#অশ্রুসিক্ত_নয়নে_তুমিই_আছো
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ০৩
সায়েদ আর ইসরা একসাথে নিচে আসে নাস্তা করার জন্য। সায়েদ হালকা কিছু খেয়েই তার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে যায়।এই বাড়িতে থাকতে এখন তার দম বন্ধ লাগছে তাই সে এখনই বেরিয়ে যায়।
অহনা, আবির,রনিত আর রিয়া বসে আসে সায়েদের জন্য। সায়েদ এসেই খুশি মুখে বলে,,,,
“হেই গাইজ।হোটাসআপ, কি অবস্থা তোদের বল?”
আবির দুষ্টুমি করে বলে,,,, “আমাদের অবস্থা ছাড় তোর অবস্থা বল।বিয়ে তো করে ফেললি এখন ভাবিকে আমাদের দেখাবি কখন?”
সায়েদ একটু বিরক্ত হয়েই বলে,,,, “আরে রাখ তোদের ভাবি যে বিয়ের পরের দিনই বরকে ব্রো বলে। আদম হাওয়ার সন্তান বানিয়ে ভাই বানিয়ে ফেলে তাকে ভাবি না বলে আমার বোনই বল তোরা।”
সায়েদের এমন কথায় সবাই তাজ্জব।রনিত উৎসুক দৃষ্টিতে বলে,,,,
“দোস্ত কাহিনী কি হইছে খুলে বল তো?”
সায়েদ সকাল থেকে ইসরার সাথে যা যা হয়েছে সব খুলে বলে। সব শুনে বন্ধুমহলে হাসির রোল ছোটে শুধু মাত্র রিয়া বাদে সবাই হাসে। সায়েদ রেগেই বলে,,,,,,
“আমার কথা শুনে তোদের হাসি পাচ্ছে?”
আবির হাসতে হাসতেই বলে,,,, “না মামা আমরা তো হাসছি না বিনোদন নিচ্ছি। সকাল সকাল বিনোদন নিলে মাইন্ড ফ্রেশ থাকে।”
সায়েদ এবার একটু বেশিই রেগে যায়। রিয়া সবাইকে থামানোর জন্য বলে,,,
“স্টপ গাইজ।এটা মোটেও ফাইজলামি করার বিষয় নয়।”
অহনা আবার রিয়াকে টিটকানি মারার জন্য বলে,,,,,,
“ওহ রিয়েলি এটা ফাইজলামি করার বিষয় না তো কোনটা ফাইজলামি করার বিষয় মিস.রি য়া। ”
নামটা টেনে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে বলে। সায়েদ এবার রেগেই সবাইকে ধমক দিয়ে বলে,,,
“স্টপ ইট।আমার কথা শুনে তোদের মজা লাগছে। তোরা জানিস সেদিন আমাকে যে রাস্তায় চড় মেরেছিল সেই মেয়েটা কে?”
সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে বলে,,,,,, “কে?”
সায়েদ রাগে বলে,,, “মিসেস ইসরা আরফান”
এটা শুনে সবাই শকড। কারণ তারা জানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে সায়েদকে অপমান করেছে আর সায়েদ যে তার শোধও নিবে এটাও তারা জানে কিন্তু সেই মেয়েটাকে যে সায়েদ বিয়েই করে নিবে সেটা শুনে তারা শকড।
সায়েদ আবার রাগী গম্ভীর গলায় বলে,,,, “যে মেয়েটা আমাকে অপমান করল,সকাল থেকে আমাকে হেনস্তা করল, আমাকে সরিয়ে আমার মা-বাবার কাছে প্রিয় হয়ে গেল সেই মেয়েটাকে নিয়েই তোরা পড়ে আছিস। তার সাপোর্ট নিচ্ছিস ওকে ফাইন তোরা ওকে নিয়ে থাক আমি গেলাম।”
বলেই সায়েদ রেগে ওখান থেকে চলে এলো। সায়েদের পিছু পিছু রিয়াও ছুটল।আর বাকিরা যে যার মতো আড্ডা দিতে লাগলো।তারা সবাই সায়েদের রাগ সম্পর্কে অবগত। আর এটা যে মিছি মিছি রাগ সেটাও তারা জানে। কিছুক্ষন পর আবার সব ঠিক হয়ে সায়েদ নিজেই এখানে চলে আসবে।
~~~~~~~~~~
সন্ধ্যে কিছু পার্লারের মেয়ে এসে ইসরাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। আজ ইসরাকে দেখলে কেউ চোখ ফিরাতে পারবে না। তাকে পুরাই পরি লাগছে। ইসরা এখনো নিজের ঘরেই আছে, বাহিরে যেতে চাচ্ছে না।বাহিরে গিয়ে সে সবাইকে কি বলবে? সবার তো একটাই প্রশ্ন থাকবে সায়েদ কোথায়? কিন্তু সায়েদ যে সেই সকালে বের হলো আসার তো নামই নেই। ইসরা টেনসনে নিজের ঘরে পাইচারি করছে। তখনই মিসেস.পারভীন ঘরে ঢুকে বলে,,,,,,,,
“কি হয়েছে ইসরা? তোমাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?”
“মা, উনি তো এখনো এলো না? ”
মিসেস পারভীন বুঝল সমস্যাটা তারপর উনি নিজেই আবার বলল,,,,,,
“সায়েদের বিষয়টা আমি দেখছি।কিন্তু তোমাকে যে এখন নিচে যেতে হবে।গেস্টরা তোমাকে দেখবে বলে অপেক্ষা করছে?”
“কিন্তু মা,গেস্টরা যদি প্রশ্ন করে? ”
এবার মিসেস পারভীনের মুখেও চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল।তারপর সে ইসরাকে আশাস্ত করে নিচে নিয়ে গেল।
মিসেস পারভীন ইসরাকে এমনভাবে ধরে নিয়ে যাচ্ছে যে মনে হচ্ছে সে একটা পিচ্ছি মেয়ে,মাত্র হাটা শিখেছে। সবার নজর এখন সিড়ির দিকে। সবাই একনাগাড়ে ইসরাকে দেখছে।সায়েদের ফ্রেন্ড আবির তো বলে দেয়।
“বাহ ভাবি তো দেখতে মাশাল্লাহ। ইসস ভাবির যদি একটা বোন থাকতো।”
সায়েদ আপনমনেই কথাগুলো বলে দেয়।অহনা পাশে থাকায় সে শুনতে পারে।অহনা মজা করার জন্য বলে,,,
“ভাবির বোন থাকলে কি হতো রে?”
অহনার কথায় আবির বুঝতে পারে যে সে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। আবির কথা ঘুরানোর জন্য বলে,,,
“কি হইতো আমার বেয়াইন হতো।তোদের মাথায় না কমন সেন্সও নেই।”
“ওহ রিয়েলি।”
অহনায় কথায় আবির আর আগায় না কারণ সে জানে এখন কথা আগালে অহনা তিলকে তাল বানিয়ে ছাড়বে।
ইতিমধ্যে গেস্টরা প্রশ্ন করা শুরু করে দিয়ে সায়েদ কোথায়? এখানে উপস্থিত নেই কেন?মিসেস পারভীন আর মিস্টার সাফোয়াত আরফান সব গেস্টদের সামলাচ্ছেন তাও এতো গেস্ট সামলানো তো সহজ নয়।কিছু গেস্ট এসে ইসরাকেই প্রশ্ন করছে আবার কয়েকজন অনেক কটু কথাও শুনাচ্ছে। এরই মধ্যে আবির, রনিত আর অহনা ইসরার সামনে গিয়ে দাড়ালো।
“আসসালামু আলাইকুম ভাবি।”
সবাই একসাথে সালাম দেওয়ায় ইসরা একটু অবাক হয়। তারপর নিজেকে সামলিয়ে সালামের জবাব দেয়।
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
রনিত বলে,,, “ভাবি আমরা হলাম সায়েদের ফ্রেন্ড। সায়েদ কোথায় ভাবি?”
ইসরা কিছু না বলেই মাথা নিচু করে রাখে।সবাই বুঝে যে সায়েদ এখানে উপস্থিত নেই।এছাড়া লোকের কানাঘুষাও তো তাদের কানে আসছেই। আবির প্রসঙ্গ এড়াতে বলে,,,,
“আরে সায়েদের কি দরকার ভাবি আছে না। আমরা তার সাথেই গল্প করবো।তা ভাবি আপনি কেমন আছেন?”
ইসরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা মেয়ে এসে ইসরাকে জড়িয়ে ধরে। সায়েদের ফ্রেন্ডরা তো সবাই তাজ্জব তাদের কথার মাঝেই এসে একজন তাদের ভাবি কে এভাবে জড়িয়ে ধরল যদিও সে মেয়ে তবে ইসরা মোটেও অবাক হয় নি। ইসরা বুঝেছে কে মেয়েটা।
“ওহ ইসু জানিস আমি তোকে কত্তত্তত্ত মিস করেছিলাম।তোর সাথে একদিন দেখা হয় নি মনে হচ্ছে আমার কত দিন দেখা হয় নি। জানিস আমি আশ্রমে খোঁজ লাগিয়ে জানি তুই সেদিনই চলে এসেছিলি।জানিস আমার কত্তত্ত মন খারাপ হয়েছে। আমাকে একবার বলে আসতে পারতি তো।আমাকে কি তোর একবারও মনে পড়ে নি?বল না ইসুউউ”
নিথু সবকিছু এক নাগাড়ে এক নিশ্বাসে বলে। এমনি দৌড়ে ছুটে এসেছে আবার এক নিশ্বাসে সব বলেছে তাই নিথু হাপাঁচ্ছে।
ইসরা এবার অস্থির হয়ে বলে,,,, “আরে থাম। সময় চলে যাচ্ছে না আসতে আসতে বল।নিশ্বাস নে ভালো করে।”
“আমি ঠিক আছি। জানিস তোর সাথে একদিন কথা হয় নি তাতেই আমার কত্তো কথা জমে গেছে। মনে হচ্ছে পেট ফেটে মারাই যাবো।”
নিথুর এমন কথায় ইসরা হেসে দেয়।একমাত্র নিথুই আছে যে ওর মন যেকোনো পপরিস্থিতিতে ভালো করতে পারে।
নিথুর পিছনে আবির, রনিত আর অহনা। অহনা কিছুটা গেস করেছে যে এটা হয়তো ভাবির ফ্রেন্ড। কিন্তু কেউই এখানো মুখ দেখে নি, দেখে নি বললে ভুল পিছনে থাকায় মুখ দেখা যাচ্ছে না।
ইসরা দেখলো আবির, রনিত আর অহনা সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই ইসরাই নিথুকে ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো।
“নিথু, পিছে ঘোর তো। তোকে কয়েকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”
নিথুও বাধ্য মেয়ের মতো পিছনে ঘুরে দেখে দুটো ছেলে আর একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।
নিথুকে দেখে তো আবিরের জান যায় যায় অবস্থা। এতো কিউট একটা মেয়ে আবিরের চোখই সরছে না।
ইসরা নিথুকে বলল,,,,”নিথু এরা হলো তোর দুলাভাইয়ের বন্ধুরা, এ হলো অহনা, এ রনিত ভাইয়া আর এ আবির ভাইয়া।”(সবার দিকে তাক করে)
অহনা আর রনিত নিথুর সাথে হাত মেলায়। কিন্তু নিথু আবিরের দিকে হাত বাড়ালে আবির হাত আগায় না।সে তো অপলক দৃষ্টিতে নিথুকে দেখতেই আছে। এদিকে নিথুও হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়েই আছে আর অবাক হচ্ছে হাত না আগানোর জন্য।
রনিত আবিরের বিষয়টা বুঝতে পেরেই আবিরকে,,,,,,,
[