দিয়ে বললো, মাশাআল্লাহ একদম শাহিনার কার্বন কপি।দেখতে কি মিষ্টি হয়েছে আমার দোয়াটা। আমার সামনে যেন কিশোরী বয়সের শাহিনা ‌দাড়িয়ে রয়েছে। ইশ্ আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? আমার তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। যাকে আমি এতো গুলো বছর খুঁজেছি এখন তার‌ অস্তিত্ব আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হ্যাঁ রে দোয়া তুই আমার স্বপ্নে আসিস নি তো?”

-” না খালাআম্মু।এই যে দেখ আমি তোমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছি।”

-“ঝর্না আবরার দোয়া কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।”

___________________________________

-” বৃত্ত ,অভি দুজনেই খুব ভালো ভাবে পরীক্ষা দিয়েছে।হল থেকে বেরিয়ে বৃত্ত বললো,আজ শুধু মাত্র মিস দেড় ফুটের জন্য আমি পরীক্ষা টা দিতে পারলাম। সত্যিই মেয়েটার প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।”

-” যাক অবশেষে তুই তোর ভুল বুঝতে পেরেছিস ।তবে বড্ড দেরি তে। আমাদের কখন কার দুয়ারে যেতে হয় একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।তাই আমাদের উচিত ধনী গরীব সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা। মানুষ কে মানুষ মনে করা।যাই হোক এখন বাসায় চল।পরশু দিন ম্যাথ পরীক্ষা আছে ভালো ভাবে প্রিপারেশন নিতে হবে তো।”

-” হুম চল।”

-“বৃত্ত বাসায় ফিরে ঝর্না আবরার কে না পেয়ে জামিলা কে জিজ্ঞেস করলো, বুয়া মম কে দেখছি না যে?মম কোথায়?”

-” মুই তো ক‌ইবার পারুম না ভাইজান।”

-“সারাদিন ফোনে শুধু মাইয়াগোর নাচন দেখলে ক‌ইবার পারবা কেমনে?”

-” আমি মোটেই মাইয়াগোর নাচন দেখছিলাম না। আপনি জানেন না আমার কিছু দিন পরে পরীক্ষা।আমি তো স্কুলে ছিলাম। মাত্রই বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে খালাম্মা ‌কে নিচে দেখি নি।হয়তো তার রুমে আছে।দাড়ান আমি ডেকে দিচ্ছি।”

-” তার কোন প্রয়োজন নেয়।আমি ডেকে নিতে পারবো। তুমি আমার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত নিয়ে এসো।”

-” ঠিক আছে ভাইজান।আমি এক্ষুনি শরবত তৈরি করে নিয়ে আসছি।”

-” বৃত্ত সোফার উপর তার ফাইল রেখে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ঝর্না আবরারের দরজার সামনে গিয়ে থমকে গেল।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here