#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ১৪ ।
রিধিশা পেছন ঘুরে ফুলগাছ দুটোকে দেখছে একটু পর পর। নিশাদ খেয়াল করে বললো
” বারবার ওইদিকে কি দেখো?” রিধিশা বললো
” আমি যতোবার এসেছি একদিনও দুটো ফুলগাছে একসাথে ফুল দেখিনি। কাঠগোলাপ গাছে ফুল থাকলে কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল থাকে না আর কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল থাকলে কাঠগোলাপ গাছে থাকে না। যেই গাছে থাকে না সেই গাছের নিচে আগের দিনের ফুল পড়ে থাকে।
নিশাদ উঠে গাছ দুটোর দিকে তাকালো। পাঞ্জাবীর পকেটে দুটো হাত ঢুকিয়ে কিছুক্ষণ গাছ দুটোকে দেখে বলে উঠলো
” আমার কি মনে হয় বলো তো! তোমার যেদিন বিয়ে হবে সেইদিন থেকে তুমি দুটো গাছেই ফুল দেখতে পাবে।”
রিধিশা কোণা চোখে নিশাদের দিকে তাকিয়ে বললো
” হ্যা, আপনি তো সব জানেন।”
নিশাদ গলা ঝেড়ে ভাব নিয়ে বললো
” হ্যা, অবশ্যই। আমি নিশাদ, আমি না জানলে আর কে জানবে বলো তো?” রিধিশা ভেংচি কাটলো নিশাদের কথা শুনে।
.
দূড় থেকে সূর্য কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুজনকে দেখছে।
” কোথায় ভাবলাম নিশাদকে বাসা থেকে নিয়ে আসতে হবে রেগে গিয়েছে দেখে আর এই ছেলে এখানে দাঁড়িয়ে রিধিশার সাথে কথা বলে যাচ্ছে। যাই হোক একটা ছবি তুলে নেই, পড়ে রেহানদের দেখাতে হবে। পাক্কা এই ছেলে প্রেমে পড়েছে।” সূর্য দূড় থেকে জুম করে দুজনের একসাথে কয়েকটা ছবি তুলে চুপিসারে চলেও গেলো।
.
রিধিশা হঠাৎ করে রাগি গলায় বলে উঠলো
” আপনার সাথে আমি এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি কেনো? আর আপনার জন্য এতো অপমানিত হলাম তাও আপনি আমার সাথে বসে আছেন!”
নিশার ভ্রু কুঁচকে তাকালো রিধিশার দিকে, গমগম স্বরে বললো
” মানুষের ভালো করতে নেই সেটা তোমাকে দেখলেই বারবার প্রমাণ পাই। কোথায় কান্না থামিয়ে মন ভালো করে দিলাম আর তুমি এখন পুড়নো কথা তুলছো?”
রিধিশা গম্ভীর গলায় বললো
” আমি নিজের জন্য একাই যথেষ্ট, হুহ।” রিধিশা পার্স ব্যাগ কাধে নিয়ে হাটা শুরু করলো। নিশাদও সাথে সাথে হাটছে, তা দেঝে রিধিশা হাটা থামিয়ে বললো
” কি চাই? আমার সাথে হাটছেন কেনো? কাজ নেই আপনার? যান ওই অনুষ্ঠানে যান।”
নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” আমি কোথায় যাবো সেটা কি তোমাকে বলে দিতে হবে? কে তুমি? আমার বউ নাকি?”
রিধিশা হাটতে হাটতে তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠলো
” আপনার বউ আমি হবো কেনো? আপনার বউ হওয়ার কোনো interest নেই আমার আর আপনার বউ হওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই। আপনার বউ তো হবে মিলি।”
নিশাদ চোয়াল শক্ত করে রিধিশার হাত চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” আমার বউ কে হবে সেটা আমি বলবো। দুনিয়ার বলা তে আমি বিয়ে করবো না ঠিকাছে? আর বারবার অন্যের কথায় নিজের যোগ্যতা’র কথা তোলা বন্ধ করো। তোমার কতোটা আর কি কি যোগ্যতা আছে সেটা তুমি আর আমি জানি। অন্যের কথায় নিজের যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে নিজেকে ছোট করার মানে নেই। এসব কথা যেন আর না শুনি তোমার মুখে।”
রিধিশা শান্ত চোখে নিশাদের চোখের দিকে তাকালো। নিশাদ নিশ্বাস ফেলে রিধিশার হাত ছেড়ে দিলো। রিধিশা চুপচাপ হাটতে থাকে পাশে নিশাদ হাটছে।
একই পথে দুটো মানুষ নিশ্চুপ ভাবে হেটে চলছে।
রাস্তার মানুষ গুলোও নিজেদের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। হঠাৎ কয়েকজনের চোখে পড়লে দুজনকে দেখছে।
হেটেই দুজন বাড়ির কাছাকাছি চলে আসলো। নিশাদ তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। রিধিশা পিছু না ঘুরেই বুঝতে পারছে নিশাদ দাঁড়িয়ে আছে। রিধিশা বাড়ির সামনে এসে গেট খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো।
নিশাদও উপর নিজের ফ্ল্যাটে চলে আসলো।
.
বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে জোতিকে ফোন করে বলে দিলো চিন্তা না করার জন্য। রিধিশা ফোন বের করে মায়ের সাথে কথা বললো কিছুক্ষণ।
দুপুরের রান্না বসিয়ে দেয় রিধিশা। খাওয়া দাওয়া করে টিউশনিতে যাবে।
_______
সকালে ঘুম থেকে উঠেই নামায পড়ে বেরিয়ে পড়লো রিধিশা। আনমনে হেটে যাচ্ছে রাস্তায়। সকালে এখানে গাড়ি বেশি দেখা যায় না। হুট করে এক দুটো যদি পাওয়া যায়।
রিধিশা ভাবনায় এতোটাই বিভোর যে সামনে একটা বড় পাথর পড়ে আছে সেদিকেও খেয়াল করলো না। যার ফলে কিছুদূর এগোতেই বড়সড় হোচট খেয়ে পড়ে গেলো বেচারী। রিধিশা চোখ মুখ কুঁচকে বসে আছে, ভালোই ব্যাথা পেয়েছে। রিধিশা তাকিয়ে দেখে পা হালকা ছিলেও গিয়েছে সাথে মারাত্মক ব্যাথাও করছে। হয়তো মচকে গিয়েছে।
রিধিশা কাঁদতে কাঁদতে বললো
” কি ব্যাথা! এই সময়েই ব্যাথা পেতে হলো? এখন কি করবো আমি?”
.
নিশাদ জগিং করতে বেরিয়েছিলো। আগে জগিং তো দূড় ঘুমই ভাঙ্গতে ভার্সিটির টাইম পেড়িয়ে যেতো কিন্তু এখন অভ্যাসটা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে তাই তাড়াতাড়ি সকালে উঠলে জগিং করতে বেরিয়ে পড়ে। নিজের বাসারও অনেকটা সামনে নিশাদ রিধিশাকে রাস্তায় বসে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো। কানের হেডফোন খুলে গলায় রেখে বললো
” এই মেয়ে এখানে বসে কি করছো?”
রিধিশা কাঁদছিলো নিশাদের কথা শুনে চোখ মুছে নিশাদের দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বললো
” ভিক্ষা করছি দেখছেন না?”
নিশাদ হাটুতে ভর দিয়ে বসলো। রিধিশার চুল গুলো ধরে টানতে টানতে রেগে বললো
” তকমার এই রাগ আমাকে দেখাবে না বুঝেছো! তোমাকে মাথায় তুলে আছাড় দেবো আমি। আমার রাগের সামনে তোমার রাগ কিছুই না।”
রিধিশা কাঁদতে কাঁদতে বললো
” আরে ছাড়ুন। আমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছি।” রিধিশার কথা শুনে চুল ছেড়ে পায়ের দিকে তাকালো। পায়ে হাত দিতেই ব্যাথায় চেঁচিয়ে উঠে। নিশাদ মুখ কুঁচকে বললো
” চোখ টা কি বাসার আলমারিতে রেখে এসেছো? চোখ দিয়েছে দেখে চলার জন্য। আলমারিতে গুছিয়ে রাখার জন্য না।” রিধিশা মুখ ফুলিয়ে রাখে।
.
নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” কোথাও যাবে এখন?” রিধিশা মাথা নেড়ে বললো
” টিউশনিতে যেতে হবে।” নিশাদ উঠে কিছুটা সামনে গিয়ে হেটে এসে বললো
” এখন তো ফার্মেসি খোলা নেই কি করবো? আজকে আর টিউশনিতে যেতে হবে না। চলো বাসায় দিয়ে আসি।” রিধিশা মাথা নেড়ে বললো
” না টিউশনি বন্ধ করা যাবে না। কয়েকদিন ধরে বন্ধ যাচ্ছে।” নিশাদ কোমড়ে গাত রেখে বললো
” তাহলে তো আরো কোনো অপশন নেই।” রিধিশা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিশাদ মেকি হেসে রিধিশাকে কোলে তুলে নেয়। রিধিশা চমকে চেঁচিয়ে বলে উঠে
” আরে আরে কি করছেন? নামান আমাকে।” নিশাদ ধমক দিয়ে বলে উঠলো
” চুপ! যা করছি চুপচাপ দেখো নাহলে আমার বাসার ছাদ থেকে নিয়ে ফেলে দেবো। এখন কিছুই করতে পারবে না তুমি।” রিধিশা দাঁতে দাঁত লাগিয়ে চুপ করে যায়।
.
নিশাদ রিধিশাকে নিয়ে বাসায় লিফটে উঠে যায়। রিধিশা ভীতু গলায় বললো
” কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি আমাকে?” নিশাদ শক্ত চাহনি দিয়ে তাকালো রিধিশার দিকে। যার মানে চুপ থাকতে বলছে। রিধিশা ঢোক গিললো, ভয়ে হাত অয়া অবশ হয়ে যাচ্ছে তার।
নিশাদ রিধিশাকে দাঁড় করিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভেতর যায়। রিধিশার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসে।
রিধিশা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভেতরে এসে ভীতু চোখে পুরো ফ্ল্যাটে চোখ বুলায়। নিশাদ রিধিশাকে সোফায় বসিয়ে রুমে চলে গেলো।
ফার্স্টএইড বক্স এনে রিধিশার পায়ে কেটে যাওয়া জায়গায় স্যাভলন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। মচকে যাওয়া জায়গায় ধরে রিধিশার দিকে তাকিয়ে বললো
” চিৎকার দেবে না রুমে রেহানরা ঘুমাচ্ছে।”
বলেই রিধিশার পা মুচড়ে দেয়। রিধিশা নিজের মুখ চেপে ধরে চিৎকার বন্ধ করে নেয়। রিধিশা চোখ বড় বড় তাকায় নিশাদের দিকে। নিশাদ বললো
” দেখোতো হাটতে পারো কিনা।” রিধিশা উঠে দেখে পা ঠিক হয়ে গেছে। মচকে যাওয়া জায়গায় ব্যাথাও নেই কিন্তু কেটে যাওয়া জায়গায় কিছুটা ব্যাথা আছে।
রিধিশা খুশি হয়ে বললো
” থ্যাংক ইউ।” নিশাদ থমথমে চেহারায় বললো
” যাও বের হও এখন। তোমাকে উপকার করা শেষ। আর এবার কিপটামো না করে পায়ের যেই ব্যাথা আছে সেটার জন্য ঔষধ খেও নাহলে তোমারই সমস্যা হবে।”
.
রিধিশা মুখ বাঁকিয়ে বললো
” সেটা আমি বুঝে নেবো আর আপনার বাসায় আসার জন্য মরে যাচ্ছিলাম না আমি।” নিশাদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো
” হ্যা, তা তো দেখেছিই। এখানে না নিয়ে আসলে আজকে সারাদিনেও টিউশনিতে যেতে পারতে না।” রিধিশা ভেংচি কেটে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে।
টিউশনিতে যেতে হবে নাহলে লেট হয়ে যাচ্ছে অনেক।
নিশাদ খুশিতে আত্মহারা কারণ মচকে যাওয়া পা ঠিক করার ট্রিট টা অনেক আগেই দেখে আসলেও
কখনো টায় করেনি বলতে গেলে টায় করার সুযোগ পায়নি কিন্তু আজকে করেছে সাথে সফলও হয়েছে এতে প্রচণ্ড খুশি। নিশাদ হাসতে হাসতে বলে
” প্রথমে কি না ভয় পেয়েছিলাম মনে মনে। ভাগ্য সহায় ছিলো বলে পা টা ঠিক হয়েছে নাহলে উল্টো কাজ করলে তো রিধিশার পা’টা ইন্নানিল্লাহ হয়ে যেতো।”
.
আজকে রেহান আর সাদির পরীক্ষা তাই দুজন খেয়ে আগেই বেরিয়ে পড়েছে। নিশাদ তৈরি হচ্ছে যাওয়ার জন্য। ক্যাম্পাসে একদিন না গেলে যেনো দিন কাটে না। চুল ঠিক করে ঘড়ি পড়ে জ্যাকেট পড়তে পড়তে রুম থেকে বের হতেই দেখে সূর্য কোমড়ে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি? এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”
সূর্য নিশাদের কথা শুনে ফোন বের করলো। আর জিজ্ঞেস করলো
” তোর আর রিধিশার মাঝে কি চলছে রে?”
নিশাদ চোখ বড় বড় করে বললো
” কি! আমার আর রিধিশার মাঝে? পাগল হলি নাকি? কিছু খাইছিস এই সকালে? ওই মেয়ের ভাব দেখে মরে যাই আবার ওই মায়ের সাথে কি চলবে?”
সূর্য চোখ ছোট করে বললো
” আমারে গাধা পাইছিস? আমি কি কিছু বুঝি না?
আচ্ছা বল কালকে রাগ করে যে অনুষ্ঠান থেকে চলে এসেছিলি এরপর কোথায় ছিলি তুই?”
” কোথায় আবার বাসায়ই তো আসলাম সোজা!”
সূর্য দাঁত কেলিয়ে বললো
” তাই নিশাদ ভাই? তাহলে এই ছবি তে তোর জমজ ভাই আর রিধিশা রয়েছে নিশ্চিই!” নিশাদ সূর্য হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখলো অনেক গুলো ছবি তার আর রিধিশার। নিশাদ সূর্যের দিকে তাকাতেই সূর্যর চাহনি দেখে বললো
” নাথিং ইয়ার। কালকে মিলি ওকে অনেক বাজে কথা বলেছিলো, রিধিশা কাঁদছিলো তাই সরি বলতে গিয়েছিলাম। এর বেশি কিছুই না আর কিছু হলেও তোদেরকে কি মিথ্যা বলবো নাকি?”
সূর্য তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” হুম, যাই করিস আমাদের কথা যেনো মাথায় থাকে।”
চলবে…….#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ১৫ ।
ভার্সিটির বট গাছে নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে নিশাদ,
সূর্য আর কিছু ছেলে। রিধিশা সেদিক দিয়ে যাওয়ার সময় নিশাদের দিকে চোখ পড়ে। রিধিশা তাকিয়ে তাকিয়ে চলে গেলো কিন্তু নিশাদ তাকিয়ে আছে এখনও। নিশাদ উঠে দাঁড়াতেই সূর্য বলে উঠে
” কিরে কোথায় যাস?”
” একটু কাজ আছে, আসছি আমি।” নিশাদ রিধিশার পেছন গেলো।
রিধিশা হোস্টেলে ঢুকতে যাচ্ছিলো তখন মিলি এসে সামনে পড়লো।
মিলি রিধিশাকে দেখেই অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়। রিধিশা শক্ত চোখে তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই মিলি ডেকে উঠলো তাকে। রিধিশা মিলির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মিলি তাচ্ছিল্য হেসে বললো
” তোমাদের মতো মেয়ে তো ভালো করেই ছেলেদের নিজেদের পেছনে ঘুরাতে পারো। তা নিশাদ ছাড়া কি আরো ছেলে আছে নাকি নিশাদকেই প্রথম শিকার বানিয়েছো!” রিধিশা দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” সবাইকে নিজের মতো মনে করো নাকি?” মিলি হেসে বললো
” আমি তোমার মতো না যে, তোমাকে নিজের মতো মনে করবো। কি কি করো সবই আমার খবরই আমার কাছে আসে।” রিধিশা শান্ত গলায় বললো
” যেখান থেকে খবর গুলো আসছে সেখানে গিয়ে আগে Identified করর দেখুন সঠিক খবর দিচ্ছে নাকি ভুল খবর দিচ্ছে। আমি কাউকে নিজের পেছনে ঘুরাচ্ছি না।”
” ঘুরাচ্ছো না তাহলে নিশাদের থেকে দূড়ে যাচ্ছো না কেনো?” রিধিশা ভ্রু কুঁচকে বললো
” সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করে জেনে নেবেন। আমার পিছু ছাড়ছে না কেনো তিনি।”
রিধিশা তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলো। মিলি পেছনে তাকাতেই নিশাদকে দেখতে পায়। নিশাদ কাউকে খুঁজতে খুঁজতে এদিকেই আসছে। মিলি নিশাদের কাছে যেতেই নিশাদ রাগি চাহনি দিলো। মিলি মন খারাপের চেহারা বানিয়ে বললো
” সরি, নিশাদ। আমার গতকাল রিধিশার সাথে এরকম বিহেভিয়ার করা ঠিক হয়নি। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ!” নিশাদের মন গললো না মিলির কথায় তাও মিলিকে বললো
” it’s okey but next time তোমাকে রিধিশার পাশে আমি দেখতে চাই না। কাউকে কিছু বলার আগে ভেবে বলবে আর না পারলে কথা বলারই দরকার নেই তোমার।”
মিলি মাথা নাড়ায়। নিশাদ আবার ফিরে আসে বটগাছের কাছে। রিধিশাকে পায়ের কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলো কিন্তু তাকে তো পেলোই না। মিলিও নিশাদের সাথে যেতে যেতে বললো
” আচ্ছা তোমার আর রিধিশার মধ্যে কি কোনো রিলেশন রয়েছে?” নিশাদ হাটা থামিয়ে মিলির দিকে তাকালো। মিলি আমতা আমতা করে বললো
” মানে ক্যাম্পাসের অনেকেই জিজ্ঞেস করে আমাকে তাই জানতে চাইছিলাম আর কি।”
নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” ক্যাম্পাসের কারোর আমার লাইফে মাথা ঘামানোর দরকার নেই তুমি বলে দিও এটা আর তুমি নিজেও মাথায় ঢুকিয়ে নিও। প্রথমত আমি তোমাকে জাস্ট ফ্রেন্ড ছাড়া কিছু মনে করি না। আমাকে নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখার দুঃসাহস না করা বেটার।”
মিলি কাঁদোকাঁদো গলায় বললো
” But nishad i love you and i want you in my life.”
” মিলি, চাইলেই যদি সব পাওয়া যেতো তাহলে মানুষের জীবনের দুঃখ নামক কিছু থাকতো না। আমি প্রথম থেকে বলে আসছি আমাকে ফ্রেন্ড এর থেকে বেশি অন্য কিছু ভাব্বে না তুমি। দ্বিতীয়ত রিধিশা বা আমি মেলামেশা করছি ভেবে বারবার রিধিশাকে হ্যারাস করছো সেটাও বন্ধ করো। কারণ আমার লাইফ এটা। কখন, কি, কেনো কিছু করবো সব তোমাকে বলবো না আর তোমার কথায়ও করবো না। আমাকে কিছুটা হলেও চিনেছো এতোদিনে।”
মিলি নিশাদের কথা কেঁদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বললো
” তারমানে তুমি আমাকে না রিধিশাকে ভালোবাসো?”
মিলির প্রশ্নের উত্তরে না বলতে গিয়েও গলায় আটকে গেলো সেটা। নিশাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
” জানি না তবে এইটুকু জানি তোমাকে ভালোবাসি না আর ভালোবাসা সম্ভবও না।”
নিশাদ হনহন পায়ে বটগাছের নিচে সূর্যদের কাছে গিয়ে বসে পড়লো। মিলি কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো ভার্সিটি থেকে।
রিধিশা জোতির সাথে মজা করে যাচ্ছে। রিধিশা হাসতে হাসতে বললো
” জোতি! ভাইয়াকে ফোন করে বলে দেই যে, তার বোনকে যতোটা ছোট ভাবছে সে এতো ছোট না। প্রেম করে বেড়াচ্ছে তোমার বোন।” জোতি কাঁদোকাঁদো চেহারা বানিয়ে বললো
” তুই আমাকে এতোবড় বিপদে ফেলবি? তুই না আমার জানু? ভাইয়াকে বললে কি হবে জানিস না? তোকে একটু খেয়াল রাখতে বলেছে বলে কি সত্যি এসব কথা জানাতে হবে?”
রিধিশা মাথা নেড়ে বললো
” না এসব অজুহাত আমাকে দিস না। খেয়াল রাখার দায়িত্ব যখন দিয়েছে তখন রাখতেই হবে। বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে চাই না পরে দেখা যাবে ভাইয়া আমার উপর রেগে গিয়েছে। আমি তো আজ বা কাল বলবোই।”
রিধিশার কথা শুনে জোতি কেঁদে দিলো। রিধিশা সশব্দে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে বললো
” আরে মজা করেছি আমি। ভাইয়া আমাকে কিছু বলেনি।” জোতি কান্না বন্ধ করে মুখ ফুলিয়ে রাখে।
রিধিশার দিকে চোখ পড়তেই ব্যান্ডেজ দেখে আঁতকে বলে উঠে
” কিরে তোর পায়ে গি হয়েছে?” রিধিশা সকালের কথা বললো।
জোতি অবাক হয়ে বললো
” দেখেছিস নিশাদ ভাইয়া কতো ভালো একটা মানুষ? কিন্তু তুই তো সব সময় ঝগড়া করিস ভাইয়ার সাথে।”
রিধিশা মুখ লটকিয়ে বললো
” তো আর কি করবো? উনার জন্য বারবার আমি অপমানিত হই আর উনি নিজেও এসে ঝগড়া করে আমার সাথে।” জোতি বিরক্ত গলায় বললো
” ছাড় ওই মিলির কথা। ওইটা তো আস্ত পাগল একটা মেয়ে। প্রেমের পাগল হলেও এতোটুকু বোঝা উচিত জোড় করে সব পাওয়া যায় না। যাই হোক চল ক্লাসে চল।” রিধিশা আর জোতি ক্লাসের জন্য চলে গেলো।
.
ভার্সিটি ছুটি হওয়ায় রিধিশা প্রতিদিনকার মতো সেই লেকে এসে বসলো। কয়েকটা ফুল এনে পানির কাছে বসে খেলতে থাকে। আজকে আবার কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়েছে গাছে তবে অন্য গাছটা খালি। রিধিশা কাঠগোলাপ ফুল গুলো মাটি থেকে কুড়িয়ে নিয়েছে।
খেলতে খেলতে হঠাৎ পানিতে নিশাদের প্রতিচ্ছবি দেখে রিধিশা ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠে যায়।
নিশাদ চোখ বড় বড় করে বললো
” কি হলো? কি দেখে ভয় পাচ্ছো?” রিধিশা বুকে থু থু দিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বললো
” কি দেখে আবার আপনাকে দেখে! হুট করে ভূতের মতো পেছনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন।”
নিশাদ হা হা করে হেসে বলে উঠে
” আমাকে দেখার জন্য মেয়েরা লাইন লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর এই মেয়ে নাকি আমাকে দেখে ভয় পেয়েছে।” রিধিশা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো
” কোথায় আমি তো একদিনও আপনার বাড়ির সামনে লাইন দেখলাম না কখনো।”
নিশাদ তার ঘন কালো চুলে হাত বুলিয়ে বলল
” যেইসেই মেয়েদের নিশাদ পাত্তা দেয় না বুঝেছো? তাই সবাই নিজেদের সম্মান বজায় রাখতে ফোনে চুপি চুপি প্রপোজ করে।” রিধিশা তাচ্ছিল্য ভাবে হাসলো। নিশাদ ভেংচি কেটে বললো
” শোনো তোমাকে এতোকিছু বলার সময় আমার নেই। একদিন প্রমাণ সহ দেখিয়ে দেবো তখন বুঝবে। আচ্ছা বলো পায়ের ব্যাথা কমেছে?” রিধিশা আড়চোখে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো
” কিছুটা কমেছে।” নিশাদ মাথা নেড়ে বললো
” ওকে,খাবার খেয়ে ঔষধ খেয়ে নেবে তাহলে কমে যাবে।”
রিধিশা চুপ করে বসে রইলো আবার।
নিশাদ মনোযোগ সহকারে রিধিশার দিকে তাকালো। শুকনো শরীরটা আগের তুলনায় আরো শুকনো মনে হলো নিশাদের কাছে। আগে এতো পর্যবেক্ষণ না করলেও রিধিশার মাঝে কিছুটা পার্থক্য এসেছে বোঝা যায়।
নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” শোনো মেয়ে, বেশি বেশি খাবে। তোমাকে দেখলে মনে হয় একটু বাতাস আসলেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে। আর আমার কাছে তো একটা বাচ্চা মেয়ে তুমি। আমার হাতের সাথেই হালকা ধাক্কা লাগলে এই পানিতে পড়ে ডুবাডুবি খেতে থাকবে।” রিধিশা রেগে তাকায় নিশাদের দিকে। রাগি গলায় বললো
” আমি অনেক ভালো সাতার জানি ঠিকাছে? তাই ডুবাডুবি খাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর আমাকে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না।”
নিশাদ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে চলে গেলো।
রিধিশা কিছুক্ষণ পর হা, পা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায়। টিউশনিতে যেতে হবে আবার সময় হয়ে যাচ্ছে।
____________
সন্ধ্যার পর বাসায় এসেই গোসল করে রান্না বসায় রিধিশা। ঘর ঝাড়ু দিতে দিতে ফোন বেজে উঠে। রিধিশা মায়ের ফোন দেখে রিসিভ করে
” আসসালাম ওয়ালাইকুম, আম্মু। কেমন আছো?”
” ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই কেমন আছিস?”
” আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে।”
লিমা বেগম রেগে বলে উঠলো
” রিধু! প্রতিদিন তোর মুখে এই কথা শুনতে ভালো লাগে না।” রিধিশা হেসে বললো
” আরে রাগ কেনো সত্যি কথাই তো বলি। আচ্ছা কি করো?” লিমা বেগম গলার স্বরে নামিয়ে বললো
” কিছু না। তোকে কিছু বলার ছিলো।”
” হ্যা, বলো!” লিমা বেগম নিচু স্বরে বললো
” তোর বাবা আবারও পাগল হয়ে উঠেছে তোর বিয়ের জন্য। একটা পাত্র ঠিক করেছে। তারা তোকে সামনা সামনি দেখতে চেয়েছে। তোর বাবা তোকে আনতে পারবে না তাই তোর ভার্সিটির ঠিকানা দিয়ে বলেছে তোর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে।” রিধিশা অবাক গলায় বললো
” আবার? কিন্তু আমার ভার্সিটির ঠিকানা কিভাবে পেলো? তুমি আর খালামনিরা ছাড়া তো কেউ জানে না। কোথায় থাকি বা কোথায় পড়ি আমি।”
লিমা বেগম হতাশ গলায় বললো
” আমার ভুলের জন্যই জেনেছে। তোর বাবা একদিন তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো আমিও খুশি হয়ে কথায় কথায় ভার্সিটির নাম বলে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম না তোর বাবা এসবের জন্য জানতে চেয়েছিলো।”
রিধিশা জড়ানো গলায় বললো
” কি করলে তুমি আম্মু? এখন কি করবো আমি যদি লোকটা ভার্সিটিতে এসে আমাকে খোঁজে?”
” দেখ মা কথা হলো তোর বাবা ছেলের বাড়ির লোককে অনেক কিছু বলেছে। তোকে সামনা সামনি দেখতে না পেয়ে অনেক প্রশ্ন করেছে তোর বাবাকে। তোর বাবাও বলেছে তুই পড়াশোনার চাপে একদিনের ভেতর গ্রামে আসতে পারিসনি। তোর বাবা বলেছে তার মান-সম্মান জড়িয়ে আছে এখনও তাই তুই যেনো কোনো উল্টো পাল্টা পদক্ষেপ না নিস।”
রিধিশা বিরক্ত গলায় বললো
” আর কিসের উল্টো পাল্টা? বাবার কি হয়েছে?
ঠিকাছে আমি দেখা করবো তবে বাকিটা আমি জানি না। তবে তুমি বললে আমি না দেখে বিয়েও করে নেবো।”
লিমা বেগম আলতো হেসে বললো
” না আমি চাই না এসব। তোর যদি সেই ছেলেকে
দুজনের একে অপরের যোগ্য মনে হয় তবেই বিয়ে হবে। তোর বাবা তোর স্বাধীনতা কেড়ে নিলেও তোকে আমি স্বাধীনতা দিয়েছি। শুধু ভুল পদক্ষেপ নিস না তাহলে সারাজীবন সেই ভুলের বোঝা টানতে হবে আমাকে। যেমনটা এখন তোর বাবার ভুলের মাশুল টানছি।” রিধিশা অবাক হয়ে বললো
” বাবার ভুলের মাশুল মানে?” লিমা বেগম ঠান্ডা গলায় বললো
” কিছু না। রাতে খেয়ে ঘুমাস। জোয়ান আমাকে ফোন করে বলেছে তুই নাকি কয়েকদিনে শুকিয়ে গিয়েছিস।”
রিধিশা হেসে দেয় জোয়ানের নাম শুনে।
” ভাইয়া তোমাকে ফোন করে আমি শুকিয়ে গিয়েছি বলে?”
” ওমা বলবে না? বেচারা তোর জন্য কতো চিন্তা করে জানিস?”
” হুম তাই মনে হয়।”
চলবে……..#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ১৬ ।
রিধিশা ধীর পায়ে ভার্সিটিতে যাচ্ছে। পায়ের ব্যাথা রাতে বেড়েছে। গতকাল ঔষধ কিনে আনবে ভেবেও পড়ে ভুলে যাওয়ায় আর কেনা হয়নি। রাতে কেটে যাওয়া জায়গাটা খানিকটা ফুলে গিয়েছে। ব্যাথাও রয়েছে তাই জোড়ে জোড়ে হাটতে পারছে না।
ভার্সিটির আগে রিধিশার লেকের দিকে চোখ গেলো।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে বললো
” এটা নিশাদ না? এই সময়ে এখানে বসে আছে কেনো মূর্তির মতো?” রিধিশা নিশাদের দিকে এগিয়ে যায়।
নিশাদ বসে আছে আর মাথার চুল টানছে মাঝে মাঝে।
রিধিশা নিশাদের দিকে অবাক চোখে তাকালো।
মাথার চুলের এলোমেলো অবস্থা, চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে। চেহারায় অসুস্থ ভাব দেখ যাচ্ছে। রিধিশা চিন্তিত গলায় বললো
“কি হয়েছে আপনার?” নিশাদ সাথে সাথে রিধিশার দিকে তাকিয়ে আবার মুখ নামিয়ে নেয়। রিধিশা নিশাদের সামনে বসে বললো
” আপনি কি অসুস্থ?” নিশাদ ‘হুম’ বলে গম্ভীর গলায় সায় জানালো। রিধিশা আবারও জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়েছে?”
নিশাদ শান্ত গলায় বললো
” জ্বর এসেছে রাতে।”
” ওও তাহলে এখানে বসে আছেন কেনো? বাসায় গিয়ে রেস্ট নিন! জ্বর নিয়ে ভার্সিটিতে এসেছেন আবার এখানে বসে আছেন কেনো?”
নিশাদ উত্তরে বললো
” এক্সাম ছিলো তাই।” রিধিশা ওও বলে উঠে যাচ্ছিলো। নিশাদ রিধিশার হাত টেনে ধরে নিজেও উঠে দাঁড়ায়। রিধিশা চোখ বড় বড় করে তাকায়। নিশাদ রিধিশাকে বললো
” আচ্ছা রান্না করতে পারো তুমি?” রিধিশা ভ্রু কুঁচকে বললো
” হ্যা,পারি তবে কেনো?”
নিশাদ দাঁত কেলিয়ে রিধিশা হাত ধরে বললো
” চলো আমার সাথে আমার বাসায় চলো।” রিধিশা বিস্মিত হয়ে তাকায়। চেঁচিয়ে বলে উঠে
” কি? আপনার বাড়িতে কেনো যাবো আমি?”
নিশাদ মুখ কুঁচকে বললো
” চেঁচাও কেনো? গেলেই দেখতে পারবে, চলো আমার সাথে।”
রিধিশা নিশাদের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে বললো
” যাবো না আমি। বললেই হলো নাকি? এমন ভাবে অধিকার দেখাচ্ছেন যেনো আমি আপনার বউ বা কিছু হই?”
” বউ হলে এভাবে বলতাম না। ঠাস করে তুলে নিয়ে যেতাম।”
নিশাদ রিধিশাকে বাইকের কাছে নিয়ে যেতে থাকে। রিধিশা বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে কেনো নিয়ে যাচ্ছে তাকে। নিশাদ যেতে যেতে বললো
” আজকে বুয়া আসবে না। সকাল থেকে না খেয়ে আছি। আমি খিধে পেটে থাকতে পারি না আর এখন বাইরের খাবার খাওয়ার ইচ্ছে নেই আমার। তাই তুমি রান্না করে খাওয়াবে আজকে।”
রিধিশা হা করে তাকিয়ে থাকে। পরক্ষণেই রেগে বললো
” মগেরমুলুক নাকি? বলবেন আর আপনার বাসায় গিয়ে রেঁধে দিয়ে আসবো আমি কি আপনার বাসার বুয়া নাকি?” নিশাদ হেসে বললো
” তুমি হলে একদিনের জন্য আমার বাসার রাঁধুনি, চলো এবার কথা বাড়াবে না। খুধায় মাথা ঘুরছে আমার।”
নিশাদ বাইকে উঠে রিধিশাকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে।
রিধিশা বাইক থেকে নেমে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। নিশাদ রিধিশার হাত টেনে লিফটে উঠলো গিয়ে। ৬ তলার বাটন ক্লিক করে।
নিশাদ ফ্ল্যাটে ঢুকে রিধিশাকে ঢুকতে বললো। রিধিশা ঢোক গিলে ভেতরে ঢোকে। নিশাদ বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো
” এমন ভাব করছো যেনো তোমাকে রেপ করতে নিয়ে এসেছি।” রিধিশা বড় বড় চোখে তাকালো। নিশাদ পাত্তা না দিয়ে রুমে ঢুকে জ্যাকেট খুলে রাখে।
রিধিশা সোফায় বসে চারপাশে তাকালো।
রিধিশা নিচু স্বরে নিশাদকে ডেকে উঠে
” শুনুন! আপনার ফ্ল্যাটে একা আমি কেমন দেখায় না? মানুষ কি ভাব্বে? আমি বরং বাসায় চলে যাই।”
রিধিশা উঠে দ্রুত চলে যেতে নিলে নিশাদ দৌঁড়ে এসে রিধিশার হাত ধরে চোখ রাঙ্গিয়ে বললো
” এক পা বাইরে বের করলে এই বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ফেলে দেবো তোমায়। চুপচাপ বসো আমি তোমার প্রবলেম সলভ করছি।”
নিশাদ রিধিশাকে নিয়ে কিচেনে গেলো। রিধিশা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কিচেনের দিকে তাকায়। রিধিশা নাক ছিটকে বলে
” ছি! বুয়া আছে তাও কিচেনের এই অবস্থা?” নিশাদ আড়চোখে তাকিয়ে বললো
” বুয়া তো রান্না করার জন্য। এসব কি করবে নাকি? মাসে ২,৩দিন করে হয়তো। বউ তো নেই যে প্রতিদিন করবে।” রিধিশা মুখ বাঁকিয়ে বললো
” বুঝেছি এখন তাড়াতাড়ি বলুন কি করবো।”
নিশাদ একটা বালতি দেখিয়ে বললো
” এখানে চাল আছে, পাতিল নামিয়ে ভাত বসাও আমি একটু আসছি।”
রিধিশা পাতিল নামাতে নামাতে নিশাদ কিচেন থেকে বের হয়ে পাশের ফ্ল্যাটে চলে গেলো। সেখানে কলিং বেল বাজালে কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে। মহিলা হেসে বললো
” নিশাদ? কি ব্যাপার আজকে হঠাৎ! কিছু লাগবে নাকি?”
নিশাদ মাথা চুলকে বললো
” আসলে আন্টি একটু প্রবলেমে পরেছিলাম তাই আরকি। আন্টি স্নেহা আছে বাসায়?”
স্নেহার আম্মু সায় জানিয়ে বললো
” হ্যা আছে কিন্তু কেনো?”
” আসলে আন্টি আমার এক ফ..ফ্রেন্ড এসেছে, একজন মেয়ে। তো একা থাকতে uncomfortable feel করছে তাই ভাবছিলাম স্নেহা যদি থাকে কিছুক্ষণ।” স্নেহার আম্মু স্নেহাকে ডেকে নিশাদকে বললো
” তুমি এটা বলতে এতো আনইজি ফিল করছো কেনো? তোমাকে এতো বছর থেকে দেখে আসছি আমি। তোমাকে ভালো করেই চিনি কেমন ছেলে তুমি।” নিশাদ মুচকি হাসি দিলো। স্নেহা রুম থেকে দৌঁড়ে এসে নিশাদের কোলে উঠে গেলো। নিশাদ স্নেহাকে নিয়ে রুমে চলে আসে।
রিধিশা উঁকি দিয়ে নিশাদকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো
” আপনি একটু কাজ করতে গিয়েছিলেন? এতোক্ষণ লাগে কাজ শেষ করতে? ভাত বসিয়েছি আর কি করবো সেটা দিয়ে যাবেন তো!”
” অদ্ভুত বেয়াদব মেয়ে তো তুমি! তোমার সমস্যা সমাধান করতে গিয়েছিলাম আর তুমিই এসব লেকচার দিচ্ছো? উপকারের দাম নেই তোমার কাছে।”
রিধিশা বিরক্ত গলায় বললো
” কতোবার বলবেন একই কথা? বারবার এই কথায় বলেন শুধু। কি রাঁধব সেটা বলুন।” নুশাদ স্নেহাকে সোফায় বসিয়ে ফ্রিজ থেকে চিকেন আর কিছু ভেজিটবলস বের করলো।
রিধিশার হাতে দিয়ে বললো
” এই যে এগুলো আর সব কিছু কিচেনে আছে। আর যদি না থাকে ফ্রিজ থেকে দেখে নিয়ে যেও।”
রিধিশা ভেংচি দিয়ে রান্নাঘরে এসে পড়লো।
স্নেহা এতোক্ষণ রিধিশাকে দেখছিলো হা করে। প্লে’তে পড়া মেয়ে স্নেহা। নিশাদ স্নেহাকে কোলে নিয়ে বসে বললো
” স্নেহা কি খাবে তুমি?” স্নেহা ফিসফিস গলায় বললো
” নিশু ভাইয়া ওই আপুটা কে? কি রাগি বাব্বা!” নিশাদ হা হা করে হেসে দেয়।
নিশাদের হাসির শব্দ শুনে রিধিশা সবজি কাটতে কাটতে বললো
” এই ছেলে কি আগে থেকেই পাগল নাকি অসুস্থ হয়ে হয়েছে? একা একা হেসে যাচ্ছে।” রিধিশা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে নিশাদের কোলে স্নেহাকে দেখে দৌঁড়ে ওর সামনে আসে। রিধিশা স্নেহাকে দেখিয়ে অবাক হয়ে বললো
” মেয়েটা কে? আপনার মেয়ে নাকি?আপনার বিয়ে হয়েছে?” নিশাদ বোকার মতো স্নেহার দিকে তাকায়।
স্নেহা মিটমিটি করে হেসে যাচ্ছে।
নিশাদ ধমকে বলে উঠে
” এক থাপ্পড় দেবো। আমার বিয়েতে এসেছিলে নাকি তুমি? চোখ কোথায় রাখো? একটু আগে তো ওকেই নিয়ে আসতে গিয়েছিলাম পাশে ফ্ল্যাট থেকে তোমার জন্য।”
রিধিশা জিভ কেটে বললো
” দুঃখিত আমি তো খেয়াল করিনি। কি মিষ্টি মেয়ে।” রিধিশা স্নেহাকে কোলে নিয়ে আদর করলো। নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” পরে আদর করবে আগে রান্না করো আর হ্যা পারলে একটু কফি বানিয়ে দিও মাথা ব্যাথা করছে।” রিধিশা চলে গেলো। স্নেহা নিশাদের পাশে বসে বললো
” আপু টা খুব ভালো। একদমই রাগি না।” নিশাদ হেসে উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে জুস আর ফ্রুটস নিয়ে আসে।
.
আধ ঘন্টার মাঝে নিশাদ তিনবার এসে ঘুরে গিয়েছে খিধে পেয়েছে বলে। নিশাদকে দেখতেও দুর্বল লাগছে। রিধিশা কফির সাথে নাস্তাও বানিয়ে নেয়। রান্না শেষ করতে আরো দেড়ি হবে তাই। টেবিলের উপর নাস্তার প্লেট আর কফি মগ রেখে নিশাদকে বললো
” নাস্তা করে দিয়েছি খেয়ে নিন। রান্না করতে দেড়ি হবে।” নিশাদ মুচকি হেসে স্নেহাকে নিয়ে টেবিলে বসে খেতে থাকে। রিধিশা আবারও কিচেনে চলে গেলো।
.
নিশাদ খেতে খেতে কালকের কথা ভাবলো। গতকাল সাদির সাথে বাইরে গিয়েছিলো। নিশাদের অভ্যাস বাইরে থেকে এসেই গোসল করতে হয়। কালকে বেশি রাত হয়ে গিয়েছিলো আসতে তাই রাতে অনেক্ষণ গোসল করায় জ্বর হয়েছিলো। বন্ধুদের সেবায় সকালের মাঝে জ্বর কমলেও দুর্বলতা কাটেনি। সাথে সকালে কফি না খাওয়ায় মাথা ব্যাথাও বেড়েছিল। সকালেই চারজন বেরিয়ে গিয়েছিলো, বুয়া তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে আজকে আসবে না তাই রিধিশাকে ধরে এনেছে।
নিশাদ রিধিশাকে ডেকে বলল
” আরেকবার কফি দিতে পারবে?” রিধিশা উঁকি দিয়ে বললো
” মাত্রই তো দিলাম আবার কেনো?” নিশাদ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বললো
” মাথা ব্যাথা কমেনি। আরেকবার খেতেই হবে।”
রিধিশা এসে কফি মগ নিতে নিতে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে যায়। স্নেহা নিশাদের কোলে চড়ে বসে বললো
” নিশু! আপুটা তোমাকে রান্না করে দিচ্ছে কেনো? তোমার আন্টি কোথায়?”
” আজকে আসেনি গো।” স্নেহা মন খারাপ করলো।
আরেক মগ কফি খেয়ে নিশাদ বিছানায় শুয়ে থাকে কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়েও যায়।
রিধিশা দুটো তরকারি বসিয়ে স্নেহার সাথে বসে গল্প করতে থাকে আবার টিভিও দেখতে থাকে। নিশাদ ঘুমিয়ে যাওয়ায় আর ডাকেওনি।
.
নিশাদ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রিধিশা আর স্নেহা সোফায় হেলান বসে দিয়ে টিভি দেখছে।
ঘড়িতে দেখলো ১টা বাজে।
নিশাদ নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বিড়বিড় করে বললো
” আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম রিধিশা আছে।”
নিশাদ দুজনের সামনে গিয়ে দেখে রিধিশা ঘুমে ঢুলছে হাতে বই নিয়ে। নিশাদ মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো
” তোমার কি যেখানে সেখানে বই পড়ার অভ্যাস আছে নাকি? আগে বুঝিনি তো!” রিধিশা চোখ খুলে বললো
” না আসলে আপনার বুক সেলফ থেকেই একটা উপন্যাসের বই নিয়েছিলাম। আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই চলে যেতে পারছিলাম না।” নিশাদ হালকা হেসে বললো
” গুড গুড! আমি ভেবেছিলাম চলে যাবে তারপর আর ফ্ল্যাটের সব চুরি হয়ে যাবে। রান্না শেষ।”
রিধিশা নিশাদের বই রেখে বললো
” হ্যা অনেক আগেই। আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি।” নিশাদ মাথা নেড়ে হাত ধুয়ে এসে টেবিলে বসলো স্নেহাকে নিয়ে। স্নেহা নিশাদকে বললো
” নিশু আমি যাই হ্যা! নাহলে মাম্মা আমাকে বকা দিয়ে বলবে তুমি কেনো খেয়েছো অন্যের খাবার।” নিশাদ হেসে দেয় স্নেহার বলার স্টাইল দেখে। পড়ে বললো
” আমার সাথে খেলে কিচ্ছু বলবে না। আজকে তোমার আর আমার লাঞ্চ ডেট।” স্নেহা ফিকফিক করে হেসে দেয়।
রিধিশা একে একে সব খাবার এনে নিশাদের সামনে রাখে। নিশাদ রিধিশাকে বললো
” তুমিও বসো! আজকে একসাথে লাঞ্জ করি!”
” নাহ এই সময়ে লাঞ্চ করি না। আপনি খেয়ে নিন।”
নিশাদ মাথা নেড়ে খাওয়া শুরু করে।
খেতে খেতে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো
” বাহ ভালোই তো রান্না করো! আমি তো ভেবেছিলাম একদম অখাদ্য রান্না করবে। কিন্তু খেতে একদম মায়ের হাতের রান্নার মতো।” রিধিশা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” আপনার মা, বাবা কোথায় থাকে?” রিধিশার আচমকা এমন প্রশ্নে নিশাদ চমকে যায়। গলায় খাবারও আটকে কাশি উঠে গেলো। রিধিশা চটজলদি পানি এগিয়ে দেয়। নিশাদ স্নেহার সাথে হাসি মজা করে খেতে থাকে। ভাব দেখে মনে হচ্ছেন প্রশ্নটার উত্তর দিতে যেনো ভুলে গিয়েছে। রিধিশাও আর জিজ্ঞেস করলো না।
______
টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরে আসতেই মায়ের ফোন আসে। বাবার ঠিক করা পাত্র কালকে একটা কফি শপে তার সাথে দেখা করতে চায় বলেছে। রিধিশা কি করবে বুঝতে পারছে না। না গেলেও বাবার সম্মানে আঘাত লাগবে আর গেলেও কি হবে সেটা জানে না।
[প্রথম পরিচ্ছদের সমাপ্তি ]
[