মায়াবতী পর্ব ১৯

#মায়াবতী
#পর্ব_১৯
#সুলতানা_পারভীন

গত সাতটা দিন মায়াকে সম্ভাব্য সব কটা জায়গায় হন্যে হয়ে খুঁজেছে রাহাত। প্রথমদিন যে গলিটায় মায়াকে নামিয়ে দিয়ে এসেছিল সেই গলিটায়ও পাগলের মতো খুঁজলো মায়াকে। কিন্তু গোটা একটা সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরও মায়ার দেখা পেল না। রাহাত শুধু পারছে না প্রত্যেকটা বাড়িতে গিয়ে গিয়ে মায়াকে খুঁজতে। পারলে হয়তো ছেলেটা সেটাও করতো। এখনও রাহাত মায়াকে ড্রপ করে দেয়া সেই গলিটার সামনে গাড়ি পার্ক করে বসে আছে৷ মায়া বা মিহান কাউকে যদি একটা বার দেখতে পেত! এতো মানুষের সাথে দেখা হয়, শুধু তাদের কারো সাথেই দেখা হয় না। রাহাতের প্রত্যেকটা দিন এই ছোট্ট একটা আশায় শুরু হয় যে আজ সে তার মায়াবতীর দেখা পাবে। তার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনবে৷ মায়াবতীটা না ফিরলেও অন্তত প্রতিদিন কাছ বা দূর থেকে একবার হলেও পাগলিটাকে দেখতে পাবে। দিনশেষে ব্যর্থ নয়ে ঘরে ফিরে রাহাত টের পায় তার আশাটা আর পূরণ হয় না। মায়াবতীকে পেতে আর কতদিন বাকি এই ভেবে নির্ঘুম রাতগুলো কাটে রাহাতের।

এসব ভাবতে ভাবতেই রাহাতের মোবাইলটা সশব্দে বেজে উঠলো। হাতে নিতেই লিজার নামটা দেখে রিসিভ করলো রাহাত।

-হ্যাঁ লিজা–। বলো?

-স্যার? আর্জেন্ট একটা কাজ পড়ে গেছে—। একটু অফিসে আসবেন প্লিজ?

-তোমরা নিজেরা কিছু ম্যানেজ করতে পারো না কেন বলো তো? আজব! জানো আমি আমার মায়াবতীটাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না—-। তার মধ্যে এটা ওটা আর্জেন্ট বলে খোঁজায় বাগড়া দিবে তোমরা? কি পেয়েছ কি এক একজন! হ্যাঁ?

-স-সরি-সরি স্যার-। স্যার আসলেই আর্জেন্ট। একটু তাড়াতাড়ি আসুন প্লিজ—–?

-এসে যদি দেখি কিচ্ছু আর্জেন্ট না তবে তোমার চাকরি শেষ-দিহানের শেষ-সবার শেষ চাকরি আজকে–। অফিসে তালা মেরে দিবো সবাইকে দূর করে দিয়ে—। অসহ্য——।

-সরি স্যার——।

রাহাত গাড়ি ছুটিয়ে অফিসে এসে নিজের রুমে গিয়েই লিজা আর দিহানকে পেল। চেয়ারে বসেই অগ্নিদৃষ্টিতে তাকলো দুজনকের দিকে। ওরাও ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নিল। কপালে যে কি শনি আসতে চলেছে সেটা ভালোই টের পাচ্ছে দুজনে। ছোট্ট একটা মনের খচখচানি সিওর হওয়ার জন্য রাহাতকে এতো জরুরি তলব করে এনেছে ওরা। ব্যাপারটা সে রকম না হলে সত্যিই শনি আছে কপালে।

-কি সমস্যা তোমাদের? আর্জেন্ট বলে আনলে আর এখন মুখে কুলুপ মেরে বসে আছো! কাহিনী কি?

-স্যার? দিহান—দিহান অফিসের এখন পর্যন্ত সব স্টাফদের সব ইনফরমেশন কম্পিউটারে সেইভ করার কাজ করছিল–।

-হুম–। তো? ও অফিসের সিকিউরিটির ইনচার্জে আছে–। করতেই পারে—। সমস্যা কি এখানে?

-না মানে স্যার—। কাজটা করার সময় ও আপনার পি.এ এর নামের মধ্যে মায়া নামের একজনের নাম পায়—–।

-আমার মায়াবতী!

-স্যার—? আমরা আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না উনিই ম্যাডাম কিনা–। না মানে–। লিজার কাছে শুনলাম আপনি ম্যামকে মায়াবতী নামে ডাকছিলেন–। আর পিয়ন ও নাকি ম্যামের কোন খোঁজ দিতে পারে—। তাই– তাই আসলে স্যার আমরা একটু কনফিউশনে আছি–।

-ইয়েস—-। শি ইজ ইউর ম্যাম–। আমার মায়াবতী—-। ছয়মাস মেয়েটা আমার পি.এ হয়ে ছিল–। একটা ভিষণ বাজে সিকিউরিটি ইস্যু হয়েছিল–। ও নিজে থেকেই ঝামেলা বড় হওয়ার আগে রিজাইন করে দেয়—। আর সেইম সমস্যা যেন কাউকে ফেইস করতে না হয় তাই অফিসে মেয়েদের জন্য এতো টাইট সিকিউরিটির ব্যবস্থা করেছি–।

-স্যার?

-কি হয়েছিল দয়া করে জানতে চেও না প্লিজ–। জাস্ট এটা জেনে রাখো যতটা নিরাপত্তা মেয়েটাকে দেয়ার দরকার ছিল তা আমি প্রোভাইড করতে পারি নি–। তবে ব্যাপারটায় আমার একটা সুবিধা হয়েছিল–। মায়া রিজাইন করলেও ওকে নিজের রাণী করে পেয়েছিলাম–। বাট ওকে ধরে রাখতে—–।

-সরি স্যার—। স্যার একটা কোশ্চেন ছিল—-। অফিস থেকে ম্যামকে যে বাড়িটা দেয়া হয়েছে সেখানে ম্যামকে পান নি?

-নাহ—। বিয়ের সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই মায়ার মা আর ভাই বাড়িটা থেকে শিফ্ট করে আগের বাড়িতে চলে গেছে—-।

-সেখানে?

-বাড়ির ঠিকানা জানলে কি গত একটা সপ্তাহ আমি পাগলের মতো ওদের গলিটার সামনে বসে থাকি?

-স্যার—। আমি হয়তো আপনাকে ম্যামের ঠিকানাটা দিতে পারবো—।

-কি! কি করে দিহান?

-স্যার–। ম্যাম তো একটা ফরমাল ওয়েতে এখানে জব করেছিলেন–। তাই ম্যামের সিভিতে ম্যামের পারমানেন্ট আর প্রেজেন্ট এ্যাড্রেসটা থাকবে—-।

-আর ইউ সিওর দিহান! প্লিজ? আমাকে মায়ার এ্যাড্রেসটা জোগাড় করো দাও প্লিজ। আমি আমার মায়াবতীকে যে করেই হোক ফিরিয়ে আনতে চাই—।

দিহান অফিসের কম্পিউটার সিস্টেম থেকে মায়ার প্রোফাইল খুলে মায়ার ঠিকানাটা রাহাতকে জানালো। রাহাতও এরিয়াটার মিল খুঁজে পেল। কোনমতে উঠে এসে দিহানকে জড়িয়ে ধরে একটু আবেগি হয়ে গেল বেচারা। মায়াকে খোঁজার এতো সহজ উপায় ওর নিজের এতো কাছে ছিল-সেটা রাহাত কল্পনাও করতে পারে নি।

-থ্যাংকস বোথ অফ ইউ। তোমাদের এই উপকার আমি জীবনেও ভুলব না।

অফিস থেকে গাড়ি ছুটিয়ে রাহাত আবার গলিটার সামনে এলো। আস্তে আস্তে গাড়ি নিয়ে মায়ার বাসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাহাত। বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছে। বাসাটা খুঁজে পেয়ে দরজার সামনে এসে কলিংবেল চাপলো রাহাত। আর দুরুদুরু বুকে পরিচিত মুখটার দরজার ওপাশে থাকার প্রার্থনা করতে লাগলো। একটু পরেই শব্দ করে দরজাটা খুলে গেল। একজন মাঝবয়েসী মহিলা দরজা খুলে দিলেন। জুবুথুবু করে শাড়ি পড়নে। মানুষটাকে দেখে রাহাত কি রিএ্যাকশন দিবে বুঝতে পারছে না। মুখটা পরিচিত না হলেও একেবারে অপরিচিতও লাগছে না। কোথায় যেন দেখেছে উনাকে রাহাত। মনেই করতে পারছে না। মনে পড়তে গিয়েও মনে পড়ছে না রাহাতের।

-জে? বলেন? কারে খুঁজতিসেন?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here