অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব -০৫

#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#প্রথম_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ5

সন্ধ‍্যা 6:45

ব‍্যস্ত রাস্তার পাশ দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে আয়াশ আর রুশা। সন্ধ‍্যার মৃদ‍্যু ঠান্ডা বাতাস এসে রুশার চোখ-মুখ ছুয়ে দিচ্ছে। গায়ে সোয়েটার পড়ে না থাকায় ওর ঠোঁট হালকা কাঁপছে। আয়াশ সব সময়ের মতোই হুডিওয়ালা জ‍্যাকেট, আর মুখে মাক্স দিয়ে বের হয়েছে। পাবলিক প্লেসে বের হওয়ার সময় আয়াশ সব সময়ই এইগুলো ইউজ করে। কিছু দূর হেঁটে আসার পর রুশা ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বলল,

–“নিজে তো সুন্দর করে জ‍্যাকেট পড়ে বের হয়েছিস। আর আমাকে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার সময় টুকুও দিলি না। এত স্বার্থপর কেন তুই? দেখ, তোর জন‍্যে এখন আমাকে ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে হচ্ছে।”

রুশার কথা শুনে আয়াশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
–“জোরে জোরে হাঁটতে থাক দেখবি শরীর এমনিতেই গরম হয়ে গেছে।”

রুশা রাগি লুক নিয়ে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“পারব না। আমি অনেক ক্লান্ত। আমাকে ফুচকা খাওয়া।”

আয়াশ পকেট থেকে ফোন বের করে টিপতে টিপতে বলল,
–“ক্লান্ত থাকলে এনার্জি ড্রিংকস খেতে হয়। ফুচকা না। চল তোকে এনার্জি ড্রিংকস কিনে দেই।”

রুশা হাঁটা থামিয়ে দাড়িয়ে গেল। আয়াশ ভ্রু কুচকে রুশার দিকে তাকাল। রুশা জেদি গলায় বলল,

–“আমি ফুচকাই খাব। তোর ইচ্ছে হলে আমার সাথে আয়। নাহলে ফোট এখান থেকে।”

কথাটা বলে রুশা রাস্তার একদম সাইডের ফুচকার স্টলের দিকে হাঁটা লাগাল। আয়াশ বিরক্তির দৃষ্টিতে রুশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। প্রায় অনেক দিন পর আজকে আয়াশ একটু ফ্রি হয়েছিল। এতদিন একটানা শুটিং করতে করতে ‘ও’ একদম বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই আজকে ব্রেক পেতেই ভাবল রুশাকে নিয়ে একটু লং ড্রাইভে যাবে। রুশা ডিউটি শেষ করে হসপিটাল থেকে বের হতেই আয়াশ ওকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর ওরা এসে এখানে নেমে ফ্রেশ এয়ারে পায়চারি করা শুরু করেছে। আয়াশ ভেবেছিল কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর ওরা এখান থেকে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করে আসবে। কিন্তু ওর ভাবনায় এক ড্রাম পানি ঢেলে দিয়ে রুশা লাফাতে লাফাতে ফুচকা খেতে চলে গেছে। ওই মেয়ের এই একটাই সমস‍্যা। বাইরে আসলেই ফুচকা খাওয়ার জন‍্যে লাফালাফি করবে। তাও আবার রেস্টুরেন্টের ফুচকায় তার হবে না, রোড সাইডেড স্টলের ফুচকা লাগবে। ওতে নাকি স্বাদ টা একটু বেশিই থাকে।

আয়াশ নাক-মুখ কুচকে রুশার দিকে তাকিয়ে আছে। রুশা ওর হাতে থাকা কাচের প্লেট টা থেকে একটার পর একটা ফুচকা হাতে নিয়ে গপাগপ মুখে পুরে নিচ্ছে। আয়াশকে ওভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুশা প্লেট টা আয়াশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

–“ওভাবে রাক্ষসের মতো তাকিয়ে থেকে আমার খাওয়ায় নজর দিচ্ছিস কেন? লোভ লাগলে এখান থেকে খেতে পারিস।”

আয়াশ মুখ বাকিয়ে বলল,
–“নো থ‍্যাংকস। তুই-ই গেল। আমার এসবে ইন্টারেস্ট নেই।”

–“ইন্টারেস্ট নেই বললে তো হবে না। বাঙালি ছেলে হয়ে যদি এত টেস্টি ফুচকা চোখের সামনে দেখেও সেটাকে ইগনোর করে চলে যাস, তাহলে তো আমাদের প্রানপ্রিয় ফুচকা কে অপমান করা হবে। নে ধর খা।”

কথাটা বলে রুশা ওর হাতে থাকা প্লেট টা ফুচকার স্টলের উপর রাখল। তারপর সেখান থেকে একটা ফুচকা হাতে নিয়ে আয়াশের কাছে এগিয়ে গেল। আয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুশা ওর কাছে গিয়ে এক টানে ওর মুখ থেকে মাক্স টা খুলে ফেলল। আয়াশ চোখ বড় বড় করে রুশার দিকে তাকিয়ে চাপা স্বরে বলল,

–“রুশ কি বাচ্চামো শুরু করলি বল তো? তুই ভালো করেই জানিস, আমাকে এখানে কেউ দেখে ফেললে একটা হট্টোগোলের সৃষ্টি হয়ে যাবে। মাক্সটা ফেরত দে প্লিজ।”

রুশা ফুচকা টা আয়াশের মুখের সামনে নিয়ে গিয়ে বলল,
–“আগে এটা খা, তারপর দিচ্ছি।”

–“নো ওয়ে। আমি এসব কখনো খাইও নেই। আর খাবও না।”

বলেই আয়াশ পিছনের দিকে কয়েক পাঁ পিছিয়ে গেল। অসাবধানতা বশত একটা ইটের সাথে বারি খেয়ে আয়াশ পিছনের দিকে খানিকটা হেলে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাড়াতে নিলেই স্লিপ খেয়ে ওর মাথা থেকে হুডি টুপি টা পিঠে পড়ে গেল। আয়াশ চমকে উঠে আশেপাশে তাকাতেই দেখল কয়েক জন অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ‘ও’ দ্রুত আবারও হুডিটা মাথায় পড়ে নিল। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। আশেপাশের কিছু ছেলে-মেয়েরা আয়াশ দেওয়ান বলে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। ওদের লাফালাফি আর চিৎকার দেখে যারা এতক্ষণ নিজেদের কাজে ব‍্যস্ত ছিল তারাও আয়াশদের দিকেই আসছে। এদিকে রুশা বোকার মতো স্টাচু হয়ে আয়াশের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াশ রুশার দিকে একটা অ‍্যাংড়ি লুক দিয়ে ওর হাত থেকে মাক্স টা টেনে নিয়ে আবারও মুখে পড়ে নিল। এরমধ‍্যেই সবাই এসে আয়াশকে ঘিরে ধরে ফোনের ক‍্যামেরা অন ওর সাথে সেলফি তোলার চেষ্টা করতে লাগল। কেউ কেউ তো আবার ভিডিও করা শুরু করেছে। আয়াশ আর কোনো উপায় না পেয়ে নিজের গায়ে থাকা জ‍্যাকেট টা খুলে রুশার মাথার উপর দিয়ে ওর ফেস টা ঢেকে দিলো। ‘ও’ চায় না রুশাকে ক‍্যামেরার সামনে এনে ওর সিম্পল লাইফটাকে ব‍্যাতিব‍্যস্ত করতে। গায়ের জ‍্যাকেট টা খুলতেই আয়াশের চোখ জোড়া স্পস্ট হয়ে গেল। সবাই আরো এক দফা চিল্লিয়ে উঠল। আয়াশ এসে রুশার হাত ধরে ওর কানে কাছে গিয়ে ফিশফিশিয়ে বলল,

–“দৌড়ে পালানো ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো অপশন নেই। গার্ডদের আসার জন‍্যে ওয়েট করতে গেলে পাবলিক সেলফি তুলতে তুলতে আমার আলুর ভর্তা বানিয়ে দিবে। সো, ভাগ।”

কথাটা বলেই আয়াশ এক সাইড থেকে রুশার হাত চেপে ধরে জোরে দৌড় দিল। ওখানে উপস্থিত সবাই ক‍্যামেরা অন রেখেই হা করে আয়াশদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বাচ্চাদের মতো আয়াশকে এভাবে দৌড়াতে দেখে সবাই একসাথে উচ্চস্বরে হেসে উঠল। কিন্তু আয়াশের পাশের মেয়েটা কে, সেটা নিয়ে ওদের মনে একটা বিশাল প্রশ্নের পাহাড় সৃষ্টি হলো।

আয়াশ আর রুশা দৌড়ে এসে গাড়িতে উঠল। আয়াশ দ্রুত গাড়ি স্টার্ড দিয়ে ওই জায়গা থেকে প্রস্থান করল। পুরো রাস্তায় রুশা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগল। আয়াশ রুশাকে কিছুক্ষণ বকাবকি করে ওকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে চলে গেল।
_________________________
শান নিজের কেবিনে বসে চোখ বন্ধ করে হাতের দু-আঙুল দিয়ে নিজের কপাল ঘষছে। সামনেই টেবিলের উপর শানের ফোনটা পড়ে আছে। ফোনের স্কিনের উপর সন্ধ‍্যা বেলা রাস্তায় ঘটে যাওয়া আয়াশ আর রুশার সেই ইন্সিডেন্টের ভিডিও টা দেখা যাচ্ছে। ওই সময়ের ঘটনাটা অনেকেই ভিডিও করে সোস‍্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দিয়েছে। একটু আগে ফোন স্ক্রল করতে করতে শানের নিউজফিডেও ভিডিওটা এসে পড়েছিল। সেটা দেখার পর থেকে শান এমন চুপচাপ, গম্ভীর হয়ে বসে আছে। জোভান পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে শানের মতি গতি বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওর এমন নিশ্চুপ থাকায় কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। নিরবতা কাটিয়ে গলা খ‍্যাকানি দিয়ে হঠাৎ জোভান বলে উঠল,

–“স‍্যার আজকে রাতে তো আপনার মিঃ রেজাউলের বার্থ ডে পার্টিতে যাওয়ার কথা ছিল। কখন যাবেন? পার্টি তো মনে হয় অলরেডি শুরু হয়ে গেছে।”

শান কপাল থেকে আঙুল সরিয়ে জোভানের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল,
–“যাব না। আমার ইচ্ছে করছে না।”

জোভান কপালে ভাজ ফেলে বলল,
–“কেন যাবেন না স‍্যার? আপনার কি মুড অফ?”

শান নিজেকে খানিকটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
–“না, মুড অফ কেন হবে? আমার অন‍্য একটা কাজ আছে। তাই ওখানে যাওয়ার প্লান টা ক‍্যান্সেল করেছি।”

জোভান সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
–“কিন্তু স‍্যার আপনি ওখানে না গেলে যদি মিঃ রেজাউল মাইন্ড করেন, আর আমাদের সাথে বিজনেস ডিল টা ক‍্যান্সেল করে দেন? তখন কি হবে?”

জোভানের কথা শুনে শান ঠোঁট বাকিয়ে হাসল। তারপর চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে করতে বলল,

–“এরকম টা উনি কখনোই করবেন না। যদি করেও থাকেন তাহলে উনারই লস হবে। আর তাছাড়া এখন আমার আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে। যেটা এসব বিজনেস ডিলের থেকেও আমার কাছে বেশী জরুরী।”

বলেই শান ফোনটা অফ করে প‍্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। জোভান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে শানের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“কি জরুরী কাজ স‍্যার?”

শান চেয়ারের উপরে রাখা ওর ব্লেজার টা হাতের ভাজের উপর নিয়ে বলল,
–“একজন কে ফুচকা খাওয়াতে যেতে হবে।”

বলেই ‘ও’ হনহন করে হেঁটে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। জোভান কিছু বুঝতে না পেরে শানের যাওয়ার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে রইল।
_________________________

রুশা ড্রইংরুমে বসে বসে কিছু ফাইল কম্পিলিট করছিল। এরমধ‍্যেই ওর ফ্লাটের দরজার কলিংবেল বেজে উঠে। ‘ও’ ফাইল গুলো বন্ধ করে রেখে বসা থেকে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দরজার লক খুলে দেয়। লক খুলতেই বাইরে শান আর ওর লোকদের দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়। রুশা শানকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওরা সবাই গটগট করে বাসার মধ‍্যে ঢুকে পড়ে। রুশা দরজার কাছে দাড়িয়ে থেকে অবাক কণ্ঠে বলে,

–“আরেহ আরেহ আপনারা সবাই ভিতরে কোথায় যাচ্ছেন? পারমিশন ছাড়া কারো বাসার মধ‍্যে এভাবে ঢোকা টা অন‍্যায়। সেটা আপনারা জানেন না?”

রুশা কথাটা বলতেই শান এসে খপ করে ওর হাতের কব্জি চেপে ধরল। তারপর ওর গার্ডদের চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করতেই একজন গার্ড গিয়ে দরজাটা লক করে দিল। শান রুশার হাত ধরে টানতে টানতে ওকে ড্রইংরুমের কাউচের দিকে নিয়ে যেতে লাগল।

চোখ জোড়া ডিমের কুসুমের মতো বড়বড় করে সামনের টি-টেবিলের উপরে রাখা সিলভারের বড় থালিটার দিকে তাকিয়ে আছে রুশা। থালিটার উপরে একটার পর একটা ফুচকা বানিয়ে রাখছে মধ‍্যে বয়সী একজন ফুচকা ওয়ালা। শানেরা আসার সময় এই ফুচকা ওয়ালাটাকেও সাথে করে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন নিয়ে সেটা রুশা এখনোও বুঝতে পারছে না। লোকটা আসার পর থেকেই একটা পর একটা ফুচকা বানিয়ে যাচ্ছে। আর ওনার পাশে বসে শান একটা রিভলবার হাতে নিয়ে খেলনার মতো করে ঘুড়িয়ে যাচ্ছে। ওর গার্ড রা অর্ধেক রুশার পিছনে দাড়িয়ে আছে, আর অর্ধেক ওর নিজের পিছনে দাড়িয়ে আছে। এদিকে রুশা দাঁত দিয়ে নিজের হাতের নখ কাটতে কাটতে একবার ফুচকার থালির দিকে তাকাচ্ছে, একবার শানের দিকে তাকাচ্ছে, একবার ফুচকা ওয়ালার ভিতু ফেসের দিকে তাকাচ্ছে, তো আরেক বার দাঁত বের করে হাসতে থাকা শানের গার্ড গুলোর দিকে তাকাচ্ছে।

রুমের পিনড্রপ সাইলেন্ট কাটিয়ে শান রুশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলল,
–“ডাক্তার সাহেবা নিন, ফুচকা খাওয়া শুরু করুন। এগুলো আপনার জন‍্যেই বানানো হয়েছে।”

রুশা ভ্রু কুচকে বলল,
–“আমার জন‍্যে বানানো হয়েছে? কিন্তু কেন? আমি কি আপনার কাছে এসব খেতে চেয়েছি?”

শান স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
–“না, খেতে চান নি। কিন্তু সন্ধ‍্যায় আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে মেইবি ফুচকা খেতে গিয়েছিলেন। একটা ইন্সিডেন্টের কারনে ভালো করে হয়ত খেতে পারেন নি। তাই আমি আপনাকে ফুচকা খাওয়ানোর জন‍্যে বাসা থেকে ফুচকাওয়ালাকে কিডন‍্যাপ করে নিয়ে এসেছি।”

শানের কথা শুনে তো রুশা পুরোই অবাক। কারন একে তো শান আয়াশকে রুশার বয়ফ্রেন্ড বলছে। তার উপর ‘ও’ আয়াশের সাথে ফুচকা খেতে পারেনি বলে শান এত রাতে ফুচকাওয়ালা কে নিয়ে একগাদা গার্ডসহ হাতে রিভলবার নিয়ে ওর ফ্লাটে এসেছে শুধুমাত্র ওকে ফুচকা খাওয়াতে? ব‍্যাপারটা যেন রুশার মোটেও হজম হলো না। ‘ও’ শানের এমন অদ্ভুত কাজ কর্মের পিছনের কারন খুজতে যখন ভাবনায় ডুব দিলো, তখনই শান আবারও বলে উঠল,

–“কি হলো ডাক্তার সাহেবা? খাচ্ছেন না কেন? তাড়াতাড়ি খেয়ে থালি টা খালি করুন। নাহলে উনি ফুচকা গুলো বানিয়ে রাখবেন কোথায়?”

রুশা থালির দিকে তাকিয়ে দেখল ওখানে প্রায় হান্ড্রেড প্লাস ফুচকা আছে। একসঙ্গে এতগুলো ফুচকা খেয়ে ‘ও’ জীবনেও শেষ করতে পারবে না। ‘ও’ নাক-মুখ কুচকে শানের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“আমি এসব খাব না মিঃ রায়জাদা। আপনি এগুলো এখান থেকে নিয়ে চলে যান।”

রুশার কথা শুনে শান বলল,
–“আমি এত কষ্ট করে এর রাতে এইগুলো অ‍্যারেঞ্জ করে নিয়ে আসলাম। আর আপনি বলছেন, আপনি খাবেন না? সেটা কি করে হয় ডাক্তার সাহেবা?”

কথাটা বলে শান বসা থেকে দাড়িয়ে রুশার পাশে এসে কাউচের উপর ধপ করে বসে পড়ল। আচমকা শানের এমন কাজে রুশা বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। শান ওর এক হাত ধরে টেনে ওকে আবারও নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে থালি থেকে একটা ফুচকা উঠিয়ে রুশার মুখের সামনে ধরল। রুশা মুখ ঘুড়িয়ে অন‍্যদিকে তাকাল। শান ওর গাল চেপে ধরে জোর করে ওর মুখে ফুচকাটা ঢুকিয়ে দিল। রুশা ফেলে দিতে চাইলে শান ওর মুখ শক্ত করে চেপে ধরল। বাধ‍্য হয়ে রুশাকে ফুচকাটা গিলে ফেলতে হলো। কিন্তু গেলার সাথে সাথে ওর মুখ গলা সবকিছু ঝালে জ্বলতে লাগল। রুশা মুখ হা করে হিশাতে লাগল। এরমধ‍্যেই শান আবারও ওকে আগের মতো করেই জোর করে ফুচকা খাইয়ে মুখ চেপে ধরল। বাধ‍্য হয়ে রুশাকে এইবারও ফুচকাটা গিলে ফেলতে হলো। একই ভাবে শান প্রায় দশটার মতো ফুচকা খাওয়ানোর পর রুশার হাতটা আলগা করে দিল। রুশা মুখ চেপে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগল। ওর মনে হচ্ছে কেউ ওর মুখে এসিড ঢেলে দিয়েছে। শান রুশার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর ছটফটানি দেখছে। ফুচকাওয়ালা মায়াভরা চোখে রুশাকে দেখছে। শানের কথা মতোই উনি শুধুমাত্র নাগা মরিচের পেস্ট দিয়ে ফুচকার মধ‍্যের পুড়’টা বানিয়েছেন। সেইজন‍্যেই রুশা ঝালে এরকম পাগল হয়ে গেছে।

শান হাতের ইশারায় ফুচকা ওয়ালাকে চলে যেতে বলল। উনি থালিটা হাতে নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে ওখান থেকে প্রস্থান করলেন। রুশা দৌড়ে ডাইনিং রুমের দিকে চলে গেল। শানও ওর পিছনে পিছনে হাঁটা দিলো। রুশা ডাইনিং টেবিলের উপরে রাখা জগটা হাতে নিয়ে দ্রুত গ্লাসে পানি ঢালল। তারপর গ্লাস টা হাতে নিয়ে যখনই পানি টা খাওয়ার জন‍্যে মুখের কাছে এগিয়ে নিয়ে গেল, তখনই শান এসে টান দিয়ে রুশার হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে নিল। রুশা হতবম্ভ হয়ে শানের দিকে তাকিয়ে রইল। শান ঢকঢক করে গ্লাসের সবটুকু পানি খেয়ে ফেলল। রুশা এবার পানি খাওয়ার জন‍্যে জগের দিকে হাত বাড়াল। কিন্তু ‘ও’ জগটা ধরার আগেই শান ওটা ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিল। মুহূর্তের মধ‍্যে কাচের জগটা ফ্লোরে পড়ে ঝনঝন শব্দ করে ভেঙে কাচগুলো এদিকে সেদিকে ছড়িয়ে পড়ল। রুশা নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলল। রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু ‘ও’ মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। কারন ঝালে ওর বুক, পেট, গলা, ঠোঁট সবকিছু জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। রুশা এবার দৌড়ে কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ খুলল। কিন্তু নরমালে শাক-সবজি আর ডিপের মধ‍্যে মসলা, মাছ ছাড়া অন‍্য কিচ্ছু নেই। রুশা সুইট খাবার তেমন পছন্দ করে না। তাই ওর বাসায় চকলেট, আইসক্রিম, মিস্টি কোনো কালেই থাকে না। হঠাৎ রুশার চিনির বয়ামের কথা মনে পড়ল। ‘ও’ হন্নে হয়ে শেলফের মধ‍্যে চিনির বয়াম খুজতে লাগল। কিন্তু কথায় আছে না, অভাগা যেদিকে চায়, সাগরও শুকায়ে যায়। রুশার বেলায়ও হয়েছে তেমন। ‘ও’ চিনির বয়াম টা শেলফ থেকে নামাতে নিতেই ওটা হাত ফশকে ফ্লোরে পড়ে গেল। বয়ামের মুখ আলগা থাকায় পড়ার সাথে সাথে সব চিনি ফ্লোরের এদিক সেদিক ছড়িয়ে পড়ল।

শান কিচেনের দরজার কাছের দেয়ালের সাথে বাঁকা হয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রুশার কান্ড দেখছে। রুশা এবার ক্লান্ত হয়ে দেয়ালের সাথে কাধের এক সাইড লাগিয়ে দেয়ালের উপর নিজের মাথা এলিয়ে দিল। তারপর চোখ বন্ধ করে দু-হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগল। শান এগিয়ে এসে রুশার দুই পাশের দেয়ালের উপর হাত রাখল। এতে রুশা দেয়ালের সাথে আরো লেগে দাড়াল। শান রুশার কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর গলায় বলল,

–“বিশ্বাস করুন ডাক্তার সাহেবা আপনাকে কষ্ট দেওয়ার আমার কোনো ইন্টেনশন নেই। অতীতে আপনার কারনে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমি সেসব মনে রেখে আপনাকে শাস্তি দিতে চাইনা। বিকজ ইউ আর মাই…..”

শান পুরো কথাটা শেষ না করেই থেমে গেল। রুশা শানের কথা শুনছে ঠিকই। কিন্তু আপাতত ‘ও’ শানকে কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। শান আবারও বলল,

–“আজকে যেটা হলো তারজন‍্যে আমি মোটেও সরি না। কারন এসব আমি জেনে বুঝে আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন‍্যেই করেছি। ভবিষ্যতে যদি আপনি একই ভুল করেন তাহলে তখনও আবার আপনার সাথে এরকম কিছুই হবে। আপনি যতবার আমার শত্রুর সাথে মেশার চেষ্টা করবেন, ততবার আপনাকে হার্ট হতে হবে। বুঝেছেন ডাক্তার সাহেবা?”

রুশা এবারেরও কিছু বলল না। শান রুশার মুখের উপরে পড়ে থাকা চুল গুলোকে নিয়ে গিয়ে ওর কানের পিছনে গুজে দিলো। দেখল, রুশার সারা মুখ লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। কপালে, নাকের নিচে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। শান মুচকি হেঁসে রুশার কোমড়ে এক হাত রেখে ওকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। রুশা ক্লান্ত শরীরে নিভু নিভু চোখে শানের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারও চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলল। শান রুশার ঘাড়ের পিছনে এক হাত রেখে ওর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দিল। শানের শীতল ঠোঁটের ছোয়া পেতেই রুশার ঠোঁটের জ্বালা পোড়াটা আস্তে আস্তে কমতে লাগল। ক্রমশ রুশার নিশ্বাস ভারি হতে লাগল। শান রুশার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ওর নাকের উপর ছোট্ট করে একটা কামড় দিয়ে ওর থেকে পিছনে সরে গেল। রুশা চোখ জোড়া বন্ধ করে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থেকে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে গড়গড় করে শানের গায়ের উপর বমি করে দিলো। শান চোখ বড় বড় করে রুশার দিকে তাকাল। রুশা সেন্সলেস হয়ে ধপ করে ফ্লোরে পড়ে গেল। শান নিজের শরীরের তাকিয়ে “আআআআআ” বলে জোরে চিল্লিয়ে উঠল।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here