The unlimited love part 11+12

#the_unlimited_love❤️
#part_11
#writer_nusrat

“আসার সময় কোথাও লেগে গিয়েছিলো মনে হয়৷”

মহিলাটি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো আমার কথা উনার বিশ্বাস হয়নি৷ আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে বললেন,,,

“মানলাম আসার সময় কোথাও চোট পেয়েছো৷ কিন্তু তোমার গালে যে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ দেখা যাচ্ছে সেটাতো অন্য কথা বলছে৷”

আমি উনার কথা শুনে কেদে দিলাম৷ আর যে কান্না চেপে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা আমার পক্ষে৷ কাঁদতে কাঁদতেই উনাকে বললাম,,,

“প্লীজ আন্টি আমাকে এসব জিজ্ঞেস করবেন না৷ আমি কিচ্ছু বলতে পারবোনা৷আপনার বাড়িতে কী খাওয়ার মতো কিছু আছে৷ আমাকে কী একটু খাবার দিবেন৷ আমার খুব খিদে পেয়েছে৷ দুপুর থেকে কিচ্ছু খাইনি৷”

আমার কথা শুনে মহিলাটিরও চোখে পানি এসে গেছে৷ উনি তারাতাড়ি উনার চোখের পানি মুছে বললেন,,,

“হ্যা মা আমি তোমার জন্য এখুনি খাবার নিয়ে আসছি৷ তার আগে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও৷”

আমিও আন্টির কথা মতো ফ্রেশ হয়ে নিলাম৷ উনি আমাকে এক প্লেট ভাত এনে দিলেন৷ আমি কয়েক লোকমা মুখে দিয়ে আর খেতে পারছিনা৷ যেন গলা দিয়ে খাবার নামছেই না৷ তারপরও কোনরকমে খাবারটা খেয়ে নিলাম৷

বিছানায় শুয়ে আছি আমি কিন্তু কিছুতেই আমার ঘুম আসছেনা৷ শুধু আদিলের কথা মনে পরছে৷ আচ্ছা উনি খেয়েছেনতো৷ কেমন আছেন উনি৷ এসব কী ভাবছি আমি উনারতো দিব্যি ভালো থাকার কথা৷

_____________________

সোফায় এলোমেলো হয়ে পরে আছে আদিল৷ কিছুই ভালো লাগছেনা তার৷ কেমন যেন এক অদ্ভুত কষ্ট অনুভব করছে৷ হঠাৎ আদিলের চোখ পরলো আরুহির ফ্লোরে পরে থাকা ফোনের দিকে৷আদিল জলদি করে ফোনটা হাতে নিলো তারপর ব্যাটারি, সিম সেটিংস করে ফোন ওপেন করলো৷ কল লিস্ট, গ্যালারী সব খুজলো বাট প্রমানের মতো কিছুই পেলোনা৷ আদিল ফোনটা সোফায় রেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো৷

🏜️🏜️🏜️🏜️

সকালে রোদ আমার চোখে এসে পরতেই ঘুম ভেঙে গেলো৷ আমি লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম৷ কিচেনে উকি দিতেই দেখলাম আন্টি রান্না করছে৷ আমি জলদি করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম তারপর আন্টি কে গিয়ে বললাম,,

“আন্টি আমি চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন”৷

“একি মা তুমি সকালের নাস্তা না করেই চলে যাবে নাকি৷ বসো বসো আমি এক্ষুনি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি৷”

আমি নাস্তা করে উনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম৷উনি এই একদিনেই আমায় অনেক ভালোবেসেছেন যত্ন করেছেন৷ উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এতো কিছু করতো না৷ সারাজীবন উনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো আমি৷

রাস্তায় এক ঘন্টা যাবত দাড়িয়ে আছি৷ সকাল ৬টা বেজে ৭টা হয়ে গেছে৷ একটা কানাকড়িও নেই আমার কাছে যাবো কী করে সেটাই ভাবছি৷ হঠাৎই চোখ গেলো আমার হাতের দুটো বালার দিকে৷ কিন্তু এগুলোতো আমার শাশুড়ী মা আমায় দিয়েছিলেন৷ তাছাড়াও এই বালা ছাড়াতো আমার কাছে আর কিছু নেই৷ আর কিছু না ভেবে আমি বালা দুটো বন্ধক দিয়ে দিলাম৷ আর যা টাকা পেলাম সেটা দিয়েই চট্টগ্রাম রওনা দিলাম৷

__________________

“আরুহি,আরুহি কোথায়?? তুই দেখ আমি এসে গেছি৷ একি এই মেয়ের কোনো সাড়াশব্দ নেই কেনো”৷

মায়ের ডাক শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো আদিল,,

“একি আদিল তুমি একা কেনো??আরুহি কোথায়”??

“আরুহি এই বাড়িতে নেই মা৷ ওকে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছি৷”

“আদিল!!!এসব কী বলছো কী তুমি৷ আরুহিকে কেনো বের করে দিয়েছে৷ কী করেছে কী ও??৷(চিৎকার করে)

“ও আমায় ঠকিয়েছে মা৷ তাই ওকে আমি বিদায় করে দিয়েছি৷ আর খুব শীগ্রই ডিভোর্স দিয়ে দিবো৷ তারপর সোহাকে বিয়ে করবো৷”

আদিলের মা আদিলের কথা শুনে রেগে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলেন গালে,,,

“বিয়ে কী তোমার কাছে ছেলে খেলা মনে হয় নাকি৷ যে যখন তখন ডিভোর্স দিয়ে দিবে৷ শুনো আর যদি তোমার মুখে ওই সোহানি মেয়েটার কথা শুনি তাহলে তুমি আমার মরা মুখ দেখবে৷আর তুমি যা করেছো সেটার জন্য অনেক পস্তাতে হবে তোমাকে অনেক৷” কথাটা বলে মা নিজের রুমে চলে গেলেন৷

________________

ট্রেনে জানালার পাশে বসে একমনে বাইরে তাকিয়ে আছি৷ আচমকাই মনে পরলো রিংকির কথা একি আমিতে রিংকিকে জানাইনি আমি যে চট্টগ্রাম যাচ্ছি৷ ও যদি স্টেশনে না থাকে তাহলে আমি আমার গন্তব্যে পোঁছাবো কী করে৷ ফোন ওতো আনিনি৷পাশে তাকাতেই দেখলাম একটা লোক উনার ফোন ঘাঁটছে৷ আমি উনার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বললাম,,

“ভাইয়া আপনার ফোনটা একটু দিবেন প্লিজ৷ আমি একজনকে ফোন করবো”

লোকটা আমায় সাথে সাথেই ফোনটা দিয়ে দিলো৷

আমি রিংকির নাম্বার ডায়াল করলাম৷রিং হচ্ছে বাট কল রিসিভ করছেনা৷ দুবার কল কেটে গেলো৷ আরেকবার দেওয়ার সাথে সাথেই রিংকি কল রিসিভ করলো৷ ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমি বললাম,,

“শুন রিংকি আমি আরুহি বলছি৷ আমি চট্টগ্রাম আসছি৷ তুই একটু স্টেশনে থাকিস প্লিজ৷”

“ওকে রাখছি আমি৷”

আার কয়েক মিনিট পরেই ট্রেন ছেড়ে দিবে৷ আর আমিও এই ঢাকা শহর ছেড়ে অনেক দুরে চলে যাবো৷ সেখানে গিয়েই নতুন করে জীবন শুরু করবো৷ মনকে তো শক্ত করে নিলাম তবুও কেনো জানিনা খুব কষ্ট হচ্ছে৷ হয়তো কাছের মানুষদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি সেই জন্যে৷কিন্তু এতে আমার কাছের মানুষরা খুশি থাকেলেই আমি খুশি৷ আর আমার স্বামী তো নিজেই বলে দিয়েছে আমি যাতে উনার সামনে না যাই৷ আমি আপনার কথা রাখবো আদিল৷ আর কোনোদিন আপনার সামনে যাবোনা৷ আপনাকে ডিস্টার্ব করবোনা৷ আমার নিজেরই এখন খুব লজ্জা লাগছে আমি আপনার সাথে ঝগড়া করেছি,স্ত্রীর অধিকার নিয়ে সামনে গিয়েছি৷ হয়তো এখন আপনি আপনার সোহানিকে নিয়ে ব্যস্ত আছেন,আর আমি ব্যস্ত আছি এই ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যাবার৷আমি যে আমার মুখও আপনাকে দেখাতে চাইনা আদিল,আর না কোনোদিন দেখাবো৷আমি আর কান্না আঁটকে রাখতে পারলাম না৷ ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম৷ এতে ট্রেনের অনেক যাত্রীরাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷আমি চোখ মুছে জানালার পাশে প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পরলাম৷ কত সুন্দর এই প্রকৃতি৷ সুন্দর সবই সুন্দর, শুধু সুন্দর না আমার এই জীবনটা৷

🍀🍀🍀🍀🍀

আহিলও ফিরে এসেছে৷ তার কাজ শেষ তাই৷ মায়ের মুখ থেকে আদিলের কথা শুনে ভীষণ রেগে আছে সে৷ তাই এখন যাচ্ছে আদিলের সাথে বুঝাপড়া করতে৷ আদিলের রুমে এসে চিৎকার দিয়ে উঠলো আহিল,,,

“ভাইয়া”!!!!!!!

“কী হয়েছে এভাবে চিৎকার করছিস কেনো??

“তুমি রুহিকে কেনো বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছো বলো৷”

“আমি তোকে বলতে বাধ্য নই৷”

“কেনো বাধ্য নও তুমি৷বলো কেনো রুহিকে বের করে দিয়েছো৷ কী অন্যায় করেছে ও৷”

“ও আমায় ঠকিয়েছে৷ও রাতে ক্লাবে গিয়ে ছেলেদের সাথে টাইম স্পেন্ড করে৷ ছেলেদের জরিয়ে ধরে৷”

“তা এসব তোমায় কে বলেছে৷??

“কে আবার আরুহির প্রাক্তন প্রেমিক বলেছে৷ আর আরুহি এখন ওর কাছেই আছে৷”

“প্রেমিক,কী বলছো তুমি ভাইয়া ওর তো কোনো প্রেমিক টেমিক নেই৷ আর প্রাক্তন ওই বা আসলো কোথায় থেকে৷ লিসেন ভাইয়া,আমি জানিনা কে তোমাকে কী বলেছে বা কী প্রমান দেখিয়েছে বাট আই ড্যাম শিওর এটা কোনো ষড়যন্ত ছিলো৷ রুহিকে তোমার জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য৷ টোটাল সাত বছর আমি রুহির সাথে লেখা পড়া করেছি৷ শুধু তাই নয় বেস্ট ফ্রেন্ড আমি ওর৷ তাই ওর সব কিছু জানি আমি৷ ও কিছুতেই এমন নিচ কাজ করতে পারেনা”৷

“এনাফ ইজ এনাফ আহিল,তোকে কে বলেছে আরুহিকে নিয়ে মাথা ঘামাতে৷ চলে যা এখান থেকে৷ কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আমার৷ ”

আহিল চলে যেতে নিবে এমনি ওর চোখ গেলো সোফার নিচে পরে থাকা মেমোরি কার্ডের দিকে৷আহিল এগিয়ে এসে মেমোরিটা হাতে নিলো৷

“ভাইয়া এই মেমোরি কী তোমার৷”

আদিল একটু ভালো করে দেখে বললো,,,

“নাতো”

“তোমার না তাহলে কার৷ ওয়েট দেখছি”৷ আহিল মেমোরি কার্ড ওর ফোনে ঢুকালো৷ তারপর গ্যালারীতে গেলো৷গ্যালারীর একটা ফটোতে চোখ আটকে গেলো আহিলের৷ একি এটাতো সোহানি আপু৷ছবিটা দেখে আদিলের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো৷

“হ্যা এটাতো সোহানি,বাট এই ছেলেটা কে??

আহিল ছেলেটাকে দেখে খাটে ফোনটা ছুঁড়ে মারলো৷

“কী হলো আহিল তুই এভাবে ফোনটা ছুড়ে মারলি কেনো??

“ভাইয়া এই ছেলেটা আমার ফ্রেন্ড রেহান৷ বাট রেহান সোহানি আপুর সাথে এতো ক্লোজ হয়ে কী করছে???

“এই ছেলে তোর ফ্রেন্ড কী বলছিস এসব৷ ওতো আরুহির বয়ফ্রেন্ড”

“ওহ সেটআপ ভাইয়া৷ আমি আগেও বলেছি আর এখনও বলছি রুহির কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই৷ যদি হতো তাহলে দুজনের মধ্যে একজনে হলেও বলতো৷ বাই দ্যা ওয়ে তোমায় কে বলেছে রেহান রুহির বয়ফ্রেন্ড৷”

“কেনো রেহান নিজে বলেছে৷”

“কী বলেছে”???

আদিল আহিলকে সব খুলে বললো৷ প্রমাণের কথাও বললো৷

“আচ্ছা আমি যতদুর জানি রেহান ক্লু দিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে৷ ওকি তোমায় কোনো ক্লু দিয়েছে”??

“না ওতো আমায় কোনো ক্লু দেয়নি৷ তাছাড়াও রেহান কী বলেছে সবইতো তোকে খুলে বললাম”৷

“ভাবো ভাইয়া ভাবো৷ রেহানের সাথে চলা ফেরা করেছি আমি৷ তাই খুব ভালোভাবেই চিনি ওকে৷ ও এতো বড় মিথ্যা বলতে পারেনা৷ আই এম ড্যাম শিওর ওকে কেই বাধ্য করেছে মিথ্যা বলার জন্য৷”

আদিল কিছুক্ষণ ভেবে বললো,,,,

“রেহান আমায় যাবার সময় বলে গিয়েছিলো,,সব সময় আমরা যা দেখি তা সত্য হয়না৷ তাই যা করিই না কেনো ভেবেচিন্তে যেনো করি৷”

“বাহ্ ভাইয়া বাহ্ এই ছোট্ট কথাটি তোমার মাথায় ঢুকলো না৷ ভাইয়া তুমি রাগকে সব সময় প্রাধান্য দাও৷ তোমার উচিৎ ছিলো রুহির কথা শুনা৷ তুমিতো ওর কথা না শুনে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছো৷ আচ্চা ভাইয়া তুমি ওর গায়ে হাত তুলনিতো?৷(ভ্রু কুচকে)

“কেনো??

“না মানে রুহি আমায় সব সময় বলতো ওর নাকি মেয়েদের উপরে হাত তোলা একদমই পছন্দ নয়৷ ”

আহিলের কথা শুনে আদিল মাথা নিচু করে আছে৷ অনেক অনুশোচনা হচ্ছে তার৷

আদিলের মাথা নিচু করা দেখে আহিল যা বুঝার বুঝে গেলো৷ তারপর আদিলের কাধে হাত রেখে বললো,,

“ভাইয়া যা হওয়ার হয়ে গেছে৷ এখন আমাদের আরও ক্লিয়ার করে সব জানতে হবে৷ আমি রেহানকে কফি শপে ডাকছি তুমি রেডি হয়ে নাও৷”
#the_unlimited_love❤️
#part_12
#writer_nusrat

আহিল আদিলের থেকে একটু দুরে গিয়ে রেহান কে ফোন করলো৷রিং হওয়ার কিছুক্ষণ পর রেহান ফোন রিসিভ করলো৷

“হ্যালো রেহান আমি আহিল বলছি৷ তুই কী আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবি??

“হঠাৎ দেখা করতে বললি যে৷”

“এমনি কতদিন ধরে তোকে দেখি না তো তাই একটু দেখতে ইচ্ছে করছে আরকি৷ থাক তুই যদি আসতে না চাস তো আসিস না৷ “”

“আমি তোকে কখন বললাম যে আমি আসবোনা৷ কোথায় আসতে হবে বল৷ আমি চলে আসবো৷”

“আচ্ছা ঠিকাছে কফি শপে চলে আয় তুই৷ আমি ওয়েট করবো৷”

“ওকে ডান”

আহিল রেহানের সাথে কথা বলে আদিলের দিকে তাকিয়ে বললো

“রেডি হয়ে নাও ফাস্ট৷ রেহান দেখা করতে রাজি হয়েছে৷ আর সব সত্য শুনার জন্য প্রস্তুত আছো তো”?? কথাটা বলে আহিল চলে গেলো৷

☕☕☕☕

কফি শপে বসে আছে আদিল আর আহিল৷ আর অপেক্ষায় আছে কখন রেহান আসবে৷ প্রায় ১৫ মিনিট পর রেহানের দর্শন মিললো৷ রেহান টেবিলে এসে বসতেই আদিলকে দেখে চমকে গেলো৷ তারপর কাপা কাপা গলায় বললো,,,,

“আপনি এখানে কী করছেন”??

“আরে উনি তো আমার ভাইয়া আদিল৷ তুই চিনিস নাকি??

রেহান কিছু না বলে এক ধ্যানে টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে৷

“আরুহি কেমন আছে”??

আদিলের এমন প্রশ্নে আহিল আর রেহান দু’জনই চমকে উঠলো৷

“আরুহি কেমন আছে সেটা আমি কী করে জানবো”৷

“ওতো তোমার গার্লফ্রেন্ড৷ আর বাড়ি ছেড়ে যখন চলে গেছে তখন নিশ্চয় তোমার কাছেই আছে”৷

“এসব কী বলছেন আপনি ভাইয়া??আরুহি আমার কাছে নেই আর আপনি ওকে বাড়ি থেকেই বা কেনো বেড় করে দিয়েছেন??

“কারণ আমার বাড়িতে কোনো ধোঁকা বাজের জায়গা নেই৷ ”

রেহান আদিলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে৷ আহিল একটু গলা ঝেরে বললো,,

“ভাইয়া আমায় সব বলেছে রেহান৷ আই ডোন্ট নো তুই কেনো এসব করছিস৷ কার কথায়ই বা করছিস?? তুই তো এমন না তাহলে?? দেখ তোর এমন মিথ্যা কথা আর মিথ্যা প্রমানে ওরা আলাদা হয়ে গেছে৷ এখন যদি ওদের ডিভোর্স না চাস তো বলে ফেল প্লিজ যে এসব কার কথায় করছিস”??

“তুই এতো শিওর কী করে যে আমি সব মিথ্যা বলেছি আর কারও কথায় করছি??

“বিকজ আই ট্রাস্ট ইউ৷ বন্ধু আমি তোর তাই সব জানি আমি৷তুই আর রুহি বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড নস৷ ইভেন তোরা একজন আরেকজনকে চিনিস পর্যন্ত না৷ আমি তোকে যেমন বিশ্বাস করি তেমনি রুহিকেও বিশ্বাস করি৷ তাই এখন সত্যি কথাটা বলে দে প্লিজ কার কথায় এমন করছিস??

রেহান তবুও কিচ্ছু বলছেনা আদিল শুধু বসে বসে নিরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছে৷

“দেখ রেহান তুই যদি না বলিস তো আমি অন্যপথ বেচে নেবো৷”

“অন্যপথ মানে??(ভ্রু কুচকে)

আহিল একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে তার ফোন বেড় করে রেহানকে তার আর সোহানির ক্লোজ ফটোগুলো দেখালো৷ রেহান ছবিগুলো দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷

“একি এটাতো সেদিনের ফটোগুলো যেদিন আরুহি গিয়ে আমাকে আর সোহানিকে একসাথে দেখে নিয়েছিলো৷,, কথাটা বলে রেহান আবার মাথা নিচু করে নিলো৷

রেহানের কথা শুনে আদিল আর আহিল দুজনেই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রেহানের দিকে৷

“তারমানে এই মেমোরিটা আরুহির ছিলো৷ আর ও আমায় সেদিন এই ফটোগুলোই দেখাতে চেয়েছিলো বাট আমি তাকে বিশ্বাস করিনি৷”

আদিলের কথা শুনে আহিল একবার রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো,,

“দেখ ভাই আস্তে আস্তে সব ক্লিয়ার হয়ে যাচ্ছে৷ তাই তুইও আর কিউরিওসিটি না বাড়িয়ে বলে ফেল প্লিজ”৷

“ওকে ফাইন বলছি আমি সব৷”

রেহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,

“সেদিন আরুহি আমার সাথে মিট বা ডেট করতে ক্লাবে যায়নি৷ ওতো আমায় চিনতো পর্যন্ত না৷ তারপর রেহান” আদিল আর আহিলকে এ টু জেট খুলে বললো৷

“তা এসব কে করাচ্ছে এটা তে বললি না৷”

“সোহানি করিয়েছে৷”

“কীহহহ!!!! সোহানি তোমায় এসব করতে বলেছে বাট হুয়াই???”

“যাতে আপনি আর আরুহি আলাদা হয়ে যান সেই জন্যে৷”

“সোহানি তোকে বললো আর তুই রাজিও হয়ে গেলি, হুয়াই ব্রো???

“আমি কী এমনি এমনি রাজী হইসি নাকি ও আমায় ব্ল্যাকমেইল করেছে এসব করার জন্য৷”

“কী ধরনের ব্ল্যাকমেইল?”?

“আসলে সোহানির সাথে আমার ২ বছরের সম্পর্ক৷ আর অনেক বার ওই আমি ওর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনে গিয়েছিলাম৷ আমি যাইনি ও নিজেই আমায় জোর করতো৷ আর ওই মুহুর্তের ছবি দেখিয়েই ও আমায় ব্ল্যাকমেইল করতো৷সেদিন ট্রায়াল রুমে আমিই আরুহিকে জরিয়ে ধরেছিলাম আর সোহানি ছবি তুলেছিলো৷ আমি এমন করতে চাইনি৷ আমি জানি আরুহির সাথে আমি যা করেছি সেটা অন্যায় করেছি, ক্ষমার অযোগ্য আমি৷ তবুও আরুহির কাছে একদিন আমি ক্ষমা চেয়ে নিবো৷ আর অন্যায় কিন্তু আমি একা করিনি৷ আদিল ভাইয়াও অন্যায় করেছে৷ উনার এভাবে আরুহিকে বেড় করে দেওয়া একদম উচিৎ হয়নি৷ আরুহির কথাও শুনা উচিৎ ছিলো উনার৷ আরুহি মেয়েটা সত্যি খুব ভালো৷ আর খুব ভালোবাসে আদিল ভাইয়াকে,, সেদিনের কথার দ্বারাই বুঝেছিলাম আমি৷আমি তো সেদিন ভাইয়াকে এটাও বলেছিলাম যে আমরা সবসময় যা দেখি তা সত্য হয়না৷ তাই যাই করুননা কেনো ভালো করে চিন্তা ভাবনা করে যেন করেন৷যাইহোক আমি এবার যাই৷ ভালো থেকো””৷,,,কথাটা বলে চলে গেলো রেহান৷

আদিল এখনো শক্ত হয়ে বসে আছে৷কী মনে হতেই কফি শপ ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো সে৷তারপর একটা লেকের পাড়ে গিয়ে সোহানিকে ফোন করলো৷ কিছুক্ষণ পরেই সোহানি চলে আসলো৷ সোহানিকে দেখেই আদিলের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রাগে৷তবুও রাগ প্রকাশ না করেই বললো,,,

“শুনো সোহানি আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই”??

“হ্যা বলো বেবি কী বলবে??

“আমি আরুহিকে আমার বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছি৷ ও একটা ধোঁকাবাজ৷ আর তুমি তো জানো ধোঁকাবাজকে আমি একদম লাইক করিনা৷ তাই আমি এখন তোমাকে বিয়ে করবো৷ তুমি কী আমায় বিয়ে করবে”???

“কী বলছো তুমি?? তোমাকে বিয়ে না করার কী আছে৷ তোমাকে বিয়ে করার জন্যইতো আমি এত্তো কিছু করলাম৷ এত্তো প্লেন করলাম৷ নাও আই এম সাকসেস”৷

সোহানির কথা শুনে আদিল আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো৷

“তুই কী মনে করেছিস??তুই এতো কিছু করবি তারপরও আমি তোকে বিয়ে করবো৷ সেই ভুল আমি করবো না৷ খুব ভালো করেছি আমি আরুহিকে বিয়ে করেছি৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাকেও তোর জন্য হারাতে হয়েছে৷ যে মেয়েটা ফুলের মতো নিষ্পাপ সে মেয়েটিকে আমি চরিত্রহীন বলেছি৷ আর যে আসল চরিত্রহীন তাকে আমি নিষ্পাপ ভেবে এসেছি৷ তোর জন্য শুধু মাত্র তোর জন্য আরুহিকে ভুল বুঝে আমি বাড়ি থেকে বেড় করে দিয়েছি”(রেগে চিৎকার করে)

“আরে বাহ্ এতো ভালোবাসা৷ যাক তুমি আমায় বিয়ে করো বা নাই করো আমি একটা খুব ভালো কাজ করেছি তোমাকে আর আরুহিকে আলাদা করে দিয়েছি৷”

সোহানির কথা শুনে আদিল আরেকটা চড় মেরে দিলো তার গালে৷

“তুই কী মনে করেছিস আমার সর্বনাশ করে তুই পার পেয়ে যাবি??? নাহ৷ পুলিশে দিবো আমি তোকে৷,,,
কথাটা বলে রেগে লেক থেকে চলে গেলো আদিল৷

🛤️🛤️🛤️🛤️🛤️🛤

মানুষের হৈচৈ এ ঘুম ভেঙে গেলো আমার তাকিয়ে দেখলাম সব যাত্রীরা নেমে যাচ্ছে তারমানে কি চলে এসেছি নাকি৷একজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ২টা বাজে৷ হায় আল্লাহ এতো সময় ঘুমিয়ে ছিলাম৷ আমিও নেমে পরলাম ট্রেন থেকে৷মাথাটা খুব ব্যথা করছে৷ চারিদিকে তাকিয়ে রিংকিকে খুজতে তাকলাম আমি৷ওকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা৷

আমাকে দেখে কোথায় থেকে জানি রিংকি দৌরে এলো৷

“তুই এখন এলি?? আমি কতো সময় ধরে অপেক্ষা করছি৷”

আমি কিছু বলতে পারছিনা৷অনেক খিদে পেয়েছে আমার সেই সকাল ৬টায় ১টা রুটি কোনোরকমে খেয়েছিলাম৷ প্রচুর দুর্বল লাগছে৷ কথাও যেনো মুখ থেকে বের হচ্ছেনা৷

“একি রে কী হয়েছে তোর৷ শরীর দুর্বল নাকি???

“তুই কী আমাকে তোর সাথে নিয়ে যাবি নাকি চলে যাবো আমি৷???

“এই না না চল আমার সঙ্গে৷”

চলবে,,,,,,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here