#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_৯
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
“কুয়াশা তুমি আজকে প্র্যাকটিস করতে আসোনি কেন?”
“আমি এখন বাসে আছি।”
“বাসে? কিন্তু কেন?”
“আমি গতকাল রাতে বগুড়ায় এসেছিলাম সাফওয়ান। এখন ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। আগামীকাল দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।”
“আমি তোমাকে বাস স্ট্যান্ডে নিতে যাই? তোমার তো ঢাকায় পৌঁছাতে প্রায় রাত নয়টা বাজবে।”
“সমস্যা নেই। আমি একাই বাসায় চলে যেতে পারব।”
“জানি তুমি পারবে। তবে আমি আজ তোমার সাথে একটু দেখা করতে চাই।”
“কিছু কী হয়েছে?”
“না এমনিই!”
“আচ্ছা আমি স্ট্যান্ডের কাছে গিয়ে তোমাকে কল দিব। তুমি চলে এসো।”
“ঠিক আছে।”
সারাদিন সবার সাথে সময় কাটিয়ে বিকালের দিকে কুয়াশা বাসে ওঠে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আসার আগে অবশ্য আরেকবার তুরাবকে চোখের দেখা দেখে নিয়েছে সে। বাসে উঠে কুয়াশা আপনমনে কিছু ভাবতে শুরু করে। গাড়িতে উঠলেই কুয়াশা নিজের ভাবনার জগতে হারিয়ে যায়। এই সময়টা একান্তই তার কল্পনা করার সময়। একা থাকলে কল্পনার চেয়ে প্রিয় আর কি হতে পারে!
অন্যদিকে হাসপাতালে তুরাব খাবার মুখে দিতেই অবাক হয়ে নার্সকে জিজ্ঞেস করে,
“এই খাবার কে পাঠিয়েছে?”
“এটা তো হাসপাতালের খাবার।”
“আপনি মিথ্যা বলছেন। বলুন এটা কে বানিয়েছে? সত্যি কথা বলুন। আমি অনুরোধ করছি আপনাকে।”
নার্স কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়,
“আসলে আজ সকালে আপনার স্ত্রী এসেছিল আপনাকে দেখতে। এরপর আমাকে আপনার জন্য খাবার দিয়ে গিয়েছে। আর যাওয়ার সময় আপনাকে এই কথা বলতে মানা করে গিয়েছে।”
তুরাব স্ত্রীর কথা শুনে চকিত কণ্ঠে বলে,
“কুয়াশা এসেছিল! এতকিছুর পরেও ওও আমাকে দেখতে এসেছে। আবার নিজের হাতে খাবার বানিয়ে এনেছে। কিন্তু কেন? তবে কী সে আমাকে ভালোবাসে?”
তুরাবের মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু তার কাছে কোনো প্রশ্নের উত্তর নেই। এই উত্তর কেবল একজনই দিতে পারে। আর সে হলো কুয়াশা। কিন্তু কুয়াশা তো এখন তুরাবের থেকে বহুদূরে!
বাস স্ট্যান্ডে এসে বাস থামার পর কুয়াশা বাস থেকে নিচে নেমে এসে দেখে সাফওয়ান তার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কুয়াশা হাসিমুখে সাফওয়ানের কাছে এগিয়ে যায়।
“তুমি দেখি সত্যি সত্যি চলে এসেছ।”
“কেন ম্যাম? আমার কথা কি বিশ্বাস হয় না আপনার?”
“তেমন নয়। কিন্তু তুমি এখন বাসায় না গিয়ে এখানে এসেছ কেন বলো তো?”
“তোমার সাথে এক কাপ চা পান করার জন্য এত কষ্ট করে এখানে এসেছি।”
“এই সামান্য কারণে তুমি এত দূর আসলে? চা কি অন্যদিন পান করা যেত না?”
“আমার আজকেই ইচ্ছা করছিল তোমার সাথে দেখা করতে।”
“একদিন না দেখেই থাকতে পারছ না। ব্যাপার কী হুম?”
“আরে আমরা বন্ধু না? বন্ধুর জন্য মন কেমন করা কি অপরাধ?”
“মাত্র তিন মাসেই এত আপন হয়ে গেলাম কীভাবে?”
“ওও তুমি বুঝবে না। এখন চলো তো। কতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে হ্যা?”
“ওহ্ হ্যা আমরা এগোই এখন।”
“তো তারপর বলো, হঠাৎ বগুড়া গিয়েছিলে কেন?”
“জরুরি একটা কারণে গিয়েছিলাম।”
“জরুরি কাজটা কী? সেটা কি আমাকে বলা যাবে?”
“সময় আসুক। বলব কোনো একদিন।”
“আচ্ছা।”
“স্যার আজ আমার খোঁজ করেনি?”
“করেছিল। কিন্তু আমি নিজেই তো জানতাম না যে তুমি কেন আসোনি আজকে।”
“আমি তোমাকে কিংবা স্যারকে ফোন করে কিছু বলার সুযোগও পাইনি।”
“সামনেই একটা চায়ের দোকান আছে। চলো ওখানে গিয়ে বসি।”
অতঃপর দু’জন গিয়ে চায়ের দোকানের সামনে থাকা বেঞ্চে বসে কথা বলতে বলতে দুই কাপ চা দিতে বলে দোকানদারকে।
“গরম চায়ে চুমুক দেওয়ার মজাই আলাদা।”
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সাফওয়ান কথাটা বলার সময় খেয়াল করে কুয়াশা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসে আছে।
“কী হলো? তুমি চা নিয়ে বসে আছ কেন?”
“আসলে আমি এত গরম চা পান করতে পারি না। আমার সমস্যা হয়।”
“ওহ্ আচ্ছা এই ব্যাপার। আমাকে চায়ের কাপটা দাও।”
সাফওয়ান কুয়াশার থেকে চায়ের কাপ নিয়ে তাতে ফুঁ দিয়ে চা কিছুটা ঠান্ডা কুয়াশার হাতে দেয়।
“এবার ঠিক আছে?”
কুয়াশা মুচকি হেসে উত্তর দেয়,
“হুম।”
চায়ের দোকানে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে কুয়াশা আর সাফওয়ান কুয়াশার বাসায় যাওয়ার রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে।
“জানো এভাবে কখনো কারোর সাথে রাতের বেলা ফাঁকা রাস্তায় হাঁটার সুযোগ হয়নি আমার।”
“আমিও আগে এভাবে কাউকে সময় দেইনি।”
“তাহলে আমাকে দিচ্ছ কেন?”
“এর উত্তর আমার কাছেও নেই। একটা কথা কী জানো? তোমার সাথে কথা বলতে, সময় কাটাতে আমার ভালো লাগে। কেন ভালো লাগে সেটা জানি না। তাই এই প্রশ্ন আমাকে করো না তুমি।”
“আচ্ছা করলাম না প্রশ্ন। সত্যি বলতে তোমার সাথে কথা বললে আমারো নিজেকে হালকা মনে হয়। আমার সাথে কথা বলার মতো মা আর মলি ছাড়া তেমন কেউ ছিল না। বাসায় আদ্রিতা আছে। কিন্তু ওর সাথেও খুব বেশিক্ষণ থাকার সময় হয় না। সারাদিন আমরা একসাথে কাজ করি। তাই বলতে গেলে এখন তোমার সাথেই আমার সবচেয়ে বেশি কথা বলা হয়।”
“তোমার সাথে প্রথম পরিচয়ের দিন খুব গম্ভীর মনে হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হয় তুমি খুব মিশুকে মেয়ে। আসলে কোনটা তুমি?”
“এখন যেভাবে দেখছ আমি বরাবরই এইরকম। পরিস্থিতির চাপে গম্ভীর হতে বাধ্য হয়েছি। এখন আর সবার সাথে আগের মতো করে কথা বলতে ভালো লাগে না।”
“এই পরিবর্তন কেন?”
“সে লম্বা কাহিনি। সময় করে একদিন সব বলবোনি তোমাকে।”
“সেই সময়টা কী আদৌও আসবে কুয়াশা?”
“অবশ্যই আসবে। কেন আসবে না?”
“আমি খুব করে চাই সেই সময়টা তাড়াতাড়ি আসুক। তোমার সম্পর্কে জানার প্রচন্ড কৌতুহল আমার।”
“এত কৌতুহল কিন্তু ভালো না।”
“ভালো খারাপের ওজন করে তো আর সব হয় না।”
“তাও ঠিক!”
“দেখেছ কথা বলতে বলতে তোমাদের বাসার সামনে চলে এসেছি।”
“ভেতরে চলো আমার সাথে।”
“আজ এত রাত হয়ে গিয়েছে। অন্য একদিন আসব। এখন ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে না।”
“সাবধানে বাসায় যাও। আর গিয়ে আমাকে কল দিয়ে জানিয়ো।”
“আসি!”
সাফওয়ানকে বিদায় দিয়ে কুয়াশা বাসার ভেতরে ঢুকে দেখে আদ্রিতা চোখমুখ ফুলিয়ে বসে আছে। কুয়াশা তার কাছে গিয়ে বলল,
“কিরে কী হয়েছে তোর? এমন মুখ ভার করে বসে আছিস কেন?”
“আজকে একটা ছেলেকে ইচ্ছামতো পিটিয়ে এসেছি।”
“কেন?”
“আমার সাথে অসভ্যতামি করছিল।”
“তো প্রতিবাদ করার পরেও মুখ ফুলিয়ে রেখেছিস কেন?”
“ওই ছেলে আমাকে হুমকি দিয়েছে আমার নাকি অনেক বড়ো ক্ষতি করবে।”
“কোথায় থাকে সেই ছেলে?”
“আমাদের বাসার থেকে কিছুটা দূরে যে রাস্তা আছে ওখানে বসে থাকে প্রায় সময়।”
“শোন এত ভয় পাস না। তোর কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ। তুই একটু সাবধানে থাকিস। আর কিছু হলে আমাকে কল দিবি। একদম ভয় পাবি না।”
“হুম।”
“এই দেখ মা তোর জন্য নিজের হাতে বিরিয়ানি রান্না করে পাঠিয়েছে। তোর তো বিরিয়ানি খুব পছন্দ। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। তুই এটা একটু গরম কর। তারপর আমরা একসাথে বিরিয়ানি খাব।”
আদ্রিতা বিরিয়ানি দেখে হেসে বলে,
“এখনই গরম করে আনছি। বিরিয়ানি দেখলে আমার আর তর সয় না হিহিহিহি।”
কুয়াশা আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে হেসে ঘরে চলে যায়। ঘরে গিয়ে মলিকে কল দেয়।
“কলি তুই ঠিকমতো পৌঁছায়ছিস? এত দেরি হলো কেন?”
“আগেই এসেছি। তোকে মাত্র কল দিলাম।”
“ঠিক আছিস?”
“হ্যা হ্যা আমি একদম ঠিক আছি। আচ্ছা তুরাবের এখন কী অবস্থা? জানিস কিছু?”
“খোঁজ নেইনি। মনে হয় ভালোই আছে। আর ওর জন্য তুই কেন চিন্তা করছিস? বেয়াদবটা হোটেলে মেয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এমন অকাজ করলে পরিণাম খারাপই হবে। ওর জন্য এত চিন্তা করতে হবে না তোর।”
“তোকে কে বলল আমি চিন্তা করছি? একটু খোঁজ নিলাম আর কি!”
“বুঝি বুঝি তোমার সব কথা তুমি বলার আগেই বুঝে যাই। এমনি এমনি তো আর তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে প্রায় দশ বছর কাটালাম না।”
“ওলে আমার কিউটিপাই!”
“তুই ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে। তারপর আমি, তুই আর আদ্রিতা গ্রুপ কলে আড্ডা দিব।”
“তাহলে এখন রাখি কিউটিপাই।”
“আচ্ছা।”
চলবে??#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_১০
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
“কুয়াশাকে মে রে ফেলব আমি।”
তিন্নির মুখে এমন কথা শুনে ফয়সাল চমকে যায়। তিন্নির সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“এসব কী বলছো তুমি? পাগল হয়ে গেলে নাকি?”
“ওই মেয়ের জন্য এখনো আমার রাগ কমছে না। ওকে আমি পাঠালাম আমার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। আর সে কী করলো? আমাকেই পিঠ পিছে ছু ড়ি মা র লো!”
“শান্ত হও তিন্নি। আমরা তো সুখে আছি। তাহলে কুয়াশা কেন সুখী হবে না? কুয়াশা যদি তুরাবের সাথে সুখী হয় তাহলে আমাদের তো সমস্যা নেই।”
“আরে তুরাব কুয়াশাকে ভালোবাসে না। ওর সবকিছুই নাটক। কুয়াশা এত বোকা যে এসব কিছুই বুঝতে পারলো না।”
“আচ্ছা বাদ দাও। বোনের সাথে ঝামেলা করে সম্পর্ক নষ্ট করে লাভ আছে কী? সামনেই তুমি মা হবে। কুয়াশার খুব ইচ্ছা ছিল আমাদের বাচ্চাকে সবার আগে ওও কোলে নিবে। রাগ, অভিমান বাদ দিয়ে ওকে কল দিয়ে সব মিটিয়ে নাও।”
“দরকার নাই ওকে আমার। লাগবে না এমন বোনকে।”
“এসবের জন্য তোমার মা-বাবার সাথে ফুপির সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা কী বুঝতে পারছো তুমি?”
ফয়সালের কথায় তিন্নির কথা বন্ধ হয়ে যায়। সে ভাবে, সত্যিই তো আমাদের ঝামেলার জন্য পরিবারের অন্যদের সম্পর্কে ফাটল ধরছে। এখন আমার কী করা উচিত?
সকাল থেকে কুয়াশার মন খারাপ। কোনোকিছুতেই মন বসছে না তার। প্র্যাকটিসে এসেও চুপচাপ বসে আছে সে। সাফওয়ান কুয়াশার কাছে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে,
“তোমার কী হয়েছে বলো তো? সকাল থেকে কথা না বলে চুপ করে বসে আছো।”
কুয়াশা বিষন্ন চাহুনি নিয়ে তাকায় সাফওয়ানের দিকে। তার চোখ দু’টো বলে দিচ্ছে, সে ভালো নেই।
“আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই সাফওয়ান।”
“কী কথা? বলো।”
“এখন না। প্র্যাকটিস শেষে কোথাও বসে বলবো।”
“ঠিক আছে। এখন চলো স্যারের কাছে যাই।”
কুয়াশা সাফওয়ানের সাথে কাজের জায়গায় চলে যায়। এদিকে তুরাব এখন পুরোপুরি সুস্থ। কিন্তু তার মা থা য় কুয়াশাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন জমে আছে। দুই মাস আগে সেই দুর্ঘটনার সময় কুয়াশা কেন তাকে হাসপাতালে দেখতে এসেছিল এই প্রশ্নের উত্তর এখনো সে জানে না। তুরাব কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। তার বারবার মনে হচ্ছে, কুয়াশা তাকে ভালোবাসে।
“আমি আর নিতে পারছি না এসব। কুয়াশা যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসে তাহলে আমি ওর প্রতি অন্যায় করেছি। আমি যত খারাপ মানুষই হই, কখনো কোনো নিষ্পাপ মেয়েকে কষ্ট দিইনি। কুয়াশার মতো মেয়েকে কষ্ট দিলে আমি নিজেও তো ভালো থাকতে পারব না। আমরা দু’জন আলাদা আছি প্রায় পাঁচ মাস হয়ে গেল। এই পাঁচ মাসে কুয়াশার কথা কথা কম করে হলেও পাঁচশ বার মনে পড়েছে। আমার কুয়াশার সাথে কথা বলতে হবে।”
কুয়াশাকে কল দেওয়ার পূর্ব মুহূর্তে সে নিজের সিদ্ধান্ত বদলে নিয়ে মলিকে কল দেয়। মলি কল রিসিভ করে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমি তুরাব বলছি।”
“আপনি আমাকে কেন কল দিয়েছেন?”
“মলি তোমার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে কুয়াশাকে নিয়ে।”
“কী কথা?”
“কুয়াশা কী আমাকে ভালোবাসে?”
তুরাবের এমন প্রশ্নে হতবাক হয়ে যায় মলি। এই প্রশ্নের উত্তর যে তার কাছেও নেই।
“আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। তবে গত দুই মাস আগে আপনার যে অবস্থা হয়েছিল তাতে কুয়াশা খুব অস্থির হয়ে গিয়েছিল। আপনাকে একবার দেখার জন্য ঢাকা থেকে ছুটে এসেছিল সেদিন রাতেই।”
“কী? কুয়াশা বগুড়ায় নেই এখন?”
“কুয়াশা প্রায় পাঁচ মাস ধরে ঢাকায় আছে। ওর উকিল হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
“ওর ঢাকার ঠিকানা আমাকে দিতে পারবে?”
“না। আমরা কেউ চাই না যে আপনি কুয়াশার সাথে পুনরায় যোগাযোগ করুন। ওকে ওর মতো করে থাকতে দিন ভাইয়া। ওর জীবনের সমস্ত সুখ যারা কেঁড়ে নিয়েছে তাদের ওর জীবনে ফিরে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই।”
“মলি এমন করে বলো না।”
“এর থেকে ভালো করে বলতে আমি জানি না। আমাকে মাফ করবেন। রাখছি।”
তুরাবকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মলি কল কেটে দেয়। এই ছেলের সাথে কথা বলতে বিরক্ত লাগে তার।
প্র্যাকটিস শেষে কুয়াশা আর সাফওয়ান একটা ক্যাফেতে বসে। কুয়াশার মুখে এখনো বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট। সাফওয়ান কুয়াশার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,
“এবার বলো কী বলতে চাও?”
“সাফওয়ান তোমার সাথে আমার পরিচয়ের পাঁচ মাস হয়ে গেল। আর কিছু দিন পর আমাদের প্র্যাকটিস শেষ হয়ে যাবে। এই পাঁচ মাসে তুমি আমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিয়েছো। আমার খুব কাছের একজন হয়ে উঠেছো। এবার সময় এসেছে তোমাকে আমার জীবন সম্পর্কে সবকিছু বলার।”
“আমি তো তোমার সম্পর্কে জানার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি। অবশেষে আমার অপেক্ষার প্রহর আজ শেষ হলো তবে!”
“হুম শেষ হলো। আমি আর নিজেদের মধ্যে কথাগুলো চেপে রাখতে পারছি না। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার।”
“তুমি ঠিক আছো তো কুয়াশা?”
“না, আমি ঠিক নেই। আমার জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যার জন্য আমি আগের মতো নেই। জানো? আমি এক সময় খুব চঞ্চল ছিলাম। আমার মতো হাসিখুশি মেয়ে খুব কমই হয়। আমি আগে এত কথা বলতাম যে অনেকে আমাকে বাঁচাল পরি বল ডাকতো। আমার মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগে থাকতো।”
পুরোনো স্মৃতিচারণ করতে করতে কুয়াশার ঠোঁটে নিজের অজান্তেই হাসি ফুটে ওঠে। সে যেন আগের কুয়াশা হয়ে উঠেছে। সাফওয়ান কুয়াশার কথা শুনে এটুকু অনুমান করতে পারছে অতীতে তার সাথে বাজে কিছু হয়েছে। যার জন্য কুয়াশা সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে। কুয়াশা কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলতে শুরু করে,
“আর কিছু দিন পর হয়তো আমরা আলাদা হয়ে যাব। আমাদের প্র্যাকটিস শেষ হয়ে যাবে। তারপর কে কোথায় চলে যাবো জানি না। তোমার সাথে আমার যোগাযোগ সেই সময় সময় থাকবে কিনা সেটাও জানি না। তাই এখনই কথাগুলো তোমাকে না বললে বড্ড দেরি হয়ে যাবে। আমি নিজের মধ্যে কথা বেশি দিন চেপে রাখতে পারি না। আর তুমি এখন আমার বন্ধু হয়ে উঠেছো। এজন্য এসব জানার অধিকার তোমার আছে।”
“আমি জানতে চাই সবকিছু। তুমি বলো আমাকে।”
“হ্যা বলছি।”
কুয়াশা আর কিছু বলার আগেই তার ফোন বেজে ওঠে। মলি কল দিয়েছে।
“মলি কল দিয়েছে। আমি ওর সাথে কথা বলে আসছি। পাঁচ মিনিট লাগবে। তুমি এখানে বসে থাকো।”
“আচ্ছা।”
কুয়াশা সাফওয়ানের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে কল রিসিভ করে।
“হ্যা মলি বল।”
“তুরাব ভাইয়া আজকে আমাকে কল দিয়েছিল।”
“তোকে কল দিয়েছিল? কিন্তু কেন?”
“তুই তাকে ভালোবাসিস কিনা এটা জানার জন্য। ভাইয়ার সাথে কথা বলে মনে হলো সে কিছু নিয়ে চিন্তিত। তুই ঢাকায় যেখানে থাকিস সেখানকার ঠিকানা চাচ্ছিল আমার কাছে।”
“তুই ঠিকানা দিয়ে দিয়েছিস নাকি?”
“আরে না। আমি ঠিকানা দিব কেন? আমি আরো বলেছি তোর সাথে কখনো যোগাযোগ না করতে।”
“ভালো করেছিস। তবে আমার কী মনে হয় জানিস?”
“কী?”
“তুরাব আমাকে কল দিবে। আমার সাথে কথা বলতে চাইবে।”
“এমন মনে হচ্ছে কেন তোর?”
“এমনিই মনে হচ্ছে।”
“তোর মা থা য় ঠিক কী চলছে বল তো? আমার না তোর কথাগুলো কেমন রহস্যময় মনে হচ্ছে। তুই কী আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছিস?”
“তোর কাছে আমি কখনো কিছু লুকিয়েছি? শোন তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে। কিন্তু এখন আমি বাইরে আছি। বাসায় গিয়ে কথা বলবো এসব নিয়ে৷ এখন রাখছি।”
“ঠিক আছে। সাবধানে থাকিস।”
মলির সাথে কথা বলা শেষে কুয়াশার ঠোঁটে রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে। সে আপনমনে বিরবির করে বলে,
“খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে!”
চলবে??