#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ12
সকাল সকাল ব্যালকনিতে দাড়িয়ে মন ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে রুশা। ভোরের শীতল আবহাওয়া ওকে এক শান্তির পরশ এনে দিয়েছে। মনে হচ্ছে বেশ অনেক দিন পর এতটা প্রান খুলে শ্বাস নিতে পারছে ‘ও’। কিছুক্ষণ ব্যালকনিতে দাড়িয়ে থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে রুমে ফিরে এলো রুশা। রুমে আসতেই ঠান্ডায় ওর শরীরে কাপুনি উঠে গেল। এতক্ষণ সোয়েটার ছাড়া ব্যালকনিতে কুয়াশার মধ্যে দাড়িয়ে থাকার কারনে হাত-পাঁ জমে একদম বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। কাঁপতে কাঁপতে রুশা গিয়ে লাগেজ খুলে চকলেট কালারের একটা ওভারকোট বের করে গায়ে পড়ে নিল। তারপর বেড সাইডের ছোট্ট টেবিলের উপর থেকে নিজের সেলফ ফোনটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল আয়াশের রুমে যাওয়ার উদ্দ্যেশে। ওর রুমের সোজাসুজি যে রুমটা সেটাতে আয়াশকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। রুশা রুমটার সামনে গিয়ে দরজার উপরে দু-বার নক করল। কিন্তু ওপাশ থেকে কারো কোনো সারাশব্দ আসলো না। এইটুকু আওয়াজে ওপাশ থেকে কোনোরকম সারাশব্দ যে আসবে না সেটা রুশাও ভালো করেই জানে। কারন আয়াশের ঘুম ভিষন গভীর। একবার সে ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেলে তারপর তার উপর বিল্ডিং ভেঙে পড়লেও তার ঘুম ভাঙবে না। রুশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজায় আবারও নক দেওয়ার জন্যে উদ্যত হল। কিন্তু নক দেওয়ার আগ মুহূর্তেই আয়াশ এসে দরজার লক খুলে দিল। রুশা খানিকটা অবাক হয়ে বলল,
–“আরেহ বাহ, এত অল্পতেই আজকে নবাব সাহেবের ঘুম ভেঙে গেল? কেয়া বাত হে!”
কথাটা বলতে বলতে রুশার চোখ গেল আয়াশের মুখের দিকে। আয়াশের চোখসহ সারা মুখ-ই কেমন লাল, লাল হয়ে আছে। চুলগুলো একদম উসকো খুসকো হয়ে কপালে পড়ে আছে। গায়ে এখনো কালকের পড়া সেই ড্রেস। চেহারায় কেমন একটা বিধ্বস্ত-ক্লান্ত ভাব। আয়াশকে এভাবে দেখে রুশার অবাকের মাত্রাটা আরো বেড়ে গেল। ‘ও’ কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে বলল,
–“চেহারার এমন বেহাল অবস্থা করেছিস কেন? কি হয়েছে তোর? রাতে ঘুমাস নি না-কি?”
আয়াশ কিছু না বলে হেঁটে গিয়ে বিছানার উপরে বসে পড়ল। রুশাও ধীর পাঁয়ে রুমের ভিতরে ঢুকে আয়াশের সামনে গিয়ে দাড়াল। তারপর শীতল কণ্ঠে বলল,
–“তুই ঠিক আছিস আয়াশ? তোর এখানে থাকতে কি কোনো প্রবলেম হচ্ছে? দেখ, তোর এখানে কোনো প্রবলেম হলে তুই বাসায় ফিরে যা। আমি আমার কাজ শেষ করে দু-একদিনের মধ্যেই এখান থেকে চলে যাব। আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।”
আয়াশ ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে গম্ভীর গলায় বলল,
–“না, আমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে না। শুধু অতোটা রাস্তা একটানা ড্রাইভ করার ফলে রাতে হাত-পাঁয়ে একটু পেইন হচ্ছিল। যার কারনে রাতে ঘুম হয়নি। তাই একটু এরকম দেখাচ্ছে।”
আয়াশের কথাটা রুশার কেন যেন বিশ্বাস হল না। ‘ও’ সন্দীহান দৃষ্টিতে আয়াশের দিকে তাকিয়ে রইল। আয়াশ বেড থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল,
–“তুই এখানে দাড়া, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ফ্রেশ হলে হয়ত ফেস থেকে ক্লান্তি ভাবটা চলে যাবে।”
বলতে বলতে আয়াশ ওয়াশরুমে চলে গেল। রুশা আয়াশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। কালকে এখানে আসার পর থেকেই আয়াশকে ওর কাছে কেমন অদ্ভুত লাগছে। কালকে রাতে রুশার চাচী যখন আয়াশকে এই রুমে নিয়ে এসেছিল, তখন ওর চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ ছিল। রুশা তখন ব্যাপারটা খেয়াল করেছিল। কিন্তু আয়াশকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। ভেবেছিল সকালে জিজ্ঞেস করে নিবে। কিন্তু এখন ওর যা অবস্থা দেখল তাতে রুশার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে। ওর মনে হচ্ছে আয়াশ ওর থেকে কিছু একটা হাইড করছে। কিন্তু কি হাইড করছে?
_________________________
আয়াশ ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে রুশাকে নিয়ে নিচে আসার জন্যে পাঁ বাড়াল। সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে ওদের দুজনের চোখ গেল মেইন দরজার দিকে। দরজা দিয়ে সৃজা আর শান ভিতরে প্রবেশ করছে। ওদের দুজনকে এখানে দেখে আয়াশ বিষ্মিত হল। রুশা বিরক্তি নিয়ে বিরবির করে বলল,
–“এদেরও আজকেই আসার ছিল! ধুরর!”
সৃজা আর শান হাঁটতে হাঁটতে এসে ড্রইংরুমের একদম মাঝ বরাবর দাড়াল। রুশা আর আয়াশও সিড়ি দিয়ে নেমে ওদের মুখোমুখি গিয়ে দাড়াল। চার জনের মুখের ভঙ্গি এখন চার রকমের। রুশা বিরক্তির দৃষ্টিতে শানের দিকে তাকিয়ে আছে। শান তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াশ বিষ্ময়ে হা করে শান আর সৃজার দিকে তাকিয়ে আছে। আর সৃজা বোকা বোকা চোখে আয়াশকে দেখছে। ‘ও’ বুঝতে পারছে না, আয়াশ কি সত্যিই ওর সামনে দাড়িয়ে আছে? না-কি সবটাই ওর মনের ভ্রম? চারজনের হুশ আসলো আশরাফ সিকদারের ডাকে। আশরাফ সিকদার গলা ছেড়ে ডাক দিয়ে বললেন,
–“কি ব্যাপার তোমরা চারজন ওখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছো কেন? এখানে এসে বোসো সবাই।”
আশরাফ সিকদারের কথায় চারজন বিনা-বাক্যে গিয়ে উনার পাশে কাউচের উপরে বসে পড়ল। আশরাফ সিকদার শানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–“কি খবর শান দাদুভাই? তোমার দিনকাল কেমন কাটছে?”
শান স্মিত হেঁসে বলল,
–“ভালোই কাঁটছে দাদু। তোমার কি অবস্থা? কেমন আছো?”
–“আমার রুশা আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমার কি আর খারাপ থাকার উপায় আছে? আমি খুব ভালো আছি।”
বেশ ফুরফুরে মেজাজে কথাটা বললেন আশরাফ সিকদার। আশু কিচেন থেকে ট্রে হাতে নিয়ে ড্রইংরুমের দিকে আসতে আসতে বলে উঠল,
–“তাই না-কি দাদু? তারমানে এতদিন তুমি তোমার আদরের নাতনিকে ছাড়া আমাদের কাছে খুব কষ্টে ছিলে বুঝি?”
আশুর অভিমানি কণ্ঠের কথা শুনে আশরাফ সিকদার উচ্চস্বরে হাসলেন। তারপর খানিকটা দুষ্টুমির ছলে বললেন,
–“যদি বলি হ্যাঁ কষ্টে ছিলাম। তাহলে কি তোমার হিংসে হবে আশু দিদিভাই?”
আশু ট্রে নিয়ে এসে কাউচের সামনে থাকা ছোট্ট টি-টেবিলের উপরে রেখে আশরাফ সিকদারের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে বলল,
–“একবার বলেই দেখো না বুড়ো, তোমাকে এতগুলো দিন ডাক্তারের বারন করা সর্তেও সবার আড়ালে চুপিচুপি যে মিষ্টি খেতে দিতাম, সেই সব একদম বন্ধ করে দিব।”
আশুর কথায় আশরাফ সিকদার হা হা করে হেঁসে দিলেন। ওনার হাসির ঝংকারে পুরো বাড়িতে যেন প্রান ফিরে এলো। আশু মৃদ্যু হেঁসে একেএকে সবার হাতে এক মগ করে কফি উঠিয়ে দিল। তারপর নিজেও এক মগ কফি নিয়ে সৃজার পাশে বসে পড়ল। সৃজা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাশফাশ করছে। আয়াশ এখানে কি করছে সেই প্রশ্নটা ওর মাথার মধ্যে চরকির মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ আশু সৃজাকে উদ্দ্যেশে করে পিঞ্চ করে বলল,
–“কিরে এতদিন ত ‘আয়াশ’ ‘আয়াশ’ বলে সবাইকে জ্বালিয়ে মারতি। এখন চোখের সামনে আয়াশকে দেখেও ভ্যাগা বিড়ালের মতো বসে আছিস কেন? তুই না বলতি, আয়াশ তোর সামনে আসলে তুই ওকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করে ফেলবি। যা এখন গিয়ে কিডন্যাপ কর।”
আশুর কথা শুনে সৃজা কটমট করে ওর দিকে তাকাল। এভাবে সবার সামনে এই কথাটা বলে ওকে লজ্জায় ফেলার কি প্রয়োজন ছিল? সৃজা চোরা চোখে একবার আয়াশের দিকে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলল। আয়াশের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ওর মাথার মধ্যে সবকিছু জিলেপির মতো প্যাচ লেগে গেছে। টেনশনে আর রাগে ওর চেহারায় কেমন অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। রুশা বারবার আয়াশের দিকে তাকিয়ে ওর ভাব ভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করছে।
এদিকে মোহনা সিকদার কিচেন থেকে গরম তরকারির বাটি হাতে নিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে যেতে যেতে আশুকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন,
–“তুমি গিয়ে আবার ওখানে গল্প করতে বসে পড়লে কেন আশু? এদিকে কত কাজ পড়ে আছে তোমার ধারনা আছে?”
কথাটা বলতে বলতে হঠাৎ মোহনা সিকদারের চোখ পড়ল আয়াশের দিকে। উনি আয়াশকে এক পলক দেখা মাত্রই চমকে উঠলেন। সাথে সাথে ওনার হাত থেকে তরকারির বাটি’টা ফ্লোরে পড়ে ঝনঝন করে শব্দ হল। গরম তরকারীর ঝোল ছিটকে এসে ওনার পাঁয়ের উপর পড়ল। বাটি ভাঙার শব্দ ড্রইংরুমের সবার কানে পৌছাতেই ওখানে উপস্থিত সবাই বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। আশু আর সৃজা দৌড়ে মোহনা সিকদারের কাছে আসলো। আশু, মোহনা সিকদারের এক হাতের বাহু ধরে ব্যস্ত স্বরে বলল,
–“আম্মু তুমি ঠিক আছো? উফফ এসব তোমাকে কে নিয়ে আসতে বলেছে বলো ত? কাকি-মনি ছিল, আমি ছিলাম, সার্ভেন্ট’রা ছিল কাউকে একজনকে ডাক দিলেই ত পারতে। তুমি এটা আনলে কেন?”
আশুর এত জোরে বলা কথাগুলো সবার কান অবদি পৌছালেও মোহনার কানে কিছুই ঢুকল না। উনি চোখ ভর্তি পানি নিয়ে এক ধ্যানে আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছেন। পাঁয়ে গরম ঝোল পড়ে পাঁয়ের কোষগুলো জ্বলে যাচ্ছে। সেদিকেও ওনার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আচমকা সবাইকে অবাক করে দিয়ে মোহনা সিকদার ছুটে গিয়ে আয়াশের বুকে ঝাপিয়ে পড়লেন। ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উন্মাদের মতো বলতে লাগলেন,
–“আমি জানতাম বাবা, তুই আমার উপর রেগে থাকতেই পারিস না। রাগ কমে গেলে তুই একদিন না একদিন আমার সাথে দেখা করতে আসবি আমি সেটা জানতাম। আমাকে ক্ষমা করে দে আব্বু। আমি আর কোনোদিন তোকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিব না, প্রমিস।”
বলতে বলতে মোহনা সিকদার হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। রুশা, শান, সৃজা, আশু সহ সবাই হতবিহ্বল হয়ে দাড়িয়ে আছে। মোহনা সিকদার আরো কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আয়াশ ওনাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর জন্যে জোরে একটা ধাক্কা দিল। আচমকা ধাক্কা খাওয়ায় উনি ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নিলেই শান এসে ওনাকে ধরে ফেলল। আয়াশ চেঁচিয়ে মোহনা সিকদারকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
–“আমার সাথে একদম ফালতু ড্রামা করতে আসবেন না। আপনার এসব ড্রামা দেখতে আমি মোটেও ইচ্ছুক না। আর আপনার সাথে দেখা করার জন্যেও আমি এখানে আসি নি।”
আয়াশ কথাটা বলার সাথে সাথে শান অগ্নিমূর্তির রূপ ধারন করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–“তোর সাহস হল কীভাবে আমার ফুপ্পির সাথে মিসবিহেব করার? তোকে আমি……”
কথাটা বলতে বলতে শান মোহনা সিকদারের হাত ছেড়ে দিয়ে আয়াশকে মা*রার জন্যে উদ্যত হল। সাথে সাথে মোহনা সিকদার শানের এক হাত আকড়ে ধরে কান্নাভেজা গলায় বলল,
–“ওকে কিছু বোলো না শান। ‘ও’ আমার ছেলে আয়াশ। তোমার ভাই ‘ও’।”
শানের পাঁ জোড়া থমকে গেল। মাথার রক্ত চলাচল ক্ষনিকের জন্যে বন্ধ হয়ে গেল। ওখানে উপস্থিত সবাই স্তব্দ হয়ে গেল। সবাই জানত আশু ছাড়াও মোহনা সিকদারের আগের পক্ষে একটা ছেলে আছে। যে বাবার সাথে ক্যালিফোর্নিয়া থাকে। কিন্তু তার নাম কি সেটা কারো জানা ছিল না। আশুও তখন অনেক ছোট ছিল। তাই আয়াশের নামটা ওরও মনে ছিল না। এমনকি মোহনা সিকদার কখনোই ওর সামনে আয়াশের নাম উচ্চারন করেনি।
সবার মধ্যের নিরবতা কাটিয়ে আয়াশ রুশার সামনে গিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠল,
–“রুশ আমি এখানে তোর জন্যে এসেছি। তোর ফ্যামিলির লোকদের বলে দিবি আমাকে ওরা কেউ যেন অযথা ইরিটেড না করে। আমাকে কেউ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা করলে কিন্তু আমি কাউকে ছেড়ে দিব না।”
আয়াশ রুশার থেকে কোনো প্রতিউত্তরের অপেক্ষা না করেই গটগট করে হেঁটে উপরে চলে গেল। মোহনা সিকদার ধপ করে কাউচের উপর বসে পড়ে কেঁদে উঠলেন। রুশা আর শান দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।
_______________________
সকাল এগারোটা বেজে গেছে। এখন পযর্ন্ত কেউ ব্রেকফাস্ট করেনি। মোহনা সিকদার সেই যে রুমে ঢুকে দরজা আটকেছেন তারপর আর বের হননি। ইমদাদ সিকদার সকালেই অফিসে চলে গিয়েছিলেন। এই ঘটনা ঘটার পর আশু ওনাকে ফোন করেছিল। কিন্তু ওনার সেক্রেটারি ফোন রিসিভ করে জানিয়েছে, উনি এখন মিটিংয়ে আছে। আশরাফ সিকদার এখনো কাউচের উপর বসে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে। শান সেই সময়ই বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। তারপর আর ফিরেনি। রুশাও গিয়ে রুম আটকে বসে আছে। শুধু সৃজা আর আশু শুকনো মুখে ডাইনিং রুমে বসে আছে। পুরো বাড়ীতে একটা থমথমে ভাব। সার্ভেন্ট রা কিচেনে দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কিছুক্ষন বসে থাকার পর ঘড়িতে সময় দেখে আশু বসা থেকে উঠে দাড়াল। বাটি থেকে প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে সৃজাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
–“সুজি মনে হচ্ছে কেউ খেতে নিচে আসবে না। একটা কাজ কর। তুই এই খাবার টা গিয়ে আয়াশ ভাইয়ার রুমে রেখে আয়। তারপর এসে রুশার জন্যে খাবার নিয়ে যাস। আমি ততক্ষণে দাদুভাইকে কিছু খাইয়ে দিয়ে আসি।”
বলতে বলতে আশু খাবারের প্লেট টা সৃজার হাতে ধরিয়ে দিল। সৃজা আর সাত পাঁচ না ভেবে প্লেট হাতে নিয়ে উপরে আসার জন্যে পাঁ বাড়াল। আয়াশের রুমের সামনে এসে ‘ও’ একটু জোরেই দরজায় নক করল। একবার নক করার পরেও আয়াশ যখন দরজা খুলল না। তখন সৃজা একটু বিরক্ত হয়ে আগের থেকে আরো জোরে দুইবার দরজায় ধাক্কা দিল। এবারে ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে দরজাটা ঠাস করে খুলে গেল। সৃজা একটু লাফিয়ে উঠে দু-কদম পিছিয়ে গেল। আয়াশ রক্তিম চোখে সৃজার দিকে তাকিয়ে ধমকের স্বরে বলল,
–“হেই সমস্যা কি? কি চাই হ্যাঁ?”
আয়াশ এভাবে কথা বলায় সৃজা ভরকে গেল। খানিকটা ভয়ও পেল। কিন্তু ভয়টাকে পাত্তা না দিয়ে একটু স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
–“ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসেছি। খেয়ে নিন।”
আয়াশ চেঁচিয়ে বলল,
–“মাই ফুট। এইগুলো নিয়ে যাও এখান থেকে।”
সৃজা কপাল কুচকে বলল,
–“আজব ত, আপনি আমার উপর চেচাচ্ছেন কেন? কি করেছি আমি?”
আয়াশ নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলল,
–“কিচ্ছু করোনি। তোমরা কেউ কিচ্ছু করোনি। যা করার আমি করেছি। আমার এখানে আসাটাই ভুল হয়ে গেছে।”
সৃজা ভেংচি কেটে বলল,
–“আপনার পুরো জীবনটাই একটা ভুল। আপনি নিজেই চলতি ফিরতি একটা ভুলের দোকান।”
সৃজার এভাবে মুখে মুখে কথা বলায় আয়াশের রাগের মাত্রাটা তরতর করে বেড়ে গেল। ‘ও’ শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে সৃজার গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। এমন শক্তপোক্ত হাতের এরকম একটা দাবাং মার্কা চড় খেয়ে সৃজা ফ্যানের মতো ঘুরে গেল। ওর হাত থেকে প্লেটটাও ফ্লোরে পড়ে ভেঙে গেল। সৃজা কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়ল। ওর চোখের সামনে সবকিছু বনবন করে ঘুরতে লাগল। আয়াশ শাসানোর ভঙ্গিতে বলল,
–“ভবিষ্যতে যদি আমার সাথে অতিরিক্ত পাকনামি করতে এসেছো, তাহলে থা*প্প*র মা*রতে মা*রতে আমি তোমার গালের সব মাংস তুলে ফেলব।”
সৃজা গালে হাত দিয়ে ঘশতে ঘশতে ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিয়ে বলল,
–“আপনি আবারও আমাকে মারলেন? আমি সবাইকে বলে দিব আপনি আমাকে মে*রেছেন? তারপর দেখবেন আমার পরিবারের সবাই মিলে আপনাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিবে।”
কথাটা বলে সৃজা কড়িডোর দিয়ে সিড়ির দিকে হাঁটা লাগাল। আয়াশ পিছন থেকে বলে উঠল,
–“জাহান্নামে যাও। যা ইচ্ছে করো। আমিও দেখি তোমার গুষ্টি আমার কি করতে পারে।”
#চলবে…..