real love পর্ব ১৪,১৫,১৬

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part:14+15+16
.
.
আন্টি ইচ্ছামতো আধাঘন্টা ভরা খাইয়েছে।আমি আন্টিকে যখনই বলি”আন্টি, আর না।প্লিজ।”
ইফাজ আমার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বলে”আরে খাও।একদিন এতো খেলে কিছু হবে না।মানে তুমি মোটা হবে না।ভবিষ্যতে তো প্রতিদিন এভাবে খেতে হবে।তখন মোটা হলেও হতে পারো।”ওর কথাগুলো শুনে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো।মায়া বলতে কিচ্ছু নেই ছেলেটার!
.
ইয়াশ আমাকে ওর স্টাডি রুমে বসিয়ে রেখে লেপটপ আনতে গেলো।আমি ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখছিলাম।লেপটপ টা এনেই আমাকে হাত ধরে ইয়াশ সোফায় বসিয়ে লেপটপটা সামনে রাখলো।
.
লেপটপটা ওপেন করেই ইয়াশ ভিডিও খুজতে লাগলো।তখনই ওদের দুইভাইয়ের প্রায় অনেক ভিডিও দেখতে পেলাম।ইয়াশ ওদের দুইভাইয়ের লুঙ্গিডান্স ভিডিও টা ওপেন করলো।
.
ওপেন করার সাথে সাথেই ফার্স্ট লেখা উঠলো”LUNGGI DANCE NEW VERSION”লেখাটা দেখেই আমার হাসি পেলো।
.
লেখাটা দেখানোর পরই দুইভাই সানগ্লাস পরে এনট্রি নিলো।দুইজনই হাতাকাটা গেন্জি পরা।সাথে লুঙ্গি।গান শুরু হওয়ার সাথে সাথেই দুইভাইয়ের উড়াধুড়া নাচ।ইফাজ তো রীতিমতো লুঙ্গির নিচের অংশটুকু হাটুর উপর তুলে হানি সিংয়ের মতো নাচ শুরু করেছে।ইয়াশ কম কিসে!সে ইফাজের থেকে আরো এগিয়ে।ইয়াশ রীতিমতো লুঙ্গি একেবারে উপরে তুলে একবার ছেড়ে দিয়ে আবার উপরে তুলে নাচছে!ইয়াশের অবশ্য লুঙ্গির নিচে হাফপ্যান্ট পরা ছিলো!ইয়াশের লুঙ্গি কয়েকবার খুলে যাওয়াতে ইফাজ হাফপ্যান্টের মধ্যে লুঙ্গিটা গুজেঁ দিয়ে আবার দুইভাইয়ের সেই ঐতিহাসিক নাচ!
.
আমি বেশি হাসলে পেটে ব্যাথা করে।যেই ব্যাথাটা এখন করছে ওদের নাচ দেখে!কোনোরকমে পেটে হাত চেপে বসে আছি।
.
ভিডিওটা শেষ হতেই ইয়াশ জিঙ্গেস করলো,
– কেমন হয়েছে ভাবি?
– অনেক ফানি ছিলো! ভিডিও করেছিলো কে?
– আপু!আপুর পেটে তখন মাহিন ছিলো।আমাদের লুঙ্গিড্যান্স দেখে আপুর হাসতে হাসতে এমন অবস্থা হয়েছিলো যে তার পরের দিন ই ভোর বেলা হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছে।আব্বু আম্মু তখনও জানতো না আমাদের জন্যই যে আপুর এই অবস্থা হয়েছে।আপুও কিছুই জানায়নি আব্বু আম্মুকে।
ভাবি!আমাদের বেবিডল গানের নাচ দেখবা?ওইটা আরো সুন্দর!
.
আমি অবাক হয়ে বললাম,
– ছিঃ!ইফাজ আর তুমি বেবিডলেও নেচেছো?
ইয়াশ হাসতে হাসতে বললো,
– হুম!
ইয়াশ ওদের বেবিডল গানের ভিডিওটা ওপেন করলো!ওপেন করার সাথে সাথেই মাঝখানে বড় করে লেখা উঠলো”Efaaz & Eyash VS Sunny Leone”লেখাটা পড়েই আমার মাথা ঘুরছিলো!
.
লেখাটার দুইপাশে ইয়াশ আর ইফাজের পুরো খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় দুইটা পিক শো করলো।ইফাজকে এই প্রথম এই অবস্থায় দেখলাম।
.
মাত্রই ওদের ঐতিহাসিক নাচ শুরু হবে সেই মুহূর্তে ইফাজ রুমে ঢুকে আমার পাশে বসে বললো,
– এখনো দেখা শেষ হয়নি?…..কথাটা বলেই ইফাজ লেপটপের দিকে তাকাতেই আমাদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ঠাস্ করে লেপটপটা বন্ধ করলো!হঠাৎ এরকম করাতে আমি,ইয়াশ দুজনই চমকে উঠলাম।
.
আমি ইফাজের কান্ড দেখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– এটা কি হলো?
ইয়াশ বললো,
– ভাইয়া,ভাবি একটু আমাদের বেবিডল নাচটা দেখবে।দাও না!
– আগে তোর ভাবিকে বিয়ে করে আনি তারপর এই নাচটা দেখার অনুমতি পাবে!তখন যত ইচ্ছা দেখিস!এখন না!
আমি ইফাজের কথা শুনে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
– কেনো?বিয়ের আগে দেখলে প্রবলেম কি?
– তুমি বুঝবা না!…….কথাটা বলেই ইফাজ লেপটপটা নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।যাওয়ার সময় বলে গেলো”টিয়াপাখি,আপু ডেকেছিলো তোমাকে!যাও,দেখা করে আসো!”
.
ইফাজ বেবিডল নাচটা দেখতে দিলো না দেখে খুব রাগ হলো।ইয়াশ আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– ভাবি,রাগ করো না।তুমি যেদিন ভাইয়াকে বিয়ে করে এই বাড়িতে আসবা,ওইদিন রাতে আমি আর তুমি বসে বসে আমাদের সবগুলো ভিডিও দেখবো।
– ওইদিন রাতেই?
– হুম!ওইদিন আমি আগে থেকেই লেপটপটা এখানে লুকিয়ে রাখবো তুমি যখন আসবা তখন আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে সবগুলো নাচ দেখবো আর অনেক মজা করবো,হুম?
ইয়াশের কথা শুনে প্রচন্ড হাসি পেলো।হাসিটা কোনোরকমে কন্ট্রোল করে আমি ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– ওকে!আমাদের যেদিন বিয়ে হবে ওইদিন রাতেই আমরা সব ভিডিও দেখবো।
.
আমি আর ইয়াশ আপুর রুমে চলে আসলাম।এসে দেখলাম বাবু ঘুমাচ্ছে আর আপু বসে বসে ফোন দেখছে।আমাদের দেখেই আপু ফোন রেখে বললো,
– বসো।
আমি আপুর পাশে বসতে বসতে বললাম,
– ভাবলাম আপনি ঘুমোচ্ছিলেন।তাই আর ডিস্টার্ব করতে আসি নি।
আপু হাসতে হাসতে বললো,
– আমি রাতে ছাড়া ঘুমাই না।দিনের বেলায় এমনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকি।
– ওহ্!
আপু ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ইয়াশ!দেখে আসো তো আম্মু কি করে?
ইয়াশ আমার হাত ধরে টান দিয়ে বললো,
– ভাবি চলো,আম্মুর কাছে যাই!
– ইয়াশ,আমি শুধু তোমাকে দেখে আসতে বলেছি।
– একা যাবো না।
– উফ্!এদিকে আসো।
ইয়াশ আপুর কাছে যেয়ে বললো,
– কি?
– তুমি যদি ভাবির সাথে এভাবে আঠার মতো লেগে থাকো তাহলে তো ইফাজ আর ওকে আমাদের বাসায় আনবে না।এমনকি ইফাজ ওকে বিয়ে করে ওর নতুন ফ্লাটে চলে যাবে।এই বাসায় আর আনবে না।তখন কি তোমার ভালো লাগবে?
– আমিও ভাবীর কাছে চলে যাবো।
আমি আপুকে বললাম,
– ও সবসময় আমার সাথে থাকবে।ওকে আমার খুব ভালো লাগে।
কথাটা বলেই ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা কিস করলাম।
.
হঠাৎ আপু বললেন,
– হিয়া!তোমার ফোন কি এখন তোমার কাছে আছে?
– হুম,এইতো।
আমি আপুকে ফোনটা দেখালাম।আপু আমার থেকে ফোনটা নিলেন।আমি চুপচাপ বসে বসে আপুর কান্ড দেখছি।আপু উনার ফোনসহ আমার ফোন চালাচ্ছেন।অবাক লাগছে।
.
কিছুক্ষণ পর ফোনটা দিয়ে ইশারায় চেক করতে বললেন।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম ননদ নামে সেভ করা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসছে।ম্যাসেজটা ওপেন করে দেখলাম সেখানে লেখা-“ইফাজ এই দুই বছর তুমিহীন তোমার বার্থডে সেলিব্রেট করেছে ফেন্ডদের নিয়ে।এইবার ওর সবফ্রেন্ডের কথা দিয়েছে ওদের ভাবিকে এবার সবার সামনে প্রেজেন্ট করবে।তোমাকে তো ইফাজ একা পাচ্ছেই না।ইয়াশ আর তুমি যেভাবে দুজন দুজনের সাথে লেগে আছো।মনে তো হয় না তোমাকে একা পাবে।ইফাজ একটু আগে এসে আমাকে ব্যাপারটা জানালো।ইফাজের ফ্রেন্ডরা একটা রেস্টুরেন্ট এ সব এ্যারেন্জ করেছে।দুটোর দিকে ইফাজ তোমাকে নিয়ে বের হবে।রেডি থাকতে বলেছে।ও তোমাকে নিজেই বলতো বাট ইয়াশ আর তুমি কেউ কাউকে ছাড়ছো না দেখে আমাকে বলতে বাধ্য হয়েছে!”পুরো ম্যাসেজটা পড়ে আমি অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকালাম।আপু আমার তাকানো দেখে হাসছে।
.
আমার মনেই ছিলো না আজ যে আমার বার্থডে।দুইদিন ধরে ফেসবুকেও ঢোকা হয়নি।নিশ্চয় ফ্রেন্ডরা উইশ করেছে।নাফিসাটাও একবারও উইশ করলো না।আমি ফোনটা হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে আছি।আপু আমার সামান্য কাছে এসে আমার হাত ধরে বললো,
– হিয়া!you know what….আন্টির কাছ থেকে তোমার সব পছন্দের খাবারের লিস্ট আম্মু জেনে নিয়ে আজ সকাল থেকে আম্মু খুব যত্ন করে সেগুলো রান্না করছে।ইফাজ কালরাতে যখন আম্মুকে বলেছে আজ তোমার বার্থডে আর আজই তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসবে।আম্মুর আনন্দ দেখে কে!কালরাত থেকেই আম্মু প্লান শুরু করে দিয়েছে।আজ তোমাকে আম্মু নিজে আম্মুর পছন্দের শাড়ি পরাবে।আম্মুতো….
.
আমি অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে আপুকে থামিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– আপু,একটু আস্তে আস্তে বলো না!কথাগুলো নিতে কষ্ট হচ্ছে!আমি নিজের শ্বশুরবাড়ি,হাজবেন্ড,তার ভাইবোনদের নিয়ে এতোটাও বেশি আশা করি নি।যতটা তোমরা আমাকে নিয়ে করছো।কখনো ভাবিনি এরকম একটা শ্বশুরবাড়ি আমার ভাগ্যে আছে।আম্মু যখন উনার সাথে আমাকে একা একা পাঠালো তখন কত্তকিছু শিখিয়ে দিচ্ছিলো।আমি তখন একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম তোমরা কেমন হবে না হবে!বাট এখানে আসার পর তোমাদের এক একজনের ব্যবহারে নিজেকে কেমন ছোট মনে হচ্ছে।
– এই যে তাড়াতাড়ি চোখ মুছো।কান্না করলে একদম মাইর দিবো।
.
কথাগুলো বলতে বলতে কখন গলা ভারী হয়ে এসেছে টেরই পাই নি।চোখ দিয়েও পানি পরছে।আমি আপুকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে আপুর দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসলাম।
.
ইয়াশ বাবুর সাথে খেলছিলো।বাবু কখন ঘুম থেকে উঠলো খেয়াল ই করি নি।আপু আমার হাত ধরে বললো,
– আমি খুব খুশি হয়েছি আমাকে তুমি বলে ডেকেছো তার জন্য।এখন থেকে তুমি বলেই ডাকবে।আপনি বলতে যেনো না শুনি।
.
আমি কখন আপুকে তুমি করে বললাম!আমি অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে মাত্রই বলতে যাচ্ছিলাম,
– আমি আপনাকে…..
– এই নো আপনি…..তুমি করে বলো।
– আপু,আমি আপনাকে কখন…..
– কোনো কথা শুনবো না।তুমি করে বলবা,ব্যস্!
.
আমি আর কিছু বললাম না।আপুর ফোনে কারোর ম্যাসেজ আসাতে আপু ফোনের দিকে তাকালো।কয়েক সেকেন্ড পর হেসে হেসে ফোনটা আমার দিকে ধরে বললো,
– হিয়া!লুক!
.
আমি ফোনের দিকে তাকালাম!একটা ম্যাসেজ “আপু,হিয়াকে আমার রুমে একটু পাঠাও তো!আরজেন্ট!ও আসতে নাও চাইতে পারে বাট তুমি জোড় করে একটু পাঠিয়ে দাও!” ম্যাসেজটা পড়ে আমি পুরো শক খেলাম।আপুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে লজ্জায় নিচের দিকে তাকালাম।
.
আপু আস্তে করে আমাকে বললো,
– যাও,ইয়াশকে আমি দেখছি।
.
আমি আস্তে করে আপুর কাছ থেকে উঠে এলাম।মানুষ এতোটা খারাপ হয় কিভাবে?নিজের বড় বোনের কাছে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে আমাকে রুমে যাওয়ার জন্য!নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে!
.
আমি উনার রুমের সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ জোরে জোরে নিশ্বাস নিলাম।তারপর আস্তে করে দরজা খুললাম।দরজা খোলার সাথে সাথেই বেডের দিকে চোখ গেলো।বেডের উপর বসে বসে উনি টাওয়াল দিয়ে শরীর মুচ্ছিলেন।মাত্রই মনে হয় শাওয়ার নিয়ে বের হলেন।দরজা খোলার শব্দে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– আপু বলেছে কিছু?
আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– কি বলবে?
– দুইটার দিকে একজায়গায় যাওয়ার কথা আছে।বলে নি?
– ওহ্!বলেছে।
– আচ্ছা!এটা জানার জন্যই ডেকেছিলাম।
– সিরিয়াসলি!
ওহ্ শীট!তাড়াতাড়ি নিজের মুখটা চেপে ধরলাম।হঠাৎ মুখ ফসকে”সিরিয়াসলি”কথাটা বের হয়ে গেছে।আমি ভেবেছিলাম উনি অন্যকিছুর বলার জন্য ডেকেছেন।যেভাবে আরজেন্ট বলে ডেকে আনলেন।সামান্য এই কথাটা জিঙ্গেস করার জন্য উনি রুমে ডাকবে,ভাবতে পারি নি!
.
উনি বেড থেকে উঠে আমার কাছে এসে উনার ভেজাঁ চুলগুলো একহাত দিয়ে ঝাকিয়ে চুলের পানি আমার মুখে ছিটিয়ে দিয়ে বললেন,
– অন্যকিছু ভেবেছিলে নাকি?
কথাটা বলেই উনি মিষ্টি একটা হাসি দিলেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।উনি হঠাৎ আমার কপালে চুমো খেয়ে বেডের কাছে যেয়ে বেডের উপর টাওয়ালটা রেখে শার্ট পরতে পরতে বললেন,
– রেডি হয়ে নাও তাড়াতাড়ি।আজ শুনলাম আম্মু নাকি তোমাকে সাজিয়ে দিবে!আম্মুর কিন্তু সবকিছুতেই অনেক লেট হয়।আমি আম্মুকে বলে দিচ্ছি তোমাকে তাড়াতাড়ি রেডি করাতে।
– আজ আমার বার্থডে আপনি জানলেন কিভাবে?
উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– আপু সব বলে দিয়েছে?
– হুম।কেনো আপনি মানা করেছিলেন নাকি বলতে?
– ওভাবে মানা করিনি।আবার আপু যে তোমাকে বলে দিবে সেটাও ভাবিনি।
.
আমি উনার কান্ড দেখে অবাক হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
– আমার সামনেই!ছিঃ।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– আমি তো এখনও পরিনি।যাষ্ট হাতে নিলাম প্যান্টটা।
– যাইহোক।এক ই তো।……..কথাটা বলেই রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।

Part:15
.
আন্টি অফ-হোয়াইট কালারের একটা জর্জেট শাড়ি পরিয়ে দিলেন।চুলগুলো একটু উপরে বেধে সামনের ছোট চুলগুলো সাইডে সিথিঁ করে দুপাশে দিয়ে দিলেন।হালকা মেকআপ করে মিষ্টি একটা পিংক কালারের ম্যাট লিপস্টিক দিয়ে দিলেন ঠোটেঁ।আয়নায় নিজেকে দেখে নিজের কাছেই ভীষন সুন্দর লাগছে।আন্টির মধ্যে যে আধুনিকতার ছোয়াঁ আছে সেটা আমার সাজানো দেখেই বুঝতে পারছি।
.
আন্টি আমার পেছনে দাড়িয়ে আয়নার ভেতর দিয়ে আমাকে দেখছেন।আন্টি হেসে হেসে আমার গাল দুটো টেনে দিয়ে বললেন,
– একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে আমার মেয়েটাকে।দেশে এতো মেয়ে থাকতে আমার এই নিস্পাপ মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে গেলো কেনো অসভ্যটা!
.
আমি আন্টির কথা শুনে অবাক হয়ে আয়না দিয়ে আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– জীবন নষ্ট করলো মানে আন্টি?
– ইফাজটা যেই লেভেলের বজ্জাত!তুমি ভাবতেও পারবা না।পচিশটা বছর ধরে ওর জ্বালাতন সহ্য করছি।মাঝে মাঝে তো প্রচন্ড রেগে গিয়ে ভুল করে বলেও ফেলি তোকে এইবার সত্যিই শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিবো!
এতদিন আমাকে শেষ করেছে।এখন তো ওর লাইফে তুমি নামে একজন বাচ্চা মেয়ে চলে এসেছো।ওর মতোন বজ্জাত,অসভ্যটার সাথে তুমি কিভাবে পেরে উঠবা সেটা ভেবেই মাঝে মাঝে মনে হয় কেনো যে ওর জীবনের সাথে জুড়ে দিলাম!
.
আন্টির কথা শুনে আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে।উনি এতোটাই বজ্জাত!কই আমাকে তো সবসময় আগলে রাখে,যত্ন নেয়।হ্যা!একটু অসভ্য আছে বাট বজ্জাত না।
.
আন্টি আবার বলতে শুরু করলেন,
– তোমার ছবি দেখিয়ে বলেছিলো যে তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না।ইফাজের আব্বু আর আমি দুজনই তোমার ছবি দেখে মানা করে দিয়েছিলাম।উফ্!তারপর ও দুদিন চলে যায়,তিনদিন চলে যায়।কিচ্ছু খায় না।আমরা তো ভয় পেয়ে ওকে কথা দিয়েছিলাম তোর ওই পিচ্চি মেয়েকে পছন্দ তো,আমরা ওই পিচ্চিকে বউ বানিয়ে আনবো।আর না খেয়ে থাকিস না।ওইদিন ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কি বলেছিলো জানো?
– কি বলেছিলো?
– ও জড়িয়ে ধরে বলেছিলো”আম্মু এই তিনদিন কিন্তু চারবেলা রেস্টুরেন্টে পেট ভরে খেয়ে দেয়ে বাসায় ফিরেছি।ভেবো না,না খেয়ে ছিলাম।”
আমি চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে বললাম,
– কিহ্???
– তোমাকে তো আগেই বলেছি ও কোন লেভেলের বজ্জাত!এই কারনেই তো তোমাকে ওর লাইফে আনতে চাইনি।
.
– এখনও শেষ হয়নি?
ইফাজ রুমে ঢুকেই জিঙ্গেস করলো।আমি আর আন্টি দুজনই পেছনে ফিরে উনার দিকে তাকালাম।ওয়াও! উনি হোয়াইট কালারের একটা পান্জাবি পরেছে,কালো কালার জিন্সের প্যান্ট টাখনুর উপর পর্যন্ত,হাতে হোয়াইট কালার হ্যান্ডওয়াচ,চুলগুলো স্পাইক করা!একদম হিরো হিরো লাগছে!
.
উনি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন।আমি উনার তাকানো দেখে অন্যদিকে তাকালাম।আন্টি আমাকে দাড় করিয়ে বললেন,
– দেখতো বউকে কেমন লাগছে?
.
আন্টির কথা শুনে আমি আন্টির দিকে তাকিয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি আন্টির সামনেও সেই এক ধ্যানেই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।চোখের পলকই ফেলছেন না।আমি আবার চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
.
ইফাজ সামান্য কাশি দিলো।আমি আস্তে করে উনার দিকে তাকালাম।উনি বললেন,
– চলো,দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
– হুম।
– ওহ্!আরেকটা কথা।ইয়াশ দেখলাম ড্রইংরুমে খেলছে।ওকে কিন্তু আপু বুঝিয়েছে যে তুমি চিটাগাং চলে যাচ্ছো।সো কেয়ারফুলি ওর সাথে কথা বলবে।মনে থাকবে?
– হুম!
.
উনি আমাদের সামনে সামনে হাটছিলেন।আমি আন্টির হাত ধরে পেছন পেছন আসছিলাম।ড্রইংরুমে ইয়াশ ফুটবল খেলছিলো।ওদের ড্রইংরুমের স্পেসটা বিশাল বড়।আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ভাবি,আজ একটু থাকো না।কাল সকালে যেয়ো!
ইয়াশের এরকম অনুরোধ করা দেখে আমার চোখ ফেটে কান্না আসছে।ইস্!ওকে আমাদের সাথে নিয়ে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো।ইফাজটা আসলেই বজ্জাত!আন্টি ঠিকই বলেছে!
.
আমি ইয়াশের সামনে হাটুগেড়ে বসে ওর গাল ধরে কপালে একটা চুমো দিয়ে বললাম,
– আমি কয়েকদিন পর আবার আসবো।তখন কলেজ থেকে অনেকদিনের ছুটি নিয়ে আসবো,তখন সারাদিন তোমার সাথে থাকবো,তোমার সাথে খেলবো,আমরা একসাথে অনেক জায়গায় ঘুরবো,হুম?
ইয়াশ আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
– সত্যিই তো?
আমিও ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– হুম,সত্যি।
ইফাজ সামনেই ছিলো।ওর দিকে চোখ যেতেই দেখলাম আন্টিকে যেনো ইশারায় কি বুঝাচ্ছেন!
কিছুক্ষণ পর আন্টি দেখলাম ইয়াশকে ধরে বললেন,
– ইয়াশ সোনা!ভাবির দেরী হয়ে যাচ্ছে।যেতে দাও ভাবিকে।
ইয়াশ আমার ঘাড়ে মাথা রেখেই বললো,
– ভাবিকে আগে ছাড়তে বলো।তারপর আমি ছাড়বো।
ইফাজ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– হিয়া,ছাড়ো।
আমি আস্তে করে ইয়াশকে ছেড়ে ইয়াশের দুই বাহুতে হাত রেখে বললাম,
– আসি?
– হুম!
আমি দাড়িয়ে ইয়াশকে টাটাহ্ দিয়ে মেইনডোর ভেদ করে বাহিরে চলে এলাম।বাড়ির সামনে গাড়ি রাখা ছিলো।উনি আমাকে সিটে বসিয়ে সিটবেল্টটা লাগিয়ে দিয়ে নিজে সিটে যেয়ে বসলেন।উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– তখন আন্টিকে ইশারায় কি বলছিলেন?
– কখন?
– যখন আন্টি ইয়াশকে আমার থেকে ছাড়াতে আসলো তার আগে?
– ওহ্!
.
– কি হলো? বলেন!
– তোমাদের দুজনকে দেখে মনে হচ্ছিলো তোমাদের না ছাড়ানো পর্যন্ত কেউ কাউকে ছাড়বে না।তাই আম্মুকে ইশারায় ইয়াশকে ছাড়ানোর কথা বলছিলাম।
– ওহ্!
আমি আর কথা বাড়ালাম না জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম।কেনো যেনো খারাপ লাগছে!ইয়াশের জন্য হয়তোবা!
.
হঠাৎ উনি গান ছাড়লেন।
.
চিঠি লিখেছে বউ আমার,
ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে!
চিঠি লিখেছে বউ আমার,
ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে!
লন্ধন জ্বালাইয়া নিভা………ঠাস্ করে আমি গানটা বন্ধ করে দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– এইসব কি গান শোনেন?ভালো গান নেই?আদিমযুগের সব আজাইরা গান!
আমার কথা শুনে উনি হো হো করে হাসতে হাসতে বললেন,
– কি বললে?
আমি আবার বাহিরে তাকিয়ে বললাম,
– কিছু না।
.
উনি আবার গান ছাড়লেন।এবার ভলিউমটা বাড়িয়ে দিলেন!
.
চোখ যে মনের কথা বলে;
চোখ যে মনের কথা বলে;
চোখে চোখ….
.
আমি আবার বন্ধ করে উনার দিকে ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনি কি মৌসুমীকে পছন্দ করেন?
– কিহ্!ওকে পছন্দ করতে যাবো কোন দুঃখে?
– তাহলে ওর সব আজাইরা গান শোনার এতো ইচ্ছা জাগলো কেনো?বুঝলাম না তো!
– আমার পাগলিটা যে রাগ করেছে।তার মন খারাপ দেখলে আমারও যে মন খারাপ হয়।তাই নিজের মন ভালো করার জন্য এইসব শুনছিলাম আরকি।
– কে বলেছে আমার মন খারাপ?
– তাহলে চুপচাপ কেনো?
– এমনি।
– দেখেছো আবার মন খারাপ করে বললে”এমনি”!
আমি সিটবেল্টটা খুলে ইফাজের কাছে যেয়ে ওর হাত ধরে বললাম,
– একটা কথা বলি?
ইফাজ আমার দিকে না তাকিয়েই বামহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– বাব্বাহ্!এতো আহ্লাদি কন্ঠে পারমিশন চাচ্ছো কেনো?যা বলার বলে ফেলো।
– ইয়াশকে আমার সাথে চিটাগাং নিয়ে যাই?
.
ইফাজ ভূত দেখার মতো আমার দিকে তাকিয়ে গাড়ি ব্রেক করলেন।আমি ভয় পেয়ে উনাকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
– কি হলো,ব্রেক করার মতো কি এমন বললাম!থাক লাগবে না।গাড়ি স্টার্ট দিন।
উনি আমাকে না ছেড়েই অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থেকে বললেন,
– আমি বুঝি না তোমরা দুজন দুজনের মধ্যে কি পেয়েছো?যেই জিনিসটা আমরা কেউ খালি চোখে দেখতে পাচ্ছি না।
– বললাম তো লাগবে না!গাড়ি স্টার্ট দিন।
উনি আমাকে ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।হঠাৎ উনার ফোন বেজে উঠলো।উনি ফোনটা রিসিভ করে ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে কথা বলা এবং গাড়ি চালানো দুটো একসাথে করলেন।ফোনের মধ্যে ওপাশ থেকে কেউ একজন বললেন,
– দোস্ত!কই তোরা?
কথা শুনে মনে হলো কোনো ফ্রেন্ড ফোন দিয়েছে।উনি বললেন,
– এইতো!আর দশমিনিট।
– এইবার ভাবিকে সত্যিই আনছিস তো?কেনো যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
– কথা বলবি?
– ভাবির সাথে?
– হুম!
উনার কান্ড দেখে আমি উনাকে ইশারায় “কথা বলবো না”বলে অনুরোধ করলাম।উনিও ইশারায় বুঝালেন”ওরা আমার অনেক ভালো ফ্রেন্ড।একটু বলো,কিচ্ছু হবে না!”
.
– আসসালামু আলাইকুম,ভাবি।
.
আমি উনার দিকে তাকিয়ে কোনোরকমে গলা টা ঠিক করে বললাম,
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
– কেমন আছেন ভাবি?
– জ্বি ভালো।আপনি?
– এইতো আছি।আপনি কি সত্যিই ভাবি নাকি ইফাজ আমাদের বোকা বানাচ্ছে?কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে না।যেই ছেলে ঠিকমতো আপনার ছবিটাই দেখতে দেয় না।বলে কিনা নজর দিবি তোরা। সে আজ আমাদের সামনে আপনাকে হাজির করবে।একটু তো ডাউট হচ্ছেই!
.
আমার বলার আগেই ইফাজ বলে উঠলো,
– ওই শালা,আমি কোনোদিন তোদের মিথ্যা বলেছি?ফোন রাখ।আমরা এসে পরেছি।
কথাটা বলেই ইফাজ ফোন কেটে দিয়ে আমার দিকে তাকালো।উনি গাড়ি থামিয়ে নিজে গাড়ি থেকে নেমে আমার সাইডের দরজা খুলে হাত ধরে নামালেন।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম এখানে কোনো রেস্টুরেন্ট নেই।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– এখানে কেনো?
– হুশ্!আগে চলো তারপর সব বলবো।
আমি আর কোনো কথাই বললাম না।চুপচাপ উনার সাথে লিফ্টে করে নয়তলায় উঠলাম।ফ্লাটের সামনে দাড়িয়ে ইফাজ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফ্লাটের মেইনডোর খুলে ভেতরে ঢোকার সাথে সাথেই লাল আর গোলাপি গোলাপের পাপড়ি পরতে লাগলো আমাদের উপর।আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।হঠাৎ সবাই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো”Happy Birthday Vabi”
সবার চিৎকারে আমি চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখলাম প্রায় বিশজনের মতো ফ্রেন্ড।তাদের মধ্যে ছয়জনের মতো মেয়ে ফ্রেন্ডকেও দেখলাম।
সবাই শাড়ি আর পান্জাবি পরা।দুইজন ভাইয়া সেকেন্ডে সেকেন্ডে আমাদের ছবি তুলছে।ড্রয়িংরুমটা বিশাল বড়।ড্রয়িংরুমের তিনপাশে সারিবদ্ধভাবে সোফা রাখা।ফ্লোরে লাভসেপের লাল নীল সাদা কালারের বেলুন দিয়ে ভরা।
.
সবাই একজোরে বলছে,
– ভাবি,দাড়িয়ে আছেন কেনো?please come!!!
ইফাজ আমাকে হাত ধরে সামনের দিকে নিয়ে গেলো।একজন ভাইয়া একটা বুকি আমার সামনে এগিয়ে দিলো।আমি হেসে বুকিটা গ্রহন করলাম।
.
অন্য আরেকজন ভাইয়া বলে উঠলেন,
– ভাবি,আজকের দিনটা আমাদের কিন্তু।ইফাজকে আজ আপনার ধারের কাছেও ঘেষতে দেবো না।
উনার কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলেন।ইফাজ সবার সামনে একপাশ থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– সাহস থাকলে কাছে আয়?
.
উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই সব ছেলে ফ্রেন্ডগুলো ভিলেন লুক নিয়ে আমাদের কাছে এসে আমার থেকে উনাকে ছাড়িয়ে সবগুলো ইচ্ছামতো উনার উপর শারিরীক,মানসিক যত নির্যাতন আছে সবকিছু করা শুরু করলেন।
.
আপুগুলো আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে ইফাজের গুনগান গাওয়া শুরু করলেন।
.
ওদিকে আমার সামনে সবগুলো ফ্রেন্ড মিলে ইফাজকে পিন্ঞ্জ করা শুরু করেছে।ইফাজ ওদের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারছে না।

Part:16
.
ইফাজ কোনোরকমে ছাড়া পেয়ে আমার কাছে এসে পাশের আপুটাকে সাইডের দিকে সরিয়ে আমার পাশে বসে পরলো।সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে বলছে,
– ভাবি,এটা কিন্তু একদমই ঠিক না।
যা বাবা!আমি তো কিছুই করলাম না।আমাকে কেনো এভাবে বলছে?
.
আমি আস্তে করে সাইডে সরে গেলাম।ইফাজ সবার সামনে টান দিয়ে ওর সাথে একদম লাগিয়ে বসালো।তারপর সবাইকে সাইলেন্ট করে বললো,
– শোন,তোদের ভাবির একদম টাইম নেই।এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি বের হতে পারবো ততই ভালো হবে।কজ আটটার মধ্যেই ওকে ওদের ফ্লাটে নিয়ে যেতে হবে then ফ্রেশ হয়ে এগারোটার মধ্যেই কমলাপুরে থাকতে হবে।সাড়ে এগারোটায় ট্রেন।ট্রেনটা মিস করলে কালকের মধ্যে চিটাগাং পৌছতে পারবো না।যদি কালকের মধ্যে চিটাগাং পৌছতে না পারি তাহলে আর কখনোই ওকে এভাবে বিয়ের আগে কাছে পাবো না।আংকেলের কাছ থেকে তিনদিনের ছুটিতে আমার সাথে এনেছিলাম।প্লিজ!তোরা এভাবে আর সময় নষ্ট করিস না।
.
উনার কথাগুলো শুনে আমি পুরোই শকড্!অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি!আমি এসবের কিছুই জানতাম না মাত্রই জানলাম!
.
অনিম ভাইয়া বললেন,
– আগে বলবি তো।ওকে,আমাদের আর এভাবে সময় নষ্ট করা যাবে না।তুই ভাবিকে নিয়ে একটু বস,যাস্ট পাচঁ মিনিট!আর তোরা আমার সাথে আয়।
.
সবাই এক কথায় এমনভাবে চলে গেলো মনে হলো সবগুলো প্লান করেই আমাদের একা কিছু মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ দিলো!
.
অনিম ভাইয়া সবাইকে নিয়ে বাসার করিডোরের ভেতরে ঢুকে গেলো।ইফাজ যখন আমাকে নিয়ে মেইনডোর খুলে ভেতরে ঢুকেছিলো তখন ড্রইংরুম ভেদ করে করিডোরটার দুইপাশে দুইটা রুম আর করিডোরের মাথায় একটা রুম দেখেছিলাম।সব রুমের দরজা লক করা ছিলো।ড্রয়িংরুমে বিশাল একটা দেয়ালঘড়ি লাগানো।ঘড়িটার দিকে চোখ পরতেই দেখলাম সাড়ে চারটা বাজে।বিশাল ড্রইংরুমের একসাইডে কিচেন।কিচেনের সাথেই মাঝারি সাইজের ডাইনিং স্পেস।
.
উনি সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসে বসে ফোনে গেইম খেলছিলাম।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– জানান নি কেনো আমাকে?
উনি ফোনের দিকে তাকিয়েই বললেন,
– কি?
– আব্বুর কাছ থেকে যে তিনদিনের জন্য আমাকে নিয়ে এসেছেন,সেটা?
– কেনো?তোমাকে বললে কি তিনদিন বেড়ে চারদিন হয়ে যেতো?
– উফ্!পেচাচ্ছেন কেনো?
.
আমার কথা শুনে উনি ফোনটা অফ করে সাইডে রেখে সামান্য উঠে পান্জাবিটা ঠিক করে একহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– বলতে ইচ্ছে করে নি তোমাকে।শুধু শুধু মন খারাপ করে বসে থাকতে।যেই জিনিসটা আমার মোটেও ভালো লাগতো না।
.
আমি আস্তে করে উনার পেটের উপর একহাত রেখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– যেতে ইচ্ছে করছে না!
আমার কথা শুনে উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– এরকম কথা না বললেই বেশি খুশি হবো।………কথাটা বলেই উনি আমার কপালে একটা চুমো দিলেন।
.
আমি উনার বুকে মাথা রেখে বললাম,
– আপনি কি আমাকে ট্রেনে তুলে দিয়েই চলে আসবেন?
– পাগল নাকি!এতো বড় দুঃসাহস আমার এখনও হয়নি!নিজের সুন্দরী বউকে নাকি একা একা ট্রেনে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো?
.
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে উচ্ছোসিত কন্ঠে বললাম,
– সত্যি! আপনিও যাবেন আমার সাথে?
– হুম!কেনো তুমি কি ভেবেছিলে তোমাকে একা একা উঠিয়ে দিয়ে আমি হাত পা ছেড়ে বাসায় নাক ডেকে ঘুমোবো?
– উফ্!আমি ওসব কখন ভাবলাম?চিটাগাং তো অনেক দূর।তাই ভাবলাম আপনি নাও যেতে পারেন!
– যতদূরই হোক!তুমি আছো না সাথে!তুমি সাথে থাকলে কেনো যেনো সময়গুলোও তাড়াতাড়ি চলে যায়।খুব ইচ্ছে করে সময়গুলোকে আটকে রাখতে।
.
আমি কিছু একটা বলতে যাবো সেই মুহূর্তে একটা ভাইয়া রুম থেকেই চিৎকার দিয়ে বললেন,
– ইফাজ,ভাবিকে নিয়ে আয়!
.
ইফাজ ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে আমার হাত ধরে বললো,
– চলো!
আমি উঠে শাড়িটা ঠিক করে উনার হাত ধরেই ভিতরের দিকে যেতে লাগলাম।সবাইকে করিডোরের মাথার রুমটার সামনে দাড়ানো অবস্থায় দেখলাম।উনাদের কাছে যেতেই দেখলাম শাফি ভাইয়া আর প্রিতী আপু দরজার দুইপাশে দুইজন একটা লাল ফিতার দুইপ্রান্ত ধরে দাড়িয়ে আছেন।অনিম ভাইয়া একটা কেঁচি এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– ভাবি,ফিতাটা কেটে উদ্বোধন করেন।
.
ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম।ইশারায় বুঝালাম”কিসের উদ্বোধন?”
উনি ইশারায় আগে ফিতাটা কাটতে বললেন!
আমি অনিম ভাইয়ার থেকে কেঁচিটা নিয়ে কাটতে যাবো সেই মুহূর্তে ইফাজ আমার হাতের উপর হাত রেখে আস্তে করে ফিতাটা কাটলো।সবাই জোরে হাতেতালি দিলো।ইফাজ আমাকে বললো,
– প্লিজ,ওপেন দিজ ডোর!
.
আমি ইফাজের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে দরজা খুললাম।দরজা খোলার সাথে সাথেই আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম এটা একটা বেডরুম।বিশাল বড় বেডরুমটা।ফার্স্ট বেডের দিকে চোখ পরলো।নীল কালারের একটা চাদর বিছানো।চাদরের উপর সাদা বেলিফুলের পাপড়ি দিয়ে বড় করে”Mr.& Mrs.”লেখা।লেখাটার চারপাশে গোলাপি গোলাপের পাপঁড়ি দিয়ে লাভ আকাঁ।গোলাপি পাপঁড়ি ঘেষে লাল গোলাপের পাপঁড়ি দিয়ে একইভাবে লাভ আকাঁ।ভীষন সুন্দর লাগছে দেখতে!বেডের সাথের দেয়ালে আমার একটা ঘুমন্ত ছবির বিশাল বড় ফ্রেম লাগানো!চোখ আটকে আসলো ছবিটা দেখে!ছবিটার নিচের দিকে লেখা”ইফাজের ঘুমন্ত পরী”!আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকালাম!
.
উনি আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে অন্যহাত সামনের দিকে প্রসারিত করে বললেন,
– পছন্দ হয়েছে?
– মানে?আমাদের…..
– হুম….এটা আমাদের বেডরুম!আর এই পুরো ফ্লাটটাই আজ থেকে তোমার!
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি!
.
– ভাবি,শুধু কিন্তু ইনস্ট্রাকশনটাই ইফাজের ছিলো।বাকি সবকিছু কিন্তু আমরাই করেছি।সো ওল ক্রেডিট কিন্তু আমাদেরকেই দিতে হবে।
.
রাফি ভাইয়ার কথা শুনে আমি উনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।কলি আপু আমার হাত ধরে বললো,
– এখানে দাড়িয়ে থাকলেই হবে?এসো আমার সাথে।
.
কলি আপু আমার হাত ধরে রুমের বিভিন্ন জিনিস দেখাচ্ছেন আর ইফাজের প্রশংসা করছেন।উনার চয়েজ নাকি অনেক ভালো,কোনো প্রোগ্রামে গেলে নাকি উনিই সব ফ্রেন্ডদের ড্রেস চুজ করে দেন।মাঝে মাঝে ফ্রেন্ডদের নিয়ে কোনো পার্টি এরেঞ্জ করলে পার্টির ডেকোরেশন ইনস্ট্রাকশনের দায়িত্ব উনিই পালন করেন।এসব ই বলছিলেন।
.
হঠাৎ আপু আমার হাত ধরে সামান্য নাড়া দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– হিয়া,See!
আমি সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম।দেয়ালে আমার অনেক ধরনের ছবি লাগানো।রেস্টুরেন্টে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছি,রাস্তায় দাড়িয়ে হেসে হেসে কারোর সাথে কথা বলছি,হঠাৎ চুল ঠিক করছি সেই পিকটাও এখানে আছে।আমি খুটিয়ে খুটিয়ে পিকগুলো দেখছি।পিকগুলো তুলেছে কবে?এই ড্রেস আমি কবে পরেছি?জায়গাটা কোন জায়গা?এই রেস্টুরেন্টে কবে গিয়েছিলাম?সবকিছু মনে করার চেষ্টা করছি।কিন্তু কিচ্ছু মনে করতে পারছি না।
.
পেছন থেকে অনিম ভাইয়া কলি আপুকে ডেকে সব ফ্রেন্ডদের নিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেলেন।ইফাজ দরজা না লাগিয়ে সামান্য চাপিয়ে দিয়ে পা দুটো ঝুলিয়ে রেখেই বেডের উপর শুয়ে হাতদুটো উপরে উঠিয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমি উনার পাশে বসে আঙ্গুল দিয়ে দেয়ালের ছবিগুলো দেখিয়ে বললাম,
– ছবিগুলো কবে তোলা হয়েছে?
উনি ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন,
– এক একটা ছবি বিভিন্ন সময়ে,বিভিন্ন দিনে,বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে,বিভিন্ন জায়গা থেকে তোলা হয়েছে।মনে করতে পারছি না কোন দিন,কোন জায়গায়, কোন রেস্টুরেন্টে ছবিগুলো তোলা!
.
আমি মাথাটা সামান্য ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– সবসময় ফলো করতেন,তাই না?
– হুম!
– কেনো?
– ভয় করতো,তাই!
আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– কিসের ভয়?
– জানার দরকার নেই।
.
– বলবেন না?
উনি ফুলের পাঁপড়িগুলো উপরের দিকে ছিটিয়ে দিয়ে বললেন,
– বোঝো না!কিসের ভয়?
আমি আর কোনো উত্তর দিলাম না।কেনো ভয় করতেন সেটা বুঝতে পেরেছি।
.
আমি বেডের মাথার দিকের দেয়ালের বড় ফ্রেমের ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আমার এই ঘুমন্ত পিকটা কখন তুলেছেন?
– দেখে বুঝতে পারছো না?নীল শাড়ি,রাতের বেলা,গাড়ীর মধ্যে,ঘুমন্ত একটা পরী ঘুমিয়ে ছিলো!মনে পরেছে?
আমি উনার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে একটা হাসি দিয়ে বললাম,
– হুম!সুন্দর হয়েছে পিকটা!
– নজর দিও না!…….কথাটা বলেই উনি হাসতে হাসতে উঠে বসলেন।আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে বেড থেকে উঠে দাড়ালাম।সাথে সাথে উনিও উঠে দাড়ালেন।আমি রুমের সাথে যেই বারান্দাটা ছিলো সেদিকে মাত্রই পা বাড়াবো সেই মুহূর্তে উনি আমার হাত ধরে টান দিয়ে উনার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
– আমাদের কিন্তু বেশি সময় নেই।আবার যেদিন আসবো সেদিন সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখো।এখন আমাদের বের হতে হবে।
– প্লিজ,একবার!দেখেই চলে আসবো!
– তোমার একবার দেখা একশবার দেখার সমতুল্য।অলওয়েজ খুটিয়ে খুটিয়ে সব দেখো তুমি।যাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার কথা তাকে দেখার নাম নেই।ফালতু জিনিসগুলোর প্রতি সব কনসেনট্রেশন!
.
হঠাৎ উনার মুখে এরকম কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললাম!
উনাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার সুযোগ কখনো দিয়েছে আমাকে?নিজে সারাক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে!আমাকে দেখার সুযোগ ই তো দেন না উনি!
আমার এরকম চোখ নামানো দেখে উনি আমাকে টান দিয়ে উনার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– থাক,আর লজ্জা পেতে হবে না!বিয়ের পর যখন আমি ঘুমিয়ে থাকবো তখন মন ভরে আমাকে দেখো!বিয়ের আগে তো মনে হচ্ছে না সেই সুযোগটা তুমি পাবে!
উনার কথা শুনে আমি হাত দিয়ে উনার পেটে গুতোঁ দিলাম।উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here