Your_love_is_my_Addiction পর্ব ২

#Your_love_is_my_Addiction
#Season_2
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২
.
মাটিতে বসে অপলক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে ইচ্ছে। নিঃশব্দে কাঁদছে ও। চেয়েও পারছে না চিল্লিয়ে কাঁদতে। তার যে চিৎকার করে কাঁদার অনুমতি নেই। আয়াশ ইচ্ছের পাশে চেয়ারে বসে ওয়াইন গিলছে আর ইচ্ছেকে দেখছে। সামনের থেকে চোখ সরিয়ে আয়াশের দিকে করুণ চোখে তাকালো ইচ্ছে।
-“প্লিজ ছেড়ে দিন ওকে। ও মরে যাবে।”
-“মরুক! তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম আমার কথার অবাধ্য হবে না। কিন্তু তুমি হয়েছো। এই আয়াশ খানের কথার অবাধ্য হয়েছো তুমি। এর ফল তো ভোগ করতেই হবে।”
-“অবাধ্য আমি হয়েছি, ভুল আমি করেছি। তাহলে আপনি কেন রিয়ানকে শাস্তি দিচ্ছেন! ও তো কোনো দোষ করেনি। প্লিজ ছেড়ে দিন ওকে। ওর অবস্থা ভালো নয়।”
-“ওর দোষ আছে। তুমি ওকে পছন্দ করো এটাই ওর দোষ। তুমি শুধু রিয়ান কেন! কোনো ছেলেকেই পছন্দ করতে পারবে না।”
-“আমি..আমিহ্ কথা দিচ্ছি আমি আর রিয়ানের সাথে কথা বলবো না। ওর দিকে তাকাবো না পর্যন্ত। প্লিজ এবার ওকে ছেড়ে দিন। হসপিটালে নিন ওকে প্লিজ প্লিজ প্লিজ…”

ইচ্ছে কাঁদতে কাঁদতে দু’হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো। কিছুক্ষণ আগে আয়াশ নিজের ফার্ম হাউজের সামনে গাড়ি থামিয়ে ইচ্ছেকে নিয়ে ভেতরে আসে। গার্ডেনের দিকে এসে ইচ্ছে চিৎকার করে ওঠে রিয়ানকে দেখে। ও রিয়ানের কাছে যেতে গেলে আয়াশ ওকে ধরে হুমকি দেয়, যদি ও রিয়ানের কাছে যায় তাহলে রিয়ানকে মেরে ফেলবে। সেই ভয়ে ইচ্ছে আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায় না। কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়ে সে। রিয়ানকে আয়াশের গার্ডরা প্রচুর মেরেছে। রক্তাক্ত শরীরে মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে রিয়ান। যা সহ্য হচ্ছে না ইচ্ছের। আয়াশের কোনো ভাবান্তর না দেখে এবার সে আয়াশের পা জড়িয়ে ধরলো। চমকে উঠলো আয়াশ। ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখে ইচ্ছে ওর পা জড়িয়ে ধরে আছে।
-“আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি এরপর থেকে আপনি যা বলবেন, আমি তাই করব। কিন্তু দয়া করে রিয়ানকে ছেড়ে দিন আপনি। আমি আর কোনোদিনও ওর সাথে কথা বলবো না বলছি তো! প্লিজ ছেড়ে দিন ওকে।”

আয়াশ রাগী চোখে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে আবার রিয়ানের দিকে তাকালো। গার্ডদের ইশারা করে বললো হসপিটালে নিয়ে যেতে রিয়ানকে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ইচ্ছের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল নিজের সাথে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে ইচ্ছেকে টেনে বের করে হনহন করে ভেতরে ঢুকলো আয়াশ। দোতলায় নিজের রুমে ঢুকে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেললো ইচ্ছেকে। দরজা লাগিয়ে নিজের স্যুট খুলে ইচ্ছের সামনে বসে ওর চুলের মুঠি ধরে মুখটা উঁচু করলো। ব্যাথায় চিৎকার করছে ইচ্ছে কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না আয়াশ। এই মুহূর্তে নিজের রাগের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই তার।
-“সবার প্রতি তোর খুব দরদ তাই না! খুব দরদ সবার প্রতি! তুই ওই ছেলেকে এতটাই ভালোবাসিস যে তুই ওকে বাঁচানোর জন্য আমার পায়ে পড়তেও দ্বিতীয় বার ভাবলি না। এখন কোথায় গেল তোর এত এত আত্মসম্মান?”
-“আমার লাগছে ছাড়ুন আমাকে।”
-“লাগুক! লাগার জন্যই তো ধরেছি। সামান্য ক’দিনের ভেতরে এত মহব্বত জন্মে গেছে ওই রিয়ানের প্রতি! কি হলো জবাব দিচ্ছিস না কেন?”

আরেকটু জোরে চুলির মুঠি ধরতেই জোরে চিল্লিয়ে উঠলো ইচ্ছে। আয়াশের মুখের কাঠিন্যভাব দেখে আরো বেশি কান্না পাচ্ছে তার। ইচ্ছের চোখেরপানি আয়াশের অন্য হাতে পড়তেই হুঁশ ফিরলো তার। ইচ্ছের মুখের দিকে তাকিয়ে ওকে কাঁদতে দেখে এক ঝটকায় তাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গেল আয়াশ। অন্যদিকে ঘুরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে নিজের রাগকে শান্ত করার চেষ্টা করছে সে। আয়াশের হাত থেকে চুলের মুঠি আলগা হতেই চোখ মেললো ইচ্ছে।
-“আপনি একটা অমানুষ। পশুর থেকেও নিকৃষ্ট আপনি।”

রাগে-ক্ষোভে ঘৃণাভরা দৃষ্টি নিয়ে আয়াশের দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বললো ইচ্ছে। প্রায় সাথে সাথেই ইচ্ছের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর কাছে এসে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল গালে। থাপ্পড়টা এতটাই জোরে ছিল যে ইচ্ছে হুমড়ি খেয়ে নিচে পড়ে ছোট টেবিলের সাথে বারি খেলো। টেবিল থেকে কাঁচের গ্লাসটা নিচে পড়ে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়ে ভাঙা গ্লাসের কিছু অংশ ঢুকে গেল ইচ্ছের হাতে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বসে রইলো ইচ্ছে। চোখেরপানি তার এখনো বাঁধ মানছে না। আয়াশ হাত মুঠো করে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে বলে খেয়াল করেনি ইচ্ছের হাতের অবস্থা। ও তীক্ষ্ণ গলায় বললো,
-“এই মুহূর্তে বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে। নয়তো খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে তোমার সাথে।”
-“(….)”
-“কি হলো যাও!”

আয়াশ ধমকে উঠতেই কোনোমতে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে লম্বা পা ফেলে নিজের রুমের দিকে গেল সে। ইচ্ছে চলে গেছে বুঝতে পেরে নিজের হাতটাকে দেয়ালের সাথে জোরে বারি দিল আয়াশ। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসে পড়লো সোফায়। এখনো রাগ যায়নি তার। ঘরের সবকিছু ভেঙে ফেলতে মন চাইছে। চোখ বন্ধ করে বেশ কিছুক্ষণ জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো সে। মদের বোতল বের করার জন্য সোফা ছেড়ে উঠতেই খেয়াল করলো ভাঙা গ্লাসের পাশে একফোঁটা রক্ত লেগে আছে ফ্লোরে। মুহূর্তেই মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল আয়াশের। কিছু না ভেবে একদৌড়ে ইচ্ছের রুমের দিকে গেল সে।

বেডের সাথে হেলান দিয়ে হাঁটুর ভেতরে মুখ গুঁজে ফ্লোরে বসেছিল ইচ্ছে। এই মুহূর্তে তার চোখে পানি নেই; আছে একরাশ যন্ত্রণা আর আয়াশের প্রতি ঘৃণা। লোকটার আরো কত জঘন্য রূপ দেখা বাকি আছে তার সেটাই ভাবছে ইচ্ছে। হাতে টান পড়ায় মুখ তুলে দেখে ওর সামনে চিন্তিত হয়ে বসে আছে আয়াশ। ইচ্ছে অনুভূতিহীন চোখে একবার আয়াশের দিকে তাকিয়ে আবারও হাঁটুতে মুখ গুঁজে নিলো। ইচ্ছের হাতের অবস্থা দেখে করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো আয়াশ তার দিকে। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারলো না। উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে এসে আবারও হাঁটু মুড়ে বসলো ইচ্ছের সামনে। একটা কাঁচের টুকরো এখনো ঢুকে রয়েছে ইচ্ছের হাতে। আয়াশ একবার ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে কাঁচের টুকরোটা ধরলো বের করার জন্য। ওর হাত কাঁপছে। চোখ বন্ধ করে কাঁচের টুকরোটা টান দিয়ে বের করতেই ইচ্ছে চিৎকার করে উঠলো। নিজের জামা খামচে ধরে কেঁদে দিল সে। কাঁচ বের করতেই সেখান থেকে গলগল করে রক্ত পড়তে লাগলো। আয়াশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ব্যাথাটা ইচ্ছে না ও নিজেই পেয়েছে। তাড়াতাড়ি করে হাতের রক্ত পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল ইচ্ছের হাতে। ইচ্ছে চোখ বন্ধ করে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে আয়াশ খেয়াল করলো ইচ্ছের একগাল অসম্ভব লাল হয়ে আছে। নাকে রক্ত লেগে আছে। চমকে গেল আয়াশ। দু’হাতে ইচ্ছের গাল ধরে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোমার নাকে রক্ত কেন? কীভাবে ব্যাথা পেয়েছো নাকে?”
-“(….)”
-“কী হলো কথা বলছো না কেন! বলো কীভাবে হলো?”
ইচ্ছে চোখ মেলে আয়াশের দিকে তাকিয়ে ওর চেহারায় স্পষ্ট ভয়, অসহায়, কষ্ট দেখতে পেলো। কিন্তু এই লোকটাকে ও ঘৃণা করে। ভীষণভাবে ঘৃণা করে ও এই আয়াশ খানকে। ইচ্ছে তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
-“নিজে ব্যাথা দিয়ে আবার নিজেই জিজ্ঞেস করছেন ব্যাথা কীভাবে পেয়েছি? মজা করছেন আপনি আমার সাথে?”

থমকে গেল আয়াশ। বুঝতে পারলো যে তখন থাপ্পড় মারার ফলে এই অবস্থা হয়েছে ইচ্ছের। চোখ দুটো ভরে উঠলো ওর। কিন্তু কিছু বললো না। নাকের রক্ত পরিষ্কার করে দিল। গালেও ওষুধ লাগিয়ে দিল। ইচ্ছেকে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে বেডে বসিয়ে জামা-কাপড় বের করে দিল চেঞ্জ করে নেওয়ার জন্য। ইচ্ছের রুমের দরজা চাপিয়ে আয়াশ নিজেও বেরিয়ে গেল।

ফ্রেস হয়ে এসে আলমারি খুলে সেখান থেকে একটা ছবির এলবাম বের করে নিলো ইচ্ছে। বিছানায় বসে এলবামটা খুলে দেখতে লাগলো। পুরোটা এলবাম জুড়ে শুধু ওর বাবা ইউসুফের সাথে ওর ছবি। বাবা প্রচন্ড ভালোবাসতো ইচ্ছেকে। কিন্তু ঠিক মতো সময় দিতে পারতো না ইচ্ছেকে। আয়াশ খানের বাবার হয়ে কাজ করতেন তিনি। পরবর্তীতে একটা দূর্ঘটনায় আয়াশের বাবা মারা যাওয়ায় আয়াশের বাবার সমস্ত দায়িত্ব আয়াশের ঘাড়ে এসে পড়ে। এরপর থেকে আয়াশের বিশ্বস্ত লোক ছিলেন ইউসুফ আর আয়াশের হয়েই কাজ করতেন। ইচ্ছে ছোটবেলা থেকেই আলাদা ফ্ল্যাটে ন্যানির কাছে বড় হয়েছে। ওর বাবা ওর সাথে থাকতেন না। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে বা মাসে একবার করে দেখে যেতেন ওকে। ওর সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসতেন আসার সময়। ইচ্ছে কখনো এসবের জন্য ওর বাবার কাছে অভিযোগ করেনি। বরং নিজের বাবাকে বুঝতো ও। তাই বাবা যখনই আসতো এসব নিয়ে বাবাকে প্রশ্ন না করে নিজের মতো বাবার সাথে সময় কাটাতো। ইচ্ছে বরাবরই নিজের মতো করে স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখেছে। যেহেতু ওর বাবা ওর সাথে থাকতো না তাই ওর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার মতো কেউ ছিল না। যখনই টাকার প্রয়োজন হতো বাবাকে কল দিয়ে বললেই বাবা পাঠিয়ে দিতো। বাবার সাথে কম স্মৃতি থাকলেও সেগুলোই ইচ্ছের জীবনে বেস্ট স্মৃতি। ওর মা তো ওকে জন্ম দিয়েই পরপারে চলে গেছেন। তাই ওর জীবনে মাকে নিয়ে তেমন কোনো ইন্টারেস্ট নেই। ইচ্ছে নিজের বাবার ছবিতে হাত বুলিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আজ খুব মনে পড়ছে তার বাবার কথা।
-“বাবাই কোথায় তুমি? আমি আর পারছি না এসব সহ্য করতে। প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। বাবাই তোমার প্রিন্সেস খুব কষ্টে আছে। আই মিস ইউ বাবাই।”

কিছুটা স্বাভাবিক হতেই চোখের পানি মুছে ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার লক ধরে ঘুরাতেই খুলে গেল দরজা। ইচ্ছে অবাক হয়ে গেল দরজা খোলা পেয়ে। আয়াশ হয়তো দরজা লক করতে ভুলে গেছে এই ভেবে ও সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে আয়াশের রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় মুহিবের সাথে দেখা হলো ওর। ইচ্ছেকে দেখে হাসলো মুহিব। বিনিময়ে ইচ্ছেও মলিন হাসলো।
-“কেমন আছো ইচ্ছে?”
-“দেখতেই তো পাচ্ছ কেমন আছি। শুধু শুধু জিজ্ঞেস করে কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটে দিও না।”
চুপ হয়ে গেল মুহিব। ইচ্ছের কথার মানে বুঝতে পেরেছে ও। কিন্তু ওর হাতে কিছুই নেই। ইচ্ছে বললো,
-“তুমি বলো! তুমি কেমন আছো?”
-“ভালো। তা, ভাইয়ের রুমের সামনে কি করছো তুমি? কোনো দরকার ছিল?”
-“কোনো দরকার না থাকলে এমনি এমনি নিশ্চয়ই উনার চেহারা দেখার জন্য আসবো না আমি!”
-“এভাবে কেন বলছো! ভাইয়ের চেহারা কি খারাপ নাকি?”
-“তোমার ভাইয়ের ভালো চেহারাও আছে নাকি!”
-“(….)”
-“আমার একটু দরকারী কথা ছিল উনার সাথে।”
-“আচ্ছা তাহলে তুমি যাও ভাইয়ের রুমে। তোমার কথা বলা শেষ হলে নাহয় আমি যাবো।”
-“এ্যাজ ইয়্যর উইশ।”

ইচ্ছে নক না করেই আয়াশের রুমে ঢুকে গেল। রুমের আলো নিভানো। শুধু একটা ড্রিম লাইট জ্বলছে। ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় রুমের কোথাও আয়াশকে দেখতে পেলো না ইচ্ছে। কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে বেলকনিতে উঁকি দিল। নাহ! সেখানেও আয়াশ নেই। লোকটা গেল কোথায় হঠাৎ? ঘাড়ের উপর কারও গরম নিঃশ্বাস টের পেতেই জমে গেল ইচ্ছে। ওর বুঝতে বাকি রইলো না যে ওর পেছনে আয়াশ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু উনি তো রুমে ছিল না তাহলে! ওয়াশরুমে ছিল হয়তো। এই ভেবে হালকা একটু নড়েচড়ে পেছন ঘুরলো ইচ্ছে। আয়াশকে ট্রাউজারের পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাথা নিচু করে ফেললো ইচ্ছে। বুকের ভেতর সাহস সঞ্চয় করে নিয়ে বললো,
-“কলেজে আমার ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস চলছে। সপ্তাহখানেক বাদেই আমার সেমিস্টার শুরু হবে। তাই আমি আগামীকাল থেকে কলেজে যেতে চাইছি।”
-“যাতে তুমি আবারও ওই রিয়ানের সাথে ঢলাঢলি করতে পারো তার জন্য আমি তোমাকে কলেজে যাওয়ার পারমিশন দিব!”
-“আমার মনে হয় না আপনি আমাকে একা ছাড়বেন কলেজে। আর আপনি রিয়ানের যে জঘন্য অবস্থা করেছেন, এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়া ওর পক্ষে সম্ভব না। আর সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ও কলেজে আসবে না। আর আমি যখন কথা দিয়েছি যে আমি রিয়ানের থেকে দূরে থাকবো তখন আমি নিজের কথার খেলাপ করব না।”
-“তাহলে তুমি বলতে চাইছো তোমাকে বিশ্বাস করা যায় তাই তো!”
-“আমাকে বিশ্বাস করা না করা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমাকে শুধু কলেজে যাওয়ার অনুমতি দিলেই হবে।”

আয়াশ ইচ্ছের দিকে কয়েক পা এগিয়ে এসে ওর সাথে লেগে দাঁড়ালো। ইচ্ছে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে ফেললো। মুখের সামনে থেকে চুলগুলো একহাত দিয়ে সরিয়ে ইচ্ছের কানের পেছনে গুঁজে দিল আয়াশ। একহাত ওর গালে রেখে ওর ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে দিয়ে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-“দিলাম অনুমতি তোমাকে কলেজে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মনে রেখো আমার থেকে দূরে থাকলেও আমার নজর সবসময় তোমার উপরে থাকবে। তাই যে কোনো কাজ করার আগে ভেবে চিন্তে করবে। আর তোমার সাথে মুহিব যাবে কলেজে। পালানোর চেষ্টা ভুলেও করো না। কোনো লাভ হবে না তাতে। এই পুরো ব্যাঙ্গালোর শহরে তুমি আমার থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। আমি আয়াশ খান, এই পুরো ব্যাঙ্গালোর শহরের কিং।”

কথাগুলো বলেই ইচ্ছের কাঁধে ঠোঁট বুলিয়ে দিল আয়াশ। ইচ্ছে নিজের জামা খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ প্রথম ইচ্ছের এত কাছে আসেনি আয়াশ। এর আগেও বহুবার ওর কাছে এসেছে। আর অবশ্যই তা জোর করেই এসেছে। কিন্তু যখনই কাছে এসেছে শুধু কাঁধে চুমু খেয়ে বা কপালে-গালে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে আয়াশ ওকে। আয়াশ একটু দূরে সরতেই ইচ্ছে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো আয়াশ। সাথে সাথেই মুহিব ভেতরে ঢুকলো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here