প্রেয়সীর শব্দপ্রেম পর্ব -১২

#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম
#ফারজানা_মুমু
[১২]

আষাঢ়ের প্রশ্নে লজ্জিত হলো তৃষ্ণা। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দুচোখের লজ্জা আড়ালে রাখার চেষ্টা করল। আষাঢ় কপালে ভাঁজ করে স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়াল। তৃষ্ণাকে লজ্জা পেতে দেখে আবারও প্রশ্ন ছুঁড়লো,
-” কথা বলছো না কেন?

-” আফা আপনার প্যাড।

ফার্মেসির ছোট্ট ছেলেটির কথা শুনে তৃষ্ণা লজ্জায় মরি-মরি। চট জলদি শপিং ব্যাগের ভিতর প্যাড ভরে টাকা দিয়ে চলে গেল। আষাঢ় আটকাল না। মূলত সে তৃষ্ণাকে লজ্জা দিতে চাইলো না। মনেমনে অংক কষতে লাগলো। দুয়ে-দুয়ে চার মিলাতে খুব একটা কষ্ট হলো না। বুঝল ঝুমঝুমির অস্বাভাবিক আচরণের কারণ। স্বস্তির এক নিঃশ্বাস ছেড়ে রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকলো।

______________

টেবিলে খাবার রাখা হয়েছে। কিন্তু ঝুমঝুমি কিছুই খেতে পারছে না। পেট ব্যাথায় অস্থির। ঠিক এ সময়ে মৃ’ত্যু ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় ও’কে। তীব্র ব্যাথার চটে কপালে বিন্দু-বিন্দু ঘাম চিকচিক করছে। মুখশ্রী জুড়ে উত্তেজনা ভাব। আষাঢ় খেয়াল করল সব। গোপনে ঝুমঝুমির হাতে ওষুধের প্যাকেট ধরিয়ে ফিসফিস করে বলল, একটু খাবার খেয়ে নাও। তারপর ওষুধ খাবে দেখবে ব্যাথা কমে যাবে।

ঘাবড়ে গেল ঝুমঝুমি। ওর অসুস্থতার কথা আষাঢ়ের জানার কথা নয় তবুও জানে। সন্দিহান নজরে তৃষ্ণাকে দেখে প্রশ্ন করতে যাবে তখন আবার আষাঢ় বলল, তৃষ্ণা কিছু বলেনি। ওকে প্যাড কিনতে আমি দেখেছি। লজ্জা পাবার কিছু নেই। বরং পিরিয়ড হলো নারীর অহংকার। একজন পুরুষের বাবা ডাক শোনার কারণ। পিরিয়ড শুধু একটি মেয়েলি বিষয় নয়, একটি সভ্যতার এগিয়ে যাওয়া। পিরিয়ড নিয়ে কথা বলা, লজ্জার কোনো বিষয় নয়। কিন্তু দেখা যায় অনেক মেয়েরাই লজ্জা-সংকোচের কারণে এ বিষয়ক চাহিদার কথাও পরিবারের সদস্যদের কাছে খোলামেলাভাবে বলতে পারে না। ফলে অসুবিধে বেড়ে চলেছে। পুরষের বাবা হওয়ার সাধ, সন্তানের মুখ থেকে বাবা ডাকার আনন্দ এখান থেকেই উৎপত্তি ঘটে তাহলে লজ্জার কী আছে এখানে?

ঝুমঝুমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল আষাঢ়ের মুখপানে। এই প্রথম কোনো পুরুষকে ওর ভিন্ন রকম লাগছে। অদ্ভুদ মোহনীয় ভঙ্গিতে কথাগুলো বলা আষাঢ়কে হঠাৎই বিশ্বাস করতে চাইছে।

ওদের দুজনের এরূপ ভঙ্গি দেখে কেশে উঠল হিরণ। টিটকারী করে বলল, চোখে-চোখে কথা বলো মুখে কেন বলো না….. মন নিয়ে খেলা কর একি যন্ত্রণা।

আষাঢ় চোখ পাকালো। হিরণ থামলো না বরং হিরণের সাথে-সাথে মিরাজ-নাজিম শুরু করল দুষ্টুমি। ঝুমঝুমি লজ্জায় মুখ লুকানোর জন্য সামান্য খাবার মুখে দিল। আষাঢ়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। ব্যাথা কিছুটা কমেছে। দু’চোখ ঘুমে টলমল করছে। নীরার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। আষাঢ় ঘাড় বাঁকিয়ে ঘুমন্ত ঝুমঝুমিকে দেখল মুগ্ধ নয়নে। মেয়েটার সবকিছুই খুব টানে ওকে। জীর্ণ-শীর্ণ মুখটি শুধু ভালবাসার উপযোগী। দেখলেই ভালোবাসা-ভালোবাসা পায়। ভালোবেসে আমরণ অনশন করতে রাজি সে তবে শর্ত একটাই ঝুমঝুমিকে পাশে চায়,কাছে চায়,নিজের একান্ত মানুষরূপে দেখতে চায়।

সাঁই সাঁই করে বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে সবাইকে। হিরণ-নীরাকে দেখে মুচকি হাসলো। নীরা অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। নাজিম কবিতা আবৃত্তি করল, হিরণও একা, আর নীরাও একা
প্রেম জমবে ওদের “ঝাকানাকা”

নাজিমের কবিতা শুনে হেসে দিল তৃষ্ণা। মিরাজ ঘাড় ঘুরিয়ে তৃষ্ণাকে হাসতে দেখে ফিচেল হাসলো। বলল, রাত বেড়াতে এভাবে হাসলে পেত্নী ভেবে ভয় পাবে সকলে।

তৃষ্ণা কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ছেলেদের কলিজা থাকতে হয় বড়, মুরগির কলিজা নিয়ে থাকলে সকল হাসিকেই পেত্নীর হাসি ভেবে ভুল করবে। হার্ট অ্যাটাক করবে, অজ্ঞান হবে।

কথায়-কথায় চলল ঝগড়া। ওদের ঝগড়ার মাঝেই হিরণের ফোন আসলো। ‘আব্বা ‘ লিখাটা ঝলমল করল ফোনের স্ক্রিনে। হিরণ রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ঠান্ডা কণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
-” আব্বা আফনে কোথায়? ফোন ধরেন না কেন?
-” আব্বা আমি ত আপনার বউমাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। কীভাবে ফোন ধরব বলুন।
-” আপনারে বলছি কয়টা দিন ধৈর্য ধরতে তবুও আফনে আমার কথা শুনছেন না। আমার ছেলে হয়ে অবিবাহিত মেয়ে নিয়ে ঘুরাঘুরি করছেন লোকে জানলে ভোট দিবে?
-” লোকের ভোটের দরকার কি আব্বা? আমি নির্বাচনের আগের রাতে গিয়ে বেশ‌অর্ধেক ভোট দিয়ে দিলে হবে না? আপনি শুধু-শুধু চিন্তা করছেন।

মেয়র হান্নান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, আব্বা আফনে শুধু ঘুরাঘুরি করেছেন বেশি কিছু তো নয়?
-” আপনার দাদা হওয়ার কাজকর্ম এখনও করা হয়নি আব্বা। চিন্তা করবেন না বিয়ের প্রথম বছরেই আপনার ডজন খানেক নাতি-নাতনী আসবে। আপনাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করবে।

মেয়র হান্নান চট করে ফোন কেটে দিলো। লাগাম ছাড়া কথাবার্তা ফুরোবে না হিরণের। ফোন কেটে দেওয়ার পর শুনতে পেল একঝাঁক হাসির রোল। গাড়িতে থাকা প্রতিটি সদস্য হাসছে। ঝুমঝুমি পর্যন্ত হিরণের কথা শুনে হাসলো। হিরণ মাথা চুলকিয়ে নীরার উদ্দেশ্য বলল, আব্বার ইচ্ছেটা পূরণ করবে না নীরু পাখি?

নীরা লজ্জায় ঝুমঝুমির কাঁধে মুখ লুকালো। আষাঢ় চাপড় মেরে বলল, লজ্জা সরম রাখিস একটু। বেলেহাজ কথাবার্তা শুনে নীরা লজ্জা পাচ্ছে দেখ দেখ ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে বাসর ঘরে বসে আছে।

ঝুমঝুমির চোখ কপালে উঠল। লোকটা কথা বলতে পারে। বন্ধুরা সব একই রকম। তৃষ্ণা বাঁকা সুরে বলল, আপনার তো বেশ লজ্জা। লজ্জায় তো মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। এত লজ্জা নিয়া ঘুমান কেমনে?
-‘ তোমার বান্ধুবির চিন্তায় ঘুম কি হয় আমার? ঘুমাতে পারি না সারারাত ধরে,বুকের ভিতরটা ঝুমঝুমি-ঝুমঝুমি করে।

কথার ছন্দে-ছন্দে শেষ হলো রাত্রি যাত্রা। ভোর সকালে বাসার সামনে গাড়ি থামলো। ঝুমঝুমিরা চলে গেল ওদের রুমে। আষাঢ় সারারাত ড্রাইভ করার ফলে প্রচুর ক্লান্ত দেখাচ্ছে ও’কে। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়া মাত্রই ঘুমের রাজ্য পাড়ি দিল।

________________

সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। নিজের গন্তব্য মত চলতে থাকে। তেমনি ঝুমঝুমির জীবন থেকে চলে গেলো আরো ছয়টি দিন। সারাদিনের ব্যস্ততা নিয়েই নিজেকে ব্যাস্ত রেখেছে। আষাঢ় বারবার কথা বলতে আসলে,প্রেমের প্রস্তাব পাঠালে ববাবরের মতোই প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে। চাইছে না ছেলেটাকে কষ্ট দিতে তবুও বিবেকের কাছে হেরে গিয়ে বারবার কষ্ট দিচ্ছে।

ছাদের একোনে সবজি চাষ করেছে ঝুমঝুমি। টবের মধ্য করলা গাছ, মরিচ গাছ,টমেটো, ক্যাপসিকাম থেকে শুরু করে অনেক কিছু। ভোরে পানি দিতে আসার পরক্ষনেই আষাঢ়ের মুখোমুখি পড়তে হলো ঝুমঝুমিকে। পাশ কাটিয়ে চলে যাবার সময় আষাঢ় বাধ্য হয়েই চেপে ধরল ঝুমঝুমির হাত। হেচকা টান দিয়ে শরীর থেকে এক ইঞ্চি দূরত্ব রেখে আহত গলায় বলল,
-” তুমি যা বলবে তাই করব প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও। অভিযোগ করতে দিবো না কখনও। আমি তোমাকে খুব চাই ভীষন ভাবে চাই। বিশ্বাস করো তুমি আমার মনে নয় বরং হৃদয়ে থাকবে। অনেক যত্নে রাখব তোমাকে। কখনো কোনো আঘাত তোমায় স্পর্শ করতে পারবে না।

“তুমি সেই কবিতা !
যা প্রতি দিন ভাবি..
লিখতে পারিনা ॥
তুমি সেই ছবি !
যা কল্পনা করি..
আঁকতে পারি না ॥
তুমি সেই ভালবাসা !
যা প্রতিদিন চাই..
কিন্তু তা কখনো-ই পাই না ॥”(কালেক্টেড)

ঝুমঝুমির হৃদয় নাড়া দিল। ইচ্ছে হলো ভালোবাসতে। কিন্তু বিশ্বাস? যেখানে আপনজনদের প্রতি বিশ্বাস আসে না সেখানে আষাঢ় তো অনেক দূরে। তবুও আষাঢ়ের মোহনীয় মাতাল করা দুচোখের দিকে তাকালে ইচ্ছে হয় ভালোবাসতে, বিশ্বাস করতে। দুটনায় পড়ল ঝুমঝুমি। কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলল,
-” আমার সময় চাই।
-” কত দিন সময় চাও তুমি?
-” জানি না। তবে আপনাকে নিয়ে ভাবতে হলে সময় চাই আমার।

দুর্বোধ্য হাসলো আষাঢ়। ঝুমঝুমির কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল, যত সময় চাও পাবে, তবুও একবার বলো তুমি আমার হবে?

-” আল্লাহ তায়ালা আগে থেকেই ভাগ্য লিখে রেখেছেন। ভাগ্যয় যা থাকবে তাই হবে। আপনার সাথে আমার জুড়ি লিখা থাকলে আমি আপনারই হবো। আর যদি অন্যকারো সাথে হয়ে থাকে তাহলে আমি তার। এব্যাপারে আপনাকে আমি কথা দিতে পারছি না।

ঝুমঝুমির কথা মনে ধরল না আষাঢ়ের। টগবগ করে রাগ বাড়তে লাগলো। হাত মুষ্টি করে রাগ কন্ট্রোল করে স্বাভাবিক ভাবেই বলল, আমি ভীষন ভালো ঝুমঝুমি। আমায় খারাপ বানিও না। তোমার জন্য যদি অতি ভালো ছেলেটা খারাপ হয়ে যায় তাহলে খুব মুশকিল হয়ে যাবে। খারাপকে ভালো বানালে যেমন বাহবা পাওয়া যায় তেমনি ভালোকে খারাপ বানালে জীবনের সুখ হারিয়ে যায়। আমি চাই না তোমার বিরহে বাজে হতে। আমি চাই তোমার মাঝে থেকে আমি ভালো থেকে মহা ভালো হতে।

আষাঢ় পা বাড়ালো। গেইটের কাছে গিয়ে আবারও পিছন ফিরে তাকালো। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে বলল, ভালোবাসি।

##চলবে,,

আমার প্রথম গল্পটা আমি রেগুলার দিয়েছি। এইটাও রেগুলার দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু অসুস্থতার কারণে ফোন হাতে পাচ্ছি না। আপনারা যারা আমার আগের গল্প পড়েছেন তারা জানেন আমি রেগুলার গল্প দিতে পছন্দ করি। গ্যাপ দিয়ে লিখার ফলে নিজেরই লেখার আগ্রহ কমে যাচ্ছে 🥺।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here