অপ্রেমের প্রিয় অধ্যায় পর্ব -২০

#অপ্রেমের_প্রিয়_অধ্যায়
#পর্ব_২০ (মুখোমুখি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ

সকাল সকাল শুদ্ধর নিকট খবর এলো—তনুজা ট্রান্সফার নিয়ে অন্য কলেজে চলে গিয়েছে। অতঃপর ধরতে পারল, ‘বিগত সপ্তাহ খানেক ধরে তনুজার ভার্সিটিতে না-আসার কারণগুলো।’

প্রচণ্ড চমকে গিয়েছে সে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই মুহূর্তে তার কাছে পৃথিবীর যাবতীয় সকল বিষয় মিথ্যে মনে হলো। তার চেয়েও বেশি মিথ্যে লাগল, গোটা তনুজার অস্তিত্বকেই। এরপর মানতে পারল না এ-ই—সে কোনোভাবেই তনুজার অবস্থানকে নিশ্চিত করতে পারছে না, দাদাইও তনুজার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তাকে কোনোরূপ অবহিত করতে পারল না।
এরপর কী করবে, কী করবে না—এসব যখন ভাবছিল; ঠিক তখনই সে বুঝতে পারল—কোনো এক অজানা শঙ্কায় তার সর্বাঙ্গ শিরশির করে কাঁপছে। কু-সংস্কারে সে বিশ্বাসী নয়, তবে গাট ফিলিংসটাকে ফেলতে পারল না। ধরতে পারল—কিছু একটাকে পেতে পেতেও সে হারিয়ে ফেলছে।
হাত থেকে ফোন পড়ে গেল। তড়িঘড়ি করে সেই ফোনটা আবার তুলল। হাতের চলন বেশ দ্রুত, টাইপিং মিস্টেক হচ্ছে! সেভাবেই খুঁজে বের করল প্রাপ্তির কন্ট্যাক্ট নম্বর। এই মুহূর্তে প্রাপ্তি ছাড়া শুদ্ধর দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই; তুহিন-শাওন দুজনেই ব্যস্ত যে!

প্রাপ্তি কল রিসিভ করে বলল, “এই রে! কল দিয়ে দিলি? আমার আসতে আর পনেরো মিনিট লাগবে। পাক্কা পনেরো মিনিট পরেই পৌঁছে যাব!”

কাঁপা-কাঁপা কণ্ঠে শুদ্ধ বলে উঠল, “ক্যাম্পাসে না, আমার বাসায় আয়।”

প্রাপ্তি শিউরে উঠল। শুদ্ধর আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারল—কিছু একটা হয়েছে। সেই কিছু একটার ভয়ঙ্কর রেশ শুদ্ধ থেকে প্রাপ্তি অবধি যান্ত্রিক মুঠো ফোনের ভেতর দিয়ে তার নিশ্চল আওয়াজেই পৌঁছাল। প্রাপ্তি বলে উঠল, “পাঁচ মিনিট!”

____
ব্যালকনিতে বসে আছে শুদ্ধ। ঠিক তার সামনেই প্রাপ্তি বসে আছে। দুজনেই হাতে দু-কাপ কফি নিয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে। ইতোমধ্যে শুদ্ধ প্রাপ্তিকে ঘটনার আগা-গোড়া বিশ্লেষণ করেছে। অল্পকথায় বলতে গেলে এই দাঁড়ায়—তনুজা খুবই গোপনে উপর মহল থেকে নিজের ট্রান্সফার করিয়ে দেশের অন্য প্রান্তের কোনো এক ভার্সিটিতে গিয়েছে। বিষয়টা অত্যন্ত গোপনীয়তা মেনে হয়েছে যে, ডিপার্টমেন্টের অন্যান্য প্রফেসররাও তা থেকে অবগত নন। অতঃপর যখন সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়, তখন বিষয়টা শুদ্ধর কানে আসে। অনেক খোঁজ নিয়েও বের করতে পারছে না এখন—তনুজা ঠিক কোন জায়গাতে বসত গেড়েছে! নিশ্চয়ই এতে কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তির হাত রয়েছে!

যতদূর তনুজাকে চেনে শুদ্ধ, সে-হিসেবে কোনো এক পাহাড়ি এলাকায় সে রয়েছে। খোঁজ চালাবে তো পুরো দেশেই। কিন্তু চয়েজলিস্টের উপরে থাকবে পাহাড়ি অঞ্চলগুলো। সে হিসেবেই প্রাপ্তি উপদেশ দিলো, “ভেঙে পড়িস না।”

শুদ্ধ অসহায় চোখে তাকাল। প্রাপ্তি এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে ভরসার হাতটা রেখে বলল, “আ’ম অলয়েজ দ্যেয়ার ফর ইউ, শুদ্ধ!”

শুদ্ধ মলিন হাসল, “অথচ, আমি কেবল মাত্র তাঁকেই চেয়েছিলাম। সেই একজন হলেই হতো আমার, আর কাউকেই প্রয়োজন ছিল না।”

“চিন্তা করিস না এত। আমরা পেয়ে যাব। তোর দাদাইকে বল হেল্প করতে।”

“দাদাইকে বলেছি। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। হবে বলেও মনে হচ্ছে না।”

“কেন?”

“কেউ হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু যে নিজ থেকে লুকোয়?”

“পাবি না বলছিস?”

শুদ্ধ কণ্ঠে জোর দিয়ে বলল, “পাব।”

“কিন্তু করবিটা কী?”

“দাদাইয়ের লোকেরা অলরেডি কাজ শুরু করে দিয়েছে। তবে, সমস্যা অন্যখানে।”

“কই?”

“ম্যাম কি অতীতে ফিরে যেতে চাইছে?”

“মানে?”

“আজওয়াদ আবরার সিদ্দিক!”

“কে? ম্যামের হাজব্যান্ড?”

শুদ্ধ ত্বরিতে প্রাপ্তির দিকে তাকাল। শোধন করে বলল, “এ-ক্স হাজব্যান্ড!”

শুদ্ধ সম্বোধনের পূর্বের প্রিফিক্সটাকে জোর দিলো, তীক্ষ্ণ ও ধারালো দৃষ্টিতে প্রাপ্তির পানে তাকিয়ে। সে চোখের ভাষা পড়তে পেরে প্রাপ্তি মনে মনে হেসে ফেলল। উপর দিয়ে শুদ্ধকে শুধাল, “ওখানে যাবে কেন?”

“যাবে নয়, যেতে পারে।”

“কিন্তু কেন?”

“প্রেম পিছু ছাড়ে না। অতীতের চেয়েও বেশি আঁকড়ে ধরে। আর যদি প্রেম ও অতীত—উভয়ই স্রোতের অনুকূলে থেকে থাকে, তবে তো কথাই নেই!”

_____
শাড়ির আঁচলটা কোমরে ভালোভাবে গুঁজে নিয়ে তনুজা শিফাকে বলল, “মামা আসবে না?”

শিফা বক্স থেকে বেডশিট বের করে বিছানায় লাগাতে লাগাতে উত্তর দিলো, “না, আব্বু আসবে না।”

“কেন?”

“আব্বু কালই ইমার্জেন্সি ফ্লাইটে নেপাল গেছে তার একটা মিটিংয়ের জন্য। তোমাকে ফোনে পাচ্ছিল না তাই বলে যেতে পারেনি। আমাকে বলে গিয়েছিল—তোমাকে জানাতে। মনে ছিল না আমার আর।”

“ওও আচ্ছা!”

“হ্যাঁ, আপু! ফুড পান্ডায় অর্ডার করে দিই লাঞ্চটা। ঠিকাছে?”

“আচ্ছা, দে। আর শোন, তোর ফোনের হটস্পটটা একটু অন দে।”

“আচ্ছা, দিচ্ছি।”

শিফা বিনাবাক্যব্যয়ে হটস্পট অন করে লাগেজ আনতে অন্য রুমে চলে গেল। তার প্রস্থান ঘটতেই তনুজা হাফ ছেড়ে বাঁচল। পুরোনো সিমটা তার আগের এপার্টমেন্টেই ফেলে এসেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে। নতুন সিম কেনা হয়নি এখনও। তনুজা ধীরে-স্থিরে হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুক-মেসেঞ্জারসহ যাবতীয় সোশ্যাল সাইড ফোন থেকে আনইন্সটল করে দিলো। এর পূর্বে চেক দিতে ভুলল না—শুদ্ধর ইনবক্স; উদ্দেশ্য একটাই! শুদ্ধ কি কোনো ম্যাসেজ পাঠিয়েছে?
যদিও সেই সুযোগ তনুজা তাকে দেয়ইনি। যদি দিত, এতক্ষণে শুদ্ধ তার সামনে উপস্থিত হতো। আর অবুঝভাবে শুধিয়ে উঠত, “এটা কী করলেন, ম্যাম? আপনি কিন্তু ভীষণ পাষণ্ড! কথাই বলব না আপনার সাথে।”

অথচ, সে নিজেই নিজের এমন প্রতীজ্ঞা স্বহস্তে ভেঙে ফেলত। তনুজা আনমনে হেসে ফেলল এসব ভেবে। কী উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা!
তারপর আবারও চোখ গেল ম্যাসেজেসে! লাস্ট তিনটে ম্যাসেজ শুদ্ধর, তিনদিন আগে সিম ফেলার পূর্বমুহূর্তের। সেখানে লেখা, “প্লিজ, কম্পলিট মি, ম্যাম!”

এরপর লেখা, “ছোটোবেলায় আমার একটা পোষা বিড়াল ছিল। আদর করে ডাকতাম, মুন বলে। সেদিনের ঘটনা, বিকেলে ও বাইরে খেলা করছিল। এরপর সন্ধ্যায় আর আমার রুমে আসেনি। আমি পাত্তা দিইনি। হোমওয়ার্ক করছিলাম। স্পষ্ট মনে আছে—আমি ওর কথা প্রায় ভুলেই বসেছিলাম সেই মুহূর্তে। হোমওয়ার্ক কম্পলিট করতে বেজেছিল রাত ১১টা। তারপর যখন খেয়াল হলো—ও রুমে আসেইনি। আমি প্রায় হন্যে হয়ে পুরো বাড়ি খুঁজে গেছিলাম। কোনো জায়গা বাদ রাখিনি। এখনও মনে আছে, কীভাবে কাঁদতে কাঁদতে ওকে সেই রাতে রাস্তায় রাস্তায় খুঁজে গেছিলাম। ও আর বাড়ি ফেরেনি। ফিরবে কী করে! সেই সন্ধ্যেতেই ও মারা গেছে। কীভাবে মারা গেছে জানেন?

বাবা খুব টায়ার্ড হয়ে বাড়ি ফিরেছিল সেদিন। বিকেলের দিকে বাগানে বসে ছিল। বিজনেস লসে ডুবে ছিল। তখন মুন গিয়ে বাবার আশে-পাশে ঘুরঘুর করে। খুব বিরক্ত করছিল! বাবাও অতিষ্ঠ হয়ে খানিকটা দূরে থাকা কুড়ুলটা নিয়ে ওর দিকে ছুঁড়ে মারে। এক কোপে জান শেষ ওর।

এটা আমি জানতে পারি অনেকদিন পর। কেউ আমাকে বলার সাহস পায়নি না, তাই! সবাই মনে করেছিল, আমি বাবার উপর রাগ করব। বাবা এমনিতেই খুব স্ট্রেসে আছে, এদিকে আমি যদি কিছু বলে ফেলি? এই ভয়টাই ছিল। এদিকে মুন আমার জন্য সত্যিই চাঁদের অনুরূপ ছিল। ওর চলে যাবার পর থেকে বাচ্চা শুদ্ধর জীবনটা অমানিশার কালো আঁধারিতে ছেয়ে গেছিল। প্রতিদিন নিয়ম করে ওকে খুঁজি, ওর জন্য খাবার বাড়ি। আমাকে পাগল ভাবে সবাই। আমার ভেতরকার অস্থিরতা কেবল মা বুঝতে পারে। ভেবেছিল—এভাবে প্রতিনিয়ত কষ্ট পাওয়ার চেয়ে একবার কষ্ট পাওয়াটাই বোধহয় ভালো। ভেবেছিল—আমাকে সবটা বলে দিলে, প্রথমত এত রাগ করলেও, আমার নিত্য পাগলামিগুলো এরপর যাবে।

তবে তা হলো না। আমি কোনো ধরনের অশোভন আচরণ করিনি। আমি বাবার উপর রাগ ঝাড়িনি। আমি মুনের জন্য আর পাগলামিও করিনি। করেছি কী—জানেন? এই অবধি বাবার সাথে আর কথা বলিনি। কেউ জানেই না, আমার রাগটা এই জায়গায়। বাবা ছাড়া সবাই এখনও মনে করে, আমি তাকে ভয় পাই বলেই কথা বলি না। আমি আসলে ভয় পাই না, আমি ঘৃণা করি; বিষয়টা বাবা জানে। প্রতিনিয়ত, তার-আমার নিঝুম তর্ক চলে। একটা লোক কোন স্তরের খারাপ হলে নিজের মানসিক অশান্তিতে একজন নিরিহ প্রাণীর জান নিতে পারে.. অকারণে!

ভাবতে পারছেন? কী অমানবিক আচরণ! কী নিষ্ঠুর! আমার এত সাধের মুনকে হত্যার দায়ে আমি বাবার সাথে নীরব যুদ্ধ চালিয়েছি এত বছর যাবৎ, প্রিয় বাবাকে এ-জীবনের ঘৃণ্যতম ব্যক্তি বানিয়েছি। অথচ, আপনি প্রতিক্ষণে আমার হৃদ-হত্যার অভিযোগে দোষী হচ্ছেন, আপনাকে আমি কিচ্ছু বলতে পারছি না। ভালোবেসেই কূল পাচ্ছি না, ঘৃণা এখনও দূর আসমানের কথা। এদিকে, দোষী আপনারা দুজনেই। হ্যাঁ, আমার মনের ভেতর অবিরতভাবে ছুরিকাঘাত করার জন্য আপনি দোষী! ইশ! যদি সাধ্যে থাকত! ইশ! যদি আমাকে একবার আপনি ভালোবাসতেন! আপনার থেকে এত দূরে যেতাম যে, দূরত্বটাই আপনার জন্য মরণ তুল্য শাস্তি হতো।
আফসোস! আমি এ-বিষয়েও অক্ষম! আপনি আমাকে কাছে টানবেন—এ-ও যেন আপাত-অবিশ্বাস্য!”

শেষ ম্যাসেজটা পড়ল, “পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর মূহুর্ত হচ্ছে প্রেয়সীর জ্বলজ্বলে দৃষ্টিতে নিজের জন্য প্রেম দেখা, অথচ আপনার চোখ দিয়ে আগুন ঝরে.. ভস্ম করে দেয় আমার মন। আবার সেই ছাঁই থেকেই বেড়ে ওঠে বিশালাকৃতির প্রেমবীজ! বুঝুন! আপনার অগ্নিদৃষ্টিতে আমার প্রেমের অঙ্কুরোদগম হয়!”

তনুজা ফোন রেখে হেসে ফেলল। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বলে উঠল, “বোকা ছেলে!”

অনস্তিমান কোনো এক আওয়াজ ত্বরিতে তনুজার কানে কানে এসে বলে গেল, “চুপ, তনুজা! চুপ! ওর মতো চালাক তুই এই ধরাতে দ্বিতীয়টা পাবি না। ও হেসে-খেলে জান নিতে জানে। প্রেম নিবেদনে প্রত্যাখ্যান পেয়ে মায়া দিয়ে কাবু করতে জানে। ও আরও জানে—এর চেয়ে বড়ো অস্ত্র সহজলভ্য নয়। এটাও অবশ্য অতটা সহজ নয়; তবে শুদ্ধপুরুষেরা সব পারে।”

তনুজা কোনোমতে নিজের ভাবনাকে দূরছাই করে কাজে লেগে পড়ল।

______
সময় প্রায় সন্ধ্যের কাছাকাছি। ওয়েটিং রুমের এক সোফায় শুদ্ধ বসে আছে, অপেক্ষা করছে এক অসহনীয় ঘৃণ্য পুরুষের। শুদ্ধ কখনই চায়নি তার সামনে আসতে। যখন থেকে এই লোকের অস্তিত্ব সম্পর্কে সে জেনেছে, তখন থেকেই সৃষ্টিকর্তার কাছে মনে-প্রাণে প্রার্থনা করে এসেছে—কখনও যাতে ভুলক্রমেও সামনা-সামনি না পড়ে! অথচ ভাগ্য কী অদ্ভুত! আজ নিজেই সে তার এক দর্শনের অপেক্ষায় বসে আছে ঘন্টা খানেক ধরে।

অবশেষে তার আগমন ঘটল। পায়ের ভারি আওয়াজ শান্ত রুমময়ে ভরাট শব্দ তৈরি করল। শুদ্ধ চকিতে সামনে তাকাল। নিজের সবচেয়ে বড়ো প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখতে পেয়ে চোখ দুটো লালচে হয়ে উঠল, শক্তি-ব্যয়ে হাত হলো মুষ্টিবদ্ধ!

সিদ্দিক শুদ্ধর ঠিক সামনের সোফাতে বসে শুদ্ধর আপাদমস্তক স্ক্যান করল যেন। আজ শুদ্ধ বেশ ফর্মাল লুকে এসেছে। ইন করা সাদা শার্টের উপর ডার্ক মেরুন ব্লেজার! তবুও নজর কাড়ছে তার কোঁকড়ানো অথচ বেশ আকর্ষণীয় চুলগুলোই। সিদ্দিক তা দেখে বলল, “আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না!”

শুদ্ধ আজ দিনে দ্বিতীয়বারের মতো অপছন্দীয় কাজটি করল এবার। বাবার পরিচয়ে মুখ খুলল, “ইমতিয়াজ তালুকদার শুদ্ধ, সন অব্ এশহাদ তালুকদার।”

সিদ্দিক পায়ের উপর পা তুলে বসল। দৃষ্টি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাচ্ছিল্যভরে হেসে বলল, “বাপের নাম শুনতে চাইনি।”

শুদ্ধ অপমানিতবোধ করল। এখানটায় গিয়ে কোনোরূপ হার সে চাইছে না। অথচ, পদে পদে এই চতুর লোকটার কাছে হেরে যেতে হচ্ছে, সবেতেই! কথার খেলায়.. তনুজাকে পাওয়ার নেশায়!

সিদ্দিক গলায় শব্দ করে কেশে উঠল। কুশলাদির জন্য বলে উঠল, “কফি অর টি?”

স্বাভাবিক হওয়ার ভান ধরে শুদ্ধ বলল, “টি।”

“ওকে!”
এরপর কল দিয়ে একজন স্টাফকে বলে দেয়, এক কাপ কফি আর এক কাপ চা পাঠাতে। তারপর আবার শুদ্ধকে শুধাল, “সময় কম। চুপ থেকে কাটিয়ে দেওয়াটায় আপনারই লস, ইমতিয়াজ!”

শুদ্ধ তাকাল। সিদ্দিককে দেখলেই মনে পড়ে—তার জীবনের একমাত্র অপূর্ণতা এই লোকটা বিনা সাধনায় পেয়ে গিয়ছিল। এক পাষণ্ডীর ভালোবাসা পেয়েছিল। অথচ শুদ্ধ এক অভাগা পুরুষ! যে তার মনে তো দূর, পাশেও খানিকটা জায়গা পেল না!

মন থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। নিজেকে সিদ্দিকের সাথে তুলনা করতে করতে বলে উঠল, “তনুজা কোথায়?”

সিদ্দিক হেসে ফেলল। টেনে টেনে বলে উঠল, “ত-নু-জা?”

চলবে?
শব্দসংখ্যা- ১৭০৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here