#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-২৭♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
অন্বিতা ঘরে দরজা দিয়েছে প্রায় ৩ ঘন্টা পাড় হতে চললো। এতোগুলো সময় পেরিয়ে যাবার পরও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না আসায় ভয়ে কুঁকড়ে উঠেছে আনন্দ। সেই যে মেয়েটা সন্ধ্যের পর পর ভেজা শরীরে বাড়ি ফিরেছে তারপর থেকেই দরজা বন্ধ করে নিজেকে বন্দী বানিয়ে রেখেছে এখন পর্যন্ত। সাথে দিব্যি আনন্দকে টেনশনের বেড়াজালে ফেলে ঘাম ছোটাচ্ছে অবলীলায়। পুরো বাড়ি জুড়ে বিরাজমান নিস্তব্ধতা! বাবা বাড়িতে নেই, বর্তমানে অফিসেই তার ঠিকানা৷ এরকম দূর্বিষহ মুহূর্তে একা আনন্দ ঠিক কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না কিছুতেই। বয়সে ছোট হলেও ভাইয়ের কর্তব্য বলে একটা চিরন্তন সত্য আছে বৈকি! যার চরম পরিহাসে দুশ্চিন্তায় দগ্ধ হয়ে চলেছে আনন্দর মন।
আনন্দ এবার আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারলো না। গটগট করে বড়বড় পায়ে ছুট লাগিয়ে নিশান্তদের গেইটের সামনে গিয়ে জোড়ে জোড়ে বার কয়েক কলিং বেল চাপলো। সেকেন্ডের মাঝে কারো দরজা না খোলায় আবারও অস্থিরতার বশে কলিং বেল চাপতে নিতেই খট করে দরজায় আওয়াজ হলো। আনন্দ থেমে গেলো, ভেতর থেকে দরজাটা হাল্কাভাবে খুলে নূহা মাথা বের করে তাকালো। আনন্দর কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ঘাম। ঝাঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো হয়ে একাকার। তার এমন নাজেহাল চেহারা দেখে ঠোঁট উল্টালো নূহা। মিনমিন করে উদ্বীগ্ন চোখে চেয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
—– আন্নু ভাই, তুমি এই সময়! খেলতে এসেছ বুঝি?
আনন্দ নূহার কথার কোনো তোয়াক্কা না করে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে পড়লো। চিন্তিত গলায় সাথেসাথেই হাঁক ছাড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে,
—– আংকেল, আন্টি….নিশান্ত ভাই…! কোথায় তোমরা?
আনন্দর চিৎকারে বেডরুম থেকে একপ্রকার ছুট লাগিয়ে বেরিয়ে এলেন আফসানা বেগম এবং রফিক আহমেদ। আনন্দকে উদ্দেশ্য করে ব্যস্ত গলায় আফসানা বেগম প্রশ্ন ছুড়লেন,
—– আনন্দ, কী হয়েছে? তোমায় এমন লাগছে কেনো বাবা, সব ঠিক আছে তো?
আনন্দ হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো,
—– অ..অন্বিপু দরজা খুলছে না! অনেকবার ডেকেছি তাও কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিনা। আমার খুব ভয় করছে, আপুর কিছু হলো না তো!
—– সেকি! কখন থেকে দরজা খুলছে না অন্বিতা?
রফিক আহমেদের প্রশ্নের বিপরীতে ধরা গলায় জবাব স্বরূপ আনন্দ বলল,
—– ৩ ঘন্টা পেড়িয়ে গেছে প্রায়!
আনন্দের জবাবে একে-অপরের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালেন আফসানা বেগম-রফিক আহমেদ। আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে একপ্রকার ঝড়ের বেগে অন্বিতার উদ্দেশ্যে বেরোলেন সকলে। তাদের এভাবে হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে দেখে নূহাও তার ছোট্ট ছোট্ট পায়ে ছুট লাগালো তৎক্ষণাৎ।
১ মিনিট পূর্ণ হবার পূর্বেই তারা পৌঁছাল অন্বিতার ঘরের সামনে। রফিক আহমেদ আফসানা বেগমের দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালেন। আফসানা বেগম চোখের ইশারায় পলক ঝাপটে সম্মতি জানাতেই ছোট্ট করে শ্বাস ফেললেন। এই মুহুর্তে দরজা ভাঙা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই দেখে মনস্থির করে কয়েক ধাপ পেছালেন। উদ্দেশ্য শরীরের সমস্ত শক্তি বাহুতে প্রয়োগ করে দরজা ভেঙে ফেলা। তবে তার সমস্ত পরিকল্পনা বিফলে ফেলে মুহুর্তেই ছিটকিনি খুলে বেরিয়ে এলো অন্বিতা। রফিক আহমেদ ভড়কে গিয়ে ব্রেক মারলেন। আর একটু হলেই সোজা অন্বিতার ওপর গিয়ে ভয়াবহ এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে ফেলতেন নির্ঘাত। অন্বিতাকে মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে সবাই বিস্মিত চোখে মুখ হা করে তাকালো। শুধু থমকালোনা আনন্দ। এক ছুটে বোনের কোমড় জড়িয়ে ধরে চাপা গলায় কান্না জুড়ে দিলো সে। আনন্দর দেখাদেখি নূহাও ছুটে গিয়ে পা জড়িয়ে ধরলো তার মিষ্টিপুর! দুজনের চোখেমুখেই বিশাল প্রাপ্তির ছাপ। আনন্দের কান্নায় মিশ্রিত শতশত হাহাকার ভরা আবেগ। হাজার হোক নিজের বোন বলে কথা। যে আজীবন বোনের থেকে ঊর্ধ্বে গিয়ে মায়ের দায়িত্ব পালনে নিয়জিত ছিল, তার কিছু হলে কীভাবে বাঁচত আনন্দ?
আফসানা বেগম এগিয়ে এসে অন্বিতার মাথায় হাত বুলালেন। প্রশ্নোক্ত চোখে চেয়ে বলে উঠলেন,
—– অন্বিতা মা, এতোক্ষণ কী করছিলে তুমি? আনন্দ বললো তিন ঘন্টা ধরে একইভাবে ঘরে বন্দী হয়ে আছো তুমি, ডাকাডাকি করেও কোনো উত্তর পায় নি। তাইতো ভয় পেয়ে আমাদের কাছে গিয়েছে, আর আমরাও তো ভয়ে আঁতকে উঠেছিলাম। ভাবলাম কী না কী হয়ে গেল! এভাবে কেউ এতোগুলা মানুষকে চিন্তায় ফেলে বলো?
—– আরে এদিকে আমি যে আরেকটু হলে হাতটা পাউডার বানিয়ে দরজা ভাঙতে বসেছিলাম সেদিকে খেয়াল আছে? কী করছিলে তুমি অন্বিতা?
আফসানা বেগম ও রফিক আহমেদের একের পর এক প্রশ্নে জিহ্ব কামড়ে চোখ-মুখ কুঁচকালো অন্বিতা। আনন্দ আর নূহার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
—– ইশশ! এদিকে এতো কান্ড হয়ে গেলো আর আমি কিচ্ছু টেরই পেলাম না, দেখেছেন আংকেল-আন্টি কীরকম মরার মতো ঘুমোই আমি।
আনন্দ অন্বিতাকে ছেড়ে দাঁড়ালো। অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে চেয়ে অবাক কন্ঠে বলল,
—– কী! তুমি এতোক্ষণ ধরে ঘুমোচ্ছিলে আপু?
আনন্দর প্রশ্নে বাকি সবাইও উদ্বিগ্ন চোখে তাকালো। অন্বিতা বোকা হাসি মুখে ঝুলিয়ে চুলে জড়ানো টাওয়েলে হাত রেখে বললো,
—– হ্যাঁ ঘুমোচ্ছিলামই তো! সেই যে ক্লান্ত শরীরে এসে গোসল সেরে শুলাম। উফফফ! আর টেরই পেলাম না। পুরো আড়াই ঘন্টা পর উঠলাম। ভাবা যায়? আর এই দেখো চুল থেকে টাওয়েলটা পর্যন্ত খোলা হয়নি আমার। ওভাবেই ঘুম! ইশশ কী অবস্থা!
আফসানা বেগম আর রফিক আহমেদ অন্বিতার কথায় হেসে ফেললেন। রফিক আহমেদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বললেন,
—– যাক বাবা তাও তো বের হলে, আর কয়েক সেকেন্ড পর বের হলে আমার হাত সাথে দরজা, দুটোর একটাও আস্ত থাকতোনা!
অন্বিতা মাথা চুলকে অপরাধীর দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
—– ক্ষমা করবেন আংকেল-আন্টি! এই অবেলায় আমার জন্য আপনাদের এতো হয়রান হতে হলো।
—– আরে আমরা তো মজা করে বলছিলাম, বোকা মেয়ে! কোনো সমস্যা নেই। আর আনন্দ, ইউ আর সাচ আ কেয়ারফুল বয় ম্যান! এভাবেই যেকোনো বিপদে আপদে পড়লে কিন্তু আমাদের জানাবে। আমরা তো নিচেই আছি, জাস্ট কয়েকটা সিঁড়ি টপকে গেলেই হলো।
রফিক আহমেদের কথায় একটু হলেও আস্বস্ত হলো অন্বিতা। আনন্দ চোখ মুছে হ্যাঁ সূচক মাথা ঝাঁকাল। নূহা দাঁত বের করে বললো,
—– আরে তোমরা শুধু শুধু চিন্তা করছিলে, আমি আগে থেকেই জানতাম আমার মিষ্টিপুর কিছু হতেই পারেনা। মিষ্টিপু তো স্ট্রং এন্ড সুপার উইমেন! তোমাদের মতো উইক নাকি?
নূহার পাকাপাকা কথায় হু হা করে হেসে উঠলো সবাই। অন্বিতা নূহার গাল টেনে মুচকি হাসলো৷ আফসানা বেগম এবং রফিক আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—– আংকেল-আন্টি আপনারা বসুন, আমি আপনাদের চা করে খাওয়াই।
বিনিময়ে হাত নাড়িয়ে বাঁধা দিলেন দুজনেই। আফসানা বেগম নূহাকে কোলে উঠিয়ে বললেন,
—– আরে না না, এতো রাতে এসবে যেয়ো না। অন্য কোনো দিন! আমজাদ ভাই তো একটু পরই আসবে মনে হয়, বাবা-ভাই-বোন মিলে তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে ফেলো। আমরা বরং আসছি।
অন্বিতা মুচকি হেসে সম্মতি জানালো। পাশ থেকে আনন্দ প্রশ্ন ছুড়ল,
—– আচ্ছা আন্টি, নিশান্ত ভাইকে দেখলাম না। ভাইয়া কী ঘুমিয়ে পড়েছে?
—– না বাবা, নিশান্ত এখনোও বাড়িই ফিরে নি। সন্ধ্যের দিকে ফোন করে বলল আজ নাকি এক্সামের শেষ দিন তাই বন্ধু-বান্ধবেরা মিলে একসাথে থাকবে। আমিও আজ আর বাঁধা দিলাম না। সময় কাটাক নাহয় সবাই মিলে। এতোগুলা বছর তো শাসনেই বড় হলো।
—– ওহ আচ্ছা!
অন্বিতা কপাল কুঁচকালো। আজ যখন সে নিশান্তের অপেক্ষায় ছিলো তখন তো আর কাউকে নজরে পরেনি তার। নিশান্ত তো একলাই বাড়ি ফিরছিলো, তবে হঠাৎ বাড়ি না ফিরে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডায় আসর জমাবে তাও আবার এরকম একটা সিচুয়েশন ক্রিয়েট হবার পর! এতো মানা যায় না। নিশান্ত কী আফসানা বেগমকে মিথ্যে বলে অন্য কোথাও গিয়েছে? যদি গিয়েই থাকে তবে কোথায়?
এমন হাজারও প্রশ্ন মাথায় জট পাকাতে পাকাতেই নূহাদের যাবার পর দরজা লাগিয়ে উত্তপ্ত শ্বাস ফেললো অন্বিতা।
আনন্দ এবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো বোনের পানে। তার সুক্ষ্ম নজর ঘুরেফিরে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়লো অন্বিতাকে। অন্বিতার চোখ-মুখ ফোলা, নাকের ডগা অসম্ভব পরিমাণে লাল যেমনটা ঠান্ডা লাগলে সচারাচর হয়ে থাকে। চুল থেকে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে জল। এতোক্ষণ টাওয়েলে পেঁচানো থাকায় সেই গড়িয়ে পড়া জলের অস্তিত্ব আবিষ্কারে সক্ষম হয়নি কেউই। কিন্তু অন্বিতা তো বলল সে এতোক্ষণ ঘুমোচ্ছিল। তবে কেনো এমন লাগছে যে সে সদ্য শাওয়ার সেরে বের হলো? আনন্দ মনে এরকম শতশত প্রশ্নের জাল বুনতে শুরু করলো। কেনো যেনো অন্বিতাকে একেবারেই বিশ্বাস করতে পারছ না সে। অন্বিতা হাসছে, তার হাসিটা রোজ দিনকার ভারসাম্য হলেও আজ তাতে ছেয়ে আছে অন্য কোনো ছাপ। আনন্দর মনে হচ্ছে এই হাসি শুধুমাত্র লোক দেখানো। এতো বছর হলো বোনকে কখনোও হাসার বদলে কাঁদতে দেখেনি সে। তবে আজ কেনো এতো লুকোচুরি? কী আছে এই মিথ্যে হাসির পেছনে?
_____________________________
আকাশের কালো মেঘ বৃষ্টির দরুন কেটে গিয়ে সেজেছে নতুন রঙে। স্বচ্ছতায় ছেয়ে আছে আকাশের প্রতিটি স্তর যেনো। হিমশীতল হাওয়ায় গাছের পাতাগুলো থেমে থেমে নড়ে উঠছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে নিশান্তের আধভেজা চুলগুলো। সে একইভাবে স্থির দৃষ্টিতে আকাশ পানে চেয়ে আছে অনেকক্ষণ যাবৎ। ভেজা শার্টটা গায়ে থাকাকালীনই শুকিয়ে এসেছে প্রায়।
৮ তলা ভবনের ছাদের রেলিঙে পা ছড়িয়ে বসে আছে সে। নিচে ব্যস্ত শহরের হাজার হাজার মানুষের চলাচলে মুখরিত হয়ে আছে সড়ক। ছাদ থেকে সেসব শুধুমাত্র পিঁপড়ে সমতূল্য মাত্র। তবে নিশান্তের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। আর না আছে জীবন নিয়ে ভয়। একটু নড়াচড়া করতে গেলেই সোজা ছাদ থেকে পার্মানেন্টলি উপরে যাবার টিকিট কাটা হয়ে যাবে মুহুর্তেই। নিশান্তের না ইচ্ছে রেলিং থেকে নেমে দাঁড়াতে আর না ইচ্ছে হচ্ছে এই সুউচ্চ ইমারত থেকে ঝাঁপ মেরে লাফিয়ে শরীরটাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলতে। ঠিক এমনই এক দোটানায় ভুগছে তার মন। জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে চলেছে প্রতিক্ষণ।
সানি-রিভান ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে স্থির দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে নিশান্তকে। নিশান্তের চোখ রক্তলাল বর্ণে প্লাবিত হয়ে চলেছে। জমাট বাঁধা জলগুলো ছলছল নয়নে খেলা করলেও ঝরছে না মোটেই। চাপা আর্তনাদ ও হাহাকারেই সীমাবদ্ধতা তাদের। আচ্ছা হঠাৎ কী হলো ছেলেটার? কেনো হলো এমন! সে তো আজ প্রথম বৃষ্টিতে ভেজার বায়না ধরেছিল। হাজার মানা কথাও কানে তুলেনি তখন। তবে বৃষ্টিতে কী এমন ছিলো যার দরুন ভেজা গায়ে একরাশ নিস্তব্ধতায় ছেয়ে সানির ফ্ল্যাটে ফিরতে হলো তাকে? কেনো সে এতোটা নিশ্চুপ?
এই পর্যন্ত ঠিক কতোবার কতশত প্রশ্নে মুখরিত হয়েছে সানি-রিভানের মুখ তার হিসেব নেই কারো কাছেই তবু বিনিময়ে নিশান্তের ঠোঁট নিসৃত হয়ে ফেরেনি কোনো উত্তর। গত ৪ ঘন্টা যাবৎ শুধুমাত্র একটা লাইনই আওড়েছে সে। লাইনটা হলো, “আমায় দয়া করে একটু একা দেখতে দে!” এই একবাক্য থেকে দ্বিতীয় বাক্যে আর পরিস্ফুটিত হয়নি তার মুখ থেকে। যার দরুন সানি-রিভানের চোখেমুখে চরম হতাশার ছাপ। তাদের ধারণা এই মুহুর্তে বেশি চেপে ধরলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। তবে কী করবে তারা? এভাবে চুপচাপ আর কতোক্ষণ? চুপ থেকে তো কোনো কিছুর সমাধান করাও সম্ভব নয়। অনেক ভাবাভাবির পর সটান হয়ে দাঁড়ালো রিভান। জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সানির উদ্দেশ্যে বলল,
—– সানি লিওন, এবার আমার আর সহ্য হচ্ছে না। নিশান্তের পেট থেকে কথা বের করতে এবার যদি আমায় ছাদ থেকে পড়ে আহত কিংবা নিহতও হতে হয় তবু আমি রাজী। বাট নিশান্তকে এভাবে দেখতে পারবো না আর আমি।
বলেই গটগট করে ধাপ ফেলে নিশান্তের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো রিভান। সানির চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ। তবু নিরুপায় ভেবে ধীর পায়ে সেও গিয়ে দাঁড়ালো রিভানের পাশে। রিভান নিশান্তের কাঁধে ভয়ে ভয়ে হাত রাখলো। কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,
—– দো…দোস্ত ঘরে চলনা প্লিজ! কী হয়েছে আমাদের বল। আমরা কী কখনোও তোর পাশে না দাঁড়িয়ে থেকেছি? এই সানি ওকে বোঝানা…!
রিভানের ধমকে কেঁপে উঠলো সানি। ঠোঁট উল্টে বেড়ালের মতো মিনমিন করে বলল,
—– ওরে এই নিয়ে হাজারবার পাড় হবে বুঝাইছি, বাট রেজাল্টটা তো তুই নিজেও জানিস।
রিভান ছোট্ট করে শ্বাস ফেললো। নিশান্ত এখনোও আগের মতোই বসা। বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই তার। তার এরকম গা ছাড়া ভাব দেখে বড্ড রাগ হলো রিভানের এবার। দু-হাতে কাঁধ চেপে ধরে ঝাঁকিয়ে একপ্রকার চেঁচিয়েই জিজ্ঞেস করলো,
—– নিশান্ত, এটাই লাস্টবার আমি আস্ক করতেছি, তুই যদি এন্সার না দিস তবে সিরিয়াসলি অনেক খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
নিশান্ত কপালে ভাঁজ ফেলে রেলিং থেকে নেমে ঘুরে দাঁড়ালো। নিমিষেই কপালের রগ ফুলে উঠলো তার। রিভানের কলার চেপে ধরে চিৎকার ছেড়ে নিশান্ত বলল,
—– আর কী খারাপ হবে? কী খারাপ হওয়া বাকি আছে আর? তোরা জানতে চাইছিলি না আমার কী হয়েছে! ওকে দেন শুন, অন্বিতা আজ আমায় প্রপোজ করেছে, শি প্রপোজড মি ড্যাম ইট! শি চুজড দ্য রং পার্সোন রিভান! ও ভুল মানুষকে ভালোবেসেছে রিভান! যে ওকে কখনোও ভালোবাসতে চেয়েও ভালোবাসতে পারবে না তাকে ভালোবেসে ফেলেছে ও!
#চলবে________________
(