“ঠোঁটে লিপ্সটিক চোখে কাজল হাতে চুরি কপালে টিপ নিলেই সুন্দরী হওয়া যায়????তুমি কখনোই অরিত্রার মতো হবা না।
উৎসের কথা শুনেই হঠাৎ ফিরে তাকায় নিরুপমা। চোখ দুটো পানিতে ভড়ে এসেছে।উৎসের সাথে বিয়ের প্রথমদিন থেকে এই এক মাস উৎস তার মৃত্য প্রথম স্ত্রী অরিত্রার সাথে তুলনা দিয়ে আসছে।আর যায় হোক স্বামীর আগের স্ত্রীর সাথে তুলনা কোনো মেয়েই নিতে পারে না।কিন্তু নিরুপমা এই এক মাসে কথা গুলো হজম করে নিয়েছে।
“কি হলো কথা বলছো না কেন।তোমাকে না বলেছিলাম আমার সামনে আসবা না আমাকে তোমার জালে ফাসাতে চাচ্ছো???…নিরুপমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই উৎস আবার উঠলো….
” আমি তো
” চুপ একদম চুপ আর একটা কথা ও বলবে না আমি তোমাকে আমার স্ত্রী হিসাবে মানি না আর কতোবার বলবো তোমাকে?আমি অরিত্রাকে ভালোবাসি।আর অরিত্রারাই আমার স্ত্রী।বেড়িয়ে যাও আমার রুম থেকে।
নিরুপমা কাদতে কাদতে বেড়িয়ে যায়।উৎস রাগে ফুসছে।সে অরিত্রা ছাড়া কাউকে তার স্ত্রী হিসাবে মানতে পারবে না।নিজের মায়ের প্রতি রাগ হচ্ছে খুব।সে কি একবার ও তার ছেলের কষ্টের কথা ভাবলো না?ভাবলো না তার ছেলে অন্য কাউকে কিভাবে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করবে?উৎস অরিত্রার ছবির সামনে দাড়িয়ে কাদছে
” কেন অরি কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।আমি তো কিছুই চাই নি শুধু তোমাকে চেয়েছিলাম।এই বাচ্চাটা ও আমি চাই নি।তুমিই জোর করে আমাদের ভালোবাসাকে পৃথিবীটতে আনতে চেয়েছিলে।কেন তাহলে তুমি মুসুকে রেখে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।আমি যে ওই মেয়েটাকে তোমার জায়গা দিতে পারব না।ফিরে এসো অরি প্লিজ ফিরে এসো।
হাটু গেড়ে প্রবল কান্নায় ভেংগে পড়ে উৎস।এ ব্যথা যেন খুবই তীব্র। প্রচন্ড হাহাকার নিয়ে বেঁচে আছে উৎস শুধু মাত্র তার মেয়েটার জন্য।তাদের ভালোবাসার জন্য।
নিরুপমা ছাদে গিয়ে কাদতে থাকল।যদি তাকে মেনেই না নিতে পারবে তাহলে বিয়ে কেন করেছিল?কেন তার জীবন এভাবে নষ্ট করে দিল।সে তো কোনো অন্যায় করে নি।বিয়ের দিন থেকে এই পর্যন্ত উৎস নিরুপমার সাথে খুবই দুর্ব্যবহার করেছে কেমন জানি সহ্যই করতে পারে না তাকে।নিরুপমা কিছুই বলে না।চুপচাপ থাকে।কিন্তু আজ মুসকানের জন্মের ৩ মাস হতে চললো সেজন্য নিরুপমা ভেবেছিল ছোট একটা সেলিব্রেশন করবে। আর শ্বাশুড়ির কথাতেই সে একটু সেজেছিল কিন্তু উৎস তাকে এভাবে অপমান করে বের করে দিল।নিরুপমার ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাদতে কিন্তু সে যে তা পারবে না।ছোট থেকেই যে তাকে দম বন্ধ করে শব্দহীন কান্না করতে শিখতে হয়েছে।
বেশকিছুক্ষন ছাদে কাটিয়ে নিরুপমা নিচে যায়।মুসকান ঘুমিয়েছিল হয়তো উঠে গেছে এতোক্ষনে।লোকটা যেমন হোক মেয়েটা হয়েছে একদম মায়াবতী ঠিক তার মায়ের মতো।মুসকানকে কোলে নিলে কেমন জানি একটা মাতৃত্বের অনুভূতি অনুভব করে নিরুপমা।হয়তো আল্লাহ চায় নিরুপমা নিজের ভালোবাসা দিয়ে মেয়েটাকে বড় করুক সেজন্যই হয়তো মেয়েটার জন্য এতো মায়া নিরুপমার।নিচে গিয়ে দেখে মুসকান খুব জোরে কান্না করতেছে আর উৎস তাকে থামানো বৃথা চেষ্টা করছে।নিরুপমাকে দেখে যেন রাগ সপ্তম আকাশে উঠে গেছে।
“এই মেয়ে এই বাড়িতে কেন আনা হয়েছে তোমাকে জানো না?তুমি কি ভুলে গেছো আমার মেয়ের জন্য তোমাকে এই বাড়ির বউ করে আনা হয়েছে।আমার মেয়ে কাদছে আর তোমার কোনো খোজই নেই?
” আমি কিছুই ভুলি নাই আপনার মেয়ের মা হওয়ার পাশাপাশি আমি এই বাড়ির বঊ আমার আপনার মেয়ের প্রতি দায়িত্ব থাকলে এই বাড়ির প্রতিও আছে।সব দিকই আমাকে দেখে শুনে চলতে হয়।আপনাদের যেমন রাগ কষ্ট দুঃখ হয় আমার ও হয়।আপনাদের যেমন হাল্কা হতে একটু একাকিত্ব প্রয়োজন হয় আমার ও প্রয়োজন হয়।কিন্তু মেয়েদের কিছু ভুলতে নেই আর মেয়েদের তো কষ্ট পেতে ও নেই।
মুসকানের দুধ বানাতে বানাতে উৎসের বলা কথা গুলির উত্তর দেয় নিরুপমা। লাস্ট কথাটা একটু তাচ্ছিল্য সুরেই বললো নিরুপমা।
মুসকানক নিয় চলে গেল সে।উৎস তাদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকলো।
“মেয়েটার সাহস বেড়েছে খুব।মুখে মুখে উত্তর ও দিচ্ছে….উৎস রেগে রুম থেকে বের হয়ে যায়
নিরুপমা সারাবাড়ি ঘুরছে আর মুসকানকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।মেয়েটা বড্ড জেদি একদম খেতে চায় না।কিন্তু মুসকান খুব সহজেই নিরুপমার মধ্যে নিজের মাকে খুজে পেয়েছে।রাতে মুসকান ও নিরুপমা উৎসের রুমে ঘুমায়।উৎস অন্য রুমে ঘুমায় যদি ও ব্যাপারটা কেউ জানেনা।উৎস খুব ভোরে উঠে নামায পড়ে যার ফলে কেউ দেখে ফেলার আগেই সে অন্যরুম থেকে প্রস্থান করতে পারে।কিন্তু আজ উৎসদের বাড়িতে তার ছোট বোন উর্মি আর তার জামাই অন্তু এসেছে।যার ফলে অন্য রুমে ঘুমানোটা ঠিক হবে না বলে মনে হচ্ছে উৎসের যদি চোখে পড়ে যায়?তাই বাধ্য হয়ে নিজের রুমেই যায়।গিয়ে দেখে মুসকানকে নিরুপমা ঘুম পাড়াচ্ছে।
” মুসু ঘুমিয়েছে?
“হ্যা।আপনি এই সময় এইখানে?
” তোমাকে তার কৈফত দিতে বাধ্য নই।আমার রুম আমার যখন ইচ্ছা আসব।মুসু ঘুমালে ওকে রেখে নিচে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়ো।তোমার সাথে আমি বেড শেয়ার করতে পারব না।
উৎসের কথা শুনে চকতি ফিরে তাকায় উৎসের দিকে।নিরুপমার চোখ ভিজে আসছে।একটা মাস ধোরে উৎসের অবহেলা অনাদর সহ্য করছে কিন্তু আজ এমন অপমান সে হজম করতে পারছে না।
“আমি কি আপনার বাড়ির ঝি?যখন যেভাবে খুশি নাচাবেন?আর আমি নাচবো?আমি কি এতোটাই খারাপ যে আমার সাথে আপনি বেড শেয়ার করতে পারবেন না?১ মাস বিয়ে করে এসেছি প্রতিটা মূহুর্তে আপনি আমাকে অবহেলা করেছেন অপমান করেছেন।যদি স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি নাই দেবেন বিয়ে কেন করেছিলেন????নিরুপমা সহসা প্রশ্ন ছুড়ে মারে উৎসের প্রতি
” তোমাকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না আমার বুঝেছো?নেহাৎ মা আমাকে কসম দিয়েছিল তা না হলে আমি কখনোই বিয়ে করতাম না।আমি শুধু অরিত্রাকে ভালোবাসি আর কাউকে না।আর আমি যদি তোমাকে মেনে নেই এরপর যখন তোমার একটা বাচ্চা হবে তখন দুদিন পর তুমি আমার মেয়েকে ছুড়ে ফেলে দিবা।সৎমা, সৎমা ই হয় কখনো মা হতে পারে না…..আর তুমি কখনো আমার স্ত্রী ও হতে পারবে না।উৎস গিয়ে মুসকানের পাশে শুয়ে পড়লো।
নিরুপমার চোখ বাধ মানছে না। এতো অপমান অবহেলা সব ঠিক ছিল কিন্তু শেষে কি বলল এটা উৎস সে মুসকানের সৎমা?হ্যা সৎমা কিন্তু সে তো নিজের সন্তানের মতোই থাকে ভালোবাসে।নিজের গর্ভে ধারন না করলে কি মা হওয়া যায় না?শুধু মাত্র মুসকানের মুখপানে তাকিয়ে এই বিয়েতে রাজি হয়েছিল নিরুপমা। কেন জানি খুব মায়া হচ্ছিল।যার জন্য নিজের সবকিছু বিসর্জন দিল আজ শুনতে হলো সে তার সৎমা??
#এবং_স্ত্রী
#সূচনা_পর্ব
#Jannatul_Ferdos(Esporshi Espriha)
এটা আমার লেখা প্রথম উপন্যাস। যেখানে একজন মা থেকে স্ত্রী হয়ে ওঠার গল্প থাকবে।উৎস কি কখনো নিরুপমাকে তার স্ত্রীর স্বীকৃতি দেবে? কখনো কি ভালোবাসবে নিরুপমাকে?নিরুপমা কি পারবে উৎসের স্ত্রী হয়ে উঠতে? পারবে কি মুসকানের একজন ভালো মা হয়ে উঠতে?নাকি সে উৎসের চোখে মুসকানের সৎমাই থেকে যাবে?সব প্রশ্নের উত্তর দেবো।আশা করছি আমার অন্যান্য গল্পের মতো প্রথম উপন্যাসটি ও আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।ধন্যবাদ