#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৪
চিরকুটখানা বারকয়েক পড়ে চোখ বুজে একটু শ্বাস নিল স্পর্শ। নিদ্রিতা তো এখনো অধীর আগ্রহে স্পর্শের দিতে তাকিয়ে আছে। স্পর্শ চোখ খুলে শান্ত চাহনি দিয়ে নিদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে–বয়স কত তোমার??
নিদ্রিতা একটু অবাক হয়।।প্রেমপত্র পেয়ে যে কেউ বয়স জিজ্ঞেস করে তা তার ধারণাতে নেই।
নিদ্রিতা হালকা ক্ষীণ স্বরে বলল–১৬ বছর ৭মাস ১৯ দিন।।
স্পর্শ –এজন্যই এতো সাহস!!
নিদ্রিতা অবাক স্বরে বলল–মানে??
স্পর্শ — মানে টিনএজ তো এজন্যই রক্ত গরম!!!
নিদ্রিতা স্পর্শের কোনো কথাই বুঝতে পারছে না।।
নিদ্রিতা কিছু বলার আগেই স্পর্শ বলল–আমার বয়স কত জানো??
নিদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে জানাল যে সে জানে না।।
স্পর্শ — ২৫!! তোমার বয়স বহু আগেই পার করে এসেছি!!এসব অল্প বয়সের আবেগ পাত্তা দিও না।
নিদ্রিতা হালকা ভ্রু কুটি করে বলল– তারমানে আপনি আমায় ইনডিরেক্টলি রিজেক্ট করছেন??
স্পর্শ — না, আমি তোমায় ডিরেক্টলি রিজেক্ট করছি।।
টিচিং প্রফেশনে আসার পর এমন বহু মেয়ের প্রস্তাব পেয়েছি।। ইটস কমন!!
নিদ্রিতা ছলছল চোখে বলল– বাট আমি ওই কমন মেয়েদের তালিকাতে নেই।।
স্পর্শ — ইয়াহ!! তুমি আনকমন।।বিকজ আগে যারা প্রপোজাল দিত তারা সামনে আসা তো দূর নিজের নাম ও প্রকাশ করত না আর তুমি তো সামনে বসে প্রপোজাল দিয়েছো!!!
নিদ্রিতা পারে তো কেঁদেই দেয়।।
স্পর্শ — এসব মাথা থেকে ঝেড়ে পড়াতে মনোযোগ দাও।।কাজে আসবে!!২ দিনের আবেগকে এতো প্রশ্রয় দিও না!!
নিদ্রিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্পর্শ পানি খেয়ে বলল–আমার কিছু কাজ আছে,,ইউ মে লিভ নাও!!!
নিদ্রিতা ধীর পায়ে চলে যেতে নিলে স্পর্শ পিছু ডেকে বলে–তোমার বই আর চিরকুট ও নিয়ে যাও!!!
নিদ্রিতার চোখের পানি এবার আর বাঁধ মানল না।।তবুও নীরব পরিবেশ রেখে কান্না গুলো গলাতে দলা পাকিয়ে ধীর পায়ে বই টা হাতে তুলে নিল।।একঝলক স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল।।স্পর্শ সে তো ফোনে ব্যস্ত।।তা না হলে নিদ্রিতার কান্নামাখা রক্তিম মুখখানা ঠিকই দেখতে পেত।।
নিদ্রিতা বেরিয়ে গিয়ে ক্লাসরুমের পেছনের বাদামতলা তে বসে পড়ল।এসবই সামিরার নজর এড়ায় নি।।।
নিদ্রিতার কান্নার মাঝেই তার কাঁধে হাত রাখল সামিরা।।
সামিরা চট জলদি নিদ্রিতার পাশে বসে বলল–ইতিহাস তুই বলবি নাকি আমি আমার মতো আন্দাজ করে নিবো??(ভ্রু নাচিয়ে)
নিদ্রিতা এবার জোরে কেঁদে দিল।।
সামিরা– ফ্যাচ ফ্যাচ করে না কেঁদে,চট করে বলে ফেল!!
নিদ্রিতা এবার ফুঁপাতে ফুঁপাতে স্পর্শের রিজেকশনের কথা বলল।।
সামিরা বিষয়টা শুনে বলল–আরে ধুর!!এটা কোনো ব্যাপার হলো!!স্মার্ট, সুন্দর ছেলেদের এমন একটু এটিটিউড থাকে।।আরে তুই জানিস!!!আমি ইভু ভাইয়ের পেছনে পাক্কা ২.৫ মাস ঘুরেছি।।একদিন বাবাকে নালিশ করে দিল তারপর বাবা আমায় এখানে পাঠিয়ে দেয়।।ওমা সপ্তাহ পেরোতেই দেখি ওই বান্দা এখানে এসে হাজির!!!আর বাকি তো জানিসই!!
নিদ্রিতা এবার চোখ মুছে বলল–তাহলে এখন আমি কি করব??
সামিরা বলল–কি আবার করবি!!!এসব ছেলেদের পছন্দ হইলো মেয়েরা একটু এদের পেছনে ঘুরবে,বিরক্ত করবে বুঝলি!!ভাব মেলা এদের!!
নিদ্রিতা–তারমানে আমি ওনাকে বিরক্ত করব??
সামিরা –তা নয় তো কি!!!হাই লেভেলের অত্যাচার করবি😁😁
নিদ্রিতা চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে ডেভিল হেসে বলল–গেট রেডি মিঃস্পর্শ ফর মাই লাভ টর্চার♥️
তারপর টুকটাক প্লান করতে করতে সামিরা আর নিদ্রিতা নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।।
নিদ্রিতা বাড়ি গিয়ে ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।।
নিদ্রিতা ঘুমাচ্ছে আর তার বাবা দরজাতে দাঁড়িয়ে চিন্তামগ্ন অবস্থাতে নিদ্রিতার দিকে তাকিয়ে আছে।।
আচমকা নিদ্রিতার মা তার স্বামীর কাঁধে হাত রাখতেই,নয়ন খান নন্দিতার দিকে ফিরে তাকাল,চোখ মুছে বলল –ঘরে চলো।।
নিদ্রিতার মা — তুমি ওদের বলো যে তুমি ওদের কোলকাতার সব জমি লিখে দিবে অন্তত তার বদলে যেন মালদার আশ্রম টা ছেড়ে দেয়।
নিদ্রিতার বাবা– ওদের কনসট্রাকশন এর জন্য ঐ জায়গাটা নাকি বেস্ট।কোলকাতার সম্পত্তি ওদের চাই না।।ওদের ঐ মালদার ১০০ বিঘে আশ্রমটা চাই।।
নিদ্রিতার মা–ওটা তো হাজারো বাচ্চা,মেয়েদের আশ্রয়।। ওদের আশ্রয় কেড়ে নিলে ওদের তো ভিক্ষে করতে হবে।।
নিদ্রিতার বাবা–হুমমম।।জানি।।ওটা আমি কোনোদিন ওদের দিবো না।তোমার মনে আছে যখন বিয়ের ৮ বছর চেষ্টা করেও আমাদের কোনো সন্তান হচ্ছিল না তখন বাবা তোমায় নীলাম আশ্রমে নিয়ে বলেছিলেন যে আজ থেকে এখানে থাকা প্রতিটি বাচ্চা তোমার সন্তান।।ওখানে থাকার ১ বছরের মধ্যেই আমাদের কোল আলো করে আমার নিদ্রিতা আসে।।
নিদ্রিতার মা–অবশ্যই মনে আছে গো!!!কিন্তুু এখন কথা হলো ওরা যদি আমার নিদুর কোনো ক্ষতি করে।।
নিদ্রিতার বাবা–করবে না গো!!আশ্রম নিদু মা এর নামে।।আর আমি উইল করে রেখেছি যদি আমার নিদু আর আশ্রমের বাচ্চাদের কোনো ক্ষতি হয় তাহলে ওদের ১৫০ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে।।আর আশ্রম সরকারের হাতে চলে যাবে।
নিদ্রিতার মা — তারপরেও আমার নিদু তো এসবের কিছুই জানে না।।সেই ৯ দিন বয়স থাকতে এখানে পালিয়ে এসেছি।।ওরা তো এখন জানে আমরা এখানে আছি!!
নিদ্রিতার বাবা–চিন্তা করো না নন্দিতা,,আমি অতি দ্রুত নিদুর ১৮ বছর হলেই একটা ভালো ছেলে দেখে নিদুর বিয়ে দিয়ে দিবো।।আমার নিদু মা এতো ঝামেলা বুঝবে না তাই যার হাতে তুলে দিবো তাকে সব ঘটনা খুলে বলব যাতে সে আমার নিদুকে সব বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে।।
নিদ্রিতার মা–তবে ঐ ছেলে যদি ওদের লোক হয়??
নিদ্রিতার বাবা–হবে না।।আমার মিলিটারি বন্ধু আয়মানের কথা মনে আছে??ওকে দিয়ে সব খোঁজ খবর নিবো তারপর।।
নিদ্রিতার মা–মনে থাকবে না কেন!!!আয়মান ভাই না থাকলে কোনোদিন ঐ কালরাতে আমাদের ৯ দিনের নিদুকে নিয়ে পালিয়ে আসতে পারতাম নাকি!!!
নিদ্রিতার বাবা–হুমমম,,,চিন্তা করো না।।আল্লাহ সব ঠিক করে দেবে নন্দিতা।।
নিদ্রিতার মা– এখন তো তিনিই ভরসা!!!
নিদ্রিতার বাবা–চলো শুয়ে পড়ি!!মেয়েটা ঘুমিয়েছে।।বেশ রাত হয়েছে, ঠান্ডা ও বাড়ছে!!কাল অফিস আছে।।
নিদ্রিতার মা–হুমম।তুমি শুয়ে পড় আমি কম্বলটা নিয়ে আসি।।
পরদিন সকালে,,
নিদ্রিতা কলেজ পৌঁছে তাকে তাকে আছে কখন স্পর্শ কেবিন থেকে বের হবে।।স্পর্শ বের হতেই নিদ্রিতা কেবিনে ঢুকে যায়।।তারপর স্পর্শের টেবিলের ওপরে একটা লাল গোলাপ আর একটা চিঠি রেখে বেরিয়ে আসে।।।
তারপর ক্লাসে আসে।।রুটিন মোতাবেক ১ম ক্লাস স্পর্শের।।স্পর্শ ক্লাসে আসতেই শুরু হলো নিদ্রিতার আরেক দফা দুষ্টুমি।। স্পর্শ নিদ্রিতার দিকে তাকাতেই নিদ্রিতা একবার হাসছে তো একবার চোখ টিপ দিচ্ছে।।
স্পর্শ মোটামুটি মহা বিরক্ত!!!
ক্লাস শেষে স্পর্শ বেরিয়ে যায়।নিজের কেবিনে গিয়ে ফুল আর চিঠি দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে তারপর চিঠিটা পড়ে যেন তার মেজাজ টাই গরম হয়ে যায়।।
চিঠিতে নিদ্রিতা লিখেছে—
“এইযে মিঃ আপনি কি ভেবেছেন!!?আপনি রিজেক্ট করলেন আমি পালিয়ে গেলাম।।আই এম নিদ্রিতা।।এতো সহজে ছাড়ছি না। আপনার প্রতি অনুভতি আমার কোনো আবেগ নয়।। আমি আপনাকে সত্যি ভালোবাসি। আপনি দ্রুত মেনে নেন এটাই ভালো!!!”
স্পর্শ কাগজটা মুচড়ে ড্রয়ারে রেখে দিল।।
এরপর স্পর্শ বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হল।।নিজের গাড়ির ভেতরে বসে দেখল।।গাড়ির ছিটেও কয়েকটা চিঠি রাখা।।স্পর্শ আবারো চিঠি খুলে একটু খুলে দেখে আবারো গাড়ির পেছনের সিটের দিকে ছুড়ে দিল।।
কেটে গেল ৫ দিন,,
এই ৫ দিনে স্পর্শকে চিঠি দিয়ে নানা ভাবে বিরক্ত করে নিদ্রিতা।স্পর্শ বেশ বিরক্ত হয়েও ঠান্ডা মেজাজে কয়েকবার নিদ্রিতাকে বুঝিয়েছে।।কিন্তুু নিদ্রিতা নাছোড়বান্দা।। সে কেবিনে,স্পর্শের বইতে গাড়িতে চিঠি রেখে স্পর্শকে নিজের ভালোবাসার কথা জানান দিয়েছে।।
আজ ২০ জুন নিদ্রিতার জন্মদিন।।(মূলত লেখিকার জন্মদিন ২০ জুন♥️😁)
নিদ্রিতা সিদ্ধান্ত নিল আজ স্পর্শকে নিজে মুখে বলবে যে সে স্পর্শকে ভালোবাসে। মুখে বললে নিশ্চিত স্পর্শ না বলবে না।।
নিদ্রিতা বেশ সুন্দর করে সেজে, হাতে কয়েক রঙের গোলাপ নিয়ে কলেজে পৌঁছাল।।স্পর্শ মাত্র কলেজে প্রবেশ করেছে। ফোন ঘাটতে ঘাটতে হেঁটে যাচ্ছে।।
আচমকা নিদ্রিতা হাঁটুগেড়ে বসে পড়ল তার সামনে।।স্পর্শ বেশ অবাক, ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।।
এমন কান্ডে কলেজে বেশ ভিড় জমে গিয়েছে।
নিদ্রিতা গোলাপ গুলো স্পর্শের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল– আমার অল্প বয়সের আবেগ নয়,আমি সত্যি আপনাকে খুব ভালোবাসি অনেক বেশি!!!প্লিজ ফিরিয়ে দিবেন না আমায়!!!
স্পর্শের রাগ এবার মাত্রা ছাড়িয়ে গেল।।কয়েকদিন চিঠি দিয়ে বিরক্ত করেছে আর আজ তো সবার সামনেই তামাশা করছে।।
স্পর্শ শক্ত করে নিদ্রিতার ডান হাত ধরে টেনে তুলল।
এতো শক্ত করে হাত ধরাতে নিদ্রিতা ব্যাথা পেল।।ফলস্বরূপ ফুল গুলো নিচে পড়ে গেল।।
নিদ্রিতাকে টেনে তুলে স্পর্শ পরপর ২ টো থাপ্পড় দিলো।
নিদ্রিতার চোখের পানি বাঁধ ভেঙেছে।।তারপর স্পর্শ মাটিতে পড়ে থাকা ফুল গুলো পা দিয়ে পিষে দিল।।
তারপর চিল্লিয়ে বলল–হেভ সাম শেইম ইডিয়েট।।টিচারকে প্রোপোজ করছ এতটা বেহায়া হয়ে গিয়েছো!!!আজকের চড়টা মনে থাকলে আর কখনো আমার সামনে আসবে না!!!
তারপর স্পর্শ আবার নিদ্রিতার বা হাত শক্ত করে ধরে বলল– আমি জানি তোমার লজ্জা নেই তুমি আবার আসবে বেহায়াপনা করতে।।
কথাগুলো বলেই স্পর্শ নিদ্রিতার হাতটা ছেড়ে দিয়ে হাঁটা ধরল।।নিদ্রিতা মুখে হাত দিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।।
সামিরা দ্রুত দৌড়ে এসে নিদ্রিতাকে ধরে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসাল৷ নিদ্রিতা ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।। চোখের জলে কাজল লেপ্টে গিয়েছে।। স্পর্শের হাতের শক্ত চড়ে নিদ্রিতার ফরসা গাল লাল হয়ে আছে।।
ইভান নিদ্রিতার দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে বলল–পানি খাও নিদু।।আর কেঁদো না।।নিদ্রিতা এবার কাঁপা কাঁপা হাতে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগল।।
পানি খেয়ে চোখে মুখে একটু পানির ঝাপটা দিল।।
ইভান–চলো আমরা তোমায় আজ পৌঁছে দিচ্ছি বাড়িতে।।
নিদ্রিতা–দরকার নেই ইভু সাহেব।।আমি যেতে পারব!!
সামিরা–তা বললে হয় নাকি!!
নিদ্রিতা–হুমম হয়।।
বলেই নিদ্রিতা গাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটা শুরু করল।।
এরপর থেকে ৭ দিন পার হয়।।কিন্তুু নিদ্রিতা স্পর্শের সামনে যাওয়া তো দূর কলেজেই আসছে না।
স্পর্শ ২ দিন আগে স্টুডেন্টস ফাইল চেক করতে গিয়ে জানতে পেরেছে ২০ তারিখ নিদ্রিতার জন্মদিন ছিল।।আর ঐ দিন ই স্পর্শ তার গায়ে হাত তুলেছে আর বাজে কথা বলেছে বলে গিল্ট ফিল করতে লাগল।।
স্পর্শ আজও ক্লাসে এসে দেখল নিদ্রিতা আসে নি।।
স্পর্শ মনে মনে বলল–নিদ্রিতা কি সুস্থ আছে??ঐ দিনের পরতো কলেজেও আসছে না!!ধুর আমারই ভুল।।। বাচ্চা মেয়েটার ওপর ওতটা রাগ ঝাড়া উচিত হয়নি।চড় ২ টো তো বেশ জোড়েই ছিল না জানি পিচ্চিটা কেমন আছে!!!!
এসব ভেবে ক্লাস শেষ করে স্পর্শ।। বাড়ি ফেরার পথে সামিরাকে দেখে চিনতে পেরে,,গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে গেল স্পর্শ।।
স্পর্শ — সামিরা রাইট??
সামিরা– ইয়েস স্যার।।।
স্পর্শ –তোমার ফ্রেন্ড নিদ্রিতা কলেজ আসছে না কেন??
সামিরা মাথা নিচু করে আছে কোনো উত্তর দিচ্ছে না।।
স্পর্শ ধমকে উঠল — কি হলো বলো??
সামিরা—-
#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#বোনাস_পর্ব ♥️♥️
সামিরা কে চিন্তে পেরে দৌড়ে গেল স্পর্শ।।
তারপর জিজ্ঞেস করল নিদ্রিতার কথা।সামিরা চুপ করে মাথা নিচু করে নিল।।স্পর্শ ধমকে উঠে আবারো জিজ্ঞেস করল—কি হলো বলো??আসছে না কেনো নিদ্রিতা??
সামিরা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল—ঐদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে নিদ্রিতাকে কিছু ছেলে বিরক্ত করছিল।।ও ভয় পেয়ে দৌড়াতে লাগলে আচমকাই সামনে একটা চলন্ত গাড়ি চলে আসে।।পড়ে গিয়ে নিদ্রিতার ডান হাত ভেঙে যায়।।
স্পর্শ হাতটা কপালে চেপে বলে–ওহ মাই গড!!কোন হসপিটালে আছে??
সামিরা–আজ সকালেই বাড়িতে গিয়েছে।।
স্পর্শ — ওকে।। ধন্যবাদ।।
সামিরা–ওকে স্যার।।মে আই লিভ নাও??
স্পর্শ–সিউর!!!
স্পর্শ গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে থাকে।।আর ভাবতে থাকে— মেয়েটার এমন একটা এক্সিডেন্ট হলো!!!সবটা আমার জন্য!! সেদিন এতটা রিয়েক্ট করা উচিত হয়নি।।না জানি কতটা চোট পেয়েছে!!!
ভাবনার মাঝেই স্পর্শ গাড়ি ব্রেক করল নিদ্রিতার বাড়ির সামনে।।
গাড়িতে বসেই ভাবতে লাগল–চলে তো এলাম কিন্তুু কি বলব ভেতরে গিয়ে!!! নিদ্রিতার রুমটা কোনটা তাও তো জানি না!!তাহলে তো লুকিয়ে এটলাস্ট।।
স্পর্শ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকল যদি নিদ্রিতা বেলকনিতে আসে বা বের হয়।।
কিন্তুু নাহ অনেকসময় অপেক্ষা করার পরও নিদ্রিতা এলো না।।বাধ্য হয়ে স্পর্শ গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল।।
৩ দিন পর নিদ্রিতা কলেজে এল।।ডান হাত ক্রেপ ব্যান্ডেজ করা গলাতে বেল্ট দিয়ে ঝুলছে।।স্পর্শ ক্লাস নিতে এসেই খেয়াল করল।বার কয়েক তাকাল ও নিদ্রিতার দিকে তবে নিদ্রিতা মাথা নিচু করেই বসে আছে।।
ক্লাস শেষ করে স্পর্শ দ্রুত পায়ে কেবিনে গেল।।গিয়ে কাগজ পত্র উল্টে পাল্টে দেখল যে কোনো চিঠি দিয়েছে কিনা নিদ্রিতা।কিন্তুু নাহ কোনো চিঠি পেল নাহ!!!গাড়ির কাছেও ছুটে গেল কিন্তুু পেল না।।
কেন যেন স্পর্শ আশা করেছিল যে নিদ্রিতা চিঠি রাখবে।।
হতাশ হয়ে পেছন ফিরতেই দেখে নিদ্রিতাকে একজন ছেলে জড়িয়ে ধরে আছে।।
নিদ্রিতাও বেশ হাসি খুশি ভাবে তাকে একহাতে ধরেছে।।
তারপর ছেলেটা সাবধানে নিদ্রিতাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল।।পুরো ব্যাপারটাই স্পর্শের চোখের সামনে ঘটল।।স্পর্শ পার্কিং এরিয়া থেকে বের হয়ে সোজা নিজের কেবিনে গেল।।কেন যেন তার প্রচুর রাগ হচ্ছে।। নিজেও জানে না!!!সব ক্লাস ক্যান্সেল করে স্পর্শ বাড়ির দিকে রওনা হলো!!!
মার্কেট মোড়ে এসে দেখে নিদ্রিতা ট্যাক্সি খুঁজছে।।
স্পর্শ গাড়ি থামিয়ে এগিয়ে গেল।।
নিদ্রিতা দূর থেকে স্পর্শকে দেখল তারপর মাথা নিচু করে ট্যাক্সি খোঁজ করাতে মনোযোগ দিল।
স্পর্শ নিদ্রিতার পাশে দাঁড়িয়ে বলল–আজ ট্যাক্সি স্ট্রাইক চলছে।পাওয়া যাবে না।
নিদ্রিতা শুনেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না।।
স্পর্শ হালকা কেশে বলল–আমি তোমায় ড্রপ করে দি??অলরেডি ২ টো বাজে কোনো কিছুই পাবে না বাড়ি ফেরার জন্য।।
নিদ্রিতা ধীর কন্ঠে বলল–ধন্যবাদ!!আমি হেঁটে চলে যাব!!
নিদ্রিতা হাঁটা শুরু করে দিল৷ স্পর্শ দৌড়ে গিয়ে বা হাত চেপে ধরে বলল–হেঁটে যেতে গিয়েই তো এই হাতটা ভেঙেছ।।চলো এখন।।(হালকা ধমকের সুরে)
বলেই নিদ্রিতার হাত ধরে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিল।
তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে একটা খোলামেলা পাহাড়ের কিনারাতে এসে থামল।।পুরো ব্যাপারটাতে নিদ্রিতা চুপ।।
স্পর্শ এবার নিদ্রিতার দিকে ঘুরে বসে বলল–লুক নিদ্রিতা,, আই আম সরি!!সেদিন এতোটা রিয়েক্ট করা উচিত হয় নি।
নিদ্রিতা মাথা নিচু করে বলে–ইটস ওকে স্যার!!
স্পর্শ –দেখো!!তোমার বয়স কম তাই ভালোলাগা আর ভালোবাসার মধ্যে তফাতটা বুঝতে পারছ না।।তবে বুঝবে যখন বড় হবে!!এই বয়সের একটা ভুল তোমাকে সারাজীবন ভেগাতে পারে!!!
নিদ্রিতা এবার স্পর্শের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিল।।
স্পর্শ আলতো হাতে নিদ্রিতার চোখের পানি মুছে বলল–বাট উই ক্যান বি ফ্রেন্ড।।
নিদ্রিতা দুরন্ত কন্ঠে বলল—রিয়েলি??
স্পর্শ হালকা হেসে–হুমম!!তবে চলো ফ্রেন্ড হওয়া উপলক্ষে আজ ট্রিট দেই তোমায়!!!কি খাবে বলো??
নিদ্রিতা উৎসাহিত কন্ঠে বলে–আইসক্রিম!!!
স্পর্শ –এই ঠান্ডাতে আইসক্রিম খাবে!!!
নিদ্রিতা–হুমম।।
স্পর্শ –ওকে লেটস গো!!!
স্পর্শ আর নিদ্রিতা আইসক্রিম পার্লারের ভেতরে চলে গেল৷ নিদ্রিতা আইসক্রিম খাচ্ছে আর নানা কথার ছলে হেসে উঠছে।।স্পর্শ নিজেও।তবে আজ স্পর্শ নিদ্রিতার হাসিতে মুগ্ধ।।
কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা শেষে স্পর্শ নিদ্রিতাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে বলল–ওকে টেক কেয়ার!!
নিদ্রিতা –ওকে স্যার!!
স্পর্শ গাড়ি ঘুরিয়ে যেতেই নিদ্রিতা হালকা হেসে বলে–আপনাকে ভালোবাসাটা আমার আবেগ নয়।।আমি আপনাকে ভালোবাসি।।আর এবার এই কথাটা আপনি আমায় বলবেন।
বলেই ভেতরে চলে যায় হালকা আওয়াজে গান গাইতে গাইতে।।
দিন যাচ্ছে স্পর্শ আর নিদ্রিতার এখন বেশ ভালোই বন্ধুত্ব।
তবে স্পর্শের মাঝে হালকা কিছু পরিবর্ন লক্ষণীয়।।স্পর্শের আজকাল প্রায়শই নিদ্রিতার কথা মনে হয়।তার শুধুই মনে হয় নিদ্রিতা শুধু তার সাথেই কথা বলবে।স্পর্শ নিজের কাজে এখন নিজেই অবাক হয় কারণ বিগত এক সপ্তাহ ধরে সে রাত ২.৩০/৩ টায় নিদ্রিতাকে ফোন করে শুধু নিদ্রিতার কন্ঠ শোনার জন্য।। আজকাল এমন হুটহাট ইচ্ছে প্রায়ই হয় স্পর্শের।
রাত ৩.১৩ মিনিট,,,
স্পর্শ স্কাউচে বসে আছে। একটা সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে টানছে আর বারবার নিদ্রিতার নম্বর ডায়াল করছে।।
নিদ্রিতা হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছে কিন্তুু তবুও তার একবার নিদ্রিতার আওয়াজ শুনতেই হবে।তা না হলে সে যেন শান্তি পাচ্ছে না। অবশেষে স্পর্শের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিদ্রিতা ৩৭ তম কলটা রিসিভ করল।।
ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলল–হ্যালো!!
স্পর্শ যেন মনে একটা আলদা শান্তি অনুভব করল।।
তারপর বলল–সরি!!ঘুমটা ভেঙে দিলাম।।
নিদ্রিতা–ইটস ওকে।।কোনো দরকার ছিলো??
স্পর্শ –হুমম!!কাল বিকালে লেকের পাড়ে দেখা করতে পারবে??
নিদ্রিতা–কেন??
স্পর্শ –বললাম তো দরকার আছে।।
নিদ্রিতা–ওকে চলে আসবো!!
স্পর্শ –ওকে ঘুমাও!!
স্পর্শ ফোন কেটে আরো একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল–কাল তোমাকে বলতেই হবে নিদ্রিতা!!তোমার হয়তো আবেগ ছিল বাট আমার টা কোনো ছেলেমানুষি আবেগ নয়।।আমি তোমার প্রেমে পড়েছি নিদ্রিতা।।গভীর প্রেম!!
রাত কাটে।।পরদিন বিকালে নিদ্রিতা যথা সময়ে লেকের পাড়ে পৌঁছে গেল।।স্পর্শ এখনো আসেনি।।
পাক্কা ১৮ মিনিট পর স্পর্শ এলো।।শার্ট এলোপাতাড়ি ইন করা আর হাফ খোলা।।চুল এলোমেলো।
নিদ্রিতা দেখে বলল-একি অবস্থা আপনার??
স্পর্শ –সে পরে দেখবে!!চলো আগে।।
নিদ্রিতা–কোথায়??
স্পর্শ উত্তর না দিয়ে হাত ধরে লেকের ধারের ছোট্ট একটা বাঁশ বাধানো বাড়িতে নিয়ে গেল।
নিদ্রিতা তো অবাক হয়ে দেখছে বাড়িটা পুরো লাল সাদা বেলুন দিয়ে সাজানো।।মাঝখানে একটা টেবিল ও পাতানো। টেবিলে সম্ভবত কিছু রাখা!!
নিদ্রিতা ঘুরে ঘুরে ঘরটা দেখছে।।এরই মাঝে স্পর্শ নিদ্রিতার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।।
নিদ্রিতার বা হাত আলতো করে নিজের হাতের মাঝে নিল।।
নিদ্রিতা একটু চমকে তাকাল।।
স্পর্শ — জানিনা কখন কিভাবে আমার মনে তোমার নামের অনুভতির প্রকাশ পেয়েছে।। তবে যে অনুভতির প্রকাশ পেয়েছে তা বড় তীব্র।। আমি তোমার গভীরতম প্রেমে পড়েছি প্রেয়সী।।তোমাকে ছাড়া কোনো কিছু কল্পনাতে আনতে পারছি না।।শুন্য বুকটা আজ শুধু তোমাকে চায়!!!উইল ইউ বি মাইন???
নিদ্রিতা পুরো নীরব।।
স্পর্শ এখনো নিদ্রিতার হাত ধরে ওভাবেই বসে আছে।।
নিদ্রিতা একটু হাতটা টেনে সরিয়ে নিয়ে বলল–আমার তো আবার অল্প বয়স,,আবেগ বেশি।।তাই —
নিদ্রিতাকে আর বলতে না দিয়ে স্পর্শ উঠে দাঁড়িয়ে নিদ্রিতার হাত আবারো ধরে বলল–সরি নিদু!!!প্লিজ মাফ করো আমায়।।আমি বিগত কয়েকদিনে তোমার অনুভতি গুলো অনুভব করেছি।।সব কিছুর জন্য সরি!!
নিদ্রিতা এবার কোনো কিছু না বলে স্পর্শ কে জড়িয়ে ধরল।স্পর্শ ও আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল।।জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই,,
নিদ্রিতা–আমায় বলতে তো দেন।আমিও আপনাকে ভালোবাসি!!খুব।।আবেগ নয় এটা।।
স্পর্শ এবার একটু শক্ত করে নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরল।
নিদ্রিতা–ধন্যবাদ!!!
স্পর্শ –কেন??
নিদ্রিতা — নিজের কাছে চ্যালেন্জ করেছিলাম আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনবো!!!
স্পর্শ হালকা হেসে নিদ্রিতাকে একটু সামনে দাঁড় করিয়ে বলল–হ্যাপি??
নিদ্রিতা–হুমমম!!
স্পর্শ –ওকে চলো কেক কাটব।।
নিদ্রিতা–কেক কেন??
স্পর্শ –আজ আমার জন্মদিন নিদু!!
নিদ্রিতা হালকা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল–হ্যাপি বার্থডে!!
স্পর্শ — থ্যাংকস।।
কেক কাটা শেষে একে অপরকে খায়িয়ে দিল।।
তারপর নিদ্রিতা হালকা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল–আপনি আমায় আগে কেন বলেননি আজ আপনার জন্মদিন!!!আমি কোনো গিফ্ট দিতে পারলাম না ধুর!!
স্পর্শ নিদ্রিতাকে একটু কাছে টেনে বলল–তুমিই আমার গিফ্ট।।আর কিছু চাই না!!
নিদ্রিতা–তাও!!!
স্পর্শ –তাহলে এক কাজ করো আমায় কয়েকটা চুমু দাও।।বেস্ট গিফ্ট হবে আমার।।
নিদ্রিতা চোখ বড়বড় করে ফেলল।।
মনে মনে বলল–এই ছেলে তো চরম লেভেলের ফাজিল!!!
ভাবনার মাঝেই স্পর্শ আরেকটু জোড়ে ধরে বলল–কই দাও!!!
নিদ্রিতা লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিয়ে বলল–আমি পারবো না!!!
স্পর্শ — গিফ্ট দিতে চাইলে এখন দিবা না??
নিদ্রিতা–ধুর!! আপনি কিন্তুু আমায় লজ্জা দিচ্ছেন!!
স্পর্শ হেসে বলল—তাই!!!!
#চলবে