কুঁড়েঘর পর্ব -০৫+৬

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ০৬।

সবাই ফুল টিমের সাথে হাটছে আর গল্প করতে ব্যস্ত। জোতি রিধিশাকে নিয়ে বারবার পেছনে পড়ে যাচ্ছে আর নিশাদের ধমক খেয়ে আবার দৌঁড়ে আসছে।
নিশাদ দুজনের দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বললো
” আর একবার যদি তোমাদের ডেকে আনতে হয় তাহলে ম্যামের কাছে বিচার দিবো। টিমের সাথে না থেকে এদিক ওদিক ঘুরছো কেনো?”
রিধিশা স্থির চোখে তাকালো নিশাদ বুঝলো না কোন রেগে নাকি কোন কারণে তাকানো হয়েছে এভাবে।

নিশাদ দুজনের পেছনে হাটছে। নিশাদের পেছনে তার বন্ধুরা রয়েছে তাদের মতো করে।
সবাই পাহাড়ে উঠতে থাকে। মিলি আবার এসে নিশাদের সাথে চিপকে লেগে থাকে।
নিশাদ বিরক্তিতে ঠাস ঠাস করে হাটছে।
” আচ্ছা নিশু! আমার অনেক পা ব্যাথা করছে, তুমি আমাকে কোলে নাও প্লিজ!”
পেছন থেকে সাদি বললো
” আরে নিশাদের হাতে আর পা’য়ে তো ব্যাথা একটু আগেই আমাকে বলল!”

” অহ মাই গড, কি বলছো! আরে আমাকে আগে বলোনি কেনো? তুমি কি কোথাও ব্যাথা পেয়েছো নাকি?” নিশাদ সাদির দিকে আড়চোখে তাকায়। তার তো কিছুই হয়নি আর কিছুই বলেনি।
সূর্য এগিয়ে এসে বললো
” আরে তেমন কিছু হয়নি তবে হয়েছে হলো, নিশাদের খাওয়া দাওয়া কম হচ্ছে অনেক থেকে তাই আর কি একটু ব্যাথা। তোমাকে তো কোলে নেওয়া একদমই সম্ভব না। তবে তুমি চাইলে রাউফ তোমাকে কোলে নিতে পারে।”

সূর্যর দিকে তাকিয়ে রাউফের দিকে তাকাতেই মিলির গা গুলিয়ে আসে। ছেলেটা দেখতে একদমই নরমাল ছেলেদের মতো না। ডিগ্রিপ্রাপ্ত একটা বখাটে ছেলে। রাউফ ভেটকিয়ে তাকিয়ে আছে। মিলি মুখ কুঁচকে বললো
” নাহ কাউকে দরকার নেই নিশাদ ছাড়া। নিশাদ! আমরা আরেকবার আসবো তারপর তুমি আমাকে কোলে নিয়ে উঠবে। একটা রোম্যান্টিক মোমেন্ট ক্রিয়েট হবে আর সবাই হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। আই এম ওয়েটিং ফর দিজ মোমেন্ট।”

রেহান বিরবির করে বললো
” তাহলে আর এই মোমেন্ট কখনই আসবে না আর তোমার ইচ্ছেও পূরণ হবে না।” সূর্যরা রেহানের কথা শুনে হাসলো
নিশাস কিছু না বলে হেটেই যাচ্ছে। তার দৃষ্টি সামনে থাকা রিধিশার দিকে। দুজন নিজেদের মতো হাটছে।

পাহাড়ের উপর পৌঁছে সবাই যার যার মতো এদিক ওদিক দেখতে থাকে। পাহাড়ে কিছু লোকের আনাগোনা চলছে যাদের দেখে বোঝা যাচ্ছে এরা স্থানীয় লোক।
রিধিশা পাহাড়ের এক কোণে দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিলো। কতোদিন পর আবারও পাহাড়ে এসেছে। মুচকি হাসি দিয়ে সব দেখতে থাকে।
পাহাড় থেকে চারপাশে সব কিছু সবুজ দেখা যাচ্ছে। সবুজ গাছ-পালা সাথে কিছু উঁচু পাহাড়।

নিশাদ ক্যামেরা এনেছিলো কিছু ছবি তুলবে। একপাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে সে, হুট করে একটা ছবি ক্লিক করে খেয়াল করলো সেটায় রিধিশাকে দেখা যাচ্ছে। অসাধারণ একটা ছবি। নিশাদ চেক করে দেখে আরো কিছু ছবি উঠেছে রিধিশা সহ।
রিধিশার থেকে কিছুটা দূড়ে জোতিও রয়েছে কিন্তু জোতির ছবি উঠেনি।

নিশাদ, রিধিশার কাছে কিছুটা এগিয়ে ধমক দিয়ে বললো
” এই মেয়ে কোনায় দাঁড়িয়ে আছো কেনো? একবার পড়ে গেলে তোমার বয়ফ্রেন্ডও উঠিয়ে আনবে না গিয়ে।”
রিধিশান তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জতির কাছে গেলো।
সাদি সবাইকে ডেকে বললো
” এবার সবাই চলো অন্য জায়গায়ও যেতে হবে।”

সবাই পাহাড় থেকে নেমে কাপ্তাই হ্রদ যাচ্ছে।
এখানে এসে স্যাররা কিছু ট্রলার হায়ার করে। পানির ভয়ের কারণে রিধিশা সেখানে যাওয়া থেকে দূড়েই থাকলো তবে জোতিকে জোড় কিরে পাঠালো। মেয়েটা তার জন্য আনন্দ করবে না সেটা চায় বা রিদিশা।

নিশাদ ক্যামেরা দিয়ে পাহাড়ে ভিডিও করছে। দুপাশে পাহাড়ের মাঝে হ্রদের উপর টলার চলছে দৃশ্যটা অমায়িক সুন্দর। ট্রলার কিছু দূড় একটা পাহাড়ের কাছে গিয়ে থামলো। সবাই জায়গাটা দেখতে লাগলো। জায়গা গুলো প্রত্যেকটাই এতো সুন্দর! সবাই সব কিছু দেখছে আর অবাক হচ্ছে।

ঘুরাঘুরির পর্ব শেষ হতেই বাসে উঠার জন্য আবারও তাড়া দেয়। সবাই ধীরেসুস্থে উঠে বসে। নিশাদ চেক করে দেখলো তার দায়িত্বে যেই বাসটা রয়েছে সেখানে সবাই বসছে কিন্তু রিধিশাকে চোখে পড়লো না। নিশাদ বাস থেকে বেড়িয়ে দেখে জোতি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
নিশাদ গিয়ে বললো
” তুমি বাসে উঠছো না কেনো? আর কি খুঁজছো তুমি?”

জোতি ভীতু গলায় বললো
” আসলে ভাইয়া রিধি’কে খুঁজে পাচ্ছি না। কিছুক্ষণ আগে ওইদিকটায় হাটছিলো।”
“ঠিকাছে আমি ওকে নিয়ে আসছি তুমি বাসে গিয়ে বসো।” জোতি মাথা নেড়ে চলে গেলো।
নিশাদ জোতির দেখানো দিকে হাটতে থাকে।
” এসব মেয়েদের জন্যই সবার এতো প্রবলেম। এখন বাস ছেড়ে দেবে আর এখন কিনা তাকে কোথায় যেয়ে হলো! আস্ত বেয়াদব একটা মেয়ে।”

নিশাদ হাটতে হাটতে এগিয়ে যায় অনেকটা পথ। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতে দেখলো রিধিশাকে। নিশাদ রেগে বোম হয়ে গেলো।
নিশাদ হনহন পায়ে রিধিশার কাছে এগোলো। সেদিক থেকে একটা ট্রাকের আসছে ভিষণ গতিতে। রিধিশার পাশ কাটিয়ে যেতেই রিধিশার এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।
নিশাদ আঁতকে দৌঁড়ে গিয়ে রিধিশার কোমড় পেঁচিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে আনে।

সরে আসতেই একিটা গাছ ধরে দাঁড়াতে চায় নিশাদ কিন্তু গাছে ঠায় না পেয়ে দুজন অন্যটা গাছের সাথে বারি খায়। দুজনই ব্যাথা পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে।
নিশাদ ব্যাথা পেয়ে কাধ ঝাড়তে লাগলো। আগের গাছটায় ঘষা লাগায় হাতের তালুর দিকে ছিলে গিয়েছে।

রিধিশাকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে নিশাদ এগিয়ে গেলো। রিধিশার সামনে বসে দেখে রিধিশার চোখ বন্ধ। নিশাদ কয়েকবার ডেকে বুঝলো মেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। নিশাদ নিজের মাথার চুল টানলো। কি করবে এখন?
নিশাদ রিধিশাকে কোলে উঠিয়ে হাটতে থাকে যেখানে বাস দাঁড়িয়ে আছে সেই রাস্তায়। পথে একটা দোকান আছে সেখানে অয়ানি আছে কিনা দেখতে হবে।

দোকানে এসে একটা চেয়ার আর পানির বোতল দিতে বললো দোকানে বসে থাকা ছেলেটাকে। নিশাদ রিধিশাকে বসিয়ে দেখে মাথা ছিলে গিয়েছে। মাথায় বোধয় বারি খেয়েছে। রিধিশার চোখের কোণে পানিও দেখতে পেলো। নিশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো
” মেয়েটা কি কাঁদছিল? কিন্তু ব্যাথা পেয়েই তো অজ্ঞান হলো কাদলো কখন? তাহলে আগে কাঁদছিল হয়তো।”

নিশাদ রিধিশার চোখে মুখে পানি দিতেই রিধিশা ধীরেধীরে চোখ খুলে। নিশাদকে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিধিশা সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়। পড়তে গিয়েও চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে যায়। নিশাদ রেগে বললো
” এই তোমার সমস্যা কি বুঝিনা আমি। আমাকে জালানো ছাড়া আর কোনো কাজ আছে তোমার? রাস্তা দিয়ে বড় বড় বাস, ট্রাক যাচ্ছে বারবার সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলে তুমি! মাথা গিয়ে গোবর ঠেসে রেখেছো? আমি না সময় মতো না গেলে কি হতো তোমার?”

নিশাদের এতোগুলো কথা শুনেও রিধিশা কোনো রিয়েক্ট করলো না। চুপচাপ এলোমেলো পায়ে হেটে যেতে থাকে। নিশাদ অবাক হলো কিছুটা রিধিশা কথা না বলাতে। নিশাদ দোকান থেকে ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ কিনে রিধিশার পেছনে যেতে থাকে।

.

বাসে কাছে এসে দেখে তাদের বাস ছাড়া সব বাস উধাও। নিশাদকে দেখে রেহান এগিয়ে আসে। রেহান রেগে বললো
” কোথায় ছিলি তুই? আমাকে চিন্তায় ফেলে কই উধাও হয়েছিলি? তোকে না পেয়ে বাস আটকে রেখেছি আমি এখনও।”
” থ্যাংক ইউ বন্ধু। তোর মতো বন্ধু যেনো সইবার থাকে। আমি ভেবেছিলাম বাস বোধয় আমাদের রেখেই চলে গিয়েছে।”

রিধিশা বাসে উঠছিল রেহান সেদিকে তাকিয়ে বললো
” ওও আমাদের! তা কোথায় ছিলি তোরা?”
” পরে বলবো এখন চল!”
নিশাদ আর রেহান বাসে উঠে যায়। জোতি চিন্তায় এতো গভীর হিয়ে আছে যে রিধিশাকে বাসে উঠতেও দেখেনি। রেহান পাশে বসতেই জোতি অস্থির হয়ে তাকালো। রেহান বললো
” আরে নিশাদ তোমার বান্ধবীযে নিয়ে এসেছে।” জোতি সস্তির নিশ্বাস ফেললো।

নিশাদ আবারও রিধিশার পাশে সিট খালি পেয়ে সেখানে বসে। রিধিশা সিটে মাথা রেখে বাইরে তাকিয়ে আছে। নিশাদ ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ এগিয়ে দিয়ে বললো
” মাথায় লাগিয়ে নাও। মাথায় চোট লেগেছে আর কোথাও ব্যাথা পেলে আরেকটা লাগিয়ে নাও।”

” সবচেয়ে বড় ব্যাথা তো মনে লেগেছে কিন্তু সেখানে তো এসব লাগিয়ে ব্যাথা সারানো যাবে না।”
রিধিশা নিশাদের হাতের দিকে তাকিয়ে ব্যান্ডেজগুলো দেখে আবারও নিশাদের দিকে তাকায়। নিশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। রিধিশা ভেংচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

“বেয়াদব মেয়ে! একটু ভালো ব্যাবহার করেছি বলে আবার নিজের ভাব দেখাচ্ছো! এই জন্যই মেয়েদের উপকার করতে নেই।” রিধিশা একবার তাকিয়ে আবারও চোখ ফিরিয়ে নেয়। নিশাদ মুখ ফুলিয়ে রাখে। নিজের হাতে একটা ব্যান্ডেজ লাগাগে গিয়েও রিধিশার উপর রেগে তিনটেই ফেলে ফিলো।

নিশাদ পকেট থেকে রিধিশার ফোন বের করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো
” ধরো এটাও রাখো। বেয়াদব মেয়েদের জিনিস রাখি না আমি। ফোনটা না আনলে ভালো হতো তাহলে আর ভাব থাকতো না। পাশে পড়ে ছিলো বলে ভালো মানুষি দেখিয়ে নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু হুহ!”
রিধিশা তার ফোন নিয়ে বসে থাকে।

ঢাকা আসতে পুরো জার্নিটা এমনি কেটে গেলো। নিশাদ পুরোটা সময় এক ভাবনায় ডুবে ছিলো। রিধিশাও নিস্তব্ধতা দিয়ে কাটিয়ে দেয়। ভার্সিটিতে বাস থামলো। একে একে সবাই নেমে যায় বাস থেকে। রিধিশা সবার শেষে নামলো। নিশাদকে বাসের নিচে দেখে তার সামনে গিয়ে বললো
” ধন্যবাদ।” নিশাদ জ্যাকেট টেনেটুনে কিছুটা ভাব নিয়ে দাঁড়ালো। রিধিশা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো, তা দেখে নিশাদ চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে থাকে।
” বদ মেয়ে একটা।”

চলবে……..#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ০৭ ।

রাত হয়ে যাওয়ায় রিধিশা হেটে বা এসে রিকশা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।
নিশাদ, রেহান, সূর্য, সাদি চারজন তাদের ফ্ল্যাটে ফিরে আসে। ফ্রেশ হয়ে ফ্লোরে বসে পরে নিশাদ সিগারেট নিয়ে। আজ সারাদিন একটাও খাওয়া হয়নি।
সূর্য ড্রইংরুম থেকে পানি খেয়ে নিশাদের রুমে আসলো। পাশে বসে একটক সিগারেট জ্বালিয়ে বললো
” ব্যাপার কি বলতো? আসার সময় তোকে নাকি রেহান খুঁজে পাচ্ছিলো না?”

নিশাদ ধোয়া ছেড়ে জানলার দিকে তাকিয়ে বললো
” হুম একটু দূড়ে গিয়েছিলাম তাই।” সূর্য গভীর দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে নিশাদকে।
কিছুক্ষণের মধ্যে সাদি আর রেহানও আসলো।
” তোর ভাব সাব ঠিক লাগছে না কেনো জানি। পিকনিকে গিয়ে দেখলাম রিধিশা মেয়েটার পেছনে পেছনে ছিলি। কেমন কেয়ার করছিলি। বাসেও তো ওর সাথেই লেট করে এসেছিলি। তুই কি প্রেমে টেমে পড়েছিস?”

রেহানের কথা শুনে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো নিশাদ। রেহান আমতা আমতা করে বলে
” না মানে বললে সমস্যা কি? আমরা তো বেস্টফ্রেন্ড নাকি!”
নিশাদ চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
” বেশি বুঝিস তোরা এইজন্যই বিরক্ত লাগে। পিকনিকে পুরো গ্রুপের দায়িত্ব তো আমাদের উপরই ছিলো নাকি? না দেখলে যদি হারিয়ে যেতো তখন বদনাম তো আমাদেরই হতো।”

তিনজনই মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। রেহান বলে উঠে
” কিন্তু বাস থামিয়ে কোথায় গিয়েছিলি?”
নিশাদ নিশ্বাস ফেলে তখনের ঘটনা বললো। তিনজিন উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। সব শুনে সূর্য বললো
” ভালো করেছিস। শত্রু হলেও কি মানুষ তো! যদি কিছু হয়ে যেতো হয়তো নিজেকে দায়ি করতি তুই।”

নিশাদ কিছু না বলে একের পর এক সিগারেট খাচ্ছে।
মাথায় রিধিশার কথা ঘুরছে। রিধিশার উপর রাগ থাকলেও আসার সময় রিধিশার চোখের পানি আর
চুপচাপ থাকাটা ভালো ঠেকছে না নিশাদের কাছে।
শান্তু পাচ্ছে না কোনোভাবে।
রেহানদের রুমে রেখেই বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে পড়লো।

.

রিধিশা অন্ধকার আচ্ছন্ন রুমে মাথার উপরে থাকা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। চোখের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে তার জন্য আবারও।
সবাই যখন আজ বাসে উঠছিলো তখন মায়ের কল এসেছিলো আজ। কিছুটা দূড়ে কথা বলতে গিয়েছিলো।

ভালোমন্দ কথা বলার পর লিমা বেগম জানায়
“তোর বাবার হুটহাট কি পাগলামো ভাবনা চিন্তাও ঢুকে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না আমি। তোর জন্য আবারও এক নতুন পাত্র দেখেছে। আমাকে না বলেই কথাবার্তা বলছে তাদের সাথে। ছেলেটা সরকারি চাকরি করে। তোর বাবা গতকাল আমাকে জানিয়েছে। আর বারবার বলছে বড় বাড়িতে বিয়ে দেবে তোকে। তুই সুখি হবি। ছেলের বাড়িতে বলেছে তুই ঢাকা থেকে পড়াশোনা করিস।”

রিধিশা অবাক হয় সব শুনে। উত্তরে বলেছিলো
” আম্মু তুমি কিছু বলছো না কেনো? বাবা আবারও আমার বিয়ের পেছনে কেনো লেগেছে? আর এতোদিন তো আমার উপর তো রেগে ছিলো।”
লিমা বেগম কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” জানি না। আমার সুখের সংসারে কার জানি নজর লেগেছে। তোর বাবার আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে মনে হচ্ছে আমার।”

রিধিশা রাগে দূঃখে কেঁদে বলেছিলো
” বাবা আমার এতোই ভালো করতে চায় যে তার জন্য আজ আমি এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। আগে কি আমি ভালো ছিলাম না? মাঝে মাঝে আমার মতো সুখি মেয়ে কয়জন ছিলো সেটা ভাবি আমি। বেশি ভালো করতে গিয়ে সন্তানকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে সেটা ভাবতে বলো বাবাকে। আমার আর কোনো ভালো ভাবতে হবে না তাকে। আমি নিজের ভালো বুঝে নেবো আর না পাড়লে খারাপটাই ভালো থাকবে আমার জন্য।”
কথা বলতে বলতস হুশজ্ঞান হারিয়ে কোথায় এসেছিলো জানে না। এরপরেই নিশাদ এসে বাঁচিয়েছে।

রিধিশা শুধু তার বাবার পরিবর্তনের কথা ভেবে যাচ্ছে। তার বাবা আগে তার একমাত্র মেয়ে রিধিশা কিসে খুশি হতো সেই কথা ভাবতো। রিধিশা মা, বাবার আদরের দুলালী ছিলো। আর আজ নিজেই নিজের ভাত আর থাকার জায়গাটুকু জুটিয়ে নিচ্ছে কোনো ভাবে।
আজ এক বছর ধরে তার বাবা কখন কি ভাবে বুঝতে পারে না সে। হুট করে বাবার এমন পরিবর্তন অনেক ভাবায় তাকে। সত্যি, সময়ের সাথে সাথে কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় কেউ জানে না।
রিধিশা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।

_________

ঘুম থেকে উঠেই রিধিশা নাস্তা খেয়ে বাসা চেঞ্জ করার জন্য কিছু জিনিস পত্র গুছিয়ে নিতে থাকে। বাকি জিনিস গুলো লোক দিয়ে নিতে হবে। ভার্সিটি থেকে এসে বাসা চেঞ্জ করবে বলে ভাবলো।
.
এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় নিশাদের। নিশাদ চোখ কচলে উঠে বসে। ফ্রেশ হয়ে গিয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসে পড়ে। কাজের বুয়া নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে দিয়েছে। নিশাদকে দেখে কফি বানাতে চলে গেলো আবারও। নিশাদ টেবিলে বসে নাস্তা খেতে খেতে রেহানদের ডাকতে থাকে চিৎকার করে। মাঝরাতে গানের আওয়াজ এসেছিলো তার কানে। নিশ্চই এগুলো পার্টি করেছিলো তাকে রেখে।

সূর্য ঢুলতে ঢুলতে এসে টেবিলে বসে।
” তোরা মাঝরাতে লাউডস্পিকারে গান ছেড়ে পার্টি করছিলি। তোদের কমন সেন্স এর কি বলি দিয়েছিস? পাশের ফ্ল্যাটের লোক গানের জন্য ডিস্টার্ব হয়ে এসে বিচার দেয় তখন কে শুনবে সেসব?”
সূর্য বিরক্ত কন্ঠে বললো
” আরে ভাই আমরা করি নাই। আমরাও তো রাতে ঘুমাতে পারলামনা গানের জন্য। সাদি আর রেহান তো গান শুনে নাচছিলো। আমরা পার্টি করলে তোকে নিয়েই তো করি।”

নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” তাহলে কে গান ছেড়েছিল রাতে?”
” আমি কি করে জানবো। দেখ পাশের ফ্ল্যাটেরই কেউ হবে।” নিশাদ কথা না বাড়িয়ে নাস্তা শেষ করলো। বুয়া কফি দিয়ে যায়। নিশাদ কফি খেতে খেতে ভার্সিটির জন্য তৈরি হতে থাকে। সূর্যও তৈরি কিন্তু বাকি দুজন ঘুমাচ্ছে। নিশাদ জ্যাকেট পড়তে পড়তে বললো
” ওদের উঠিয়ে আয় নাহলে আজ সারাদিন ঘুমাবে।”
সূর্য গিয়ে দুজনকে টেনে টেনে উঠায়। দুজন ব্রাশ করে দৌঁড়ে নাস্তা খেতে যায়। ভার্সিটিতে না গেলে তাদের দিন যায় না তাই ভার্সিটি মিস দেওয়া যাবে না।
নিশাদ আর সূর্য আগেই বেরিয়ে যায়।

রিধিশা ভার্সিটিতে এসে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। ভেবেছিলো আজ বাসা চেঞ্জ করবে কিন্তু সাজেদা আন্টিকে ফোন করে জানতে পারলো আগের ভাড়াটিয়া এখনও জায়নি বিকেলে যাবে মাত্র। জোতি এসে বসলো রিধিশার পাশে। জোতি হেসে বললো
” কালকে সারাদিন কেমন কাটলো?”
রিধিশা মুচকি হেসে বললো
” ভালো, খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু তোর খবর তো বললি না। কাল সেই ভাইয়াটার সাথে বসেছিলি বারবার। ছেলেটানে আমি ওই বজ্জাত ছেলের সাথে দেখেছিলাম।”

জোতি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললো
” ছেলে ছেলে বলিস কেন তোর দুলাভাই হয়। নিশাদ ভাইয়ের বন্ধু রেহান নাম।”
রিধিশা অবাক স্বরে বললো
” কি! এসব কবে হলো?” জোতি বললো
” ওই আরকি হয়েগেছে। আচ্ছা তোর মাথায় কিসের দাগ এটা? ব্যাথা পেয়েছিস কিভাবে?” রিধিশা জোড়পূর্বক হেসে বললো
” ওই আরকি একটু টেবিলের কোণায় লেগেছিলো।”
কিছুক্ষণ পর দুজন ক্লাসের জন্য উঠে গেলো।

ব্রেক টাইমে দুজন ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো। রিধিশা আজ টাকা আনেনি তাই আর কিছু অর্ডার করে না। জোতি দুজনের জন্যই স্যান্ডউইচ অর্ডার করে।
জোতি মোবাইল নিয়ে গুঁতোগুঁতি করতে দেখে ভাবে নিশ্চই রেহানের সাথে কথা বলছে।
রিধিশা এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে দেখে নিশাদকে দেখতে পেলো। নিশাদের দিকে তাকাতেই প্রথমে এক মুহূর্তের জন্য কিছুটা ভয় পেয়ে যায় কারণ নিশাদও ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

রিধিশা বুকে থু থু দিয়ে বিরবির করে বললো
” এভাবে ভূতের মতো তাকিয়ে আছে কেনো? আমি তো প্রথমে বাঘ ভেবেছিলাম।” খাবার আসতেই রিধিশা চোখ ঘুরিয়ে নেয় নিশাদের থেকে। দুজন খাওয়া দাওয়া শেষ করে বসে থাকে। জোতির খেয়ালই নেই একা একা উঠে চলে গেলো। রিধিশা বিরক্ত হয়ে জোতির কাছে যাবে বলে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেলো। কিন্তু বের হতেই নিশাদ এসে সামনে দাঁড়ায়।

.

রিধিশা ভ্রু কুঁচকে বললো
” আপনার সমস্যা কি? বারবার পেছনে লাগছেন কেনো আমার? অদ্ভুত!” নিশাদ রাগি গলায় বললো
” অদ্ভুত আমি না তুমি? আমি দিয়েছিলাম বলে তো ব্যান্ডেজ দাওনি কাল। তো বাসায় গিয়ে তো দিতে পারতে!”
রিধিশা কপালে আলতো ছুঁয়ে বললো
” আমারটা আমি দেখে নেবো আপনার এতো ভাবতে হবে না। একটু ব্যাথা পেলেই ব্যান্ডেজ লাগাতে হবে এটা কোথায় লিখা আছে?”
নিশাদ রেগে কিছু বলতে গিয়েও বললো। জ্যাকেট টেনে মুখ ফুলিয়ে চলে গেলো। রিধিশা জোতির কাছে গেলো।

ভার্সিটি ছুটি হলে আজ আবারও সেই লেকের গাছে গেলো। গিয়ে কাঠগোলাপ গাছটার নিচে বসে রইলো।ফুল তার ভিষণ প্রিয় তেমনই লাল কাঠগোলাপ ফুল একটু বেশি প্রিয় তার। গ্রামে থাকতে অনেক খুঁজেও গাছটা পায়নি সে। বাবা বলেছিলো নার্সারি থেকে এই গাছসহ আরো অনেক গাছ এনে দেবে কিন্তু দেয়নি আর।

রিধিশা নিচে পরে থাকা একটা ফুল হাতে নিয়ে বসে থাকে। কি সুন্দর ফুলটা!
হুট করে কপালে ব্যাথা পাওয়া জায়গাটা জ্বলে উঠে। রিধিশা উফফ করে উঠে। কলিজা লাফিয়ে উঠেছে একটুতেই। রিধিশা চোখ উঠিয়ে উপরে তাকিয়ে নিশাদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ বড়বড় করে ফেলে। তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ায়।

নিশাদ দাঁত কেলিয়ে বললো
” কালকে ভাব দেখিয়ে আমার দেওয়া ব্যান্ডেজ নাওনি কিন্তু আজ আমার দেয়া ব্যান্ডেজই তোমার কপালে লাগিয়ে দিয়েছি।”
রিধিশা হাত দিয়ে দেখলো সত্যি তাই। রিধিশা রেগে বললো
” আপনি তো মহা বজ্জাত লোক! আপনাকে বলেছি আমি ব্যান্ডেজ লাগাতে?” নিশাদ ঝুকে বললো
” তুমি বললেই আমি শুনবো নাকি? তুমি কি আমার বউ নাকি যে, তোমার কথা শুনে চলবো?”
রিধিশা রেগে বললো
” আপনার মতো ছেলের কপালে বউ’ই তো জুটবে না আমি তো কোম ছাড়!”

নিশাদ ভাব নিয়ে বললো
” ঠিল বলেছো তুমি নিশাদের বউ হওয়ার যোগ্য না। তাছাড়া তোমাকে বিয়েই বা কে করবে? ভাবের টাংকি একটা!”
” আপনার জন্য একটু শান্তিতে বসতে পারি না। বদ, বজ্জাত ছেলে একটা।”
নিশাদ কান ঝেড়ে বাইক নিয়ে চলে গেলো।
রিধিশা কপালের ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ খুলে ফেলতে চাইলে ব্যাথায় টনটন করে উঠে। হয়তো ছিলে গিয়েছে। কালকে বাসায় গিয়ে ব্যাথার দিকে খেয়াল দেয়নি।
.

রিধিশা বাসায় এসে খাওয়ার ইচ্ছে নেই তাও হালকা পাতলা খেয়ে টিউশনিতে চলে গেলো। দুদিনের বন্ধ নিয়েছিলো সব টিউশনি থেকে কিন্তু আজকে বাসা চেঞ্জ করা হয়নি তাই ভাবলো পড়িয়ে আসবে তাদের।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here