না_চাইলেও_তুই_আমার পর্ব ২০+২১

#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ২০+২১
সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরেছে শান্ত। জান্নাতের দেওয়া বাড়ির ঠিকানায় লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিয়ে ওর বাবা-মা যেখানে আছে তা খোঁজ পায় শান্ত। শেরপুরে আছে তারা। ময়মনসিংহ থেকে খুব একটা বেশি দূরে নয়। জোরে গাড়ি চালালে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যাবে সেখানে। কিন্তু তার আগে ওকে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। সারাদিনের দৌড়াদৌড়িতে পেটে কিছুই পড়েনি। শাওয়ার নিয়ে নিচে এসে শান্ত এদিক ওদিক তাকায়। ক্যারাম খেলছে বাড়ির মেয়েরা হল রুমে বসে। শান্ত আড়চোখে জান্নাতের দিকে তাকায়। সে খেলায় মশগুল। ঠোঁটে হাসি লেগে আছে। শান্ত চোখ সরিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে যায়। শান্ত কে দেখে মিরা এগিয়ে আসে মৃদু স্বরে বলল,

—-” এখন বুঝি তোর বাড়ির কথা মনে পরলো? সারাদিন কোথায় ছিলি?”

শান্ত চেয়ার টেনে বসে বলল,

—-” বাড়ির কথা বুঝি কেউ ভুলতে পারে বলো?”

মিরা শান্তকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলল,

—-” সারাদিনেও তো কিছু খাস নি আগে খেয়ে নে পরে তোর সব কথা শুনবো।”

শান্ত খাবার প্লেটে হাত দিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,

—-” আন্টি তুমি জান্নাত কে রেডি হতে বলো। খেয়ে উঠে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আমি বের হব ওকে নিয়ে।”

মিরা হাতের কাজ থামিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” বের হবি! কোথায় বেরোবি?”

শান্ত প্লেট থেকে চোখ সরিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

—-” ওহ তোমাকে তো বলতে ভুলে গেছি, জান্নাতের বাবা-মা যেখানে আছে সে ঠিকানা আমি পেয়ে গেছি। শেরপুরে আছে তারা। শেরপুর এর ব্যাংক কর্মকর্তা আজমল সাহেবের বাড়িতে তারা আছে।”

শান্তর কথা শুনে মিরার মন খারাপ হয়ে যায়। জান্নাত কে তারা সবাই অল্প সময়ের মধ্যে আপন করে নিয়েছে। অনেকটা বাড়ির মেয়ের মত হয়ে গেছে জান্নাত। তাই সে চলে যাবে শুনে মন খারাপ হয়ে গেছে মিরার। মিরা মন খারাপ করে বলল,

—-” চলে যাবে।”

শান্ত মুখ থাকা খাবার শেষ করে মিরার দিকে তাকায়।হয়তো ওর আন্টির মন খারাপ হয়ে গেছে জান্নাত চলে যাবে শুনে। শান্ত মৃদু স্বরে বলল,

—-” জান্নাত কে খুঁজে না পেয়ে তার বাবা-মার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে তা তো তুমি বুঝতে পারছো আন্টি! তাই তাদের কথা চিন্তা করে তুমি অন্তত মন খারাপ করো না আন্টি।”

সত্যি তো, আল্লাহ না করুক জান্নাতের মতো যদি ওর কোন সন্তান হারিয়ে যেতে তখন ওর কী অবস্থা হতো। নির্ঘাত দম বন্ধ হয়ে মারা যেত। মিরা হালকা হেসে বলল,

—-” আচ্ছা ঠিক আছে, তুই খেয়ে রেস্ট নে। আমি জান্নাত কে বলে দিচ্ছি রেডি হতে।”

______________________________

মন খারাপ বসে আছে জান্নাত। পাশে শান্ত একমনে গাড়ি ড্রাইভ করছে‌। অনন্যা আর টিয়ার সাথে কত পরিকল্পনা করে রেখেছিল। আজ রাতে ওদের বাড়ির দুটো বাড়ি পরে যে বড়ই গাছ টা আছে সেখান থেকে বড়ই চুরি করে আনবে। কিন্তু তার আগেই উনি আন্টিকে দিয়ে বলে পাঠালেন রেডি হতে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন কিছুই বললেন না। বারকয়েক জিজ্ঞাসা করেও কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখটা লেগে যাবে বুঝতে পারেনি জান্নাত। হঠাৎ কারো ধাক্কায় হুরমুড়িয়ে উঠে-পড়ে জান্নাত। কিছু বলার আগেই শান্তা বলল,

—-” কখন থেকে ডাকছি আপনাকে। নামুন এখন গাড়ি থেকে।”

জান্নাত চোখ বড় বড় করে তাকায় শান্তর দিকে। শান্ত সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। জান্নাত গাড়ি থেকে নেমে শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আমরা এখানে কেন এসেছি?”

শান্ত ছোট করে বলল,

—-” আপনাকে পৌঁছে দিতে।”

জান্নাত বিস্ময় গলায় বলল,

—-” মানে?”

শান্ত মৃদু স্বরে বলল,

—-” সামনের বাড়িটা দেখছেন? এটা আপনার বাবার বন্ধু আজমল সাহেবের বাড়ি। বর্তমানে আপনার বাবা-মা এখানেই আছে।”

শান্তর কথা শুনে জান্নাত খুশি হয় কিন্তু মুহূর্তেই আবার মন খারাপ হয়ে যায় তার। তবে কী উনি এখন আমায় পৌঁছে দিয়ে আবার চলে যাবেন? আর কখনো দেখা হবে না তার সাথে? কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়ে যায় । জান্নাতের থেকে কোন জবাব না পেয়ে শান্ত আবারো বলল,

—-” চলুন বাড়ির ভিতরে যাওয়া যাক।”

জান্নাত হ্যাঁ কিংবা না কিছুই না বলে শান্তর পিছনে হাঁটতে শুরু করে। কলিং বেল বাজার কয়েক মুহূর্ত পরে এসে দরজা খুলে দেয় এক ভদ্রলোক। সম্ভবত উনি আজমল সাহেব। শান্ত মৃদু স্বরে বলল,

—-” আসসালামু আলাইকুম।”

সালামের জবাবে ব্যক্তি বলল,

—-” ওয়ালাইকুম আসসালাম। তা কে তুমি বাবা?”

শান্ত হালকা হেসে বলল,

—-” আপনি আমাকে চিনবেন না আঙ্কেল। একটা বিশেষ প্রয়োজনে আপনাদের বাড়িতে আসা। সোহান সাহেব কিংবা তার স্ত্রী আপনাদের বাড়িতে আছেন?”

আজমল সাহেব অবাক গলায় বলল,

—-” আছে কিন্তু তারা কী তোমার পূর্ব পরিচিত?”

শান্ত ধীর গলায় বলল,

—-” আপনি একটু তাদের ডেকে দিন আমি তাদের সামনে সবকিছু বলছি।”

আজমল সাহেব ড্রইংরুমে দাঁড়িয়েই ডাকতে শুরু করেন সোহান সাহেব কে। সোহান সাহেব ড্রয়িং রুমে আসতে না আসতেই কেউ একজন তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কয়েক মুহুর্ত পর তিনি বুঝতে পেরে তার বুকে থাকা ব্যক্তি কে সরিয়ে দেখে, এ আর কেউ নয় তার একমাত্র আদরের মেয়ে। মেয়ের দুই গালে হাত দিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিয়ে বলল,

—-” জান্নাত মা আমার কোথায় চলে গেছিলিসি তুই? জানিস তুই তোর মা আর আমার অবস্থা কেমন হয়েছিলো?”

বাবাকে কাঁদতে দেখে জান্নাত ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল,

—-” বাবা আমি বাস থেকে নেমে হারিয়ে গেছিলাম। পরে শান্ত উনার সঙ্গে আমার দেখা হয় উনি আমাকে ওনাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।”

জান্নাত একে একে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে সব বলে ওর বাবাকে। জান্নাতের সব কথা শুনে জান্নাতের বাবা চোখ যায় শান্তর দিকে। সোহান সাহেব শান্তর দিকে তাকিয়ে অবাক গলায় বলল,

—-” শান্ত তুমি?”

শান্ত মৃদু গলায় বলল,

—-” জ্বী স্যার আমি।”

জান্নাত বিস্ময় চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” বাবা তোমরা দুজন দুজনকে আগে থেকে চিনতে?”

সোহান সাহেব মোলায়েম গলায় বলল,

—-” শান্ত আমার জুনিয়র অফিসার। একটা কেসের তদন্ত স্বার্থে ওর সাথে আমার পরিচয় হয়।”

জান্নাত বিস্ময় চোখে শান্তর দিকে তাকায়। সেও একজন পুলিশ অফিসার তার বাবার মত! শান্ত যে একজন পুলিশ অফিসার তা এই দুইদিনে ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি জান্নাত। সোহান সাহেব শান্তর দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

—-” তোমাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দেবো তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা আমি শান্ত। তুমি আমার কাছে আমার কী ফিরিয়ে দিলে তা তুমি নিজেই জানো না।”

শান্ত অপ্রস্তুত হেসে বলল,

—” এভাবে বলবেন না স্যার। এটা আমার দায়িত্ব ছিল। এভাবে ধন্যবাদ দিয়ে প্লিজ আমাকে লজ্জা দিবেন না স্যার।

সোহান সাহেব তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,

—-” জান্নাত মা তুই আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকিস না, তোর মায়ের কাছে যা। তোর মায়ের অবস্থা সাংঘাতিক খারাপ। তোর কথা ভেবে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলো। ডাক্তার এসে দেখে গেছে তাকে। ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে ঘুমানোর জন্য আর শরীরের দুর্বলতার কারণে স্যালাইন চলছে এখনো।”

জান্নাত আর একনজর শান্তর দিকে তাকিয়ে পরে দ্রুতপায়ে ভিতরের চলে যায় তার মায়ের কাছে।

______________________________

কখন থেকে অনন্যা কে খুঁজে চলেছে টিয়া। এই মেয়েটা যে কখন কোথায় থাকে বুঝতে পারেনা টিয়া। কিছুক্ষণ আগেই তো হলরুমে রাজিবের সাথে বসে গল্প করছিল। কিন্তু এখন? তার কোন হদিস নেই। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাড়ির সামনের বাগানে এসে এদিক ওদিক তাকায়। না এখানেও দেখা নেই তার। এখন আর কোথায় যেতে পারে ও? আঙ্কেল আন্টির রুমে? উঁহু মনে হয় না সেখানে গেছে। তাহলে আর কোথায় যেতে পারে। ছাদে? হ্যাঁ ছাদেই হবে হয়তো বিচ্ছু মেয়েটা! টিয়া ব্যস্ত পায়ে হাটতে শুরু করে ছাদের উদ্দেশ্যে। আজ নির্ঘাত টিয়া অনন্যাকে মেরে ভর্তা করে দেবে। এই মেয়ের কোনো কান্ডজ্ঞান নেই! নিজের সাথে যে ফোনটা রাখতে হয় সেটা কী তাকে ছোট বাচ্চাদের মতো করে বুঝিয়ে বলতে হবে? ওদিকে তাকে ফোনে না পেয়ে ওর মাথা খারাপ করে দিচ্ছে অনন্যার উনি। এসব ভাবতে ভাবতেই টিয়া এসে ছাদের দরজার সামনে দাঁড়ায়। যা ভেবেছিল তাই মেঘ আর মেঘাকে নিয়ে এখানে বাঁদরামি করে বেড়াচ্ছে। ইনি এখানে আনন্দ করছেন বেড়াচ্ছেন ওদিকে তার উনি ওর মাথা খারাপ করে দিচ্ছে ওকে ফোনে না পেয়ে। টিয়ার রাগে কটমট করতে করতে অনন্যার দিকে এগিয়ে যায়। অনন্যার মাথায় হালকা একটা থাপ্পড় দিয়ে রাগী গলায় বলল,

—-” এই ফাজিল তোর ফোন কোথায়?”

অনন্যা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

—-” তুই আমাকে মারলি! এই মাসুম বাচ্চাটাকে মারতে তো একটু হাত কাঁপলো না?”

অনন্যার কথা শুনে টিয়ার রাগ আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। টিয়ার দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—-” না একটুও হাত কাঁপলো না। আমার তো এখন ইচ্ছে করছে তোকে এই ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। তাহলে আমার মনে একটু হলেও শান্তি আসতো।”

অনন্যা অভিনয় করে বলল,

—-” হে আল্লাহ তুমি আমাকে এই দিন টা দেখার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিলে? আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার পিঠপিছে আমাকে মারার ষড়যন্ত্র করছে।”

টিয়া এবার অনন্যা কে ধমক দিয়ে বলল,

—-” এই শোন তোর এত ড্রামা দেখার আমারও সময় নেই। তোর প্রতীক না ফ্রতীক আমাকে ফোন করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। এই নে তোর ফোন। তোরে ড্রামা শেষ হলে ওর সাথে কথা বলে নিস। না হলে নির্ঘাত ওই বেচারা তোর শোকে বাংলাদেশের চলে আসবে।”

এই বলে টিয়া আর না দাঁড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে শুরু করে। টিয়ার কথা শুনে মেঘ আর মেঘা ঠোঁট চেপে হাসতে শুরু করে। টিয়ার কথা শুনে অনন্যা ফোন হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে প্রতীকের নাম্বারে ফোন করে। নিচে নামতে নামতে টিয়া ভাবতে শুরু করে এই বেস্ট ফ্রেন্ড নামক প্রাণীটার যতই রাগারাগি করুক না কেন সে দাঁত কেলিয়ে সব হজম করে নেয়। মিরুর কথাই ধরা যাক না। দুষ্টুমিতে সবার আগে তার নাম। পৃথিবীর সবার সাথে ঝগড়া করলেন তাকে ছাড়া মিরুর মোটেও চলে না। ওর বেলাও ঠিক তাই। আবার ওকে জ্বালাতন না করলে মিরুর পেটের ভাত হজম হয়না। বড়ই অদ্ভুত এই বেস্ট ফ্রেন্ড নামক প্রাণীটা! এসব ভেবেই একা একা হেসে দেয় টিয়া। কিন্তু হাসিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না টিয়ার ঠোঁটে। রাসেল সামনে দাঁড়িয়ে আছে‌। একদম সিঁড়ি আটকে দাঁড়িয়ে আছে। টিয়ার এখন আর ইচ্ছে করে না রাসেলের সঙ্গে কথা বলতে। কেনই বা বলবে কথা শুধু শুধু মায়া বাড়াতে? কিন্তু রাসেল যে পথ ছেড়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। টিয়া মাথা নিচু করে বলল,

—-” ভাইয়া পথ ছাড়ুন নীচে যাবো।”

রাসেল টিয়ার কথা শুনে ওর রাগী চোখে তাকায়। ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে মাথার ওপর থেকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিতে। ওকে বলে কী না ভাইয়া? দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—-” ভাইয়া? এই আমি তোমার কোন জন্মের ভাইয়া? খবরদার আমাকে একদম ভাইয়া বলে ডাকবে না বলে দিলাম।”

টিয়া চোখ ছোট ছোট করে বলল,

—-” কেন? ভাইয়া বললে কী এমন ক্ষতি….

টিয়ার কথা সমাপ্তি ঘটে রাজিবের কথায়। রাজিব টিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

—-” তুমি এখানে আর আমি তোমার রুমে গিয়ে খুঁজে এলাম।”

টিয়া কপাল ভাঁজ করে বলল,

—-” কেন? আমাকে খুঁজছিলেন কেন?”

রাজিব মৃদু স্বরে বলল,

—-” তুমি আর মিরু তখন বললে না ইংলিশ সিরিজের কথা বললে? আমি সেই সিরিজ টা ডাউনলোড করে নিয়েছে। আজ রাতে আমরা সবাই মিলে ঐ সিরিজ টা দেখব।”

টিয়া খুশি হয়ে বলল,

—-” সত্যি, আমি এক্ষুনি মিরুকে বলে আসছি।”

টিয়া আর নীচে না নেমে দৌড়ে ছাদের দিকে যায়। রাসেলের এখন ইচ্ছে করছে রাজিব কে গুলি করে মারতে। যখনই টিয়ার সঙ্গে কথা বলতে আসবে এখন কোন না কোন ভাবে এই উটকো ঝামেলা টা এসে সব কিছু বিগড়ে দেয়। এসব ভেবে রাসেল রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

______________________________

চারদিকে পিনপিনে নীরবতা। তোহা চোখের পানি মুছে হাবিবের দিকে তাকায়। এইটুকু বয়সে কতটা কষ্ট সহ্য করেছে ছেলেটা। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বাঁচার জন্য লড়াই করছে এইটুকু বয়স থেকে। তোহা কিছু বলতে চাচ্ছে হাবিব কে। অনবরত ঠোঁট কাঁপার কারণ এ কথা ঠোঁটে এসে আটকে যাচ্ছে। মিরান নীরবতা ভেঙে হাবিবের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আর এক কাপ চা খাওয়াবে ভাইয়া?”

হাবিব ছেলেটা আবারও এক গাল হেসে উত্তরে বলল,

—-” জ্বী ভাইজান এক্ষুনি বানাইয়া দিতে আছি।”

হাবিব চা বানাতে শুরু করলে মিরান ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে শুরু করে। ইতিমধ্যে হাবিব চা বানিয়ে মিরানের সামনে কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলল,

—-” এই নেন ভাইজান।”

মিরান চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে হাবিবের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” রাতে থাকো কোথায়?”

হাবিব ওয়ানটাইম কাপগুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে মিরানের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল,

—-” স্টেশনের পাশে যে প্রাইমারি স্কুল আছে না তার বারান্দায় থাকি।”

মিরান কী বলবে নিজেই বুঝতে পারছে না। পিছন থেকে তোহা বলল,

—-” ভাইয়া আমাকে এক কাপ চা খাওয়াবে না?”

হাবিব মিরানের পিছনে তাকায়। সিঙ্গার নওশীন তোহা দাঁড়িয়ে আছে। হাবিব চোখ কচলে আবারো তাকায় তোহার দিকে। না তার সামনে সিঙ্গার নওশীন তোহা দাঁড়িয়ে আছে। হাবিব খুশিতে আটখানা হয়ে বলল,

—-” ম্যাডাম আপনে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন? আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।”

তোহা এগিয়ে এসে হাবিবের পাশে বসে বলল,

—-” এইতো আমি তোমার একদম পাশে বসেই আছি। এবার বিশ্বাস হয়েছে?”

হাবিব খুশিতে কথা বলতে না পেরে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে। তোহা হাবিবের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,

—-” কী হলো বললে না যে আমাকে খাওয়াবে না তোমার হাতে বানানো এক কাপ চা?”

হাবিব হাসিমুখে তাড়াতাড়ি চা বানাতে শুরু করে দিয়ে বলল,

—-” কী যে কন ম্যাডাম, এখুনি দিতে আছি আমি।”

মিরান তোহার দিকে তাকায়। কখন তোহা এখানে এলো বুঝতে পারেনি মিরান। তোহার মধ্যে যে অহংকারের বিন্দু মাত্র নেই তা আগে বুঝতে পারিনি ও। মিরানের ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে তুলি বলল,

—-” আমিও চা খাবো আমার জন্য এক কাপ চা বানাও।”

তোহা হাবিবের দিকে তাকিয়ে ভাবে এইটুকু ছেলে এমন হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে একটা স্কুল ঘরের বারান্দায় রাত্রি যাপন করে। একটা কম্বলেও যখন ওর শেষ রাতের দিকে শীত মানতে চায়না সেখানে হাবিবের মত ছেলেরা কী করে পার করে শীতের এমন নিষ্ঠুর দিনগুলি খোলা আকাশের নিচে পার করতে?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here