#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ২২
ঘড়ির কাটার দিকে তাকায় শান্ত। খুব একটা বেশি বাজে না, এখন রওনা না দিলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু ওকে বসিয়ে রেখেছে সবাই কোথায় গেল? আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখি, কেউ না কেউ অবশ্যই আসবে এদিকে। খানিক সময় কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ করে কেউ বলল,
—-” সরি বাবা তোমাকে এভাবে বসিয়ে রাখার জন্য!”
শান্ত ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। সোহান সাহেব আসছে এদিকে। তাহলে কথাটা নিশ্চয়ই সেই বলেছে। শান্ত তাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
—-” না স্যার ঠিক আছে।”
সোহান সাহেব টি টেবিলের দিকে তাকায়। নাস্তা গুলো যেমনটি দিয়ে ছিল নদী ভাবি তেমনি পড়ে আছে। শুধু চায়ের কাপটা খালি। সোহান সাহেব শান্তর দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,
—-” এ কী? সবকিছুই তো পড়ে আছে কিছুই তো খেলে না তুমি!”
শান্ত মৃদু স্বরে বলল,
—-” খেয়েছি স্যার, আর কিছু খাব না। এখন আমাকে উঠতে হবে।”
সোহান সাহেব কিঞ্চিৎ কপাল ভাঁজ করে বলল,
—-” সে কী এখনি চলে যাবে?”
শান্ত হাত ঘড়ির দিকে আর একনজর তাকিয়ে বলল,
—-” রাত তো আর কম হলো না এখন না বেরোলে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে।”
শান্ত তো ঠিকই বলছে। রাত তো আর কম হলো না। সোহান সাহেব শান্তর দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,
—-” ঠিক আছে, তবে তুমি কিন্তু অবশ্যই সময় করে আমাদের বাড়িতে এসে বেরিয়ে যাবে।”
শান্ত মাথা দুলিয়ে মৃদু হেসে বলল,
—-” তা সময় করে যাওয়া যাবে। এখন জান্নাত ওনাকে একটু দেখে দেবেন স্যার? ওনার সঙ্গে দেখা করে যেতাম!”
সোহান সাহেব ব্যস্ত গলায় বলল,
—-” তুমি বস আমি জান্নাত কে এখনই পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
এইটুকু বলে সোহান সাহেব আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে ভিতরে চলে যায়। মিনিট পাঁচেকের মাথায় জান্নাত আসে। শান্ত কিছুক্ষণ জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকে চোখ সরিয়ে দিয়ে বলল,
—-” প্রকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে একা একা কোথাও চলে যাবেন না। কোথায় কোন বিপদের লুকিয়ে আছে তা আমরা কেউই জানিনা। তাই সাবধানে থাকবেন। আসি এখন আমি।”
চলে যাবেন উনি? না চাইতেও জান্নাতের চোখের জলের ধারা দেখা দেয়। জলভর্তি চোখ নিয়ে জান্নাত শান্তর দিকে তাকায়। বুকের ভিতরের যন্ত্রণাটা আরো তীব্র হতে শুরু করেছে। আষ্টেপিষ্টে যন্ত্রণাটা ওকে জড়িয়ে ধরছে। আচ্ছা, উনি চলে যাবেন বলে ওর এত কষ্ট হচ্ছে কেন? কোন বিশেষ কারণে? নাকি এমনি সামরিক ক্ষনের জন্য মন খারাপ? না আর কিছু ভাবতে চাইছে না জান্নাত! বুকের যন্ত্রণাটা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। নিঃশ্বাস নিতেও তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছে। শান্ত তো অন্য দিকে তাকিয়ে আছে! যদি জান্নাতর দিকে তাকাতো তাহলে দেখতে পেত ওর চোখের অশ্রুধারা। দেখতে পেতো ওর ছটফটানি। দেখতে পেতো ওর অস্থিরতা। কিন্তু আফসোস!
জান্নাত হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে নিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
—-” সা…সাবব… সাবধানে যা…যা…যাবেন!”
জান্নাতের কন্ঠস্বর শুনে তাড়াতাড়ি করে ওর দিকে ফিরে। চোখগুলো ফোলা ফোলা। বারবার কেঁপে উঠছে। উনি কী কান্না করেছেন? কিন্তু উনি কান্না করছিলেন কেন? কোন কারনে কী ওনার মন খারাপ? হয়তো মায়ে অসুস্থতার জন্য কান্না করছিলেন। শান্ত মোলায়েম গলায় বলল,
—-” আসি, আন্টি আঙ্কেলর খেয়াল রাখবেন।”
উত্তরের অপেক্ষা না করে দ্রুত পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় শান্ত।
______________________________
চা খেয়ে উঠে দাঁড়ায় মিরান। তাকিয়ে দেখে তোহা আর তুলি এখনো হাবিবের সঙ্গে কথা বলছে। হাবিবের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে না হলে অসৎ সঙ্গ পেয়ে ছেলে টা খারাপ হয়ে যেতে পারে। হাবিব তোহার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,
—-” ম্যাডাম আমি আপনার সব গান শুনি, আপনি আজ আমাকে একটা গান শুনাইবেন?”
তোহা মৃদু হেসে হাবিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
—-” শোনাবো তুমি যদি আমাকে ম্যাডাম না বলে আপু বলে ডাকো!”
হাবিব একগাল হেসে বলল,
—-” আইচ্ছা, আপু আপনি আমারে একটা গান শুনাইবেন?”
কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার
নেই মানা মনে মনে।
মেলে দিলেম গানের সুরের
এই ডানা মনে মনে।
তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপ-কথার,
পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপ কথার
পারুলবনের চম্পারে মোর
হয় জানা মনে মনে!
সূর্য যখন অস্তে পড়ে ঢুলি মেঘে মেঘে
আকাশ-কুসুম তুলি।
সাত সাগরের ফেনায় ফেনায় মিশে
আমি যাই ভেসে দূর দিশে-
পরীর দেশের বন্ধ দুয়ার
দিই হানা মনে মনে!!!
—– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হাবিব হাততালি দিয়ে বলল,
—-” খুব ভালো হইছে আপু। একদম আমার চায়ের মত।”
হাবিবের কথা শুনে তোহা আর তুলি দু’জনেই শব্দ করে হেসে দেয়। মিরান সেদিকে খেয়াল না করে হাবিবের দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,
—-” যদি তোমার থাকার জন্য একা ব্যবস্থা করে দেই তুমি সেখানে থাকবে? সেখান থেকে তুমি লেখাপড়া করতে পারবে। সেখানে কয়েকজন আন্টি আছে তারা তোমাকে খুব ভালোবাসবে। যাবে সেখানে?”
হাবিব বিস্ময় চোখে মিরানের দিকে তাকায়। এই প্রথম ওকে এমন একটা প্রস্তাব দিলো কেউ। এতে অবাক হওয়ার ই কথা। হাবিব চিন্তায় পড়ে যায় মিরানের কথা শুনে। কী করবে ও?
চলবে…..
চোখের সমস্যার কারণে ঠিকমতো গল্প লিখতে পারছিনা। আশাকরি সমস্যাটা বুঝবেন আপনারা।