গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব -২৯+৩০+৩১

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_উনত্রিশ

সদ্য বাবা-মা হারা মেয়ে’টা ভাইয়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চুপে চোখের জন্য ফেলছে। ভাই পরম আবেশে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাথার উপর সিলিং শব্দ করে ঘুরছে। ফাইজার দৃষ্টি সেদিকে রেখে বলে উঠলো……..

–আমরা এখান থেকে চলে যাব ভাইয়া….

ফাইজার কান্না মাখা কন্ঠ স্বরে চলে যাব কথা’টা শুনে জেহের অবাক স্বরে বলে উঠলো……

–চলে যাব মানে? আমরা আমাদের বাসা ছেড়ে কোথায় যাব?

জেহের কথা শুনে ফাইজা পূর্নরায় বিস্ফোরিত স্বরে বললো…

–আমরা গ্রামের বাড়ি চলে যাব। এখানে থাকলে আমি দম বন্ধ হয়ে ম’রে যাব ভাইয়া। এই বাড়ির প্রত্যেক’টা কোনায় কোনায় বাবা-মায়ের স্মৃতি’তে জর্জরিত। আমি এখানে থাকতে পারব না ভাইয়া। প্লিজ আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে চলো প্লিজ…….

বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। জেহের চোখ ও অশ্রুসিক্ত। বোনের আবেগ জড়ানো কথাগুলো শুনে চুপ করে আছে। কি উওর দিবে ও? সত্যি’ই তো এই বাড়ি’টা যে বাবা খুব সখ করে টাকা জমিয়ে একটা ফ্লাট কিনেছিলো। কষ্ট করে অর্জন করা টাকা দিয়ে কেনা এই ফ্লাটে রয়েছে হাজার মধুমাখা স্মৃতি, ভাই বোনের খুনশুটি, আর চারজনে মিলে হাসির স্মৃতি। কি করে ভুলবে এগুলো? কথাগুলো ভাবতে’ জেহেরের ও দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছিলো। নিজেকে সামলে শান্ত কন্ঠে বললো…..

–আমরা চট্রগ্রাম চলে যাব। আমি তো ফ্লাটে একা থাকি। এখন থেকে তুই আর আমি থাকব। আর এই বাসা’টা না হয় ভাড়া দিয়ে দিব….

জেহের কথা শুনে ফাইজা জোরে বলে উঠলো……

–“নাহ” এই বাসায় আমার বাবা-মা’য়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এই বাসায় আমি অন্যের হাত লাগতে দিব না। এমনি থাকবে বাসা….

জেহের ও আর কথা বাড়ালো না। বোনের কথা মেনে চুপ করে রইলো। বাবা-মা চলে গেছে দুইদিন হলো। বোন’টা এখনো প্রতি মুহূর্ত চোখের পানি ফেলছে। দুইদিনের ফাইজার চেহারা’ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোখ গুলো ফুলে উঠেছে। ফারদিন হাজার বার ফোন দিয়েছে কিন্তু ফাইজা ফোন বন্ধ করে রেখেছে। তনুজা ফাইজা আর জেহেরের সাথে রয়েছে। জেহের মনে মনে ঠিক করলো কালকে’ই চলে যাবে। ফাইজার ফারদিনের উপর এক অজানা রাগ জমে আছে। ফারদিনের কথা মাথায় এলেও পাত্তা দিচ্ছে না। ফারদিন প্রতিদিন বাসায় এসেছিলো কিন্ত ফাইজা নিজের রুমের দরজা এক মিনিটের জন্য ও খুলে’নি।
____________________________________________
ফারদিন নিজের রুমের বেলকনি’তে বসে আছে গিটার নিয়ে। দুই রাত নির্ঘুম কাটানোর ফলে ওর চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে। বার বার ফাইজা’র পাগলামি গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ফাইজা’র অবহেলা গুলো মেনে নিতে পারছেনা ও? কিন্তু মেয়ে’টার এই বা কি দোষ? ফারদিনের ও নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। ও যদি সময়ের অপেক্ষা না করে তিথী’কে তখনি শাস্তি দিতো তাহলে আজ ফাইজার এমন অবস্থা হতো না। ফারদিন ভাবতে ভাবতে গিটারে সুর তোলার চেষ্টা করতে লাগলো। শূন্য লাগছে মনের ভেতর’টা। চোখ বন্ধ করে সুর তোলার চেষ্টা করতে লাগলো। গুমড়ানো গলায় গাইতে লাগলো…….

চোরাবালি মন তোমার,
কেনো শুধু লুঁকিয়ে থাকো?
একটু আড়াল হয়ে আমায় দেখো?(২)
যদি কোনো চিত্র আঁখি
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী
সেই চিত্র’তে তুমি…
Perfectly বসো……
কেনো লাগে শূন্য শূন্য বলো?
তোমায় ছাড়া এত
তুমি কি তা বলতে পারো?
কেনো লাগে শূন্য শূন্য বলো?
তোমায় ছাড়া এত
তুমি কি তা বলতে পারো?

এইটুকু গেয়ে গিটার’টা বুকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিয়ে বলে উঠলো…..

–আমার খুব শূন্য লাগছে জান। কেনো এমন করছো তুমি আমার সাথে? আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছিনা। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার…..

বলেই নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। কয়েকদিন আগেও রাতে যখন ফাইজা’র রুমে যেতো তখন ফারদিন মেইন দরজা দিয়েই যেতো। আর দরজা খুলে দিতো ফাইজা’র মা নিজে। যেহেতু ফারদিন ফাইজা’র স্বামী সেহেতু ফারদিন’কে আটকানোর প্রশ্ন উঠেনা। ছেলে’টা আকুল আবেদন ফেলতে পারে’নি সে? তাই প্রতি রাতেই ফারদিন যখন তাদের বাসায় যেতো তখন সে দরজা খুলে দিতো। এটা কেউ জানতো না তারা দুজন বাদে। না খেয়ে প্রথম দিন গিয়েছিলো তাই ফাইজা’র মা নিজ হাতে ও’কে জোর করে খাইয়ে দিয়েছিলো। কথা গুলো মনে উঠতে’ই ফারদিনের নিজের মায়ের কথা মনে পড়লো। ফাইজা’র মায়ের ভালোবাসা দেখে ভেবেছিলো এই বুঝি এক মায়ের ভালোবাসা পেতে চলেছে। কিন্তু কে জানতো ওর ভাগ্য’টা এত খারাপ যে কোনো মায়ের আদর,স্নেহ,ভালোবাসা ওর কপালে নেই। ছেলে’টা ভালো নেই। কি করে বুঝাবে সবাই’কে? ফাইজা’কে ছাড়া যে ও শূন্য। কি করে বাঁঁচবে ও? কথা গুলো ভাবার সময় রুম থেকে ফোনের আওয়াজ ভেসে আসতে’ই ফারদিন চোখের জল গুলো মুঁছে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। চেনা নাম্বার পেয়ে তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করে বলে উঠলো…..

–গট এনি ইনফরমেশন? টেল মি কুইক……

ফারদিনের অস্থির কন্ঠ শুনে ওপাশ থেকে ছেলে কন্ঠে ভেসে আসলো….

–স্যার পেয়ে গেছি। তিথী ম্যাডামের বড় গ্যাং রয়েছে। স্যার আপনার পেছন থেকে আপনার আপন মানুষ’টাই আপনাকে ছু’ড়ি মে/রেছে। …..

এইটুকু বলে ছেলেটা থেমে যেতেই ফারদিন উত্তেজিত কন্ঠে একটু চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–স্যা এভ্রিথিং ক্লিয়ার’লি……

ফারদিনের রাগী স্বর শুনে ছেলে’টা থমকানো কন্ঠে বললো…..

–স্যার তিথী ম্যাডামের সাথে নিরব স্যার ও যুক্ত।

নিরব নাম’টা শুনেই ফারদিনের মাথা হালকা ঘুরে গেলো। নিজের কান’কে যেনো নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। নিরব ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে ওর সাথে বেঈমানী করতে পারলো? কথাটা কেনো যেনো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছেনা ফারদিনের? ফারদিন চিৎকার করে বলে উঠলো…..

–তুমি ঠিক বলছো তো?

–জ্বী স্যার কোনো সন্দেহ নেই। আমার কাছে সব প্রমান আছে। এই দুইদিন তারা কোথায় গেছে? কি কি বলছে সব কিছুর প্রমান আমার কাছে আছে। আপনি বললে এক্ষুনি আপনাকে সব মেইল করে দিচ্ছি……

ছেলে’টার দৃঢ় কন্ঠ স্বর শুনে ফারদিন কিছুক্ষন থমকে দাড়ালো। ছেলে’টাকে সব মেইল করতে বলে ফোন’টা রেখে ঘাড়ের দুইপাশে হাত রেখে বিছানায় বসে পড়লো। আপন মানুষ’রা কেনো সব সময় বিশ্বাসঘাতকতা করে? নিরব কেনো এইসব করলো? ভেবে দাতে দাত চেপে ফারদিন বলে উঠলো……

–বিশ্বাস ঘাতকতা’র শাস্তি তোকে খুব ভয়ংকর ভাবে দিতে হবে। তোদের দুজনের মৃত দেহ দেখেও মানুষ কেঁপে উঠবে। সময় ফুরিয়ে এসেছে তোদের…..

বলেই হালকা রহস্যময় হাসি দিয়ে উঠলো।
____________________________________________
পরের দিন সকালে উঠে’ই ফারদিন ফাইজা’দের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। আজ যে করে হোক ফাইজা’র সাথে কথা বলে ছাড়বে? ওর অভিমান ভাঙাবে। তাই সকাল সকাল উঠে’ই রওনা হলো। ফাইজার বাসার সামনে এসে গাড়ি’ থামিয়ে উপরে উঠে বাসার দরজায় তালা ঝুলানো দেখে ওর মাথায় বাজ পড়লো। আবার ভাবলো ওরা হয়তো বাইরে গেছে? তাই কিছু না ভেবে ফাইজার নাম্বারে কল দিলো। কিন্তু ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠে কেউ “ফোন বন্ধ আছে ” বলে উঠলো। ফারদিন বুকের ধুকপুক বেড়ে চলেছে। হারানোর ভয় জেগে উঠছে। জেহের নাম্বারেও কল দিয়ে বন্ধ পেলো। উপায়ন্তর না পেয়ে অনেক ভেবে চিন্তা তনুজার নাম্বারে কল দিয়ে উঠলো। একবার রিং হয়ে কে’টে গেলো। দ্বিতীয় বার কল দিতেই ওপাশ থেকে তনুজা ব্যস্ত গলায় বললো…..

–হ্যা,কে বলছেন?

ফারদিন থমকে থমকে বললো….

–আন্টি আমি ফারদিন। একটা কথা জানার জন্য ফোন দিলাম….

তনুজার হ্যা সূচক বানীর পেয়ে’ই ফারদিন নিঃশ্বাস আটকে বলে উঠলো….

–ফাইজা’রা কি আপনার ওইখানে? আসলে বাসায় তালা ঝুলানো তাই?

তনুজা এইবার করুন স্বরে বলে উঠলো…..

–ফাইজা তো জেহেরের সাথে চট্রগ্রাম চলে গিয়েছে কাল রাতে। মেয়ে’টা খুব ভেঙে পড়েছে এখানে থেকে। তাই জেহের নিজের সাথে নিয়ে গেছে। তুমি চিন্তা করোনা। ওর নিজেই তোমাকে ফোন দিবে মন’টা ঠিক হোক একটু….

বলেই ব্যস্ত আছি বলে তনুজা ফোন রেখে দিতে’ই। ফারদিনের হাত থেকে ফোন’টা নিচে পড়ে গেলো। ওর কানে বাজছে “ফাইজা চট্রগ্রাম চলে গিয়েছে “। হাটু ভেঙে দরজার সামনে বসে পড়লো। সাথে সাথে চোখ বেয়ে পানির ফোটা গড়িয়ে পড়লো।
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_ত্রিশ

বেস্ট ফ্রেন্ড নামক মানুষ’টা যে ঠকাতে পারে এখনো ভাবতে পারছেনা ফারদিন। নিরব’কে তো ও ফ্রেন্ড কম ভাই বেশি ভাবতো। আর সেই ভাই ও’কে ঠকালো? চোখের সামনে নিরব আর তিথী’কে একটা লোহার র’ডের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। সামনেই ফারদিন দেয়ালে হেলান দিয়ে খুব শান্ত ভঙ্গী’তে দাড়িয়ে আছে। ও’কে দেখে বোঝাই যাচ্ছেনা এখানে খুব ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে। নিরবের চোখে ভয় আর তিথী’র চোখে মুগ্ধতা। তিথী মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে এক দৃষ্টি’তে চেয়ে আছে ফারদিনের দিকে। নিরব বার বার ভয়ে ঢোক গিলছে। অনেক ক্ষন নিরবতায় কে’টে গেলো। নিরব’তা ভেঙে নিরব ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠলো…..

–আমাকে এইভাবে নিয়ে এসেছিস কেনো? এই মেয়ে’টার তোর আর তিথী’র ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। তুই ওর সাথে আমাকে কেনো এখানে নিয়ে এসেছিস?

নিরবের কথা শুনে ফারদিন বাঁকা হেসে উওর দিলো…..

–হোয়াট ডু ইউ ওয়া’ন্ট টু প্রুভ ইউর’সেল্ফ বাই আস্কিং স্টুপিড কুয়েশ্চন?

ফারদিনের কথার মানে বুঝতে পারলো না ওরা দুজনে’ই। নিরব খানিক ক্ষন প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাঁকিয়ে থেকে কিছুটা কঠিন স্বরে বলে উঠলো….

–আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিস না। তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই ওর এক’টা ম্যাসেজ পেয়ে এখানে ছুটে এসেছি আর তুই আমাকে এভাবে রেখে এখন হেয়ালি করছিস…….

নিরবের কথায় ফারদিন একটু শব্দ করে হেসে ওর দিকে এগিয়ে গেলো। নিরবের মুখোমুখি দাড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বললো…..

–কা’পুরুষ কাকে বলে আমি সত্যি জানতাম না। তোকে দেখে জেনে গেলাম। পেছন থেকে ছু’ড়ি মা/রা’র কাজ’টা কা’পুরুষ’রাই করে জানিস তো?

এইবার নিরব সম্পূর্ন ভরকে গেলো। মস্তিষ্ক প্রশ্ন করে বসলো” তবে কি ফারদিন সব জেনে গেছে?” যদি ফারদিন সব’টা জেনে যায় তাহলে আজ ও’কে কেউ বাঁচাতে পারবে না। ফারদিনের ভয়ংকর রুপ’টা ও খুব ভালো করে জানে? প্রশ্ন’টা ভেসে উঠতে’ই কয়েকবার ঢোক গিলে নিলো। চোখে মুখে ভয়ের রাশি ফুটে উঠছে। কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে। বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোটা কপাল বেয়ে পড়লো। নিরবের চোখে ছটফটা’নি দেখা যাচ্ছে। তা দেখে ফারদিনের ঠোঁটের হাসি’টা চওড়া হলো। নিরব ভয়ার্ত স্বরে বললো….

–তুই কি বুঝাতে চাচ্ছিস?

ফারদিন এইবার দাতে দাত কড়মড় করতে করতে নিরবে’র কলার’টা ধরে বলে উঠলো…..

–তুই আমার সাথে কেনো বেঈমানী করলি? আমার পেছনে ছু’ড়ি মা/রতে তোর একবার ও বাধলো না? ছিঃ

বলেই কলার ছেড়ে দিয়ে রাগে ফোস ফোস করতে লাগলো। তিথী এখনো হাসি মুখে ফারদিনের রাগী চেহারা’টা দেখছে। তিথী’কে এতটা শান্ত আর নিরন দেখে ফারদিন অবাক হয়ে ওর দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..

–তোকে সেদিন বলেছিলাম আমার থেকে দূরে থাকা তোর জন্য মঙ্গল। শুধু শুধু নিজের মৃ’ত্যু নিজে’ই ডেকে আনলি। ভেবেছিলাম আর কয়েক’টা দিন তোকে বাঁচিয়ে রাখব। কিন্তু, তুই নিজেই তোর আয়ু কমিয়ে দিলি…….

ফারদিনের কথা শুনে তিথী হালকা হেসে মুগ্ধ নয়নে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো…..

–রেগে গেলে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে। বিলিভ মি, ইউ লুক সো নাইস। মোস্ট হ্যান্ডসাম বয় ইন মাই লাইফ। আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ। …..

এই মুহূর্তে তিথী’র দ্বারা এমন কথা আশা করা যায়। তাই নিরব না ভরকালেও ফারদি৷ ঠিকি ভরকালো। এই মেয়ে’টার কি ভয় নেই। একটুও বিচলিত বা ভয়ের চিহ্ন ওর মুখে নেই। যা আছে তা শুধু ফারদিনের প্রতি মুগ্ধ’তা। তিথীর কথা শুনে ফারদিনের রাগে শরীর কিড়বিড় করে উঠলো। কি আশ্চর্য একটা মেয়ে এতটা সাইকো কি করে হতে পারে? রাগে ফারদিন তিথীর গাল চেপে ধরে বলে উঠলো…..

— তুই তোর সব লিমিট ক্রস করে গেছিস। তোকে এক্ষুনি আমার জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

তিথী’র মধ্যে এখনো কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো না। সে পূর্বের মতো ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলে উঠলো…..

–তোমার হাতে খু’ন হতেও আমি রাজি…….

ফারদিন এইবার শরীরের সমস্ত শক্তি তিথী’র গালে থা’প্প’ড় মে’রে বলে উঠলো…..

–তোর মতো নির্লজ্জ মেয়ে পৃথিবী’তে একটাও নেই। লজ্জা করছে না তোর। তোর বাবা-মা’র বয়সী দুইটা মানুষ’কে তুই নিজের হাতে খু’ন করেছিস। এতটা নিচে নামতে পারলি না।

তিথী এবার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো……

–ওদের মৃ’ত্যু আমার হাতে লেখা ছিলো। এটা নিয়ে লজ্জিত হওয়ার মতো কিছু দেখছি না আমি। সো, স্টপ ইউর ননসেন্স টকিং……

ফারদিন ভেবে পাচ্ছে না। এই মেয়ে কোন ধাতু দিয়ে তৈরি খুঁজে পাচ্ছে না ও? গার্ড’কে দেখে তিথী’র মুখ’টা বেঁধে দেওয়ার ইশারা করলো। তারপর নিরবের দিকে তাঁকিয়ে শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো…..

–কেনো করেছিস এইসব? তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি। একমাত্র তোকে আমি সব থেকে বেশি বিশ্বাস করতাম আর তুই আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করলি?

নিরব মাথা নিচু করে আছে। কি উওর দিবে ও? সত্যি তো এই ছেলে’টা ও’কে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করতো আর ও তাকে ঠকালো? ফারদিন আবারো চেঁচিয়ে প্রশ্ন করে উঠলো…..

–টেল মি হোয়াই ইউ ডিড দ্যাট?

এইবার নিরব ও ফারদিনের সাথে চেঁচিয়ে বলে উঠলো……

–বিকজ, আই লাভ ফাইজা। শুনতে পেয়েছিস তুই আমি ভালোবাসি ও’কে? খুব বেশি ভালোবাসি। তোর থেকে ও বেশি ভালোবাসি ও’কে আমি। চার বছর ধরে পা’গলের মতো ভালোবেসে এসেছি ও’কে। আর তুই আমাদের মাঝে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিস। আমার থেকে আমার ভালোবাসা’কে কেড়ে নিয়েছিস তুই। তুই ওর যোগ্য না বুঝতে পেরেছিস……..

আর বলতে পারলো না নিরব তার আগেই বিল্ডিং কেঁপে উঠলো এক ভয়ংকর চিৎকারে। আর চিৎকার’টা নিরবের গলা থেকে এসেছে। ওর বুক চিড়ে গলগল করে স্রোতের মতো র’ক্ত বের হচ্ছে। কিছু র’ক্ত ছিটে ফারদিনের মুখে লেগেছে। আর নিরব গলা কা’টা মুরগীর মতো ছটফট করতে লাগলো। ওর চিৎকারে ফারদিন হা হা করে হেসে দিলো উঠলো। তারপর বলে উঠলো…..

–আজ সারাদিন তোর ছটফটানির দেখব আমি। যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে তুই নিজেই নিজের মৃ’ত্যু চাইবি……..

বলে গার্ড’দের কিছু বুঝিয়ে বেড়িয়ে গেলো। বা’কি কাজ’টা পরের জন্য রেখে দিলো৷ এখন আগে ফাইজা’র কাছে যেতে হবে বলে চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
____________________________________________
মাঝ রাতে চাদের আলোয় চারদিক’টা আলোকিত হয়ে আছে৷ পূর্নিমার গোলাকার চাদ’টা আকাশ ছেয়ে আলো ছড়াচ্ছে। ফাইজা খাটে বসে এক দৃষ্টি’তে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিনের জন্য বুকের ভেতর’টা বার বার ফে’টে চৌচির হয়ে যাচ্ছে৷ চোখ থেকে অশ্রু ফোটা গড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ করে দমকা বাতাস শুরু হতে’ই ফাইজা বেলকনি’তে দৌড়ে গেলো। বেলকনি থেকে জামা-কাপড় গুলো হাতে নিয়ে ভেতরে আসার জন্য ঘুরেও থেমে গেলো। হুট করে পেছনে ফিরে বাইরে তাঁকিয়ে থেমে গেলো। ল্যাম্প পোস্টের আলোয় সাদা গাড়ি’টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ আর গাড়ির সাথে’ই হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা মানুষ’টা যে বড্ড বেশি চেনা ওর। এত রাতে এই মানুষ’টাকে একদম আশা করে’নি ও? তবে কি ও ভুল দেখছে। বাতাসে চুল গুলো উড়ে কপালে লেপ্টে আছে। ঘামে ভেজা শার্ট ও শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। কিন্তু, এত রাতে এই মানুষ’টা এখানে কি করে এলো? ঠিকানা পেলো কোথায়? মানুষ’টাকে দেখে ফাইজা’র সব রাগ, অভিমান নিমিশেই অশ্রু হয়ে বেড়িয়ে এলো নেত্র দ্বারা।

–আমি তোমাকে ছাড়া ভালো নেই জান। বিশ্বাস করো, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্ত। শূন্য লাগছে তোমাকে ছাড়া সব কিছু। প্লিজ ফিরিয়ে নাও আমাকে। আমার ছটিফটা’নি দেখেও তুমি কি করে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো বার বার? একটা বার ফিরিয়ে নাও আমাকে প্লিজ৷ ম’রে যাব আমি। বিলিভ মি, আই কা’ন্ট লিভ উইথ’আউট ইউ……

চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে’ই হাটু ভেঙে বসে পড়লো ফারদিন। ফাইজা কোনো উওর না দিয়ে রুমে ঢুকে গেলো। তা দেখে ফারদিন এইবার ডুঁকরে কেঁদে উঠলো………
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_একত্রিশ

মধ্য রাতে অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফারদিন এখনো হাটু ভেঙে বসে আছে বৃষ্টির মধ্যে। সারা শরীর ভিজে চুপচুপ হয়ে আছে। জানালার ফাঁক দিয়ে অনেক ক্ষন যাবৎ দেখছিলো ফাইজা। ভেবেছিলো ছেলে’টা নিজের শরীরের কথা চিন্তা করে উঠে যাবে। কিন্তু, এই ছেলে’টাকে তো ও চিনে
। তাই, এখন আর চুপ করে থাকতে পারলো না। ওড়না’টা মাথায় দিয়ে বেড়িয়ে গেলো বাইরে। ফাইজা’কে বেড়িয়ে আসতে দেখে ফারদিনের মুখে হাসি ফুটলো না। হুড়মুড়িয়ে উঠে দাড়িয়ে পড়লো। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ফারদিনের মুখ’টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চোখ দুটো অসহায় চাহনী দিয়ে আছে। মুখ’টা শুকিয়ে গেছে। ফারদিনে মুখ’টা দেখে ফাইজা’র বুকের ভেতর’ট মুচড়ে উঠলো। ফাইজা এক দৃষ্টি’তে ওর দিকে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে রইলো। নরম স্বরে কিছু বলতে যাবে তখনি নাদিয়া বেগম আর হাসনাত সাহেবের সাদা কাফন প্যাচানো মুখ’টা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। তখনি, ফাইজা’র মুখ’টা আবার কঠিন রুপ ধারন করলো। কন্ঠস্বর কঠোর করে বললো…….

—আপনি কেনো এসেছেন এখানে?

ফাইজার প্রশ্নে ফারদিনের মন’টা বিশিয়ে গেলো। তাও নিজেকে সামলে ফাইজার হাত দুটো আকড়ে ধরে বলে উঠলো….

—প্লিজ আমাকে দূরে ঠেলে দিও না জান। আমি থাকতে পারছি না। পারছিনা আমি…….

বলতে না বলতে ওর গলা জড়িয়ে আসলো। অঝোরে বৃষ্টির জলের মাঝেও ফাইজা ঠিক বুঝতে পারলো ফারদিন কাঁদছে। দুজনের মনের অবস্থা’ই এক। শ্রাবনের শ্রাবন ধারায় সেদিন ভিজেছিলো খুশি’তে আর আজ ভিজচ্ছে বিষাদের আগুন নেভানোর জন্য। ফাইজা’র চোখ থেকেও পানি গড়িয়ে পড়ার আগে হাত’টা ছাড়িয়ে নিয়ে ফাইজা পূর্বের মতোই কঠোর স্বরে বলে উঠলো…..

—আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি চাইনা আমার জন্য আর কারোর জীবন হারাতে হোক। এখানে আর কোনো দিন আসবেন না। এটা আমার অনুরোধ…..

বলেই হাত জোড় করে ধরে আবারো বললো…..

–প্লিজ চলে যান। আর কোনো দিন আসবেন না…..

বলেই পা বাড়ালো সামনের দিকে। ফারদিন এইবার কান্নারত কন্ঠে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

—আমি ম’রে যাবো সত্যি। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে। প্লিজ ডোন্ট লিভ মি জান…….

ফারদিনের আকুতি ভরা কন্ঠ শুনে থেমে গেলো ফাইজার পা। বুকের ভেতরের লুকানো ভালোবাসা গুলো মুহূর্তেই খা খা করে উঠলো। দুমড়ে মুচড়ে উঠলো ভেতর’টা৷ ভালোবাসা এত’টা অসহায় না হলেও পারতো। মনে প্রেম ভালোবাসা থাকে কিন্তু চা’পা পড়ে অভিমানের আড়ালে। আড়াল থেকে চাইলেও বেড়িয়ে আসা যায়না। ভালোবাসার মানুষের কাছে দুনিয়ার সব থেকে শক্তিশালী ব্যাক্তি’টাও অসহায়। নিজেকে ধরে রাখার শক্তি আর পেলো না। ছুটে গিয়ে হামলে পড়লো ফারদিনের বুকে। মুশলধারার বৃষ্টির সাথে মিশে গেলো বাধ ভাঙা কান্নার স্বর। ফারদিন এক মুহূর্তের জন্য ঘোরে চলে গিয়েছিলো। ফাইজা’র কান্নার স্বরে নিজেকে আর সামলাতে পারলোনা নিজেও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। মুশলধারের বৃষ্টির মাঝে দুজন ব্যাক্তি হারানো ভালোবাসা ফিরে পেয়ে অঝরে কাঁদছে। আর কান্না’টা খুশির কান্না। ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার কান্না। ফাইজা ফারদিনের ভেজা শার্ট’টা খামচে ধরে কান্না করতে করতে বলে উঠলো…..

–আমি ও ভালো নেই আপনাকে ছাড়া। বিশ্বাস করুন বাবা-মায়ের এইভাবে চলে যাওয়া’টা আমি কিছুতে’ই মেনে নিতে পারছিনা। আমি ভেঙে গেছি। খুব বাজে ভাবে ভেঙে গেছি। নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার শক্তি, ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস নেই আমার। ও তো আমাকে মে’রে ফেলতে পারতো। ওর শত্রু’তা আমার সাথে। তাহলে, কেনো আমাকে এতিম করে দিলো…..

বলেই আবারো কাঁদতে লাগলো। ফারদিন প্রতিউওরে কিছুক্ষন চুপ থেকে শান্ত কন্ঠে বললো……

–আন্টি আংকেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। এই কঠিন সত্য’টা একদিন সবাই’কে মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমি শুধু তোমাকে একটা কথা দিতে পারি। আন্টি আংকেল’কে যারা নির্মম ভাবে তোমার থেকে কেড়ে নিয়েছে তাদের দুজন’কে আমি ভয়ানক মৃ’ত্যু দিব। তোমার চোখের সামনে……..

ষ্টির বেগ কিছু’টা কমেছে। দুজনেই অনেকক্ষন যাবৎ ভিজছে। দুজন শব্দ’টা শুনে ফাইজা’র কান্না থেমে গেলো। মস্তিষ্ক প্রশ্ন করে বসলো” দুজন কারা?”। প্রশ্ন’টা করার জন্য ফাইজা মুখ খুলতে’ই ফারদিন বলে উঠলো….

–ভেতরে চলো। আগে ফ্রেশ হয়ে নেও। নয়তো শরীর খারাপ হবে….

;বলে ওর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলো। এতক্ষন নিজে ভিজে গেছে। নিজের শরীরের কথা একবার ও ভাবে’নি অথচ এখন কি সুন্দর নিজের ভালোবাসার মানুষ’টার কথা আগে ভাবলো। ভাবতে’ই নিজের অজান্তে ফাইজার মুখে হাসি ফুটলো। এই মানুষ’টা ও’কে সত্যি বড্ড বেশি ভালোবাসে। ভেতরে এসে প্রথমে ফাইজা ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে গেলো। ফারদিন ফ্রেশ হয়ে জেহেরের থেকে টি-শার্ট আর টাউজার পড়েছে। চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ফাইজা দুই মগ ধোয়া উঠা কফি হাতে দাড়িয়ে আছে। ফারদিন’কে দেখে’ই মগ দুটো ট্রি-টেবিলে রেখে ওর দিকে এক গ্লাস পানি হাতে এগিয়ে আসলো। তারপর একটা ওষুধ ফারদিনের হাতে দিয়ে খেয়ে নিতে বললো। এটা জ্বরের ওষুধ। ফারদিনের শরীর প্রচন্ড গরম। সাথে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। ফারদিন হালকা হেসে আপত্তি না করে ওষুধ’টা খেয়ে নিলো। ফাইজা ওষুধ’টা দিয়ে পেছনে ফিরে সামনে আগানোর জন্য পা বাড়াতে’ই ফারদিন ওর হাত ধরে ফেললো। হঠাৎ হাত ধরায় ফাইজা ফারদিনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকা’তেই ফারদিন ও’কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলো….

–চুল দিয়ে পানি পড়ছে সে খেয়াল আছে। কতক্ষন বৃষ্টি’তে ভিজেছো তারপর এখনো চুল ভেজা। শরীর মারাত্মক খারাপ করবে। একটু ও চিন্তা নেই নিজের জন্য তাইনা……

বলে’ আলতো হাতে যত্নসহকারে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে দিতে লাগলো। আর ফাইজা অশ্রু মাখা চোখে তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে। এই ছেলে’টাকে এই কয়েকদিন কষ্ট দিয়েছে ভাবতে’ই ওর বুক ফে’টে যাচ্ছে কষ্টে। ফারদিন চুল মুছিয়ে ফাইজার দিকে তাঁকাতে’ই ওর চোখে জল দেখে অস্থির কন্ঠে বললো…

–কাদঁছো কেনো? খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করছে?

ফাইজা প্রশ্নের উওর না দিয়ে ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো…..

–এত বেশি ভালোবাসেন কেনো বলেন তো?

ফাইজার প্রশ্নে ফারদিন শব্দ করে হেসে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে উঠলো…..

–তুমি আমার বেঁচে থাকার ওষুধ। তোমাকে ভালো না বাসলে বেঁচে থাকব কি করে জান?

ফারদিনের কথায় ফাইজা ওর দিকে ঘোর লাগা চাহনি দিয়ে অন্যরকম স্বরে বললো….

–আপনার গালে একটা চুমু খেতে পারি মিস্টার অভদ্র…..

ফাইজার কথা শুনে ফারদিন বাঁকা হেসে ভ্রু নাঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–তুমি চাইলে অন্য জায়গায় ও চুমু খেতে পারো জান……

বলে ঠোঁটের দিকে ইশারা করলো। ফাইজা মুখ চেপে হেসে পরম আবেশে ফারদিনের গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ফারদিন তো আর থেমে থাকার ব্যাক্তি না সে একে একে ফাইজার দুই গালসহ কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর ফাইজা’কে নিয়ে ধপ করে সুয়ে পড়লো। ফাইজা’কে বুকের মধ্যে চেপে ধরে বলে উঠলো…..

–কয়েকদিন শান্তি’তে ঘুমাতে পারি’নি জান। তাই আজ নো সাউন্ড। আমি তোমাকে বুকে জড়িয়ে শান্তি’র ঘুম চাই।

ফারদিন আকুল আবেদনে ফাইজা আর আপত্তি না করে ওর বুকে চুপ’টি করে মাথা রেখে চুপ করে রইলো। মস্তিষ্ক ভুলে যাওয়া প্রশ্ন’টা মনে করিয়ে দিতে’ই ফাইজা ফট করে প্রশ্ন করে বসলো……

–আপনি তখন দুজন কেনো বললেন? কে আছে তিথীর সাথে?

ফারদিন চোখ বন্ধ করেই শান্ত কন্ঠে উওর দিলো…..

–যাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে ভাই এর মতো সম্মানীয় আসন দিয়েছিলাম। সেই বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে আমার সাথে। আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছে। আমাকে’ই জোর গলায় বলেছে “ও আমার জান’কে ভালোবাসে”।

ফাইজা থম মে’রে আছে। কি বলছে এগুলা? মনে মনে একটাই নাম ভেসে আসলো” নিরব ভাইয়া “। যে মানুষ’টা ফারদিনের অনুপস্থিতিতে আমাকে আগলে রেখেছিলো। সেই, মানুষ’টা কি করে এত’টা খারাপ হবে?

#চলবে

]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here