এক জীবনে অনেক জীবন পর্ব ২

#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(২)
********************************

ঢাকা শহরের এই জ্যামটাকে এক্কেবারে অসহ্য লাগে জারা’র । শুধুমাত্র এই জ্যামের কারণেই এই শহরে থাকতে তার ভালো লাগে না । আরো বেশি অসহ্য লাগছে মা তার সাথে বের হয়েছে বলে । সে খুব ভালো করেই জানে মা’র এখন কোনো কাজই ছিলো না বাইরে । শুধুমাত্র তাকে পাহারা দেয়ার জন্যই মা এই কাজটা করেছে । অবশ্য এমন বিটকেল বুদ্ধি যে বাবা’র মাথা থেকে বেরিয়েছে সেই বিষয়ে জারা নিশ্চিত । বাবা যতো যা-ই করুক না কেন জারাকে তার সিদ্ধান্ত থেকে কিছুতেই সরাতে পারবে না । উহঃ অসহ্য লাগছে একদম, ধানমন্ডি থেকে বিজয় সারণীর মোড় পর্যন্ত আসতেই দেড় ঘন্টা চলে গেছে । ভার্সিটিতে পৌঁছাতে আরো কতক্ষণ লাগবে কে জানে । আজকেও প্রথম ক্লাসটা মিস যাবে তার । সেটা সমস্যা না, সমস্যা হলো আদিত্যর থাকার কথা সকাল সাড়ে এগারোটায় । এখন অলরেডি সাড়ে এগারোটা পার হয়ে গেছে । ফোন করে যে আদিত্যকে দেরির কথা বলবে, মা’র কারণে সেটাও পারছে না । ম্যাসেজ দিয়ে রাখতে পারে তবে তাতে কোনো কাজ হবে না । আদিত্য জীবনেও সময়মতো ম্যাসেজ সিন করে না । যাগগে যা হবে দেখা যাবে । আদিত্যের চিন্তা আপাতত বাদ দিয়ে সে মা’র দিকে মনোযোগ দিলো –

আচ্ছা মা এতো সকালে মার্কেটে তোমার কী কাজ বলো তো ? এখন তো মার্কেট ঠিকমতো খোলেওনি ।

আমার তো আজ এখানে আসতেই হতো । যা জ্যাম রাস্তায় বারবার না এসে সেইজন্য তোমার সাথেই চলে আসলাম । টার্কিশ ডিনারসেটটা চলে এসেছে । দোকানদার ফোন দিয়েছিল । তাছাড়া আপার বাসায়ও কাজ আছে । আচ্ছা একটা কথা বলো তো জারা , সত্যি করে বলবে বলে দিলাম । কোনো মিথ্যা আমি শুনতে চাচ্ছি না । রাতেই কথাগুলো বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই তুমি ঘুমিয়ে গেছো ।

কী কথা মা ?

তুমি জানো কী কথা তবুও বলছি । আমাদের বাসায় এখন এই একটা বিষয় নিয়েই যতো অশান্তি হচ্ছে । তুমি একদম বুঝতে চেষ্টা করছো না জারা, তোমার এমন কাজে আমরা সবাই কতোটা কষ্ট পাচ্ছি । এই যে এমন একটা ফালতু…. কথাটা বলেই লুকিং গ্লাসে চোখ যায় তাবাসসুমের । ড্রাইভার মন্টু গাড়ি চালালেও চোখে আর কান দুটোই পেছনে দিয়ে রেখেছে । মা মেয়ের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে চেষ্টা করছে । তাবাসসুমের মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো । এতোটা বোকামি কী করে করছে সে ! ঘরের কথা নিজে সেধে বাইরের লোকের কানে তুলে দিচ্ছে । এখন মন্টু যেয়ে রাষ্ট্র করবে কথাটা । তাড়াতাড়ি কথা পাল্টে ফেললেন তাবাসসুম –

তোমার লেখাপড়া নিয়ে আমরা সত্যি খুব টেনশনে আছি । বন্ধুবান্ধব , আড্ডা, বেড়ানো এগুলো একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে তোমার ।

জারা কিছু বুঝতে না পেরে মা’র দিকে তাকিয়ে থাকলো । এসব নিয়ে আবার কখন অশান্তি শুরু হলো বাসায় !

তাবাসসুম তাকিয়ে দেখলেন মন্টু ভ্রু কুঁচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে । যা সে শুনতে চাচ্ছিল, খালাম্মা সেই কথা না বলায় যেন ভীষণ বেজার । তাবাসসুম বললেন –

আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেবো, তুমি কী খালামনির বাসায় আসবে নাকি আমি আবার আসবো তোমাকে নিতে ?

না আমি ওখানে যাবো না । তুমি কতক্ষণ থাকবে খালামনির বাসায় ?

আমার বেশিক্ষণ লাগবে না । তোমার ক্লাস শেষ হবে কখন?

তুমি তোমার শেষ করে বাসায় এসো । আমি ক্লাস শেষে সিএনজি নিয়ে চলে আসবো মা ।

পাগল না-কি ? আমি এখানে, গাড়ি এখানে আর তুমি সিএনজিতে বাসায় ফিরবে ! কোনোদিন চড়েছো সিএনজিতে ? রাস্তাঘাট চেনো ? ওরা কোথাও নিয়ে চলে গেলে কিচ্ছু করতে পারবে তুমি ?

জারা মনে মনে হাসলো । মা যদি জানতো সে আদিত্যের সাথে কতোদিন ঘুরে বেড়িয়েছে সিএনজিতে তাহলে মাথা ঘুরে পড়েই যেতো । বুঝলো আজ মা’র কাছ থেকে বাঁচতে পারবে না সে । তাই খামোখা আর ভেজাল না করে বললো –

তুমি দুটোর সময় চলে আসতে পারবে ক্যাম্পাসে, না-কি আরেকটু সময় লাগবে ?

দুটোয় তোমার ক্লাস শেষ ?

হুম ।

ঠিক আছে । তারপরও যদি একটু দেরি হয়, তুমি ক্যাম্পাসের ভেতরেই থেকো আর ফোনটা রিসিভ করো । কাজের সময় তুমি কখনোই ফোনটা রিসিভ করো না ।

জ্বি মা ঠিক আছে ।

জারাকে ক্যাম্পাসে নামিয়ে দিয়ে গাড়িটা চলে যেতেই জারা তাড়াতাড়ি ফোন করে আদিত্যকে । ফোন বন্ধ । কয়েকবার ফোন করে একই উত্তর শুনে তার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো । ফোনটা সাইলেন্ট করে ব্যাগে রেগে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালো জারা ।

মন্টু তাবাসসুমকে জিজ্ঞেস করলো –

কোন মার্কেটে যামু খালাম্মা ?

মার্কেটে পরে যাবো, তুমি বড় আপার বাসায় চলো ।

মন্টু আর কোনো কথা না বলে গাড়ি ঘোরালো বড় খালার বাড়ির দিকে ।

ছোট বোনকে সকাল সকাল দেখে একটু অবাক হলেন ফেরদৌসী । বললেন –

কী রে কোনো খবর না দিয়ে হঠাৎ এই সকালে ?

কেন আসতে পারি না না-কি ? জারাকে দিতে এসেছিলাম আপা । দুটোয় ক্লাস শেষ হবে তখন নিয়ে যাবো ।

কেন জারার কী স্পেশাল কিছু আছে না-কি আজকে? নিয়ে আসতে হলো কেন? ও তো একাই আসে । আচ্ছা সেদিন যেন কী বলছিলি জারার কথা ? এতো তাড়াহুড়ায় বললি, আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না । কী হয়েছে বল তো ?

খুব অশান্তিতে আছি আপা । রোজা আর শাফিনকে বড় করলাম, কোনোদিন বাচ্চা দু’টো এতোটুকু জ্বালায়নি আমাকে । যেভাবে বলেছি সেভাবে চলেছে সবসময় ।

কেন কী করেছে জারা ?

তোমাকে একটা ছেলের কথা বলেছিলাম না । খুবই ফালতু টাইপ ছেলেটা ।

হ্যাঁ হ্যাঁ কী হয়েছে বলতো , প্রেম ট্রেম শুরু করে দেয়নি তো আবার ?

তেমনই আপা ।

বলিস কী , তুই দেখেছিস ছেলেটাকে?

না আমি দেখিনি ।

কোত্থেকে জুটিয়েছে বল তো ? ওর সাথে পড়ে না-কি ?

না ওর সাথে পড়ে না , ফেসবুকে পরিচয় ।

কী সাংঘাতিক ! এই ফেসবুক তো খেয়ে ফেললো ছেলেপুলেদের ।

আমার এই বাচ্চা মেয়ের মাথাটা একদম নষ্ট হয়ে গেছে আপা । এতো করে বুঝাচ্ছি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না ।

তুই তো আমার কথা শুনতে চাস না কখনো । শোন এইসব প্রেম পিরিতির কঠিন ওষুধ আছে আমার হাতে । মেয়ে এক্কেবারে সোজা হয়ে যাবে ।

কী বলো আপা, ওষুধ আবার কী ?

আরে আমার ননদ লিমার মেয়ে এক্কেবারে পাগল হয়ে গিয়েছিল । দোষ অবশ্য লিমার বরের । চ্যাংড়া এক ছেলেকে রেখেছিলো ড্রাইভার হিসেবে । তুই বিশ্বাস করবি না তাবাসসুম, ছেলেটাকে ড্রাইভার মনেই হয় না । এতো স্মার্ট আর সুন্দর দেখতে, কী বলবো । ওর মেয়েকে নিয়ে কলেজে , কোচিং-এ সব জায়গায় যেতো ঐ ছেলে আর লিমা নাকে তেলে দিয়ে ঘুমাতো , তারপর যা হওয়ার তাই হলো ।

কী হলো আপা ?

কী আবার ? ছেলের সাথে কঠিন প্রেম হয়ে গেলো । কী যা-তা অবস্থা । লজ্জায় ওরা কারো কাছে বলতেও পারে না মেয়ের কান্ড । এদিকে মেয়ে তো পুরাই পাগল ঐ ছেলের জন্য । বাপ-মা তখন ওর কাছে শত্রু । লিমা তো কাঁদতে কাঁদতে শেষ । কলকব্জা নেড়ে সেই মেয়েকে পুরা সোজা করে ফেললাম । প্রেমের ভুত দৌড়ে পালিয়েছে ।

কী করেছিলে আপা ?

কী আবার করবো ? ঐ যে টুন্ডু হুজুর আছে না, উনিই তো বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন । তুই তো তাঁর নাম শুনলেই রাগ হয়ে যাস ।

ওহ আপা, বিপদ থেকে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ উদ্ধার করতে পারেন না । আমি বুঝি না শিক্ষিত একজন মানুষ হয়ে তুমি কেমন করে এইসব ফালতু জিনিসে বিশ্বাস করো !

এই জন্যেই তো তোকে বলতে চাইনি । আরে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর । লিমা বিশ্বাস করেছে, ও টুন্ডু হুজুরের কাছে মোট সাত বার গিয়েছে পূর্ণ বিশ্বাস আর ভক্তি নিয়ে । তাতেই দেখ মেয়ে কী সুন্দর বশ মেনে গেছে ।

আপা আমাকে বলেছো ঠিক আছে কায়সারের কানে যদি যায় তোমার এই ঠান্ডু ফান্ডু হুজুরের নাম….

ছি ছি হুজুরের নাম এভাবে বলছিস কেন ? ওনার নাম টুন্ডু । একটু আদবের সাথে বল তাবাসসুম । তোর এখন ঘোর বিপদ ।

থাক বাদ দাও । জাফরিন কোথায় আপা ?

ও তো ক্লাসে । শোন কথা ঘুরাস না ।

আপা এই বিষয়টা এখন থাক । অন্য সময় কথা বলবো এটা নিয়ে । তাবাসসুম মনে মনে ভাবেন , আপাটা দিন দিন যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে । এই সমস্ত কুসংস্কার, ভন্ড পীর এরা একদম চেপে বসে আছে ওর ঘাড়ে । ঠিক করলেন বোনের সাথে এই বিষয়ে আর কোনো কথাই বলবেন না তিনি । নিজের মতো করেই সমাধানের পথ খুঁজে নেবেন । বোনের কাছে একটু শান্তির আশায় এসে আরো অশান্ত হয়ে গেল মনটা ।

সময়মতো মেয়েকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে নিলেন তাবাসসুম । আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন আজ মেয়েকে নিয়ে বাইরে খাবেন । রেস্তোরাঁয় ঢুকে কর্নারের নিরিবিলি জায়গায় যেয়ে বসলেন মেয়েকে নিয়ে । মেন্যু এগিয়ে দিয়ে বললেন –

তুমি অর্ডার করো । আজ তোমার পছন্দের খাবার খাবো দুজন ।

আমার পছন্দের খাবার তো তোমার ভালো লাগবে না মা । সব স্মোকি আর….

আজ না হয় খেয়ে দেখবো কেমন লাগে । তুমি অর্ডার দাও ।

জারা খুশি হয়ে গেলো মা’র কথায় । তার পছন্দের চিকেন, পাস্তা আর বিফ স্টেক অর্ডার করে মোবাইলে চোখ রাখলো । তাবাসসুম কথা গুছিয়ে নিয়ে শুরু করলেন –

জারা ফোনটা রাখো ।

জারা ফোনটা হাত থেকে নামিয়ে রাখতেই বললেন –

না এখানে না, ব্যাগে রাখো ।

জারা মা’র দিকে এক পলক তাকিয়ে ফোনটা ব্যাগে ভরে রাখলো ।

এবার মন দিয়ে আমার কথা শুনবে আর আমি আশা করছি তুমি আমার কথাগুলো বুঝে সেভাবেই কাজ করবে ।

জারা বুঝলো মা তাকে আবারো সেই একই কথা বলার জন্য এখানে এনেছে । মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো তার কিন্তু মা’কে বুঝতে দিলো না সেটা ।

তাবাসসুম মেয়ের হাতটা ধরে বললেন –

তুমি এমন করছো কেন জারা ? তুমি নিজে যদি একবার বুঝতে পারতে কী বিরাট ভুল তুমি করছো তাহলে সাথে সাথে ঐ পথ থেকে ফিরে আসতে ।

আমি কোনো ভুল করছি না মা । একটা রিলেশনে থাকা নিশ্চয়ই কোনো ভুল না । সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো বয়স আমার হয়েছে মা । আমি নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে পারি ।

তোমার ভালো-মন্দ বোঝার মতো বয়স হয়নি জারা । নিজের ভালোটা বুঝলে তুমি এমনটা করতে না ।

মা, আমার একুশ বছর বয়স । আমি সব বুঝি আর খুব ভালোভাবেই বুঝি । তোমরা ই অবুঝের মতো করছো ।

আমরা অবুঝের মতো করছি !

হ্যাঁ তোমরা । তোমরা আমাকে একবারও বুঝতে চেষ্টা করছো না । আজকাল সবারই রিলেশন থাকে ।

জারা তুমি বুঝতে পারছো না যে ঐ ছেলেটা ভালো না ।

মা না জেনে কারো সম্বন্ধে তুমি এভাবে বলতে পারো না । তুমি ধরেই নিয়েছো ও খারাপ ।

ঐ ছেলেকে তুমি কতোটুকুই বা চেনো বল তো ? ফেসবুকে পরিচয় । শোনো জারা এগুলো বেশিরভাগ সময়ই ফ্রড থাকে । তোমার মতো বোকাসোকা মেয়েদের ফাঁসানোর জন্য…

মা আদিত্য এমন ছেলে না ।

কতো দিনের রিলেশন হয়েছে তোমাদের বলো ? কতো দিন ধরে চেনো ঐ ছেলেকে ? বলো কতো দিন?

মা’র দিকে তাকিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে জারা বললো ছয় মাস ।

আমার মেয়েকে আজ একুশ বছর পরে এসে আমার অচেনা মনে হচ্ছে , মেয়ে আমাকে এতো বছরেও বুঝতে পারলো না আর তুমি ছয় মাসে একটা ছেলেকে এতো ভালো চিনে গেলে ! সম্ভব জারা ?

মা ও খুব ভালো ছেলে , তুমি কেন শুধু শুধু ওকে খারাপ ভাবছো আমি বুঝতে পারছি না ।

সে জন্যেই তো তোমাকে ব্ল্যাক মেইল করে বারো হাজার টাকা বের করে নিয়েছে ।

ব্ল্যাক মেইল , টাকা !

মিথ্যে বলবে তুমি আমার সাথে ? সে তোমার কাছ থেকে টাকা নেয়নি ইমার্জেন্সির কথা বলে ?

জারা খুব অবাক হয়ে ভাবে মা এতোকিছু জানলো কী করে ! তারপরই বললো –

তানিশা বলেছে তোমাকে !

না তানিশা আমাকে কিছু বলেনি আর আমি এতোটাও নিচে নামিনি এখনো যে মেয়ের বন্ধুর কাছ থেকে মেয়ের ইনফরমেশন নেবো । তুমি ফোনে কথা বলার সময় আমি শুনেছি সেদিন আর ছেলেটার সম্পর্কে কিছুটা খোঁজ তো আমিও নিয়েছি জারা । তুমি যেভাবে বড় হয়েছো , আমরা তোমাকে যে স্বাধীনতাটুকু দিয়েছি তার সাথে এই ছেলের ফ্যামিলি বলো আর পরিবেশ বলো, কোনো মিলই নেই । আমি জানি তুমি কখনোই এমন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে না । জীবনটা খুব কঠিন রে মা । এই ছেলের সাথে তুমি কখনোই ভালো থাকতে পারবে না, কক্ষণো না আর আমি কখনোই আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট হতে দেবো না । তুমি তোমার বোনকে দেখছো না কেন ? রোজা লেখাপড়া শেষ করে নিজের লাইফটা গুছিয়ে এনেছে, সিয়ামের মতো চমৎকার একজনকে পেয়েছে লাইফ পার্টনার হিসেবে । তোমার তো ওকে দেখেও বুঝতে পারা উচিত জীবনটা কীভাবে গোছাবে । জারা শোনো আমরা চাচ্ছি তুমি শাফিনের ওখানে যেয়ে বাকি পড়া শেষ করো ।

না মা নো ওয়ে । আমি বাইরে যেতে চাই না ।

কেন চাও না ? তুমি কী আসলেই বুঝতে পারছো না যে আমরা তোমার ভালোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি । নিজের ফিউচার গড়ার তো এটাই সময় তোমার । এই সময়ে একটা ভুল মানে সারা জীবনের আফসোস । এই ছেলেটার সাথে নিজের জীবনটা জড়ালে তোমাকে সারাজীবন সাফার করতে হবে জারা । শোনো জারা তোমার বাবা কিন্তু খুব বেশি টেনশনে আছে তোমাকে নিয়ে । তুমি নিশ্চয়ই চাও না বাবা আবার হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়ুক ? খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, খাও ।

জারা কোনো কথা না বলে নিঃশব্দে খেতে লাগলো । তাবাসসুম মেয়ের চেহারা দেখে মনের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করলেন । তার আদরের বাচ্চাটা কখন যে এতোটা দূরে সরে গেল তার কাছ থেকে ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি । এতো আদর, এতো ভালোবাসা এসবের কী কোনো মূল্যই নেই ? তিনি জারার হাতটা ধরে বললেন –

ফিরে এসো মা, এখনও কিছুই হয়নি কিচ্ছু না । দুদিন পরে এই ছেলের কথা তোমার মনেও থাকবে না তখন এই রিলেশনের কথা ভেবে তুমিই লজ্জা পাবে । বাবার কথাও একবার ভাববে না ? তোমার খারাপ কিছু হলে বাবা একদম শেষ হয়ে যাবে ।

মা’র কথা শুনে জারা খাওয়া থামিয়ে বসে থাকলো । সে কী সত্যিই কোনো ভুল করছে ? আদিত্যকে তো সে কোনোভাবেই খারাপ ভাবতে পারছে না । হঠাৎ কথাটা মনে পড়তেই জারা অভিমানী কন্ঠে বললো –

তোমরা যে কাজটা করতে যাচ্ছিলে সেটা কী ঠিক হলো মা ?

কোন কাজ !

টাকলু মমিন আংকেল কেন এসেছিল আমি জানি মা ।

টাকলু মমিন মানে কী ? ছি ছি উনি যদি জানতে পারেন ভীষণ মন খারাপ করবেন । উনি তোমাদের কতো আদর করেন । উনি তো কাজে এসেছিলেন বাবার কাছে । এটাকে তুমি এভাবে নিচ্ছো কেন?

তাহলে বাবা এতো রাগ করলো কেন আমার ওপর ? আমি সব বুঝি মা । তোমরা জোর করে আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছো তাই না মা ? আপু কথাটা বলতে যেয়েও থেমে গিয়েছে কিন্তু আমি ঠিকই বুঝেছি ।

জারার এমন কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন তাবাসসুম । কায়সারকে তিনি নিষেধ করেছিলেন এমন কিছু করতে । মেয়েকে অন্যভাবে বোঝানোর জন্য তিনি বললেন –

তুমি আবারও ভুল বুঝলে তো আমাদের ? মমিন ভাই সত্যিই ওনার কাজের জন্যেই এসেছিলেন । তাছাড়া ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেলে বিয়ের কথাবার্তা তো হতেই থাকে, তাই বলে আমরা কী এখনই তোমার বিয়ে দিয়ে দেবো না-কি? বোকা মেয়ে কেথাকার, আগে লেখাপড়া তারপর অন্য কিছু ।

মা সত্যি করে একটা কথার উত্তর দেবে?

কী কথা জারা ?

তুমি আজকে আমাকে পাহারা দেয়ার জন্যই এসেছো তাই না মা ? বাবা পাঠিয়েছে তোমাকে ?

ওহ, তার মানে আমি যে তোমাকে বললাম বড় আপার বাসায় কাজ আছে, ডিনার সেটটা নিতে হবে সেটা তুমি বিশ্বাস করলে না ! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তাবাসসুম ।

সরি মা, তুমি কখনো আমার সাথে আসো না তো তাই আজকে হঠাৎ তোমাকে আসতে দেখে আমার এটাই মনে হয়েছিল ।

এখনো কী তাই মনে হচ্ছে ?

নাহ এখন আর মনে হচ্ছে না , জারা হেসে মা’র হাতটা ধরলো ।

তাবাসসুম মেয়ের দিকে তাকালেন । কী নিষ্পাপ লাগছে মেয়েটাকে এখন দেখতে । ইচ্ছে করছে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করতে । কতোদিন মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরা হয় না । মনে মনে ঠিক করলেন , যতোটুকু বিপদ হওয়ার তা তো হয়েই গেছে , এই ঝামেলা থেকে মেয়েকে তিনি বের করবেনই ।..……….….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here