তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -২৩+২৪

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২৩
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

” বিষন্ন দারা ”

মায়ের ডাকে পেছন ফিরলাম।মা রাগী স্বরে বললো কোথায় গিয়েছিলি? ”
” বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম মা।এতো রেগে কথা বলছো যে ”

” রেগে বলবো না তো কি তোকে নিয়ে নাচবো? ”

” নাচতে চাও? চলো তাহলে আজ মা ছেলে খুব নাচবো ”

মায়ের হাত ধরে দুলিয়ে দুলিয়ে নাচছি।মা রেগে বলছে ” ছাড় আমায়,এমনিতেই কো*মড়ে ব্যাথা,এভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচলে আর উঠতে পারবো না “।আমি মায়ের কোনো কথাই শুনলাম না।আমাদের নাচ দেখে রহিমের মা’ও এসে যোগ দিলো। দোতলায় দেখলাম নীলুপু চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে টেনে নিচে নিয়ে আসলাম।মা,নীলুপু দু’জনই এখন নাচছে।ইতোমধ্যে একটা গান ও প্লে করা হয়েছে।সেই তালে বাড়ির সবাই নাচছে।এমনকি মামা আর বাবাও এসেছেন।তারাও নাচছে।বাবা মায়ের হাত ধরে কো*মড় দুলিশে নাচছে।মামা দুই হাত মাথায় রেখে ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছে।দোতলায় মিষ্টি দারিয়ে আছে।ওর মুখ মলিন।আড়ালে ওর কাছে গেলাম।

” মন খারাপ করে দারিয়ে আছো কেন? চলো আমরা কাপল ডান্স করবো ”

” তুই এরকম কেন বলতো? কি সুন্দর পরিবারের সবাইকে হঠাৎ হঠাৎ আনন্দে মেতে তুলতে পারিস,”

” পরিবারের মানুষের খুশিটুকুর চেয়ে বড় আর কিছু আছে? চলো নিচে চলো, আমরা একসাথে নাচবো ”

” না আমি যাবো না,লজ্জা করে! ”

” ইশশ রে, লজ্জাবতী বউটা ”

” কি বললি? ”

” আ…কি..কিছু বলিনি,কি..কিছু না, আচ্ছা নিচে না গিয়ে বরং এখানে নাচবো চলো,এখানপ তো কেউ দেখছে না। তোমার একটা হাত আমার কাঁ*ধে রাখো,আরেকটা হাত আমার হাতে রাখবে।”

কো*মড়ে হাত রাখতেই মিষ্টি কেমন যেন কেঁপে উঠলো।দু’জন দুজনার চোখে তাকিয়ে আছি।চোখের যেন পলক পড়ছে না।মিষ্টি বলল

” ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন!”

” মায়ায় ভরা দুটি চোখ দেখছি,তাতে তোমার কি? ”

” ওভাবে তাকাতে পারবি না,আমার বু*কে কেমন কেমন করে ”

” কই দেখি কেমন করে ”

” ওই শ*য়তান,হাত উঠাচ্ছিস কেন,”

” তুমিই তো বললে কেমন কেমন করে,একটু ছুঁয়ে দেখি কেমন করে ”

” ছুঁয়ে দেখতে হবে না,ফাজিল ছেলে কোথাকার ”

” লজ্জা পেলে তোমার চোখ আরো সুন্দর হয়ে ওঠে,ইচ্ছে করে চোখে সারাদিন চু*মু খাই ”

” এই যে মিষ্টার,চোখটা কিন্তু আমার ঠিক আছে? ”

” তোমার ঠিক আছে,কিন্তু অধিকার তো আমার ”

” মানে? ”

” এখানে মানে বুঝতে পারবে না তো,”

” খুব পাজি হয়েছিস তুই।আচ্ছা সকাল থেকে কোথায় ছিলি? ফোন দিলাম ধরলি না কেন? ”

” একটা কাজ করছিলাম ”

” কি কাজ? ”

” ধূর ওসব বাদ দাও,তোমায় খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে ”

বলার সাথে সাথে মিষ্টি আমার পেটে জোড়ে একটা চিমটি কাটলো।ব্যাথায় “আউউ ” করে শব্দ করলাম।নিচে নাচতে থাকা সবাই ওপরে আমার দিকে তাকালো।ওরাও শুনতে পেয়েছে ?খুব জোরে চিল্লিয়েছি নাকি?।নিচ থেকে মা দৌড়ে এসে বলল

” কি হয়েছে রে? এতো জোড়ে চিল্লিয়ে উঠলি কেন? ”

পাশ ফিরতেই দেখি মিষ্টি নেই।নীলুর ঘরে আগেই পালিয়ে গেছে।মা’কে বললাম,

” কিছু হয়নি,এমনিই চিল্লাতে ইচ্ছে করছিলো।তোমরা নাচ বন্ধ করলে কেন ”

” এই বয়সে এসে এসব ঢং করার সময় আছে নাকি?।তুই ফ্রেশ হয়ে নে,আমি তোর জন্য খাবার রেডি করছি ”

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে তোয়ালেতে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামন৯ দারালাম।আয়নায় দেখলাম আমার পেছনে নীলুপু দারিয়ে আছে।পেছন না ফিরেই বললাম

” কিরে নীলুপু,কিছু বলবি? ”

” কোথায় ছিলি তুই? ”

” একটা কাজে ছিলাম,শুনলাম ছেলে নাকি খুব পছন্দ হয়েছে তোর? এক্কেবারে বিয়ে ঠিক করতে বলেছিস বাবাকে, সত্যি? ”

ব্যাস এইটুকু কথা শেষ না হতেই নীলুপু ঝা*পিয়ে পড়লো আমার ওপর।দুই হাত দিয়ে কিল ঘু*সি মারছে,সাথে চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলবে এমন অবস্থা। অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে নিলাম।নীলুপু বিছানায় বসলো,চোখে জল, কান্না করছে।ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলাম। চোখের জল মুছে দিতে দিতে বললাম

” কান্না করছিস কেন পাগলি? ”

” তুই জানিস? বাবা আমার বিয়ের সময় দেখছেন ”

” আমি আছি তো নাকি? প্যারা নিচ্ছিস কেন? চিল কর, ”

” তুই কি করছিস দেখতেই পাচ্ছি তো,”

” এখনো পাসনি,তবে খুব শীঘ্রই দেখতে পাবি।আপু এক কাজ করতো,আমার মাথা ব্যাথা করছে,একটু টিপে দে ”

” পারবো না যাহ ”

” জুনায়েদ এখন হসপিটালে,কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবি বাবা বলবে এই বিয়ে হবে না ”

” সত্যি? তুই সত্যি বলছিস বিলু? ”

” কতবার বলবো? ওই ফালতু নাম ধরে ডাকবি না ”

” আমার পুচু ভাই,ইশশ কত্তো মার*লাম।লেগেছে খুব? ”

” হু, এখন মাথা টিপে দে ”

উপুড় হয়ে শুয়ে আছি।নীলুপু মাথা টিপে দিতে দিতে বললো

” এই বিলু শোন না ”

” শুনছি বল ”

” সমুদ্র ভাই কয়েকদিন থেকে বাড়িতে আসছে না কেনো রে? ”

” উনি জব ইন্টারভিউ দিতে গেছে।চট্টগ্রামে ”

” আসবে কবে জানিস কিছু? ”

” আমি কিভাবে জানবো? কবে আসবে আমায় বলে গেছে নাকি? ”

” রেগে কি কথা বললি আমার সাথে? যাহ,আর মাথা টিপে দিবো না।”

হনহন করে উঠে চলে গেলো নীলুপু।সমুদ্র ভাই আমাদের পাশের বাড়িতে থাকে।একসময় আমাকে টিউশনি করাতো।নীলুপুর সাথে ওনার সম্পর্ক আছে সেটা বেশ বুঝতে পারি।কিন্তু নীলুপুকে সেটা বুঝতে দিই না।প্রেমিকরা স্বামী হিসেবে তেমন ভালো হয় না,তবে সমুদ্র ভাইয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। তার মতো ছেলে খুব ভাগ্য করে পায় মেয়েরা।নীলুপু পেয়েছে।

_________

” মিষ্টি,শপিং এ যাবো চল ”

” আমি যেতে পারবো না রে,সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা সামনে ”

” আমারও তো পরিক্ষা,এতো পড়ে কি হবে? তুই না পড়লে এমনিতেও টপ করবি ”

” যেতেই হবে? ”

” আচ্ছা থাক,তুই পড়।”

হঠাৎ কেন জানি সমুদ্র ভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ছে।লোকটার সাথে বেশ কয়েকদিন থেকে দেখা হয়না।শাড়ি পড়লাম,কপালে টিপ দিয়ে নিচে যেতেই দেখলাম বাবা গম্ভীর হয়ে পেপার পড়ছেন।বাবার কাছে গিয়ে বললাম

” বাবা, কিছু টাকা লাগবে,শপিং করতে যাবো ”

” বাবা পলেট থেকে কার্ডটা বেড় করে টেবিলে রেখে দিলেন।আমি কার্ডটা নিয়ে দরজার কাছে যেতেই চরম একটা ধাক্কা খেলাম।মিষ্টি হাতে সমুদ্র ভাই দারিয়ে আছে।একপলক পেছনে তাকিয়েই সমু্দ্র ভাইয়ার হাত ধরে টেনে বাড়ির সাইডে নিয়ে এলাম।বললাম

” আপনি এতোদিন কোথায় ছিলেন? একবারও খোঁজ নেননি,বাড়িতেও আসেননি ”

সমুদ্র ভাইয়া হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললেন ” ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম,বিষন্নকে বলে গিয়েছি,তোমায় বলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি ”

” তা চাকরি কি হলো? নাকি এবারেও রিজেক্ট ”

” এইবার হয়েছে।ভাবলাম তোমাদের মিষ্টি খাইয়ে আসি ”

” বাহ্,খুব ভালো সংবাদ।চলুন শপিং এ যাবো ”

” মিষ্টিটা দিয়ে আসি? ”

” আপনার দিতে হবে না ”

দারোয়ানকে ডেকে তার হাত দিয়ে মিষ্টি পাঠিয়ে দিলাম।সমুদ্র ভাইকে নিয়ে হাটছি।রিলশা পাওয়া যাচ্ছে না।কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা দার করিয়ে উঠলাম।সমুদ্র ভাই ঠাই দারিয়ে রইলো।ওনাকে বললাম

” কি হলো দারিয়ে আছেন কেন? উঠুন,”

উনি হাত কচলাতে কচলাতে বললেন ” একি রিকশায় উঠবো? ”

” হ্যা উঠবেন,আপনার লজ্জা এখনো কাটাতে পারলাম না,আফসোস ”

রিকশায় সমুদ্র ভাইয়া পুরো সিটটা আমায় ছেড়ে দিয়ে এক কোনে চেপে বসে আছে।এমন আচরনে খুব অস্বস্তি লাগছে।এই লোকটার এতো লজ্জা কেন? ওনাকে বললাম

” আপনার অসুবিধা হচ্ছে, আমি বরং নেমে যাই ”

” না না,একদম অসুবিধা হচ্ছে না ”

” তাহলে সিটের কোনে এতো চেপে বসে আছেন কেন? স্বাভাবিক হয়ে বসুন।গায়ে গা লাগলে আপনার এমন কোনো পাপ হবে না ”

উনি লজ্জা পেলেন। স্বাভাবিক হয়ে বসলেন,তবুও সে বসায় আছে জরতা।শপিং শেষে পার্কের বেঞ্চে দু’জন বসে আছি।সমুদ্র ভাই কোনো কথা বলছেন না,উপায় না পেয়ে বললাম

” আমার আজ মনে হচ্ছিল আপনার সাথে দেখা হবে,সত্যি সত্যিই ূেখা হয়ে গেলো ”

” ও আচ্ছা ”

” ও আচ্ছা কেন, আপনি আমায় দেখে খুশি হননি? ”

” তা হয়েছি ”

” তাহলে সেটা বলেন না কেন? মেয়েরা তার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে নিজের প্রশংসা শুনতে চায়,বুঝলেন? ”

সমুদ্র ভাই বেকা বোকা মুখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো।হাসি আটকে রেখে বললাম

” বিয়ে কবে করছেন? ”

” কেবল চাকরিটা পেলাম,দেখি কিছুদিন যাক।বেতন বেশি না বুঝলে,বিশ হাজার টাকা ”

” এটাকে বেশি না বলছেন?এটা দিয়ে দিব্যি দুইটা পরিবার চলতে পারবে।আর বিয়ের বয়স তো চলে যাচ্ছে, এরপর তো মেয়েই খুজে পাবেন না ”

উনি হাসলেন।ওনার হাসি মুগ্ধ হয়ে দেখছি।কি সহজ হাসি।উনি বললেন

” নীলু,তোমার পড়ালেখার কেমন চলছে? ”

” চলছে মোটামুটি।আচ্ছা আপনি আমার চোখ দেখে কিছু বুঝতে পারেন? ”

” চোখ দেখে কিছু বোঝা যায় নাকি? আগে জানতাম না তো ”

” হু যায়,অনেক কিছু বোঝা যায়।যেমন আমি আপনার চোখ দেখে বুঝতে পেরেছিলাম ”

সমুদ্র ভাই ভ্রু কুচকে বললেন ” মা…মানে? ”

” মানে হলো, এই যে আপনি আমাদের বাড়িতে আসতেন, লুকিয়ে লুকিয়ে আমায় দেখতেন।যখন আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বেড় হতাম তার আগেই আপনি রিকশা আমাদের গেইটে দার করিয়ে রেখে আড়াল থেকে আমায় দেখতেন। কি দেখতেন না? ”

সমুদ্র ভাইয়ের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। মনে হচ্ছে আমার কথায় খুব লজ্জা পেয়েছে। বেঞ্চ থেকে উঠে বললাম

” আজ আসি, জানি আপনি কখনোই কিছু বলতে পারবেন না ”

” কিছু বলার নেই,থাকলে বলতাম ”

” অবশ্যই আছে,আপনি আমায় ভালোবাসেন,বিয়ে করতে চান এটা অনেকবার বলতে চেয়েছেন,কিন্তু পারেননি।এটা কি বলার মতো কথা না? ”

” নীলু, আমি যে চাকরিটা পেয়েছি তা দিয়ে তোমায় সুখে রাখতে পারবো না,তাই ভয়ে কিছু বলিনি ”

” সমুদ্র ভাই,আপনার যখন দুবেলা খাওয়ার টাকা ছিলো না তখন থেকেই আমি আপনাকে পছন্দ করি।আর আমার ভালোবাসাটা প্লিজ টাকার সঙ্গে তুলনা করে ফেলনা করে দিবেন না ”

” আমি তা বলতে চাইনি।তোমার লাইফস্টাইল আর আমার তো এক না,তুমি একটু আগে শপিং করলে তেইশ হাজার টাকা দিয়ে।আর আমি মাস শেষে বেতন পাবো বিশ হাজার ”

” আপনি যদি ভালোবেসে আমায় দুই হাজার টাকা দিয়ে একটা শাড়ি আর চুড়ি কিনে দেন,তাহলে এই তেইশ হাজার টাকার শপিং এর থেকেও বেশি খুশি হবো।ভালোবাসার মানুষটার সস্তা উপহারও অনেক দামি মনে হয়।দুই হাজার টাকা তো দিতে পারবেন, কি পারবেন না? ”

” হু পারবো ”

” তাহলে উঠুন, একটা রিক্সা ঠিক করে দেন,বাড়িতে যাবো ”

সমুদ্র ভাই রিক্সা ঠিক করে দিলেন।রিক্সায় বসতেই উনি বললেন

” নীলু একটা কথা ”

” হু বলেন ”

” আমার স্যালারি পঞ্চান্ন হাজার টাকা।দুই বছর পর সত্তর হাজারে পৌঁছাবে ”

” কিহ? তাহলে মিথ্যে বলেছিলেন কেন? ”

” দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কি মনে করো।”

” তো কি দেখলেন? ”

” ২৪ ক্যারেট গোল্ড চিনতে ভুল হয়নি আমার।আমি জানি,ভুল মানুষকে আমি ভালোবাসিনি ”

রিকশা চলতে শুরু করলো।বোকা লোকটার মাথায় এই ছিলো?মনের অজান্তেই ঠো*টে হাসি ফুটে উঠলো,চোখে অশ্রু।এ অশ্রু আনন্দের,ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার।

__________

দরজায় বিষন্ন দারিয়ে আছে।কয়েকবার টোকা দিয়েছে।আমি কিছু বলিনি।সেও চুপ করে দারিয়ে আছে।আজ মনপ হচ্ছে ছেলেটা ভদ্র হয়েছ।অন্যদিন হলে হুট করেই ঘরে ঢুকে পড়তো।

” দারিয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয় ”

বিষন্ন আমার সামনের চেয়ারে বসলো।আমি টেবিলে বসে ম্যাথ করছি।বিষন্ন বলল

” কি এতো ভাবছো? চিন্তিত মনে হচ্ছে ”

” একটা টপিক বুঝতেছি না,নোটটা তিশার কাছে ”

” কই দেখি আমায় দেখাও,আমি সলভ করে দিচ্ছি ”

পিচ্চিটা এমন গম্ভীরভাবে বললো যেন সত্যি সত্যিই ও সলভ করতে পারবে। ইন্টারের স্টুডেন্ট হয়ে অনার্সের টপিক সলভ করা এতো সহজ নাকি? অথচ কত স্বাভাবিক ভাবেই বললো।আমিও খাতাটা এগিয়ে দিলাম।দেখি কেমন সলভ করতে পারে।

বিষন্ন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।ও যে এই টপিকটার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছে না সেটা বেশ বুখতে পারছি। অথচ পিচ্চিটা এমন ভাব নিয়ে দেখছে যে মনে হবে এখনি তুড়ি মেরে সলভ করে ফেলবে।আমায় অবাক করে দিয়ে পিচ্চিটা খাতায় গজগজ করে কি যেন লিখলো।ওর লেখা দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে।ও কিভাবে এই বিষয়ে জানে? ওর তো জানার কথা না।

চলবে?#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২৪
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

আমায় অবাক করে দিয়ে পিচ্চিটা খাতায় গজগজ করে কি যেন লিখলো।ওর লেখা দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে।ও কিভাবে এই বিষয়ে জানে? ওর তো জানার কথা না।

” ওমন করে কি দেখো? ”

” তোকে দেখছি, তুই এই টপিকটা কিভাবে করলি? তোর তো জানার কথা না ”

” আমি এমন সব জিনিস জানি সেগুলো তুমিও জানো না বুঝছো? ”

বিষন্ন উঠে চলে গেল। আমি ওর পানে চেয়ে আছি। কিভাবে করলো বিষণ্ন এটা?

___________

রাতে খাবার টেবিলে সবাই বসেছি। বাবা খবরের কাগজ মুখে ধরে বসে আছেন । তার মুখ ভার।দেখে মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে খুব গভীর চিন্তায় আছেন।বাবার পাশে বসেছে মিষ্টি।মিষ্টির সাথে নীলুপু বসে আছে।পরী মেয়েটা হাতে কিসের একটা বাটি নিয়ে দারিয়ে আছে। মাছের বাটিটা আমার কাছে এনে বললো

” ভাইজান মাছ দিই ”

” এইই না না,আমার মাছ গন্ধ লাগে ”

” লাগবে না,আশা করছি,দিই ”

বলেই মাছের একটা চাকা প্লেটে তুলে দিলো।অসহায় মুখ করে বললাম

” এটা এখন নষ্ট হবে,আমি মাছ খাইনা ”

” নষ্ট হইবো না,আপনে প্লেটে রাইখা যান,আমি খাবো ”

পরীর কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালাম।মিষ্টিও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে পরীর দিকে।পরী লজ্জায় মাথায় ঘোমটা টানলো।ওকে দেখে এখন বউ বউ লাগছে।মা এখানে নেই।নিজের এই সময়ে টিভিতে একটা নতুন সিরিয়াল শুরু হয়েছে আজ।মা সেটা দেখতে ব্যাস্ত।এখানে থাকলে পরীকে কঠিন কঠিন কিছু কথা শুনিয়ে দিতো।আমাকে অবাক করে দিয়ে মিষ্টি বললো

” তুমি বিষন্নের প্লেটে খাবে নাকি? ”

পরী লজ্জা ভঙ্গিতে বললো ” মাছটা নষ্ট করার কি দরকার? আর খাইলে কি এমন হইবো আপা? ”

মিষ্টি একটু রেগে বললো ” মাছ নষ্ট হবে মানে কি? তোমায় দেওয়ার আগে তো বারন করলোইচতারপরও কেন দিলে? ও তো বাচ্চা না, লাগলে নিজেই তুলে নিতো।তোমার আগ বাড়িয়ে কেন দিতে হবে? ”

” ভুল হয়ে গেছে আপা,”

রহিমের মা বললো ” এইডা আর নতুন কি,এই ছ্যারি তো রোজই ছোট দাদাবাবুর প্লেটে খায়! ”

কথাটা শেষ হতেই মিষ্টি অগ্নিদৃষ্টিতে একবার পরীর দিকে তাকালো একবার আমার দিকে।বাবা মৌনতা ভেঙ্গে বললো

” কি হয়েছে কি,সামান্য বিষয়ে এতো কথা কেন,”

মিষ্টি কিছু বলছে না।হাতে মুষ্ঠি পাকিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে রাগ সামলাচ্ছে।এতো রাগের কি আছে?এক প্লেটে নাহয় খেয়েছে,এতে সমস্যা কোথায়? এইটুকুতেই মিষ্টি এতে রিয়েক্ট কেন করছে? বাবা বললেন

” একটা খারাপ খবর আছে।নীলুকে যে ছেলেটা দেখতে এসেছিলো,ওর এক্সিডেন্ট হয়েছে।বিয়েটা আর হচ্ছে না ”

বাবার কথাটা শেষ না হতেই নীলুপু উঠে দারিয়ে চিৎকার করে আমার কাছে এসে আমায় জরিয়ে ধরলো।আনন্দে উৎফুল্লে নীলুপুর চোখে জল চলে আসলো।

_____________

রাতের খাওয়া দাওয়ার পর উপুড় হয়ে ফোন টিপছি,তখনি নীলু গা ঝাঁকিয়ে বললো

” মিষ্টি ঘুমিয়ে পড়েছিস? ”

” না,বল ”

” সমুদ্র ভাই জব পেয়েছে ”

” সত্যি?খুব ভালো খবর তো,”

” হু ”

দেখলাম নীলুর মুখ লজ্জায় এইটুকু হয়ে গেছে।লজ্জামাখা স্বরে বললো ” আমি ওনাকে আমার ভালোবাসার কথাটা বলেছি।তবে এমন প্যাচে ফেলিয়েছি যে নিজেই বাধ্য হয়ে বলেছে,”

” কি বলেছে ”

” যাহ্, আমার লজ্জা লাগছে খুব ”

নীলু সত্যিই লজ্জা পেয়েছে।লজ্জায় দুইহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছে।মেয়েটার ভালোবাসা দেখে খুব ভালোলাগছে।সমুদ্র ভাইয়ার মতো সাদাসিধে মানুষ খুব কম’ই হয়।নীলুর ফোনে একটা কল আসলো।কল আসতেই চমকে তাকালো ফোনের স্ক্রিনের দিকে।এরপর দৌড়ে বারান্দায় চলে গেলো। ফোনটা যে সমুদ্র ভাই দিয়েছে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না।

টুং করে মেসেঞ্জারে মেসেজ আসলো। বিষন্ন মেসেজ দিয়েছে

” একটু ছাঁদে আসবে? খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ”

সিন করে রেখে দিলাম।কি রিপ্লাই দিবো খুজে পাচ্ছি না।ওর সামনে গেলে কেমন কেমন যেন ফিলিংস হয়।বু*ক ধুকপুক ধুকপুক করতে থাকে।তবে ওর সাথে দেখা করাটা জরুরি। পরী মেয়েটাকে নিয়ে একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার।

ওড়নাটা জড়িয়ে চুপিচুপি ছাঁদে গেলাম।বিষন্ন আগেভাগেই দারিয়ে আছে।আমি খুকখুক করে কাশলাম। বিষন্ন পেছন ফিরে তাকালো।ছাঁদে চাঁদের আলো খেলা করছে।স্পষ্ট সবকিছু দেখা যাচ্ছে, সাথে দেখা যাচ্ছে বিষন্নকে।আমি শুধু অপলক চেয়ে রইলাম।অন্যান্যবারের মতো আবারো সেই বু*কের ধুকপুক শুরু হয়েছে।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছি।নিজেকে অসুস্থ অসুস্থ লাগছে।বিষন্ন বললো

” দূরে দারিয়ে কেন? এদিক আসো,দেখো কি সুন্দর ফুল ফুটেছে।ঘ্রাণে মা*তাল হয়ে যাবো এমন অবস্থা ”

সত্যিই তাই।বড় একটা টবে শিউলী ফুলের গাছ।গাছ ভর্তি শিউলী ফুলের আস্তরণ। কাছে যেতেই ঘ্রানে পাগল পাগল লাগছে।নাহ্,যেটা জিগ্যেস করতে এসেছি সেটা করতেই হবে।স্বাভাবিক হয়প বিষন্নকে বললাম

” তোর সাথে আমার একটা কথা আছে,তাই আসলাম ”

বিষন্ন কাছে এসে আমার ঠোঁ*টের ওপর একটা নখ রেখে বললো ” কোনো কথা নয়,চলো চাঁদ দেখবো ”

বলেই হাত ধরে টেনে দোলনায় বসালো।আমার বু*জের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে আসছে।সারা শরীর কেমন যেন হীম হয়ে আছে।বিষন্ন ইতোমধ্য আমার হাতের ওপর হাত রেখেছে।হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম

” পরীকে আমার একদম সহ্য হচ্ছে না ”

” কেন? ও কি করেছে? ”

” কি করেছে জানিস না? ও কেন তোর প্লেটে খাবে? ”

” খেতে দোষের কি আছে? ”

” আছে,তুই বুঝবি না।সত্যি করে বল, ওই মেয়েটাকি তোকে ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু বলেছে? ”

” ইনিয়ে বিনিয়ে কি বলবে? এমন হাইপার হচ্ছো কেন, একটু স্বাভাবিক হও ”

” না হবো না,তুই ওই মেয়েকে বিদায় করে দিবি।কালকেই ”

” তাহলে ওর আগের মতো গলিতে গলিতে রাত কাটাতে হবে,সেটা কি ভালো হবে? ”

” এতোকিছু জানিনা,তুই ওকে রাখবি না মানে রাখবিনা, ”

বলে উঠে যেতেই প্রচন্ড শব্দ করে বিদ্যুত চমকালো।ভয়ে এক হাতে কান চেপে বিষন্নের বু*কে মাথা গুজে বসে রইলাম।মুহুর্তেই চাঁদ মেঘে ঢেকে গেছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি নামবে।অনেকদিন হলো বৃষ্টিতে ভিজি না। আজ বৃষ্টিতে ভিজলে কেমন হয়? ভালোই হয়।এখনো বিষন্নের বু*কে মাথা গুজে বসে আছি।আচ্ছা বিষন্নও কি আমার সাথে ভিজবে? প্রিয় মুহূর্তে কি প্রিয় মানুষটা সাথে থাকবে আমার সাথে ? খুব ইচ্ছে করছে ওকে নিয়ে একসাথে ভিজবো।কিন্তু ওকে বলবো কিভাবে।কিন্তু বললে তো বুঝে ঢ়াবে যে ওর প্রতি আমার দূর্বলতা আছে।নিজেকে সরিয়ে নিলাম।বিষন্ন মুচকি হাসছে।প্রচন্ড লজ্জা লাগছে।বিষন্ন বলল

” এই নিচে চলো,টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে ”

বলেই দুইহাত মাথার ওপর ধরে বিষন্ন সিঁড়ির দিকে চলে গেলো।এই ছেলেটা এমন কেন? বৃষ্টির সময়,পাশে সুন্দরী একটা মেয়ে।আর ও নিচে চলে যাচ্ছে ? কি আজব! একবার বলবে তো নাকি? যে ” মিষ্টি, চলো বৃষ্টিতে ভিজবো “।তা নয়,উনি সুরসুর করে নিচে চলে গেলেন।নিরামিষ কোথাকার। ধূর ভাল্লাগেনা,ভিজবোই না।

পেছনে ফিরতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম।তাকিয়ে দেখি বিষন্ন।বিষন্ন বললো

” আমায় নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে চাও সেটা বলতে এতো কিসের লজ্জা হু? ”

ভ্রু কুচকে তাকালাম।ও কিভাবে জানলো? আর ও তো নিচে চলে গেলো।আবার ছাঁদে কি করছে? ইতস্তত হয়ে বললাম

” ক..কে বলেছে তোকে, আমি কেন তোর সাথে ভিজতে যাবো।হুহ আবার বয়েই গেছে ”

” তাতো বুঝতেই পারছি ”

ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো।নির্জন রাত।ছাদে দুই মানব,মানবী।যারা একে অন্যকে মোহিত করতে ব্যাস্ত।বিষন্ন একপা একপা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।আমার বু*কের ধরফর আরো বেড়ে যাচ্ছে। ওর এক হাত আমার কোম*ড়ে রাখতেই শিহরণে চোখ বন্ধ করলাম।বৃষ্টির শীতল বাতাসের মধ্যেও বিষন্নের নিশ্বাসের গরম হাওয়া আমার ঠোঁ*টে এসে আছড়ে পড়ছে।চোখ মেললাম।শরী*রের মধ্যে কেমন যেন করতে লাগলো।ইচ্ছে করছে একটা অন্যায় করতে।ভয়ঙ্কর অন্যায়।বিষন্ন বললো

” কি দেখো? ”

” তোর চোখে এতো মায়া কেন? ”

” সেটা আজ নজরে পড়লো? আমার ঠোঁ*ট কিন্তু আরো মায়াবী”

ঠোঁ*টে তাকালাম।তাকাতেই ভেতর থেকে একটা টান অনুভব করলাম।বিষন্নকে বললাম
” প্লিজ কিছু মনে করিস না,আমি ভয়ঙ্কর কিছু একটা করে ফেলবো।আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না ”

এরপর ঠোঁ*টে ঠোঁ*ট স্পর্শ করালাম।বিষন্নের ঠোঁ*ট নিজের দখলে নিলাম।এক হাতে ওড়নাটা ছুড়ে ফেলে দিলাম ফ্লোরে।আজ নিজেকে উৎসর্গ করার রাত।এই রাত সুখময় অনুভূতির রাত।এই মুহুর্ত যেন কখনো শেষ না হয়।

চলবে?

রেসপন্স করবেন সবাই প্লিজ।রেসপন্স পেলে লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here