#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ৬
“”তুলি!শীতের পোশাক না পড়ে এতো কাঁপছিস কেনো!তুই যে ভাবে কাঁপছিস!তোর কাঁপা কাঁপিতে দেখা যাবে পুরো বিশ্বে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়ে গেছে,জলদি শীতের পোশাক পড়ে আয়””
সুজনের কথা শুনে সবাই একসাথে খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,তুলি খাবার খাওয়া বন্ধ করে রাগী লুক নিয়ে সুজনের দিকে চেয়ে মায়ের উদ্দেশ্য কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”মা!সবাইকে বলে দিও!আমাল ব্যাপালে কেউ যেনো নাক না গলায়,আমাল খাওয়া শেষ আমি আসছি””
তুলি রেগেমেগে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে গেলো,,,সুজন তুলির এমন বিহেভ দেখে রাগে ফেটে পড়লো,,,তুলির যাবার পথে চেয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে মনে মনে বললো,,,
“”আর কিছুদিনের অপেক্ষা!তারপর দেখবো তোর কতো জেদ,তুই সবার সামনে আমাকে এভয়েড করলি!এর ফল তো তোকে ভোগ করতেই হবে তুলি””
সবাই চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলো,,,রিদানের মা রিয়াকে দিয়ে রিদান আর বউয়ের খাবারটা ঘরে পাঠিয়ে দিলো,,,তুলি একটা রিকশা ডেকে রিকশায় চড়ে বসলো,,,ব্যাগ থেকে বোরখা বের করে রিকশায় বসে গায়ে পড়লো,,,তড়িঘড়ি করে হেজাব দিয়ে মুখ আঁটকে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আমি আমাল পলিক্ষায় সফল হয়েছি,আমাল মন কখনো মিথ্যা বলেনি,আপনি আমায় ভালোবাসেন কিন্তু স্বীকাল কলেন না,এবাল দেখেন!এই তুলি কি কলে!””
মনে মনে দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে রিকশার ভাড়া মিটিয়ে কোচিং এ ঢুকে গেলো,,,শাহানাজ বেগম আর রোকসানা বেগম সুজনের সামনে চুপচাপ বসে আছে,,,তুলি সুজনকে এভয়েড করায় রাগে সুজনের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে,,,
এদের তিনজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজ করছে,,,রাগে সুজনের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে দেখে,,,রোকসানা বেগম ভয়ে সুজনকে কিছু বলতেও পারছেনা,,,শাহানাজ বেগম দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিরবতা কাটিয়ে বললো,,,
“”সুজন!তুলি দিন দিন বড্ড অবাধ্য মেয়ে হয়ে যাচ্ছে,কারো কথার কোনো মূল্য দিতে চাই না,তোমার মামা বেঁচে থাকলে হয়তো এতোটা অবাধ্য হতোনা,আমার একটা মাত্র সন্তান!আমি ভয়ে তুলিকে শাসনও করতে পারিনা””
রোকসানা বেগম শাহানাজ বেগমের কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে বললো,,,
“”আমারও তাই মনে হয় শাহানাজ,সুজনকে দেখলে তুলি ভয়ে কুঁকড়ে যেতো!সেই মেয়ে কি না সুজনের মুখে মুখে কথা বলছে!সুজনের কোনো কথায় যেনো ওর গায়ে লাগছেনা!””
সুজন চুপচাপ নিজের রাগ কন্ট্রোল করে এদের কথা শুনতে লাগলো,,,শাহানাজ বেগম অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে মৃদু স্বরে বললো,,,
“”সুজন!আমি আর অপেক্ষা করতে চাই না,তোমার জন্য এতোদিন সব কিছু লুকিয়ে রেখেছি,কিন্তু আজ তুলির কথাবার্তা শুনে আমার একটু ভালো লাগেনি,আমি তুলিকে তোমার হাতে তুলি দিতে চাই,তুলিকে একমাত্র তুমিই সামলাতে পারবে””
সুজন শাহানাজ বেগমের কথা শুনে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে শাহানাজ বেগমের দিকে একপলক চেয়ে রোকসানা বেগমের দিকে চেয়ে রইলো,,,রোকসানা বেগম সুজনের চাহনি দেখে স্মিত হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”তুমি শক্ত হাতে তুলিকে সামলানোর জন্য তৈরি হও,আমার মনে হয়!তুলির ডাক্তার হওয়াটা তোমার উপর নির্ভর করছে!তুলিকে গাইড করার জন্য একজন শক্ত গার্ডিয়ান প্রয়োজন,আর সেটা একমাত্র তুমিই পারবে””
সুজন দুজনের কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”মা!তুলির উচ্চ মাধ্যমিক এক্সাম পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি,তারপর কিছু একটা ভেবে দেখা যাবে,এখন এসব নিয়ে ভাবলে তুলির পড়াশোনার ক্ষতি হবে,তাই এখন এসব ভাবা বন্ধ করো””
সুজন কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো,,,শাহানাজ বেগম আর রোকসানা বেগম সুজনের যাবার পথে চেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো,,,সুজন দরজায় গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে মৃদু স্বরে বললো,,,
“”ছোট মামী!তুলির কোচিং এর ঠিকানাটা আমায় একটু বলো””
শাহানাজ বেগম তুলির কোচিং এর ঠিকানা বললে সুজন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,ঠিকানা অনুযায়ী তুলির কোচিং এর পাশে একটা টংয়ের দোকানে নিজেকে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,,,কোচিং শেষে সবাই বেড়িয়ে গেলে দারোয়ান গেটে তালা ঝুলিয়ে দিলো,,,
সুজন দূরে দাঁড়িয়ে সবাইকে বের হতে দেখলো কিন্তু তুলিকে বের হতে দেখলোনা,,,সুজন কপাল কুঁচকে কিছু একটা ভেবে চারপাশে চোখ বুলিয়ে তুলিকে খুঁজতে লাগলো,,,কিন্তু তুলিকে কোথাও দেখতে না পেয়ে দ্রুত রিকশা নিয়ে তুলির আগেই বাসায় ফিরে গেলো,,,
তুলি ওর বন্ধুদের সাথে ফুচকা খেয়ে তারপর রিকশায় উঠে বসলো,,,গা থেকে বোরখা খুলে হিজাব সহ বোরখাটা আবার ব্যাগে রেখে দিলো,,,মনে মনে দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে রিকশার ভাড়া মিটিয়ে বাসায় ঢুকতেই সুজন তুলিকে দেখে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”দাঁড়া!কোচিং এর নাম করে কোথায় গিয়েছিলিস তুই!আমি তোর কোচিং এ গিয়েছিলাম,কিন্তু তুই কোচিং এ ছিলিস না””
সুজনের কর্কশ কন্ঠ শুনে সবাই ড্রয়িং রুমে ভীর জমালো,,,তুলি শাহানাজ বেগমের দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে সুজনের উদ্দেশ্য কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”মা!আমি কালো কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয়,আমাল পিছনে কি তুমি সিআইডি লাগিয়ে দিয়েছো!উফ অসহ্য!এই বালিতে আমি কি শান্তি মতো কিছুই কলতে পালবোনা!
কথাগুলো বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কাঁধের ব্যাগটা ছুড়ে সোফার উপর ফেলে দিলো,,,তুলির কথা শুনে রাগে সুজনের চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো,,,তুলি রাগী লুক নিয়ে সুজনের দিকে চেয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”মা!আমি আল এই বালিতে থাকতে চাই না,যাল সাথে পালো আজই আমাল বিয়েল ব্যাবস্থা কলো,আমি আল পড়াশোনা কলবোনা,আমি ডাক্তাল হবো না””
তুলির কথায় সবার চোখ গুলো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো,,,একটা মেয়ে কতটা নির্লজ্জ হলে নিজের বিয়ের কথা নিজেই সবার সামনে বলতে পারে,,,শাহানাজ বেগম তুলির কথা শুনে অসহায় দৃষ্টিতে সুজনের মুখের পানে চেয়ে রইলো,,,
সুজন নিজেই তুলির কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,তুলির কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছেনা,,,তুলি নিজের রুমে যেতে গিয়ে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সুজনের দিকে চেয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”মা!আমি লুমে গেলাম,তুমি বিয়েল ব্যবস্থা কলো,আমি যেকোনো ছেলেকে বিয়ে কলতে লাজি,আজ যদি আমাল বিয়ে না দাও!আমি সুইসাইড কলতে বাধ্য হবো””
কথাগুলো বলে গটগট করে হেঁটে নিজের রুমে চলে গেলো,,,দরজা ভিতর থেকে লক করে ওয়াশরুমে ঢুকে পানির টেপ ছেড়ে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো,,,শাহনাজ বেগম তুলির ডিসিশন শুনে কাঁদতে লাগলো,,,সুজন তুলির এমন ডিসিশনে কপাল কুঁচকে মনে মনে বললো,,,
“”হঠাৎ করে বিয়ের ভূত মাথায় চাপলো কেনো!তারমানে কি তুলি আমাকে ব্ল্যাকমেল করছে!ও আচ্ছা!আমি তুলিকে ভালোবাসি কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করছে””
রোকসানা বেগম শাহানাজ বেগমকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো,,,সুজন তুলির রুমের দিকে চেয়ে রাগী লুক নিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে মনে মনে বললো,,,
“”তোর বিয়ে করার খুব সখ জেগেছে না!তোর বিয়ের সখ যদি আমি না ঘুচিয়েছি তো আমার নাম ও সুজন নয়””
বাসার সব মেয়েরা তুলির দরজা ধাক্কাতে লাগলো,,,বাসার ছোট বড় সবাই রিকোয়েস্ট করলো দরজা খোলার জন্য,,,কিন্তু তুলি দরজা খুলছেনা না দেখে রিদান মুচকি হেঁসে এগিয়ে গেলো,,,দরজায় মৃদু ধাক্কা দিয়ে আদুরে গলায় বললো,,,
“”তুলি!সোনা বোন আমাল,দলজা খোল প্লিজ,এভাবে পাগলামি কলিস না,সবাই কি ভাবছে বল তো!প্লিজ দলজা খোল””
তুলির যখন রাগ বেশি হয় তখন রিদান তুলির মতো কথা বলে তুলির রাগ ভাঙায়,,,রিদানের মুখে তোতলা কথা শুনলে তুলি হেঁসে গড়াগড়ি খায়,,,তাই আজ রিদান তুলির রাগ ভাঙানোর জন্য তুলির ভাষায় কথা বললো,,,
কিন্তু তুলি রিদানের কথায় আজ আর হেঁসে গড়াগড়ি খেলোনা,,,বরং দরজা না খুলে ভিতর থেকে উঁচু গলায় বললো,,,
“”লিদান ভাইয়া!আমি যখন একবাল বলেছি বিয়ে কলবো,তখন আজই আমি বিয়ে কলবো,তোমলা যদি বিয়ে না দাও,তাহলে আমি সুইসাইড কলতে বাধ্য হবো””
তুলির কথা শুনে রিদানসহ সবাই হতাশ হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসলো,,,তুলি যে জেদ ধরে বসে আছে সুজনের তা বুঝতে অসুবিধা হলোনা,,,সুজন মনে মনে দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে বৃদ্ধা আর শাহাদাৎ আঙুল দিয়ে কপাল ঘষতে ঘষতে মনে মনে বললো,,,
“”বিয়ে করতে চাইছিস তো!ঠিক আছে,কিন্তু বিয়ের পর তোর জেদ যদি আমি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে না পারি!তাহলে আইনের পোশাক গায়ে জড়িয়ে কি লাভ হলো আমার””
এখন সুজনই একমাত্র ভরসা,,,সুজন উপস্থিত সবার দিকে একপলক চেয়ে সোফায় বসে পড়লো,,,সবাই ভরসার চোখে সুজনের দিকে চেয়ে আছে দেখে সুজন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সবার উদ্দেশ্য মৃদুস্বরে বললো,,,
“”যত দ্রুত সম্ভব তোমরা বিয়ের আয়োজন করো!এই বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই””
সবাই সুজনের উত্তর শুনে খুশি হলো,,,সবাইকে খুশি দেখে সুজন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো,,,সুজনের বড় মামা বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিলো,,,ইভা দৌড়ে তুলির দরজায় ধাক্কা দিয়ে উঁচু স্বরে বললো,,,
“”তুলি দরজা খোল!তোকে রেডি করাতে হবে,বিয়ের পাত্র পাওয়া গেছে,এবার অন্তত দরজাটা খোল””
ততক্ষণে সবাই তুলির দরজায় এসে ভীর জমালো,,,পাত্র পাওয়া গেছে শুনে তুলির মনটা খচখচ করতে লাগলো,,,এতো অল্প সময়ে পাত্র পাওয়া গেছে শুনে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে বললো,,,
“”পাত্র যদি সুজন ভাই না হয়ে অন্য কেউ হয়!তাহলে তো আমাল সব শেষ,এতো ওভাল এক্টিং কলে কি লাভ হলো আমাল,ওহ্ গড!লক্ষা কলো আমায়””
চলবে,,,