##গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩৩_৩৪
(৩৩)
আরিয়ানের ঘুম ভাঙতেই তার রাতের কথা মনে পরে যায়।এখন তার নিজের উপরই রাগ হচ্ছে।
এমন একটি কাজ সে কি করে করতে পারে।
এখন তার কি করা উচিত সে বুঝতে পারছে না।কি করেই বা এখন সে অদ্রিতার মুখোমুখি হবে?সে তো এখনো অদ্রিতাকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। রাতে যা করেছে সব ঘোরের মধ্যে করেছে।সে এখন নিজেও বুঝছে না কিভাবে এততা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে যে নিজেকে কন্ট্রোল পর্যন্ত করতে পারেনি।এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।তবে কি,,,
উফফ,,,আমি আর ভাবতে পারছি না।মাথাটা অনেক ধরছে।এইসব ভেবে নিজের ভিতরে এক ধরণের অপরাধ বোধ কাজ করছে তার।
অদ্রিতা টেবিলে খাবার রেখে ফ্রেস হতে রুমে যায়।
রুমে গিয়ে দেখে আরিয়ান ডেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে টাই বাঁধছে।সে লজ্জায় আর আরিয়ানের দিকে তাকায় না।দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আরিয়ানও একনজর অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সে লজ্জা পাচ্ছে না বরং তার ভিতরে অপরাধ বোধ কাজ করছে। তাই সে টাই বেঁধে সেখানে আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে নিচে চলে যায়।অদ্রিতা ফ্রেস হয়ে রুমে ঢোকে। রুমের কোথাও আরিয়ানকে দেখতে পায় না।সে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।সে দ্রুত নিচে নেমে আসে। সবাইকে নাস্তা বেড়ে দেয় আর সে নিজেও খেয়ে নেয়। সবাই খেয়ে যার যার কাজে চলে যায় আর আরিয়ানও খেয়ে একমুহূর্ত দেরি না করে অফিসে চলে যায়।
সারাদিন খুব ভালো ভাবেই কাটে অদ্রিতার। আরিয়ানের মা-বাবা অনেক খুশি অদ্রিতার মতো ছেলের বউ পেয়ে আর আজ অদ্রিতাও অনেক খুশি আরিয়ানকে নিজের করে পেয়ে।
কিন্তু আরিয়ান একটু খুশি না।তার আজ কোন কাজেই মন বসছে না।নিজের উপরেই এখন তার বিরক্তি লাগছে।অসম্ভব রাগ হচ্ছে নিজের উপর।মন চাচ্ছে মাথা চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে। সে কি করে এমন একটি কাজ করতে পারে?
আরিয়ান আজ অনেক রাত করেই বাড়িতে আসে।কলিং বেল বাজাতেই অদ্রিতা দরজা খোলে দেয়। আরিয়ান কোন কথা না বলে সোজা উপরে উঠে যায়।অদ্রিতা মনে মনে ভাবছে, আজ আবার ওনার কি হলো?সকাল থেকে একবারও আমার সাথে বলেনি আর এখন এত রাত করে বাড়িতে এসেছেন। মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে অসম্ভব রেগে আছেন কিন্তু কেন?কাল রাতে তো সব ঠিকই ছিল।সে আর কিছু না ভেবে রুমে চলে যায়।রুমে যেতেই দেখে আরিয়ান ফ্রেস হয়ে শুয়ে আছে।সে আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসে।আজ সে নিজেই আরিয়ানকে জরিয়ে ধরে।কিন্তু আরিয়ান বিরক্ত হয়ে তাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় আর কিছুটা শান্ত ভাবেই বলে,,,,,,,,
আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না।আর এত ভনিতা করাও আমার পছন্দ না তাই সরাসরিই বলছি,
আমি বুঝতে পারছি না কথাটা তোমাকে কীভাবে বলবো? দেখো অদ্রিতা আমি গতরাতে যা করেছি তা তোমাকে মেনে নিয়ে বা ভালোবেসে করি নি।তখন আমি এক ধরনের ঘোরের মধ্যে ছিলাম।তাই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমা করার মতো না কিন্তু তবুও যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও।সত্যি এটাই যে আমি এখনো তোমাকে মেনে নিতে পারিনি।প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো।আমার থেকে দূরে থাকো।
আরিয়ানের কথা শুনে অদ্রিতা যেন আকাশ থেকে পড়লো।তার তো নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছে না। এখন মনে হচ্ছে সত্যিই তার ভাগ্যে সুখ লেখা নেই।তার মন ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গেছে।
এইগুলো কি বলছে আরিয়ান।এখন সে কি করবে।কি করে মেনে নিবে এইসব।কাল নিজেই তো আমার এতটা কাছে এসেছিলেন। আমাকে ওনার অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে নিয়েছিলেন আর আজ বলছেন সব ঘোরের মাঝে করেছেন। আমি এখন কি করবো? তবুও সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে বলে,
আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাই না।এই ধরনের মজা আমার একদম পছন্দ না। প্লিজ আমার সাথে আর এই রকম করবেন না।আমি আর সহ্য করতে পারবো না।আমাদের মাঝে তো সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে,তাই না।প্লিজ মজা করা বন্ধ করুন।আমার আর এইসব মজা ভালো লাগছে না।
আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি। আর এইটা কোন মজা করার বিষয় না যে আমি মজা করবো।আমি সিরিয়াস।কোন মজা করছি না আমি।এতক্ষন যা বলেছি তার সবই সত্যি,,,,,,,
অদ্রিতা তবুও ভাবে ওনী হয়তো হয়তো মজা করছেন।নিজের মনকে স্বান্তনা দেয়।আর কিছু না ভেবে আরিয়ানকে জরিয়ে ধরে।
আরিয়ান অদ্রিতাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হঠাৎই তার গালে জোরে চর মারে।
আরিয়ানের মুখটা রাগে পুরো লাল হয়ে গেছে।তাই রাগে চিৎকার করেই বলে,কতবার বলেছি যে আমার কাছে আসবে না।তবুও বারবার আমার কাছেই কেন আসছো?তোমার কি কোন লজ্জা-শরম নেই। কেমন গায়েপড়া স্বাভাবের মেয়ে তুমি?একদম আমার ধারে – কাছে ঘেসবে না।বলছি তো কালকে যা করছি সব ঘোরের মধ্যে করছি।মন থেকে তোমাকে আমি মেনে নেই নি।এক কথা কত বার বলবো।Don’t touch me. Stay away of me.demit
.
..
…
চলবে,,,,,
(কালকে আমি গল্প দিতে পারবো না,,,,,তাই কেউ ওয়েট করবেন না)
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩৪
আরিয়ানের চর খেয়ে অদ্রিতা কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে। তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে।সে তো কখনোই আরিয়ানের কাছে যায়নি।তার কাছে স্ত্রী অধিকারও চায়নি।
আরিয়ানতো নিজের থেকেই তাকে কাছে টেনে নিয়েছিল তবে!আমিকি খেলনা নাকি যে যখন মন চাইবে খেলবে যখন মন চাইবে না ফেলে দিবে।
আরিয়ানের কথাগুলো তার কানে বাজছে।এখন নিজেকে সত্যিই তার বেহায়া বলে মনে হচ্ছে।
সত্যিই তো, সে কি করে ভাবলো তার মতো কালো মেয়েকে আরিয়ান মেনে নিবে।ভালোবেসে কাছে টেনে নিবে।জীবনে সে কখনো এততা অপমানিত হয়নি যা আজ হয়েছে।এততা কষ্টও আর কোনদিন সে পায়নি।তবুও সে আরিয়ান কিছু বললো না।কিছুক্ষন ঐভাবে বসে থেকে বিছানা থেকে একটা কম্বল আর বালিস নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।আর এক মূহুর্তও সে আরিয়ানের সামনে থাকতে চায় না,,,,,,,,,
অদ্রিতা বেলকনিতে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
দরজা লাগানোর শব্দ শুনেই আরিয়ানের হুশ আসে।
রাগের মাথায় এই কথাগুলো বলা আর অদ্রিতাকে চর মারা আমার একদমই ঠিক হয়নি।আসলে তো দোষটা তো তারই। নিজেকে তার কন্ট্রোল করার প্রয়োজন ছিল। তাই সে বেলকনিতে গিয়ে অদ্রিতাকে কয়েকবার ডাক দেয় কিন্তু অদ্রিতা কোন কথা বলেনি। তাই আরিয়ানও আর কিছু না বলে বিছানায় এসে সুয়ে পরে,,,,,,,,
এখন ডিসেম্বর মাস,এমনেই প্রচন্ড শীত পড়ছে।
বেলকনিতে খোলা- মেলা পরিবেশে মনে হচ্ছে ঠান্ডাতা আরও দ্বি-গুণ বেশি লাগছে।তার উপরে সে ফ্লোরের উপরে পাতলা একটা কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে।
শীতে সারা শরীর তার থর থর করে কাঁপছে।কিন্তু সেদিকে তার বিন্দু পরিমাণ খেয়ালও নেই।অদ্রিতা তার গালে হাত দিয়ে অঝোরে কান্না করছে।সে স্বপ্নেও কোনো দিন ভাবেনি তাকে এইসব সহ্য করতে হবে।এততা কষ্ট তার ভাগ্যে লিখা আছে।সে তো বেশি কিছু চায়নি।শুধু একটু ভালোবাসাই তো চেয়েছে।তবে কেন তার সাথে এইসব হচ্ছে?আসলে সব দোষ আমারই। কি করে আমি ভাবলাম আমার মতো কালো মেয়েকে ওনী মেনে নিয়েছেন।কি করে ভাবতে পারলাম ওনী আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছেন?ওনী তো ঠিকই বলেছেন।আমি কেমন মেয়ে,,,ছিঃ ছিঃ……… আমার এখন নিজের উপরোই ঘৃণা হচ্ছে। কি করে আমি ওনার কাছে গিয়েছি।ওনী না করা সত্বেও কি করে আমি ওনাকে জরিয়ে ধরলাম।অনেক হয়েছে আর নয়।আমি আর কখনো ওনার কাছে যাবো না।স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আমি কখনো ওনার সামনে দাঁড়াবো না।আল্লাহ কেন তুমি আমার সাথে এমন করছো?
যখন কখনো আমি ওনার কাছে স্ত্রী হওয়ার অধিকার ও মর্যাদা পাবো না তবে ওনার সাথে আমার বিয়েটা কেন হলো?জীবনে আমার আর কিছুই চাই না।আর কখনো আমি বিন্দু পরিমাণ সুখের আশা করবো না।সারা রাত বেলকনিতে সুয়ে কান্না করে,কান্না করতে করতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পরেছে তা মনে নেই। সকালে ফজরের আজান শুনে ঘুম ভেঙে যায়।রুমে ঢুকে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।ফ্রেস হয়ে,,, ওজু করে এসে নামাজ পরে নেয়।
নামাজ পরা শেষ হলে সে আর একমুহূর্তও রুমে থাকে না।সাথে সাথেই বাহিরে চলে যায়,,,,,,,,
বাহিরে এসে তার ভালো লাগছে না।আজ তার অনেক কষ্ট হচ্ছে।এই প্রথম এমন হচ্ছে তার রান্না করতেও একদম মন চাচ্ছে না৷ তাই সে খালাকে ডাক দিয়ে বলে আজ সকালে রান্না করতে।
খালা অবাক হয়ে বলে, বউমনি তুমি কি অসুস্থ? কিছু হয়েছে তোমার।ম্যাডামকে ডাক দিব?
অদ্রিতা শান্ত স্বরে বলে, আমি ঠিক আছি।কিছু হয়নি,,,,
আমি তো প্রতিদিন তোমাকে বারন করি।তোমাকে রান্নায় সাহায্য করতে চাইলেও রাজি হও না।আজ নিজে থেকে বলছো রান্না করতে তাই জিজ্ঞেস করলাম।
অদ্রিতা বিরক্তির স্বরে বলে, এমনি আজ রান্না করতে মন চাচ্ছে না। আর কিছু না বলে সোজা বাগানে চলে যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি বেলকনির দরজা খোলা।তাই সে সাথে সাথেই বেলকনিতে চলে যাই। কিন্তু গিয়ে দেখে সেখানে অদ্রিতা নেই। পরে পুরো রুম খোঁজেও অদ্রিতাকে কোথাও পায় না।তাই সে নিচে রান্নাঘরে চলে যায়।মনে মনে ভাবে এইসময় তো অদ্রিতা সবসময় রান্নাঘরে থাকে তাই তাকে সেখানেই পাওয়া যাবে।কিন্তু রান্নাঘরে গিয়েও তাকে দেখতে পায় না সেখানে খালা রান্না করছে।পুরো বাড়ি খোঁজেও কোথাও যখন অদ্রিতাকে পায় না তখন আবার সে রান্নাঘরে যেয়ে খালাকে জিজ্ঞেস করে অদ্রিতাকে কোথাও দেখেছে কিনা?খালা একটু অবাক হয়,আরিয়ান বাবা তো কখনো বউমনি কথা জিজ্ঞেস করে না।তবে আজ হঠাৎ,,,,, তাই একটু অবাক হয়েই বলে,বউমনিকে বাগানের দিকে যেতে দেখিছি।
আরিয়ান বাগানে গিয়ে দেখে অদ্রিতা বাগানের এক পাশে বসে আছে। ফুল গাছগুলোর দিকে এক ধ্যানেই তাকিয়ে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। বাহিরে প্রচন্ড শীত পরছে।কুয়াশার কারণে ভালো করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।তার উপরে অদ্রিতার গায়ে শুধু একটা সুতি শাড়ি পরা।কোনো গরম কাপড় নেই।মনে মনে বলছে,মেয়েটা পাগল নাকি।এই শীতে কে বলছে এত সকালে বাগানে বসে থাকতে?আরিয়ান আর কিছু না ভেবে সামনে গিয়ে অদ্রিতার গায়ে চাদরটা দিয়ে দেয় গায়ে কিছু দেওয়ার কারণে অদ্রিতার ভাবনার ছেদ পরে।সামনে তাকাতেই দেখে আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে।সেও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়,,,,,,,,
অদ্রিতা দাঁড়াতেই আরিয়ান ভালো করে তার দিকে তাকায়।তার মুখের দিকে তাকাতেই দেখে গালে চরের দাগ এখনো আছে।কালো হয়ে গেছে।তার এখন নিজেই খারাপ লাগছে।এততা জোরে চরটা লাগবে সে বুঝতেই পারেনি।আসলে রাগের কারণে সে এমনটা করেছে।এখন বুঝতে পেরেছে রাগের বশে অদ্রিতাকে চর মারা তার ঠিক হয়নি।সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অদ্রিতা বলে উঠে,
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩৫
অদ্রিতা দাঁড়াতেই আরিয়ান ভালো করে তার দিকে তাকায়।তার মুখের দিকে তাকাতেই দেখে গালে চরের দাগ এখনো আছে। কালো হয়ে গেছে।তার এখন নিজেরই খারাপ লাগছে। এততা জোরে চরটা লাগবে সে বুঝতে পারে নি।আসলে রাগের মাথায় সে এইটা করে ফেলেছে।এখন বুঝতে পারেছে রাগের বশে অদ্রিতাকে চর মারা তার ঠিক হয়নি।সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অদ্রিতা বলে উঠে,
আপনার কোন দোষ নেই।এই চরটা আমার প্রাপ্য ছিল।সত্যিই যা হয়েছে অনেক ভালো হয়েছে।আর একদম চিন্তা করবেন না আজকের পর থেকে আমি কখনো আপনার কাছ থেকে স্ত্রীর অধিকার চাইবো না।আর কখনো আপনার কাছে আসবো না।আমি এতোটাও বেহায়া না যে আপনার না করা সত্বেও আপনার কাছে যাবো। নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।যা হয়েছে সব ভুলে যান।যেখানে আপনার কোন ভুল নেই সেখানে আপনার ক্ষমা চাওয়া সাজে না।আরিয়ানকে কিছু সুযোগ না দিয়ে সে বাগান থেকে সোজা রুমে চলে আসে।
আরিয়ান স্তব্ধ হয়ে যায় অদ্রিতার কথায়।সে কখনো ভাবতেই পারেনি অদ্রিতা তাকে এইভাবে কথা শুনাতে পারে।অদ্রিতা যে এততা রাগ করতে পারে নে ভাবতেই পারেনি।তার সাথে এইভাবে কথা বলছে। আগে তো কখনো এভাবে তার সাথে কথা বলেনি।তাকে তো সে একটা চরই মেরেছে।স্বামী হিসেবে সে তার স্ত্রীকে তো মারতেই পারে তাই বলে আমার সাথে এইভাবে কথা বলা তার ঠিক হয়নি।এটা সে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না।এখন তার অদ্রিতার উপরই রাগ হচ্ছে।সে না হয় রাগে একটা ভুল করে ফেলেছে তাই বলেকি! এখন তো ভুল বুঝতে পেরেছি।এখন যখন ক্ষমা চাইতে এসেছি,ওল্টো আমাকে কথা শুনিয়ে চলে গেছে। আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না।আরিয়ান আর কিছু না ভেবে রুমে চলে যায়।
রুমে গিয়েই সে ফ্রেস হতে ওয়াশরুমে চলে যায়।
অদ্রিতা বেলকনিতেই দাঁড়িয়ে ছিল।আরিয়ান যে রুমে ঢুকেছে তা সে বুঝতে পেরেছে তবুও সে ভেতরে আসেনি। আরিয়ান ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে।পরে রেডি হয়ে খাবার টেবিলে চলে যায়। অদ্রিতাও ফ্রেস হয়ে নিচে চলে যায়।নিচে গিয়ে ফ্রেস হয়ে সবাইকে খাবার বেড়ে দেয় ও নিজেও খেতে বসে।তার শ্বাশুড়ি অদ্রিতার দিকে তাকাতেই দেখে তার গাল কালো হয়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে তাকে কেউ চর মেরেছে।তাই তিনি জিজ্ঞেস করেন,তোর গাল কালো হয়ে আছে কেন?কি হয়েছে বল?
তার শ্বাশুড়ির কথা শুনে তার শ্বশুরও তার দিকে তাকায় আর বলে।
অদ্রিতার শ্বশুড় কিছুটা অবাক হয়ে বলে,সত্যিই তো। দেখে তো মনে হচ্ছে চরের দাগ।আরিয়ানকি তোমাকে চর মেরেছে।বলো আমাকে এইসব আমার বাড়িতে আমি মেনে নিবো না।
অদ্রিতা গালে হাত দিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায় আর মনে মনে বলে,এইসব আমার প্রাপ্য ছিল তাই হয়েছে। এতে কারো কোন দোষ নেই।
আরিয়ান এখন ভয় পাচ্ছে, অদ্রিতা যদি সত্যিটা বলে দেয় তবে সে নিজেই তার বাবা- মার কাছে মুখ দেখাতে পারবে না।তাদের কাছে সে ছোট হয়ে যাবে।তাছাড়া তার বাবা অনেক রাগি।মেয়েদের অসম্মান করা তাদের গায়ে হাত তোলা তিনি পছন্দ করেন না।সে দেখেছে তার বাবা- মা যতোই ঝগড়া করুক না কেন তার বাবা কখনো তার মাকে অসম্মান করেনি বা তার মার গায়ে হাত তোলে নি।এখন যদি জানে সে এটা করেছে তবে যে কি করবে তা ভাবতে পারছে না!তাই সে অসহায় দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকায়।
অদ্রিতা কিছু না বলায় তার শ্বশুর আবার জিজ্ঞেস করে,
অদ্রিতার শ্বাশুড়ি জোরে ধমকের স্বরে বলে,তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি।উত্তর দাও,,,
অদ্রিতা ভাবনা থেকে বের হয়ে বলে,না বাবা,,,,ওনী আমাকে মারেনি।রাতে ঘুমানোর সময় গালে মশা বসেছিল।মশা মারতে গিয়েই চর মারি, বুঝতে পারিনি এততা জোরে লাগবে। কি বলবে তা বুঝতে না পেরে এইটা বলে।
আরিয়ান যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।তার শ্বশুর- শ্বাশুড়ির কেন জানি অদ্রিতার কথা বিশ্বাস হলো না তবুও আর কিছু না বলে খেয়ে চলে গেলেন।
আরিয়ানের খাওয়া শেষ,সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আছে। কি করে সে অদ্রিতাকে ধন্যবাদ দিবে তা বুঝতে না পেরে কিছুটা ইস্তত করেই অদ্রিতাকে ডাক দিয়ে বলে, কাল রাতের জন্য সরি।সত্যিই আমি তোমাকে চর মারতে চাইনি। রাগের বশে চর মেরে ফেলেছি।আর এখনকার জন্য অনেক ধন্যবাদ,,,
আরিয়ানের কথা শুনে অদ্রিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় আর বলে,আপনার তো কোন দোষ নেই তাই সরি বলতে হবে না।আর বাকি রইল ধন্যবাদ দেওয়ার কথা আমার মতো কালো মেয়েকে ধন্যবাদ দেওয়া আপনাকে মানায় না।আর যা- ই হক আপনি অফিসে যান। আমার সাথে কথা বলে অযথা আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়।
আমার সাথে রাগারাগি।সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এমন করছে। সত্যিই মেয়েরা এমনই হয়।অল্পতেই একটু বেশি রিয়েক্ট করে।একটু বেশিই ন্যাকামি করে,অসহ্য। সে রেগে অফিসে চলে যায়,,,,,,,
অফিসে ঢুকেই সে নিজের কেবিনে চলে যায়। আজ তার মুডটা অনেক খারাপ।সবকিছুই অসহ্য লাগছে তার।অদ্রিতার উপর এখন তার অনেক রাগ হচ্ছে। তবুও কেবিনে গিয়ে একটি ফাইল হাতে নেয়।তা খোলে দেখার আগেই দরজায় কেউ লক করে,
আরিশা নম্র স্বরে বলে, May i come in,sir?
yes,,,,,come in,,
আরিশা ভিতরে ঢুকেই আরিয়ানকে বলে, আপনাকে নিলয় স্যার ডাকছিলেন, কিছু জরুরি কাজ কিছু ছিল।দ্রুত যেতে বলেছেন,,,,,,
আরিয়ানঃ হ্যাঁ,,,যাচ্ছি। আরিয়ান নিলয়ের কেবিনের দিকে যায়,, আর মনে মনে ভাবে স্যার হঠাৎই আমাকে কেন ডাকছেন?
.
..#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩৬
আরিয়ান নিলয়ের কেবিনে গিয়ে দরজার নক করে বলে,”May i come in,sir?”
নিলয় একবার সেদিকে তাকিয়ে বলে,”Yes,come in.আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা ছিল তাই ডেকে পাঠালাম।চেয়ারে বসুন,,,,
আরিয়ান চেয়ার বসেই বলে,স্যার কি কথা বলেন।
আমাকে দরকারি একটা প্রোজেক্টের কাজে কিছু দিনের জন্য বিদেশে যেতে হবে।জানেনই তো আব্বু একটু অসুস্থ।ওনার পক্ষে সবকিছু সামলানো সম্ভব নয়।তাই আমি যতদিন বিদেশে আছি এখানকার যাবতীয় কাজ আপনাকে দেখাশুনা করতে হবে।কোন পমলেম হলে আমাকে ফোন করতে পারেন তাছাড়া মি. সালাউদ্দিন তো আছেনই তাকে বলতে পারেন।
আরিয়ান সৌজন্যেতা প্রকাশ করে বলে, আপনার কোন টেনশন করতে হবে না।আমি সব সামলাতে পারবো। আপনার আসতে কতদিন সময় লাগবে?
এইতো ১মাস বা তার চেয়ে একটু কম।আচ্ছা আপনি এখন আসতে পারেন।
জ্বি, স্যার। সে আর কিছু না বলে নিলয়ের কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।
নিলয় কিছু দরকারি ডকুমেন্ট নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।বিকালে তার ফাইট,আরিয়ানও কেবিনে ঢুকে মনোযোগ দিয়ে তার কাজ করতে থাকে। সব কাজ প্রায় শেষ।সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর মাএ একটা ফাইলের কাজ বাকি আছে পরে সে বাড়িতে চলে যাবে।এমন সময়ই তার কেবিনে একজন ঢুকে।তাকে দেখেই আরিয়ান অবাকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায়। এখানে তাকে দেখবে সে আশাই করেনি!তাই কিছুটা অবাক হয়েই বলে রাইশা,তুমি!এতদিন পরে হঠাৎ করে এখানে কেন এসেছো?
রাইশা একটু ন্যাকামি করে বলে,”কেন?আমাকে দেখে কি তুমি খুশি হওনি।আচ্ছা তবে আমি চলে যাচ্ছি।বিরক্ত করার জন্য সরি,ভালো থেকো।”
আরে বাবা রাগ করছো কেন?আমি কি বলছি আমি বিরক্ত হয়েছি।এতদিন পরে তোমাকে দেখে তো আমি পুরোই সারপ্রাইজড হয়েগেছি।কিন্তু তুমি না নিউইয়র্কে ছিলে।সেখান থেকে কবে আসলে?
এইতো এক সপ্তাহ হয়েছে।
তবে এতদিন আসোনি কেন?আমাকেও তো কিছু জানাওনি।তোমাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে যেতাম।
রাইশা মজা করে বলে,”শুনেছি তুমি নতুন বিয়ে করেছো তাই আর ডির্সটাব করিনি।নতুন বিয়ে বলে কথা,কি করে ডির্সটাব করি বলো।তাই তোমাকে কিছু জানাইনি।আর আজ তো এসেছি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে।
বিয়ের কথা শুনেই আরিয়ানের মুখটা কালো হয়ে যায়। তার অদ্রিতার কথা মনে পরে যায়।অদ্রিতার কথা মনে হতেই সকালের কথা মনে পরে যায়। সকালে তাকে এইভাবে কথা শুনানো অদ্রিতার একদম উচিত হয়নি।তার মন খারাপ হয়ে যায়।
মন খারাপ করেই বলে,তুমি কি করে জানলে যে আমি বিয়ে করেছি?
তুমি বলোনি তো কি হয়েছে।তোমার সব খবরই আমি রেখেছি।তা তুমি নাকি একটা কালো মেয়েকে বিয়ে করেছো! তোমার তো কালো মেয়ে পছন্দ না।তবে বিয়ে করলে যে?
আরিয়ান মন খারাপ করে বলে,”বিয়েতে আমার কোন মত ছিল না।মা-বাবা অনেক জোর করে ওর সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে।বুঝলাম না অদ্রিতাকে ওনাদের এত ভালো কি করে লাগলো যে আমার না করা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে ওকে আমার বিয়েটা করতেই হলো।বাবার এক কথা আমি কথা দিয়ে ফেলেছি বিয়ে তোকে ওই মেয়েকেই করতে হবে।আমি কি করতাম বলো তাই বাধ্য হয়েই বিয়েটা আমার করতে হয়েছে।
রাইশা বিষন্নতা ভরা কন্ঠে বলে,”ওহ আচ্ছা।আমার জন্যই হয়তো এমন হয়েছে।আমি যদি মডেলিং এর কোর্স করার জন্য নিউইয়র্কে না যেতাম তবে তোমাকে হয়তো ওই মেয়েকে বিয়ে করতে হতো না।তাই না?
আরিয়ান মন খারাপ করে বলে,”হুমম,তুমিই বলো আমার মতো একজনের সাথে কি এমন মেয়েকে মানায়!”
একদমই না।তোমার সাথে ওর মতো মেয়েকে একদমই মানায় না।তোমার সাথে তো আমার মতো সুন্দরী, মর্ডান আর স্মার্ট মেয়েকেই মানায়।হা হা,,,
এখন আর বলে কি লাভ,ছেড়ে তো চলে গিয়েছিলে।তখন তো আমার কথা ভাবোনি।এখনকি এইসব কথার কোনো মূল্য আছে বলো?
সরি,এমন করে বলছো কেন?তুমি তো জানোই একজন বড় মডেল হওয়া আমার ছোট বেলার স্বপ্ন ছিল।তার জন্য আমি অনেক কষ্টও করেছি।
নিউইয়র্কে গিয়ে তার জন্য কোর্স কমপ্লিট করার ইচ্ছে ছিল আর তাই যখন আমি চান্সটা পেয়ে যায় তা আর ছাড়তে পারি নি।ছোটবেলার স্বপ্ন বলে কথা কি করে ছেড়ে দিতাম বলো? তাইতো আমাকে যেতে হলো।আমার কেরিয়ার বলে কথা। এখন দেখো আমি অনেক বড় একজন মডেল। বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছি।
আরিয়ান বিষন্নতার স্বরে বলে,”হুমম,অনেক ভালো। ”
রাইশা ন্যাকামি করে বলে,”দেখো আমি এতবছর পরে এলাম তবুও তুমি মন খারাপ করে আছো।আচ্ছা এখন তো প্রায় ৮ টা বাজে চলো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করে আসি।কতদিন হলো একসাথে ডিনার করা হয় না।নাকি বাড়িতে বউ ওয়েট করছে।
ছাড়ো ওর কথা।এই ফাইলেই কাজটা কমপ্লিট করি পরে একেবারেই বের হবো। একটু ওয়েট করো,প্লিজ। আমার আর বেশি সময় লাগবে না,জাস্ট আধা ঘন্টা লাগবে।
রাইশা মুচকি হেসে বলে,” Yes,obviously.তুমি কাজটা কমপ্লিট করো আমি ওয়েট করছি। কোনো পবলেম নাই।”
আচ্ছা, ধন্যবাদ।
উহু,এখন আর কোন কথা নয়।আগে কাজটা কমপ্লিট করো পরে অনেক কথা হবে।
আরিয়ান আর কিছু বলে না মনোযোগ দিয়ে কাজটা করতে থাকে। খুব দ্রুতই কাজটা কমপ্লিট করে তার পরে রাইশাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যায় ডিনার করতে।
শহরে মাঝেই রেস্টুরেন্টটা তবুও তেমন হইচই নেই। একবারে নিরিবিলি পরিবেশ।রেস্টুরেন্টাও অনেক বড় আর সুন্দর।এমন একটা রেস্টুরেন্টে গেলে যে কারোই ভালো লাগবে।রেস্টুরেন্টে ঢুকেই আরিয়ান বলে,”
তোমার এই রেস্টুরেন্টের কথা মনে আছে না ভুলে গেছো।”
হুমম,মনে থাকবে না কেন? আর তুমি কি করে ভাবলে এই রেস্টুরেন্টের কথা আমি ভুলে যাবো।এইখানেই তো তুমি আমাকে প্রথম প্রপোজ করছিলে।আর আমরা অনেক ভালো মুহূর্ত এখানে অতিবাহিত করেছি।কি করে সেই সব কিছু ভুলবো বলো?এগুলো কি ভুলা সম্ভব!
আরিয়ান কিছুটা মন খারাপ করে বলে,”হ্যাঁ,সেইদিন গুলোই অনেক ভালো ছিল।তাই না?”
আচ্ছা সরি,আমি কি করতাম বলো।এত বড় অফার পেয়ে কি করে ছেড়ে দিতাম?আমার ছোটবেলার ড্রিম কি করে ভুলে যেতাম বলো?তাই পারিনি সুযোগটা হাত ছাড়া করতে। মা- বাবা অনেক সাপোর্ট করেছে। তাদের জন্যই আমি আজ এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি।তাদের একমাত্র মেয়ে হিসেবে আমার কোন চাওয়াই তার অপূর্ণ রাখেনি।এখন আমরা নিউইয়র্কে স্যাটেল।
অনেক ভালো।তো বাংলাদেশে কি মনে করে?
রাইশা মজা করে বলে,”তোমার জন্য এসেছি। তুমি তো ভালো নেই।তুমি খারাপ আছো শুনে কি করে থাকতে পারি বলো?তাই তো চলে এলাম,,,,,
.
..
…
চলবে,,,,,,,
…
চলবে,,,,,,,,,