অভিমানে তুমি পর্ব ৫+৬

#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৫

রাত ১.৫৬,,,
বাইরে সোডিয়ামের হলুদ আলোটা কুয়াশার জন্য ঝাপসা হয়ে আছে।।বৃষ্টি যেন আজ রাতের আঁধারের সাথে এক খেলায় নেমেছে।।থেকে থেকে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।। সাথে মেঘ মামা গর্জন করে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।। পাহাড়ঘেরা রাস্তাঘাট ভিজে একাকার।।অতিরিক্ত ঠান্ডা আর ঘন বর্ষনের কারণে রাস্তায় কোনো প্রাণীর চিহ্ন নেই।
ব্যালকোনির দরজা হালকা চাপানো থাকতে ঠান্ডা বাতাস হু হু করে ঢুকছে নিদ্রিতার ঘরে।।নিদ্রিতা কানে ফোন নিয়ে নিজেকে কম্বল দিয়ে আরো একটু ভালো করে জড়িয়ে নিল।।
নিদ্রিতা–আপনি মোটেই ওত সেজেগুজে কলেজ যাবেন নাহ!!
স্পর্শ — সেজেগুজে কখন গেলাম??!!আমি তো নরমালই যাই!!
নিদ্রিতা–মোটেই নাহ!!সব মেয়েরা এক্কেবারে চোখ দিয়ে গিলে খায়।।আপনি ক্লাস করিয়ে যেতেই যা তা বলতে শুরু করে।
স্পর্শ এবার শব্দ করে হেসে দিয়ে বলে–আচ্ছা ঠিক আছে।। তুমি যেমন বলবে তেমন করেই যাবো!!
নিদ্রিতা–হুমম!!!কাল তো ছুটি আপনার প্লান কি কাল??
স্পর্শ –কোনো প্লান নেই।। তুমি কাছে থাকলে ২/১ টা প্লান করতাম!!
নিদ্রিতা দুষ্টুমি কন্ঠে বলে–তাই বুঝি!!!
স্পর্শ –জি ম্যাডাম!!
নিদ্রিতা–ঘুমোবেন নাহ আপনি??
স্পর্শ –ইচ্ছে করছে না আজ ঘুমোতে।।তোমার ঘুম পাচ্ছে??
নিদ্রিতা–নাহ!!কাল তো ছুটি সারাদিন ঘুমোবো।।আচ্ছা আপনি কখনো বৃষ্টি বিলাস করেছেন??
স্পর্শ -নাহ!!দার্জিলিং এর যে ঠান্ডা!!
নিদ্রিতা–জানেন আমার খুব ইচ্ছে একদিন লাল শাড়ি পড়ে হাতে লাল কৃষ্ণচূড়া নিয়ে রাতে প্রিয় মানুষের সাথে বৃষ্টি বিলাশ করব!!!
স্পর্শ — পূরণ করা হবে!!!
নিদ্রিতা হেসে বলে–আচ্ছা!!! এবার আপনার কোনো ইচ্ছের কথা বলুন!!!সেই তখন থেকে আমিই বলে যাচ্ছি।।
স্পর্শ –আমার ইচ্ছে গুলো সব তোমাকে ঘিরে!!তোমার কোলে মাথা রেখে চন্দ্রবিলাস কবে করব এখন তারই অপেক্ষা মাত্র!!!
নিদ্রিতা– আপনার ইচ্ছে ও পূরণ করা হবে!!মাস্টমশাই!!
স্পর্শ এবার জোরে হেসে দেয়।
নিদ্রিতাও হাসল!!
আজ প্রায় ১৫ দিন চলছে তাদের এই লুকায়িত প্রেম!!
প্রায় মাঝরাত অবধি দুজনের ফোনালাপ!!
সোমবার সকালে নিদ্রিতা দ্রুত রেডি হয়ে বের হচ্ছে,,
টেবিলে খেতে বসে বারকয়েক তার বাবাকে গুড মর্নিং
বললেও তেমন উত্তর পায়নি।।তাই নিদ্রিতা বাবার কাঁধে হাত রেখে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল–ও বাপী,,তুমি কি রেগে আছো আমার ওপর??
নয়ন–না রে মা!!একটু টেনশনে ছিলাম তাই!!
নিদ্রিতা–কেন বাপী??কোন সমস্যা হয়েছে??
নয়ন একটু হালকা হেসে বলে–না রে মা!!ওই অফিসে কাজের চাপ তো তাই!!!
নিদ্রিতা–ও ও।।ওতো টেনশন নিয়ো না তো!!সব ঠিক হয়ে যাবে।।
নয়ন–আচ্ছা।।তুই দ্রুত খেয়ে কলেজ যাহ!!!নয়তো ক্লাস মিস হবে।
নিদ্রিতা বাবার কথা শুনে দ্রুত খেয়ে কলেজে চলে গেল।।
কলেজে ঢুকেই নিদ্রিতার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।।
স্পর্শ বিনা ম্যামেকে কিছু বোঝাচ্ছে আর বিনা কেমন যেন করে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছে!!!নিদ্রিতা খানিক ভ্রু কুঁচকে দেখে নিল তারপর জোর পায়ে হেঁটে ক্লাসে চলে গেল।
বিনাকে রেজিস্টারের খাতা বুঝিয়ে দিয়ে স্পর্শ হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিল।।তার মতে এতোক্ষণে নিদ্রিতার চলে আসার কথা।নিদ্রিতাকে বলেছিল এসে ফোন দিতে কিন্তুু নাহ ফোন তো আসে নি।
স্পর্শ নিজেই ফোন বের করে কল দিল।।কিন্তুু নিদ্রিতা বারবার কল কেটে দিচ্ছে।। স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল–আজব তো!!!ফোন রিসিভ করছে না কেন!!!!
তারপর মেসেজ দিল!!নিদ্রিতা ম্যাসেজ সিন করেও কোনও উত্তর দিল না।।
স্পর্শ তো অবাক আচমকা হলো কি নিদ্রিতার।।
ক্লাসের সময় হয়ে আসায় স্পর্শ দ্রুত ক্লাসে চলে গেল।।
ক্লাসে ঢুকেই দেখল নিদ্রিতা বসে আসে।।স্পর্শ ক্লাসে এসে ক্লাসের ফাঁকে বেশ কয়েকবার তাকিয়েছে নিদ্রিতার দিকে তবে নিদ্রিতা একবারও তাকাচ্ছে না।।
শেষ ১০ মিনিটে স্পর্শ মেসেজ দিল ক্লাস শেষে তার সাথে দেখা করার জন্য।। ক্লাস শেষ করে স্পর্শ নিজের কেবিনে নিদ্রিতার অপেক্ষা করছে কিন্তুু না নিদ্রিতা আসছে না।।স্পর্শ বেরিয়ে যাবে ঠিক তখনই স্পর্শ ফোনে কল এলো।।স্পর্শ রিসিভ করে বলল–আসসালামু আলাইকুম বাবা।।
স্পর্শের বাবা–আলাইকুম আসসালাম।।কেমন আছো??
স্পর্শ — আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাবা।।তুমি??
স্পর্শের বাবা–এইতো আছি।।আকাশ চৌধুরীকে পেলে??
স্পর্শ — নাহ বাবা!!!এখানকার সমস্ত আপডেট চেক করেছি বাট আকাশ চৌধুরী নামের কোনো রেকর্ড নেই।
স্পর্শের বাবা–বাট এটা সিউর ও দার্জিলিং এ আছে।।ওর লোকেশন ট্রাক করা যাচ্ছে না।।ওর সাথে আমার কথা হয়েছে!!!
স্পর্শ –জি বাবা।।চিন্তা করো না।।পেয়ে যাবো।।পালিয়ে কতদিন আর বাঁচবে!!!
স্পর্শের বাবা–মনে রেখো!!মালদার জমিটা আমাদের চাই।।
স্পর্শ –হুমম বাবা!!অন্যায়ভাবে ঐ জমি কাউকে দখলে রাখতে দিব না।।
স্পর্শের বাবা–সাবধানে থেকো!!
স্পর্শ –হুমম।।বাবা একটা কথা ছিল!!
স্পর্শের বাবা–হ্যাঁ বাবা বলো!!
স্পর্শ –একচুয়েলি বাবা আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি!!
স্পর্শের বাবা–ওয়াও ইয়াং ম্যান!!গ্রেট নিউজ!!আমার বউমার ছবি পাঠিও।।তুমি যখন চয়েজ করেছ তখনতো বেস্টই হবে আই নো!!
স্পর্শ হালকা হেসে বলল–জি বাবা!!!
স্পর্শের বাবা–দ্রুত ঝামেলা শেষ করেই আমার বৌমাকে বাড়িতে নিয়ে আসব।।
স্পর্শ –আচ্ছা বাবা!!রাখছি!!

স্পর্শ ফোন রেখে নিদ্রিতাকে খুঁজতে লাগল।।দেখল নিদ্রিতা এখনো ক্লাসে আছে।।তাই নিদ্রিতার ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল।
নিদ্রিতা ক্লাস শেষ করে লাইব্রেরীতে একটা বই রাখতে গিয়েছে।। তখনই বুকশেলফ এর পেছনে কেউ তার হাত ধরে টেনে নিল।।নিদ্রিতা চিৎকার দিতে যাবে তখনই কেউ তার মুখ চেপে ধরল।।
নিদ্রিতা এবার ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখে সামনে স্পর্শ দাঁড়িয়ে আছে।।
স্পর্শ এবার নিদ্রিতার মুখ ছেড়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল–সমস্যা কি??
নিদ্রিতা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল–ছাড়ুন আমায়।।কথা নেই আপনার সাথে!!
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে বলে–কেন??কি করেছি আমি??
নিদ্রিতা–কি করেছেন মানে!!!সকালে বিনা ম্যাম কেমন করে তাকিয়ে ছিল তাও আপনি তার সাথে কথা বলেই যাচ্ছিলেন।
স্পর্শ — এটা কোনো কারণ হলো রাগ করার!!তুমি তো এমন করে বলছ যেন আমি ওনার দিকে তাকিয়েছি!!!
নিদ্রিতা–কথা বলবেন কেন ওনার সাথে??(মুখ ফুলিয়ে)
স্পর্শ –কাজ করতে গেলে টুকটাক বলতে হয় জান!!তাও আমি ওনাকে যথা সম্ভব এড়িয়ে চলি!!
নিদ্রিতা–আর একদম কথা বলবেন না ওনার সাথে বাজে মহিলা!!!অন্যর মানুষের দিকে কেমনে কেমনে তাকায়!!!
স্পর্শ নিদ্রিতার ২ গালে চুমু দিয়ে বলল–আচ্ছা বলবোনা!!!
নিদ্রিতা এবার হেসে দিয়ে বলল–ঠিক আছে।
এবার স্পর্শ আর একটু গভীর করে নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে বলল–এবার আমাকে কিছু দাও!!বিনা কারণে সকাল থেকে শাস্তি দিলে!!
নিদ্রিতা–লেট মি থিংক!!কি দেওয়া যায় আপনাকে!!!
স্পর্শ –ভাবো!!আমি অপেক্ষা করছি।।
নিদ্রিতা কিছুক্ষণ ভেবে হুট করে স্পর্শের ঠোঁটে চুমু দিয়ে চটজলদি সরে এল।স্পর্শ তো অবাক হয়ে নিদ্রিতার দিকে তাকিয়ে আছে!!আর নিদ্রিতা লজ্জাতে লাল হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে!!
তারপর নিদ্রিতাকে আরো একটু কাছে টেনে বলল–তুমি তো আমাকে একধাপ এগোনোর পারমিশন দিয়ে দিলে!!!
নিদ্রিতা এখনো নিচে তাকিয়ে আছে!! স্পর্শ এবার নিদ্রিতার মুখটা হাত দিয়ে তুলে নিদ্রিতার কপালে চুমু দিল তারপর ঠোঁটে।।নিদ্রিতা চোখ বন্ধ করে আছে।।আচমকা ফোন বেজে ওঠায় তারা দুজনে ছিটকে সরে যায়।।নিদ্রিতা তড়িঘড়ি করে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করে বলল–মা কি হয়েছে??কাঁদছ কেন??(উদ্বিগ্ন কন্ঠে)
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।।
নিদ্রিতা ফোন কেটে বলল–আমাকে যেতে হবে!!আমার বাবা অসুস্থ!!
তারপর স্পর্শকে কিচ্ছু বলতে না দিয়েই নিদ্রিতা দৌড় দিল।
স্পর্শ খানিকটা পিছু গিয়ে থেমে গেল।। কারণ কলেজের মধ্যে একজন টিচারের এমনে দৌড়াদৌড়ি মানায় না!!!
#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৬

নিদ্রিতা আর তার মা হাসপাতালে তার বাবার কেবিনে বসে আছে।।
নিদ্রিতা–এখন শরীর কেমন লাগছে বাপী??
নিদ্রিতার বাবা–এইতো ভালো মা!!
নিদ্রিতা –তুমি একদম এতো টেনশন করে নিজেকে অসুস্থ করে ফেল না।।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি থাকতে পারব না(জড়িয়ে ধরে)
নিদ্রিতার বাবা–ঠিক আছে রে মা!!!
নিদ্রিতার মা–নিদু মা!!তুই বাড়ি যা রেস্ট কর!!!সেই কলেজ থেকে ছুটে এসেছিস!!!
নিদ্রিতা–কিন্তুু মা—
নিদ্রিতার বাবা–কোন কিন্তুু না মা।।বাড়ি যা কাল আসবি।।
নিদ্রিতা–ওকে বাবা।।
নিদ্রিতা কেবিন থেকে বেরিয়ে স্পর্শকে ফোন দিল।।
স্পর্শ রিং বাজতেই রিসিভ করল।।যেন সে ফোনের কাছেই বসে ছিল।ফোন রিসিভ করেই উদ্বগ্নি কন্ঠে বলল–কি হয়েছে তোমার বাবার??ঠিক আছো তুমি??কোথায় আছো??
নিদ্রিতা–হুমম আমি ঠিক আছি,,বাবার মিনি স্ট্রোক হয়েছিলো। এখন সুস্থ আছে।।
স্পর্শ –থ্যাংক গড!!!টেনশনে মরে যাচ্ছিলাম,,দৌড়ে কি চলে গেলে!!!নাগালই পেলাম নাহ!!
নিদ্রিতা–আমি হসপিটালে আছি,এখন বাড়ি যাবো।।আপনি একটু মার্কেট মোড় অবধি আসবেন।।আমায় বাসায় এগিয়ে দিবেন,, একা যেতে পারব না।।
স্পর্শ –৫ মিনিটে আসছি।।
নিদ্রিতা ফোন কেটে দ্রুত পায়ে মার্কেট মোড়ে চলে গেল।
কেবিনে,,,
নিদ্রিতার মা কাঁদতে কাঁদতে বলল–তুমি এতো টেনশন করো না গো!!তোমার কিছু হলে আমরা থাকতে পারব না।
নিদ্রিতার বাবা–চিন্তা করো না নন্দিতা।।আমি ঠিক আছি।
নিদ্রিতার মা–তুমি এতো উত্তেজিত হয়ো না প্লিজ!!!
নিদ্রিতার বাবা–কি করব বলো!!! ওই বাচ্চাদের মধ্যে ৪ টা ১৬ বছর বয়সী মেয়ে মিসিং।।আমি সিউর সায়ান আহমেদ ওদের পাচার করে দিয়েছে।। মেয়েগুলোর জীবন শেষ হয়ে যাবে গো নন্দিতা।
নিদ্রিতার মা—আল্লাহ মেয়ে গুলোকে রক্ষা করো!!!
নিদ্রিতার বাবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল কারণ সে জানে এই এতিম মেয়েগুলোর ও জায়গা হবে পতিতা পল্লী তে।।
নিদ্রিতার বাবা–এখন আল্লাহ ই ভরসা!!
অন্য দিকে,,
নিদ্রিতা স্পর্শের গাড়ি দেখে এগিয়ে গেল।।স্পর্শ বেরিয়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে নিদ্রিতাকে সিটে বসিয়ে দিল।।
তারপর নিজে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে নিদ্রিতার দিকে ঘুরে নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরল।।
নিদ্রিতাও জড়িয়ে ধরল।।
স্পর্শ –টেনশনে মরে যাচ্ছিলাম।।তোমার হাতটা এখনো ঠিক হয়নি পুরোপুরি।। আমাকে বললেই আমি পৌঁছে দিতাম।
নিদ্রিতা–সরি!!আসলে আমার এতো মাথাতে আসেনি।।
স্পর্শ এবার ছেড়ে দিয়ে নিদ্রিতার কপালে চুমু দিল।
স্পর্শ –হুমম।।আঙকেল কেমন আছে??
নিদ্রিতা–ভালো আছে।।মিনি স্ট্রোক করেছিল।।বুঝলাম না বাপীর এতো কি টেনশন!!!
স্পর্শ –সুন্দরী মেয়ে থাকলে সবার একটু বেশি টেনশন হয়।
নিদ্রিতা হেসে দিয়ে বলল–তাই বুঝি!!
স্পর্শ এবার একটা ব্যাগ থেকে একটা এ্যালুমিনিয়ামের বক্স বের করে নিদ্রিতার হাতে দিয়ে বলল–খেয়ে নেও।
নিদ্রিতা হাতে নিয়ে বলল–কি আছে??
স্পর্শ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে–পাস্তা।।
নিদ্রিতা প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করল।।নিজে ২ চামচ খেয়েই স্পর্শের মুখে ধরল।স্পর্শ একটু নিদ্রিতার দিকে তাকাল তারপর মুখে নিয়ে বলল–জানো নিদু,,আমার মাও আমায় এমন খাইয়ে দিত।।মা চলে যাওয়ার পর আর কেউ খায়িয়ে দেয় নি।
নিদ্রিতা–এই যে আমি দিচ্ছি এখন।।
একটু ভেবে আবার বলল–আপনার মা কোথায় চলে গিয়েছে??
স্পর্শ সামনের দিকে চোখ রেখেই বলল–মারা গিয়েছেন।।কেউ একজন খুব কাছের আমার মাকে খুন করেছে।।
নিদ্রিতা হতবাক হয়ে বলল–সে কি!!!আল্লাহ আপনার মাকে জান্নাত দান করুন!!
স্পর্শ –হুমম!!বাদ দাও।।
কিছুক্ষণ পর স্পর্শ গাড়ি ব্রেক করে নিদ্রিতাদের বাড়ির সামনে।।
নিদ্রিতা স্পর্শের দিকে ঘুরে বলে–আজ অন্তত চলুন ভেতরে।।
স্পর্শ হালকা হেসে বলে–আজ তো একদমই না।কারণ বাড়িতে কেউ নেই।।
নিদ্রিতা মুখ ফুলিয়ে বলল–তাতে কি?
স্পর্শ আবারো হেসে বলল–তুমি ছোট এজন্য বুঝতে পারছ না।।
নিদ্রিতা–তবে বলুন কবে আসবেন??
স্পর্শ –কথা দিচ্ছি যেদিন আমাদের বিয়ে হবে সেদিন আসবো।।
নিদ্রিতা খুশি হয়ে বলল–সত্যি তো??
স্পর্শ –একদম সত্যি!!! আর গিয়ে রেস্ট নাও,,আমি কল করবো।।ফোন ধরতে যেন লেট না হয়।।
নিদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল।।
তারপর বিদায় জানিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।।
স্পর্শ গাড়ি ঘুরিয়ে তার বাড়ির পথে রওনা হল।।হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠল।।স্পর্শ মুখে হাসি ফুটিয়ে ফোন টা রিসিভ করল।।
স্পর্শ –কেমন আছো নানুমনি?
নানুমনি– আলহামদুলিল্লাহ ভালো নানু।।তুমি কেমন আছো??
স্পর্শ — এইতো ভালো!!
নানুমনি–শুনলাম তুমি নাকি আমার নাতবৌ পছন্দ করে ফেলেছ??
স্পর্শ –হুমম নানু!!!
নানুমনি–তাড়াতাড়ি চলে এসো নাতবৌকে নিয়ে।।
স্পর্শ –ঠিক আছে।।
নানুমনি–তুমি কি আমার নিশিতা মায়ের কোনো খোঁজ পেলে??শুনেছি ও দার্জিলিং এ ই আছে।।আজ ১৭ বছর মেয়েটাকে দেখিনা।।ওর ৯ দিনের বাচ্চাটা নিয়ে যে কোথায় চলে গেল!!!
স্পর্শ –না নানু!!খালামনি বা তার বাচ্চাকে কি ওই শয়তানটা জীবিত রেখেছে নাকি!!!!আর যদি বেঁচেও থাকে আমি ঠিক খুঁজে আনবো।।
নানুমনি–আমার বিশ্বাস আমার নাতনি আর মেয়ে বেঁচে আছে।আকাশ নিশিতাকে ভালোবাসতো।।ওদের কোনো ক্ষতি ও করবে না।।
স্পর্শ –ঐ লোক একটা খুনি নানুমনি!!!
নানুমনি–নাহ নানু!!আমার দৃঢ় বিশ্বাস আকাশের কোনো দোষ নেই।।
স্পর্শ রেগে ফোন কেটে দিল।।
স্পর্শ ফোন কেটে বলল–ওই লোকটা আমার মাকে খুন করেছে নানু।।ওকে তো আমি খুন করবোই।।তাতে যা হয় হবে!!!

কিছু দিন পর,,
নিদ্রিতার বাবাকে বাড়িতে আনা হলো।।
নিদ্রিতা–বাপী,তুমি এখন একদম রেস্ট করবে।।কোনো অনিয়ম চলবে না।।
নিদ্রিতার বাবা–আচ্ছা রে মা।।
নিদ্রিতা ঘরে আসতেই দেখল বিছানাতে ফেলে রাখা ফোন বেজে চলেছে।।
ফোন রিসিভ করতেই স্পর্শ বলল–কি হলো নিদু??এতোবার কল করেছিলে??আমি ক্লাসে ছিলাম।।কোনো সমস্যা হয়েছে।।।
নিদ্রিতা–আপনি আজ রাতে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন??
স্পর্শ –রাতে কেন জান??
নিদ্রিতা–দরকার আছে।।আমাদের বাগানের স্টোর হাউজে আসবেন।।
স্পর্শ –কিন্তুু রাতে!!!
নিদ্রিতা–হুমম।।
স্পর্শ –ওকে আসবো।।
রাত ১০.১৮,,,
নিদ্রিতা খুব সাবধানে চাদর গায়ে নিয়ে টর্চ হাতে বের হলো।।
নিদ্রিতা স্টোর হাউজের সামনে আসতেই দেখল সাদা শার্ট পরে স্পর্শ দাড়িয়ে আছে।।হাতে ফোন।।
নিদ্রিতা স্পর্শকে দেখেই দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।।
স্পর্শ ও হালকা করে ঘুরে নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরল।।
নিদ্রিতা স্পর্শের বুকে মাথা দিয়ে নিশব্দে কাঁদছে।।
স্পর্শ বুঝতে পেরে নিদ্রিতার মুখ ধরে নিজের দিকে ফেরাল।।নিদ্রিতার মুখ ২ হাতের মাঝে নিয়ে চোখের পানি ঠোঁট দিয়ে শুষে নিয়ে নিদ্রিতার কপালে চুমু দিয়ে বলল–আমার নিদুর কি মন খারাপ??
নিদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল–হুমম খুব মন খারাপ।।
স্পর্শ –তা কি নিয়ে মন খারাপ শুনি!!!!
নিদ্রিতা ফুপিয়ে উঠে বলল–ওই বিনা ম্যাম আপনাকে আজ বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে সরাসরি তারপর তো কেমন কেমন করে আপনার দিকে তাকায় বারবার হাত ধরে তা কাঁদবো না তো কি করব!!!!
স্পর্শ –আরে বাবা!!উনি প্রস্তাব দিলেই কি আমি রাজি হবো নাকি!!!আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।। তোমাকেই বিয়ে করব।।
নিদ্রিতা–তাও বিনা ম্যাম তো কত্তো সুন্দরী তারওপর ওই হাতাকাটা জামা পড়ে।।আপনি যদি!!
স্পর্শ কপাল কুঁচকে বলে–আমার চোখে কেবল তুমিই সবচেয়ে সুন্দরী।। আর কেউ নয়।বুঝলে!!!!
নিদ্রিতা–সত্যি তো???
স্পর্শ হালকা হেসে বলল—একদম সত্যি!!!!
নিদ্রিতা–তাহলে চলুন আমাকে বিয়ে করুন এখনি।।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here